১. জনতত্ত্বের ভূমিকা

দ্বিতীয় অধ্যায় । ইতিহাসের গোড়ার কথা
প্রথম পরিচ্ছেদ –  জনতত্ত্বের ভূমিকা

জনতত্ত্বের ভূমিকা

একদা রবীন্দ্রনাথ ভারততীর্থকে অগণিত জাতির মিলনক্ষেত্র কল্পনা করিয়া বলিয়াছিলেন,

কেহ নাহি জানে, কার আহ্বানে কত মানুষের ধারা,
দুর্বার স্রোতে এল কোথা হতে সমুদ্রে হল হারা।

ভারততীর্থের অন্যতম প্রান্তিক দেশ বঙ্গভূমি সম্বন্ধেও এ কথা সমান প্রযোজ্য। গঙ্গা-করতোয়া-লৌহিত্যবিধৌত, সাগর-পর্বতষ্কৃত, রাঢ়-পুণ্ড-বঙ্গ-সমতট এই চতুর্জনপদসম্বদ্ধ বাঙলাদেশে প্রাচীনতম কাল হইতে আরম্ভ করিয়া তুকী অভু্যদয় পর্যন্ত কত বিভিন্ন জন, কত বিচিত্র রক্ত ও সংস্কৃতির ধারা বহন করিয়া আনিয়াছে, এবং একে একে ধীরে কোথায় কে কীভাবে বিলীন হইয়া গিয়াছে ইতিহাস তাহার সঠিক হিসাব রাখে নাই। সজাগ চিত্তের ও ক্রিয়াশীল মননের রচিত কোনও ইতিহাসে তাহার হিসাব নাই এ কথা সত্য, কিন্তু মানুষ তাহার রক্ত ও দেহগঠনে, ভাষায় ও সভ্যতার বাস্তব উপাদানে এবং মানসিক সংস্কৃতিতে তাহা গোপন করিতে পারে নাই। সকলের উপর এই বিচিত্র রক্ত ও সংস্কৃতির ধারা তাহার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত রাখিয়া গিয়াছে বাঙালীর প্রাচীন সমাজবিন্যাসের মধ্যে রাষ্ট্ৰীয় ইতিহাসে সে ইঙ্গিত কিছুতেই ধরা পড়িবার কথা নয়।

বাঙলাদেশে আজ জনতত্ত্ব-গবেষণার মাত্র শৈশবাবস্থা। এ কথা অবশ্য সকলেই জানেন, বাঙালী এক সংকর জন(১), কিন্তু কথাটা ঐখানেই শেষ হইয়া যায় না, বরং ঐখানেই কথার আরও । অথচ, কী কী মূল উপাদানের জৈব সমন্বয়ের ফলে বাঙালী আজ এক সংকর জনে পরিণত হইয়াছে, এ কথা কমবেশি নিশ্চয় করিয়া বলিবার মতন যথেষ্ট উপকরণ দেশের সর্বত্র ইতস্তত বিক্ষিপ্ত থাকিলেও নৃতত্ত্ববিদ ও ঐতিহাসিকদের দৃষ্টি সেদিকে আজ পর্যন্ত বিশেষ আকৃষ্ট হয় নাই । কেন হয় নাই তাহার কারণ কষ্টবোধ্য না হইলেও এখানে তাহার আলোচনা অবান্তর । বাঙালীর জনতত্ত্ব-নিরূপণ শুধু নৃতাত্ত্বিকের কাজ নয় ; তাহার সঙ্গে ঐতিহাসিক ও ভাষাতাত্ত্বিকের জ্ঞান ও দৃষ্টির একত্র মিলন না হইলে বাঙালীর জনরহস্য উন্মোচন করা প্রায় অসম্ভব বলিলেই চলে। যে জন যত বেশি সংকর সে জনের ক্ষেত্রে এ কথা তত বেশি প্রযোজ্য ।

বাঙালীর জনতত্ত্ব নিরূপণের একতম এবং প্রধানতম উপায় বাঙলাদেশের আচণ্ডাল সমস্ত বর্ণের এবং সমস্ত শ্রেণীর জনসাধারণের, বিশেষভাবে প্রত্যন্তশায়ী জনপদবাসীদের সকলের রক্ত ও দেহগঠনের বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণ, এক কথায় নরতত্ত্বের পরিচয় । আমাদের দেশের নৃতত্ত্ব গবেষণায় রক্তবিশ্লেষণ এখনও সাধারণভাবে পণ্ডিতদের দৃষ্টির পরিধির মধ্যে ধরা দেয় নাই । দুই-একজন একটু-আধটু পরীক্ষা আরম্ভ করিয়াছেন মাত্র। দেহগঠনের বিশ্লেষণেরও এ পর্যন্ত যাহা স্বীকৃত ও অনুসৃত হইয়াছে তাহা শুধু নরমুণ্ড, নরকপাল ও নাসিকার পরিমিতি ও পরস্পর অনুপাত, এবং চুল, চোখ ও চামড়ার রং আশ্রয় করিয়া। যুরোপে, বিশেষ করিয়া জার্মানী ও অস্ট্রিয়ায়, গায়ের চামড়ার উপাদানবৈশিষ্ট্য, কেশমূল, কেশবৈশিষ্ট্য, নখবৈশিষ্ট্য, হাত ও পায়ের তালু প্রভৃতি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নানা গুণ ও বৈশিষ্ট্য লইয়া যে সব আলোচনা হইয়াছে আমাদের দেশের নরতত্ত্ব গবেষণায় আজ বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় পাদেও তাহা অল্পই স্থান পাইয়াছে। নরমুণ্ড, কপাল ও নাসিকার পরিমিতি ও পরস্পর অনুপাত বিশ্লেষণ যাহা হইয়াছে তাহাও যথেষ্ট নয়। বহুদিন আগে রিজলি সাহেব বাঙলাদেশের বিভিন্ন স্থানের জনসাধারণের কিয়দংশের পরিমিতি গণনা করিয়াছিলেন ; আজ পর্যন্ত নৃতত্ত্ববিদেরা সাধারণত সেই গণনার উপরই নির্ভর করিয়া আসিয়াছেন । সাম্প্রতিক কালে ফন আইকস্টেডট্র, জে এইচ. হাটন বিরজাশংকর গুহ, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, রমাপ্রসাদ চন্দ, শরৎচন্দ্র রায়, হারাণচন্দ্র চাকলাদার, মীনন্দ্রনাথ বসু, তারকচন্দ্র রায়চৌধুরী প্রমুখ কয়েকজন পণ্ডিত কিছু কিছু নূতন পরিমিতি গ্রহণ করিয়াছেন, কিন্তু লোকসংখ্যার অনুপাতে তাহা খুবই অল্প, অস্বীকার করিবার উপায় নাই। তাহা ছাড়া, যে সব নিদর্শন আহরণ ইহারা করিয়াছেন, সর্বত্র সেগুলির প্রতিনিধিত্ব স্বীকার করা যায় না, অর্থাৎ সমাজের সকল বর্ণ ও শ্রেণী-স্তরের ও দেশের সকল স্থানের জনসাধারণের মধ্য হইতে নিদর্শন নির্বাচন সর্বত্র যথার্থ ও যথেষ্ট হইয়াছে ; বর্ণ, শ্রেণী ও স্থানের ইতিপরম্পরাগত মূল্য স্বীকৃত হইয়াছে এ কথা নিঃসংশয়ে বলা যায় না। তাহা ছাড়া, পরিমিতিগণনায় প্রত্যেক ক্ষেত্রেই যে ব্যক্তিগত ভুল থাকার সম্ভাবনা, তাহাও অস্বীকার করিবার উপায় নাই। তবু, যতটুকু হইয়াছে, যেভাবে হইয়াছে তাহা হইতে কিছু কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যায়, এবং বাস্তব সভ্যতা ও মানসিক সংস্কৃতি-বিকাশের ইতিহাসের সাহায্যে সেই ইঙ্গিতগুলি ফুটাইয়া তোলা হয়তো অসম্ভব নয়।

বাঙালীর জনতত্ত্ব নিরূপণের কিছুটা সহায়ক উপায়, বাঙলা ভাষার বিশ্লেষণ। অবশ্য এ কথা সত্য যে ভাষাবিশ্লেষণের সাহায্যে নরতত্ত্ব ঠিক নির্ণয় করা চলে না ; কারণ মানুষ নানা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অথবা ধর্মগত কারণে ভাষা বদলায় ; এক জন অন্য জনের ভাষা গ্রহণ করে এবং সেই ভাষাই দুই-তিন পুরুষ পরে নিজেদের জাতীয় ভাষায় পরিণতি লাভ করে ; ভারতবর্ষের ইতিহাসে এমন দৃষ্টান্তের অভাব নাই। কাজেই ভাষার উপর নির্ভর করিয়া নরতত্ত্ব নির্ণয়ের চেষ্টা স্বভাবতই অযৌক্তিক এবং বিজ্ঞানসম্মত পস্থার বিরোধী। তবে জননির্ণয়ে ভাষা-বিশ্লেষণ যে অন্যতম সহায়ক এ কথাও একেবারে উড়াইয়া দেওয়া যায় না। কোনও জনের ভাষা বিশ্লেষণ করিয়া যদি দেখা যায় সেই ভাষার জীবনচর্যার মূল শব্দগুলি কিংবা পদরচনারীতি কিংবা পদভঙ্গি অথবা মানুষ ও স্থান ইত্যাদির নাম অন্য কোনও জনের ভাষা হইতে গৃহীত বা উদ্ভূত, তখন স্বভাবতই এ অনুমান করা চলে যে, সেই পূর্বোক্ত জনের সঙ্গে শেষোক্ত জনের রক্তে সংমিশ্রণ না হোক, মেলামেশা ঘটিয়াছে। এই মেলামেশা নানা সামাজিক ও অন্যান্য কারণে সমাজ-কাঠামোর সকল স্তরে নাও হইতে পারে, যে যে স্তরে হইয়াছে সেখানেও সর্বত্র সমভাবে হইয়াছে এ কথাও বলা যায় না। যাহাই হউক, ভাষাবিশ্লেষণের ইঙ্গিত নরগোষ্ঠী নির্ধারণে না হউক, জন-নিরূপণে অনেকখানি সাহায্য করিতে পারে ; আর সেই ইঙ্গিতের মধ্যে যদি নরতত্ত্ব-বিশ্লেষণলব্ধ ইঙ্গিতের সমর্থন পাওয়া যায়, তাহা হইলে পূরক সাক্ষ্য হিসাবে জনতত্ত্ব নির্ণয়ের কাজেও লাগিতে পারে।

বাঙলাদেশ ও বাঙলার সংলগ্ন প্রত্যন্ত দেশগুলির ভাষার বিশ্লেষণ অনেক দূর অগ্রসর হইয়াছে। আচার্য গ্রিয়ার্সন হইতে আরম্ভ করিয়া সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় মহাশয় পর্যন্ত কয়েকজন খ্যাতনামা পণ্ডিত বাঙলা ভাষার জন্ম ও জীবনকথা নিরূপণ করিতে সার্থক প্রয়াস করিয়াছেন। ফরাসী পণ্ডিত জ্যাঁ পশিলুস্কি, জুল ব্লখ ও সিলভ্যাঁ লেভি এবং তাঁহাদের অনুসরণ করিয়া সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ও প্রবোধচন্দ্র বাগচী মহাশয় আর্যপূর্ব ও দ্রাবিড়পূর্ব ভারতীয় ভাষা ও জন সম্বন্ধে যে মূল্যবান গবেষণার সূত্রপাত করিয়া দিয়াছেন, তাহাও প্রাচীন বাংলার ভাষা ও জন সম্বন্ধে নূতন আলোকপাত করিয়াছে, এবং তাহার ফলে বাঙলার জন-নিরূপণ-সমস্যা সহজতর হইয়াছে ।

বাঙালীর জনতত্ত্ব নিরূপণের অন্যতম সহায়ক উপায়, প্রাচীন ও বর্তমান বাস্তব সভ্যতা ও মানসিক সংস্কৃতির বিশ্লেষণ। যেমন ভাষায় তেমনই বাস্তব সভ্যতা ও মানসিক সংস্কৃতিতেও বিভিন্ন জনের সংমিশ্রণের ইতিহাস লুক্কায়িত থাকে। প্রত্যেক জনের ভিতর এই দুই বস্তু একটা রূপ গ্রহণ করে, এবং নানা উপায় ও উপকরণ, রীতি ও অনুষ্ঠান, আদর্শ ও বিশ্বাসের মধ্য দিয়া তাহা আত্মপ্রকাশ করিয়া থাকে। কালচক্রে আবর্তে সেই জন যখন অন্য জনের দ্বারা পরাভূত অথবা মিত্র বা শক্ররূপে পরস্পরের সম্মুখীন হয়, একের সঙ্গে অন্যের আদান-প্রদান ঘটে তখন কোনও জনই নিজের সভ্যতা-সংস্কৃতিকে অন্যের প্রভাব হইতে মুক্ত রাখিতে পারে না। ব্যক্তির জীবনে সাধারণ প্রাকৃতিক নিয়মে যাহা ঘটে জনের জীবনেও তাঁহাই। অবশ্য, অধিকতর পরাক্রান্ত ও বীর্যবান যে জন সে প্রভাবান্বিত বেশি করে, নিজে প্রভাবান্বিত হয় কম। কিন্তু তৎসত্ত্বেও সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠী ও স্তরে এই নৈকট্যের ফলে কমবেশি আদান-প্রদান চলিতেই থাকে এবং একটা সমন্বয়ও সঙ্গে সঙ্গে চলিতে থাকে। জীবধর্মের নিয়মই এইরূপ । আঘাত হইলেই প্রত্যাঘাতও অনিবার্য এবং দুইয়ে মিলিয়া একটা সমন্বিত গতিও সমান অনিবার্য। বাঙলাদেশে প্রাচীনকালে, এবং কতকটা বর্তমানেও, যে সমন্বিত সভ্যতা ও সংস্কৃতি রূপ দেখিতে পাওয়া যায় তা বিশ্লেষণ করিলে বিভিন্ন জনের বাস্তব সভ্যতা ও মানসিক সংস্কৃতির কিছু কিছু পরিচয় সহজেই ধরা পড়ে, এবং ভাষা ও নৃতত্ত্ব বিশ্লেষণের সাহায্যে তাহা হইতে জন-নির্ণয়ের কাজটাও কিছুটা সহজ হয়। এ কথা অবশ্যই সত্য, সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিশ্লেষণ একক কখনোই জননির্দেশক হইতে পারে না। কিন্তু তাহা যে ইঙ্গিত দেয়, ভাষা ও নৃতত্ত্বের ইঙ্গিতের সঙ্গে তাহা যোগ করিলে জনতত্ত্বের স্বরূপ তাহাতে অল্পবিস্তর ধরা পড়িতে বাধ্য।

এই সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিশ্লেষণের কাজ আমাদের দেশে খুব যে অগ্রসর হইয়াছে তাহা বলা যায় না । সংস্কৃতি, বিশেষভাবে ধর্ম ও মূর্তিতত্ত্ব এবং আচার-অনুষ্ঠানের বিশ্লেষণ কিছু কিছু যদি বা হইয়াছে, বাস্তব সভ্যতার বিশ্লেষণ একেবারেই হয় নাই। এক্ষেত্রে ভাষা-বিশ্লেষণের সাহায্য অপরিহার্য। সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বিজ্ঞানসম্মত ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ যাহা হইয়াছে তাহার মধ্যে সমাজের উচ্চ ও নিম্নস্তরের লোকাচার ও লোকধর্ম অল্পই স্থান পাইয়াছে এবং পুরাণানুমোদিত ধর্মের স্থানও যথেষ্ট হয় নাই ; অথচ জনতত্ত্বের অনেক নিশানা ঐ গুহাগুলির মধ্যে নিহিত । এই সমস্ত উপায় ও উপকরণ সম্বন্ধে সমস্ত তথ্য জানিবার উপায় নাই এবং জন ও ভাষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে যে সব প্রশ্ন এই উপলক্ষে মনকে অধিকার করা সম্ভব, তাহার সবকিছুর উত্তর পাওয়া যাইবে, তাহাও বলা যায় না। তবে মোটামুটি কাঠামোটা ধরা পড়িতে পারে, এই আশা করা যায়। বাঙালীর ইতিহাসের জন্য বাঙলাদেশের নরতত্ত্ব ও তৎসংলগ্ন অন্যান্য সমস্যা সম্বন্ধে যে সব আলোচনা-গবেষণা ইত্যাদি হইয়াছে তাহার বিশদ ও বিস্তারিত পরিচয় ও বিশ্লেষণের প্রয়োজন এখানে কিছু নাই। এই আলোচনা ও গবেষণার মোটামুটি ফলাফল একত্র করিতে পারিলে এবং সঙ্গে সঙ্গে ভাষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিশ্লেষণের ফলাফলের সম্বন্ধ নির্ণয় করিতে পারিলেই ইতিহাসের প্রয়োজন মিটিতে পারে।

ভারতবর্ষে বায়ানা নামক স্থানে প্রস্তরীভূত নরমুণ্ডের কঙ্কাল, দক্ষিণ ভারতে আদিত্যনল্পরে প্রাপ্ত কতকগুলি মুণ্ড-কঙ্কাল, মহেন-জো-দড়ো ও হরপ্পায় প্রাপ্ত কতকগুলি নরকঙ্কাল এবং তক্ষশিলার ধর্মরাজিক বিহারের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে প্রাপ্ত কয়েকটি বৌদ্ধভিক্ষুর দেহাবশেষ ভারতীয় নরতত্ত্বজিজ্ঞাসার মীমাংসায় যে পরিমাণে সাহায্য করিয়াছে, বাঙলাদেশের জননির্ণয়ে তেমন সাহায্য পাইবার উপায় এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয় নাই। বস্তুত, এ যাবৎ বাঙলাদেশের কোথাও প্রাগৈতিহাসিক বা ঐতিহাসিক কোনও যুগেরই কোনও নরকঙ্কাল আবিষ্কৃত হয় নাই। প্রাগৈতিহাসিক লৌহ অথবা প্রস্তর-যুগের বিশেষ কোনও বাস্তবাবশেষও বাঙলাদেশে এ পর্যন্ত এমন কিছু পাওয়া যায় নাই যাহার ফলে সেই যুগের সভ্যতা এবং সেই সূত্রে নরতত্ত্বনির্ণয়ের ইঙ্গিত কতকটা পাওয়া যাইতে পারে। কিন্তু যাহা আমাদের নাই তাহা লইয়া দুঃখ করিয়াও লাভ নাই। যতটুকু যাহা পাওয়া গিয়াছে তাহা লইয়াই একটা হিসাব-নিকাশ আপাতত করা যাইতে পারে।

——————
(১) এই নিবন্ধে জন সাধারণত ইংরাজী ‘people’ অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে , caste বুঝাইতে ‘বর্ণ’ ও বাংলা চলতি ‘জাত’ শব্দ ব্যবহৃত হইয়াছে। ইংরাজি ‘race’ ও ‘people’ এই দুইটি শব্দ লইয়া নানাপ্রকার বিভ্রমের সৃষ্টি ঐতিহাসিকদের মধ্যে দুর্লভ নয় ।