১২৫. ধর্ম্মের নিকট যুধিষ্ঠিরের বরলাভ ও কৃষ্ণাসহ চারি ভ্রাতার পুনর্জ্জীবন প্রাপ্তি

শুনিয়া রাজার বাণী ধর্ম্ম মহাশয়।
আমি তব পিতা, বলি দেন পরিচয়।।
তব ধর্ম্ম জানিবারে করিয়া মনন।
এই সরোবর আমি করেছি সৃজন।।
এত বলি ধর্ম্মরাজ পুত্র নিয়া কোলে।
লক্ষ লক্ষ চুম্ব দেন বদন মণ্ডলে।।
ধন্য কুন্তী, তোমা পুত্র গর্ভে ধরেছিল।
তোমার ধর্ম্মেতে বিশ্ব পবিত্র হইল।।
আমার বচন শুন পুত্র যুধিষ্ঠির।
শেষ দুঃখ সম্বরহ, মন কর স্থির।।
ধর্ম্মেতে ধার্ম্মিক তুমি হও মতিমন্ত।
অচিরে হইবে তব যাতনার অন্ত।।
দয়াশীল ধর্ম্মবান্ ক্ষমাবান ধীর।
জানিলাম তুমি সর্ব্বগুণেতে গভীর।।
অল্পদিনে নষ্ট হবে কৌরব দুরন্ত।
কহিনু তোমারে আমি ভবিষ্য-বৃত্তান্ত।।
ধর্ম্ম না ছাড়িহ কভু, ধর্ম্ম কর সার।
দুঃখের সাগরে হবে অনায়াসে পার।।
এত বলি আশ্বাসিয়া মধুর বচনে।
কৃষ্ণা সহ বাঁচাইল ভাই চরি জনে।।
প্রণাম করিয়া কহিলেন নৃপমণি।
সহায় সম্পদ তব চরণ দুখানি।।
আশীর্ব্বাদ করি ধর্ম্ম গেলেন স্বস্থানে।
প্রাণ পেয়ে পঞ্চ জন ভাবিছেন মনে।।
কি হেতু এখানে মোরা আছি পঞ্চজন।
ভাবিয়া না পাই কিছু ইহার কারণ।।
হেনকালে দেখি তথা ধর্ম্মের নন্দনে।
শীঘ্রগতি তথা আসি ভেটে পঞ্চ জনে।।
জিজ্ঞাসেন যুধিষ্ঠিরে কহ বিবরণ।
এখানে আমরা আসিলাম কি কারণ।।
যুধিষ্ঠির বলিলেন, শুনহ কারণ।
মৃত্যু-সরোবর এই ধর্ম্মের সৃজন।।
তৃষ্ণায় আকুল হয়ে ধর্ম্ম-মায়াবলে।
আসিয়া মরিলে সবে এই মৃত্যুজলে।।
আমিও আসিয়া মৃত্যু করিলাম পণ।
তবে ধর্ম্ম বকরূপে দিলেন দর্শন।।
ছলনা করিয়া আগে অনেক প্রকারে।
শেষে দয়া করি বর দিলেন আমারে।।
সেই বরে বাঁচাইয়া তোমা পঞ্চ জনে।
আশীর্ব্বাদ করি ধর্ম্ম গেলেন স্বস্থানে।।
কহিলাম ভ্রাতৃগণ এই ত কারণ।
অতঃপর এই জলে কর সবে স্নান।।
এত বলি যুধিষ্ঠির ভ্রাতৃগণ সঙ্গে।
স্নান করিলেন সেই জলে মনোরঙ্গে।।
সেই দিন রহিলেন তথা ছয় জন।
পরদিনে জন্মেজয় শুন বিবরণ।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
কাশীরাম দাস কহে, শুনে পুণ্যবান।।