গীতিসংগ্রহ – বিবিধ
৮৮২
(ত্রিনাথ বন্দনা)
আইল নতুন রসেরি সারাৎসার রে
ঠাকুর তিননাথ অবতার।।
রসে রস মিশাইয়ে রসে দেও সাঁতার
কলির জীব সামান্য অতি জীবের অল্প আয়ু বুদ্ধি রে
উদয় হইল কলির জীব তরাইতে রে
ভাইবে রাধারমণ বলে ঠাকুর তিননাথ হেরি পদকমল রে
তিননাথ অন্তিমকালে দিও চরণতরী রে।
রা/১৫৫
৮৮৩
(বিয়ের গান–বাদ্যকর বরণ)
আইলারে বাজনিগুষ্টি বইলা বারবাড়ি।।
শব্দ শুনি জামাইর মায় পাঠাইলা বারবাড়ি।।
ঘর গজে উঠিতে রে জামাইনর মায় দিলা বানা।
বিছানায় বিছাইয়া দিলা জামাইর মার চারখানা।
চাটি দিলা পাটি দিলা আর দিলা গালিচা।
তামাক খাইতে দিলা বেলোয়ারি হুক্কা।।
বালিশ দিলা গির্দ্দিক দিলা চান্দুয়া মশারি
পান খাইতে দিলা নারায়ণগঞ্জী থালি।।
বানা নিলা বাজনিগুষ্টি ঘরাগজে যাইয়া।
রমণ বলে, বিদায় করে জামাই মারে দিয়া।।
শা/১০
৮৮৪
(ত্রিনাথ বন্দনা।)
আও হে গাইঞ্জা লাগাইয়া বসিয়াছি।
যশোর হইতে নতুন গাইঞ্জা কাইল কিনিয়া আনিয়াছি।।
ধোও হে গাইঞ্জা গোলাপজলে বীজ ফালাইয়া পাকুড়ি তুলে
হাতে তুলে নয় টিপ দিয়ে কলকি সাজাইয়াছিরে।।
গাইঞ্জা খাও রে যত সখা একবার এসে দাও রে দেখা
গাইঞ্জায় দম দিতে নাই লেখাজোকা দমসাধন করিয়াছে।।
ভাইবে রাধারমণ বলে শম্ভুনাথের পদকমলে
ঠাকুর তিননাথ বইলে এ জগতে বাদশাহী করিয়াছি।।
রা/১৫৬
৮৮৫
বিয়ের গান-সতুর (শত্রু) কাটা
আজি উদয় দিনমণি রামচন্দ্রের সতুর কাটে।
কৌশল্যারানী নীল শাড়ি পৈরে রানী ঘুমটা দিলা মাথে
সুবর্ণের ছুরিখানি তুইলা লইয়া হাতে।।
দাওটায় সাতুর কার্টইন ভূমিচ্ছেদ করিয়া
সাক্ষাতে ময়ূর নাচে ঘুরিয়া ঘুরিয়া।।
সতুর কাটা সমাপন ব্ৰজনারী
শ্ৰীরাধারমণ বলে, স্নান করাও হরি।
ন/১
৮৮৬
রাধা বন্দনা
এই আসরে এসে করা দয়া গো রাধা বিনোদিনী
একবার যুগলবেশে দাঁড়াও এসে নিরাখি জুড়াই প্ৰাণী
তুমি ব্ৰহ্মা তুমি বিষ্ণু তুমি রাধাকানু
তুমি রাধা আদ্যাশক্তি চৈতন্যরূপিণী।।
ভাইবে রাধারমণ ভনে এই বাসনা মনে
মরণকালে দয়া করে দিও চরণতরী।
ন/৮
(সমসাময়িক ঘটনানিতৰ্ভর)
কিমাশ্চৰ্য প্ৰাণসজনী দেখবে আয় ত্বরিতে
এরোপ্লেন উড়িয়া আইল বিস্কুটেরি ক্লাবেতে।
নীচে চাকা পৃষ্ঠে পাখা ইংলিশ লেখা তাহাতে
পাখির মতো উড়ছে যেমন কলের ইঞ্জিন হাওয়াতে
দশবাজিতে কলিকাতাতে উঠিল বিমান রথেতে
বারোটাতে বিপ্রি সাহেব নামল লংলার বাংলোতে
তাদের বেড়া গড় পাহাড়া—পড়ল যখন ভূমিতে
হাতে ছড়ি লাল পাগড়ি ঘেষতে না দেয় কাছোতে
বাঙালি কাবুলি কুলি ধাইল পবন বেগেতে
ঘুরঘুর শুনি ঘর গৃহিণী বাহির হইল মাঠেতে
ভাইবে রাধারমণ বলে ভাবিয়া মনেতে
পাঁচ মিনিটে পাঁচশ টাকা উড়াইল সখ মিটাইতে।
রা/১৫২
৮৮৮
(রামায়ণ অবলম্বনে)
চল সখী রঙ্গ হেরি মিথিলা ভুবন।
আসিয়াছইন রামচন্দ্র কৌশল্যা নন্দন
কাঞ্চনে জভিত রথ অধিক সাজন।
মণিমুক্ত প্ৰবালাদি ফানুষ লেন্টন।
মৃদঙ্গ মন্দিরা বাজে বাজিছে বাদন
ঠিকারা নাগাড়ার ধ্বনি স্থির না হয় মন।
অপ্সরীয়ে নৃত্য করে গন্ধৰ্বের গায়ন
রথ হইতে ভূমিতে করিলা পদাৰ্পণ
ভুবনবিজয়ী রাম, বলিছে রমণ।।
শা/২
৮৮৯
(বিয়ের গান-পানখিলি)
তরা দেখ সখীগন
ভালোমতে কাটে গুয়া দেবের নারীগণ।।
মঙ্গলজুকারে গুয়া আনিলা তখন।
প্ৰথমে ব্ৰাহ্মণী স্মরিলা নারায়ণ।।
সুবর্ণের সর্তায় গুয়া কাটিলা তখন।
জিরা কাটি সব রমণী আনন্দিত মন।।
জামাইর মায়ে কাটইন গুয়া দেখিতে সুন্দর
রমণ বলে পান খিলির হইল শুভক্ষণ।।
শা/১
৮৯০
(ত্রিনাথ বন্দনা)
দয়াল তিননাথ আও
আমার আসরে চলিয়া আও।।
বসিতে আসন বা দিব দয়াল তিননাথ
মস্তক উপরে বা তিননাথ।।
ও যথায় তথায় যাও বা তিননাথ
আসিও সকালে ও বা তিননাথ।।
ও শ্রীরাধারমণের আশা দয়াল তিননাথ
উড়াইয়া আসিও বা দয়াল তিননাথ।
রা/১৫৪
৮৯১
(তাল-লোভা)
(বংশী বন্দনা)
ধন্য ধন্য রে বাঁশি কি পুণ্য তোমার।।ধু।।
কৃষ্ণ অধরামৃত পান কর অনিবার।।চি।।
কৃষ্ণহস্তে থাক বাঁশি কর শ্ৰীমুখ নেহার
কৃষ্ণ প্রিয় তোমার মত নাহি দেখি আর।।১।।
কৃষ্ণ সঙ্গে কৃষ্ণ কথা কর অমৃত উদ্ধার
কৃষ্ণামৃত রসে করতেছ বিহার।।২।।
বাঁশের বাঁশী কৃষ্ণ পাইল সফল জনম তার
রাধারমণের অবসর জীবন অসার।।৩।।
রা/৮৯
৮৯২
বিবাহসংগীত
(পাশাখেলা)
বন্ধু শ্যামকালিয়া ও পাশা খেলিব আজ নিশি।।ধু।।
বন্ধু ও প্রতিজ্ঞা করিয়া খেলা আমি যদি হারি খেলা
শ্ৰীচরণে হব তোমার দাসী।।
তুমি যদি হারো খেলা দিবায় তোমার বনমালা
আরো দিবায় মোহনচূড়া বাঁশি।।
বন্ধু ও খেলা যে আরম্ভ হইল এমনি দান মারিয়া দিল
জিনিল জিনিল রাই রূপসী।।
শ্ৰী রাধারমণ কয় ভাবছ কী শ্যামদায়াময়
আজি রাই প্রেমে ঠেইকেছেন কালশশী।
নিধু/৩, গো (২৭৪)
পাঠান্তর : গোআ — বন্ধু শ্যামকালিয়া > শ্যামকালা প্রতিজ্ঞা করিয়া খেলা > × × আমি…খেলা > আমি যদি হরিখেলা শুনছে….চিকনকলা; দিবায় তোমার বনমালা> গলে দিবে বনমালা; আরো… বাঁশি > চিরতরে রাখব প্রেমে বাঁধি; এমনি… দিল> হাতের গুটি হাতে রইল; ভাবছ কী শ্যাম দয়াময় > ভাবিছ কীরে দয়াময়; আজি…কলশশী > আজি কাড়িয়া রাখিব বাঁশি।
৮৯৩
(শিব বন্দনা।)
ববম ববম কমলপদে দণ্ডব্যৎ ও কাশীনাথ
ও সমুদ্র মন্থনকালে বিষ উঠে উথাইলে।।
সেই বিষ ও করিলায় পান ও কাশীনাথ
ও বিষ ও খাইয়া বেভোর হইয়া পাৰ্বতী কুলে লইয়া
সেই ধরে নীলকণ্ঠ নাম।।
লঙ্কাতে রাবণ দুষ্ট মদ মাংস খাইয়া তুষ্ট
সেও তো আছিল তোমার দাস
রাম যারে সংহারিল বৈকুণ্ঠে চলিয়া গেল
তাহারে তরাইলায় নিজ গুণে।।
সিংহ ব্যাঘ্রেরে থুইয়া বিল্বডালে উঠ বাইয়া
শিবরাত্র চতুর্দশী দিনে
ভাইবে রাধারমণ বলে শম্ভুনাথের পদকমলে
অক্তিমকালে দিও চরণতরী।
রা/১৫৭
৮৯৪
(বংশীবন্দনা।)
বাঁশি রে কইরেছিলে কতই পুণ্য
বাঁশি রে তুই ধন্য ধন্য, কৃষ্ণ বিনা কভু থাকো না।।ধু।।
তোর মত কৃষ্ণপ্রীতি জগতে আর দেখি না।।চি।।
বাঁশি রে কুন সাধনে ওরে বাঁশি কৃষ্ণ কিরকমলে বসি
দিবানিশি করে আলাপনা।।১।।
বাঁশি দেবাদিগন্ধৰ্ব্ব
ঋষি মুনি যার করে ভাবনা।।২।।
বাঁশিয়ে জানো কি মোহিনী সদা উন্মাদিনী
বাঁশির ধ্বনি কৰ্ণে যায় শোনা।।৩।।
বাঁশি ত্ৰিজগতের মন আকর্ষি
তোর গুণের নাই তুলনা।।৪।।
বাঁশিরে বাঁশি কি অমিয় নিধি রাখে না কারো বলবুদ্ধি
কোন বিধি করিল সৃজন।।৫।।
বাঁশি হইতাম চাই সঙ্গের সঙ্গী
রাধারমণের এই বাসনা। ৬।
সুহা/১৩
৮৯৫
(সংসার ভাবনা)
মন রবে না রে চিরকাল, নারীর
যৌবন যমুনার জোয়ার।
নারী জাতি অল্পমতি সন্ধানে
করাইছে পিরীতি,
কামরতি দিয়া মন ভুলায়।
শুকনা ফুলের মধু খাইয়া
ভ্রমর ঠাঠ খানে রাখছে সংসার।
ভাইবে রাধারমণ বলে
কেন গো তুই প্ৰেম করিলে
ও নারী ছাইড়া গেলে
দিবে গালি রে
মন বলবে পাছে হায় রে হায়।।
য/১৬৩, সুখ/৪৫
পাঠান্তর : সুখ–করাইয়াছে > বাড়ায়, কামরতি > কামারাতি; শুকনা… সংসার > রস পাই ফুলের মধুমেমব্রে ঠাঠ টানে রাখছে সংসার, কেনগো…করিলে > কেম নে তুই এমন হৈলে; ও নারী … হায় রে হায় > এখন নারীর কি হবে উপায়। নারী ছাড়িয়া গেলে দিবে গালি/গাছে বলবে হায় রে হায়।
৮৯৬
(বিয়ের গান—রূপসীব্রত)
মিলিয়া সব সখীগণে
ভৈনালা করিতে আইলা রূপসীর সনে।।
জল দিয়া শ্রীচরণ করিয়া মার্জনা
ললাতে সিন্দুরের ফোঁটা দিলা জনে জনে।
চিড়াগুড়া খৈ ডিম্ব আনিলা যতন
সযতনে আনি দিলা রূপসীব স্থানে।
তাম্বুল কর্পূর চিড়া আনিলা যতনে
গলাগলি করিয়া বদল করিলা দুইজনে।।
দণ্ডবৎ করিয়া বর সাজাইন সখীগণ
রমণ বলে মনের বাঞ্ছা হবে রে পুরণ।।
ন/২০
৮৯৭
(গৃহপ্রবেশ, রামায়ণ)
সখি চল যাই অজধ্যাতে
রামসীতা যাইতা আজি নবীন গৃহেতে।।
শুভক্ষণ লগ্ন পাইয়া বিশিষ্ট বসিলা
স্নান করি পরে রাম-জানকী চলিলা।
অবিলম্বে লইয়া রামসীতা সঙ্গে করি
জানকী অনিল জল সর্বকুম্ভ ভরি।।
ব্ৰহ্মা আসিলা দেখ দেবগণ লইয়া
বারিক ধানের মচা রঘুনাথে লইয়া।।
অর্গভাগে আইল মুনি রামসীতা পশ্চাতে
খইদই হিচিয়া আরা আসিয়া গৃহেতে।।
রমণ বলে কি আনন্দ আজি অজধ্যাভুবন
সুমঙ্গল জয়ধ্বনি হইল এখন।।
শা/৫
৮৯৮
(বিয়ের গান)
হের না হের না সখীরে হের নয়ন ভরি।
ঘাটের কুলে বিপুলারে প্ৰদক্ষিণ করে
বাঁকে বাঁকে খৈ বরিষণ করে।।
সঙ্গে লইয়া সাতবার প্রদক্ষিণ সাতনমস্কার
বর বুইলা শতবৃক্ষ শ্ৰীহরির সম্মান।।
রাধারমণ কয় গো ধনী শুন এ বচন
ধীরে ধীরে কন্যা লইয়া করয়ে গমন।।
হা/ (৫)