স্টোনম্যান – ২

০২.

 চন্দ্রকান্ত আগন্তুককে দেখে ভাঙা গলায় বলে উঠলেন, “কর্নেল সরকার আপনি এখানে?”

কর্নেল নীলাদ্রি সরকার থানের পিছনে ঢালু হয়ে উঠে যাওয়া কতকটা ত্রিভুজাকৃতি টিলার মাথায় দাঁড়িয়ে বাইনোকুলারে একটা পাখি খুঁজছিলেন। সেই সময় ধারিয়া ফসে দলটি তার চোখে পড়েছিল। চন্দ্রকান্ত রায় তার পুরনো বন্ধু। রাঁচি এলাকায় এলে তার বাড়িতেই উঠতেন। এবার উঠেছিলেন গালা গবেষণাকেন্দ্রের সরকারি গেস্ট হাউসে। অভ্যাসমতো বিকেলে বেড়াতে এসে প্রায় চার কি মি পাহাড়-জঙ্গল ভেঙে নাকবরাবর হেঁটে এই টিলার কাছে। আসতেই একটা বিরল প্রজাতির পাখির ডাক শুনতে পেয়েছিলেন। পাখিটির ছবি তোলার চেষ্টায় ব্যস্ত থাকায় প্রপাতের মাথায় চন্দ্রকান্ত এবং এই যুবকযুবতীদের দিকে তত লক্ষ রাখেননি। একটু পরে চন্দ্ৰকান্তের গাড়ি আসতে দেখে কর্নেল টিলা থেকে নেমে আসছিলেন। তারপর হঠাৎ আদিবাসীদের থানের দিকে চোখ পড়ে চমকে উঠেছিলেন।

চন্দ্ৰকান্তের কথার জবাবে কর্নেল বললেন, “হাউ ইট-হ্যাপন্ড মিঃ রায়?”

চন্দ্রকান্ত বললেন, “চলুন। যেতে যেতে বলছি। এখনই একে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দরকার।”

 “হি ইজ স্টোনডেড মিঃ রায়!” কর্নেল সুপর্ণকে পরীক্ষা করে দেখে বললেন। “হাসপাতালে অবশ্য নিয়ে যেতে হবে। তবে পুলিশকে আগে খবর দেওয়া দরকার। বডি এখানেই থাক। পুলিশ এসে নিয়ে যাক। তা না হলে আপনাদের ঝামেলায় পড়ার চান্স আছে। মিঃ রায়! এঁরা থাকুন এখানে। আপনি এখনই গাড়ি নিয়ে থানায় খবর দিন।”

চন্দ্রকান্ত তখনই গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলেন।

কিংশুক বলল, “এ নিশ্চয় স্টোনম্যানের কাজ।”

দীপিতা কান্না-জড়ানো গলায় বলল, “কলকাতা থেকে স্টোনম্যান এখানে এসেছে আই ডোন্ট বিলিভ দ্যাট।”

রাতুল কর্নেলের দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনি মামাবাবুর পরিচিত। কে আপনি জানতে পারি?”

“আমার নাম কর্নেল নীলাদ্রি সরকার। আপনাদের মামাবাবু আমার বন্ধু।”

রোমেনা একটা পাথরে বসে দু’হাতে মুখ ঢেকে কাঁদছিল। দীপিতা তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল।

“এমন সাংঘাতিক ঘটনা কীভাবে ঘটল বুঝতে পারছি না!” কিংশুক একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল, “তবে এটা ঠিক, কলকাতার স্টোনম্যানের সঙ্গে অদ্ভুত মিল দেখছি। এই দেখুন, পাথরটার ওজন অন্তত পনের-কুড়ি কেজির কম নয়।”

কর্নেল একটা চুরুট ধরিয়ে বললেন, “আগে বলুন ইনি কে? তারপর আপনাদের পরিচয় দিন প্লিজ!”,

দীপিতা কান্না দমন করে সংক্ষেপে সব কথা বলল। তারা পরস্পর বন্ধু। কলকাতা থেকে তারা গতকাল মামাবাবু চন্দ্ৰকান্তের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। তারপর ধারিয়া ফসে এসে চোরপুলিশ বা হাইড অ্যান্ড সিক গেম খেলার থার্ড রাউন্ডে এই সাংঘাতিক ঘটনা ঘটেছে।

রাতুল শ্বাস ছেড়ে বলল, “আমার ধারণা আদিবাসী কোনও উইচ আচমকা পেছন থেকে সুপর্ণের মাথায় এই পাথরটা ছুঁড়ে মেরেছে। সুপর্ণ উপুড় হয়ে পড়ে ছিল। মামাবাবু ওকে চিত করেছেন। তার মানে পা টিপে টিপে এসে কোনও আদিবাসী ওঝা ওর মাথায় পাথরটা মেরে সেই রক্ত-মাই গড! ওই দেখুন থানের বেদিতে টাটকা রক্ত মাখানো!”

কর্নেল দেখে এসে বললন, “হ্যাঁ। মার্ডারার রক্ত মাখিয়েছে বটে!” তারপর একটু হাসলেনও। “রাতুলবাবু আর কিংশুকবাবুর হাতের রক্ত দেখছি। আপনারা সুপর্ণবাবুর বডি তুলতে হাত লাগিয়েছিলেন বোঝা যাচ্ছে!”

কিংশুক বলল, “হোয়াট ডু য়ু মিন বাই দ্যাট!”

 রাতুলও বলল, “ইওর রিমার্ক হিন্টস সামথিং অড কর্নেল সরকার!”

 “ও নো নো মাইডিয়ার ইয়ং মেন!” কর্নল বললেন। আপনারা দুজনেই বডি ওঠাতে সাহায্য করেছিলেন, সেটাই বলছি।”

রোমেনা ততক্ষণে একটু শান্ত হয়েছে। সে উঠে দাঁড়িয়ে ধরাগলায় বলল, “কর্নেল সরকার! আমি যদি ভুল না করি, আপনি কি সেই গোয়েন্দা কর্নেল দ্য ফেমাস প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর? আপনার কথা কাগজে পড়েছি।”

কর্নেল জিভ কেটে সাদা দাড়ি থেকে চুরুটের ছাই ঝেড়ে বললেন, “নাহ্। আমি গোয়েন্দা নই। আমি একজন নেচারিস্ট। প্রকৃতিপ্রেমিক মাত্র। প্রকৃতির রহস্যভেদে আমার আগ্রহ আছে। তবে যেহেতু মানুষও প্রকৃতির অংশ, তাই মানুষের মধ্যেও প্রাকৃতিক রহস্য আছে। মাঝে মাঝে সেই রহস্য ভেদ করতে নাক গলাই এই যা।”

রোমেনা বলল, “আমার অনুরোধ কর্নেল সরকার! সুপর্ণকে কেন মরতে হল–”।

রাতুল বাধা দিয়ে বলল, “রুমু! তুমি কী বলতে চাও?”

রোমেনা জবাব দিল না। কিংশুক বলল, “মাথা খারাপ কোরো না কেউ। ব্যাপারটা ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করো।”

বিনীতা বলল, রাতুলদা! তুমিই চোর-পুলিশ খেলার প্রোপোজ্যাল দিয়েছিলে। না না। আমি খারাপ কিছু মিন করছি না। বলতে চাইছি, এই খেলাই সুপুদার মৃত্যুর কারণ।”

রাতুল খাপ্পা হয়ে বলল, “আমি কেমন করে জানব, কে সুপুকে মার্ডার করবে? আমিও চোর হয়েছিলাম। আমাকেও তো মার্ডার করতে পারত মার্ডারার। পারেনি। কারণ আমি এত দূরে থানের কাছে লুকোতে আসিনি।”

রোমেনা বলল, কর্নেল সরকার! মার্ডার কেসে প্রত্যেককে সন্দেহ করার নিয়ম। য়ু আস্ক কোশ্চেনস টু এভরিবডি!”

কর্নেল আস্তে বললেন, “পুলিশ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত মিস রোমেনা–”

 “রোমেনা চৌধুরি!”

“থ্যাংকস! তো আপাতত একটা প্রশ্ন শুধু করতে চাই। একে একে বলুন। আগে বলুন কিংশুকবাবু! আপনিও চোর হয়েছিলেন। এত দূর পর্যন্ত লুকোতে এসেছিলেন কি?

কিশুক বলল, “নাহ।”

“রাতুলবাবু?”

 “নাহ্।”

 “কিংশুকবাবু পুলিশ হওয়ার সময় কি এর কাছাকাছি এসেছিলেন?”

 “নাহ্।”

 “রাতুলবাবু, আপনি?”

“নাহ।”

 “দীপিতা?”

 “না।”

 “বিনীতা?”

“না।”

“রোমেনা?”

রোমেনা একটু চুপ করে থেকে বলল, যে পর্যন্ত এসেছিলুম, সেখান থেকে এই থানটা দেখা যায়।”

“থানের কথা বলেছিলেন কাউকে?”

রোমেনা আবার একটু চুপ করে থেকে বলল, “মনে পড়ছে না। তবে আসার পথে মামাবাবু এই থানটার কথা বলেছিলেন।”

 দীপিতা বলল, “হ্যাঁ। বলেছিলেন।”

রাতুল বলল, “আমি শুনিনি। খেয়াল করিনি।”

কিংশুক বলল, “কী জানি! আমি সুপর্ণের সঙ্গে ফিল্ম নিয়ে আলোচনা করছিলুম। ডকু মুভি তোলার নেশা আছে আমার।”

বিনীতা বলল, “আমি মামাবাবুর কথা শুনিনি। ফিল্ম নিয়ে ওদের আলোচনা শুনছিলুম। তবে আমি জানতুম, ফসের এদিকে আদিবাসীদের থান আছে। জেলা গেজেটিয়ারে পড়েছি, মাঝে মাঝে নাকি নরবলি দেওয়া হত এক সময়।”

“আপনি কি ছাত্রী এখনও?”

“হ্যাঁ। অ্যানথ্রোপলজির ছাত্রী।”

 “দীপিতা কি ছাত্রী?”

 ‘দীপিতা বলল, “নাহ্। আপনি স্বচ্ছন্দে আমাদের তুমি বলতে পারেন।”

কিংশুক বলল, “অবশ্যই পারেন।”

রাতুল সিগারেট ধরাল। বলল, “আমিও আপত্তি করব না। কিন্তু এখানে থাকতে আমার অসহ্য লাগছে। আমি রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছি।”

সে চলে গেল রাস্তার দিকে। কিংশুক বলল, অসহ্য আমারও লাগছে। বাট আই মাস্ট ফেস ইট!”

রোমেনা বলল, “হ্যাঁ–এটা একটা চ্যালেঞ্জ।”

দীপিতা কেঁদে উঠল। “কিন্তু আমি পারছি না। গা ঘুলোচ্ছে।” বলে সে রাতুলের মতো চলে গেল রাস্তার দিকে।

বিনীতা কান্না চেপে বলল, “ইটস আ রিচুয়াল কিলিং। নৃবিজ্ঞানে এমন অনেক কেস স্টাডি করেছি। আদিবাসীদের মধ্যে এই কাস্টম আছে কোথাও কোথাও! আমার ধারণা, রাতুলদা ইজ কারেক্ট। ওদের কোনও ওঝা এখানে ওত পেতেছিল।”

রোমেনা বলল, “অ্যাবসার্ড! এই পাথরটা মেয়েরাও আচমকা কারও মাথায় এই টিলার ওপর থেকে ফেললে যত শক্তিমান লোক হোক, মারা পড়তে পারে। আমাদের যে-কেউই এটা করতে পারে।”

কিংশুক হাসবার চেষ্টা করে বলল, “হোয়াটস দ্য মোটিভ? ভুলে যেও না, সব কিলিংয়ের একটা মোটিভ থাকে।”

রোমেনা গলার ভেতর বলল, “মোটিভ একটা থাকা কি অসম্ভব?”

“কী মোটিভ?”

“কিংশুকদা, আই মাস্ট বি ফ্র্যাংক নাও।” রোমেনা শক্ত মুখে বলল। “আমাদের মধ্যে পরস্পরের একটা এমোশন্যাল সম্পর্ক আছে। আমি ও সুপর্ণ, রাতুল ও দীপিতা, তুমি ও বিনীতা”।

বিনীতা বলে উঠল বিকৃত স্বরে, “স্টপ ইট! অল দ্য ন্যাস্টি থিংস।”

সে হন হন করে চলে গেল রাস্তার দিকে। কিংশুক আস্তে বলল, “য়ু আর ম্যাড রুমু!”

রোমেনা বলল, “নাহ্। আমার মাথা খারাপ হয়নি। একটু আগে তুমি বলেছিলে, আই মাস্ট ফেস ইট। নাও ফেস ইট কিংশুকদা! এমোশন্যাল সম্পর্ক কখনও এক জায়গায় থাকে না। এমন তো হতেই পারে আমি ও রাতুল, সুপর্ণ ও দীপিতা, রাতুল ও বিনীতা, তুমি ও দীপিতা–এভাবে এমোশনের চাকা ঘুরপাক খেতে খেতে প্রত্যেকে প্রত্যেকের শত্রু হয়ে উঠতে পারি? পারি না?”

কিংশুক জবাব দিল না। রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইল।

কর্নেল চুপচাপ শুনছিলেন। বললেন, “রোমেনা, তুমি এক্সেপশন্যালি ইনটেলিজেন্ট। আই এগ্রি উইদ ইওর পয়েন্ট। দ্য হুইল অব লাভ। পরশুরাম — রাজশেখর বসুর গল্পটা আশা করি পড়েছ। সেটা এক হাসির গল্প অবশ্য। কিন্তু — হা ডার্লিং দিস ইজ আ পাবলিসিটি।”

কিংশুক কর্নেলের দিকে তাকাল।

কর্নেল তাকে বললেন, “রোমেনার বক্তব্য সম্পর্কে তোমার কী মত কিংশুক?”

“অ্যাবসার্ড। শি ইজ ম্যাড। এটা কোনও আদিবাসী স্টোনম্যানের কাজ। রিচুয়্যাল কিলিং।”

কর্নেল হাসলেন। “জানো? কলকাতার স্টোনম্যান সম্পর্কে আমার মত জানতে চাওয়া হয়েছিল। আমি বলেছি, রিচুয়্যাল কিলিংস। হত্যাকারীকে সম্ভবত কোনও তান্ত্রিক বলেছে, অন্তত তেরোটি নরহত্যা করতে পারলে মনোবাসনা পূর্ণ হবে। কিন্তু হত্যা তত সহজ কাজ নয়। সবার পক্ষে সম্ভবও নয়। কিন্তু একটা পদ্ধতিতে সহজে সম্ভব। ফুটপাতে ঘুমন্ত কোনও নিরীহ লোককে হত্যা করলে তদন্ত এগোবে না। কারণ সে তো ভবঘুরে, অজ্ঞাত পরিচয় কোনও ভিখারি ভিখারিনী, পঙ্গু কিংবা রুগ্‌ণ লোক। ধারালো অস্ত্র ধরা যাক, ভোজালির এক কোপে হত্যা করা সম্ভব না হতেও পারে। এ ক্ষেত্রে ভারী পাথর খুব সহজ মার্ডার উইপন। আমি এ-ও বলেছি, হত্যাকারী স্টোনম্যানের নিশ্চয়ই গাড়ি আছে।”

রোমেনা বলল, “বুঝেছি। এক্সট্রিমলি রিচুয়্যাল কিলিংস। নিরাপদে নরহত্যা।”

“এ ক্ষেত্রেও স্টোনম্যান পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে, আপাতদৃষ্ট মনে হচ্ছে।

কিংশুক বলল, “আপনার এই ডার্লিং বলাটা অদ্ভুত!”

রোমেনা বলল, “কাগজে পড়েছি উনি ম্যান-উওম্যান নির্বিশেষে যাকে স্নেহ করেন, তাকে ডার্লিং বলেন।”

“তুমি” কিংশুক একটু অবাক হয়ে বলল, “য়ু আর সো কোল্ড রুমু! তুমি এত শিগগির সামলে উঠেছ!”

“কী বলতে চাও?”

কিংশুক হঠাৎ ফেটে পড়ল। “আমার ধারণা, তুমিই সুপুকে মার্ডার করিয়েছ।” বলেই সে হন হন করে রাস্তার দিকে চলে গেল।

রোমেনা রুষ্ট চোখে সেদিকে তাকিয়ে রইল।

 কর্নেল ডাকলেন, “রোমেনা!”

রোমেনা কেঁদে ফেলল। বিকৃতস্বরে বলল, “উই আর অল ম্যাড, কর্নেল সরকার। আমরা শিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। আমরা কী বলছি, কী করছি, আমরা নিজেরাই জানি না। রিয়েল-আনরিয়েল ঘুলিয়ে গেছে আমাদের কাছে।”

 “ফরগেট ইট, ডার্লিং!” বলে কর্নেল সুপর্ণের ডেডবডির কাছে গেলেন। একটু পিছিয়ে এলেন আবার। বললেন, “আবার প্রশ্নটা করছি। রাতুল চোর পুলিশ খেলার প্রোপোজাল দিয়েছিল?”

“হ্যাঁ। কিন্তু আমিই প্রথমে লুকিয়ে থেকে হারিয়ে যাওয়ার ভান করেছিলুম।” রোমেনা আস্তে বলল, “আসলে আমি সুপর্ণের রিঅ্যাকশন দেখতে চেয়েছিলুম।”

“কী রিঅ্যাকশন দেখেছিলে?”

“নাথিং! ও নির্বিকার ছিল।” রোমেনা একটু থেমে আবার বলল, “এখানে গতকাল আসার পর সুপর্ণের মুডে কেমন একটা চেঞ্জ লক্ষ করেছিলুম। গতরাতে লনে আড্ডা দেওয়ার সময় ওকে অন্যমনস্ক দেখাচ্ছিল। একবার হঠাৎ উঠে চলে গেল গাছপালার আড়ালে। জ্যোৎস্নার মধ্যে একবার”

রোমেনা থেমে গেল। কর্নেল বললেন, “ফ্র্যাংকলি বলল রোমেনা!”

“মনে হল–আমার ভুল হতেও পারে–ওর সঙ্গে সম্ভবত দীপুকে দেখেছিলাম।”

“দীপিতাকে?”

“হ্যাঁ। দীপুও উঠে গেল, বলল আসছি। কিন্তু সে বাড়ির দিকেই গিয়েছিল। তারপর অন্য পথে”জানি না কর্নেল! আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না এমন কিছু কী ভাবে সম্ভব? সুপর্ণ জানত, দীপুর কিংশুকের সঙ্গে সম্পর্ক আছে।” রোমেনা রুমালে চোখ মুছে বলল, “আজ সারা দিন সুপর্ণকে আন্যমনস্ক দেখেছি।”

কর্নেল থানটার চারপাশে ঘুরে এলেন। তারপর বাইনোকুলারে চারদিক খুঁটিয়ে দেখলেন। বললেন, “এখানে সুপর্ণকে খুঁজতে আসার কথা কে প্রথম বলল?”

“প্রথমে বিনীতা বলল রাস্তায় ওকে পেয়ে যাব। পরে মামাবাবু বললেন–”

“চন্দ্রকান্ত রায় কি তোমার আত্মীয়?”

 “নাহ। উনি দীপিতা-বিনীতার মামা। রাতুলেরও দূর সম্পর্কের মামা।”

“এখানে বেড়াতে আসার প্রপোজাল কার?”

 “ধারিয়া ফসে? দীপিতার।”

 “রাঁচি আসার প্রোপোজ্যাল?”

“রাতুলের।”

 “রাতুল কী করে?”

“স্মলস্কেল ইন্ডাস্ট্রি। ওর একটা ছোট কারখানা আছে।”

 রাস্তার জিপের হর্ন শোনা গেল। পুলিশের গাড়ি এসে গেছে। চন্দ্ৰকান্তের গাড়ির পেছনে একটা অ্যাম্বুল্যান্স। পুলিশ অফিসার এবং কনস্টেবলরা আগে দৌড়ে এল। পুলিশ ইন্সপেক্টর হরিশ পাণ্ডে কর্নেলকে দেখে বললেন, “হাই ওল্ড বস! যেখানে আপনি, সেখানেই ডেডবডি– দ্যাট ইজ দ্য পোভা।”

কর্নেল একটু হেসে বললেন, “আই কান্ট হেল্প ইট মিঃ পাণ্ডে! হয়তো এটাই আমার নিয়তি।…”

.