গীতিসংগ্রহ – বিরহ
৬৪৫
অউত যারায় গিয়া–বন্ধুরে, আমার পরানে বধিয়া।
আরে সত্যি করি কও রে বন্ধু; আইবায় নি ফিরিয়া রে।।
আর চূড়া–ধড়া মোহন বাঁশিরে, বাঁশি যাও নিকুঞ্জে থইয়া।
ওরে, অবশ্য আসিবায় তুমি–ওই বাঁশি লাগিয়া রে।।
আর ভাইবে রাধারমণ বলে রে–বন্ধু শুনো মন দিয়া।
ওরে, নারী যদি হইতায় তুমি–জানতায় প্ৰেমজ্বালা রে।।
শ্রী/১০০
৬৪৬
অন্তর ছেদিলো গো সখী, সখী শ্যাম পীরিতের বিষে
বিষে অঙ্গ ঝর ঝর রক্ত নিলো চুষে।।ধু।।
উঝাগুণী নাইগো দেশে ছাইলো প্রেমের বিষে
বিষে অঙ্গ ঝর ঝর উঝা নাই মোর দেশে।
সারা গাছে ফল ধরিয়াছে হিলায় গো বাতাসে
আর কতদিন রাখতাম যৌবন আমার প্রাণ বন্ধের আশে।
ভাইবে রাধারমণ বলে ছাইলো প্রেমের বিষে
সকল দুক্ষ সফল হবে যদি বন্ধু আসে।।
গো (১৪৯)
৬৪৭
আজি সখী নিদ্রাভাসে গো সখী
আমি জাগিলাম তরাসে রে শ্যামকালিয়া।
কোন্ বনে বাজায় গো বাঁশি নিলয় না জানি
সেই অবধি আমার প্রাণে ধইরাছে উজানী।।
যে দেশেতে গেছেরে বন্ধু নিছে আমার প্রাণি
সেই অবধি প্রেমের বিষে ধইরাছে উজানী
ভাইবে রাধারমণ বলে গো বলে মনেতে ভাবিয়া
সোনার অঙ্গ মলিন হইল তোমার লাগিয়া।।
সুখ / ১?
৬৪৮
আমায় ফাঁকি দিয়ে গেল গো সখি
শ্যাম নটবর কালিয়া
তারে দেইখছি থানে লাইগাছে মনে না যায় পাহরানা।।
হাসিতে মতিতে বন্ধুর স্বভাব দেখি ভালা।।
চলনে মিলনে বন্ধুর স্বভাব দেখি ভালা।।
ভাইবে রাধারমণ বলে শুন রে কালিয়া
কার কুঞ্জে মন মজাইলায় আমায় পাহরিয়া,
দেশ বিদেশে রিপোট করি পাইলাম না ঠিকানা।
য/ ৫
৬৪৯
আমার কি হৈল যন্ত্রণা গো সখী, কি হৈল বেদনা।
কি অনল জ্বালাইয়া গেল শ্যাম কালিয়া সোনা।।
বাসক ফুটে শতেক ডালে, পদ্ম ফুটে জলে
ভোমরা হৈয়া উড়িয়া যাইতাম, মধু লইবার আশে।
এ দেশেতে থাকা যায় না, পাড়ার লোক বিবাদী
এ গো পাড়ার লোক বিবাদী হৈয়া করইন দোষাদোষী।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে, মনেতে ভাবিয়া
নিবিছিল মনের আগুইন কে দিল জ্বালাইয়া।।
য/৬
৬৫০
আমার কৃষ্ণ কোথায় পাই গো বল সখী কোন দেশেতে যাই।
কৃষ্ণপ্ৰেম কাঙালি অইয়া আমি নগরে বেড়াই।।
আর আপনা জানি প্ৰাণ বন্ধুরে ইদ্রে দিলাম ঠাঁই
এগো ভাঙলো আশা দিল দাগা আর প্রেমের কার্য নাই।।
আর সুচিত্র পালঙ্কের মাঝে শইয়া নিদ্রা যাই
এগো ঘুমাইলে স্বপন দেখি শ্যাম লইয়া বেড়াই।।
আর ভাইবে রাধারমণ বলে শুন গো ধনী রাই
এগো এই আদরের গুণমণি কোথায় গেলে পাই।।
শ্রী/১০৬, হা (৩), গো (১২২)
পাঠান্তর : হা / গো আ : ভাঙাগল আশা > ছিল আশা; আর সুচিত্ৰ… মাঝে > হিঙ্গল মন্দির মাঝে; এগো এই… গেলে পাই > পাইলে শ্যামকে ধরবে গলে ছাড়াছড়ি নাই।
৬৫১
আমার প্রাণ ত বাঁচে না রে রসময় শ্যাম তুমি বিনে
ওরে দয়া নি রাখিবায় বন্ধু জীয়নে মরণে রে।।ধু।।
আমারে ভুলাইলে বন্ধু নয়নের বাণে
তোমারে ছাড়িয়া বন্ধু প্ৰাণ বাঁচে কেমনে?
আশা করি প্রাণ সপিলাম তোমারই চরণে
আমারে নি নিবায় বন্ধু দাসী বানাই সনে।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে আশা ছিলো মনে
তোমারে ছাড়িয়া বন্ধু রহিমু কেমনে।
গো (১৬০)
৬৫২
আমার প্রাণবন্ধু কৈগো, সখী বল গো আমারে
ও আমি কৃষ্ণ প্রেমের দেহা দিতাম করে গো।।ধু।।
শুনগো ললিতা সখী, পাইয়াছিলাম গুণনিধি গো,
এগো আমায় দিয়ে নিধি বিধি হৈল বাদী গো।
যখন ফুলে মধু ছিল, কতই ভ্ৰমর আইল গেল গো,
ও ফুলের মধু খাইয়া ভ্ৰমর যায় উড়িয়া গো।।
বৃন্দে গো তোর পায়ে ধরি, আনিয়া দে মোর বংশীধারী গো,
আমি বিনে হরি প্রাণে ঝুরিয়া মারি গো।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে, প্ৰেম ফাঁসি লাগাইয়া গলে গো,
ও বন্ধে দুঃখ দেয় না মারে পরানে গো।।
আহো /৩৪, হা (১৩), গো আ (২২৪), ঐ (২৮৮), সুধী /৫
৬৫৩
আমার প্ৰেমময়ী রাধারে সুবল দেও আনিয়া।
তুমি না আসিলে রাধা দিবে কে আনিয়া।
যখন আছিলাম রে সুবল রাধা পাসরিয়া
উচাটন করে। প্ৰাণে রাধার লাগিয়া।
যখন চলিল রে সুবল রাধা আনিবারে
মধুর মধুর রব শুনা যায় রাধারে বুঝাইতে।।
হীন রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
সোনার অঙ্গ মলিন হইল রাধার লাগিয়া।।
সুখ/২৯
৬৫৪
আমার বন্ধু আনি দেও গো তোরা
আমার কালা আনি দেও গো তোরা–
কই, ও শ্যাম মনোহরা।।
পোড়া অঙ্গা জুড়াইতে আইলাম গো
তোদেরি পাড়া।
ওরে, মারিয়ো না, মারিয়ো না দূতী,
আমি তোদেরি পিরিাতের মারা।।
ভাবিয়ে রাধারমণ বলে,
ভাবিয়া তনু হইল গো সারা।
ওরে, মারিয়ো না, মারিয়ো না বন্ধু
শ্যাম আছে গোপনের ফাড়া।
শ্রী/১০৭
৬৫৫
আমার শ্যামকে আনিয়া দেও গো তোরা
কই গো তোরা কই গো ও শ্যাম মনোহরা।।ধু।।
পোড়া অঙ্গা জুড়াইতে আইলাম তোদের পাড়া
মনের আগুন জ্বলছে দেখি ‘চন্দ্রার’ লারা ঝারা।
ব্রজপুরের নারী যারা তারার আছে এমনি ধারা
ভাইবে রাধারমণ বলে আমি তোমার প্রেমের মরা।
গো (১০৬)
৬৫৬
আমার শ্যাম বিনে প্ৰাণ বাঁচে না গো ললিতে
কে আইনে শ্যাম দেখাবে এমন সুহৃদ নাই জগতে।
আমার দিনে দিনে তনুহীন ভাবিতে চিন্তিতে
এমন রসের মধু পান করে শ্যাম আমারে নাই তার মনেতে।
আমার মন প্ৰাণ কুল মান সপিয়াছি চরণে
আমার জীবন যৌবন সব বিসর্জন শ্যাম কালিয়ার ঐ পিরিতে।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে আমার দিন গেল বিফলে
আমার তাপিত তুঙ্গ কর শীতল প্ৰেমজলধারা বর্ষণেতে
সী / ১
৬৫৭
আমার শ্যাম শুক পাখী কইগি রৈলায় দিয়া ফাকি
পাখী আয় আয় রে।।ধু।।
দুধ দই সর লনী আছে আমার ঘরে
আমারে থইয়া যারায় পিঞ্জিরার ভিতরে।
অতদিনে পালিলাম পাখী দুধ কলা দিয়া–
যাইবার কালে সোনার পাখী না চাইলায় ফিরিয়া।
ভাইবে রাধারমণ বলে শুন রে সোনার পাখী
মরণ সময় দেখি।
গো (৯)
৬৫৮
আমার সদায় জ্বলে হিয়া গো কার লাগিয়া।।ধু।।
বন্ধের লাগি যতই গো কইলাম পরানে মরিয়া,
মনে লয় মরিয়া গো যাইতাম জলে ঝম্প দিয়া।
কিবা দিবা কিবা নিশি মনটি উঠে গো কান্দিয়া,
মনে লয় প্ৰাণ ত্যজিতাম গরল বিষ খাইয়া।
পুরুষ ভমরা গো জাতি কঠিন তার হিয়া,
না জানে নারীর বেদন পাষাণে বান্ধে হিয়া।
দিবা নিশি জ্বলে গো হিয়া যাহার লাগিয়া,
মনে লয় উড়িয়া যাইতাম প্ৰাণটি তারে দিয়া।
গোসাঁই রামণচন্দে গো বলে মনেতে ভাবিয়া,
বুঝি দুঃখিনীর জন্ম গো যাবে কান্দিয়া কান্দিয়া।
আহো /১২, শ্ৰী/১২৭, গো আ (১৮৯), ঐ (২৩৪), হা (২৮)
৬৫৯
আমার সুনা বন্ধের লাগিয়া মনের আগুন উঠে গো জ্বলিয়া।।ধু।।
আমায় থইয়া সুনা বন্ধু তুমি কোথায় রইলায় ভুলিয়া।।চি।।
সখী গো তোমরা সবে প্ৰেম শিখাইলায় যতন করিয়া
এখন বন্ধে ছাড়িয়া গেলা কি দোষ মানিয়া।।১।।
সাজাইয়া ফুলের শয্যা রইলাম চাইয়া
নিদয়া নিষ্ঠুর বন্ধু একবারও না চাইল ফিরিয়া।।২।।
ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
এ জনমটি গেল আমার কান্দিয়া কান্দিয়া।।৩।।
রা/১২০
৬৬০
আমারে ছাড়িয়া তুমি কেমন সুখে আছ
রে শ্যাম–শুকপাখি–
আর হৎপিঞ্জিরা শুন্য করি
দিয়া গেলা ফাঁকি।।
এগো, জনম ভরি পায়ে ধরি–
না করিলায় সঙ্গী;
আর ধন দিলাম, প্ৰাণ দিলাম,
কুল দিলাম তোর লাগি।
এগো, তেব বন্ধের মন পাইলাম না
হইলাম সর্বনাশী।।
আর ভাইবে রাধারমণ বলে–
শুনো গো প্ৰাণ সখী :
ওরে, আইনা দে মোর প্রাণ-বন্ধুরে
মরণকালে দেখি।
শ্রী/১৫১
৬৬১
আমি কারে বা দেখাব মনের দুঃখ গো হৃদয় চিরিয়া।
আমার সোনার অঙ্গ মলিন হইল ভাবিয়া চিন্তিয়া।।
পুরুষজাতি সুখের সাখী নিদয়া নির্মায়া।
তারা জানে না মনের বেদন কঠিন তাদের হিয়া।।
আমি সাদে সাদে প্ৰেম করিলাম সরল জানিয়া।
কি আমারে ছাড়িয়া গেল প্ৰাণনাথে কি দোষ পাইয়া।।
ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া।
আমার জগতে কলঙ্ক রইল পিরিতি করিয়া।।
ক.ম/১৪, গো (১৪০), কারু /৯, যাচৌ/১
পাঠান্তর : গো : পুরুষ … নির্মায়া > পুরুষ কঠিন জাতি নিদাবরুণ হিয়া; তারা জানে না … হিয়া > জানে না। নারীর বেদন নিদারুণ নিদয়া; আমি… জানিয়া > বন্ধের হাতে প্ৰাণ সঁপিলাম আপনা জানিয়া; আমারে… পাইয়ে > এখন মোরে ছাড়িয়া গেল কুলটা বানাইয়া; আমার… করিয়া > দরশন দেও রে বন্ধু অভাগী জানিয়া। যাচৌ : আমার জগতে .. .. করিয়া > আসবে তোমার কালাচান্দ শান্ত করা হিয়া।
৬৬২
আমি ডাকি বন্ধু বন্ধু আমার বন্ধের বুঝি মায়া নাই
হায়রে মনো–তোমার মনে নাই।।ধু।।
বন্ধু রে তোমার মনে যেই বাসনা আমার মনে নাই
আন তো কাটারী ছুরি বুক চিরি তোমারে দেখাই৷
বন্ধু রে ইষ্ট ছাড়লাম কুটুম ছাড়লাম ছাড়লাম সোদর ভাই
তোমার পিরিতে আমি ঘরে রইতে না পাই ঠাই।
বন্ধুরে ভাইবে রাধারমণ বলে শুন গো ধনি রাই–
জিতে না পুরিবে আশা মইলে যেন চরণ পাই।।
গো (১০০)
৬৬৩
আমি দুখুনী জানিয়া রে প্রাণবন্ধরে তোমার মনে নাই।
প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে আমি জ্বলিয়া পুড়িয়া হইলাম ছাই।।
আর চাও না কেনে নয়ন তুলে কোন কামিনীর সনে রে বন্ধু
রইয়াছ ভুইলে।
ওরে তুমি যদি ভিন্ন বাসো আমি দুখুনীর আর কেহ নাই।
আর ভাইবে রাধারমণ বলে ভমর বয়না শুকনা ডালে
মধু না পাইলে।
ও দীন মদন বলে–ও মৃতকালে আমি যুগল চরণ দর্শন চাই।
শ্রী/১১৫, গো (১৪৩)
পাঠান্তর : গো : প্ৰেমানলে … ছাই> × × আর … ভূইলে > ও বন্ধু রে–চাও না কেন নয়ন তুলে কার প্রেমে ভুলে রৈলে; আমি … কেহ নাই > আমি দুক্ষ বলি কার ঠাঁই; আর. দর্শন চাই > ও বন্ধু রে তুমি বন্ধু সোনা চান তোর লাগি হারাইলাম মান / রাধারমণ কয় মনের আশা মইলে যেন চরণ পাই।
৬৬৪
আমি মরিমু পরানেরে ভাই, রাই বিনে।।ধু।।
রাই রাই বলিয়ারে সুবল সদায় উঠে মনে,
মহা বিষের অব্যৰ্থ ঔষধ পাইমু কেমনে।
পিরিতি বাড়াইয়ারে সুবল কইলায় উদাসিনী,
এখন কেন ছাড় রে তুমি সেই রসবাণী।
পিরিতি বাড়াইয়ারে সুবল ছাড়ি গেলায় মোরে;
কোন পন্থে গেলে রে আমি পাইমু তোমারে।
কঠিন তোর মাতা রে পিতা সুবল কঠিন তোর হিয়া,
পিরিত করি যে জন ছাড়ে হয় পাতকিয়া।
বাউল রাধারমণ বলে সুবল কি ভাবিয়াছ মনে,
পাইবায় তোমার রাইকিশোরী গেলে বৃন্দাবনে।।
আহো/৩৩, হা (১৬), গো (১৭৪)
৬৬৫
আমি রাধা ছাড়া কেমনে থাকি একা
রে সুবল সখা–
আমি রাধা ছাড়া কেমনে থাকি একা।।ধু।।
সুবলরে–গহিন বনে গোচারণে কেতকী ফুল দর্শনেরে
এরূপে সেরূপ আমার হয়েছে উজ্জ্বল রে।
সুবল রে রাধা তন্ত্র রাধা যন্ত্র রাধা আমার মূল মন্ত্র
রাধা আমার সাধন গুরুরে।
সুবল রে ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে রে
আমার মনের আগুন জলে দিলে নিবে না রে।
গো (১৫২)
৬৬৬
আর তো সময় নাই গো সখী আর তো সময় নাই
যে দিন বন্ধু ছাড়া চক্ষে নিদ্রা নাই।।ধু।।
সখী গো —মনের মত দুক্ষ সুখ কই গো তোমার ঠাঁই
বন্ধর লাগাল পাইলে কইও ঈশ্বরের দোহাই।
সখী গো একা কুঞ্জে বইয়া থাকি রজনী পোয়াই–
আইজ আসবো কাইল আসবো বলে মনরো বুঝাই।
সখী গো-অতি সাধের ফুলের মালা জলেতে ভাসাই
অতি সাধের চুয়া চন্দন কার অঙ্গে লাগাই।
সখী গো কণ্ঠগত হইল প্ৰাণ করো ঘরের বার
মইলে নিও তুলসীতলে আমি যেন গঙ্গা পাই।
সখী গো–ভাইবে রাধারমণ বলে কমলিনী রাই
অতি সাধের যুগল মিলন মুই অধমে দেখতে চাই।
গো (২২১)
৬৬৭
উপায় কি করি গো বল মনোচোরা শ্যাম বাদী হইল।
শুধু দেহ থইয়া মনপ্ৰাণ বন্ধে কুন সন্ধানে ভইরা নিল।।
সর্পের বিষ ব্যারিতে নামে প্রেমের বিষ উজান চাল
আমার রসরাজ বৈদ্য আসলে বিষ বাইরে যে করবে ভাল।
চান্দমুখ তুইলে প্ৰাণ ধইরতে গেলে অধর চান্দ
ধরতে গেলে না দেয় ধরা আদর্শনে প্ৰাণটি গেল।
ভাইবে রাধারমণ বলে শুন গো তোমরা সকলে
বিনা অফরাদে বন্ধে অভাগীরে ছাইড়ে গেল।।
তী/২৭
৬৬৮
এ প্ৰাণ সখী ললিতে কি জন্য আসিলাম কুঞ্জেতে।।ধু।।
কেন বা মুই কুঞ্জে আইলাম বৃথা আমি বসে রইলাম
শ্যাম বন্ধের আশাতে।
রজনী প্ৰভাত হইল কুঞ্জে বন্ধু না আসিল
নেও গো ধরো ফুলের মালা ভাসাই দেও নি জলেতে।।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে বড়ই দুঃখ রইল দিলে
নেও গো ধরে রত্নমালা পরাইও বন্ধুর গলেতে।
গো (২৩০)
৬৬৯
ঐ ছিল কর্মের লেখা রে জোখা ঐ ছিল কর্মের লেখা
প্ৰেমময়ী মরণ আমার জীবনে আর কি হবে দেখা।
অক্রুরের রথে গেলায় মথুরা যে রাইকে ফেলিয়া একা।
সেই অবধি প্ৰাণে ধৈর্য নাহি মানে কেনে হইলাম বোকা
কদম্বের তলে বাঁশিটি বাজাইয়ে হইয়ে ত্ৰিভঙ্গী বাঁকা
ভাইবে রাধারমণ বলে শুন গো তোমরা আর নি পাই রাইয়ার দেখা
তাহারি চরণে আমার পরানে রহিল প্রেমের রেখা।
সুখ /২৭
৬৭০
ওগো রাই মরিয়াছে আইলে কইও তারে।
আমার মরণ কথা জানাইও বন্ধুরে।।
মরণের আর নাই গো বাকি
তোরা নিকটে আও সব সখী
আমার কৰ্ণমূলে শুনাও কৃষ্ণনাম গো।।
আমি মইলে ঐ করিও
না পুড়াইয়ো না ভাসাইও
আমায় বান্ধি রাইখ ঐ তামালের ডালে।
ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে
আবার আসবে বন্ধু আমার মরণ হলে।
সুহা/৮
৬৭১
ও প্রাণবৃন্দে প্ৰাণ যায় বন্ধুয়া বিনে
আমি বন্ধু হারা; জিতে মরা তনু ক্ষীণ দিনে দিনে।
বন্ধু বিনে জিতে মরা আছি যে পাগলের ধারা
আমি পাগল নহি পাগলীর মত।
সারা রাত্ৰি শুইয়া থাকি বন্ধরে শিয়রে দেখি
জাগিয়া না পাই চরণতরী
ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে
পিরিত করি আইলা জিতে মরা।
গো (১৯০), হা (১২), হী/৪, গো (১৩৭)
পাঠান্তর : হা–তনু… দিনে > হইয়াছি পাগলের ধারা; পাগলীর মত > পাগলিনীর মত-> পাগলিনীর মত পাগলিনীর ধারা;
গো (১৩৭)–সারা রাত্রি > নিদ্রার ছলে; শিয়রে > স্বপনে; চরণতরী > চিকন কালা;
প্ৰেমানলে > দেহানলে; পিরিত করি … মরা > মনের ব্যথা মনেতে রহিল।
৬৭২
ও প্ৰাণ ললিতে বন্ধু আনিয়া দেখাও গো
মুই অভাগী কলঙ্কের ভাগী কার লাগি হইলাম গো।
এক প্রেম করছে লোহায় কষ্ঠে আর প্রেম করছে চণ্ডীদাসে
আর প্রেম করছে বিশ্বমঙ্গল চিন্তামণির সাথে।
প্রেম করা যে সে নয় প্রেম করলে কানতে হয়
প্রেম করলে হাসে যে জন সফল সে সাধনাতে।
ভাইবে রাধারমণ বলে প্রেম করলাম হেলার ছলে
এখন বুঝি শ্যামচান্দে ঠেকাইল ফান্দেতে।।
গো আ (১৯১), হা /২০, তী /২১
পাঠান্তর — হা : আনিয়া > আইনে, মুই অভাগী > আমি অভাগিনী, প্রেম করা … সাধনাতে > হেলার ছলে আনন্দেতে, ঠেকাইল > ঠেকাইলা।
তী — মুই অভাগী… হইলাম গো > আমার মত জন্ম দুখী নাহি গো সংসারে, চিন্তামণির সাথে > চিন্তামণির সনে, ভাইবে… বলে > গোসাঁই রাধারমণ বলে, হেলার ছলে > মনানন্দে, ফান্দেতে > ফান্দে।
৬৭৩
ও প্ৰাণসখী ললিতে কি জন্য আসিলাম কুঞ্জেতে।।ধু।।
কেন বা মুই কুঞ্জে আইলাম বৃথা আমি বসিয়া রইলাম
শ্যামবন্ধের আশাতে
রজনী প্ৰভাত হইল কুঞ্জে বন্ধু না আসিলো
নেও গো রাধা ফুলের মালা ভাসাই দেও নি জলে।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে বড়ই দুক্ষে রইলো দিলে
নেও গো রাধা রত্নমালা পরাইও বন্ধের গলেতে।।
গো (২৩০)
৬৭৪
ও প্ৰেম না করছে কোন জনা গো,
কার লাগি গো এত যন্ত্রণা।
আর আমার বন্ধু পরশমণি–
কত লোহা মানায় সোনা গো।
আর সকলের জ্বালা যেমন তেমন–
আমার বন্ধের জ্বালা দুনা গো।।
আর বন্ধের লাগি ভাবতে ভাবতে–
আমার শরীর কইলাম কালা গো।।
আর ভাইবে রাধারমণ বলে,–
শুনরে কালিয়া :
প্রেম কইলাম—তার মর্ম না জানিয়া গো।।
শ্রী / ১২৬
৬৭৫
ও বলি নিবেদন কৃষ্ণ আনি দেখাব প্রিয় সখী
সদা উপায়ে আন ত্বরা কইরো না গো প্ৰবঞ্চন।।
তারা আমার আজ্ঞাধীন আজ্ঞাতে আছে প্ৰবীণ
তব আমার এত কষ্ট তোমরা করে নিবারণ।।
বিধির ভঙ্গী কইতে জান দেহখনে যায় গো প্ৰাণ
মনপ্ৰাণ নিল বন্ধে কেমনে করি সম্বরণ।।
দীনহীন রামণে কয় শুন গো রাই দয়াময়
আইসবা তোমার রসময় না হইও জ্বালাতন।
শা/৯
৬৭৬
ও বিশাখা সই গো,
কই গো আমার মন-মোহন কালিয়া।
ও আমার শান্ত করো–
প্রাণনাথ আনিয়া।।
আর বাসর–শয্যা ত্যজ্য করি
আমরা বসেন ছিলাম সব নারী।
আমায় শান্ত করে জলধারা দিয়া।।
আর চুয়া-চন্দন ফুলের মালা, “
রাখিয়াছিলাম যত্ব কইরা।
ওয়রে, নতুন যৈবন দিতাম–
আমার সুস্বামী ডাকিয়া।
আর ভাইবে রাধারমণ বলে,
আমি ঠেকাছি রে কালিয়ার প্রেমে :
আমায় গেল অননাথ করিয়া।
শ্রী/৩৪০
৬৭৭
ওরে আর কি গো মনে মনে
আর কত দিন কালার পিরিত রাখি গোপনে।।
আর গোকুল নগরের মাঝে
শ্যামকলঙ্কী নামটি আমার কে না জানে।।
ওরে বলুক বলুক লোকে মন্দ যার যত ছিল মনে
আর বাঁশি বাজাব প্রেমেরি সুরে
কোকিল কোকিলা তারা আইছন গো বনে।।
ওরে প্ৰেম শিখাইল মাইর খাওয়াইল
মোটা রাখল জগতে
নবগুণ বাঁশির টানে আমারে লইয়া চল বন্ধু যেখানে
আর কুলমান লজ্জা ভরাম সব দিলাম তোর চরণে।।
আর ভাবিয়া রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গা জ্বলে
ওরে পিরিত করি ছাইড়া যাইতে ধারা বহে দুই নয়নে।
য/২১
৬৭৮
ওরে একলা কুঞ্জে শুইয়া থাকি পাই না রাধার মনোচোর
সই গো রজনী হইল ভোর।।
সই গো সই ভাবি যারে পাই না তারে সে বড় নিষ্ঠুর।
এগো আমায় ছাড়ি প্রাণবন্ধু রইয়াছেন মথুরাপুর।।
সই গো সই, ফুলের শয্যা বিছানায় লজ্জা দিলাম রে দূর।
কোকিলে কুহুরবে নিশিরা বুঝি নাই গো জোর।।
সই গো সই, ভাইবে রাধারমণ বলে হইয়া বেভোর।
এগো ঘুমের ঘোরে রইলাম পড়ি ধরব মনোচোর।।
শ্রী/১০৫, আহো (৬), গো (১৭৪), হা (২৮)
পাঠান্তর / আহে : ওরে > × × রজনী > যামিনী, এগো > × × পড়ি > পড়ি কিসে
গো হা : আহোর অনুরূপ
৬৭৯
ও শ্যাম রসবিন্দাবনে আও না কেনে আও না কেনে
রাসবিন্দাবনে।
যত ফুলে মধু ছিল সকলি শুকাইয়া গেল
ফুল যে মধুহীন প্ৰাণনাথ জানিল কেমনে।
চৌরাশি ক্রোশ বিন্দাবন সেথায় মজিল মন
তাতে ফুল বিকশিত পান করছে আপন মনে।
ভাইবে রাধারমণ ভনে শ্যাম আছে আনন্দমনে
সে যদি আনন্দমনে আমি নিরানন্দ কেনে?
গো আ ২১৪ (২৪০), হা (২৯)
৬৮০
ও সজনী কও গো শুনি গুণমণি কৈ
শ্যামচন্দের প্ৰেমাগুণে পুড়িয়া ছালি হই।।ধু।।
মন দিয়াছি নয়নপুনে প্রাণ দিয়াছি গানে
বন্ধু বিনে পিনরা থালি কেমনে রই গো।
চিন রে মন গুরুধন দিন গেল রে অকারণ
গুরু বিনে নিদানকালে কে তোমার সহায় হয়।
ভাইবে রাধারমণ বলে শুন গো ধনী সই।
নিদান কালে সহায় নাই শ্যামচান্দ বন্ধু বই।
গো (১৮২)
চিনরে মন … সহায় হয় অংশটি প্রক্ষিপ্ত হতে পারে।
৬৮১
ওহে কৃষ্ণ গুণমণি মোর প্রতি দয়া ধর জানি অভাগিনী।
অভাগিনী জানি বন্ধু ফিরাও নয়নী
দেখাও স্বরূপ তোমার ভুবনমোহিনী
তুমি ত গুণের ঠাকুর আমি অভাগিনী–
দয়া ধরা দয়ার নাথ জানিয়া তাপিনী
তাপিনী জানিয়া বন্ধু কর রে সিঞ্চনী
সিঞ্চাগুণে শীতল অউক তাপিত পরাণি।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে কুলের কামিনী
তোমার পিরিতে মজি অইলাম কলঙ্কিনী।
গো (১৮৬)
৬৮২
কইতে ফাটে হিয়া
দুঃখে বিরাহিণীর জনম যায় গইয়া
অবলা সরল জাতি দারুণ বিধি বিক নিদয়া
সখী গো যার চরণে জাতি যৌবন দিলাম গো সাধিয়া।
বন্ধে মরে ভিন্ন বাসে কি দুষ জানিয়া
লুকের কাছে কই না লাজে থাকি মনে সইয়া।।
বন্ধে মরে ছাইড়া গেল প্ৰেম ফান্দে ঠেকাইয়া
সখী গো ভাইবে রাধারমণ বলেন মনেতে ভাবিয়া।
? / ২৮
৬৮৩
কত দিনে ওরে শ্যাম আর কত দিনে,
কত দিনে হইব দেখা বংশী বাঁকা ঐ বনে।।ধু।।
বাঁশি দেও সঙ্গে নেও যাও নিজ স্থানে,
দুরে গেলে ঐ দাসীরে রাখবে কি তোর মনে।
শুইলে স্বপনে দেখি রাত্রি নিশাকালে,
নিদাগেতে দাগ লাগাইলে কোন কথার কারণে।
রাধারমণ বাউলে বলে শ্যাম চান্দ বিহনে,
ছাড়িয়া গেলায় এ দাসীরে কিসের কারণে।।
আহো /৭, হা (৩০), গো (১১৫)
৬৮৪
কহ গো ললিতে সই কেন না আসিল গো
প্ৰাণনাথ নিকুঞ্জ কাননে
দারুণ মুরলীর স্বরে পাগলিনী হইয়া গো
আসিলেম নিশীথে গহনে।।
বন্ধু আসিবার আশে নিকুঞ্জ সাজাইলাম গো
মিলি সব সহচরীগণে
বৃথা হল কুঞ্জ সাজ না আসিল প্ৰাণনাথ
মনোদুঃখ রইল মনে মনে।।
বাঁশিতে সংবাদ করি অবলা ছলিলা গো
বৃথা হল নিশি জাগরণে
বাসি হল পুষ্পপহার কুসুম মল্লিকা গো
প্ৰাণ যায় প্ৰাণনাথ বিনে।।
যথা নিশি তথা শশী কুমুদিনী জলে গো
যেই যার লেগেছে নয়নে
কৃষ্ণও প্ৰেম… এ ব্ৰজরমণী গো
গুণ গায় শ্ৰী রাধারমণে।
য/২৫
৬৮৫
কাজলবরণ পাখি গো সই ধরিয়া দে।
ধইরাদে ধইরাদে আমার কাজল বরণ পাখি দেগো ধরিয়া।
সোনার পিঞ্জিরায় গো পাখি রূপার টাঙুনী
গলে শোভে শ্যামলবরণ পিঞ্জিরায় ডালুনী।।
একদিন পালছিলামরে পাখি দুধকোলা দিয়া
যাইবার কালে নিষ্ঠুর পাখি গেল বুকে শেল দিয়া।।
ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
আমারে ছাড়িয়া গেল প্ৰাণনাথ কালিয়া।
সুখ / ২৪
৬৮৬
কালা রে তোর রং কালা রং দিলে রং মিশে নারে
প্ৰাণ দিলে প্ৰাণ মিশে নারে।।ধু।।
মাকালের ফল দেখতে ভালো বাইরে লাল ভিতরে কালো
শিমুল ফুলে নাই মধু ভ্ৰমর তাতে বসে না।
এক ঘরে শুইয়া থাকি প্ৰাণবন্ধুরে স্বপ্নে দেখি
জাগিয়া পাই না তারে একি যন্ত্রণা।
ভাইবে রাধারমণ বলে দিন গেল আশার ছলে
সন্ধ্যাবেলা যাইবে কোথা উপায় দেখি না।।
গো (৯)
৬৮৭
কি করিব কোথায় যাব বিরহে প্ৰাণ সহে না
আশা দিয়ে গেল শ্যাম ফিরিয়া আইল না।।ধু।।
মন-প্ৰাণ সপিয়া দিলাম না রইলাম। আপনা
মনপ্ৰাণ হরিয়া নিয়া ফিরিয়া বন্ধু আইল না
প্ৰেম বাড়াইয়া কঠিন হওয়া কোন শাস্ত্ৰে দেখি না।
প্ৰেম জ্বালা বিষম জ্বালা সে জ্বালাতো সহে না।
সোনার কমল ফুটিয়া রইছে সরোবরে দেখ না
কত ভ্ৰমর মধু লুটে আমার কেবল কান্দনা।
বহুদিন উপবাসী ক্ষধানলে বাচি না
পাক করিয়া বসিয়া রইলাম কেন করা ছলনা।
ফুল বিছানা বাসি হল মশার কামড় তাড়না
দুক্ষে আমার বৃষ্টি করে কেবল তুমি শুন না।
আনন্দেরই গাছতলাতে সদায় থাকতে বাসনা
দয়াল বলিয়া নামটি শুনি দয়ার কিছু দেখি না।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে কত করি ভাবনা
সবে দয়া পাইল তোমার আমার শুধু লাঞ্ছনা।
গো (১৭৯)
৬৮৮
কিনা দোষে তেজিলায় আমারে রে বন্ধু
কিনা দোষে তেজিলায় আমারে।।ধু।।
তুমি রইলায় দূরদেশে আমি রইলাম তোমার আশে
তুমি বন্ধে না চাইলায় ফিরিয়া রে।
তিষ্টিতে না পারি। ঘরে কোথা গেলে পাইমু তোরে–
মুই অভাগী মারি যে ঝুরিয়া রে।
প্ৰাণ কাড়িয়া নিয়া মোর সুখ যদি হয় তোর–
থাক সুখে আমি যাই মরিয়া রে।
প্ৰেমশেল বুকে দিয়া কি দোষে রইলাই ছাপিয়া–
পাষণে বান্ধিয়া তোমার হিয়া রে।
তোমার পিরিাতের দায় দেশে দিশে মন্দ গায়
আমি শুনিয়া না শুনি সেই কথা রে।
নিষ্ঠুর নিদয়া তুমি তোমার আশে রাইছি আমি
তোর লাগিয়া সদায় ঝুরি রে
ভাবিয়া রাধারমণ বলে যে জ্বলিয়াছে প্ৰেমানলে
সে বিনে দুখ অন্যে বুঝে নারে।
গো (২৪০)
৬৮৯
কি বুঝাও আমারে গো আর কি গো মন মানে।
ঠেকিয়াছি পিরিাতের কাছে মন প্ৰাণ সদাই টানে।।
অবলার বিচ্ছেদের জ্বালা অন্যেতে না জানে
জল ছাড়া মনীনের জীবন রহিবে কেমনে
পূর্বের কথা প্ৰাণনাথ পাশরিল মনে
কদম্বতরুয়া তলে ছিল কথা দুজনে।।
কইও দুঃখ বন্ধুর কাছে রমণ মইল পরানে
ওগো ত্বরা কইরে যাগো বৃন্দে প্ৰাণনাথ যেখানে।।
সুখ / ১২
৬৯০
কি সুখে রহিয়াছো বন্ধুরে
বন্ধু-আমায় পাশরিয়া।।ধু।।
দয়ামায়া নাই তোর মনে নিদিয়া হইয়া–
এমন কঠিন রে বন্ধু পাষাণে বান্ধিয়াছো হিয়া।
আগে যদি জানতাম বন্ধু যাইবায় রে ছাড়িয়া–
দুই চরণ বান্ধিয়া রাখতাম মাথার কেশ দিয়া
ব্ৰজপুরে ঘুইরে বেড়াই তুই বন্ধের লাগিয়া–
মনে লয় মরিয়া যাইতাম গরল বিষ খাইয়া।
ভাইবে রাধারমণ বলে শুন রে কালিয়া–
নিবিয়াছিল মনের আগুন কে দিল জ্বালাইয়া।।
গো (৯৯)
৬৯১
কৃষ্ণ কই গো ও বিশখা সংশয় আমার জীবন রাখা।
হায় কৃষ্ণ হায় কৃষ্ণ বলে প্ৰাণ যায় গো প্ৰাণের সখা।।
কৃষ্ণ নাই সুখও নাই মনেতে আনন্দ নাই
কৃষ্ণ বিনে বৃন্দাবন নিরানন্দ কেমনে থাকা
ভাইবে রাধারমণ কয়, মনোতে আনন্দ নয়
এখন আমার এ ছার প্রাণী রাইখে কি ফল বল না।।
য (হু)/১৪৭
৬৯২
তাল–লোভা
কৃষ্ণ রূপ আমি কেমনে হেরিব রে দারুণ বিধি
কেন বিধি অবলা করিলে।।ধু।।
মনে লয় উড়িয়া, যাইতে পাখা নাহি দিলে।।চি।।
বিধি রে কামিনীমোহন দের কাল, কালরূপ কেমনে গঠিলে
বুঝি অবলা বধিবার লাগি পুরুষ সৃজিলে।।১।।
বিধি রে কাল যৌবনের ক্যালবারি। কালমুরলী এ গকুলে।
কালনাগিনী ননদিনী ঠেকাইলে বিফলে।।২।।
শ্ৰীরাধারমণের এই দুঃখ ফাটে বুক শ্যামরূপ না হেরিলে
শ্যামরূপে মনপ্ৰাণ আকুল কাজ কি মানকুলে।।৩।।
রা/৮৭
৬৯৩
কেন দিলে চম্পকেরি ফুল, রে সুবলাসখা।
চম্পকেরি বরণ আমার প্রাণের রাধিকা।।
রাইরে আনলে বাচি নইলে মরি
একবার আনি দেখা রে সুবল সখা।
ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে
আমার জিতে না পুরিল আশা মইলেনি পুরিবরে।
কালি/১
৬৯৪
কে বলে পিরিতি ভালা গো সজনী
কে বলে পিরিতি ভালা।
কালার পিরিতি অতি বিপরীত
অন্তরে দ্বিগুণ জ্বালা।।
।শুন গো সজনী কি বলিব আমি
হইয়ে অবলা বালা
করিয়ে পিরিতি গোল কুল জাতি
মাথায় কলঙ্ক ডালা।।
সুখের লাগিয়া পিরিতি করিয়া
অন্তরে বাহিরে জ্বালা
এ ব্রজ নগরে কেনা কিনা করে
রাধার কলঙ্ক কালা
প্রেম সরোবরে ছিল কমলিনী
না সহে রাধার জ্বালা।।
শ্যামচান্দ বিনি বাচিনা পরাণে
সহে না বিচ্ছেদ জ্বালা।
শ্ৰীরাধারমণে প্ৰবোধ না মানে
না বুঝি কালার ছলা।
য/৩১
৬৯৫
কে যাবি চল বৃন্দাবনে যারে নাগাল পাই
প্ৰাণনাথ বন্ধুরে পাইলে অঙ্গেতে মিশাই গো।।ধু।।
অপার উদয়চাঁদ অঙ্গ শীতল করে
আমার লাগি সে চাঁদ সখী অনল হইয়া ঝরে।
অপারে বন্ধুয়ার বাড়ী মধ্যে সুর নদী
মনে লয় উড়িয়া যাইতাম পংখ না দেয় বিধি।
শুনো সখী শ্যামের প্রেমে মরলে জীবন পায়
জীবন থাকতে মরলাম আমি এখন কি উপায়।
ভাইবে রাধারমণ বলে বন্ধু শ্যামরায়–
মইলে আমায় দিও শরণ নেপুর বান্ধী রাঙ্গা পায়।
গো (১০৭), হা (৩), তী /২৩
পাঠান্তর হা (৩) : অপার উদয় চাঁদ … ঝরে > আঙ্গুলি কাটিয়া কলম গো সখী,নয়ন s জলে কালি /হাদপত্র কাগজের মাঝে বন্ধের নামটি লিখি/ লেখ লেখ এগো বৃন্দে লেখ মন দিয়া/অবশ্য আসিবা বন্ধু পাইয়া। শুন সখী… এখন কি উপায় > বনফুল হাইতাম যদি থাকতাম বন্ধের গলে / ঝরিয়া ঝরিয়া পড়তাম ও রাঙা চরণে।
বন্ধু শ্যামরায় … রাঙা পায় > মনেতে ভাবিয়া / প্রাণ বন্ধু ভুইলা রইছে রসমতী পাইয়া।
তী/২৩ : হা (৩) এর অনুরূপ।
৬৯৬
কৈ রৈল কৈ রৈল আমার শ্যামচান্দ শুকপাখি।।ধু।।
আঙ্খির মাঝে পাখীর বাসা তিলে পলে দেখি
হৃৎপিঞ্জর শূন্য করি আমায় দিল ফাঁকি।
গাখীরে খাইতে দিলাম চিনি দুধ কলা
আর দিলাম রসগোল্লা যৌবনরসে মাখা।
ভাইবে রাধারমণ বলে আশা রইলো বাকী
জিতে না পুরিবে আশা মৈলে নি পুরবো সখী।।
গো (১৫৩)
৬৯৭
কৈ সে হৃদয়মণি গো প্ৰাণসজনী
খিবা আশায় বসি রইলাম দিবস রজনী।।
বিচ্ছেদ বিষম গো দাগছে পরানী
দারুণ বিধি কেনে কিলায়া জনম দুস্কিনি
এ ধন যৌবন দিলাম প্ৰাণবন্ধুয়ার নিছনি
শটের সনে প্ৰেম করিয়া হইলাম ভিখারিনী
ভাইবে রাধারমণ গো বলে সকল বিবাদিনী
এ দেশে না থাকিমু হইব বিদেশিনী।।
সরো / ১
৬৯৮
কোথায় রহিল বন্ধু শ্যাম চিকন কালা
তোমার লাগিয়া আমার হৃদয়েতে জ্বালা।।ধু।।
তবুও অবলা পাইয়া ভাসাইলায় সায়রে রে।
জনম দুক্ষিণী হইয়া মরিয়া ঝুরিয়ে
সব দুক্ষ পাশরিতাম চান্দ মুখ দেখিয়া রে।
কুলের বৈরী কৈলায়রে বন্ধু কৈলায় কলঙ্কিনী
প্ৰেম শিখাইয়া প্ৰাণের বন্ধু বধিলায় পরানি রে।
হৃদয়ে রইলো রে বন্ধু অপার বেদনা
আমি তোমায় ডাকি বন্ধু তুমি ত ডাক শুনো না রে।
দেশ খেশ সব বাদী সব হইল পর
তোর পিছে ঘুরি ঘুরি জনম গেল মোর রে।
ভাইবে রাধারমণ বলে বন্ধু নয় আপনা
নইলে এমন দুক্ষ কেনে সোনাবন্ধে বুঝে না রে।
গো (২৮২)
৬৯৯
চরণে জানাই রে বন্ধু চরণে জানাই হিয়ার মাঝে জ্বলছে অনল
কি দিয়া নিবাই।।ধু।।
অল্প বয়সে লোকে ঘোষে কলঙ্কিনী রাই
তুমি যদি ভিন্ন বাসো আমি কোথায় যাই।
তোমার কুলে সর্বত্যাগী কুলে দিলাম ছাই
আমি দোষী সর্বনাশী কান্দিয়া গোকুলে বেড়াই।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে নাগর কানাই
অভিলাষী দাসী আমি জন্মে জন্মে তোমায় চাই।
গো (১৬০)
৭০০
চল রে সুবল রাই দরশনে।
ব্রজের রাখাল সনে ধেনু চরাও বনে বনে
আপন কটরায় মজে যাও রাই গোচারণে।
যে দুক্ষ দিয়াছ সুবল আয়ন ঘোষের স্থানে
বিন্দাবনে যে যন্ত্রণা শ্ৰীরাধার কারণে।
ভাইবে রাধারমণ বলে চিন্তি মনে মনে
কেমনে বাঁচে প্ৰাণ বন্ধুয়া বিহনে।
গো (২৪৬), হা/১২
‘আপনি কটরায় মজে’ অৰ্থ অস্পষ্ট, অনুলিখনের গোলমাল হতে পারে।
পাঠান্তর : হা /(১২) : চল রে > চল রে প্রাণের; আপনি … মাজে > আপনে কটরায় মেজে; চিন্তি মনে… বিহনে > ভাবে মনে মনে/ বিরহিণী বিনো প্ৰাণ বাঁচে কেমনে।
৭০১
চাতক রইলো মেঘের আশে তেমনি মতো রইলাম গো আমি
শ্যামচন্দের আশে গোসাঁই আমি মনের দুক্ষ কার ঠাঁই কই।।ধু।।
তমাল ডালে বাজাও হে বেণু তিমাল ডালে লাগছে গো
রাধার শ্যামপদ রেণু;
তমাল ডালে আমার গলে একত্রে বাধিয়া থই।
ভাইবে রাধারমণ বলে পড়িয়া রইলাম শ্যামের যুগল চরণতলে
শ্যামের দেখা পাব বলে আশা পথ চাইয়া রই।।
গো (১৫৮)
৭০২
চিত্ত যায় জ্বলিয়া গো
গেল রোধে কি স্বপন দেখাইয়া
আমার প্রাণ রাই রাই বলিয়া
জয়রাধা শ্ৰী রাধা বলে বুক ভেসে যায় নয়ন জলে
আর চিত্তের অনল কে দিল জ্বালাইয়া
ও রাধায় কয় কথা হাসিয়া
ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে
আমার সুন্দর মূর্তি কে নিল হরিয়া।
রা/১৪৬
৭০৩
চির পরাধিনী নারীর গো মনে সুক থাকে না।
আপনার সুকে সুকী জগৎ পরায় সুক বুঝে না
নারীর পরার আশে পরার বশে দুঃখে জীবন যাপনা।
দিবস রজনী ঘরে গুরুর গঞ্জনা।।
নারীর দুল্লব জনম পরার হাতে দুঃখে প্ৰাণ বাঁচে না।
পাইতে শ্যামের যুগল চরণ গোসাই
রাধারমণের বাসনা।।
তী/৩২
৭০৪
জাতি কুল মান হারাইলাম যাহার লাগি
সে নি হবে আমার দুঃখের ভাগী।
রূপে নিল দুই নয়ন বাঁশিয়ে নিল শ্রবণ।
আমি গোকুল নগরে হইলাম দাগী।
যার গন্ধে নাসা আকর্ষণ স্পর্শে জুড়ায় তনুমন
আমি বিরহিণী কাতরে যামিনী জাগি।।
গোসাই রাধারমণ কয় এ জীবন হইল সংশয় সখী
তোরা আমারে…………….. (অসমাপ্ত)
য/৫২
৭০৫
জীবনে বাসনা ছিল কৃষ্ণ সঙ্গে মিলিতে
পাইলাম না দেখাই তার জীবন থাকিতে
বন্ধু ও বন্ধুরে পাইলাম না দেখা তার জীবন থাকিতে
দেখার পিরিতি এতেক জ্বালা মইলে না ফুরায়
যদি তারে পাইতাম বন্ধু আমার জীবন কালে
তবে আমি থাকতাম বসি জীবন সাগর কুলে
ভেইবে রাধারমণ বলে না পাই বসতি
স্বরূপে প্ৰকাশ দাও দেখাও মুরাতি।
সুখ/৫৯
৭০৬
জীবনের সাধ নাই গো সখী জীবনের সাধ নাই
আমার দেহার মাঝে যে যন্ত্রণা করে বা দেখাই।।
আর নিতিনিতি ফুলের মালা আমি জলেতে ভাসাই
আজ আসিব কাল আসব বলে মনেরে বুঝাই।।
একা কুঞ্জে বসে আমি রজনী পোষাই
এমন দরদী নাই গো আমায় ডাকিয়া জিগায়।।
ভাইবে রাধারমণ বলে শুন গো ধনী রাই
অন্তিম কালে যুগল চরণ অধম যেন পাই।।
ন/১৭
৭০৭
তোমরানি দেইখাছ শ্যামের মুখ ওগো শারী শুক
প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে ফাটিয়া যায় বুক।।ধু।।
দারুণ বিধি হইল বাদী বিনা দোষে হইলাম দোষী গো
এগো দারুণ বিধি মোর কপালে লেখছে কত দুখ।
আগে কত ধরি প্রেম শিখাইলো হস্তে ধরি গো
এগো প্ৰেম করিয়া ছাড়িয়া যাওয়া মনে বড় দুখ।
ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে গো
এগো তোমরা যদি দেখাও আমি দেখি শ্যামের মুখ।।
গো আ (১৪৫), (২৬০) তী/২৯ আছ ৭।
পাঠান্তর : তী ২৯ : তোমরানি দেইখাছ শ্যামের মুখ গো সারি শুক/প্রেমানলে দহে অঙ্গ যায় মর বুক গো। কেন বিধি হইল বাদী বিনা দুষে অফরাদি গো। বিনা দুষে অফরাদি এই যে বড় দুখ। প্রথমে পিরিতির কালে কত আশা ছিল মনে গো/কি লেইখাছে দারুণবিধিমর কপালের দুষ। ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে। তুমরা যদি দেখাও আইনে শ্যাম চান্দের মুখ।
আছে /৭-তী–২৯-এর অনুরূপ
৭০৮
তোমার মনে কান্দাইবার বাসনা প্ৰাণনাথ, দুখিনীরে।।ধু।।
প্রথম মিলন কলে, ও বন্ধু গগনের চান্দ হস্তে দিল্লায় রে
এখন কোন দেশতে ছাড়িয়া যাও আমারে রে।
যে যারে বাসনা করে সে কি তারে কান্দাই মারে রে
তুমি গেলায় পরবাসে আমি রইলাম তোমার আশে রে
আমি রইলাম গোকুল নগরে রে।
তুমি বন্ধু সখা যার কিবা দুখ সুখ তার রে
কিবা তার জীবন আর মরণ রে।
বাজাইয়া মোহনবাঁশি মন প্ৰাণ কইলায় উদাসীরে
বাঁশির সুরে ভুলাইলায় রাধারে রে।
তোমার বাঁশির সুরে ভাটিয়াল নদী উজান ধরে রে
বুক ভেসে যায় নয়নের জলে রে।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে ঠেইকাছ পিরিতের জালে
ওরে দাসী বানাই সঙ্গে নেও আমারে।
আহো /২৭, হা (১৬) গো আ (১৫৫), সুধী /২, শ্ৰী ২৫৬
পাঠান্তর : হা— আসি রইলায় > আমি রইলাম; ঠেইকাছি > বাধিয়াছি গো/সুখী :–সখা যার > মনা যায়, ঠেইকাছ> ঠেকিয়াছি শ্ৰী / তোমার মনে > ওরে তোমার মনে।
৭০৯
তোরা বল গো সখীগণ, চিন্তা কিসে হয় বারণ।
চিন্তা রোগের ঔষধ যাইয়ে করা অন্বেষণ।।
শীঘ্ৰ করিয়ে আন গো ঔষধ, নইলে আমার প্রাণ যায়।
রাধারমণ বলে, আমার প্রাণ যাবার কালে।।
কৃষ্ণ নাম লেখিয়া দিও আমার কপালে।
বঞ্চিত করিও না। আমায়, ধরি তব রাঙ্গা পায়।।
য/১৫২
৭১০
দুষী হইলাম প্ৰাণ সই কালিয়ার লাগিয়া
যে জানে পিরিতির বাও ঘুমাইয়া থাকে চাইয়া
কেশ ধরি জাগায় গো বন্ধে শিয়রে বসিয়া
জাগিয়া না পাইলাম তারে চোরা যায় পলাইয়া
আগে যদি জানতাম রে বন্ধু যাইবায় রে ছাড়িয়া
মাথার কেশ দুই ভাগ করিয়া রাখিতাম বান্ধিয়া
ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
কুল গেল, কলঙ্ক রইল জগৎ ভরিয়া।
সুখ /২০
৭১১
দুঃখ সহনো না যায়
যৌবন চলিয়া গেল সখী
প্রিয়া না পাওয়া যায়।।ধু।।
সব নারী প্রিয়া সনে সুখে করে কেলি
মুই নারী প্রিয়া বিনে তাপিত কেবলি
প্রিয়া পন্থ নিরখিয়া তনু হইল ক্ষীণ
বেহুশ হুতাশে যাপি রাত্ৰি কিবা দিন
আজি কালি করিয়া গো দিন গাইয়া যায়
যৌবন থাকিতে সই–না পাইলাম প্রিয়া
ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
জিতে না পাইলাম তোমায় পাই যেন মরিয়া।
গো (২২৭)
৭১২
দুঃখিনীর বন্ধুনি আমার কবে হবে দেখা।
প্রথম যুবতীর যৌবন কেমনে যায় রাখা।।
তুমি হইলায় দেশান্তরী আমি রইলাম একা
মধুমাখা মুখখানি তার নয়ন দুটি বাঁকা
মনে লয় উড়িয়া যাইতাম যদি হইত পাখা
ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া।
কাঙালিরে দিও দেখা দুঃখিনী জানিয়া।।
সুখ/১৪, য/১৫০
পাঠান্তর : য/১৫০—বন্ধনি পুবন্ধু, আমার > আর; প্রথম > প্রথমে; রইলাম > হইলাম। যদি হইত > দিল না মোর ভাইবে > গোসাঁই; কাঙালিরে > দুঃখিনীরে, দুঃখিনী > কাঙালী।
৭১৪
ধরিয়া ধরিয়া নেও আমারে গো প্ৰাণ সখী
চরণ চলে না গৃহে অবশ্য হইলাম নাকি।।
প্ৰাণটি রইল তার কাছে গো শুধু দেওয়া মাত্র বাকি।
এগো মণিহারা ফণির মতো কেমনে গৃহে থাকি।।
জ্বালায় জ্বলিত অঙ্গ গো এগো প্ৰাণসখী।
ওরে এমন বিচ্ছেদের আগুনে আর কত দিন থাকি।।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে গো শুন গো প্ৰাণসখী
এগো হৃদপিঞ্জিরায় পোষা পাখি উড়িয়া গেল নাকি।
আশা/৭
৭১৪
নিদিয়া নিষ্ঠুর রে বন্ধু নাই সে দয়া তোর রে–
শ্যাম, প্রেম-জ্বালা কেনে দাও বারে বার।
ওরে, ধৈৰ্য্যধারা নাই মানে অন্তরে আমার রে।।
আর পুর্বে আইসবে বলেছিলে,
এখন কারা ভাবে তোর মন মজাইলে।
ওয়রে তোমারি কারণে অন্তর
জ্বালিয়া ছার—খার রে।।
আর আগে বন্ধে আশা দিয়া
কত রঙে ঢঙে তার মন মজাইয়া
ও তোর রঙ -যৌবন আর কতই দিন
করিবায় বেহার রে।।
আর ভাইবে রাধারমণ বলে–
মনের মানুষ পাই না এ সংসারে।
ওয়রে, মনের মতন রসিক পাইলে
হাইতাম সঙ্গী তার রে।।
শ্রী/৩৩৭
৭১৫
নিদিয়া পাষাণ বন্ধু রে
বন্ধুরে শুনি প্ৰাণ বন্ধ তুমি নি আমার রে।
তোমার লাগিয়া বন্ধু রে লোকে মন্দ বলে
এবে দারুণ প্ৰাণ তোমার লাগিয়া করে।।
তুমি যদি হও রে আমার সত্য করি কও সারাৎসার
সত্য করি প্ৰাণ সপিলাম তোমারে।।
আমার বন্ধু আছেন তোমার অনুগত রে।
তোমার আছেন শত শত আমার কেবল তুমি।।
ভাইবে রাধারমণ বলে সঙ্গে করি নেও আমারে
সঙ্গে না নেয় যদি প্ৰাণ তেজিমু নিশ্চয় রে।
সুহা/২
৭১৬
নিশিতে স্বপন দেখলাম–চান্দ আসিয়া;
আর স্বপনে দেখিয়া যারো উঠিলাম জাগিয়া–
এগো, জাগিয়া না পাইলাম তারে
আমার নিদ্ৰা গেল ছুটিয়া–
শ্যাম-চান্দ আসিয়া।।
আর ভাবি যারে–হয় না দেখা,
সে বন্ধু, মোর রইল এক গো
এগো, কমলচরণ ইন্দরের মাঝে
ও সই, গোল আনল জ্বালাইয়া—
শ্যাম চান্দ আসিয়া।।
আর ভাইবে রাধারমণ বলে,
শুনো গো সখী–তোমরা সবে :
এগো, ধাকধাকাইয়া জ্বলছে আনল
আমার শ্যামবন্ধুর লাগিয়া–
শ্যাম চান্দ আসিয়া।
শ্রী/১৩২
৭১৭
নিশির স্বপনে শ্যামের রূপ লাগিয়াছে নয়নে
চূড়ার উপর ময়ূর পাখা হেলাইছে পবনে।।ধু।।
আমি থাকি নিদ্রা ঘোরে স্বপ্নে দেখি রসরাজ রে
পুষ্প শয্যা ছিন্ন ভিন্ন চিহ্ন আছে বসনে!
গলেতে মুক্তার মালা কটিতে কিন্ কিন্ শোভা
রুনু ঝুনু শব্দ করে নেপুর চরণে!
ভাইবে রাধারমণ বলে ঐ রূপেতে জগৎ ভুলে
ভুবন আলো করিতেছে। ঐ রূপ মদনমোহন।।
গো (২০৮), ক/৩
পাঠান্তর : ক : চূড়ার … পবনে নয়নে অঞ্জন বাঁকা রূপ লাগিয়াছে স্বপনে; আমি … রসরাজরে ছিল রাধা নিদ্র বেশে এসেছিল রসরাজে; কাটতে …. শোভা > হস্তেতে > কঙ্কনবালা; রুনুকুনু… চরণে> চূড়ার উপর ময়ূর পাখা হেলাইছে পবনে; জগৎ ভুলে > নয়ন ভুলে ভুবন … মদনমোহন > ভুবনমোহন শ্যাম নটাবর লাগিয়াছে স্বপনে
৭১৮
পিরিত করি হিয়ার মাঝে গো, ও বন্ধে জ্বালাইয়া গেছে ধুনী,
শুনিছ কি গো প্ৰাণ সজনী।।ধু।।
পিরিতের এতই জ্বালা আগে ত না জানি,
দাহ দাহ করি জ্বলছে অনল গো ও সখী, নিবাও শ্যামেরে আনি।
সকলের প্ৰেম হইল গো সুরিত আমি কলঙ্কিনী
সকলের দিন সুখে যাবে গো, আমার কান্দিয়া যায় দিবারজনী।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে শ্যাম বিনে বাঁচিনী,
প্ৰাণ থাকিতে আনিয়া দেখাও গো ও আমার হৃদয় রতনমণি গো!
আহো / (২৩), হা (৩৮), গো (২২৫)
৭১৯
পিরিতে আমার চাইলো না সখী কালিয়ার সোনা
পিরিতে আমায় চাইলো না।।ধু।।
সখী গো–কাঠের সনে লোহার পিরিত জলে ভাসে দুইজনা
জলের সনে মীনের পিরিত জল ছাড়া মীন বাঁচে না।
সখী গো —-চণ্ডীদাস রজকিনী তারা প্রেমের শিরোমণি
তারা এক প্রেমেতে দুইজন মরে এমন মরে দুইজনা
সখী গো —ভাইবে রাধারমণ বলে কালার প্ৰেমে চাইল না
তোর সনে মোর সুরীত পিরিত তুই আমারে চিনলে না।
গো (১০৩)
প্ৰাণ যায় যায় গো কালিয়ার বিচ্ছেদ জ্বালায়
ডালে বইসে কালসৰ্পে দংশিল শ্ৰীরাধার গায়।
সখী গো সৰ্পের বিষ ব্যারিতে লামে, প্রেমের বিষে উজান বায়
উঝা বৈদ্যের নাই গো সাধ্য কারিয়া বিষ লামাইতো চায়।
থাকিগো বৈদ্যের উদ্দেশে আমার সর্ব অঙ্গ বিষে ছায়।
তারা শীঘ্ৰ করি আন গো তারে (নাইলে)
শ্ৰীরাধিক মারা গো যায়।
ও সখী গো ভাইবে রাধারমণ বলে বলিগো তোমায়
তোমরা মইরোনাগো প্রেমের জালায়
আইব তোমার শ্যামগো রায়।
সুখ / ১৭
৭২১
প্রাণসজনী আমারে বন্ধুয়ার মনে নাই
ও প্রাণবন্ধুর লাগি কত দুঃখ পাই
যদি বা থাকিত মনে ডাকিত বাঁশির গানে
আমি সঙ্গোপনে নিরাখিয়া চাই
ভেবে রাধারমণ বলে আশায় রইলাম বসে
আমি সারা নিশি কান্দিয়া পোষাই।
শ্যা/৮
৭২২
প্ৰাণের ভাই রে সুবল রে বন্ধু দেও আনিয়া।
বন্ধু দেও আনিয়া রেসুবল বন্ধু দেও আনিয়া।
দয়া নাই রে বন্ধের মনে রাধার লাগিয়া
দিন যায় রে দুঃখে সুখে রাত্রি যায় কান্দিয়া
আইস বন্ধু বইস কোলে দুঃখিনী জানিয়া
সুখ দুঃখ পাহরিতাম ঐ চান্দ মুখ দেখিয়া
ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
শ্ৰীচরণে রাইখ মোরে আদর করিয়া।
য/৭০
৭২৩
প্রেম কর মানুষ চাইয়া গো মইলে যারে মিলে
মইলে যে জিয়াইতো পারে রসিক বলি তারে।
এক প্রেমেতে ভোলানাথে গো শ্মশানে বাস করে
আর প্রেমেতে দশরথ রামরে দিলা বনে।
ভাইবে রাধারমণ বলে সখী মনেতে ভাবিয়া
পিরিত করে ছেড়ে গেলা কি দোষ জানিয়া।
রা/১৫০, শ্রী/১২৪
পাঠান্তর : শ্ৰী / ১২৪–এক প্রেমেতে–জানিয়া > আর এক পিরিতে মহাজনে/শ্মশানে বাস করে/ এগো কোন পিরিতে দশরাত্রে /পুয়ায় বনাচারে গো।। আর চান্দীদাসের রজকিনী / প্ৰেম করিয়াছে ঠারে/ এগো আপনার আতের কালি / লাগিয়াছে কপালে গে। (অসম্পূর্ণ)
৭২৪
প্ৰেম করি মাইলাম গো সই বিচ্ছেদের জ্বালায়
সর্ব ঘটে রাজে কালা বাদী কেবল আমার দায়।।ধু।।
বুঝিতে না পারি তার রীতি নীতি ধারা
প্ৰেমফাঁসি গলায় দিয়া আলগা থাকি মারিলায়।
আমি তো অবলা নারী কত জ্বালা সইতে পারি
প্ৰেম জ্বালায় জ্বলিয়া মারি অন্তর কালো তার দায়।
কত আর জ্বালাইবে মোরে ভস্ম হইলাম জ্বলে পুড়ে
কি লাভ মোরে ভস্ম করে নামেতে কলঙ্ক লাগায়।
সবে জানে দয়াল তুমি কি দোষ করিলাম আমি
তবে কেন সোনা বন্ধু অভাগীরে জ্বালারায়।
চিরজীবী তুমি কালা গলে পরছি তোর প্ৰেমমালা
জ্বালা সইয়া জীবন গেলো। আর কত কাল জ্বালাইবায়।
জীবনে মরণে তুমি পিছ না ছাড়িমু আমি
দেখি তোমায় পাইনি নামী আমি কালিয়া বন্ধু শ্যামরায়।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে জীবন গেল প্ৰেম জ্বালায়
জিতে না পাইছি যদি মইলে পাইমু, শ্যামরায়।
গো (১৮০)
৭২৫
প্ৰেম করিয়া প্ৰাণে আমায় কান্দাইলায় গো বিনোদিনী রাই
কোন কথা আছেনি তোমার মনে।।ধু।।
রাইগো–তোমার কথা মনে হইল বুক ভাসে নয়ন জলে গো
এগো তিলেকমাত্র না দেখিলে বাচি না পরানে গো
রাইগো–ভাইবে রাধারমণ বলে ঠেকাছি বিষম মায়াজালে গো
এগো এ জাল কাটিয়ে আমি যাবো কোনখানে গো।
গো (১০২)
৭২৬
বন্ধু আও আওরে–দরশন দিয়া–
অবলার পরান দেও শীতল করিয়া।।ধু।।
বন্ধুরে–আমি তোমার দাসের দাস
না কর নৈরাশ, অবলোরে দিয়া দেখা–পুরাও মনের আশ
বন্ধদুরে অবলার বন্ধু হয়েরে নির্ধনের ধন
তোমার লাগিয়া আমার ঝুরে দুই নয়ন।
বন্ধু রে–তোমার পিরিতের দায় ছাড়লাম বাপমায়
তন জ্বলে মন জ্বলে জ্বলে সর্ব গায়।
বন্ধুরে–শ্ৰীরাধারমণ বলে ধরে বন্ধের পায়
তোমার লাগিয়া আমার বেড়ি লাগছে পায়।
গো (১৪৪
৭২৭
বন্ধু আমার জীবনের জীবন না দেখিলে প্ৰাণ বন্ধুরে
সদায় উচাট করে মন।।ধু।।
বন্ধু আমার নয়নমণি মনেপ্ৰাণে সদায় জানি
বন্ধর মুখের মধুর বাণী পরকে করে আপন।
বন্ধু আমার হইলে সাথী মালা দিতাম গলে গাথি
জ্বালায় হৃদে প্রেমের বাতি একসাথে কারিতাম শয়ন।
ফুলের মালা পরাইয়া রাখতাম তারে সাজাইয়া–
বন্ধুর লাগি ফাটে হিয়া পাইলাম না বন্ধুর চরণ।
বাউল রাধারমণ বলে আমার মরণের কালে
তোমার যেন দেখা মিলে এই আমার আকিঞ্চন।
গো (১৭৬)
৭২৮
বন্ধু গোলায় মোরে ছাড়িয়া রে নিষ্ঠুর কালিয়া
এ জগতে কলঙ্কী আমি তোমারই লাগিয়া।।ধু।।
আদরে আদরে প্রেম আগে বাড়াইয়া
এখন আমার ভরা যৌবন গোলায় রে ছাড়িয়া।
কঠিন তোর মাই বাপ কঠিন তোর হিয়া
কেমনে রৈছো রে বন্ধু পাষাণে বুক বান্ধিয়া।
ভাইবে রাধারমণ বলে শুন রে মন কালিয়া
শান্ত কর অভাগীর মন দরশন দিয়া রে।।
গো (১৪৭)
৭২৯
বন্ধু, তুইন বড়ো কঠিন
অন্তরে জাইনাছি বন্ধু–আমায় বাসো ভিন্।
হারে পত্র ছাড়া তমালবৃক্ষ রে–
জল ছাড়া তার মীন।
ওয়রে, কিষ্ণ ছাড়া শ্ৰীরাধিকা
বাঁচব কতেক দিন।।
আর মধুছাড়া কমলপুষ্পাপ রে বন্ধু
ভমরায় বাসে ভিন্।
ওয়রে, ছাড়াইলে ছাড়াইতায় পারো–
তোমার অধীন।।
আর তোর পিরিাতের জ্বালা, রে বন্ধু,
সইমু কতেক দিন
ওয়রে, তোমার পিরিতের জ্বালায়
বন-পোড়া হরিণ
আর অভাইবে রাধারমণ বলে, রে বন্ধু,
কলঙ্কে যায় মোর দিন।
ওয়রে, কি দোইবের কারণে বন্ধে–
আমায় বাসইন ভিন্।।
শ্রী/৩৪৮
৭৩০
বন্ধু রে অবলার বন্ধু যাইও নারে থইয়া
ঝাড়ের বাঁশ কাটিয়া রে বন্ধু নদীতে দিলাম বানা
তুই বন্ধুর পিরিতের লাগি মাথুর করলাম মানা।
আগে যদি জানতাম রে বন্ধু যাইবায় রে ছাড়িয়া
দুই চরণ বান্ধিয়া রাখতাম মাথার কেশ দিয়া
গোসাই রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
মনে লয় মরিয়া যাইতাম গলে ছুরি দিয়া
আছ/ ৭
৭৩১
বন্ধুরে পরাণের বন্ধু যাই তোমারে থইয়া
সরম-ভরাম মানকুলমান সব তোমারে দিয়া
মনে লয় মরিয়া যাইতাম গরল বিষ খাইয়া।।
ননদিনী কাল নাগিনী আছে কান পাতিয়া
দেখলে পরে আর ভুইল না। দুঃখিনী জানিয়া।।
ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
রাখিও পালন করি তারে সঙ্গ দিয়া।।
চক্ষের নিমেষে রে বন্ধু গেলায় রে ছাড়িয়া
মনে করলে দেখতে পার হৃদয় খুলিয়া।।
সুখ/১৯
৭৩২
বন্ধের লাগি কান্দে আমার মন কান্দি কান্দি জীবন গেল
পাইলাম না তোমার চরণ।।ধু।।
কত কষ্ট কইলাম আমি চক্ষে চাইয়া দেখলায় তুমি
দয়া মায়া তোমার নাই
আমি ঘুরি পাগলের মতন
তুমি তো বলিয়াছিলে না ছাড়িবে কোন কালে
তবে এত কষ্ট কেন দিলে তোমার দুক্ষে যায় জীবন
তোমার দুক্ষে আমি দুক্ষী তোমার সুখে আমি সুখী
এখন দেখি সব ফাকি ফিরিয়া না চাও এখন
ভাবিয়া রাধারমণ বলে সব খুয়াইলাম ভাব জঞ্জালে
কি গতি মোর পরকালে সদায় ঝুরে দুই নয়ন।
গো (৩২)
৭৩৩
বিদেশী বন্ধু আমারে রাখিও তোমার মনে।।ধু।।
তোমায় ছাড়া রহিব কেমনে।।চি।।
এতদিন ছিলাম রে বন্ধু বড় কৌতূহলে
দিবানিশি কত খেলা খেলছি তোমার সনে।।
যাহা কিছু ছিল বন্ধু আমার বলিতে
সকলি দিয়াছি বন্ধু তোমার শ্রীচরণে।।
আমার মাথা খাও রে বন্ধু না ভুলো দাসীরে
পদে কিন্তু রেখে থাক যখন যেখানে।
তোমার বিরহ জ্বালারে বন্ধু ছাই করিল মোরে
রাধারমণ বলে জল ছাড়া মীন বাঁচিব কেমনে।
ক.ম./৪
৭৩৪
বিনদ কালিয়া বন্ধুরে বিনদ কালিয়া
কেমনে থাকিব ঘরে তোমায় না হেরিয়া
শ্যামসুন্দর তনু প্ৰেম সুতা দিয়া
বিরহ তাপিনী বন্ধুরে বন্ধু যাবে ত্যেগিয়া
আবার মনে হলে রাধারমণ উঠে চমকিয়া
ও মন বলে কালাচান্দেরে হৃদয় লইয়া
মন দুঃখে থাকে রাই কান্দিয়া কান্দিয়া।
সুখ/১৫
৭৩৫
বিশাখে শ্যামসুখেতে আমার মরণ
আমার মরণ জ্বালা হয়না নিবারণ।
আমার মরণকালে থাইকো আমার কাছে গো
আমার কৰ্ণমূলে শুনাও কৃষ্ণনাম।
আমি মইলে ঐ করিও না পুড়াইও না ভাসাইও
আমারে বাইন্দা রাইখ ঐ তামালের ডালে
তমাল ডালে বান্দিয়া রাইখ কৰ্ণে শ্রীকৃষ্ণনাম শুনাইও
আমার বক্ষস্থলে লেখিও কৃষ্ণনাম
ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গা জ্বলে
আমার প্রাণ যায় কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলে।
সুহা/৭
৭৩৬
বুক চিরে দুদক্ষ কারে বা দেখাব কোথায় যাবো
বুক চিরে দুক্ষ কারে বা দেখাব।।ধু।।
দুক্ষ অন্তরে গাথা বন্ধু বিনে বলবো কোথা
আমার প্রেমের আগুন কি দিয়া নিবাবে।
বন্ধু রইল দূরদেশে তুমি রইলাম আসার আশে
আমার আশা কবে মিটিবো।
আসবে বলে প্ৰাণের কালা বিনা সুতে গাথি মালা
মালা বাসি হইলে কার গলে পরাবো?
সখী মথুরায় গিয়া এ সংবাদ আসো জানিয়া–
আমার মরণকালে চরণ নি পাইবো?
না দেখিয়া যাই মরিয়া তমাল ডালে বান্ধো নিয়া
রাধারমণ মরিয়া গেছে বন্ধুরে বলিব।
গো (১০৬)
৭৩৭
ভোমর কইও গিয়া
শ্ৰীকৃষ্ণ বিচ্ছেদে রাধার অঙ্গ যায় জ্বলিয়া।
ও ভোমর রে কইও কইও আরো ভোমর কৃষ্ণরে বুঝাইয়া।
ওরে ভোমর রে না খায় অন্ন না খায় জল নাহি বান্দে কেশ
ঘর থাকি বাইর হইলা যেমন পাগলিনীর বেশ।।
ও ভোমরা রে উজান বাঁকে থাকোরে ভোমর
ভাইটাল গাঙে থানা
চোখের দেখা মুখের হাসি কে কইরাছে মানা।
ও ভোমর রে ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
নিভিয়া ছিল মনেরই অনল কে দিল জ্বালাইয়া।
হী/৩
৭৩৮
মইলাম বন্ধু তোর পিরিতের দায় পিরিতে কলঙ্ক রইলো
পিরিতে না ভুলা যায়।।ধূয়া।।
মনে যারে লাগে ভালো সে কিবা সাদাকালো
চউখে আন্ধি লাগিয়া গেলো কলঙ্ক রাখিল মাথায়।
প্রেমের প্রেমিক হইয়া তোর পানে রইলাম চাইয়া
একে তুমি দিছো কইয়া প্রেমিক আইলে একদিন পাইবায়।
পিরিতের শেল যার বুকে দিনরজনী যায় তার দুকে
তোমারে পাইলে বুকে আনন্দে থাকিতাম সদায়।
সদায় থাকিতাম সুখে ভাল ভাল বলতে লোকে।
সুখী হইতাম দুই লোকে খ্যাতি রইতো দুনিয়ায়।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে কুপ্রেমে দিন যায় চলে
সুপিরিত কোথায় মিলে ভাবতে ভাবতে জীবন যায়।।
গো (১২০)
৭৩৯
মনচুরা বন্ধুরে আজ কুনু মতে পাইনা দেখা
প্ৰাণ ললিতে ধৈরজ না মানে চিত্তে প্ৰাণনাথের বিরহেতে
যে জ্বালা দিয়েছ মোরে আমি রেখেছি সব জমা করে
বিরহিণীর খাজতে
আমার জমা খরচ মিলন করে বাকি বুঝি রইল শেষেতে
আদালতে আশ্রয় নিব এক তরফা ডিগ্রি পাব
বাহির করব গিরিপতারি ত্বরিতে
যেখানে তার সন্ধান পাব এনে রাখব হৃদয় জেলেতে
রাখিব প্ৰেম কারাগারে বান্দিব অনুরাগের ডুরে
দুইটি নয়ন প্রহরী তার সঙ্গেতে
রাধারমণ বলে সঙ্কেতে শ্যাম বান্ধা রাধার প্রেমের ডুরেতে।
য/৮২
৭৪০
মনদুখে মাইলাম গো সখী কী হবে, আর জানি না।
এগো গোকুল নগরের মাঝে গো সখী কলঙ্ক হৈল রটনা।।
যার কুলেতে কুল মজাইলাম তার কুল আমি পাইলাম না
পিপাসায় চাতকী মাইল গো সখী জল পিপাসা গেল না
মন পারণ বলে আশা দিয়ে গো প্ৰাণনাথ আর আইল না।
মন প্ৰাণ দিলাম গো যারে সে করে গো ছলনা।
আসব বলে আশা দিয়ে গো প্ৰাণনাথ আর আইল না।।
ত্বরাই সখী দেখাও দেখি শ্যাম বিনে প্ৰাণ বাঁচে না
শ্ৰী রাধারমণে বলইন গো সখী প্ৰেম জ্বালায় প্ৰাণ বাঁচে না।
তী/২০, হা (১৯), গো (২০২)
৭৪১
মনাগুনে দগ্ধ হইয়া আমি মারি রে সুবল সখা,
ব্ৰজেশ্বরী রাধা। ধুয়া।।
সুবলরে আমি মইলে ঐ করিও রাখিও রে তামালে,
জলের ছলে আসবা পেয়ারী আমাকে দেখিতে।
আমি মইলে ঐ করিও না পুড়াইও না ভাসাইও জলে
আমারে লটকাইয়া থইও তামালের ডালে।
ভাই বলি তোমারে রে সুবল দাদা বলি তোরে,
ব্ৰজেশ্বরী রাই কিশোরী আনিয়া দেও আমারে।
হাত দিয়া দেখরে সুবল আমার শরীরে
দাহ দাহ করি জ্বলছে অনল ঐ দোহার মাঝারে।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে আমার না পুরিল আশা,
বিধিয়ে যদি দয়া করে পুরব মনের আশা।
আহো ১৮, হা (২৬), গো (২৯৬), সুধী/৩
৭৪২
মনের দুঃখ রইল মনে, আমার এ দেশে দরদি নাই,
সই গো বন্ধুরে যদি পাই।।ধু।।
সই গো সই তোমার পিরিাতের জন্য পুড়ে হইলাম ভস্ম ছাঁই,
আন ত কাটারী ছুরি বুক চিরি তোমারে দেখাই।
সই গো সই জন্মিয়া কেন না মরিলাম, বেঁচে আর সাধ নাই,
ক্ষুধা তৃষ্ণা নাই মনেতে চক্ষে আর নিদ্ৰা নাই।
সইগো সই তোমার পিরিতের জন্য ছাড়িলাম বাপ মাই
আমি ডাকি প্রাণবন্ধুরে বন্ধের বুঝি দয়া নাই?
ভাবিয়া রাধারমণ বলে ও দেশে দরদি নাই;
অন্তিমকালে দয়াল গুরু চরণতলে দিও ঠাঁই।
আ (১২), গো (১০৪), হা (৩৭) শ্ৰী,/ ১৯৬৩, সুধী/৮
৭৪৩
মনের দুঃখ রইল মনে ওরে সুবল ভাই।।ধু।।
আমি যার জন্য কলঙ্কী হইলাম সুবল
তারে গেলে কোথায় পাই।। চি।।
আমি চৌদিকে অন্ধকার দেখি রে সুবল
যে দিকে নয়ন ফিরাই
সুবল রে রাধা ছাড়া বৃন্দাবনে ব্রজের শোভা নাই।।১।।
সুবলরে গিয়া যদি রাধার লাগাল পাই
(আমার) অন্তরের দুঃখ রে সুবল বলব প্ৰাণের রাধার ঠাঁই।।২।।
সুবল রে ভাইবে রাধারমণ বলে আমার কেহ নাই
আমার জিতে না পুরিল আশা মইলে যেন চরণ পাই।।।৩।।
কি/১০
৭৪৪
মিছা কেন ডাক রে কোকিল মিছা কোন ডাক।
এগো ভাঙ্গিয়াছ রাধার বিছানা তোমরা সুখে থাক।
আমডালে থাকা রে কোকিল নিম ডালে বাসা
এগো শূন্যে উড়, শূন্যে পড়, তোমার কি তামাশা।
অঙ্গ কালা বস্ত্ৰ কালা, শিরে জটাজুটা
এগো তেকেনে করিলাম পিরিতি রাধা জিতে মরা।
স্থির করো মন গো রাধে শান্ত কর মন
এগো কাগজে আঁকিয়া কৃষ্ণ দেখাইমু এখন।।
ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া।
এগো আমি রাধা মরিয়া যাইমু কৃষ্ণহারা হইয়া।
হা (১), গো (১৯৬)
পাঠান্তর : গো-বিছানা> ঘর, জটাজুটা > কালা জটা এগো — এখন > কালার সনে পিরিত করি ভবে রইল খুটা ভাইবে … হইয়া > শ্ৰীরাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া/ কলঙ্কিনী মারি যাইমু, কৃষ্ণহারা হইয়া।
৭৪৫
যাই যাই বলিও না রে প্রাণনাথ বন্ধুয়া, যাই যাই বলিও না।
যাবার কথা শুনিলে, অবুঝ প্ৰাণে ধৈরজ মানে না রে প্রাণনাথ।
পুরুষ কঠিন হিয়া নারীর বেদন ত জানে না।
নারী হইলে জানিতে পার বিচ্ছেদের যন্ত্রণা।।
দয়াময় নামটিরে বন্ধু জগতে ঘোষণা।
কাতরে কয় রাধারমণ, নামে কলঙ্ক রাখিও না।।
য/১৬৪, নৃ/১২
পাঠান্তর : নৃ/১২ : দয়াময় … ঘোষণা > ছাই দিয়াছি কুলে রে মানিক এ ছার গৃহে রব না; কাতরে কয় > ও ব্ৰহ্মানন্দ কয়।।
৭৪৬
যে সুখে রাখিয়াছ প্ৰাণনাথে গো –
সে দুঃখ আর বলব কি? ধু।।
যারে কইলাম যৌবন দান তার কিসের কুল মান
দেখি তারে পাই কি না পাই গো।
কান্দি আমি দিবানিশি, এই মনে অভিলাষী,
দেখি তারে পাই কি না পাই গো
আমি যারে ভালবাসি সে তা জ্বালায় দিবানিশি;
বুঝি তার পাষাণের হিয়া গো
মনের দুঃখে রমণ বলে এই শেল রহিল দিলে,
এই শেল খসিব রমণ মইলে গো।।
আ ১৭, হা (২৬), শ্ৰী/১৩৭
৭৪৭
রাই বিনে প্রাণ যায় না রাখা
যা রে সুবল আইনে দেখা।
সুবল রে বসিয়া তরুতলে রৌদ্র যায় ব্ৰজপুরোতে
পত্ৰ দিও রাধিকার ঠাঁই।
বল রে তোমার জন্য মারা হইয়াছে ত্রিভঙ্গ বাঁকা।।
সুবলরে রাধার কথা মনে হইলে বুক ভেসে যায় নয়ন জলে
আমি মরতে গেলে যাই না মারা রাই প্রেমে প্ৰাণ আছে গাথা।
সুবল রে ভাইবে রাধারমণ বলে
বস সখা তরুতলে পাবে দেখা প্রেমময়ী রাধা
আমি অধম জেনে অন্তিমেতে দিও আমায় যুগল রেখা।।
হা (১৪)
৭৪৮
রাধানি আছইন কুশলে কও রে সুবল সারাসার
রাধা বিনে কে আছে আমার।
সুবলরে রাধা তন্ত্র রাধা মন্ত্র রাধা গলার হার
রাধার জন্য আমি থাকি দিবানিশি অনাহার
সুবলরে রাধা আমার প্রেমের শুরু আমি শিষ্য
তার রাধা প্রেমের প্ৰেমঋণ আমি কি দিয়ে শুধিতাম ধার।
সুবল রে ভাইবে রাধারমণ বলে এইবার
মনুষ্য দুর্লভ জন্ম হইবে নি রে আর।
সুহা/১৪
৭৪৯
রাধার উকিল হইও কুইল রাধার উকিল হইও।
এগো শ্যাম বিচ্ছেদে জ্বাইলাছে অনল শ্যামোরে পাইলে কইও।
যেথায় গেছেন শ্যামরায় তথায় চাইলে যাইও
অভাগিনী রাই কিশোরীর সংবাদ জানাইও।
বৃন্দাবনে গিয়া কুইল মুক্ত প্ৰণাম করিও
ওরে তমাল ডালে বইসে কুইলস্রাধার গুণ গাইও।
ভাইবে রাধারমণ বলে ভাবিও না রই মনে
কুইলে নি আইনতো পারে রাধার প্রাণবন্ধুরে।।
য/৯৭
৭৫০
রাধার জীবনান্তকালে ললিতে গো কর্ণে শুনাও কৃষ্ণনাম
জাহ্নবীর তীরে নিয়ে গঙ্গাজল মৃত্তিকা দিয়ে
রাধার অঙ্গেতে লিখিও কৃষ্ণ নাম।
শতদল তুলসী দিয়ে মালা গাইথা গলে দিও
রাধার সিঁথিমূলে লিখিও কৃষ্ণনাম।
রাই, রাধারমণ বলে, দেহ থইয়া প্ৰাণী চলে
আমার কৃষ্ণ আইনে পুরাও মনের কাম।
সুখ/ ৪৭
৭৫১
রাধার দুঃখ বুঝি রহিল অন্তরে গো জীবনভরা
ভালো মন্দ তার সম্বন্ধে জীবন করলাম সারা।।
শ্যাম জানি কার কুঞ্জে রইল কার আশা সে পুরাইল গো
তোমরা সবে পাইলায় কৃষ্ণ আমি কৃষ্ণহারা।।
ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে
থাকতে না পুরিল আশা মরলে যেন পুরে গো
রা/১৩৭
৭৫২
রাধার দুঃখে জনম গেল গো
কাজ কি জীবনে আমার।।
পরকে আপনা জানি সারা করিলাম ব্রজের হরি
মনে করি দিয়াছি সাতার।
কণ্ঠাগত হইল প্ৰাণি জীবনের আর কতই বাকি
মইলে আশা পুরব নি আমার।।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে
উপযুক্ত না হইলাম সেবার।
শ্ৰীশ/৪
৭৫৩
রে ভমর, কইয়ো গিয়া–
শ্ৰীকৃষ্ণ-বিচ্ছেদে আমার অঙ্গ যায় জ্বলিয়া।।
ভমর রে, কইয়ো কইয়ো, হায় রে ভমর,
প্ৰাণ বন্ধের লাগ পাইলে–
আমি রাধা মইরে যাব কৃষ্ণহারা হইয়া।।
ভমর রে, সারা নিশি পোসাইলাম
ফুলের শয্যা লইয়া–
সেই শয্যা হইল বাসি,–দেও জলে ভাসাইয়া।।
ভমর রে, না খায় অন্ন, না খায়৷ জল,
নাহি বান্ধে কেশ,
তোমার পিরিতের লাগি রাধার পাগিলিনীর বেশ।
ভমর রে, ভাইবে রাধারমণ বলে
কান্দিয়া কান্দিয়া
নিবি ছিল মনেরি আগুইন—-আগুইন কে দিলা জ্বালাইয়া।
শ্রী/১১৯
৭৫৪
ললিতে বিনয় করি বলিগো শ্যাম নাম আর লইও না।
সে বড় কঠিন অতি নিদারুণ নারীবধের ভয় রাখে না।
যেমন কুমারের ফণী ভিতরের অগ্নি বাইরে কেউ দেখে না
হৃদয় চিরিয়া দেখা গো সজনী জল দিলে তবু নিবে না
গোকুল নগরে কেবা না পিরিত করে কার পিরিতে
এতই লাঞ্ছনা
সুজনের পিরিতি বাড়ে নিতিনিতি যেমন সোয়াগেতে
মিশে সোনা
শ্ৰীরাধারমণের বাণী শুন গো সজনী শ্যাম পিরিতে
আমারে চাইল না।।
সুখ/২
৭৫৫
শুন গো প্ৰাণসজনী কিঞ্চিৎ দুঃখ কাহিনী
পিরিত বড় বিষম জ্বালা।
সরল পিরিত মোর গরল হইল সই–
বুঝি মোরে বিধি বিড়ম্বিলা।।
সুখের ভরসা কৈরে ডুব দিনু প্রেমসাগরে
কর্ম ফলে সাগর শুষিলা।
জল ছাড়া মীনের মত হিয়া জ্বলে অবিরত
সোনার বরণ হৈল কালা।।
সাধের পিরতি মোর দিবানিশি চিন্তাজ্বর
দিনে দিনে হইল দুর্বলা
শ্ৰীরাধারমণ বাণী, শুন রাধা বিনোদিনী
ধৈর্য ধর না করে উতলা।
য/ ১১৩
৭৫৬
শুনগো ললিতে প্ৰাণনাথ কোথা
সুখের যামিনী যায়
বিশাখা আনিতে গেল প্ৰাণনাথে
কেননা আনিল তায়।।
নিশিগত প্ৰায় ডাকে কোকিলায়
শুনে কি শুননা তায়
আসিবে বলিয়ে গেল গো চলিয়ে”
পিপাসে পরান যায়।।
আগে না জানিয়ে পাছে না জানিয়ে
পিরিতি দিয়েছি দায়
কালার পিরিতি নিল কুল জাতি
গৃহে থাকা হল দায়।।
অন্তরে প্রবেশি করেছে উদাসী
বাঁচি কিনা বাঁচি তায়
টানিলে দ্বিগুণ করে গো বেদন
ছিঁড়িলে ছিঁড়া না যায়।।
করা গো মন্ত্রণা না সহে যন্ত্রণা
জীবনসংশয় প্ৰায়
প্ৰাণনাথ বিনে জীব কি পরাণে
শ্ৰী রাধারমণে গায়।
য/১১৪
৭৫৭
শুন গো ললিতা সখী মরণ কালে ওই করিও
আমার নিকটে বসিয়া তারা গো কর্ণে কৃষ্ণনাম শুনাইও।
প্ৰাণি কণ্ঠাগত হইলে কৃষ্ণনাম শুনাইও কৰ্ণমূলে
কখনো দেহা জলে না ভাসাইও।।
আমায় তুলসীর নিকটে নিয়ো গো তোমরা সকলে
কৃষ্ণনামের ধ্বনি করিও।।
প্ৰাণি বাহির হইয়া গেলে কৃষ্ণনাম লিখিও বক্ষস্থলে
পদরেণু অঙ্গেতে মাখাইও।।
আমায় অনলেতে না পুড়িও গো তোমরা সকলে
শ্যামবিলাসের দেহ।।
যখন আসব গুণমণি তোমরা ইঙ্গিতে বলিও বাণী
প্ৰাণনাথকে দুঃখ দিবায় চাইও।।
রাধারমণের প্রাণ গত হইলে গো
অতিক্রমে সহায় লইও।।
সুহা/৪
৭৫৮
শোনগো সখী ললিতে আমার কৃষ্ণ প্রেমের লাঞ্ছনা
বন্ধে আমার দুক্ষ বুঝলো না।।ধু।।
আমি যারে ভালবাসি ভিন্ন বাসে সেই জনা
বুঝি আমার কর্মদোষে বন্ধের দয়া হইল না
কাঠের সনে লোয়ার পিরিত জল ছাড়া মাছ বাঁচে না।
মায়ার পিরিত নয় লো হুরিত মাইয়া যে জনা
মাইয়া আইলে বুঝতে পারে পুরুষেরই বেদনা।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে জানিয়া তোমরা জান না
পিরিতি পিঞ্জিরার পাখী ছুটলে ধরা দিব না।।
গো (১১৪)
৭৫৯
শ্যামকালিয়া আইনে দেখা, বন্ধু বিনে প্ৰাণ যায় না রাখা।
শুধু মুখের কথায় প্ৰেম করিলাম নয়নে না হল দেখা।।
সখী গো গিয়াছিলাম। জল আনিতে
বন্ধের দেখা পাব বলে একদিন মাত্র হয়েছিল দেখা।
ঘাটে কেউ ছিল না কেউ ছিল না সে ছিল আর আমি একা।।
সখী গো, বন্ধু যেদিন ছিল ব্ৰজে আমি সাজি কত সাজে।
(এখন) কুঞ্জে বসে থাকি একা।।
ভাইবে রাধারমণ বলে উড়িয়া যাইতাম বিধি যদি দিত পাখা।।
হী/৫, হা (২৩), গো (১৯৯)
পাঠান্তর : ভাইবে … পাখি > ভাইবে রাধারমণ বলে ব্ৰজে আমি যাইতাম চলে দারুণ বিধি যদি দিত পাখা।
৭৬০
শ্যামকালিয়া সুনাবন্ধু রে তুমি আমার আদরের ধন।
তুমি আমার আমি তোমার জানে সর্বজন।।
কত কোটি আরাধনায় যে বন্ধু পাইয়াছি তোমারে
এস আমার হৃদমাকারে কর প্ৰেম জ্বালা নিবারণ।
তুমি যদি ছাড় বন্ধুরে আমি না ছাড়িব
তোমার চরণ ধরি ত্যেজিব পরান।।
ভেবে রাধারমণ বলে রে শান্ত কর মন
তোমারে লইয়া কোলে হয় যেন মরণ।।
নমি/১৫, গো (২৭৫)
পাঠান্তর গো : তুমি আমার > বন্ধু; কত কোটি >বহু তোমারে > এখন; এস … হৃদমাঝারে-> ওরে আইস আমার হৃদ মন্দিরে, তুমি যদি… পরান > × × শান্ত কর মন > বন্ধু পাইয়াছি এখন।
৭৬১
শ্যামচান্দ কলঙ্কের হাটে কেউ যাইও না সই
পিরিত সুখ মিলে না সেথা সুখ নাই কলঙ্ক বই।।ধু।।
তোরে দেখি শ্যামচান্দ যাইবগি রে থই
চলি গেলে শ্যামচান্দ পিরিত রইব কই।।
প্ৰেমবাজারে ছয়জনা আপনা নয় পর বই
তুই যে যাইবে প্রেমের টানে ছয়জন যাইব উল্টা লই।।
প্ৰেমবাজারে যাইও না রে শ্যামনামের কিরা থাই
শ্যামের নাম লই না মুখে নিদ্রা যাই শ্যাম লই।।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে ঘুমাই শ্যাম কোলে লই।।
জাগিয়া না পাই তারে শ্যাম কই আর আমি কই।।
গো (২০৩)
৭৬২
শ্যাম দে আনিয়া বৃন্দে গো শ্যাম আনিয়া বৃন্দে
মনপ্ৰাণ আঁখি ঝুরে তাঁহার লাগিয়া
মাইয়া জাতি অল্পমতি ভুলায় শ্যামের বাঁশি দিয়া
সারা রাতি শয্যা পাতি কান্দি বন্ধের লাগিয়া
চিন্তার বাজার বসাইয়াছি কলিজা চিরিয়া
গোসাই রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
আজি আইসব কাইল আইসব করি
গেল ফাঁকি দিয়া।
য/১১৯
৭৬৩
শ্যাম বিচ্ছেদে অঙ্গ আমার জ্বলে গো ললিতে।
আমি কি করি কোথায় যাব শান্তি নাই মনেতে।
সরলাসুন্দরী জেনে মোহন মুরারীর গানে গো
আমি প্ৰাণ তার চরণে মজিলাম প্রেমেতে।
কুল গেল মান গেল। কৃষ্ণপ্রেমে এই করিল গো
শ্যাম কলঙ্কী নামটি আমার জগতে।।
ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে গো
আমায় আইনে দেখাও প্ৰাণবন্ধুরে
মরিব এখানে গো ও ললিতে।।
সুহা/৫
৭৬৪
শ্যাম বিচ্ছেদে প্ৰাণ বাঁচে না মইলো গো রাই কাঞ্চা সোনা।।ধু।।
আমি রাইয়ের বৃন্দাদূতী তোমায় নিতে আইয়াছি
যাবে কিনা যাবে বলো না
রাধার দেইখে আইলাম দশম দশা দেহেতে প্ৰাণ আছে কিনা।
নন্দরানী কেন্দে অন্ধ সুরাইয়ে প্ৰাণ গোবিন্দ –
নন্দ রাজা নয়ন মেলে না
ব্রজের গাভীগুলি তৃণ খায় না ফুলেতে ভ্রমর বসে না।
মথুরাতে হইয়ে রাজা কুজার সনে ভালবাসা
রাধার কথা কিছুই মনে নাই
রাধারমণ বলে বৃন্দাবনের কিছুই তো স্মরণ হয় না।
ক/২১, গো (১৬৭)
৭৬৫
শ্যামের পীরিতে সুখ হইল না হৃদয় জ্বলি অঙ্গার হইল
তবু তার মন পাইলাম না।।ধু।।
দিয়া আশা দিল দাগা প্ৰতিজ্ঞা তার ঠিক রইলো না
আশা দিয়া নিরাশ কইলো বাড়াইল যন্ত্রণা।
কত আর সহিব দুখ দুক্ষে ফাটে মোর বুক
আগে যদি জানিতাম জীবন যৌবন দিতাম না।
দুক্ষে দুক্ষে জনম গেলো শ্যাম বন্ধু না আসিলো
জীবন থাকিতে বুঝি তারে পাবো না।
কিবা দোষে হইলাম দোষী কি ভাবেতে তারে তুষি
গুরু আমার কল্পতরু শিক্ষা দেও না
ভাইবে রাধারমণ বলে দুক্ষের জ্বালায় পরান জ্বলে
সইতে নারি দুক্ষী আমি দুক্ষের যন্ত্রণা।
গো (১৮২)
৭৬৬
সই গো আমি রইলাম কার আশায়
পাষাণে বান্ধিছে হিয়া দারুণ কালায়।
আসিব আসব আসব বলে সরল কথা কইয়া যায়
সারা নিশি জাগি রইলাম আইল না। শ্যামরায়।
মলুয়া পবন বয় ডাকে পিক রায়
কুহু কুহু পিক রবে আগুন জ্বলে কলিজায়।
ভাইবে রাধারমণ বলে নিশিগত প্ৰায়
কি দোষে কুঞ্জে আইল না নিদয়া শ্যামরায়।
গো (১৯৯), হা (৩১), তী/৩১
পাঠান্তর : হা/: বলে … যায় > বলিয়া নিশি গইয়া যায়; সারা… শ্যামরায় >সুখের নিশি গত হইল বন্ধু রইল কোথায়। ডাকে পিক রায় > ডাকে বায়সায়; কুহু…কলিজায়> কুহু কুহু কুহুরবে ডাকে কোকিলায়; কি দোষে… শ্যামরায় > কি > দোষে প্রাণবন্ধুর দয়া হইল না আমায়।
৭৬৭
সখী উপায় কি করি প্ৰেম বিরহে অঙ্গ জ্বলে আর কতো বা ধৈর্য ধরি।।ধু।।
হাসিমুখে প্রেমসুধা খাইলাম গেলাস ভরি
না জানিতাম এত জ্বালা সুধার মাঝে আছে করি।
সুধায় যে গরলের কার্য আগে কেমনে আন্দাজ করি
হাসিমুখে খাইয়া এখন যন্ত্রণা হইয়াছে ভারী।
কি হইয়াছে ওগো বধু জিগায় ননদ শাশুড়ী
কি কই, আর কই না কেমনে যন্ত্রণা অসহ্য ভারী।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে না বাঁচি না মারি–
সুখের লাগি দুখ বাড়াইলাম এখন উপায় কি করি?
গো (১৭১)
৭৬৮
সখী কি করি উপায় যার লাগি বৈরাগী হইলাম
তারে পাই কোথায়? ধু।
মাইবাপ ছাড়িলাম ছাড়লাম সোদর ভাই
তবু না তারে পাই।
তার কারণে জীবন যৌবন সকল খুয়াই
সর্ব অঙ্গে লইছি। দাগ কলঙ্কে লাগাই।
কলঙ্কিনী হইয়া আমি নগরে বেড়াই
প্রেমের অনলে পুড়ি যৌবন হইল ছাই।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে বল গো ধনি রাই
সোনাচান্দ প্ৰাণবন্ধু কোথায় গেলে পাই।
গো (১৮৫)
৭৬৯
সখী করি কি উপায় শ্ৰীনন্দের নন্দন কানু রহিল কোথায়।।ধু।।
আমায় ত্যেজিয়া বন্ধু রহিল কোথায়
চরণ ধরি বিনয় করি আনি দেওগো তায়।
ঘরে বাত্তি সারা রাত্তি কান্দি কান্দি যায়
এত কান্দার রোল শগুনি না। আইলো শ্যামরায়।
পিরিত করি কলঙ্কিনী হইলাম আমি দুনিয়ায়।
কলঙ্কের লাগিল দাগ ধুইয়া না ছাড়ানো যায়।
ভাইবে রাধারমণ বলে কান্দি কান্দি জনম যায়
তবুও কঠিন বন্ধে একবার না ফিরিয়া চায়।
গো (২৩৯)
৭৭০
সখী বল কি উপায় প্ৰাণ প্রিয়ে বিনে হিয়া ধরনে না যায়।।ধু।।
কামশেল হানিয়া বুকে লুকি দিয়া যায়
ব্ৰজাঙ্গনা সব সখী কন্দে উভরায়।
নিষ্ঠুর হইয়া প্রিয়—দূরদেশে যায়–
ব্ৰজপুরের সব সখী করে হায় হায়।
হায় হায় করিয়া তারা পিছে পিছে যায়
বড়ই কঠিন শ্যাম ফিরিয়া না চায়।
ভাইবে রাধা রমণ বলে পাইবা শ্যামরায়
ভক্তি দিয়া পড়ো গিয়া শ্ৰীগুরুর রাঙ্গা পায়।
গো (২২৬)
৭৭১
সজনি আমি পাই না ধৈর্য ধরিতে–
শ্যাম পিরিতে করিয়াছে উদাসিনী।
হয়রে বন —পোড়া হরিণীর মতন
জ্বালায়ে জ্বলিয়া মরি।।
সখী, তোরা কইরে গো মন্ত্রণা
শ্যাম-বিচ্ছেদে প্ৰাণ বাঁচে না, সহে না।
সাধ কইরে মনপ্ৰাণ সঁপিলাম–
হইয়াছিলাম কলঙ্কিনী।
ভাইবে রাধারমণ বলে,
প্ৰেম কথাটি রইল গোপনে জগতে
ওয়রে, মরণ জীওন সমান–
কৃষ্ণ প্রেমের কাঙালিনী।
শ্ৰী ৩৩৪
৭৭২
সজনী গো, আমারে বন্ধুর মনে নাই
আমি সারা নিশি কান্দিয়া পোষাই।।
বন্ধুর লাগিয়া যতই গো করলাম
মনপ্ৰাণ কুলমান সবই গো দিলাম
আমার এ জীবনের আর ত লক্ষ্য নাই।।
ভাইবে রাধারমণ গো বল
শ্যাম কমলিনী নামটি রহিল জগতে
হায় আমার কলকী নাম কি দিয়া মুছাই।।
ন/১৯, গো (২২০)
৭৭৩
সজনি প্ৰাণবন্ধুরে কইও বুঝাইয়া
আমি মাইলে ক্ষতি নাই কলঙ্কিনী হইয়া।
মরণকালে প্ৰাণবন্ধুরে দেখাইও আনিয়া
হাতে ধরলাম পায়ে ধরলাম প্ৰাণ দিলাম সপিয়া।
তবু তার মন পাইলাম না সদায় জ্বলে হিয়া
গোসাই রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
এগো ক্ষুধা তৃষ্ণা না লয় মনে প্ৰাণবন্ধের লাগিয়া।।
য/১২৮
৭৭৪
সজনি সই বল গো তোরা কই গেলে কোথায় পাই
প্ৰাণ বন্ধু মনোচোরা।।ধু।।
না জানি সে লোকটি কেমন কেমন তার স্বভাব ধারা
প্রেম শিখাইয়া কুলবধূঘর হইতে বাহির করা।
বাঁশিটি বাজাইয়া বন্ধে করি পাগল পারা
মজাইয়া কুলবধূ সরিয়া যাওয়া কেমন ধারা।
নিয়ায় বিচারে অইবা দোষী কুল না জানি কেমন ধারা
আঙ্খিাঠারে ভুলইয়া ঘরের বন্ধু বাইরে আনা।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে উপায় গো সই কি করা
কই গেলে বন্ধুরে পাই অসহ্য নন্দের লারাঝারা।
গো (২৩১)
৭৭৫
সহিতে পারি না বিরহের যাতনা
আইল না শ্যাম গুণমণি
বুঝি পাইয়া তারে রাখিয়াছে কোন রমণী।
আসবে বলে রসরাজ নিকুঞ্জ করিয়া দি সাজ
বড় লাজ পাইলাম প্ৰাণ সজনী।।
বাসি হইল শয্যাফুল ভ্রমরায় করে রোল
আমি কৰ্ণে শুনি কোকিলার ধ্বনি।।
তোমরা সব সখীগণ শীঘ্ৰ জ্বাল হুতাশন
বিসর্জন দিব গো পরানী।।
কৃষ্ণছাড়া বৃন্দাবন অবলা বঁচিবে কেমন
আমায় বৃন্দাবনে বলবে সবে কলঙ্কিনী।।
জিতে কি বাসনা আর মরণ করিয়াছি সার
নিয়ে তার পিরিতের নিছনি।
ভাইবে রাধারমণ বলে শ্যামবিচ্ছেদে মরিলে
আমায় লোকে বলিবে পুরুষ পাগল রমণী।।
সর্ব/২
৭৭৬
সুবল বলনা রে আমি কি করি এখন শ্ৰী রাধার মাধুর্যগুণে
হরিয়া নিল মন।।ধু।।
রাধা আমার প্রাণের প্রাণ জীবনের জীবন
তিলে পলে না হেরিলে এ চন্দ্ৰবদন।
শুইলে স্বপনে দেখি সদা উদ্দীপন–
চিন্তামণি কমলিনী সাধনেরই ধন।
শীঘ্ৰ যাইয়া করো ভাই রাধা অন্বেষণ
রাধাকুণ্ডের তীরে যাইয়া ত্যেজিব জীবন।
রাধাকুণ্ডের পারে গিয়া করো-পুষ্পাসন
বাঁশির সুরে কমলিনী ডাকে ঘন ঘন।
শুনিয়া ধ্বনি কমলিনী চমকিত মন–
রাধারমণ বলে আশা হবে কি পুরণ।
গো (৭৬)
৭৭৭
সুবল বল বল চাই, কেমন আছে কমলিনী রাই,
রাই কারণে বৃন্দাবনের সুবল আমি সদায় কান্দিয়া বেড়াই।।ধু।।
গিয়াছিলাম মন সাধিতে,
সাধলাম রাইয়ার চরণার্বিন্দে
নয়ন তুলে চাইল না গো রাই;
আমার ছিল আশা দিল দাগ রে সুবল
আমার আর পিরীতের কাৰ্য নাই।।
রমণের মন পিয়াসা–শুনরে সুবল সখা
চল মোরা ব্ৰজপুরে যাই;
আমার প্রাণ থাকিতে রাই আনিয়া দেরে সুবল —
আমি জন্মের মত হেরিয়া যাই।
আ/ (৫), হা (৩৪), সুধী-৪, গো (১৫৪)
পাঠান্তর : গোঃ গিয়াছিলাম জল আনিতে … হেরিয়া যাই > সুবল রে প্রাণ থাকিতে আনিয়া দেখা/ নইলে প্ৰাণ দায় রাখা / দেখলে বাঁচি নইলে মারি রে / সুবল উপায় নাই/সুবল রে ভাইবে রাধারমণ বলে / যাও রে সুবল শীঘ্র চলে / রাইকারণে দিবানিশি জ্বলে পুড়ে হইছি ছাই।
৭৭৮
সুবল সখা পাইনা রে দেখা, কইও রাধারে।
বহু দিনের পরে রে সুবল রাধা পড়ে মনে
বিনা কষ্ঠে জ্বলছে অনল হিয়ার মাঝারে।।
রাধা তন্ত্র রাধা মন্ত্র রাধা কর্ণধার
রাধা বিনে এ সংসারে কে আছে আমার।।
ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
অন্তিমকালে শ্ৰী রাধারে দেখাইও আনিয়া।।
সুখ/২৬
৭৭৯
সোনা বন্ধে মোরে ভিন্নবাসে কেরে
সই গো জিজ্ঞাসিও লাগাল পাইলে তারে।।ধু।।
আমার বাড়ীর সামনা দিয়া-মোহনবাঁশি বাজাইয়া–
নিতি নিতি আসা যাওয়া করে জিজ্ঞাসিালে কয় না কথা
নয়াইয়া যায় মাথা আমার সঙ্গে রাও নাহি করে।
যখন ছিল ভালবাসা প্ৰাণে প্ৰাণে মিলামিশা
রাখিয়াছিল অতি যতন করে গেল সেই ভালবাসা
আমারে কৈল নিরাশা তনু খিন সদায় আখি ঝুরে।
ভাইবে রাধারমণ বলে সোনা বন্ধের চরণতলে
দাসী বলি রাখিও আমারে অধীনী জানিয়া রে
রাখিও সুয়াগ ভরে জ্বালাইও না আর বাঁশির সুরে।
গো (২২৯)
৭৮০
সোহাগের বন্ধুয়া তুমি রে বন্ধু তোমায় নিবেদন করি
সোহাগে সোহাগে তোমায় নিবেদন করি।।ধু।।
তোমার সোহাগে বন্ধু রে সোহাগিনী বলে
শ্যাম সোহাগী নামটি আমার গোকুল নগরে।
তোমার সোহাগে বন্ধু সোহাগ মিশয়
সোহাগের অনুরাগে একই অঙ্গ হয়।
তোমার সোহাগে বন্ধু সোহাগিনী হইয়া—
শ্বশড়ী ননদী দিল কুলটা বানাইয়া—
ভাইবে রাধারমণ বলে সেদিন কি আর পাবো
বনফুলে নয়ন জলে চরণ পুজিবো।
গো (২৭৬)
৭৮১
হইয়ে শ্যাম অনুরাগী লাগল কলঙ্কের দাগী
পিরিতের কি ঐতই দুর্দশা
পিরিত সুখের অনল জলেতে না হয় শীতল
বাড়ে দ্বিগুণ চিত্তের লালসা।।
পিরিত পরম রতন তুচ্ছ জাতি যৌবন ধন
আঁখির পলকে তার বাসা
শুইলে স্বপনেতে দেখি পাসরা না যায় গো সখী
বাড়ে সদায় চিত্তের পিপাসা।।
পিরিত পরম সুনিধি তাহে ভুলাইলেক বিধি
কুলবতীর কুলধৰ্মনাশা
মনোসাধে প্ৰেমজলধি ডুবিয়ে থাকি নিরবধি
শ্ৰী রাধারমণের এই আশা
য/১০১
Dear Sir,
I request you kindly to send me a copy of Giti Sangra which is a very valuable book.