হারানো সুর – ১৪

চোদ্দ

সিভিক সেন্টারে ফিরে, ক্রিসকে লবিতে পেল ওরা, অর্কেস্ট্রার ক’জন সদস্যের সঙ্গে কথা বলছিলেন।

‘চশমাটা পেয়েছ?’ রবিন আর ডনকে দেখে প্রশ্ন করলেন। রবিন চশমাটা দিল ওঁকে।

‘ব্রিফকেসটা পড়ে যায়,’ জানাল। ‘তাই সব কিছু আপনার ডেস্কে তুলে চাপা দিয়ে রেখেছি।’

ক্রিস মাথা ঝাঁকালেও, রবিনের মনে হলো তিনি মন দিয়ে ওর কথা শোনেননি।

‘রবিনভাই, প্লেনের টিকিটটার কথা জিজ্ঞেস করলে না কেন?’ ডন জানতে চাইল।

‘উনি এখন অনেক ব্যস্ত,’ বলল নথি। ‘আর এত মানুষের মধ্যে!’

এসময় কিশোর ওদের পেছনে এসে দাঁড়াল।

‘অর্কেস্ট্রা বিরতি নিয়েছে,’ বলল। ‘চলো, পার্কে যাই আমরা।’

‘আগে শোনোই না আমরা কী পেয়েছি!’ প্রায় চেঁচিয়ে উঠল ডন।

‘এখানে নয়, ডন,’ ওকে সতর্ক করল রবিন। ও চায় না ক্রিস টিকিটটা নিয়ে ওদের আলোচনা শুনুন।

ছেলে-মেয়েরা পার্কে ঢোকার পর ডন বলল, ‘জানো, ক্রিস প্যারিসের টিকিট কেটেছেন!’

‘কাল বিকেলে ফ্লাইট,’ যোগ করল রবিন।

‘উনি চোরাই স্বরগ্রামটা সাথে করে নিয়ে যাচ্ছেন, আমি শিয়োর,’ বলল ডন।

‘ক্রিস গেইল?’ প্রশ্ন সু কির।

মুসাও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে।

‘উনি চোর?!’

এখন অবধি ওঁকে সন্দেহ করেনি ছেলে-মেয়েরা।

‘আমাদের উল্টেপাল্টে ভেবে দেখা দরকার ব্যাপারটা নিয়ে,’ বলল কিশোর।

ভাবল ওরা।

খানিক পরে, রবিন বলল, ‘কিন্তু ওঁর রুমের ব্যাপারটা? ওটাও তো হেক্টরেরটার মতই তছনছ করা হয়েছিল।’

‘আমরা কি ও বিষয়ে নিশ্চিত?’ কিশোর জবাব চাইল। ‘খাইছে, ঠিকই তো!’ বলে উঠল মুসা। ‘আমরা তো ওঁর রুমটা দেখিনি।’

‘উনি আমাদেরকে মিথ্যে বলে হয়তো বিভ্রান্ত করতে চেয়েছেন,’ বলল কিশোর।

হেসে উঠল ডন।

‘কিন্তু কেন? আমরা তো তাঁকে সন্দেহ করিনি!’

‘ক্রিস সেটা জানতেন না,’ মনে করিয়ে দিল গোয়েন্দাপ্রধান।

‘কিন্তু চিরকুটের ব্যাপারটা?’ মুসার প্রশ্ন। ‘মেরি হপকিন্স তাঁর অটোগ্রাফ খাতা থেকে সিম্ফনির সই ট্রেস করতে পারেন। ক্রিস ওটা পাবেন কীভাবে?’

কিশোরের কাছে ব্যাখ্যা আছে এর।

‘ক্রিস অর্কেস্ট্রার ম্যানেজার, তাঁর ফাইলে সব শিল্পীর সই থাকতেই পারে।’

ঘটনা এবার নতুন মোড় নিল। জ্যাক নানাকে কথাটা জানাবে ঠিক করল ওরা।

‘চলো, হোটেলে গিয়ে নানার জন্যে অপেক্ষা করি,’ বলল রবিন। ‘উনি তাড়াতাড়ি ওখানে পৌঁছতে চেয়েছেন। ডাইনিং রুম লোকজনে ভরে ওঠার আগেই যাতে ডিনার সারা যায়।

হোটেলে ফেরার পথে, আলাপচারিতা চালিয়ে গেল ছেলে- মেয়েরা।

‘হেক্টরের রুম থেকে খুব সহজেই স্কোরটা হাতাতে পারেন ক্রিস,’ বলল মুসা।

‘সেটা যে কেউই পারে,’ তর্ক জুড়ল ডন। ‘হেক্টর তো রুমে তালা মারেন না।’

‘কিন্তু ক্রিসকে ও ঘরে দেখলে কেউ সন্দেহ করবে না,’ বলল কিশোর। ‘কেননা অর্কেস্ট্রার সদস্যদের দেখাশোনা করাটা ওঁর কাজের মধ্যেই পড়ে।

‘একটা কথা বুঝলাম না,’ বলল সু কি। ‘ক্রিসের কাছে যদি স্বরগ্রামটা থাকেই, তবে তিনি হেক্টরের কামরা তছনছ করতে যাবেন কেন?’

এর জবাব জানা নেই কারও।

ওরা হোটেলে খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই হেক্টর, ক্রিস আর সিম্ফনি হাজির হলেন। দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আগামীকাল রাতের প্রদর্শনী নিয়ে কথাবার্তা বলছেন তাঁরা।

এমনিসময় এক ডেস্ক ক্লার্ক বাদামী রঙের পেল্লায় এক খাম নিয়ে হাজির হলেন।

‘এক্সকিউজ মি, মিস্টার গেইল,’ বললেন।

চেঁচিয়ে উঠলেন ক্রিস।

‘দেখছেন না আমি ব্যস্ত?’ মাছি তাড়াবার ভঙ্গিতে হাত নাড়লেন।

কেরানী বেচারা থতমত খেয়ে পিছিয়ে গেলেন।

‘ওটা আমাকে দিন,’ বলল কিশোর, ‘আমি দেখছি কী করা যায়।

‘ধন্যবাদ,’ বললেন ভদ্রলোক। ‘ওঁর সাথে কথা হলে বোলো,’ এক টুকরো কাগজ তুলে ধরলেন, ‘উনি আমাদেরকে ঠিকানাটা স্পষ্ট করে লিখে খামটা পোস্ট করতে বলেছিলেন, কিন্তু আমরা ওঁর হাতের লেখা কিছুই বুঝিনি। শুধু প্যারিস, ফ্রান্স এটুকুই উদ্ধার করতে পেরেছি।’

‘প্যারিস!’ বলে উঠল ডন।

ছেলে-মেয়েরা পরস্পর তাকাতাকি করল। একই চিন্তা সবার মাথায়। ক্রিস গেইল প্যারিসে কী পাঠাচ্ছেন?

কেরানী খামটা কিশোরের হাতে দিয়ে নিজের ডেস্কে ফিরলেন।

‘প্যারিসে আপনি কী পাঠাচ্ছেন, ক্রিস?’ প্রশ্নটা করতে গিয়ে উত্তেজনায় গলা চড়ে গেল ডনের।

খামটায় ছোঁ মারলেন ক্রিস। কিন্তু দেরি হয়ে গেছে। ডন মুখ খুলল আবারও।

‘এটা সাথে করে নিয়ে যাচ্ছেন না কেন? কাল যেহেতু প্যারিস যাচ্ছেনই।’

ক্রিস জ্বলন্ত দৃষ্টি হানলেন ডনের দিকে।

সিম্ফনির মুখ হাঁ হয়ে গেছে।

কঠোর চোখে ক্রিসের দিকে চাইলেন হেক্টর। ‘প্যারিসে যাচ্ছেন মানে?’

‘আমি-মানে-’ জবান বন্ধ হয়ে গেছে যেন ক্রিসের 1 ফ্যাকাসে মুখের চেহারা দেখে মনে হলো কোথাও লুকোতে পারলে বাঁচেন।

‘উনি প্যারিসের ফ্লাইটের টিকিট কিনেছেন,’ বলল রবিন। ক্রিসের কামরায় কী খুঁজে পেয়েছিল জানাল।

মাথা ঝাঁকালেন হেক্টর।

‘আচ্ছা,’ বললেন। তাঁকে আশ্চর্যরকম শান্ত দেখাল। ক্রিসের দিকে ফিরলেন। ‘খামটা খুলুন, ক্রিস। আমাদের দেখান ভেতরে কী আছে।’

‘কিছু না,’ বললেন ক্রিস। ‘শুধু একটা চিঠি!’

‘ক্রিস,’ পুনরাবৃত্তি করলেন হেক্টর।

‘নিন,’ এবার অনিচ্ছাসত্ত্বেও খামটা হেক্টরের উদ্দেশে বাড়িয়ে দিলেন ক্রিস, তারপর কাছের এক চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে দু’হাতে মুখ ঢাকলেন।

বাদামী খামটা উল্টে দিলেন হেক্টর। ধীরে-ধীরে পেছনের ট্যাবটা ছিঁড়লেন। খামটা এখন খোলা। ভেতরে আলগোছে হাত ভরে বের করে আনলেন…মোযার্টের সেই হারানো স্বরগ্রামটা!