গীতিসংগ্রহ – গৌরপদ
১৪৩
অনুরাগ কোন অবতার রে, গৌরাঙ্গচান্দ
এমন দয়াল আইল, ঘরে ঘরে প্ৰেম বিলাইল
না করিল জাতের বিচার রে।
নববিধা ভক্তিরসে বিচারে গৌর দেশে
পুরাইল তিনের অভিলাষ।
ভাইবে রাধারমণ বলে মানব জীবন যায় বিফলে
অন্তিমকালে দিও শ্ৰীচরণ রে।
সুখ/ ৩
১৪৪
খেমতা
অনুরাগ বাতাসে রাধা প্রেমের ঢেউ উঠিয়াছে।।ধু।।
নদীয়াপুরী ডুবু ডুবু শাস্তিপুর ভাসিয়াছে।। চি।।
ব্রজলীলা সাঙ্গ কইরে রসরাজ হইলেন গৌরাঙ্গ
হে রাধাভাবের প্ৰেমতরঙ্গ নদিয়ে আসিয়াছে।।১।।
পূর্বরাগে মেঘ সাজিল, বারি পূর্বদিকে বরষিল হে
প্ৰেমজলে জগৎ ভাসাইল বাকি কে আছে।।২।।
রাধা নামে বাদাম দিয়ে কৃষ্ণ নামের সাইর গাইয়ে হে
চলছে বহিয়ে রসিক নাইয়ে রাধারমণ বৈসে রইয়েছে।।
রা/২০, গো আ (৫৯) সুধী/৭, সুখ /৫৭
পাঠান্তর : গো আ : নদীয়া … শান্তিপুর > শান্তিপুর ডুবু ডুবু নদীয়া; রাধাভাব… আসিয়াছে >ডোর কৌপিন ধারণ করি হরি বলিয়াছে; পুর্বরাগে বারি > অনুরাগের মেঘ সাজিল মেঘ।
১৪৫
অবনীতে উদয় নদীয়াতে গউর নিতাই।।ধু।।
পাপী নিস্তারিতে অবতীর্ণ দুটি ভাই।।চি।।
পঞ্চতত্ত্ব সঙ্গে স্বরূপ রামানন্দ রায়।
হরি সঙ্কীর্তন যজ্ঞারম্ভ আর জীবের ভাবনা নাই।
অন্যাচনে প্ৰেমরত্বধন জীবকে বিলায়।
হরি নামামৃত বরিষণে ত্ৰিভুবন ভেসে যায়।
জীবের ভাগ্যে হইয়ে সদয় নামের লোট বিলায়।
কেহ পাইল কেহ পাইল না রে ভাবিয়ে রাধারমণ গায়।
য/২
১৪৬
আইজ আমার কি হৈল গো জলের ঘাটে গিয়া
ও তারে দেখিনাগো প্ৰাণে মারি হইলাম কলঙ্কিনী
হইলাম জীবনের লাগিয়া।
সুরধনীর তীরে গৌর এলো নাচিয়া নাচিয়া
এল মুখে হরি হরি হরি বলে নাচে দুবাহু তুলিয়া
ও আমার গৌর বিনোদিয়া।
ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
আমার সোনার অঙ্গের সাধন জীবন
নিল কোন কুলে হরিয়া
ও কুল মজাইবার লাগিয়া। —
নমি/২
১৪৭
আইল রে আইল গৌর, নিতাই সঙ্গে লইয়া।।ধু।।
ভাসাইল নদিয়াপুরী প্ৰেমবন্যা দিয়া।।চি।।
ষোল নাম বত্ৰিশ অক্ষর দীক্ষা মিশাইয়া।
হরি নামের ধ্বনি শুনি ভুবন জুড়িয়া।।১।।
অজপাতে সখাগণে তত্ত্ব জানাইয়া।
চেতন করিল জীবরে চৈতন্যমন্ত্ৰ দিয়া।।২।।
হীন রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া।
লোকনাথের চক্ষু অন্ধ হইল কর্ম দোষ জানিয়া।।৩।।
রা/১২২
১৪৮
আজ কোন প্ৰাণ কেন্দে কেন্দে উঠেরো ভাই, ভাইরে নিমাই।
আমি যার লাগি দেশান্তরী, কোথায় গেলে তারে পাই।।
বহু দিন হয়। ব্ৰজ ছাড়া, হয়েছে জীবন্তে মরা রে।
কইরে আমার চুড়াধড়া কোথায় প্ৰেমময়ী রাই।।
গোঠে মাঠে ধেনু চরা, কইরে আমার সুবল সখারে।
কইরে আমার শ্ৰীদাম সুদাম কবলী ধবলী গাই।।
ভেবে রাধারমণ বলে, কোন ভাবে শ্যাম গৌর হইলে রে।
আমি প্ৰেম ভাবে মারি যেন, শ্ৰীচরণে ভিক্ষা চাই।।
য/ ১৩৬, (নাজিরাবাদ পাঠশালা) সুখ/৩০
পাঠান্তরঃ সুখ ৪ ভেবে রাধারমণ … ভিক্ষা চাই > ভাইবে রাধারমণ বলে মানবজীবন যায় বিফলেরে আমি ঘাটের মরা মইলে যেন অন্তিমে সো চরণ পাই।
১৪৯
আজি কি আনন্দ রে ভাই, কি আনন্দ,
ভক্তবৃন্দ সঙ্গে নাচে গৌরায়,
পঞ্চতত্ত্ব অবতীর্ণ নদীয়ায়।
পঞ্চতত্ত্ব অবতীর্ণ, নদীয়া করেছে ধন্য
পাপীতাপী দুরজনা তাহা হরি গুণ গায়।
গৌরা চান্দ ঐ সুধাকরে সুধা বরিষণ করে
কে পাইয়াছে নামের মালা, তারে শমন দেওয়া দায়।
ভাইবে রাধারমণ বলে,তারে বিদায় দেওয়া দায়।
সুখ/১
১৫০
আনন্দ মগন গৌরহরি
প্রেমে ভাসাইল নদীয়াপুরী।।
রাধাভাবকান্তি অঙ্গেতে পৈরি
রাধাপ্ৰেমখণ শোধিতে হরি।।
নিতাই সহ অদ্বৈত ত্রিপুরারি
গদাধর দাস প্ৰেমালহরী।।
রামানন্দ ঘোষ প্ৰেম সঞ্চারি
জগতে বর্ষিল ভক্তির বারি।
চৌষট্টি মোহন্ত ব্ৰজের নারী।
রূপসনাতন প্ৰেমভিখারী।।
চণ্ডীদাসাদি রসিক বিস্তারী
সর্বগুরুগণ বন্দনা করি।।
অকুলপাথারে নাহিক তরী
গুরুকৃপা বিনে কেমনে সারি।।
শ্ৰীগুরু গৌরাঙ্গ করুণা করি
তারো শ্ৰীরাধারমণ ভিখারী।।
য/৪
১৫১
আমায় নিয়ে ব্রজে চলে যাই রে ভাই রে নিতাই
অনেক দিন হয় ব্ৰজছাড়া প্ৰাণে শান্তি নাহি পাই।।
বহুদিনের অপরাধী আমারে কইরাছ বন্দী রে।
মনে লয় শ্ৰী রাধা কুয়াতে ঝাঁপ দিয়ে প্ৰাণ জুড়াইরে।।
যার কাছে প্ৰাণ আছে বান্দা সে বিনে প্ৰাণ যায় না রাখা রে
মনে লয় যেন পাখী হইয়ে উড়ে যাই ব্ৰজধাম রে।।
ভাইবে রাধারমণ বলে মানব জীবন যায় বিফলে
শুইলে স্বপন দেখি ব্রজধামে যাইরে।।
সুখ /৩১
১৫২
আমার কি হইল–প্ৰাণ সখী গো জলের ঘাটে গিয়া
তারে দেইখে আইলাম–প্ৰাণে মাইলাম কলঙ্কিনী হইয়া।
কোন বিধি নির্মিল তারে বিরলে বসিয়া
সোনার অঙ্গে চাঁদের কিরণ কে দিল মিশাইয়া।
মুখে হরিবল হরিবল বলে দুইবাহু তুলিয়া
নয় ভরে দেখে আইলাম গৌর বিনোদিয়া।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
মনে হয় তার সঙ্গে যাই দাসের দাসী হইয়া
নাচিয়া নাচিয়া গো।
রা/১৫৩
১৫৩
আমার মন হইয়াছে লাচাড়ি, পড়িয়াছি ঘোর বিপদে–তরাও গৌর হরি।।
আর একা একা বনেতে বেড়াই, কত সিংহ-ব্যাঘ্ৰ দেখিয়া গৌর মনেতে ডরাই।
ওরে কি করিমু, কোথায় যাইমু–তাইতে মনে মন ভাবি।।
আর শুনছি কতো সাধুর মুখে তোমার নামটি যে লয় গৌর সে থাকে সুখে।
ওয়রে, আমার কেনে এ দুর্দশা–বেহুশে কান্দিয়া মরি।।
আর আমায় কইন তো তায়ে ক্ষেতি নাই–।
তোমার নামটি হৃদয় মাঝে–ওই ভিক্ষা চাই–।
রাধারমণ বলে, মৃত্যুকালে দিয়ো চরণ তরী।
শ্রী/৩২৪
১৫৪
আমারে কি করা দয়া অধম জানিয়া বা গৌর, প্ৰাণনাথ কালিয়া।।ধু।।
আগে বল আপনারি পাছে প্ৰাণটি নেও হরি,
এখন কোন প্ৰাণে মার তোমার মনে ঐ কি ছিল?
পিরীতি ত্যাজিয়া গেলায় কি দোষ পাইয়া বা গৌর।
আগে যদি জানতাম বা গৌর যাইবায় ছাড়িয়া,
মাথার কেশ দুভাগ কইরে চরণে চন্দন দিয়ে,
চান্দমুখ নিরখিয়া রাখিতাম বান্ধিয়া। বা গৌর।
গোসাঁই রমণচন্দে বলে মনেতে ভাবিয়া,
আমার সনে মাতিও না সই আমার মন হইয়াছে দেওয়ানা।
আহো /২৬, হা (২৪) গো আ (২৩৫)
১৫৫
আমি কি হেরিলাম গো সুরধানীর ঘাটে গৌর উদয় হইল গো।।ধু।।
সখী গো কি দিব রূপের তুলনা গৌরার বরণখানা
যেমন কাঞ্চা সোনা
কলসী ভাসাইয়া জলে চাহিয়া রইলাম গো।
সখী গো–মাইয়ার প্রেমে গিলটি করা রমণীর মন মনোহরা —
মুখে বলে রা -রা-রা চমকে উঠলাম গো।
সখী গো–সাধে সাধে পিরীত করলাম আগা পিছ না ভাবিলাম
এখন আমি ঠেকিলাম বিপাকে গো।
সখী গো–ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
মনে লয় তার সঙ্গে যাইতাম চিরদাসী অইয়া গো।
গো আ (২০৬)
১৫৬
আমি গৌর প্ৰেমে মাজে গো কুলক লঙ্কের ভয় রাখি না।
গৌর প্রেমের এতই জ্বালা গৃহে যাইতে মন চলে না।।ধু।।
কলঙ্ক অলংকার কইলাম মনের কথা বলবো গো না
শ্যাম কলঙ্কী নামটি আমার জগতে রইল ঘোষণা
পিপাসী চাতকের মত পিপাসায় প্ৰাণ বাঁচে না
কি করিলে কি হইবে উপায় কি রে বল না।
কেন্দে রাধারমণ বলে শুরু ভজন হইল না।
কাম রসে মগ্ন সদায় প্রেম রসে মন মজন না।।
গো আ ৯১ (১১১)
১৫৭
আমি চাইয়া দেখতে যে পাই গৌরবময় সকলি
গৌর আমার শঙ্খ গো সারি
গৌর আমার সিঁথের সিন্দুর মাথার চিরুনি।।
গৌর আমার হস্তের কঙ্কণ গলার পাঁচ লরী
আমি গৌর গলে লাগাইয়া ধীরে গমন করি।।
যখন থাকি গৃহকর্মে
গৌর আমার কাছে আনকথা বলে গো যতনে
আমি গৌর গৌর গৌর বলে নয়নধারায় বইতে থাকি।
ভাইবে রাধারমণ গো বলে গোর কিগো সামান্যে মিলে
যতনে রাখিও তারে।
আমি গৌর রূপ সাগরের মাঝে মীনের মত ডুবে থাকি
সী / ৩
১৫৮
আমি ভাকি কাতরে প্রাণ গৌর আইস আসরে
আইস রে কাঙালের সখা হৃদয় মন্দিরে।।
পঞ্চতত্ত্ব সঙ্গে লয়ে হৃদিপদ্ম প্ৰকাশিয়ে প্ৰাণ গৌর হে
হৃদয় মাঝে উদয় হইয়ে ভাসাও প্রেমনীরে।।
ভাইবে রাধারমণ বলে জীবন গাওয়াইলাম হেলে।
কি বলিয়া আইলাম ভাবে কি করিলাম হে।
সুখ / ৩৯
১৫৯
আমি দেইখে আইলাম গো কি আচানক গৌররূপ
কে যে দাড়াইয়া রহিয়াছে সুরধনী তীরে।।ধু।।
প্ৰাণসখী গো কি দিব রূপের তুলনা কাঁচাসোনা
কি দিয়া গড়িয়াছে বিধাতা
এমন গৌরাঙ্গ রূপ লাগিয়াছে যার নয়নে
রূপে যৌবত নারী রইতে না দেয় ঘরে।
সখী গো ভ্রমযোগে প্ৰেমাগান আগে না জানি
সন্ধান নয়ন বিধিল কামশরে।
দেইখাছি অবধি প্ৰাণকালেদ রাত্ৰিদিন
আমার প্রাণ ধৈর্য নাহি মানে।।
ভাইবে রাধারমণে বলে শুন গো তারা সকলে
যাইও না গো সুরধনীর কুলেতে।
ওগো আমার গেল কুলমান
তোমরা থাইকো কুলমান লইয়া আপন ঘরে।।
নমি/৪
১৬০
আমি দেখিয়ে আইলাম তারে গো হরে
আমি দেইখে আইলাম তারে।।ধু।।
সে যে নবীন গৌরাঙ্গ করিতেছে কত রঙ্গ
সুরধনীর তীরে গো নীরে।
মদন জিনিয়া সন্ধান করিয়া তারে গলিয়াছে কোন কারিগরে
কলসী ভাসাঁইয়া রহিলাম চাইয়া দুই নয়নে সে রূপ নেহারে।
হরি বলে গৌরাচান পাতিছে রূপের ফান নাগরী ধরিবার তরে
কুরঙ্গ নয়নে চায় যার পানে অরে বিন্দিল পঞ্চশরে।
রসের মুরতি হেরিয়া যুবতী মনে প্ৰাণে ধৈর্য নাহি ধরে
ভাইবে রাধারমণ বলে রূপ হেরিনু যেই কালে
যতই হেরি ততই নয়ন ঝুরে।।
গো আ ১৮১ (২৬৪)
১৬১
আমি নালিশ করি রাজ দরবারে। ধু
দেশের রাজা শ্ৰীচৈতন্য পতিত পাবেন নামটি ধরে।
খাস মহালে বসত করি, বে মিয়াদি পাট্টাধারী
একুশ হাজার ছয় শত মাল গুজারি তিলে পলে আদায় করে।
মূল বিবাদী বটে দুজন, সহায়কারী আর ছয়জন
অনুগত করিয়ে দশজন দিবসে ডাকাতি করে।
আমরা সব একত্র বাসী, কেবা কোন দোষের দোষী
সাক্ষী আছে রবি শশী রাধারমণ কহে কাতরে।
১৬২
আমি সেই গৌর বলে ডাকি
যদি কুমকুম চন্দন হইত রাখিতাম অঙ্গেতে মাখি।
মনে যেন লয় শুধু গৌরা নয়
বুঝি রাইর অঙ্গ আছে মাখামাখি।
আমার মন চায় তার রাঙা পায়
জড়িত হইয়া থাকি।।
ব্ৰজাঙ্গানাগণে শ্ৰীকৃষ্ণ বিহনে
আমার মন হইয়াছে চাতকী।
দিবানিশি নিরলে বসি বন্ধু বন্ধু বলে
অন্তরে নিরলে ডাকি।
বাউল রাধারমণ চায় ধরতে বন্ধের রাঙা পায়
পাছে পাছে ঘুরি সদায় অন্তরে ভরসা রাখি।
বন্ধে মোর ঘেঁষে না কাছে সদায় দিয়া ফাঁকি
গো আ ৭৪ (৮৫), যা /১৩৮
পাঠান্তর : য/১৩৮ : যদি কুমকুম… ফাঁকি > আমার প্রাণ কান্দে থাকি থাকি / আমি না জানি সাধন না জানি ভজন, কোন গুণে তোমায় ডাকি। আমি বনে বনে যাই কান্দিয়া বেড়াই মন হইতেছে চাতক পাখি/ পুষ্প চন্দন হইত। রে গৌর, অঙ্গেতে মাখিয়া রাখি/ আমার হেন মনে লয়, শুধু গৌর নয়, রাইর প্রেমে মাখামাখি/ ভাবিয়ে রাধারমণ বলে ঝুরে দুটি আঁখি / দাস নরোত্তম কয়, গৌর দয়াময়, পতিতাকে উদ্ধারো নাকি।
১৬৩
আর কিছু না মানে আমার প্রাণে গো গৌর বিনে।
এগো গউর চরণ গৌর বরণ গৌররূপ নেহারে গো।
গৌরাচান্দের রূপমাধুরী না হেরিলে প্ৰাণে মরি
তারে দেখলে বাঁচি নইলে বাচিনা গউর বিনে।
ভাইবে রাধারমণ বলে ঐ বাসনা আমার মনে গো
আমার মনে লয় তার দাসী হইয়া রাইতাম রাঙা পায়ে।
রা/১১১
১৬৪
আসরে আইসহে গউর হরি তাপিত প্ৰাণ শীতল করি
তুমি তন্ত্র তুমি মন্ত্ৰ তুমি হৃদয় বিদারী।
বাকা বেশে দাঁড়াও গৌরাঙ্গ আনন্দ হবে আমার অঙ্গ
বনফুলে সাজাইব হেরব দুই নয়ন ভরি।
আমি অতি মূঢ়মতি না জানি ভক্তিস্তুতি
ভাইবে রাধারমণ বলে দেও রাঙা চরণ তরী।
কা/৯৮
১৬৫
আসিয়া গৌরাঙ্গের হাটে কুলমান হারাইলাম গো সই
গৌরচান্দের দেখা পাব নি গো সই
সই গো সই তিলেকমাত্ৰ পাইতাম যদি গৌর গুণমণি
এ কেশেতে ছাপাইয়া গো রাখতাম ছাড়িয়া বান্ধতাম বেণী
সই গো সাঁই আমি অতি নিদুখিনী দুঃখে যায় মোর কাল
আহা, ছাড়াইতে না পারি। আমি এই ভবের জঞ্জাল।
সই গো সই ভেবে রাধারমণ বলে, এই কর এই কর
আহা মনুষ্য জন্ম দুর্লভ জনম না হইব আর।
শ্যা-২
১৬৬
উদয় হইল হে গৌরাঙ্গচান্দ গৌড় দেশে
সঙ্কীর্তন যজ্ঞারম্ভে তিমিরান্ধ নাশে
জীবের সৌভাগ্য ঘটিল
বিদেশের চান্দ নিজ দেশে এল কি আনন্দ হল
অনর্পিত ধন বিতরিল তিন অভিলাষে।।
ভাবকান্তিবিলাস এই তিন অভিলাষ না হইল প্ৰকাশ
রাধা প্রেমে হইয়া উদাস প্ৰেমানন্দে ভাসে।
শ্ৰী রাধারমণের আশ হইয়ে গৌরাচান্দের দাস পুরাঘব অভিলাষ
গৌরাঙ্গ যার রাখে বিশ্বাস কৃষ্ণ প্ৰেমে ভাসে।।
য/১৩
১৬৭
উদয় হইলায় বা নদীয়ায় চান গৌর হরি–
রাই ভাবেতে আবেশিলায় নদীয়া বিহারী।।ধু।।
খনে হাসে খনে কাসেদ উলটিয়া পড়ি
মুখে বলে রা-রা-রা ধুলায় গড়াগড়ি।
ভাইবে রাধারমণ বলে ঐ বাসনা করি–
অন্তিমকালে অধীনেরে দিও চরণ তরী।
গো আ ৫৪ (৬২)
১৬৮
উদয় চৈতন্যচান্দ সুরধুনী তীরে
ভাসাইল গৌরদেশ রাধাপ্রেমনীরে।
উত্তম অধম গৌর পতিত না বিচারে
অযাচনে নাম প্রেম দেয় যারে তারে।।
আপনে উক্তি আচরি বিলায় জীবেরে
একদিন চাহে রাধারমণ পামরে।
য/১৪
১৬৯
এ ভব শুধু পাগলের মেলা পাগলে পাগলে ঠেসাঠেসি
পাগলে পাগলে মেলা।।ধু।।
এক পাগল শচীর গৌরাঙ্গ বহু পাগল ধরছে সঙ্গ
নিতাই অদ্বৈত পাগল হরিদাস সঙ্গের চেলা।
সব ঠাঁই পাগলের কারখানা পাগল ছাড়া সুস্থ মিলে না
রূপ সনাতন বদ্ধ পাগল শয়ন করছে গাছের তলা।
যত সব পাগলের কারবার পাগলে পাগলে ভরা হাট গঞ্জ বাজার
কোনো পাগল লোকসান দেয় কোনো পাগলের বেলার মেলা।
কোনো পাগলে কান্দে বসে কোনো পাগলে সদায় হাসে
রাধারমণ পাগল বলে হেলায় হেলায় জনম গেলা।
গো আ ৩৫ (৪০)
১৭০
এমন সুন্দর গৌর কোনখানে আছিল গো
কে আনিল নদীয়া নগর।।ধু।।
দেখিয়া রূপের ছটক বিন্ধিলো অন্তরে
পাইতে সে মোহন রূপ প্ৰাণ কান্দে পুলক ভরে
এমন সুন্দর করি গড়ছে কোন কারিগরে
পিরিত কুন্দে বদন কুনিছে নয়ন কুনিছে কামশরে
ভাবেতে অবশ হইয়া ধুলায় গড়ন করে
ভক্তজন আসিয়া তাদের সাপুটিয়া ধরে
ধুলায় লুটিয়া গৌর ইষ্টনাম জপ করে
ভাবিয়া রাধার রূপ সরস হইল প্রেমাধারে।
বাউল রাধারমণ বলে ভাসিয়া প্ৰেম সায়রে
গৌর প্ৰেমে প্রেমিক হইয়া তরিয়া যাইমু, সেই পারে।
গো আ ১০৩ (১২৯)
১৭১
এস দুনু ভাইরে গৌর ও নিতাই।।ধু।।
সত্যতে ছিলেন হরি, ত্ৰেতাতে রাম ধনুকধারী রে ভাই।
দ্বাপরে শ্যাম নটবর ভুলাইলায় রাই রে।
কলিতে গৌরাঙ্গ লীলা, নাচে জগত ভাসাইলায় রে ভাই।
কত পাপী-তাপী উদ্ধারিলা জগাই আর মাধাই।
ভাবিয়ে রাধারমণ বলে, ঠেকালাম ভবের মায়া জালে।
কলি শমনে বান্ধবে যখন, তখন দিবে। কার দুহাই, গৌর ও নিতাই।
য/১৩৯
১৭২
এসেছেন গউর নিতাই জীব তরাই অবনীরে
গউর নিতাই এসে প্রেম বরিষে নদীয়ায়।।ধু।।
পুর্বরাগে যে সাজিল প্ৰেম বারির অন্ত নাই।।চি।।
বারি পূর্ব দেশে বরাষিল হে প্রেমধারায় ধরা ভাসিয়া যায়।।১।।
কেহ বৈসে মেঘের আশে প্রেমনীরে কেহ ডুবিতে চায়
কেহ প্ৰেম সাগরে দিয়াছেরে কেহ মরে জল পিপাসায়।।২।।
তুলা রাশি মায়ের বিন্দু সে বিন্দু সামান্য নয়
শ্ৰী রাধারমণে কহে প্ৰেম বিন্দু লাগিল না হে আমার গায়।।৩।।
রা/৩৬
১৭৩
এসো গৌর গুণমণি জগতের চিন্তামণি
পতিত পাবন অবতার।
তুমি হে পরম শুরু মনোবাঞ্ছা কল্পতরু
অনাথের নাথ সারাৎসার।।
শ্ৰী রাধারা ভাবাবেশে অভাবকাক্তি অভিলাষে
শ্ৰীকৃষ্ণচৈতন্য অবতার।
ধন্য কলি ধন্য যুগ অবতীর্ণ শ্ৰীচৈতন্য
কলিযুগ সর্বযুগ সার
তপ যজ্ঞ যাগ ধ্যান হরিনাম সংকীর্তন
কলিযুগ করিতে নিস্তার।
বিনামূল্যে প্ৰেমধন অন্যাচনে বিতরণে
নাহি কর কুলের বিচার
করুণার অবতার ভাবে না হইবে আর
পাপী তাপী করিতে উদ্ধার।
শ্ৰীকৃষ্ণ চৈতন্য চন্দ্ৰ বলরাম নিত্যানন্দ
মহাদেব দ্বৈত অবতার।
ব্ৰহ্মা হৈল হরিদাস নারদ মুনি শ্ৰীনিবাস
যত প্রিয় ভক্তবৃন্দ আর।
অতিদীন অকিঞ্চন কহে শ্ৰীরাধারমণ
নিজ গুণে কর মোরে পার।।
য/১৮
১৭৪
ঐ আইল ঐ আইল অ্যামার সঙ্কীর্তনের গৌর রায়।
নামের ধ্বনি, প্ৰেমধ্বনি, মধুর ধ্বনি শুনা যায়।।
গউর চান্দের ভক্ত যত যন্ত্রধারী সমুদায়।
কেহ বাজায় নামের যন্ত্র, কেহ নাচে কেহ গায়।।
উথলিল প্ৰেম সিন্ধু, ভাসিল সোনার নদীয়ায়।
শ্ৰীচরণ পাইবার আশে রাধারমণ দাসে গায়।।
য/১৪০
১৭৫
ঐ আসরে আইসরে গৌরচান্দ গুণমণি
আনিয়া প্রেমের বন্যা ভাসাইলায় অবনী।
তুমি দয়া না করিলে গৌর কে করিবে আমারে
ওরে দেও দরশন পতিতপাবন জুড়াউক পরানীরে
নদীয়ার যত নারী রে তারা সব হইল ধনী
গোলকে আনিয়া প্ৰেম ভাসাইলা অবনী।
ভাইবে রাধারমণ বলেরে গৌরচান্দ গুণমণি
অন্তিমকালে দেও মোরে চরণ দুখানি।
সুহা/৯
১৭৬
ঐ নাকি রে শ্ৰীবৃন্দাবন আরে ভাই নিতাই।।ধু।।
ঐ যে গোবর্ধন গিরিরে অ নিতাই মনে মনে ভাবি তাই।।চি
মানসগঙ্গায় স্নান করিয়া রে অ নিতাই শ্যামকুণ্ডেতে যাই
রাধাকুণ্ডে ডুব দিয়ারে অ নিতাই তাপিত জীবন জুড়াই।।১।।
ঐ নাকি কদম্ব তরুরে অ নিতাই যমুনা দেখিতে পাই
কথায় ত্ৰিভঙ্গ বাঁকা রে অ নিতাই কথা প্ৰেমমহী রাই।।২।।
রসময় বৃন্দাবনে রে অ নিতাই সুখের সীমা নাই।
শ্ৰীরাধারমণেরে অ নিতাই অন্তিমে শ্ৰীচরণ চাই।।৩।।
রা/৩৯
১৭৭
তাল-লোভা
ঐ নাকি সেই ব্ৰজধাম আরো ভাই নিতাই।।ধু।।
সেই ধামে মধুর প্রেমে রে অ নিতাই কৃষ্ণকলঙ্কিনী রাই।।চি।।
মধুমঙ্গল সুবিলাদি রে অ নিতাই রাখাল সভাই।
যে বনে চরাইত ধেনু রে অ নিতাই কবলী ধবলী গাই।।১।।
ললিতা বিশাখা সঙ্গে রে অ নিতাই বিনোদিনীরাই।
যে ধামে বিরাজ করে রে অ নিতাই নবীন নাগর কানাই।।২।।
করুণাসাগর নিতাই রে অ নিতাই গুণের সীমা নাই
শ্ৰীরাধারমণের আশারে অ নিতাই অন্তিমে শ্ৰীচরণ পাই।।।৩।।
রা/৪০
১৭৮
ও জলে দেখিবি যদি আয়
সোনার বরন গৌর আমার নদীয়ায় বেড়ায়
আর বউ-বরাঙ্গ হইয়া রূপ
জল আনিতে যায়।
কাঙ্খের কলসী ভাসাই জলে
শ্যাম রূপে চায়।।
আর সুচিত্র পালঙ্কের মাঝে
শুইয়া নিদ্ৰা যায়।
মনে লয়—যৈবন ডালি
দিতাম রাঙা পায়।
তার ভাইবে রাধারমণ বলে,–
শুন গো ধনি রাই,
এই আদরের গুণমণি
কোথায় গেলে পাই।
শ্ৰী/ ৭৫
১৭৯
ও নাগরী কি রূপ মাধুরী গো সুরধনীর তীরে।।ধু।।
হাসে কান্দে নাচে গায় প্রেম রস রঙ্গে
সোনার অঙ্গ ধুলায় লুটায় কি ভাব অন্তরে?
শ্যাম গৌর বাকী নয়ন যার পানে চায় ফিরে,
দেহ থুইয়া মন হরে বান্ধিয়া প্ৰেম ভুরে।
নয়নে লাগিয়াছে গো রূপ পাগল করিল মোরে,
শয়নে স্বপন দেখি জাগিয়া না পাই তারে।
কান্দিয়া রাধারমণ বলে পাইতাম যদি তারে,
যত্ব করি রাখিতাম আমার হিয়ার মাঝারে।
আহা/৪১, গো আ (২১২), হা/২০
১৮০
কই তনে আইলাগো নবনাগরী এমন সুন্দর গৌর।
কিবা শোভা মনোহর গাইড়াছে কি কারিগর।।
রূপে ভুবন আলো যে করিল
আমার গৌরাচান্দের রুদাপের কাছে অরুণ কিরণ ছাপাইল।
দণ্ড করাঙ্গ হাতে মুখে যাঁরা রা রা বলে।
নামাবলী অঙ্গে গোরায় শোভিল।
গৌরা হরি নাম সংকীর্তন করি জগৎ-ভাসাইল।
আমার প্রাণ নিয়াছে গৌরচান্দ উপায় কি বল
গোসাঁই রমণ বলে কে কে যাবে আমার সঙ্গে চল।
যা/ ২২
১৮১
করুণার নিধি গউর, উদয় হইল।।ধু।।
বাঞ্ছা কল্পতরু হরিনামের জগৎ ভাসাইল।।চি।।
প্ৰেমময়ীর প্ৰেমবশে সজল উজজুল রসে
গৌরাঙ্গ হই অঙ্গে মিশে প্ৰেমরসে জগৎ ভুলাইল।।১।।
গৌরায় অন্যাচনে প্ৰেমধন যাচে চলি রে মাধাই
যাই তার কাছে হরির নাম শুনিয়ে হই সুশীতল।।২।।
পতিত পাবন অধম তাঁরণ গৌর নিতাই তোমরা দুজন
জগাই মাধাই পাইল চরণ রাধারমণ। আশায় রহিল।।৩।।
রা/৩১
১৮২
কলির জীব তরাইতে গো ও নৈদাপুরে
আইল রিসে মাখা গৌরচান্দ কাচাসোনা।।ধু।।
তিন বাঞ্ছা অভিলাষী গউরায় পুরাইল মনের বাসনা।।চি।।
সত্যে শুক্লবৰ্ণ ছিল ত্ৰেতায় রক্তবর্ণ হইল গো
দ্বাপরেতে কৃষ্ণ লীলা কলিতে পীত বসনা।।১।।
সেই গৌর নৈদে আসি শচীর গর্ভে প্ৰবেশি।
পাপতাপ সহ নাশি কালির জীবকে দিলা উপাসনা।২।
ভাবে রাধারমণ বলে মানব জীবন যায় বিফলে
আমার জনম গেল ভুলে ভুলে অবহেলে টের পাইলাম না।
রা/১০১
১৮৩
কলির জীবের ভাগ্যে গৌরচান্দ উদয় হইয়াছে।।ধু।।
রাধা ভাব প্ৰেমতরঙ্গে ভুবন মাথিয়াছে।।চি।।
সঙ্গে অদ্বৈত নিত্যানন্দ শ্ৰীবাসাদি ভক্তবৃন্দ হে
অনুপ্ৰতি প্ৰেমরত্নধন অৰ্পণ করিয়াছে।।১।।
গৌর প্রেমের ঢেউ টের পায় না কেউ
হরি হরি বৈলে ধুলায় লুটতেছে।।২।।
যারা ভাগ্যে ছিল প্ৰেম ধন পাইল
ও তার মানব জন্ম সফল হইল হে
রাধারমণ বলে প্ৰেম জলে জগৎ ভাসিয়াছে।
রা/১৯
১৮৪
অবনীতে গৌর নিতাই উদয় হইয়াছে
নবদ্বীপ আর শান্তিপুরে প্রেমের হাট বইসাছে।
হাটের রাজা শ্ৰীগৌরাঙ্গ সঙ্গে নিয়ে সাঙ্গোপাঙ্গ
হরি সংকীর্তন রঙ্গ যুগ ধর্ম আনিয়াছে।
শুনে নামের ধ্বনি সুরধবনী উজান চলিয়াছে
প্ৰেম মহাজন নিত্যানন্দ প্রেমের জাতক ভক্তবৃন্দ
সঙ্গে স্বরূপ রামানন্দ আনন্দে মেতেছে।
শ্ৰীবাসের আঙিনায় বেচাকিনি লেগেছে।।
চতুঃষষ্টি মূল দোকানদার কত লক্ষ কোটি পাইকার
দেশে দেশে করেছে। বেপার প্রেমের খনি খুলিয়াছে।।
শ্ৰী রাধারমণে বলে বিনামূল্যে প্ৰেমধন যেচে দিতেছে।
যা/ ২৪
১৮৫
কাঙাল ভক্ত তোমায় ডাকিয়াছে রে
আইস গৌর এই আসরে।।ধু।।
রাজবংশে ছিলেন হরি কেয়ছা তেরা ধনুকধারী, হরি হে,
দ্বাপরেতে নন্দের ঘরে খাইয়াছ মাখন চুরি করে।
বিনা সুতে হার গাঁথিব বনফুলেতে সাজাইব, হরি হে
কপালে তিলক দিব হেরাব তোমার চরণ ধরে
রাধারমণ ভাবিয়া কয় বিপাকেতে পড়িয়া রয়, হরি হে
অন্তিমকালে দয়াল গুরু উদ্ধারিয়া লইও মোরে।
আহো/১৪, হা/৪৫, গো আ (৭৫)
১৮৬
কালাচান্দ করে ব্রজলীলা সাঙ্গ শ্যামঅঙ্গী গৌরাঙ্গ
পতিত উদয় নদীয়ায়।।ধু।।
সাঙ্গাপাঙ্গ গৌরা আপনে মেতে জগৎ মাতায়।।চি।।
নদীয়া নগর উদয়গিরি পূর্ণচন্দ্ৰ গৌর হেরি
কৃপা করি কলির জীবের দায়
ভক্ত ভাব অঙ্গীকারী নামামৃতে জগৎ ভাসায়।।১।।
শ্ৰীরাধা প্রেমের সীমা জানতে কে প্রেমের মহিমা
রাই অঙ্গো শ্যামাঙ্গী মিলায়
রাধাপ্রেমে ‘পাগল গৌরা যারে তারে প্ৰেমধন বিলায়।২।।
ভাবকান্তি বিলাসে এই তিন অভিলাষে
প্রেমরসে তরঙ্গ খেলায়
লাগল না সে প্রেমের বাতাস শ্ৰীরাধারমণের গায়।।৩।।
রা/২৪
১৮৭
কি করি উপায় গউর, আমায় দেও পদাশ্রয়।
ভব সাগরে ডুবে মারি আমাকে হইলে নিদয়।।ধু।।
ভব সাগরে তুফান ভারি জীর্ণ তরী কিসে তরি।
মনমাঝি ডুবাইল তরী, হাইল রেখা গউর, দয়াময়।।
নাম ধরিয়াছ পতিত পাবন, দীন দয়াময় অধমতারণ।
কাঙ্গালকে লয়ে শ্ৰীচরণ, দূর করা মনের ভয়।।
রাধারমণে বলে, দিন গেল মন অবহেলে।
প্ৰভু রঘুনাথের চরণ তলে ডুবলে না মন দুরাশয়।
য/২৭
১৮৮
কি দেখিলাম গো গৌররূপ, চমৎকার নদীয়ায়।
গৌরার হাতে লুটা মাথায় জটা কপালে চন্দনের ফোটা তার
তারে দেখলে নয়ন পাসরা না যায় গো
গৌর বড় বিনদিয়া পাষাণে বান্ধিয়া হিয়া গো
গৃহ কাজ না চায় তার মনে গো।
গৌরায় কোন সন্ধি জানে কুল মন সইতে টানে গো
তারে দেখছি বলে কয় না কোনো জনে গো।
ভাইবে রাধারমণ বলে ঠেকিয়াছি পিরিাতের ফান্দে গো
তারে ছুটিাইলে ছুটও না যায় গো।
য/১৪৫
১৮৯
কি হেরিলাম গো নদিয়াপুরে
সোনার বরণ গউরচান দেখলে পরান বিদুরে।
তোরা কেউ চাই ওনা গৌরার পানে কি জানি কি জানে
পরান বরশি দিয়া প্ৰেম ডুরেতে টানে।।
ধন দিলাম জন দিলাম কুল দিলাম যাচিয়া
এ নবযৌবন দিলাম গৌর রাঙা পায়।।
এমন সুন্দর গৌর রূপে কাচা সোনা
হৃদয় মাঝে সিদ কাটিয়ে বানাইয়াছে থানা।।
বাউল রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
জাতকুলমান সবই দিলাম গউর রাঙ্গা পায়।।
র/১২৬
১৯০
কৃপা কইরে আইস আসরে গৌরমণি
আমি কোন সাধনে তোমায় পাব সাধনা জানি না।
আমি অতি মুঢ়মতি না জানি ভক্তি স্তুতি হে
পতিতের বন্ধু তুমি দিবায় চরণ তরণী
আমি সাধন ভজন হীন কিসে পাব গৌরচাঁদ হে
গৌর আইস আমার হৃদয় মাঝে ডাকি কাঙালী আমি
ভাইবে রাধারমণ বলে ডাকি গৌরচাঁদ তোমারে
আমি তাই কহিরো প্ৰাণ ভাইরে দয়া করে পার করবায় নি।
সুহা/৩
১৯১
কৃপা করে চৈতন্য নিতাই।।ধু।।
তোমরা দু ভাই গৌর নিতাই আমরা দুই জগাইমাধাই।।চি।।
পতিতপাবন নাম ধরিয়াছ তাইতো তাদের চরণ চাই।
কর বা না করে। দয়া দেখব। সে নামের বড়াই।।১।।
ত্ৰিতাপে তাপিত অঙ্গ শীতল পদে নিলেম ঠাঁই
সুযোগে কলিকাল পাইয়াছি এবার ছাড়াছাড়ি নাই।২।
শ্ৰী রাধারমণে বলে এবার মারামারি নাই।।।৩।।
১৯২
কেন গৌরাঙ্গ হয়ে কানাই আইলে রে।
তুই কার ভাবে জীবন–কানাই আইলে রে
শিরে নাই তোর মোহন চূড়া অঙ্গে নাই তোর পীত ধড়া
নামাবলি কে পরাইল রে।
হস্তে নাই তোর মোহনবাঁশী, মুখে নাই তোর মৃদু হাসি রে
ভাইবে রাধারমণ বলে আইলায় গৌর লীলার ছলে
কলির জীব উদ্ধারের তরে।
রা/১২৩ রা/১০২
১৯৩
কে যাবে গো আয় গউর প্রেমের বাজারে।
প্ৰেমরসের দোকান খুইলে নিতাই ডাকে আয়
বসাইছে এক নতুনবাজার বিকাইছে মাল কি চমৎকার মধুর বাহার
মাইয়া হইলে যাইতে পারে পুরুষ নেয় নারে।।
মাল বিকায় শস্তে শর্তে ওজন হয় রসিকের হাতে শ্ৰীগুরুর মতে
মহাজনের ভাও জানিয়া মাল বিকায় রে।।
গোলোকে গোপনে ছিল ব্ৰক্ষমা ধ্যানে না পাইল সে রস বিকায় রে
গোসাঁই রমণ বলে জম্বুদ্বীপে ভূইলে রইলায় রে।
তী/২
১৯৪
কৈ কৈ সে রূপ রসময়, স্বরূপ যে রূপ দর্শনে মহানন্দ হয়।
রসের স্বরূপ নিত্যানন্দ রূপ অদ্বৈত হুঙ্কারে চৈতন্যের উদয়।
আনন্দ চিন্ময় রসের পাথার, যে রূপ বিহারে প্ৰেমসিন্ধু পার।
ভব-পারাপারে গুরু কর্ণধার, শ্ৰীরূপ নগরে সদানন্দময়।
পঞ্চতত্ত্বময় রূপ সারাসার, মনপ্ৰাণ রে সচিদানন্দ কার।
শ্ৰীরদাপের তরণী ঘাটে বান্ধা যার, সে রসে ভাসাইয়ে আনন্দে হাসয়।
অগম্য অকুল রূপের দেশাচার, রীত বিপরীত যাদের বাজার
শ্ৰী রাধারমণের জন্যম অসার, হইল না শ্ৰী রূপের চরণ অশ্রায়।
য/৩৫
১৯৫
কোথা হে করুণাময় তুমি দীন দয়াময়
দীন নাম অধম তারণ।
প্ৰেম দাতা শিরোমণি আগমে নিগমে শুনি
গৌর চন্দ্ৰ পতিত পাবন।
অকুলে তরঙ্গ নদী তুমি পার হও যদি
নামগুণে নিয়েছি শরণ।
আমি যদি মরি ডুবে নামেতে কলঙ্ক রবে
অপযশ হবে ত্ৰিভুবন।।
জগাই মাধ্যাই হেলে তরাইলে অবহেলে
অযাচনে দিলে প্রেম ধন।
ভবকৃপা হয় যার অনল শরীর তার
তার সাক্ষী কশিপু নন্দন।।
অহল্যা পাষাণ ছিল পরশে মানব হৈল
করে ধরা গিরি গোবর্ধন।
তাইলে কি আমি ডরি অকল ডুবিয়া মরি
গুণ গায় শ্ৰীরাধারমণ।।
য/৩২
১৯৬
গউর এযে প্ৰেম করিল যে রসে কেউ ডুবে না।।ধু।।
শ্রীরূপাদি ছয় গোস্বামী চণ্ডীদাস আর রজাকিনী।
পাঁচ রসিকের জানা।।চি।।
নামেতে প্ৰেম অনুপাম দিয়ারে গউর রাধাভাবে মগনা।।১।।
স্বরূপ রামানন্দ চিনেছে প্রভুর মর্ম কেও তো বুঝে না।।২।।
গৌরপদপঙ্কজে মজো রে রাধারমণের এই কামনা।।৩।।
রা/৪১
১৯৭
গউর এসো আমার আসরে
বিনয় করি ডাকি গৌর তোমারে।।
একবার আইস আইস বইলে ডাকি
দয়াল গৌর আসরে।।
আমি অতি মুঢ় মতি
গৌর তোমারে করি স্তুতি
এই আসরে না আসিলে দোহাই তোমার শ্ৰীচরণে।
ভাইবে রাধারমণ বলে গৌর পড়িয়াছি ভবাসাগরে
ভবাসাগরে পড়িয়ে থাকি তরাইয়া নেও আমারে।
রা/১৫৮
১৯৮
গউর গউর গউর বলে আমার অঙ্গ যায় জুলিয়া গো সখী
গৌরাচান্দের দেখা পাব নি।
তিলেকমাত্ৰ পাইতাম যদি গৌর গুণমণি
কেশেতে ছাপাইয়া রাখতাম ঝাইড়া বলতাম বেণী
ভিক্ষার ছলে প্ৰেমতরঙ্গে নগরে বেড়াইতাম গো সই
আমি অতি দীনদুখিনী দুঃখে গেল কাল
খণ্ডাইতে না পারি আমি ভাবের জঞ্জাল
এ ভব সংসারে আইসে আমার পিপাসা রইল গো সই।
ভাইবে রাধারমণ বলে এইবার এইবার
মনিষ্য দুর্লভ জন্ম না হইবে আর
মানুষ কুলে জন্ম নিয়ে আমার কলঙ্ক রহিল গো সই।
রা/১২৫
১৯৯
গউর নিতাই আইসে রে ও হরির নাম অমৃতে ভাসাইলে।
দুখী-সুখী–পাপী–তাপী অন্ধ-আতুর সবে পাইল।।
হরির নাম মহৌষধি পান কইলে যায় ভবব্যাধি
শুনলে মানব জনম সফল
পতিত পাষণ্ডী যারা হরির নাম আভাষে তইরে গেল।
হরিনাম চিন্তামণি ষষ্টি দণ্ড দিন রজনী
স্মরণ মনন শ্রবণ মঙ্গল
ধ্যানযজ্ঞ পরিচর্য হরির নাম ভজ কেবল।।
হরিনামে কতই মধু পান কইরাছে ব্রজের বধূ
দীনবন্ধু দুর্বলেরি বল
গোসাই রাধারমণে বলইন হরিনামে কেননা হইল।।
তী/৩, রা/৪৩
২০০
গউর রূপের ফান্দে ঠেকাইল আমায় গো, ও নাগরী।।ধু।।
ওয়াগো রূপে দাসী কইরে সঙ্গে নিতে চায় গো।।চি।।
আমি গিয়েছিলাম সুরধুনী আমি হেরলাম গৌরচান্দ গুণমণি
এমন রিসের খনি না দেখি জগতে গো।।১।।
জুড়-ভুরু দুটি আঁখি গৌরায় বাঁকা আঁকি রাখে গো
গউরার আঁখির ঠারে কারে না ভুলায়।২।
ভাইবে রাধারমণ বলে তাহারে পাইতাম যদি কোনো কলে গো
আমার প্রাণ জুড়াইতাম রাখিয়া হিয়ায়।।৩।।
র/১১২
২০১
গুরু শ্ৰীপাদপঙ্কজে দেহ ঠাঁই।।ধু।।
আমি ধর্ম অর্থ মুক্তি চাই না, কেবল তোমার চরণ চাই।। চি।।
বাঞ্ছাকল্পতরু গুরু শ্ৰীচৈতন্য গোসাঁই।
তুমি পতিত পাবন নামটি ধর, কাঙ্গালে এই ভিক্ষা চাই।
নাহি মম শ্রদ্ধাভক্তি কিসে তব চরণ পাই।
আমি সাধন ভজন বিহীনের শ্ৰীপদ বিনে গতি নাই।
শ্ৰীরাধারমণে ভণে, ভাবিতেছি মনে মনে।
ভবরোগের মহৌষধি গুরু বিনে অন্য নাই।
য/১৪৯, তী/৭
পাঠান্তর : তী/৭ : গুরু > × × আমি > × × বাঞ্ছা > মনোবাঞ্ছা
নাহি মম. চরণ পাই> × ×
২০২
গৌর অনুরাগ যার সে জানিয়াছে সারাৎসার
নামে রুচি জিতেন্দ্ৰিয় অপার হে বেপার।।ধু।।
যার বসতি গৌড়দেশে ভক্তিরসে সেই যে ভাসে
কৃষ্ণ লীলামৃতরসে সৎ সঙ্গে করছে বেহার।।
ঐ রসের রসিক যারা কৃষ্ণসুখে সুখী তারা
হিংসা নিন্দা কৈতবা ছাড়া নিত্যভাবের ব্যবহার।।
প্ৰভু রঘুনাথ প্ৰেম কারিগর রসের নদী বহে নিরন্তর
রাধারমণ প্রেমের কাতর ডুইবে না পাই কিনার।
য/৩৯
২০৩
গৌর আমার কাচা সুনা
ওরূপে যাইগো মরি বলিহারি
কি দিয়ে করি প্রাণ সান্ত্বনা।
গিয়াছিলাম সুরধনি
হেরিয়াছি শ্যামগুণমণি
আর নয়নে দেয় গো দেখা
আঁখির ঠারে প্রাণ বাঁচে না
সুনার বরণ আভা নাসিকায় তিলক শোভা
ধন্য ধন্য রূপলাবণ্য কি দিয়ে করল যাদুটোনা।।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে প্ৰাণ সঁপিলাম শ্ৰীচরণে
অধৈৰ্য হইয়াছে প্ৰাণ, বুঝাইলে প্ৰাণ বুঝ মানে না।।
আশা/১০
২০৪
গৌর আমার জাত মারিয়াছে
গৌর যার ঘরে যায় তার ঘরে খায়
তার কি কুলের বিচার আছে।
প্রেমের বাতাস লাগল যার গায় কুলরাখা হইল বিষম দায়।
এগো কুলের মুখে ছাই দিয়াছি–গৌরচান পাইবার আশে।
আমার মত কলঙ্কিনী নাই ত্ৰিজগতের মাঝে
এগো কুল গেল কলঙ্ক রইল পাগল বলবে লোকসমাজে।
ভাইবে রাধারমণ বলে গৌররূপে মন ভুলে।
পাইতাম যদি গৌর চরণ স্থান দিতাম হৃদয় মাঝারে।
হয় ২৮ (৪০), গো আী (২৫৪)
পাঠান্তর : গো আ : গৌর > সে আশে > দায়, নাই.. মাঝে > জগতে নাই
বিনোদিনী, বলবে লোকসমাজে > বলে সবে গায়, স্থান দিতাম। মাঝারে > প্ৰাণ দিতাম রাঙা পায়।
২০৫
গৌর চরণ পাব বলে দুই কুল খাইয়াছি
না জানিছি কুলের মর্ম লোকের কাছে সাধু হইয়াছি।।ধু।।
জন্মিলাম মনিয্যি কুলে গৌরচরণ ভজবো বলে
ছাই দিয়াছি পিতৃকুলে আর বিশেষ কি?
গুরু একজন স্বীকার করিয়ে ডপকী মারা দলে গিয়ে
ভবের মহিষ গাধার মতন কাদামাখা শিখেছি।
গৌর কুলের কুলীন যারা কুলের ধর্ম জানে তারা–
আমার কেবল রং ধারা আর বিশেষ কি?
মুখে বলি হরি হরি অন্তরে কুচিন্তা করি
ডাকাতের নৌকার মাঝে সাধুর নিশান দিয়াছি।
ব্ৰজ কৃষ্ণ পরশমণি যে পাইলো সে হইলো ধনী
তার ধনের আর বা সীমা কি?
রাধারমণের কর্ম ফেরে সে ধন আমার গেলো দূরে
সে ধন পাব পাব বলে শুধু ছালায় গাঁট বেঁধেছি।
গো আ ১০২ (১২৭)
২০৬
গৌরচান এ ভব সাগরে রে পার করা আমারে।
একে জীৰ্ণ তরী, তাহে তুফান ভারি, ঢেউ দেইখে প্ৰাণ কাঁপে ডরে।
আমার মন মাঝি হইয়াছে বেরাজী ডুবাইতে চায় অকুল সাগরে রে।
মায়া মোহ রসে বদ্ধ অষ্ট পাশে শক্তি নাই যাই সাঁতারে।
হইয়াছি নিরুপায়, ডাকি গৌর তুমায়, গ্ৰাসিল কামাদি কুম্ভীরে রে।
কহে নরোত্তমে, পইড়ে মায়ার ভ্ৰমে, ডাকতেছি গৌর তুমারে।
শ্ৰী রাধারমণ করহে তারণ শ্ৰীচরণ তরী দেও আমারে।
সঙ্গীত কুসুমাঞ্জলি, প্রথম খণ্ড নরেশচন্দ্ৰ পাল, শ্যামহাটি আশ্রম, পদ সংখ্যা ৯২। য/১৫১
২০৭
গৌরচান ছাপাইয়ে রাখবো কেউরিরে না দেখতে দিবো
গৌরচান ছাপায়ে রাখবো।।ধু।।
মণিপুরের দারমা খাইয়ে প্রেমের মন্দির বানাইবো
প্রেমের পালঙ্ক বানাইয়ে প্রেমের মশইর বানাইব
প্রেমের বাক্সে তালা দিয়ে গৌরচান ছাপাইয়ে রাখবো—
নিরালাতে বাহির করিয়া গৌরাচাঁদের রূপ দেখিবো।
ভাইবে রাধারমণ বলে গৌর কেমন জনা
আন্ধাইর ঘরে জ্বলছে বাতি গৌরকাঞ্চা সোনা।
গো আ (৬০)
২০৮
গৌরচান হৃদয়ে রাখব অন্যরে না দেখতে দিব।
সখী গো ঢাকা থাকি সেকরা আনব
প্রেমের সিন্দুক বানাইব।
ওগো প্রেমের সিন্দুক প্রেমের তালা
প্ৰেম সুবাণী লগাই রাখব।
সখী গো বিলাত থাকি ওয়াড় আনব
প্রেমের বালিশ বানাইব।
ওগো প্রেমের বালিশ প্রেমের তোষক
ওগো প্রেমের মশারি টাঙাইব।
সখী গো ভাইবে রাধারমণ বলে
প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে
ও গৌরায় কেউরে। কান্দায় কেউরে হাসায়
যার প্রেমে মন মজাইব।
হী/১
২০৯
গৌরচান্দ বিনে আর করুণা পাথার, আর কি হবে ভবে।।ধু।।
সংকীর্তন ছলে হরি হরি বলে প্রেমে জগৎ ভাসায় আপনি ডুইবে।।চি।।
মন্ত্ৰ মহৌষধি সিঞ্চে নিরবধি পাপীতাপী আর কি রবে।
দেখি জীবের দুখ, ত্যজি নিজ সুখ, যাচিয়া প্ৰেম বিলায় জীবে।
চৌদ্দ মন্বন্তরে, কতই যুগান্তরে নিত্যলীলা ভবাৰ্ণবে।
ধন্য কলিকালে, সুরধুনীর কুলে, মানুষলীলা রাধা ভাবে।
পাতকী নিস্তার, চৈতন্য অবতার, বুঝা গেছে অনুভবে।
শ্ৰীরাধারমণ করে আকিঞ্চন, আমায় কৃপা হবে কবে।
য/৪০
২১০
গৌরচান্দ রাইকিশোরীর ভাবসাধিকে
প্ৰেমরসে আভাসাইল রে অবনী।।
প্রেম রসের গুরু কল্পতরু
অনন্ত প্ৰেমধনের ধনী।।
কলির জীবের ভাগ্যে হইয়ে সদয়
ব্ৰজ হইতে শ্যামরায় নদীয়ায় উদয়
উদয় শচীর গর্ভসিন্ধু মাঝে
পতিত পাবন নামটি শুনি।।
পতিত পাষণ্ডী যে ছিল
পাপী তাঈসী তারিয়ে গেল
কলির জীবের কারণ নাম ধরিয়াছে
পতিত পাবন কৰ্ণে শুনি।
রাধারমণ মরলে তবে
নামেতে কলঙ্ক রবে এ ভবে
আমি নরাধমকে তরাইলে
পতিত পাবেন নামের গুণ বখানি।
য/৪১
২১১
গৌর ছাড়া হইলাম গো প্ৰাণ কান্দে গৌরাঙ্গ বৈলে
প্ৰাণ কালেদ গৌরাঙ্গ বৈলে, সোনার গৌর না হরিলে
গৌরার মস্তকেতে সোনার চুড়া বান্ধা গো।
গৌরার মাথায় ঝাঁকরা কেশ ধরে গৌরায় নানাবেশ
অয়গো আমার সোনার গৌরা হেলিয়া হেলিয়া পড়ে।
তোমরা নি দেইখাছ যাইতে নবীন সন্ন্যাসী বেশে
আমার রসের গৌরাঙ্গ লুকাইল কোথায় রে।
ভাইবে রাধারমণ বলে যে জ্বালায় মোর অঙ্গ জ্বলে
ওগো আমি জ্বালায় জ্বলিয়া হৈলাম ছাই গো।
সুখ/৫৩
২১২
গৌর তুমি ঘোর কলির জীব তরাইতে
নামামৃতে ভাসাইলা অবনী
হইয়ে অবতীর্ণ শ্ৰীচৈতন্য
প্ৰেমদাতা শিরোমণি।
নামামৃত বরিষণে সিঞ্চিলে চৌদভুবনে অধম বিনে
আমি আশার আশে আছি বৈসে যে পাইল সে হইল ধনী।
নামের সনে প্রেমামমৃতে অনর্পিত ধন বিতরিলে জগতে
তুমি অধমতারণ পতিত পাবন শুনছি তোমার নামের ধ্বনি।
রাধারমণের এই মিনতি না জানি ভকতি স্তুতি প্ৰণতি
আমি অগতির গতি গৌরাচান্দ মনে মনে অনুমানি।
য/৪২
২১৩
গৌরনিতাই আইস এই আসরে
শ্ৰীবাসাদি ভক্তবৃন্দ গদাধর সঙ্গে কৈরে।
সাধন ভজন বিহীন নাহি ভক্তি প্ৰেমধন
নাপরাধ নকশচন এই সংসারে।
আমি আশার আশে আছি বৈসে
শ্ৰীচরণ ভরসা কৈরে।।
পুরাণে শুইনছি আমি পতিতের বন্ধু তুমি
জগতের অন্তৰ্যামী থাক অন্তরে
ওহে মনোবাঞ্ছা কল্পতরু দয়ালগুরু ডাকি তোমারে।
পঙগুকে লঙ্গায় গিরি বামনে চাঁদ ধরায় হরি
শ্ৰী রাধারমণে ডাকে পৈড়ে ভাবের ঘোর ফেরে।
য/৪৩
২১৪
গৌর নিতাই উদয় নদীয়ায়।।ধু।।
কাঁচাসোনা গৌর বরান, ভাইর ভাবে কানাই বলাই।।চি।।
সুরধুনীর দুই ধারে নবদ্বীপ আর শান্তিপুরে
মহাযোগী অদ্বৈতের ঘরে তিনে একরূপ দেখা যায়।
নিত্যলীলারসে মাজে দেবাদিদেবগণ সেজে
শ্ৰীবাসের আঙ্গিনার মাঝে হাসে কান্দে নাচে গায়।
শচীর সূত নন্দের নন্দন, যেই নবদ্বীপ সেই বৃন্দাবন
যুগল কুণ্ড আর গিরি গোবর্ধন জাহ্নবী যমুনা প্ৰায়।
লাখে লাখে পুরুষ নারী বলতে আছে গৌর হরি।
কি আনন্দ নৈদেপুরী ভাইবে রাধারমণ গায়।
য/৪৪
২১৫
গৌরনিতাই নৈদে আসিয়াছে, রাধাপ্রেমের ঢেউ
রামানন্দ ভক্তি মেঘে রে অবনীমণ্ডল ভাসিয়াছে। চি।
রাধা প্রেমের ঋণ শোধিতে, ভাবকান্তি বিলাসেতে
নদীয়াতে উদয় হইয়াছে।
রাধারূপ অঙ্গে ধরি রে মন হরি হইয়ে হরি বলতেছে।
নামের সনে প্ৰেম আনিয়া অনর্পিত ধন বিতরিয়া
কেও পাইয়া মাতাল হইয়াছে।
রূপ সনাতন তারা দুইজন রে মন বিষয় ছাইড়ে ব্রজে চইলেছে।
রূপ প্ৰেম সুখাৰ্ণবে একান্তভাবে যে জন ডুবে
ভক্তি ভাবের উদয় হইয়াছে।
শ্ৰীরাধারমণে ভনে রে মন আমি বিনে বাকি কে আছে।
য/৪৫
২১৬
গৌরনিতাইর হাটে রসিক মহাজন
প্ৰেমরসের বেচাকেনা সাধুসঙ্গে সাধুজন
দিবারাত্র বিরাম নাই টাইম ছাপ্লান্ন দণ্ড নিরূপণ।।
ধন্য সুরধুনীর তীরে মনোবাঞ্ছা কল্পতরু ভবে
হাটের পত্তন নৈদেপুরে কলিজীবের কারণ
তপস্যজন্তু ধ্যান হরিনাম সংকীর্তন।
সে হাটের বাজারী যারা হিংসা নিন্দা কৈতবা ছাড়া
বিনামূল্যে খরিদ করা প্ৰেম অমূল্য রতন
মিছা সুখের আশা টাকা পয়সার নাইক প্রয়োজন।
নিতাইচান্দের প্ৰেমবাজারে একজন হইলে যাইতে পারে
গুরুবাক্য অনুসারে করে আত্মসমর্পণ
প্ৰভু রঘুনাথের পদাশ্রিত কহে শ্ৰী রাধারমণ।
য/৪৩
২১৭
গৌর প্রেমের এতো জ্বালা সখী জানিনা গো আগে জানি না
সুরধুনীর তীরে গৌরা নারীবধের ফান পাতিয়াছে
ঘাটে নামলে পরে পড়বে ফেরে আসতে পারবে না।
তুষের অনল ঘইয়া জ্বলে মনের অনল দ্বিগুণ জ্বলে
আমার হিয়ার মধ্যে জ্বলছে অনল সইতে পারি না।
ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰেম করিও না তোমরা সবে গো
আমি একজন মরছি প্ৰেমে তোরা মইরো না।
সুহা/১৭
২১৮
গৌর বরণ কে গো সন্ন্যাসীর বেশে সজনী তার নাম জানিনা।।ধু।।
শ্যামল বিজুলী রেখা শিরেতে যায় যে দেখা গো
এগো ভ্রূভঙ্গ সোনার শিক্ষা কি দিয়ে কৈল গঠনা।
খনে হাসে খনে নাচে খনে চায় আশে পাশে গো
এগো যারে তারে প্রিয় ভাবে সদায় রসের আলপনা।
দণ্ডে দণ্ডে তিলে পলে ভুলে না বাউল মনে গো
এগো ভাইবে রাধারমণ বলে কি কুক্ষণে কৈল গঠনা।
গো আ ১৪৮ (২০৬)
২১৯
গৌর বলিয়ে ও নাগরী হৃদয় ফাটিয়ে যায়
আজ দেখাও গো আমায়
তারে দেখছি হেনে পাগল মনে ভুলন না যায়
তারে দেখাও গো আমায়।
হাতে লোটা মাথে জটা নামাবলী গায়
এগো ললাটে চন্দনের ফুটা আড় নয়নে চায়
ভাবিয়ে রাধারমণ বলে প্ৰেমানন্দের দায়
এগো মেঘের বিজলী ছটা লাগল আমার গায়।।
নমি-১১
২২০
গৌর বিচ্ছেদ প্রেমের এত জ্বালাগো
নিবাও গো জল চন্দন দিয়া।।
আর বন জ্বলে সয়ালে দেখে–
ইদুরের আনল কেও না দেখে
এগো, ধাকধাকাইয়া জ্বলছে আনল
আনল জল দিলে আর নিবে না।।
আর আদরে–আদরে প্ৰেম
আগে বাড়াইয়া–
এগো অখন মোরে প্রাণে মাইলাম গো
ও সই, স্বপন দেখাইয়া গো।।
আর ভাইবে রাধারমণ বলে
ও সই, মনেতে ভাবিয়া,
এগো, নিবি ছিল মনেরি আগুইন,
কে দিল জ্বালাইয়া।
শ্রী/৭৯
২২১
গৌররূপ হেরিলাম গো মনপ্ৰাণ কুলমান সব নিল গো।।ধু।।
গৌর রূপ হেরিয়া সুরধুনী ভুলিয়া রইলাম গো।
সুরধানী তীরে গো গৌরা ফান্দ পাতিয়াছে নারী ধরা গো
ঘাটে নামলে পরে–পড়বে ফেরে দায়ে ঠেকবে গো।
যাইছ না তোরা সুরধুনী আমার মত হইছ না তোরা কলঙ্কিনী।
কুলমান লইয়া নিজ ঘরে বসিয়া থাকো গো!
ভাবিয়া রাধারমণ বলে আর কি প্ৰাণে ধৈৰ্য মানে
মনে লয় তার সঙ্গে যাইতাম দাসী হইয়া গো।
সুধী/৬, গো আ (২০৯), সুহা/১২, রা ১৬৫
পাঠান্তর সুহা / ১২৪ গৌররূপ > গোরারূপ; আর কি প্ৰাণে ধৈর্য মানে > রূপ দেখিলাম তরুমুলে।
২২২
গৌররূপ হেরিলাম গো সুরধনীর তীরে।
গৌর উদয় হইল, উদয় হইল গো
কি দিব রূপের তুলনা যেমন কাঁচা সোনা সুরসনা
এগো কলসী ভাসাঁইয়া জলে রূপ চাইয়া রহিলাম গো
রাইরূপেতে গিল্টি করা কোন রমণীর মনোহরা গো
গৌরায় রাধা রাধা রাধা বলে কান্দিয়া বেড়ায় গো
ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গজ্বলে
মনে লয় তার সঙ্গে যাইতাম দাসী হইয়া গো।
হা/২১
২২৩
গৌররূপে আমায় পাগল করিল রে
যন্ত্রণা আর সহে না প্ৰাণে।
আর গৌর পাব, প্ৰাণ জুড়াব এই ভাবনা মনে
ওরে পাব নি গো যুগল চরণ জীবন মরণে।।
আর কুখনে গো জল ভরিতে গেলাম সুরধুনীর তীরে
ওরে কিসের শরম আমার–যাইতাম গৌরার সনে।।
আর শাশুড়ি ননদী ঘরে ভয় বাসি মনে
ওরে কিসের শমন আমার–যাইতাম গৌরার সনে।।
রাধারমণ বাউলে বলে গুরুর চরণে
ওরে গুরুপদে প্ৰাণ সঁপিতাম এই বাসনা মনে।
শ্রী/৭৬, অ হো (৮), হা (২৫), গো আ (৮৮)
পাঠান্তর : আ হো : গৌররূপে আমায় > গৌর রূপে মন আমার; ভয় বাসি মনে > ভয় করিনা মনে; হা/ গো আ—আ হো (৮)-এর অনুরূপ।
২২৪
গৌরাঙ্গ লাবণ্য ও রসময় গো
ও গৌরচান্দ সোনারই বরণ
এমন গৌররূপে মন করলে হরণ
সোনাতে সোহাগা দিয়ে
গোরোচনা তায় মিশাইয়ে
এমন কাঁচাসোনা কি করল গঠন গো
নবীন সন্ন্যাসীর বেশে–দাঁড়াইয়াছে রাজপথে
কত কুলবধুর মন করল হরণ গো
গোসাঁই রাধারমণ বলে প্ৰাণ সপিলাম ঐ চরণে
কুল মান অভিমান করি বিসর্জন।
য/৪৭
২২৫
গৌরার ভাবটি বুঝা দায় অহে স্বরূপ রাম রায়।।ধু।।
হরি সঙ্কীর্তনের মাঝারে কেন ইতিউতি ধায়।।
কি ভাইবে গো গৌর আমার উন্মাদের প্রায়
হাসে ক্ষণে কান্দে রে অ গৌরা নয়নজলে ভেসে যায়।।১।।
ভাবাবেশে রসের গৌরা প্ৰেমে ভাসিয়া যায়
হরি হরি রাধা রাধা বলিয়া রে গৌরা প্রেমে ভুমে গড়ি যায়।।২।।
ব্রজের ভাব পাইয়াছে মনে হে গৌর শ্ৰীরাধারমণ গায়।।৩।।
রা/৩৮
২২৬
চলরে মন রাজ দরবারে, কলিযুগের রাজা শ্রীচৈতন্য
সদর মহকুমা নদীয়াপুরে।।ধু।।
গবার্নার শ্ৰীনিত্যানন্দ এসিস্টেটস্ট তার অদ্বৈত
চিপ কমিশন শ্ৰীবাসভক্ত, সাব ডিভিশন শান্তিপুরে।
জর্জ আদালত শ্ৰীগদাধর হরিদাস তার খুদ মাজেস্টর
শ্ৰীনিবাস তার ইনিস্পেকটর স্বৰ্গমর্ত্য পাতালপুরে।
নজারতে রূপ সনাতন তার অনুগত চৌষট জন।
যাচে হরি নামের শমন, রাধারমণ কহে কাতরে।।
য/৪৮
২২৭
চলেছে হরি নামের গাড়ী
আয় কে যাবি বৃন্দাবন
দীক্ষা শিক্ষা মহাবলী পথে
তিনটা ইক্টিশন।।
প্ৰথম টিকনা নৈন্দাপুরী
স্টেশন মাস্টার গৌরহরি
নিতাই অদ্বৈত সহায়কারী
নামের গাভীর মহাজন।
হরিদাসের চৌকিদাবী সাতপণ দণ্ড
টাইম নিরূপণ
অজলা ও নামের গাড়ী নিষ্টাচাকে
দোকানদারী
ভক্তি আনিল প্রেমের বারি কামের
কৈলায় কৈরে দাহন।
সদামুলে ভাবের নিকট চালাও
বিশ্বাসের ইনজিন।
গাভী পালকে গোলোকে চলে
কালের কোঠায় রূপ সনাতন
গাড়ী মাঝে আশি কোঠা
ষোল কোঠায় মালের কোঠা
পাঁচ রসিক তার মালের মহাজন
গাড়ী গোলোকে গোপনে চলে
বৈসে রইল গোসাঁই রমণ।
আহো ২১/শ্রী /২১৮ (অস)
২২৯
চলো চলো রাই গৌরাচান্দের রূপ হেরিতে
গৌররূপ হেরে পারি না গো এ দেহে প্ৰাণ রাখিতে।।ধু।।
কি করিবে কুলমানে মইলে কি প্ৰাণ সঙ্গে যাবে
আমি এ কুল রাখি সে কুল ভাসাঁই জলেতে।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে শুন গো তোরা সকলে
ভুবন ভুলাইলো গো আমার প্রাণ গোরার রূপেতে।
গো আ ৬৬ (৭৭)
২২৯
চাইয়া দেখরে কি আনন্দ অইতেছে আজ নদীয়ায়।
বালবৃদ্ধ যুবানারী তারা মধ্যে হরিগুণ গান গায়।।
ডালে বৈসে শুকসারি বদন ভৈরে বলে হরি
সুখে বলে ওগো মারি দরশনের সময় যায়।।
জগাই মাধাই পাপী ছিল (হরির) নামের গুণে উদ্ধারিল
কলসীর কান্দায় মাইল বারি দয়াল নিতাইর কোমল গায়।
ভাইবে রাধারমণ বলে মানব জনম যায় বিফলে
বুঝি আমার কর্মদোষে (দয়াল) নিতাইর বাতাস লাগল গায়।
সুখ/৬০
২৩০
চান বদনে বল হরি শ্ৰীগুরু গৌরাঙ্গ নাম পারের কান্ডারী।
অকুল সমুদ্রে দেখি তুফান উঠছে ভারী
তোমার নামে কলঙ্ক রইব যদি ডুবিয়া মরি।
তুফান দেখি মন মাঝি অকুল ধরছে পাড়ি
গুরুর হাতে হাইলের বৈঠা মাস্তুলে শ্ৰী হরি।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে শ্ৰীগুরু কান্ডারী
জপমালা ঠিক থাকিলে তরাইবা শ্ৰীহরি।
গো আ (১৩৪), সুখ /৩৮, হা (২৫) অসম্পূর্ণ
পাঠান্তর : সুখ ৪ প্রথম চরণের পর : ও মাঝিরে অকুল ধইরাছ পাড়ি; তোমার নামে-> তোমার পায়েতে); পঞ্চম চরণের পর : জয় রাধা নামে বাদাম দিয়ে তুমি দেও জাঙ্গায় দড়ি। স্ত্রীপুরুষ… শ্ৰীহরি > এই নিবেদন করি যাইবার কালে মনমাঝি ভাই সঙ্গে নিবায় নি।
২৩১
জয়রে জয় প্ৰভু শ্ৰীকৃষ্ণচৈতন্য
জয় সুরধুনী ধন্য নৈদে অবতীর্ণ।।
জয় প্ৰভু নিত্যানন্দ বড়ই বদান্য
জয় শ্ৰী অদ্বৈতচন্দ্ৰ বৈষ্ণবের গণ্য।
স্বরূপ রামানন্দ শ্ৰীপুর সনাতন
সঙ্কীর্তন যজ্ঞারম্ভে কর আগমন।।
রঘুনাথ পদধূলি মস্তকে ভূষণ।
নামকীর্তন গায় শ্ৰী রাধারমণ।।
য/৫১
২৩২
জাত মারি রাখিয়াছে ঘরে গৌরচান গুণমণি
তুই আমার ছইছনা সজনী।
আমার বাতাস লাগিব যারো গায়
কুল যাবে কলঙ্ক হবে ঠেকবে বিষম দায়
ঘরে রইতে পারবে না গো হইয়া যাবে উদাসিনী।
আসিও না নিকটে পড়িবে সঙ্কটে
আমার মতো কলঙ্কিনী নাই গো এ জগতে
শ্ৰী রাধারমণ বলে চিত্তে জ্বলে আগুনি।
গো আ ২০৩ (৪৯), হা (২০) অসম্পূর্ণ।
পাঠান্তর : আসিও না আগুনি > সখী আসিও না নিকটে, আমার মতো কলঙ্কিনী নাই গো জগতে / প্রাণ সপিয়াছি রাধা পদে মুশিদ বিনে না জানি … (অপূর্ণ)
২৩৩
তোরা কে দেখিবে আয় এসেছে নূতন মাতাল সোনার নদীয়ায়
শুড়ির মদ খায় না। মাতাল আপন মদ আপনি বানায়
মন ভাটিতে প্রেমপুড়ে তো নয়ন। জলে মদ চুয়ায়।
হরিনামের মন্দ পানে হরি বলে জগত মাতায়
সেই মাতালের সঙ্গ নিতে কে যাবিরে ত্বরায় আয়
রূপ সনাতন নিতাই অদ্বৈত এরা সবে সঙ্গে যায়
নিজে খাইয়া অন্যে যাচে যে কাঙ্গালে সামনে পায়।
নামের মদে মাতাল হয়ে জমিনে পড়িয়া লুটায়
রমণ বলে তাদের মেগে ঠাঁই নিলাম হায়রে হয়।
গো আ (৭৩)
২৩৪
তোরা দেখবে যদি আয় গৌরচান্দে নৌকা বাইয়া যায়।
শ্রীবাস আছে মুকুন্দ হরিদাস আর রামানন্দ
নৌকার কাড়ার ধরছে নিত্যানন্দ রায়।
এমন সুন্দর নৌকার তরী দেখবে যদি আয়
নৌকার তরীখানি পথ না হিলায়।
কিবা পুরুষ কিবা নারী দেইখা নৌকার সুন্দর তরী
হরিবল হরিবল বইলা নৌকা বাইয়া যায়।
ভাইবা রাধারমণ বলে শুন গো তোরা সকলে
রাধার নামে বাদাম নিয়া নৌকা বাইয়া যায়।
নৃ/১১
২৩৫
তোরা দেখে যা গো নাগরী গৌর প্রেমের ঢেউ উঠিয়াছে
রসের মুরতি গৌর নইদায় আসিয়াছে।।ধু।।
নাগরী গো — মুখে বলে রা-রা-রা-
দুই নয়নে বহে ধারা গো–
এগো সুরধনীর ধারা যেনো ধারায় ধারায়
ভাইসাছে।
নাগরী গো–যেদিকে গৌর হেলিয়া পড়ে
সেই দিকে নিতাইরে ধরে গো–
এগো–ভাইবে রাধারমণ বলে আর কি গোরার বাকী আছে।
গো আ ৫৩ (৬১)
২৩৬
তোরা বল গো সকলে গৌরচান পাব কই গেলে
ওগো এক দিবসে গিয়াছিলাম সুরধনীর কিনারে
এগো বিজুলী চটকের মত গৌরচান দেখা দিয়া লুকাইলে।।
ভাইবে রাধারমণ বলে শুন গো সকলে
ওগো পাইতাম যদি গৌরচান আমি কইতাম কথা নিরলে।।
রা/১৬১
২৩৭
ত্ৰিভঙ্গের ভঙ্গিমা দেখা।
কি হেরিলাম গৌর বাঁকা
গিয়াছিলাম সুরধুনী পাইয়া গৌরের দেখা।
সে যে প্ৰেম করিল কেউ না ছিল
সে ছিল আর আমি একা।
চুড়ার উপরে চুড়া তার উপরে ময়ুর পাখা
সে যে বাঁশির সুরে উন্মাদিনী কোন রমণীর মনোহরা
ভাইবে রাধারমণ বলে গিয়াছিলাম জলের ঘাটে
ও তার হাতে বাঁশি সাথে চুড়া দেখলে নয়ন যায় না রাখা।
কিরণ/৩
২৩৮
দয়াল গৌর হে পাব তোমায় আর কত দিন বাকী
একদিন তো দিলায় না দেখা জীবনভরা ডাকাডাকি।।ধু।।
জন্ম দিলে ভূমণ্ডলে উত্তম মনুষ্য কুলে
গৌর বলে ডাকলে না মন পাখী
আমারে পাঠাইয়া ভাবে কোথায় দিয়াছ লুকি
জন্ম দিলে মার উদরে আমারে বলিয়া গেলে
তোমায় ভুলে আর কত দিন থাকি
তোমার অভাবে তুমি থাকো আমার অভাবে আমি থাকি।
ভাইবে রাধারমণ বলে বদ্ধ হইছি মায়ার জালে
গৌর বলে ডাকলে না মন পাখী
আমার মনে ঐ বাসনা চরণ সেবায় সদা থাকি।
গো আ ৫৫ (৬২) তুল; রা/১২৪
২৩৯
ধন্য নদীয়ায় উদয় হইল গৌর নিতাই।।ধু।।
এমন মধুমাখা নামের ধ্বনি আর কর্ণে শুনি নাই। চি
গঙ্গা আদি তীৰ্থস্থান ধ্যান যজ্ঞ তপধ্যান হে।
দেবাদির বাঞ্ছিত হারিরে নাম সংকীর্তনে পাই।।।১।।
হরি নামের কি মাহাত্ম্য শুনে পতিতপাষণ্ডী মুক্ত হে
দেখ হরি হরি বৈলে কান্দে জগাই আর মাধাই।।২।।
গৌর লীলা ভোজের বাজি কাজির বেটা হইল বাবাজি
শ্ৰী রাধারমণকে বুঝি নিতাইর মনে নাই।।৩।।
রা/ ২৭
২৪০
ধন্য শ্ৰীচৈতন্য উদয় নদীয়ায়।।ধু।।
হরি নামামৃত আনিয়াছে রে অরে মাধাই
পাষাণ হৃদয় গলিয়ে যায়। চি।
যে শুনিয়ে নাম লয়রে আরো মধাই হাসে কান্দে নাচে গায়। ১।
কাইল মারিয়াছে কান্দার বাড়ি তবু নামে বিরাম নাই।
আর মাইরা না গৌর নিতাইয়ে আরো অ মাধাই
দুভাই ধরি দু ভায়ের পায়।।২।।
পতিত অধম আমি অতি পাপের তো আর সীমা নাই
শ্ৰী রাধারমণ বলে রে আরে মাধাই যা করে গৌর নিতাই।।।৩।।
রা/২৭
২৪১
নইদের চান দয়াল গউর, হে তোমায় পাবার আর কতদিন বাকি।।ধু।।
একদিন তো না দিলায় দেখা জন্মাবধি তোমায় ডাকি।।চি।।
যখন ছিলাম মারি উদরে কতই না বলছিলায় তোমারে
ভাবে আইসে হবে দেখাদেখি।
আমারে পাঠাইয়া ভাবে তুনি কোথায় ছিলায় লুকি।।১।।
জন্ম নিয়ে ভূমণ্ডলে মুনিষ্য উত্তম কুলে
গৌর বলে মন কাঁদে না মনপাখি
তুমি থাকো তোমার ভাবে আমার ভাবে আমি থাকি।।২।।
ভাইবে রাধারমণ বলে মানব জীবন যায় বিফলে
তোমায় ভুলে আর কতকাল থাকি
আমার মনে এই বাসনা যুগল চরণ সেবায় থাকি।।৩।।
রা/১২৪, তুল গো আ (৩২),২৩৮
২৪২
নদীয়ায় আর থাকবে না সখী কুলমান ।।ধু।।
কুল মজাইতে আইল গৌর চান।।চি।।
দেখছি হনে লাগছে মনে গো সখী
আর বাঁচে না আমার প্রাণ।। ১।।
সখী গো কি বলব তার রূপের আভা
মুনি জনের মনোলোভা।
সখী গো ভাইবে রাধারমণ বলে
প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে
অযাচনে কুল দিয়াছে গো
সখী ছাড়ো মনের অভিমান।।।৩।।
রা/১৪৭
নদীয়ায় এলো রে আজ নিমাই কিশোর
সঙ্গেতে নিতাই তার প্রাণ দোসর।।ধু।।
নাম বিলাইয়া সে যে ফিরে ঘরে ঘর
যে বুঝে নামের মর্ম সে হয় অমর।
হরি হরি বলে নাচে ঘরে ঘরে প্ৰেম যাচে
প্রেমিক হয়ে যে সে বাঁচে ঘুচে যায় কুচিন্তা ঘোর
শ্ৰীনিবাস অদ্বৈত সাখী তাদের তনু ধুলায় ধুসর।
বাউল রাধারমণ বলে অত্বরা করে সঙ্গ ধর।।
গো আ ৬৪ (৭৪)
২৪৪
নবদ্বীপের মাঝে গো গৌরচাঁদে নৌকা সাজাইছে।
ষোলনাম বত্ৰিশ অক্ষরে গৌরায় নৌৰ্কম সাজাইছে।।
গৌরার হাতে লোটা মাথায় জটা নামাবলী গায়।
গৌরার কপালে চন্দনের ফোঁটা তিলক নাসায়।
আগে দাঁড়ি পিছে দাঁড়ি মধ্যে গৌররায়।
জয়রাধার বাদাম দিয়া তরী উজান বাইয়া যায়।
ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া।
গৌরায় হরি হরি বলিয়া নদীয়া বেড়ায়।
নৃ/৩
২৪৫
নবদ্বীপের মাঝে গো সুনার একজন মানুষ আসিয়াছে।।ধু।।
এগো হরিবল হরিবল বইলে গৌরচান্দ আনন্দে ভাসিয়াছে।।চি।।
কেউ বলে যশোদার পুত্ৰ বুঝি নীলমণি
কেউ বলে শচীর দুলাল গউরচান গুণমণি।
নয়নেরি দুটি চন্দ্ৰ বিলমিল বিলমিল করে।
কুটি চন্দ্র বিরাজিত গউরার উজ্জ্বল কমলে।
ভাইবে রাধারমণ বলে শুন শচীরানী গো
জীব নিস্তারিতে গউরচান হইয়াছে সন্ন্যাসী গো।
রা/৯৯
২৪৬
নবরাসের গউর, গো হেরি কি হইল গো প্ৰাণসখী
কাচাসোনা হলুদ মাখা কি আচানক যায় গো দেখা
ঘাটে কেহ ছিল না আমি একা, মনে লয় রূপ ধরিয়ে রাখি।।
কি ক্ষেণে জল ভারতে গো গেলাম রূপ দেখিয়ে ভুলিয়ে রইলাম
জাতকুলমান সব হারাইলাম দেহমাত্র রইল বাকি।
ভাইবে রাধারমণ গো বলে আশার আশে
আমার কয়দিন আছে গো বাকি।
রা/১২৮
২৪৭
নাম চিন্তামণি কৃষ্ণ চৈতন্য মাধুরী।।ধু।।
নামেতে বিরাম দিও না মন বেপারী (চি)
অপার সংসার জলধি পার হইতে বাঞ্ছা যদি
নাম মন্ত্র নিরবধি বল রে বদন ভরি।
অকুল সমুদ্রের জল নামের তরী না হয় তল
হরিনাম পথের সম্বল গাইয়ে চল নামের সারি।
শ্ৰীগুরু কান্ডারী করে দশ জানাকে দিয়ে দাঁড়ে,
ছয়জনা করিয়ে গুনারী।
সুবাতাসে শ্রদ্ধাপালে আসক্তি হৃদয় মাস্তুলে
পাঁচ রশি বন্ধন করে নিত্যানন্দে চালায় তরী।
নিঃশ্বাসকে রেখে চৌকিদার, জ্ঞানকে দেহ জল সিচিবার
চিত্তকে দেও রসের ভাণ্ডার, প্ৰেম লজ্জারে লাগায় নিষ্ঠা ডুরি।
প্ৰভু রঘু কহেন রাধারমণ নাম-বিগ্রহ স্বরূপে মিলন
কর কৃষ্ণনামের রস আস্বাদন, মিলবে রে অটলবিহারী।
য/৬৬
২৪৮
নামামৃত রে মন পান কর সদায়।।ধু।।
ভবরোগের মহৌষধি আনিয়াছে গউর নিমাই।।চি।।
হরির নামের আকাশে, জীবের পাপতাপ নাশে
শমন ভুবন গমন মুক্ত হইয়ে যায়।
শ্রবণ কীৰ্তন জলে ভক্তি লতা বাড়ে তায়।
নাম ভক্তি লতার মূল, কার অনৰ্থ নির্মূল
কৃষ্ণপদ প্ৰকল্পবৃক্ষে বৃন্দাবনে যায়
সাধুসঙ্গে অনুপানে প্রেমের কলি ফুটে তায়।
নামে পঞ্চারসের ফুল, ফুলের নাহি টলাটল।
লতা অবলম্বী মালি আস্বাদন পায়।
শ্রীরাধারমণে ভনে নাম বিনে আর গতি নাই।
য/৬৭
২৪৯
নিতাই উদয় নদীয়ায়।।ধু।।
কাচাসুনা গৌরবরণ রাইভাবে কানাই বলাই।
শচীর সুত নন্দের নন্দন যেই নবদ্বীপ সেই বৃন্দাবন
যুগল কুণ্ডল গিরি গোবর্ধন জাহ্নবী যমুনার ঠাঁই।।
সুরধনীর দুইধারে নবদ্বীপ আর শান্তিপুরে
ভজগি অদ্বৈতের ঘরে ভাইবে রাধারমণ গায়।
রা/১৪৩
২৫০
নিমাই রে ওরে নিমাই এমন কেন হইলে রে নিমাই
এমন কেন হইলে।
বানাইয়া শুনারি ঘর আন্ধার কইরে গেলে রে নিমাই
এমন কেন হইলে।
নিমের তলে থাকরে নিমাই, নিমের মালা গলে
মা বলিয়া কে ডাকিব বিয়ানে বিয়ালে রে।
হইয়া যদি মরতায় রে নিমাই, না পাইতাম কোলে
দুইচার দিন কান্দা মায়ে পাশরিতাম মনে রে।।
ভাগ বুদ্ধি বড় রে নিমাই, পণ্ডিত হইলায় বড়
সংসার বুঝাইতায় পার মা ও কেন ছাড় রে নিমাই
ভাবিয়া রাধারমণ বলে শুন রে কালিয়া নিমাই
যে সন্ন্যাসী হইল নিমাইর মারে লইয়া।
য/১৫৭
২৫১
নেচে নেচে আওহে শচীর দুলাল গৌর কিশোরা।
তুমি আসলে আনন্দ হবে নিরানন্দ রবে না
কটিতে কিঙ্কিণি সাজে চরণে নুপুর বাজে
অঙ্গে শোভে পীত ধড়া।
গৌরার গলে শোভে বনমালা মস্তকে মোহনচূড়া।।
পুর্বে ছিল ননীচোরা ব্ৰজগোপীর মনোহরা দুই নয়ন বাঁকা
গৌরার শ্যামল অঙ্গে মাখামাখি মন হইয়াছে মাতোয়ারা।।
ভাইবে রাধারমণ বলে সবে বুঝি পাইতে পারে
আমার কপাল পোড়া
তুমি ভাবের গৌর কল্পতরু কইরো না চরণ ছাড়া।।
সীতু / ৪
২৫২
পতিতপাবনে চৈতন্য নিতাই।।ধু।।
পাপী তাপী নিস্তারিতে অবতীর্ণ দুটি ভাই।।চি।।
তিন যুগের পতিত মোরা এমন পাপী ভাবে নাই।
পতিতপাবেন নামের সাখী দেখাবে জগাই মাধাই।।১।।
রাজপদ ইন্দ্ৰপদ ব্ৰহ্মাপদের বাঞ্ছা নাই।।
নিজদাস করিয়ে রেখে কাছে তোদের কাছে ভিক্ষা চাই।।২।।
পরশে পবিত্র করে কৰ্ণে দেহ নাম শুনাই
শ্ৰী রাধারমণ ভনে অন্তিমকালে চরণ চাই।।।৩।।
রা/ ২৯
২৫৩
পূৰ্ণিমা ফাল্গুনো মাসে জন্মিলা গৌরাঙ্গ
জন্মিলা গৌরাঙ্গ আমার জন্মিলা গৌরাঙ্গ।।
শচীর গর্ভে জন্ম নিলেন গৌর গুণমণি
কি শোভা কি নয়ন বাঁকা কতই শুভঙ্গী করে গো।।
দশমাস দশদিন পরে গৌরাঙ্গ ভূমিতে পড়িল
নারীগণে সবে মিলি নাড়ি ছেদ করিল।
ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
নন্দরাণনীর আশা পূর্ণ করা গৌরহরি আসিয়া।
আছ/৪
২৫৪
প্ৰাণ কি করে গো সই মন চলে না গৃহে।
যাইতে পারি না। আর কুল রাখিতে
আমি যে অবধি গৌর হেরেছি
আমি সেই প্যাঁচে ঠেকেছি বন্ধন ভারী
সই গো ও পাঁচ লাগল আমার গলেতে।।
চল চল সবে মিলে যাই গৌর প্রেমের সাগরে
যাই গো কুল ভেওরা ভাসাইয়া আমরা
কলঙ্কের হার গলায় দিব গো সখী
ছাই দিবো ঐ কুলোতে।।
কুল কলঙ্ক পসার সাজাব
যে দেশে গৌরাঙ্গ গেছে সেই দেশে যাব।।
ভাইবে রাধারমণ বলে সই যাই
যাইগো আমরা ফুল বেচিব নগরে।
করুণা/১৮
২৫৫
প্ৰেম সিন্ধু উথলিল অদ্বৈত হুঙ্কারে
গৌরাঙ্গ দেশে আসিল।।ধু।।
সঙ্গে নিত্যানন্দ প্ৰেমবন্যায় জগৎ ভাসিল।।চি।।
ভক্তি মেঘ রামানন্দ স্বরূপ জগদানন্দ
স্থাবর জঙ্গাম হইতে পতঙ্গ সব ভাসিয়ে গেল।।১।।
হরিনামামৃত জলে আঙিনায় তরঙ্গ খেলে
গৌরাচান্দের এমনি নিলে প্ৰেমজলে জগৎ ডুবিল
পতিত পাষণ্ডী অধম পাষণ্ডী কেহ বাকি না রহিল।।২।।
জলে করল সর্বনাশ গেল ধনমানের আশ
কঠিন হইল গৃহে বাস জলে উদাসী করিল
শ্ৰী রাধারমণকে এবার জলে না ছইল।।৩।।
রা/১৭
২৫৬
বহু অপরাধী জাইনে গৌর আমায় ফিরে চাইলো না
ভজবো বইলে যুগল চরণ মনেতে ছিলো বাসনা।।ধু।।
অনেক পুণ্যের ফলে মনুষ্য উত্তম কুলে
জন্ম দিয়ে কৈলে করুণা; দিলে মায়াড়ুরি গলে পৈরে
সে ডুরি কেটে দিলে না।
দশ ইন্দ্ৰিয় রিপু ছয় কাহার বাধ্য কেউ নয়
কারো কথা কেউ শুনে না, অনিত্য সংসারে আশা
আমার পিপাসা দুরে গেল না
ব্ৰজে ছিলে রাধারমণ নইদে আইলে শচীর নন্দন
কলির জীব তরাইতে কৈরে করুণা।।
গো আ ১৯ (১৭)
২৫৭
বাছা নিমাই চান্দরে, হায়রে আমার প্রাণের বাছা নিমাই চান্দ রে।
তোমরানি দেইখাছ আমার নিমাইচান রে নগরবাসীরে।।
কাল কথাটি কাল হইল, কাল নিহদ্রায় প্ৰবেশিল রে।
কাল নিদ্ৰা চোখে দিয়া আমার নিমাইচান সন্ন্যাসে গেলা।।
ঘরের বধু বিষ্ণুপ্রিয়া, কে রাখিব প্ৰবোধ দিয়া রে।
শচীরানী মা জননী কেমন করে রব গৃহে।।
ভাইবে রাধারমণ বলে রাইখ নিমাই চরণ তলে।
অন্তিম কালে জিহ্বায় যেন, নিমাই নিমাই বইলে ডাকে রে।।
য/৭৩
২৫৮
বিনতি করি কাতরে গউরচান গুণমণি
একবার আইস আমারে জানিয়া দুখিনী।।
তোমার যুগলচরণ হৃদয় রাইকে জুড়ায় থাকে প্রাণী
গউর তুমি জগতের হরি
তুমি মা তরাইলে ভাব কেমনে তরি
কাঙালি জাইনে দয়া করে সাধন ভজন না জানি।।
গউর তুমি দয়াময় পাব। কিনা পাব চরণ
রাধারমণ বলে অগতির গতি তুমি
শুইনাছি নামের ধ্বনি।।
তী/১
২৫৯
ভক্তি সিন্ধু নীরে এবার গৌর বলে সাঁতার দিয়াছি।।ধু।।
এখন আমি কুল পাইলে যে বাচি।।চি।।
ব্ৰহ্মা বিষ্ণু শিব হলে, আগম নিগম বেদ পুরাণে
মুনি ঋষি মহাজনের তত্ত্বগ্ৰন্থে তারে জানিয়াছি।
সাধু শাস্ত্ৰ গুরুত্বাক্য চিত্তেতে করিয়া ঐক্য
ভক্তি বিনে নাই রে মূল্য গৌর লীলাতে তায় জানিয়াছি।
চৌষষ্ট্যিাঙ্গ ভক্তি রসে যাতে কৃষ্ণ কর ধ্যান
শ্ৰীগুরুর দেশে ভক্তি রসের বীজ বুনিয়াছি।
শ্ৰীচৈতন্য নিত্যানন্দ ভক্তির মূল স্কন্ধ
অদ্বৈত আদি ভক্ত বৃন্দের আসার আশে বইয়ে আছি।
কৃষ্ণ ভক্তি সুনিৰ্মল যেন শুদ্ধ গঙ্গার জল
তাহা ডুবে মরণ ভাল, এবার মনে সাধা করিয়াছি।
প্ৰভু রঘুনাথ রসের শুরু মনবাঞ্ছার কল্পতরু
রাধারমণ বলে দয়াল গুরুর চরণ কমল সার করিয়াছি।
য/৭৫
২৬০
ভজ ও মন প্ৰভু শ্ৰীকৃষ্ণচৈতন্য
অবধূত নিত্যানন্দ রায়।।
ভজ অদ্বৈত শ্ৰীবাস প্রিয় গদাধর দাস
শ্রীনিবাস রামানন্দ রায়।
অনর্পিত প্ৰেমবারি সিঞ্চিল জগৎ ভরি
রাধাপ্ৰেমে অবনী ভাসায়।।
শ্ৰীনন্দনন্দনহরি নবদ্বীপে অবতার
প্ৰেম নাহি মাগে অবলায়।
অতি হীন অকিঞ্চনে ভজন বিহীন জনে
শ্ৰী রাধারমণ গায়।।
য/৭৬
২৬১
ভজ ওরে মন শ্ৰীকৃষ্ণ চৈতন্য
নিত্যানন্দ রায়
অদ্বৈত শ্ৰীবাস গদাধর দাস
শ্ৰীনিবাস রসময়।
মহাপ্ৰভু মনে যেই রাত্ৰিদিনে
সাজাতে প্ৰেম বাদল
অনর্পিত ধন করে বিতরণ
জীবে বলয়ে গরল।।
মানুষ রতন হয় যেই জন
কৃষ্ণ প্ৰেমে ভেসে যায়
ছাড়ি কর্মজ্ঞান করে গুরুধ্যান
মন বলি রে তোমায়।
আত্মসুখ ছাড়ি বলা হরি হরি
শ্ৰী রাধারমণে গায়।।
য/৭৭
২৬২
ভব সিন্ধু পার হবে যদি মন আয়
মোহনীরে নামের তরী কান্ডারী অদ্বৈত নিতাই।।ধু।।
নাইরে শ্ৰীগৌরাঙ্গ প্ৰেমতরঙ্গে ভাবের বৈঠে যায়।।চি।।
শ্ৰীরূপ কান্ডারীর কাটা, রঘুনাথ আয় কাটার ডেটা
মহস্তাদি ডেটায় পাড়া কান্ডারীর হিলায়।
মুকুন্দকে দিয়ে কপাট, তরী বান্ধা সুরধনীর ঘাট
ষোল কোঠায় প্রেমের লাট, রসের হাট বসিয়াছে তায়।
তরী পলকে ব্ৰহ্মান্ড ভেদি গোলক ধামে যায়।
হিংসা নিন্দা খুটিনাটি, কৈতবাদি ময়লা মাটি
সাধু সঙ্গে হইয়ে খাটি বলরে তরায়।
রাধারমণ ভনে ভবাসিন্ধু পারের সময় গইয়া যায়।
য/৭৮
২৬৩
ভাসিলরে নইদের বাসী আনন্দ সাগরে ।।ধু।।
উদয় হইল গৌরচান সুরধনীর তীরে ।।চি।।
হরেকৃষ্ণ হরেকৃষ্ণ কৃষ্ণকৃষ্ণ হরে হরে
হরেরাম হরেরাম রামরাম হরে হরে
হরি নামের মধুর ধ্বনি ধন্য নদীয়াপুরে
সংকীর্তনের যজ্ঞারম্ভ শ্ৰীবাসী মন্দিরে।।
আবালবৃদ্ধ যুবতনারী ভাসে প্রেমনীরে
কেউতো বাকি রইল নারে রাধারমণ কয় কাতরে।।
রা/১২১, রা/৪২, য/১৬২
পাঠান্তর : রা/৪২ : সাগরে > বাজারে; হরেকৃষ্ণ…রাম রাম হরে হরে > কেহ বলে হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। কেহ বলে হরে রাম রাম রাম হরে হরে; যুবতনারী > পুরুষনারী; কেউ > কেহ, রাধারমণ কয় > কয় রাধারমণ।
য/১৬২ : সাগরে > সায়রে, হরেকৃষ্ণ… হরে হরে > কেহ বলে হরে রাম রাম রাম হরে হরে, যুবতনারী > যুবক নারী; কয় > কইল।
২৬৪
মন চল চৈতন্য দেশে, জন্ম মরণের ভয় নাই সেই দেশে।।ধু।।
সদা নিত্যানন্দ নিত্যরসে।।চি।।
সে দেশের বসতি যারা, হিংসা নিন্দা কৈতব ছাড়া।
চেতন থাকতে যারা সদা কৃষ্ণ প্ৰেমানন্দে ভাসে।
অনিত্য সংসারে আশা, স্ত্রী পুত্ৰ ধনের ভরসা।
নদীর কুলে ঐ দেখ বাসা, আর কয় দিন রবে এ নিবাসে।
রাধারমণের ভাঙ্গাতরী, শ্ৰীগুরু হয় কান্ডারী।
বেলা থাকিতে ধরা পাড়ি, বার বেলায় ঠেকিবে শেষে।
য/৮১
২৬৫
মাধাই গউর কোথা পাব রে গৌর হেরে প্রাণ জুড়াব।।ধু।।
মাধাই ত্রিতাপে তাপিত অঙ্গ রে প্রাণে আর কত সইব রে।।১।।
কোন পথে গেলে গউর পদ আমি সে পথেতে যাব।।২।।
রাধারমণ কহে গৌরার সঙ্গে যাব তার দর্শনে শীতল হব। ॥৩।
রা/৩২
২৬৬
মাধাই নিতাই কথা রইলরে যে আনিল প্ৰেমরত্নধন।।ধু।।
নিতাই সঙ্কীর্তনের শিরোমণি গৌরাঙ্গের প্রাণরে।।১।।
নিতাই মাইরা খাইয়ে প্ৰেমনাম যাচে মাধাই নিতাই পতিত পাবেন।২।।
প্ৰেমে অবনী ভাসাইল নিতাই, নিতাই বঞ্চিত রাধারমণ।।।৩।।
রা/৩২
২৬৭
যারে দেখলে জুড়ায় দুই আংখি, তাপিত অঙ্গ প্ৰাণপাখী,
শত আংখি দিল না রে বিধি কেন দিল দুই আংখি ।।প্ৰাণ।।
গৌরচান্দ পূর্ণিমার চান্দ সে চান্দের তুলনা কি?
ও তার সর্ব অঙ্গে কোটী চন্দ্র দর্শনে জুড়ায় দুই আংখি
গৌর পাব প্ৰাণ জুড়াবা কুল মানের ভয় আর কি?
বলুক বলুক লোকে মন্দ তাদের মন্দয় হবে কি?
ভাবিয়া রাধারমণ বলে গৌর পাইলে হাই সুখী,
এবার না পাইলে গৌরচান্দ আর পাইবার ভরসা কি?
আহো/২৩, হা/৪৪
২৬৮
রসময় করে প্রেমাসিন্ধু মথন
সজল উজ্জ্বল রসের মিলন
মদনমোহন হলেন গৌরাঙ্গ।।ধু।।
রূপেতে স্বরূপ মিশাইয়ে
দুই অঙ্গে হইয়ে ত্ৰিভঙ্গ।।চি।।
অষ্টবিংশ চতুবৰ্গে
রাধার প্ৰেম অনুরাগে
জীবের ভাগ্যে ব্রজলীলা সাঙ্গ
রাইরূপে শ্যামঅঙ্গ
চাই যে সদা রাধা প্ৰেম প্রসঙ্গ।।১।।
রাধা প্রেমে মাতোয়ারা
দুই নয়নে জল ধারা
ভবের নাটরা করে কত রঙ্গ।
হরি হরি রাধা বৈলে ধুলায় লুটে সোনার অঙ্গ।।২।।
ভক্তগণ সনে মহাপ্ৰভু রাত্র দিনে
রাধা প্ৰেমরসের তরঙ্গে
শ্রীরাধারমণের আশ
পাইতে গোরাচান্দের সঙ্গ।।৩।।
রা/ ২৩
২৬৯
রাইরূপে শ্যাম অঙ্গ ঢাকা
কি হেরিলাম গৌর বাঁকা।
এক দিবসে জলের ঘাটে কুখনে গো হইল দেখা
সেই ঘাটে আর কেউ ছিল না সে একা আর আমি একা।
নব্য রসের রাসবেহারী নব রসে যায় গো দেখা
দেখতে ছিন্ন বাহিরে চিহ্ন চিহ্ন দুই নয়ন বাঁকা।
ভাইবে রাধারমণ বলে গো তোরা সকলে
বিনয় করি ও নাগরী বন্ধু আইনে একবার দেখা।
শ্রীশ/৭
২৭০
রাধাপ্রেমের ঢেউ উইঠাছে গো ডুবু রসের নদীয়ার।
নিয়ে রাধারমণ রাধার মন, রাধার ঋণ শোধিতে ভেসে বেড়ায়।।
সঙ্গিনী স্বগণের খেলা ব্ৰজপুরে ব্রজের খেলা
করিয়ে কীর্তনের মেলা কেউ হাসে কেউ গায়
জয় রাধা শ্ৰী রাধা বলে গৌরা হাসে কাব্দে ধুলায় লুটায়।।
কখন বলে যাও সখাগণ কইরে মধুর নিকুঞ্জবন
কই সে আমার সঙ্গিনীগণ প্ৰাণাধিক রাই।
অমনি ভাবে বুঝিয়ে নিত্যানন্দ শিঙায় রব তুলিয়ে বমবম বাজায়।
ভাবিনী ভাবে বিরাম নাই কখন বনে গোষ্ঠেতে যাই
কইরে আমার ধবলী গাই কইরে ভাই বলাই।
ওহে রমণ বলে প্ৰাণ গৌরাঙ্গ এমনি নিত্যানন্দ বামে দাঁড়ায়।।
য/৯৫
২৭১
রাধা প্রেমের ঢেউ উঠিয়াছে।।ধু।।
নদীয়াপুরী ডুবু ডুবু শান্তিপুরে ভাসিয়াছে। চি।
গৌরাঙ্গ প্রেমাসিন্ধু মাঝে ভাবের বন্যা লাগিয়াছে।
শ্ৰীবাসাদি ভক্তবৃন্দ গৌর প্রেমে মাতিয়াছে।।
শ্ৰীগৌরাঙ্গ প্ৰেম সলিলে রূপ সনাতন ডুবেছে।
তীরে বৈসে হরিদাস প্রেমের লহর গনতেছে।
শ্ৰীরাধারমণে বলে যে জন প্রেমে মাইজেছে।
জন্মমৃত্যু কৈরে বারণ ব্রজধামে চইলেছে।।
য/৯৬
২৭২
রাধার প্ৰেম পাথরে সাঁতার দিয়ে কালাচান্দ হইলেন গৌরাঙ্গ
রাধারা ভাবকান্ডি অভিলাষে দুই অঙ্গ হইয়ে এক অঙ্গ।।
রাই প্ৰেমেতে হইয়ে ঋণী কালাচান নবীন সন্ন্যাসী
ত্যেজে চূড়া দাঁড়া বাঁশি ধরিলেন কৌপীন করঙ্গ।।
রাই প্রেমে হইয়ে উদাসী প্ৰেমরসে ভাসায় অবনী
কলির জীবের ভাগ্যে হইয়ে উদয় ব্রজলীলা কৈল সাঙ্গ।।
প্ৰেমময়ী রাধার আশ্রয় রসের রাজা শ্যামারসময়
প্ৰভু রঘুনাথ প্রেমের ধানের ধনী গোসাঁই রাধারমণের নাই প্রসঙ্গ।।
তীর্থ/৩৪, গো আ (২৮)
পাঠান্তর : গো আ /রাই প্রেমেতে… প্রসঙ্গী > প্ৰেমময়ীর প্রেমের আশ্রয় রসিক নাগার শ্যামারসময়। কলির জীবের ভাগ্যে হলেন উদীয়/ব্রজলীলা করে সাঙ্গ রাধা প্রেমে হবে উদাসী/কালাচান নবীন সন্ন্যাসী ত্যাজ্য করে চুড়াবাঁশি ধরেছেন কৌপীন করাঙ্ক। যেজন সুজন হয়। সাধুসঙ্গ লয় সঙ্গ গুণে পুণ্য সঞ্চয় কররে মনসাধুসঙ্গ/প্রেম বাজারে বিকিকিনি হাটের রাজা রাধারানী রঘুনাথ প্ৰেমধনে ধনী রাধারমণের নাই প্ৰেম প্রসঙ্গ।
২৭৩
শুধু গৌরার প্রেমে মজে গো কুল কলঙ্কের ভয় রাখি না;
গৌরার প্রেমের এত জ্বালা গৃহে যাইতে মন চলে না।।ধু।।
কলঙ্ক অলঙ্কার কইলাম মনের কথা বলব গো না,
শ্যাম কলঙ্কিনী নামটি আমার জগতে রহিল ঘোষণা।।
পিপাসী চাতকীর মত পিপাসায় প্ৰাণ বাঁচে না,
কি করিলে কি হইবে কি করি উপায় বল না,
ভবিয়া রাধারমণ বলে গুরু, ভজন হইল না,
কামরসে মন মগ্ন সদায় প্ৰেমরসে মন মজল না।
আহো/৩৭ (২০), হা (১০), গো (২০০৫)
পাঠান্তর : গো আ : কি করি উপায় বল না > কি হইবে সন্ধানেতে পাই না।
২৭৪
শ্ৰীকৃষ্ণ চৈতন্য গৌরহরি।।ধু।।
কাঁচাসোনা গোরাচনা রে আরো অ গৌর
রাধা রূপমাধুরী।।চি।।
গৌড়োদয়ে পুষ্পবন্তৌ তিমিরান্ধ দূর করি
নবদ্বীপে উদয় হইল রে আরে, আ গৌরা
নিতাই চান্দ সঙ্গে করি।।১।।
জীব তরাইতে অবনীতে বৃন্দাবন বিহারী
হরি হইয়ে বলছে হরি রে, আরো অ গৌরা
দুই নয়নে বহে বারি।।২।।
অধমতারণ পতিতপাবন অকুলের কান্ডারী
শ্ৰী রাধারমণে মাগে রে আরো অ গৌরার
চরণ মাধুরী।।৩।।
রা/২৫
২৭৫
শ্ৰীগুরু গৌরাঙ্গা নদীয়ায় উদয়
পরম দয়ালু সবল হৃদয়।
পূর্ব অনুরোগে ভাবের উদয়
রাধা প্রেমধারা দুনিয়নে বয়।
হরি হরি বলে ধারণী লুটায়
আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শিখায়।
প্রেমের মহিমা সীমা নাহি হয়
দন্ড কমাণ্ডুলু, কৌপীন পৈরয়।
নাহি নামে রুচি গুরু পদার্শ্রয়
শ্রীরাধারমণ বড় দুরাশয়।।
যা/১২৩
২৭৬
শ্ৰী গুরু গৌরাঙ্গ ব্ৰজেন্দ্ৰ নন্দন
পাপী তাপী নিস্তারিতে অবনীতে নৈদে আগমন।
নিজ পুরাণের মর্ম কলি যুগ ধর্ম হরিনাম সংকীর্তন
আচরিয়া ভাবে বিলাইতে জীবে অনর্পিত প্ৰেমধন।
অবতীর্ণ শ্ৰীচৈতন্য জীবের ভাগ্যে শ্ৰীশচীনন্দন
গৌরা প্ৰেমধনী দাতা শিরোমণি প্ৰেমরস নিগমন
ভক্তি জ্যোৎ মা বেশে পাপ তমঃ নাশে পতিতপাষণ্ডীমোচন
ধন্য কলিযুগ ধন্য যার উদয় শুরু পতিতপাবন
হইয়ে সদয় দেও পদাশ্ৰয় না জানি সাধন ভজন
তুমি দয়াময় আমি দুরাশয় করা কৃপা বিতরণ
শ্ৰীরাধারমণে কাঙ্গাল জানিয়ে দেহ শ্ৰীচরণ।।
য/১২৪
২৭৭
শ্ৰী গৌরাঙ্গের আগমনে কলির ধন্য হইল
এবার বড় সুদিন আইল।।
সত্য সতত শাশ্বত উনকা রাগের জন্মতত্ত্ব
নাম মাহন্ত্র্যে জগত ভাসিলো
গোরায় হরি নামের সংকীর্তনে যজ্ঞ আরম্ভিল।
গোসাঁই রাধারমণ প্রেমের খনি
জগতকে করিয়াছে ধনী উত্তম অধম ধনী মানী
বাকী না রাখিলো গৌরায় হরি নামের সংকীর্তনে
যজ্ঞ আরম্ভিল।।
গো আ ৫৮ (৬৮)
শ্ৰী চৈতন্য নিত্যানন্দ পতিতপাবন
চৌষট্টি মহন্ত সঙ্গে পারিষদগণ
ধন্য কলিযুগ ধর্ম নাম সংকীর্তন
ধন্য নইদে শান্তিপুরে প্ৰেম নিকেতন
ধন্য সুরধুনী ধন্য গৌরভক্তগণ
এই শুদ্ধ ভক্তি কহে শ্ৰীরাধারমণ।
য/ ১ ২৩
২৭৯
শ্ৰী রাধার প্ৰেম সলিলে না ডুবিলে কালাচান্দ
কি সহজে মিলে।।ধু।।
দেবের দুল্লার্ভ মায়ার লীলা ভূমণ্ডলে
নিত্যধামে ছিল গোপন প্ৰেমময়ীর প্ৰেমরত্বাধন।
করতে প্ৰেম রসের অস্বাদন।
রসিক রতন প্ৰেম সিন্ধুকুলোরাই রসেতে শ্যাম রসময়
সজল উজ্জ্বল রসের আশ্রয়।
ব্ৰজ-বাসীর ভাগ্যে উদয় প্ৰেমরসের কেলি হয় গোকুলে।
ব্রজলীলা কৈরে সাঙ্গ
সঙ্গে নিয়া সাঙ্গো পাঙ্গ রসরাজ হইলেন গৌরাঙ্গ
প্ৰভু রঘু রাধারমণ বলে।
বা, ৫, যা/১৬৮
২৮০
শ্ৰীরাধার রূপলাবণ্য হরি নব সুতারুণ্য
শ্ৰীকৃষ্ণের নয়ন তুলিল
মজিয়া পিরিতি রসে নবাকৈশোর বয়সে
রাধাপ্রেমে দাসখত দিল।
প্ৰেমারস অস্বাদনে পিপাসা বাড়িয়া মনে
মনোবাঞ্ছা পূরণ না হইল।
ভাবকান্তি সুবিলাসে এই তিন অভিলাষে
দুই অঙ্গে একাঙ্গ হইল
সঙ্গে নিয়ে সঙ্গোপাঙ্গ রাম রায় নিত্যানন্দ
মহাদেব অদ্বৈত হইল।
হুংকার গর্জন ধ্বনি শুনিয়ে কাঁপে মেদিনী
ধন্য চৈতন্য আনিল।
স্বরূপাদি রঘুনাথ প্রভুর যে প্রিয় পাত্র
সঙ্গে করি নামিয়ে আনিল।
অনর্পিত প্ৰেমধন অযাচনে বিতরণ
রাধারমণ বঞ্চিত হইল।
য/১২৭
২৮১
সখী উপায় বল না গৌররূপের ঝলক দেখি প্ৰাণে ধৈর্য মানে না।।ধু।।
সখী গো–রূপের বালক দেখছি অবধি প্ৰাণে উচাটনা
ভব সমুদ্র সাতগারিয়া–কাছে যাইতে পাইলাম না।
সখীগো ভাবিয়া রাধারমণ বলে রূপের নাই রে তুলনা।
এই চক্ষু বদল না কইলে রূপের ঝলক সাইবে না।
গো আ (২০৯)
২৮২
সজনী আমি কি হেরিলাম গৌরাঙ্গরূপ মনোহরা।
নিশি অন্তে ভোর যামিনী হেরিলাম গৌরচান্দ গুণমণি
নিদ্রা হইতে চমকিয়া উঠি পাইয়া গৌরচান্দ হইলাম হারা।
কি দেখলাম কি দেখলাম। সখী গৌররূপের বিকিমিকি
কি দিয়ে গড়িয়াছে গৌরার বাঁকা দুটি নয়নতারা।।
ভাইবে রাধারমণ বলে গৌর রূপে মন হরে।
নয়নে লাগিয়াছে যে রূপে সেরূপ কি আর যায় পাশরা।
সুখ/৫
২৮৩
সুধামৃত শ্ৰীহরি নাম কে নিবে আয়।।ধু।।
গউর নিতাই আইসে, প্ৰেমবশে, হরিনামের লোট বিলায়।।চি।।
মহাপ্ৰভু সঙ্গে স্বরূপ রামানন্দ রায়
আষাঢ় শ্রাবণের ধারা, ধারায় ধরা ভেসে যায়।
নামের সনে প্ৰেম আনিয়া জগৎ মাতায়
রাধা প্রেমের ঋণ শোধিতে বিনামূল্যে প্ৰেম বিলায়
যার ভাগ্য ফলে লোট তুইলে কত খায়
শ্ৰী রাধারমণ ভনে কেহ শুধা হাতে ঘরে যায়।
য/১৩০
২৮৪
সুরধনীর কিনারায় কি হেরিলাম নাগরী গো, সুন্দর গৌরাঙ্গ রায়।
সুন্দর কপালে সুন্দর তিলক সুন্দর রামাবলী গায়।
সুন্দর নয়নে চাহে যার পানে
দেহ হইতে প্ৰাণটি লইয়া যায়।।
যখন গৌরায় গান করে নৈদাবাসীর ঘরে ঘরে
গৌরা প্ৰেমবশে রাধার গুণ গায়।
না জানি কোন রসে ভাসে একবার কান্দে একবার হাসে
পূর্ণশশী উদয় নদীয়ায়।
ভাইবে রাধারমণ বলে একবার আইনে দেখাও তারে
আমি জন্মের মত বিকাই রাঙা পায়।
রা/১৪১
২৮৫
সুরধনীর ঘাটে গউর রায়, নাগরী গো,
গৌরায় নয়ন জলে বিন্দিল আমায়।।
কি বলব তার রূপের গো বাহার কোটি চন্দ্ৰ জিনি আভা
দেইখে কুলনাম রাখা হইল দায়।
হাসে কান্দে নাচে গায় ধুলায় গড়াগড়ি বায়,
রাধা প্ৰেমে ধারণী লুটায়
ভাইবে রাধারমণ বলে মানব জীবন যায় বিফলে
গৌররূপ হেরে শ্ৰীরাধায়।
রা/১২৭
২৮৬
সুরধুনীর কাছে নিত্য কমল কলি ফুটিয়াছে।
গন্ধে মত্ত ভক্ত ভ্ৰমর মধুলোভে ধাইয়াছে।।ধু।।
গাছের গোড়া বৃন্দাবনে তপন তনয়া কাছে, সৈ।
প্ৰেম বাতাসে উৎলা পাইয়ে মৃণাল নৈদে আসিয়াছে।
সজল উজ্জ্বল রসে মনমথে গঠিয়াছে সৈ।
মনোহর রাধার রূপ অঙ্গে মাখিয়াছে।
প্ৰভু রঘুনাথ কহোন, কমল মাঝে কাল মানিক ছাপিয়া আছে সৈ
তারে ধরতে গেলে না দেয় ধরা, রাধারমণ বিলিয়াছে।
য/১৩১
২৮৭
সোনার মানুষ উদয় হইল গো নদীয়া পুরে
স্বয়ং মানুষ উদয় হইল। শচীরানীর ঘরে
রসময় রসিক নইলে কে বুঝিতে পারে
রসে মাখা গৌরচান্দ হালিয়া ঢলিয়া পড়ে।
ভাইবে রাধারমণ বলে পাইতাম যদি তারে
যত্ন করি রাইখা দিতাম হৃদয় মাঝারে।
রা/১০০, য/১৭০
২৮৮
স্নান করিয়ে গঙ্গাজলে আয় জগাই মাধাই।।ধু।।
পঞ্চমহাপাতকী তোরা রে ও জগাই নাম বিনে আর ঔষধ নাই।।চি।।
ভক্তবৃন্দের পদধূলিরে অ জগাই মাখ সর্বগায়
আলিঙ্গন দিলাম তোরে রে জগাই আর তোমার ভাবনা নাই।।১।।
নিতাইর অঙ্গে রক্তপাত রে অব্ জগাই করিয়াছে মাধাই
নিতাই বিমুখ জনেরে আ মাধাই উদ্ধারিতে শক্তি নাই।।২।।
করুণাসাগর নিতাই রে অ জগাই সুখের সীমা নাই
যদি তারিবার তাকে মনেরে অ মাধাই ধরা যাইয়ে নিতাইরী পায়।।৩।।
কাচাসুনা নিতাই আমারে রে আ মাধাই কালো দেখিতে পাই
যেন বিষ পানে নীলকণ্ঠ রে অ মাধাই শ্ৰীরাধারমণ গায়।।৪।।
রা/৩০
২৮৯
হরি বলিয়াছে হরি বলিয়াছে
ব্ৰজ হইতে সোনার মানুষ নইদে আসিয়াছে।
গৌর আইলা নিতাই আইলা অদ্বৈত গোসাঁই
ওগো দুই নয়নে বহে ধারা গুণের সীমা নাই।
চারিধারে চারিধারে কুটুরী ভরিয়া ভরিয়া
ওগো হরি হরি হরি বলিয়া ধুলায় গড়াগড়ি বায়।
বাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
ওগো ভাসাইল সোনার দেশ প্ৰেমবন্যা দিয়া।
নৃ/৮
২৯০
হরি সংকীর্তন মাঝে নাচে গৌরাঙ্গ।।ধু।।
নাচে নিত্যানন্দ অদ্বৈতাদি সঙ্গে সঙ্গোপাঙ্গ।।চি।।
কী অমৃত হরিনাম গৌরাঙ্গ আনিয়াছে
শুনি নামের ধ্বনি সুরধানী উজান বহিয়াছে
গৌরাঙ্গ হাসে কাব্দে নাচে গায় করে কত রঙ্গ।।১।।
এমন সুন্দর গৌর কোথায় আছিল
হরি নামামৃত রসে অবনী ভাসাইল
যে শূনে সে লয় নাম তার বাড়ে প্ৰেমতরঙ্গ।২।।
গৌরনিতাই দুইটি ভাই পতিত পাবন
আচারিয়া জীবকে বিলায় নাম সংকীর্তন
শ্ৰীরাধারমণে মাগে তার অনুষঙ্গ।।৩।।
রা/১৮, রা/২৬, রা/১৭২
পাঠান্ত : রা/২৬, ৪ আচারিয়া… অনুষঙ্গ > আপনি আচরি ভক্তি
জীবেরে শিখায়/গোসাঁই রাধারমণে মাগইন গৌরাঙ্গের সঙ্গ।
২৯১
হরি সংকীর্তন রসে মত্ত গৌর নিতাই।।ধু।।
নাচে হরি বৈলে বাহু তুইলে নামে বিরাম নাই।।চি।।
হরেকৃষ্ণ হরে রাম নাটে তুণ্ড অভিরাম হে
শুনে হরিনামের ধ্বনি পাষাণ গলিয়ে যায়।।১।।
রাধা বইলে ধারণী পড়ে। গদাধরের গায়।।২।।
পাপ তাপ হইল নাশ গৌরচন্দ্ৰ শুভকাল হে
আমার লাগল গায়ে প্রেমের বাতাস রাধারমণ গায়।।৩।।
রা/৩৫
২৯২
হরি সংকীর্তনে নাচে গৌর নিতাই।।ধু।।
কি অমৃত নাম আনিয়াছে রে আরো অমাধাই,
নামে যেন মিঠা পাই।। চি।।
হরেকৃষ্ণ হরেরাম আরো অ মাধাই
এমন সাধুর নাম আর শুনি নাই।।১।।
ঘোর কলির জীব তারাইতে অবতীর্ণ দুটি ভাই
মাইর খাইয়ে প্ৰেম যাচে রে আরো অ মাধাই
এমন দয়াল ভাবে নাই।। ২।।
বহুজন্মের অপরাধী আমরা দুই জগাই মাধাই
শ্ৰী রাধারমণ বলে রে আরে অ
গৌরানাম বিনে আর উপায় নাই।।৩।।
রা/ ২৬
২৯৩
হায় গৌরচান্দ গো গেলো কুলমান।।ধু।।
জল আনিতে ও সজনী গিয়াছিলাম সুরধনী গো
এগো রূপ দেখি হইয়াছি পাগল আমার ফিরে না নয়ন গো।
গৌরায় কি ভঙ্গিমা জানে মনপ্রাণ সহিতে টানে গো
এগো তিলক মাত্র না দেখিলে বাঁচে না পরান গো–।
ভাইবে রাধারমণ গৌররূপে নিয়ন জলে গো
এগো বিজুলীর চটক যেন উড়াইল পরান গো।
গো আ ৬৯ (৭৮)
২৯৪
হেইরে গৌরচান্দ গো গেল কুলমান
তারে তিলেক মাত্র না হেরিলে বাঁচে না পরান।
জল আনিতে ও সজনী গিয়াছিলাম সুরধুনী
ও তার রূপ দেইখে রইলাম ভুলে
ফিরে না নয়ন গো গেল। কুলমান।
গউরায় কি মোহিনী জানে
মনপ্ৰাণ সহিতে টানে
তারে ধইরাতে গেলে না দেয় ধরা
গৌরায় জানে কি সন্ধান।
গোসাঁই রাধারমণ বলে গউর রূপে নিয়ন ভুলে
বিজলী ছটকের মত আমার উড়াইল পরান।
য/১০৯
২৯৫
হৃদয় মন্দিরে গুরু গৌরাঙ্গ রূপ হেরো যতনে
উহারি সঙ্গে সুপ্ৰসঙ্গে দুঃখ আপনি পালাবে।
মনের প্রসঙ্গ সঙ্গে রঙ্গে রেখ
তোমার কামের দুর্মতি বিনাশিবে রে।
অলি কমলে যেন পিরিতি জাগেরে
যেমতি তোমার পিরিতি রাখিবে।
ওরে চরণ সরোজ প্ৰাণ মধুকর
মকরন্দ পানে রবে রে।
তন্ত্রে মন্ত্রে হবার কিছু নয়
প্রাণের পিপাসা যদি না থাকয়
অন্তিমকালে যন্ত্রণা বাড়িবে
রমণের গতি কি হবে রে।।
য/১১০
অনেক অনেক শুভ কামনা আপনাকে ও যুগল চরনে প্রনাম জানাই আমি অধমে।
অনেক অনেক শুভ কামনা আপনাকে প্রনাম জানাই আপনার যুগল চরনে আমি অধমে