গীতিসংগ্রহ – আক্ষেপানুরাগ
৫৫৬
আখি হইল ঘোর গো সখী নিশি হইল ভোর।
আদরের বন্ধু রইল কত দূর।।
আগে যদি জানতাম বন্ধু নিদয়া নিষ্ঠুর
তেকেনে বাড়াইলাম প্ৰেম আমি এতো দূর।।
সরছানা মাখনরে বন্ধু লুচিপুরী গুড়
বন্ধর লাগি ঘরে থইয়া আমি হইলাম চুর।।
ভাইবে রাধারমণ বলে শুন গো ধনী রাই
অবশ্য আসিবা তোমার শ্ৰীনন্দের কানাই।
শ্রীশ/৫
৫৫৭
আগে না জাইনে গো ললিতে
কুল দিলাম কুল-নাশার হাতে।
আমি নিরবধি চির দোষী, গিয়াছি না (পা)রি ছাড়াতে
দারুণ বিধি আগে জানি না।
প্ৰেম সুতে টুবি গাঁথিয়ে গিলিলে হয় বেদনা।
আমায় উল্টা কলে ধরছে যমে
আশা নাই আর বঁচিতে।
তোমরা সব থাইক সাবধান
সাধে সাধে প্ৰেম ফান্দে লোভেতে না দিও প্ৰাণ।
আমি মরছি একা ভেইসে থাকা, কি লাভ ভাবে বাঁচিয়ে
মরণ ভাল আমার মনে লয়
প্রেম যন্ত্রণা আর সহে না, রাধারমণ কয়।
জীবন থাকিতে প্ৰাণ সপিলাম, পরার হাতে কুল দিলাম
কুল নাশার হাতে।।
য/১৩৫
৫৫৮
আগে না জানিয়া এমন প্ৰেম আর কইরা না
প্ৰেম কইলে সুজনার সনে মনের আগুন নিবে না।।
শুনি এগো প্ৰাণসজনী বলি তারে বিনয়বাণী
মন দিয়ে মন পাইলাম না
নামকুলমান সরম ভরম আর দিলাম লাখের যৌবন
কুল দিয়ে কুল পাইলাম না।।
কতই করে সাধিলাম তারে সাধন সিদ্ধি হইল না।
ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰেম কইরো রাই মানুষ চাইয়ে
সুজন ছাড়া প্ৰেম কইরো না
মরছি মরা প্ৰাণে জানে এমন মরা মইরো না।
তী/২৪
৫৫৯
আমায় উপায় বলো এগো সই প্ৰেম করে প্ৰাণ গেল
এগো আমি ভাবি রাত্ৰিদিনে বন্ধু কোথায় রইলো।।ধু।।
দেহ হতে রসরাজ সিং কেটে প্ৰাণ নিলো–
জনম ভরা পদ সাধলাম বন্ধে সঙ্গে নাই নিলো।
আমার মত কত দাসী বন্ধের দাসী হইল
সুখের নৌকায় তুলিয়া বন্ধে সায়রেতে ভাসাইল।
জিয়ান হইতে মরণ ভালো মরণ মঙ্গলো–।
জনমভরা কলঙ্ক রাধার জগতে রহিলো–
রাধারমণ চান্দে বলে প্ৰেম করা কি ভালো
এ জনমের মত বন্ধে আমায় ছাড়িয়া গেলো।
আহো/৩৬, শ্রী ২১৫, হা/৩০, গো (১৫৯)
৫৬০
আমার দিও চোরা বন্ধের দায় প্রাণী যায়
সই গো কি করি উপায়?।।ধু।।
মনের আগুন দ্বিগুণ জ্বলে চলো যাই যমুনার জলে
গেলে জলে তনু জুড়ায়;
আমার প্রাণ বন্ধুরে আনিয়া দেখাও গো।
সখী, আমার বন্ধের বাতাস লাগৌক গায়।
যমুনাতে গেলাম রসে প্ৰাণবন্ধু দেখিবার আশে
তবু বন্ধের দেখা নাহি পাই
আমার কর্মদোষী হইছে দোষী আমি কান্দিয়া বলছি হায় রে হায়
ভাবিয়া রাধারমণ বলে কেন গো তুই প্ৰেম করিলে
এখন তোর কি হইত উপায়;
আমি প্ৰাণবন্ধুরে হৃদয়ে রাখতাম
আমি পাইলাম না কাল নন্দের দায়।।
গো (১৪৬)
৫৬১
আমার মন চোরা তুই হরি,
কোন সন্ধানে কৈলায় রে বিশ্বাসের ঘরে চুরি।
জল ভরিতে গেলাম আমি কাঙ্কে লইয়া ঝারি,
সবে বলে ঐ যায় ঐ যায় কুলকলঙ্কিনী নারী।
আগে যদি জানতাম রে বন্ধু তুই করিবে চুরি,
তবে কেন করিতাম পিরিতি মুই অভাগিনী নারী।
রাধারমণ পাগলে বলে কিসে ধৈর্য ধরি,
শ্ৰীচরণ ভিখারী রাধা ফিরে বাড়ী বাড়ী।।
আহো/৩৮, হা (১১), গো (১১২)
৫৬২
আমি জানলাম রে নিষ্ঠুর কালা
তোর পিরিতি।।
আর প্রথম পিরিতি করি,
আইলায় নিতি-নিতি।
ওয়রে, অখন বুঝি করিয়া যারায়
আচম্বিতে ডাকাতি।।
আর কেওরের পিরিত আইসা-যাওয়া,
কেওরের পিরিত নিতি।
ওয়রে, কেওরের পিরিত সোনা-রূপা,
কেও কিনিয়া দেয় ধুতি।।
আর ভাইবে রাধারমণ বলে,
শুন গো যৈবতী;
ওয়রে, ব্ৰজপুরের মাঝে তোমরা
কয়জন আছো সতী।।
শ্রী ৩৪৭
৫৬৩
আরো পুস্পপ বলি রে তোমারে
রজনী প্ৰভাতে পুষ্প ভাসাইম সাগরে।।
গে যদি জানতাম শ্যামরে নিদয়া নিষ্ঠুর
বুকে কিছু নাইরে তোমার মুখেতে মধুর।
আগে যদি জানতাম রে শ্যাম যাইবায় রে ছাডিয়া।
তবে কি কারিতাম প্ৰেম বিনা দড়াইয়া।।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে শুনরে কালিয়া
পর কি আপনি হয় পিরিতির লাগিয়া।
শা/৪
৫৬৪
এগো সই প্ৰাণ কান্দে যার লাগিয়া
অকুলে ভাসাইলা মোরে কি দোষ জানিয়া।
আমার মন্দিরে ডাকিগো বন্ধুরে মারি গো ঝুরিয়া
দুঃখিনীরে থুইয়া যাইবে কার হাতে সঁপিয়া
আগে যদি জানতাম বন্ধু রে যাইবায় রে ছাড়িয়া
তেনি করিতাম পিরিতরে বিনা দড়াইয়া।।
ভেবে রাধারমণ বলে গো মনেতে ভাবিয়া
পরা কি আপন হয় পিরিতের লাগিয়া।।
য/১৬
৫৬৫
ও বন্ধু কঠিন-হৃদয় কালিয়া,
প্ৰেম কইলাম তার মাম না জানিয়া।
এগো, এখন বন্ধে প্ৰাণে মাইল–
বিশখা প্ৰেম শিখাইয়া।।
আর আগে যদি জানতাম গো এমন–
ও সই, পিরিতে মন দিতাম না কখন।
এগো, এখন বন্ধে ছাড়িয়া গেল–
কিনা দোষ জানিয়া।।
আর নতুন প্ৰেমে, নতুন প্ৰেমে নতুন গো কালা–
ও সেই নতুন প্ৰেমে দিল গো জ্বালা।
ও জ্বালা সইতে গেলে–
উঠে দ্বিগুণ হইয়া।।
আর ভাইবে রাধারমণ বলে–
বন্ধের পুর্বের কথা নাই তার মনে।
এগো পূর্বের কথা মনে হইলে–
আমায় না যায় ছাড়িয়া।।
শ্রী/১২২
৫৬৬
কালার সঙ্গে প্ৰেম করিয়ে গো লাঞ্ছনা তোমার।
এগো কেন গলে দিয়াছিলে প্ৰেম ফুলহার
পুরুষেরি এমন ধারা আগে প্ৰেম বাড়াআিড় গো তারা
হয়ে গেলে মতলব সারা একলা সে হয়। পার।।
ঢুলু ঢুলু দুইটি আঁখি তারা পাতা ভার
রাধারমণ বলে শীঘ্ৰ করি প্রাণ রাখা রাধার।।
আছ/৫
৫৬৭
খাইয়া গরল বিষ ত্যেজিমু পরান রে বন্ধু কইলে অপমান
খাইয়া গরল বিষ ত্যেজিমু পরান।।ধু।।
যারজির মতে বন্ধু থাকে এক এক মান
ঘরের বাইর করি তুই কইলে অপমান।
পরান আকুলি সুরে বাঁশিয়ে দিলে সান
সেই সুরে কর্ণে প্ৰবেশি আকুল কইলো প্ৰাণ।
পরান আকুল করতে ছাড়িয়া শুনো মান
রাধারমণ কুল ছাড়িয়া হইলো অপমান।
গো (১৭৩)
৫৬৮
পাইলাম না সই প্ৰাণবন্ধু রে রজনী হইল ভোর–
স্বপনে দেখিলাম কাছে জাগিয়া দেখি দূর।।ধু।।
কঠিন অবলার বন্ধু কঠিন তার হিয়া–
কুলটা বানাইলো মোরে তার প্ৰেমে মজাইয়া–
মা ছাড়লাম বাপ ছাড়লাম ছাড়লাম। সুয়ামী —
ঘরের বাহির করি ফেলি গেলে কই যাই আমি।
প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে ভিতরে জ্বলে হিয়া
এমন বান্ধব নাই আনিল দেয় নিবাইয়া।
চউখ হইলো আন্ধিয়ারা মাথায় দিলো পাক
ভাইবে রাধারমণ বলে শুনগো ধ্বনি রাই
শ্যামচান্দ বন্ধুরে আমি কোথায় গেলে পাই।
গো/২২৩
৫৬৯
পিরিতে আরিলাম মান কুল-গো সই এখন আমি আর যাব কই? ধু।।
সাধ করে কলঙ্কের ডালি হস্তে তুলি মাথে লই
চুনী খাইয়ে মুখ জ্বালিয়ে মাইলাম ভেবেছিলাম খাসা দই।
জগতে কলঙ্কী বলুক তাতে মুই লজ্জিত নই
নিন্দার বোঝা মাথে লইয়া যদি বন্ধের দাসী হই।
যার লাগি উদাসী হইলাম। সে বা কোথা আমি কই
জগতে কলঙ্ক রইলো দুক্ষ আমি কেমনে সই।
কৃপা করি বল গো তোরা বিনয় করি প্রাণ সই
উদাসী হইয়া ফিরি প্রাণবন্ধু বল গো কই।
তাতে কোন দুক্ষ নাই যদিও কলঙ্কী হই
জন্মে জন্মে যদি জন্মি প্ৰাণবন্ধের দাসী হই।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে এখন স্বম্ব কই।
সয়াল সংসার ঘুরি বন্ধের নামে উদাসী হই।
গো/১৬২
৫৭০
বন্ধে পিরিত করি আইল না
প্ৰাণ বন্ধুরে চউখে দেখলাম না।।
আর দুধের মাঝে সর-লনী।
মাথার বিযে মাইলাম। আমি
পাড়ার লোকে বিশ্বাস কইল না।।
বন্ধে ঔষধি লইয়া আইল না
ব’ দাদা, বন্ধে ঔষধ লইয়া আইল না।
আগে যে বাড়াইয়া প্ৰেম
শেষে দেয় জালা।।
আর ভাইবে রাধারমণ বলে
পিরিত করি যে জন মারে
দুধের মাঝে ছাই মিশাইছে।।
শ্ৰী / ১৩৩
৫৭১
বলে না ছিলাম গো পিয়ারি অ তুই পিরিত করিছ না
পিরিতি বিষম জ্বালা প্ৰাণে তো বাঁচবি না।।
বনে থাকে ধেনু রাখে শ্যামকালিয়া সোনা
অবলা রমণীর মরম রাখালে জানে না।।
কতই না বুঝাইয়াছিলাম শুনেও শুনলে না।
নয়নের জল হইল সম্বল সার হৈল ভাবনা।।
রাধারমণ বলে প্ৰেম করিলে পাইতে হয় লাঞ্ছনা
তাই ভাবিয়া প্ৰেম না করিয়া আছে বা কয় জনা।
আছ/৬
৫৭২
মন-চোরা মনিয়ার পাখী রে,
পাখী কে নিল ধরিয়া।
এগো, কুখনে হেরিয়া আইলাম
জলের ঘাটে গিয়া গো।।
আর আগে যদি জানতাম পাখি রে,
পাখি যাইবায় রে ছাড়িয়া।
এগো, মাথার কেশ দু ফাঁক করি’
রাখিতাম বান্ধিয়া গো।
আর ভাইবে রাধারমণ বলে,
শুনোরে কালিয়া :
এগো জয়মণি কয়–
ছাফ কাপড়ে ছাড়ছ দাগ লাগাইয়া।
শ্ৰী/ ১৫৬
৫৭৩
সখী উপায় বল না পিরিতি বাড়াইয়া এবে ঘটিল যন্ত্রণা।
সাধে সাধে পিরিত করি এখন তারে পাই না
লোকের নিন্দন তীর বরিষন সহ্য করা যায় না।
পাড়ার লোকে কয় অসতী কুল ছাড়া মুই ললনা
কুঞ্জবনে ঘুরিয়া ফিরি তারত দেখা পাই না।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে ঠেকিলাম পিরিতের কলে
উল্টা কলে ধরছে টানি ছাড়ার দিশা পাই না।
গো/২৪৩