হীরক-রহস্য – ৩

তিন

‘গর্ত?’ প্রশ্ন করলেন ড. উড। ‘কী ধরনের গর্ত? কিছু আছে নাকি ভেতরে?

গর্তটার ভেতরে আঙুল দিয়ে খোঁচাখুঁচি করল ক্লাইভ।

‘শুধু কয়েক টুকরো প্লাস্টার,’ বলল। মই বেয়ে নেমে এসে ওদেরকে দেখাল কী পেয়েছে।

‘আপনি মেঝেতে এই একই ধরনের প্লাস্টার পেয়েছিলেন, তাই না?’ ডানার প্রশ্ন।

পকেট থেকে প্লাস্টারের অন্য টুকরোটা বের করল কিশোর। ‘একই,’ মিলিয়ে দেখে একটু পরে বলল।

‘চিন্তার কথা, বললেন ড. উড। ‘ওয়াশিংটন মনুমেন্টের স্মৃতিপাথর কে ভাঙল?’

ড. উড কথাটা বলামাত্রই ডানার মাথায় টুপ করে কিছু একটা পড়ল। ও চুল থেকে টেনে বের করল এক বাদামের খোসা।

‘ওটা এল কোত্থেকে?’ কিশোর জিজ্ঞেস করল ওকে। ‘আরেকটা বাদামের খোসা?’ বলে উঠল ক্লাইভ। ‘আজব কাণ্ড!’ বলে উঠলেন ড. উড।

ওরা সবাই ওপরদিকে চাইল।

‘আরি!’ চেঁচিয়ে উঠল কিশোর। প্রায় বিশ ফিট ওপরে, রেইলিঙে বসে রয়েছে বাদামীরঙা ছোট্ট এক বানর। লম্বা লেজ, ছোট-ছোট একজোড়া হাত আর গোলগাল, কৌতূহলী মুখ ওটার। বানরটা সরাসরি চেয়ে রয়েছে ওদের দিকে, মাঝে-মাঝে চকচকে কালো চোখ দুটো পিটপিট করছে।

‘ওটা কোত্থেকে এল?’ ক্লাইভ শুধাল।

‘বানর!’ চিৎকার ছাড়ল ডানা।

‘বিশ্বাস হচ্ছে না আমার, প্রায় গুঙিয়ে উঠলেন ড. উড।

‘ওয়াশিংটন মনুমেন্টে বানর কী করছে?’

‘জানি না, বস,’ বলল ক্লাইভ।

সবাই মুহূর্তের জন্য নীরব হয়ে গেল।

‘ওটাকে ধরার চেষ্টা করব?’ কিশোর জানতে চাইল।

‘কলা থাকলে ভাল হত,’ বলল ডানা।

কিঁচকিঁচ করতে লাগল বানরটা। আচমকা বিশ ফিট ওপর থেকে লাফিয়ে পড়ল ক্লাইভের বুকের ওপর। বেচারা ক্লাইভ একদম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে। বানরটা ওর বুকে আদুরে ভঙ্গিতে লেপ্টে যেতেই, আলতোভাবে ওটার গায়ে হাত বুলিয়ে দিল ও।

‘মনুমেণ্টে কোন বানরকে রাখা যাবে না!’ বলে উঠলেন ড. উড। মুখের চেহারা টকটকে লাল তাঁর।

‘জানি, বস,’ বলল ক্লাইভ। ‘কিন্তু ভাবছি এটা ঢুকল কীভাবে!’

‘কোন টুরিস্ট হয়তো গোপনে নিয়ে এসেছিল,’ বললেন ড. উড। ‘যাই হোক, ওটাকে এখন বিদেয় করতে হবে! এদের গায়ে পোকা হয়!’

‘বেশিরভাগ বানরই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে,’ বলল ডানা। বানরটার লেজে হাত বোলাল।

‘তারপরও ওটাকে তাড়াতে হবে,’ দৃঢ়কণ্ঠে বললেন ড. উড। ‘আপনারা বললে আমি ওটাকে হোয়াইট হাউসে নিয়ে যেতে পারি,’ বলল ডানা। ‘প্রেসিডেন্ট জন্তু-জানোয়ার ভালবাসেন।’

ক্লাইভ আর ড. উড চাইলেন ডানার দিকে।

‘ওখানে ইতিমধ্যেই একটা কুকুর আর তিনটে বিড়াল আছে,’ ডানা জানাল।

ড. উড মুখে দু’হাত বোলালেন।

‘ধন্যবাদ, মিস ডানা,’ বলল। ‘তুমি বানরটাকে হোয়াইট হাউসে নিয়ে গেলে আমাদের উপকারই হয়।’

কিশোর হাত বাড়াতেই ওর বাহুতে ধরা দিল বানরটা। একটুও ভয় পায়নি খুদে জানোয়ারটা।

‘আর আমরা প্রেসিডেন্টকে পাথরের গর্তটার কথাও বলব।’

‘উম, হ্যাঁ, ওনার জানাই উচিত,’ অস্পষ্টস্বরে আওড়ালেন ড. উড।

সিঁড়ি দিয়ে মইটা নিয়ে নামছে ক্লাইভ, ড. উড তাকে পায়ে- পায়ে অনুসরণ করছেন। আর ছেলে-মেয়েরা অনুগমন করছে তাঁকে।

ওকে কোলে নেবে?’ কিশোর জিজ্ঞেস করল।

‘নিশ্চয়ই!’ বলে, হাত বাড়াল ডানা। ‘আণ্টির কাছে আয়।’ বিনা দ্বিধায় চলে এল বানরটা। এবার এত্তটুকুন এক থাবা ঢুকিয়ে ডানার পকেট থেকে বাদামের খোসাটা বের করে আনল।

কিছুক্ষণ চিবিয়ে থুথু করে ফেলে দিল শুকনো খোলটা।

ছেলে-মেয়েরা নিচে নেমে এসে, ক্লাইভ আর ড. উডকে কোথাও দেখল না। রুবি নামের রেঞ্জার মহিলাটি এলিভেটরের দিকে একদল টুরিস্টকে নিয়ে চলেছে।

বানরটা আচমকা তীক্ষ্ণ ডাক ছেড়ে ডানার বাহু থেকে ছাড়া পেতে ছটফট করতে লাগল।

টুরিস্টদের নজর পড়ল এদিকে।

‘আরে, বানর! বানর!’ একজন চেঁচিয়ে উঠল।

‘ওয়াশিংটন মনুমেন্টে বানর কেন?’ আরেক টুরিস্টের জিজ্ঞাসা।

‘আপনারা এলিভেটরে ঢুকুন, প্লিজ,’ বলল রুবি।

তারা ভেতরে পা রাখল, দরজা বন্ধ হলো, এবং এলিভেটর শোঁ-শোঁ শব্দে উঠে যেতে লাগল।

বানরটার পিঠে হাত বুলিয়ে দিল ডানা।

‘বানরটা ভয়ে কাঁপছে,’ বলল। ও মনে হয় টুরিস্টদের পছন্দ

করে না।’

‘চলো,’ বলল কিশোর, ‘বাসায় যাই। এটার একটা নাম তো দিতে হবে। ‘বানর’ বলে তো আর ডাকা যায় না!’

‘কী নাম দেবে? কিশোর?’ বলল ডানা।

হা-হা, কাষ্ঠ হাসল কিশোর।

‘দাও না, ক্ষতি কী?’

‘আমার মনে হয় এর নাম রাখা উচিত-ওয়াশিংটন,’ বলল ডানা।

মৃদু হাসল কিশোর।

‘বাহ, দারুণ!’ বলল।