৫ঢ. গীতিসংগ্রহ – সহজিয়া

গীতিসংগ্রহ – সহজিয়া

অকুলে ভাসাইয়া তরী ও রইলায় রে লুকাইয়া।।ধু।।
ভবনদীর ঢেউ দেখিয়া ও গুরু প্ৰাণ ওঠে কান্দিয়া।।চি।।
সারে তিন হাত লম্বা তরী বাইনে বাইনে চুয়ায় পানি
নাই কান্ডারী মারি গো ঝুরিয়া।।১।।
কত তরীর ভরা খাইছে মারা
ও নদীর ফাঁকেতে পড়িয়া।।২।।
নদীর নাম কামিনী সাগর উথলিয়া উঠে লওহর
হইলাম পাগল তরঙ্গ দেখিয়া।।৩।।
রাধারমণে কয় ভাঙ্গা তৈরী…
ও তরী কেমনে যাই বাইয়া।।৪।।

রা/১১০

৮০৫

অধর চান্দ ধরবে যদি নিরবধি রাই করে মন
দুই নয়ন পারা।।ধু।।
গুরুবাক্য ঐক্য করহ্নেদে ধর না যাইও কামিনীপাড়া।।চি।।
সত্যেতে লাগাইয়া নিশা ক্ষেত্ৰতাতে নেহারা
দ্বাপরেতে শেষভাগে উদয় গোপীর মনচোরা।।
অসাধ্য সাধিতে পার হও যদি মরা।
মরায় জিতায় হইলে রঙ্গ নাহি ভঙ্গ অনঙ্গ সাগরে ভুরা।
প্ৰভু রঘু কহেন উল্টা তন্ত্রে মন্ত্রে না যায় ধরা
সাপের মাথায় ভোক নাচে ভয়াল আছে
রাধারমণ রে তুই হও হুসিয়ারা।

য/১

৮০৬

আপন মন তোর কে আছে ভাব কৈরা দেখ দেহারর মাঝে
ভাই তো আপনার নয়রে একই রক্তের কায়া
পরের নারী ঘরে আইলে ছাড়াইন ভাইয়ের মায়া।।
স্ত্রী তো আপনা নয়রে পুরুষেরে কাপাই খায়
কটু মুখে কইলে কথা রাঢ়ী হইতে চায়।।
ঘরের পিছে এক ঝাড় বাঁশ সে তো সহোদর
কাটলে হবে ঘরের পালা মইলে সঙ্গে যায়।।
ভাইবে রাধারমণ বলে নদীর কূলে বইয়া
পার হইমু পার হইমু বলে দিন তো যায় মোর গইয়া।

সুখ/৪৪

৮০৭

আপন মনের মানুষ নইলে গো মনের ভাষা কইও না।
কথা জাগুইলে মনে কেউরির ফাকিত পড়িসা না
অসতের সঙ্গে ছাড়ি সদাই সাধুসঙ্গ কর
আগু কাজে বেকুল হইও না।
ছাওয়াল অইতো পারে আগলা তালে তাল ধরিয়া রঙ্গে নাইচো না।
অসতী এমন ধারা দুরের নাওয়ে সাধুর পাড়া
কতশত খাইছে মারা মইলে জাগে না।
শিমুল ফুলের রূপ দেখিয়া ধাপ্পা দিওনা
পূর্বজন্মের পূর্বফলে যদি মনের মানুষ মিলে
দেখাইতাম দাম চলিয়া লইতোম কিনারা
রাধারমণ বলে এবার ভাবে মানুষ পাইলাম না।

সুখ/৪৩

৮০৮

আমার গউর নিতাই জগৎ ভাসাইলায় রে কোন কলে।।ধু।।
জগৎ ভাসাইলায় রে আমার প্রাণ হইরে নিলায় কোন কলে।।চি।।
আকাশেতে গাছের গোরা জমিতে তার ডাল
ডাল ছাড়া পাতা, পাতা ছাড়া ফল রে কোন কলে।।১।।
গাছের নাম চম্পক লতা রে পাতার নাম তার নিল
এক ডালে তার রসের খেলা আর ডালে তার প্ৰেম, রে কোন কলে।।২।।
ভাইবে রাধারমণ বলে শুনরে সাধু ভাই
হাত নাই জনে পাড়ে ফল, মুখ নাই জনে খায়, রে কোন কলে।।।৩।।

রা/৯৫

৮০৯

আমার দিন বড়ো বেকলা দেখি–
আকুল গেছি খাইয়া গো
ও সই, মাতি না ডরাইয়া।।
আর সার-শুয়া দুইটি পঙ্খী
রাখিয়াছি ধরিয়া।
ওরে, দু-দিলা হইলে পাখী
যাইব রে উড়িয়া গো।।
আর এমন যতনের পাখী
কে দিব ধরিয়া।
এগো, বিনা দরমায় করমু চাকরী —
এই জনম ভরিয়া গো।।
আর ভাইবে রাধারমণ বলে–শুন রে কালিয়া :
এগো, নিবি ছিল মনোরি অনল
কে দিল জ্বালিয়া গো।

শ্রী/১৫৩

৮১০

আমার দেহতরী কি দিয়া গড়িলায় গুরুধন।
আমি ভুতের বেগার খাইটে মাইলাম পাইলাম না
শ্ৰীগুরুর চরণ।
নায়ের আছে ষোল গুড়া মধ্যে মধ্যে আছে জোড়া
ওবা গুরুধন।
নায়ের হাইল মানে না গুণ বলে না মন মাঝি ভাই
পাই না দর্শন।।
পার হৈতাম গোলাম ধাইয়া সে পারে পাষাণের মাইয়া
ওবা গুরুধন।
মাইয়ায় পার করে না, কুলে বৈসা ভাবতে আছে রাধারমণ।

সুখ/৪

৮১১

আমার দেহতরী কে করলো গঠন
মেস্তরি কে চিননি রে মন।।ধু।।
ঐ যে নায়ের গুড়া আছে ছোট বড় সব দিয়াছে
কে কৈলো গঠন গো নায়ের কে কৈলো গঠন
লুআ ছাড়া তক্তার জোড়া বেশ করিয়াছ পাটাতন।
ঐ যে নায়ের গরা আছে গরায় গরায় মাল আছে
কে কৈলো ওজন গো নায়ের কে কৈলো ওজন
ছয় জনাতে চালায় তরী কে হইয়াছে মহাজন?
ভাইবে রাধারমণ ভানে মিছা ভাবে আইলাম কেনে
না কৈলাম সাধন গো আমি না কৈলাম সাধন
হেলায় হেলায় দিন গয়াইলাম কুন কাজেতে দিয়া মন।

গো আ (৫১), সুখ /৫৮

পাঠান্তর: সুখ : এই যে দেহতরী কে করিল সুগঠন/মেস্তারিরে চিনলায় না রে মন। ঐ যে নাওয়ের আছে জোড়া/জোড়ায় জোড়ায় গিলটি মারা/কে করিল গঠন। লোহা ছাড়া তক্তা মারা / কিবা শুভ পাটাতন।এই যে নাওয়ের ষোল্লতোলা/খুল্লায় নারে ও মন ভোলা ঘুমে অচেতন। তালা খুলবে যখন দেখবে তখন/মোহর মারা আছে ধন। মছতুলে দিয়ে বাত্তি /রংমলেতে করে জ্যোতি/ একবার খুলে দেখ রে নয়ন/রাধা বলে দিল, কালা তর /জন্ম হইল অকারণ।

৮১২

আমার ভবজ্বালা গেল না, সৎ পিরিতি হইল না,
এগো সৎ পিরিতি হইতে পারে মাটির দেহা টিকবে না।
মুখের মাঝে অমৃত ভরা তাতে ছাই দিও না,
এগো দুধের মাঝে ছাই মিশাইলে দুধের বর্ণ রবে না।
মধুপুরে কাল ভীমরা সদায় জ্বরে আনাযানা,
এগো শুকাইলে কমলের মধু আর ত ভমর আসবে না।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে প্ৰেম জ্বালায় ত বাঁচি না,
পড়িয়া রইলাম ঘুমের ঘোরে ভমরারূপ দেখলাম না।

আহো/১, গো(৩০), সুধী/১০

৮১৩

আমার যেমনের বেণী তেমনি রবে চুল ভিজাব না
আমি সিনানে যাব সিনান করিব না
আমি খাইতে যাব খাইতে পারব গেলাস নিব না।
শুইতে যাব শয়ন করব বিছানা করব না।
আমি শুইতে যাব শয়ন করব ঘুমাইব না।
মশায় খাবে গা মুছিব মশারী টাঙ্গাইব না।
শুরু ধরব নাম বিচারবো পন্থ ছাড়বো না
ভাইবে রাধারমণ বলে ইহাই আমার কল্পনা।।

গে। (৪৫), হা (৮)

৮১৪

আশা নি পুরাইবায় গুণমণি রে দীনের নাথ বন্ধু
আশনি পুরাইবায় গুণমণি।।ধু।।
ত্ৰিভুবন ভরামনা করি না পাইলে তোমারে–
বাউল মনায় বিন্ধা করি ঘুরাস কত ঘুরনি রে।
আকাষ্ঠা কাষ্ঠের নৌক মনুয়া যে কান্ডারী
হৃদনগরে আছে হাট হুস মাঝি বেপারীরে।
শিশুকালে দেখা দিয়া–যৌবন কালে ঘুম
উদাসী করিয়া দিয়া কুটানারকের চুম রে।
কামক্ৰোধ ছাড়ি দিয়া হইয়া আউল
আশাপূর্ণে দিশ রাখে রমণ বাউলরে।

গো (৪২)

৮১৫

আসল ধনের নাই ঠিকানা মন করে তার উপাসনা।
কামনদীর মদন বাণে ভাঙ্গিয়া নিল চাঁদের কোণা
মাইয়ার হাটে গেলে পরে সকলে তার ভাও জানে না।।
মাইয়ার সাধন বিষম যেমন মন বিকায় দেড়াদুনা
যেমন রাহু আইসে চন্দ্ৰ গ্ৰাসে প্ৰাণ করিয়া নেয় ষোল আনা।
ভাইবে রাধারমণ বলে রসিক জেনে করা দেনা
অনুরাগের নিক্তি দিয়া মাফতে আছে খাঁটি সোনা।

শ্যা/৫

৪১৬

উপায় বল রে বেভুলার মন, ভবসমদুর তরিবার।।ধু।।
মায়াতে মগন হইয়া অসারকে জানিছ সার,
গুরুভক্তি নাই অন্তরে, স্ত্রীপুত্রের হইছে বেগার।
ভাঙ্গা নাও সওয়ারী মনা, মস্তুল কইলাম সার,
‘অজাপারে’ সাধন কৈলে নামের গুণে হবে পার।
বাউল রাধারমণ বলে গুরুর চরণ কর সার
গুরুর চরণ সাধন কইলে ডঙ্কা মারি হবে পার।

আ/৩, গো ৯২২), সুখী/১৪, হা (৩২)

৮১৭

খেমটা

এই তো মহাজনের মত
যার প্রেমে স্বয়ং কৃষ্ণ দিয়াছেন প্রেমের খৎ।।ধু।।
মাইয়ার সুখে সুখী জগৎ মাইয়ার অনুগত।।চি।।
দাসখতের এই অর্থ দেহ আত্মেন্দ্ৰিয় যত
মাইয়ার সুখে অনুরত সে বড় কঠিন ব্ৰত
রাধা প্ৰেমে ঋণী কৃষ্ণ তমসুকে দস্তখত।।১।।
হরিহরের যেই মর্ম মাইয়ার সাধন মুখ্য কর্ম
আপনি আচরি ধর্ম দেখাইলেন জীবকে সহজ পথ
শ্ৰীরাধারমণে ভনে মাইয়া ভজে সৎ।।২।।

রা/১৩

৮১৮

এমন মধুর নামে রতি না জন্মিল রে
নির্বলের বল বন্ধু কেবল হরি
নাম যজ্ঞ মহামন্ত্র উপাসনা করি হে
যদি নাম নিরলে নিতে পার
পাপ তাপ দুরে যাবে মধুর হরির নামে রে।।
পঞ্চ দিয়া পঞ্চ ধর আরেক পঞ্চ সাধন কর রে
পঞ্চ দিয়া পঞ্চাকে উদ্ধারো–
পঞ্চ লইয়া চল সাধুর বাজারে রে।।
মাইয়ার অনুগত হয়ে প্ৰেম সাধনা করো হে
মাইয়া যে হয় অনঙ্গ মঞ্জরী
মাইয়ার প্ৰেমে উদয় হয় কিশোর কিশোরী রে।।
ভাইবে রাধারমণ বলে আমার বন্ধু কেবা আছে
ভব নদী দিতে চাও পাড়ি
ভব নদীর পাড়ি দিতে শ্রীগুরু কান্ডারী রে।।

কি / ৬০

৮১৯

ও দম গেলে আইবার নাইরে আশা–
ওই দম লইয়া বিক ভরসা।
আর ইদ্‌রের মাঝে থাকো পাখি,
তনের মাঝে বাসা;
ও আমি বুঝিতে না পাইলাম তার রে
ওয়রে পাষাণ মন,
ও আমি চিনলাম না তায় রইবার বাসা।।
আর হৃদপিঞ্জিরায় থাকো পাখি
মোহন ডালে বাসা;
ওরে, তিন ডালে তার পালা পালিছ–
হয় রে পাষাণ মন,
তারে ধরতে গেলে না দেয় ধরা।।
আর ভাইবে রাধারমণ বল–
শুনো রে কালিয়া :
পাখী পিঞ্জিরা ছাড়িয়া যাইতে রে
হায় রে পাষাণ মন,
তোরে অইল রাখি, অসারের ধন।।

শ্রী/১৫২

৮২০

ও পাষাণ মন কোন সাধনে যাবে বৃন্দাবন।
কোন্‌ মানুষ ইন্দ্রের কোলে সে ধরে চতুদোলে
কোন্‌ মানুষ ত্রিপুন্ত্রীর জলে বিনয়ে করছে ভ্ৰমণ।
ছাইয়ার কাছে পা না দিলে মুখের কথায় কি চৈতন মিলে
গাছে গোড়ায় ঠিক না থাকিলে অকালে হয় তার মরণ।
ভাবিয়ে রাধারমণ বলে গোবর্ধনের অন্তরালে
আছে মানুষ নির্বিরলে ধোঁয়ানে পায় যোগিগণ।

য/২০

৮২১

কপালের দুষ দিমু কারে সকলই কপালে করে
সুখের সাখী জগৎ ভরা দুঃখের সাখী নাই সংসারে।।
আগে যদি জানতাম ভাই রে ডাকাইতে ডাকাতি করে
ফাঁকি দিয়া নেয় গো মোরে বান্ধিয়া দেয় জেলের ঘরে।।
ভাইবে রাধারমণ বলে ঠেই কলাম ভবের মায়া জালে
ভাইরে এ ভবের বাজারে গিয়ে লুহা কিনলাম সুনার দরে।।

যা/ ২৩

৮২২

(তাল-খেমটা, রাগ মনোহরসাই)

কৃষ্ণ প্ৰেম সিন্ধু মাঝে থাক মইজে
হইয়ে গোপীর অনুগত।।ধু।।
গোপীর বিশুদ্ধ ভক্তি সজল রতি
প্ৰেম রসে উনমত
যেমন জল ছাড়া মীন জলের অধীন
জল বিনে মীন রয় নিহত।।১।।
গোপীর ভাব চাতাকিনী উন্মাদিনী
মেঘের আশে পিপাসিত
পান করে না অন্য বারি প্রাণে মারি বিনে
নবঘনের সুধামৃত।।২।।
কালাচান্দ মদনমণি অনঙ্গ জিনি
মন্মথের মন্মথ
রাধারমণের কথা হৃদয় গাথা
মন হইল না মনের মত।।৩।।

রা/৬

৮২৩

(খেমটা)

কৃষ্ণ ভজ না কেন মন সুদিন যায় রে
তুমি মিছা মায়ায় ভুলিয়াছ রে মন।।ধু।।
চক্ষুকৰ্ণ নাসিক্যাদি জ্ঞানেন্দ্ৰিয়গণ
সুপথেতে হয় না রত বাদী ছয় জন।।১।।
এ রূপলাবণ্যধন তনু নিয়ে আপন
যৌবন বারিষার জল নিশির স্বপন।২।।
সাধু শাস্ত্ৰ গুরুবাক্য না হইল যাপন
মন হইল না মনের মতন কহে শ্ৰীরাধারমণ।।।৩।।

রা/২২

৮২৪

(খেমটা)

কৃষ্ণ ভজো না কোন কাজে দিন যায় রে।
তুমি আসার আশে রইলে রে মন।।ধু।।
অজক্তর রাখ্যতম মনুষ্যজীবন।
হেলায় হেলায় গেল বেলা নিকটে শমন।।১।।
জনম সফল কৃষ্ণপদে যার মন
আত্ম সুখের সুখী হইলে না হয়। সাধন।।।২।।
স্ত্রী-পুত্ৰ-ভাই-বন্ধু কেহ নয় আপন
কেহ না হবে সঙ্গের সঙ্গী কহে শ্ৰী রাধারমণ।।।৩।।

রা/২১

৮২৫

কেনে ভাবে আইলাম রে, নিতাই চৈতন্যের হাটে মাইরা খাইলাম।
রঙ্গে আইলাম, রঙ্গে গেলাম, রঙ্গে ভুইলা রইলাম।
রঙ্গে রাঙ্গে মহাজনের তফিল ভাঙ্গিয়া খাইলাম।
উল্টা আইলাম, উল্টা গেলাম, উল্টা কলে রইলাম।
উল্টা কলে চাপি দিয়া তালা না খুলিলাম।
এক সমুদ্রের তিনটি ধারা, তারে না চিনিলাম।
গঙ্গার জল ত্যজ্য করে কুজল খাইয়া মাইলাম।
গোসাই রাধারমণ বলে, এই বারই এই বার।
মনুষ্য দুল্লভ জনম না হইব আর।

য/১৪৮

৮২৬

ঘরের মাঝে ঘর বেঁধেছে আমার মনোহরা
জাগা হয় না ঘরের মাঝে সে থাকে না ঘর ছাড়া।।ধু।।
বায়ান্ন গলি তিপন্ন বাজার ঘরের মধ্যে পোরা
মূল কোঠায় মহাজন বসে নামটি ধরে সে অধরা।
ঘরে কেবা ঘুমায় কেবা জাগে কেবা দেয় রে পাহারা।
ছয় চোরায় চুরি করে পবন দাস দেয় পাহারা
সংসার জুড়ি ঘর বেধেছে থাকিয়া সে মরা
ধরমু করি জনম গেল না হইল ধরা
ভাইবে রাধারমণ বলে ডুবিল মুলের ভরা
ঘরে থইয়া ধরতে আমি না পারিলাম অধরা।

গো (৫৫)

৮২৭

চৈড়ে মনোহারী ভবের গাড়ি আয় কে যাবে বৃন্দাবন।।ধু।।
বৈসে থাকি রূপ নেহারে স্বরূপে রূপ কইরে মিলন। চি।।
নয়ন রেলে ভাবের গাড়ি কানেতে চাক যোগান করি
রাগ অনুরাগ অনল বারি পুর্বরাগ কইরে দাহন।।১।।
কাম কলেতে টিপনি দিয়ে চালায় প্রেমের ইঞ্জিন
হাওয়ার আগে চলে তিলে পলে ঘুইরে আসে চৌদ্দ ভুবন।।২।।
প্ৰথম টিকেট ব্ৰজপুরী স্টেশনমাস্টার বংশীধারী
সব সখীগণ সহায়কারী ভাব গাড়ির মহাজন
ভাবনা মুলে আমার টিকেট কাটে বিশাখা সখী
সখীর অনুগত হইয়ে থাকা করে তনুমন আত্মসমৰ্পণ।।৩।।
তিছরা টিকেট গোবৰ্ধনগিরি স্টেশন মাস্টার রাই কিশোরী
রসের কুঠায় রূপমঞ্জরী অষ্টাদশ দণ্ড টাইম নিরূপণ
উদ্দীপন বংশীধ্বনি প্ৰেম সেবা আলম্বন
শ্ৰী রাধারমণে ভনে প্রেমের কথা রেইখি গোপন।।৪।।

রা/৮

৮২৮

তারে তারে গো সই খোজ করিও তারে
মনের মানুষ বিরাজ করে হৃদয় মণিপুরে।।ধু।।
যং রঙ লং বং যং রঙ লং বং
সদাই কংকারে এক তারে বাজাইলে বাজে বাহাত্তর হাজারে।
রসের নাগর সে কালাচাঁন আছে সহস্রারে
পাইলে সুযোগ করিও সংযোগ সে যমুনার পারে
ভাইবে রাধারমণ বলে আমি পাইলাম না রে
বৃথা জীবন কাটাইলাম যমুনারই পারে।

গো/২১

৮২৯

তোরা দেখা রে আসি নগরবাসী প্ৰেমরসের ফুল।
ফুলের গন্ধে অন্ধ মকরন্দ মধু লোভে প্ৰাণ আকুল।
ও কিশোরীর প্ৰেম ব্রজধামে সে ফুলের মূল
সজল উজ্জ্বল রসে মিলে উদয় সুরধনীর কুল।।
ও প্রেম রসের কমল টলমল মহিমা অতুল।
যার পরশে পাষাণ ভাসে লুণ্ঠন করে সোনার মুল।
যার কপাল মন্দ মায়ায় মুগ্ধ সৎ সঙ্গে তার ভুল
গোসাই রমণ বলেন মানুষ বিনে লাগছে প্রেমের ফুলাহুল।

তী/৮, য/১৫২

পাঠান্তর : লুণ্ঠন করে > লোহা ধরে, গোসা।ই,… হুলাহুল > রাধারমণ বলে মানুষ লীলে লাগছে প্রেমের হুলস্থূল।

৮৩০

দিন গেলে তুই কাঁদবে রে বইসে
তোদের কান্দন কেউ শুনবে না
মন রে দেহার গৌরব করিও না।।ধু।।
মন রে হীরার দামে চিরা কিনা
আসলে উসুল মিলে না।।
ওরে অন্ধের হাতে মাণিক দিলে যত্ন জানে না।
মন রে একদিন দুইদিন যাবে রে সুখে
চিরদিন সমান যাবে না।
ভবনদী তরিবারে করা সাধনা
মন রে ভবনদীর পারে ভুজঙ্গ নদীর থানা
এগো সাধু যায় হাসিখুশি পাপী যাইতে মানা
মনরে ভাবিয়া রাধারমণ বলে শ্ৰীগুরু চরণ ভজনা
এগো শমন আসি ধরবে যখন ছাড়িয়া দিবে না।

য/৫৭

৮৩১

(তাল—লোভা)

দেহার সুখে কেন প্রেমের মরা মর্লেমনা
প্রেমের মর্ম জানলে না।।ধু।।
মরা হইয়ে অধর ধরা রসিকের ভাব শিখলেম না।।চি।।
কাম ক্ৰোধ লোভ মোহ রিপু ছয়জনা ছয়জনা
ছয়দিকে টানে মাঝির টিপ মানে না।।১।।
মেঘের আশে চাতকিনী বৈসে থাকে একমনা
প্ৰাণ যদি যায় জল পিপাসায় অন্য জল পান করে না।।২।।
কালাচান্দ রাসমোহন তিলকচান্দ ঠিকানা
প্ৰভু রঘুনাথের প্রেমের কারণ রাধারমণ সাধলে না।।৩।।

রা/৯

৮৩২
ধরবে যদি রসের মানুষ নেহারে
সহজ ভাবেরি ঘরে
ভাবের শুরু কল্পতরু মনপ্ৰাণ যে হারে।
দেহরতি করা শগুন্য গুরুরতি কর পুণ্য
কামশূন্য শুদ্ধ নির্বিকারে
মরা হয়ে অধর মরা চিন্তামণি পুরে।
অধর মানুষ সহজ রসে বিরাজ করে ঢাকার শ”রে।
সে মানুষ ত্রিপুন্নীর নীরে
অধর চান্দের রসের খেলা মদনগঞ্জের চকবাজারে।
চল রে মন মুসুদাবাদ
খিল জমির কর আবাদ উদয় চান্দ শ্ৰীরূপনগরে।
গোসাই শ্ৰী রাধারমণের আশা পুরে কিনা পুরে।।

য/৬০

৮৩৩

নবদ্বীপ প্রেমের বাজার লাগিয়াছে।।ধু।।
কলি ধন্য শ্ৰীচৈতন্য সুবতীর্ণ হইয়াছে।।চি।।
শুন ভাই হাটের বিবরণ পুরুষ নারী দুইজনে একমন
কাছে প্রেমের রসের বেচাকিনি নয়ন… তৈল ধরিয়াছে।
যাইয়ে সুরধুনীর ঘাট রসিকজনার প্রেমের হাট
রঙ্গে জিনিষ নিয়ে নিতাই চান্দ দোকান পাইতে বৈসেছে
শুন মন ভাই প্রেমের হাটে যাওয়া বিষম দায়
পাষণ্ডের মুণ্ড ভাঙ্গে অদ্বৈতাচান্দে রাধারমণ বইলেছে।

য/৬৩

৮৩৪

নিশীথে যাইও ফুলবনে রে ভ্ৰমরা।
নয় দরজা করে বন্ধ লইওরে ফুলের গন্ধ
নিরলে বসিয়া রে মন ভ্ৰমরা।।
একটি গাছের ডাল পাতা নাই তার কোনো কাল
বেটু ছাড়া ধরছে, ফলের কলি রে মন ভ্ৰমরা।।
ভাল আছে পাতা নাই এ ফুল ফুটিয়াছে সই
পদ্ম যেন ভাসে গঙ্গার জলে রে ভ্রমরা।।
ভাইবে রাধারমণ বলে ঢেউ উঠিল আপন মনে
সে গান ভাবিক ছাড়া বুঝবে না পণ্ডিতেরে।

ক. খ/৯

৮৩৫

পাশরিতে পারি না ও শ্যামরূপের নমুনা।।
চক্ষের মাঝারে রূপে করে আনা জানা।।
পন্থে বসি বালাম কানা, তিনে তিন আমার মিলে না
পাইলে তারে হৃদ মাঝারে রাখিতে পারি না।
যোগী ঋষি মণি গণে পায় না। তারে ধিয়ানে।
মুলাধারে সহস্রারে শ্যাম ধরা হইল না।
ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰেম জ্বালায় অঙ্গ জ্বলে
শ্যাম ধরা হইল না।

য/ ১৫৮ (হু আলী)

৮৩৬

প্ৰাণ পাখীরে–আমারে ছাড়িয়া যাইও না।।ধু।।
তুমি মাটির পিঞ্জিরায় এতদিন থাকিলায়
ছাড়িয়া যাইতে তোমার মায়া লাগে না।
তোমায় ঘৃত চিনি খাওইলাম যতনে রাখিলাম
শুইবার দিলাম ফুলের বিছানা।
তুমি যখন যা চাইলায় তখন তা পাইলায়
ছাড়িয়া যাইতে করো মনে বাসনা।
আমি পাখী ধরিবার ছলে থাকি ঐ নিরলে
আশাতে বঞ্চিত করিও না।
ভাইবে রাধারমণ বলে থাকি রংমহলে
নাসিকের পথে তোমার আনাগোনা।

গো (৬১)

৮৩৭

প্ৰাণ সখী গো–অভিমকালের উপায় দেখিনা।।ধু।।
বেপার করিতে আইলাম। একে দ্বিগুণ দুনা
ছয় ঠগে ঠগিয়া নিলো মূলের এখন নাই ঠিকানা
হেলায় খেলায় জনম গেল। খেয়াল কিছু কইলাম না
কামের সনে পিরিত করি প্রেমের কাছা ভিড়লাম না
কাম সাগরে সাতার দিয়া কিনার তাহার পাইলাম না।
মাঝখানে ডুবিয়া মাইলাম শেষের উপায়। কইলাম না
ভাবিয়া রাধারমণ বলে উপায় কিছু দেখি না
গুরুর কৃপা বিনে আমার ঘটুবো বিষম লাঞ্ছনা।

গো (৩৫)

৮৩৮

প্ৰেম পবন লাগলো যাহার গায় দিবানিশি সদায় খুশী
কেবল বলে হায় রে হায়।।ধু।।
প্ৰেম পাবলেন যাদের ধরে সদায় থাকে প্ৰেম বাজারে
রাসিক জনে চিনতে পারে অরসিক চিনা দায়।
রসে রসে রসিক হইয়া অরসিকে তেয়াগিয়া
তবে পারো লইতে চিনিয়া রসিক চিনা বিষম দায়।
রসিক জানে রসের ধর্ম অরসিকে নয় তা কর্ম
রসিক কুলে লইলে জন্ম অভাবে না। স্বভাব যায়।
জলের মাঝে মিশে না তেল কুল গাছে ধরে না বেল
খেজুর গাছে তাল ধরে না মরা বীজে অঙ্কুর না গজায়।
গাধা কখনো হয় না ঘোড়া পিঠে দিলে হাজার কোড়া
বাচালের মুখ বন্ধ হয় না কথা বলতে না পারে বোবায়।
ভাইবে রাধারমণ বলে মনের মত রসিক পাইলে
পড়ে থাকবো চারণ তলে যদি না ঠেলে রাঙ্গা পায়।

গো (১২১)

৮৩৯

(তাল-খেমটা, লোগ–মনোহর সাই)

প্ৰেমরসের ফুলবাগানে সঙ্গোপনে কুসুমকলি ফুটিয়াছে।।ধু।।
কমলের গন্ধে অন্ধ মকরন্দ মধু লোভে খুঁজতে আছে।
যে ফুল নহে বাসি দিবানিশি সৌরভে ভুবন মাতিয়াছে।।১।।
কমলের মূল সূত্ৰধর রসিক কারিগর রসের কমল গঠিয়াছে
রসের নাই পারাপার শুকনায় সাতার অনুরাগের বাতি
জ্বলতে আছে।।২।।
গিরি গুহার অন্তরালে বিদ্যুৎ খেলে চান্দের উপর
চান্দ শোভিয়াছে
রাধারমণের কথা হৃদয় গাথা আটচল্লিশ চান্দ ফুলের কাছে।।৩।।

রা/৪

৮৪০

প্ৰেম সরোবরের মাঝে রসেরি তরঙ্গ।
কোন ভাগ্যে কার দৈবযোগে সে রসের প্রসঙ্গ।।
সরোবরে প্রেমের জোয়ার হয়। সেই কালে
কত মণি অমৃত্যাদি তিনধারায়ে চলে
সে জল পান করিলে বিধির কলম ভঙ্গ।
আনন্দ চিন্ময় রস সর্বরসের সার
কাননুগা শুদ্ধভক্তি ব্ৰজ গোপিকার
সে জলে ডুব দিয়াছে রসরাজ গৌরাঙ্গ।।
যথা সিদ্ধি রসম্পর্শে তাম্র হয় কাঞ্চন
সজল প্ৰেমভক্তি কীটের মতন
গোসাই রাধারমণ মাগইন গোরাচান্দের সঙ্গ।

তী/১৬

৮৪১

প্ৰেম সরোবরে সইগো প্ৰেম সরোবরে,
প্ৰেম সরোবরে নামিলে ধরৰি বুকে নিদয়া কুম্ভীরে।।ধু।।
এমন নির্মল জল ঝলমল করে গো সই ঝলমল করে,
এগো মনে লয় মরিয়া যাইতাম ঝম্প দিয়া জলে,
বন্ধের লাগি ভাবতে ভাবতে রসনা ভিজল জলে,
মনে লয় মজিয়া রহিতাম চরণ কমলে।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে আশা ছিল মনে,
জিতে না পুরিল আশা মরিলে যেন পুরে।

আ/৩৯ (২১), শ্রী (১০৯), গো (১১২), হা (১১)

পাঠান্তর : শ্ৰী : বুকে > × × ঝাম্প > ঝাম্পু রসনা > রসনা > বস্‌ না, যেন > বি
গো : ধরব বুকে > ধরিবে; রসনা ভিজল > বুকে ভিজিল,
হা : ধরব… কুন্তীরে > ধরব নিয়া কুম্ভীরে

৮৪২

ফুটিয়াছে রূপরসের কলি প্রেমাসিন্ধু মাঝে
মন চল চৈতন্যের দেশে।।ধু।।
ফুলের গন্ধে ভাসাইল অবনী এসে।।চি।।
অদ্বৈত পারের খেয়ানী পার করি নেয় কাঙালি জানি
ধনীমানীর না আশে পাশে।
ভক্তিসূৰ্য সুপ্ৰকাশি তিমিরান্ধ বিনাশি
যে দেশের বসতি যারা হিংসা নিন্দা বৈষ্ণব ছাড়া
জিতে মরা প্ৰেমানন্দে ভাসে।।
সে দেশের রাজা শ্যাম আনন্দ চিন্ময় রাস
গুরুবাক্য করি বিশ্বাস সাধুসঙ্গে কর বাস
দিন গেল মন রিপুর বশে
শ্ৰীরাধারমণে ভনে কি উপায় শেষে।

য/৭২

৮৪৩

বসে ভাবিছ কি রে মন মনবেপারী।
সামাল সামাল ডুবল তরী, আরো সামাল সামাল
ডুবল তরী।
মন রে প্রবঞ্চনের জিনিস ভরি নৌকা করলাম।
ভারী সারা দিন ঘাটে বসি সন্ধ্যাবেল ধরছি পাড়ি।।
মন রে ভবনদীর তরঙ্গ পালায় দশজন দাড়ি
দয়াল গুরু হয় যদি কান্ডারী
আমি পাড়ি দিতে ভয় কি করি।।
ভাইবে রাধারমণ বলে শুন রে মনবেপারী
জয় রাধা নামের বাদাম কৃষ্ণের নামে গাওরে সারি।।

কম /১০

৮৪৪

done

ভবে জন্মিয়া কেন মইলাম না, গুরুর চরণ সাধন হইল না।।ধু।।
লাভ করিতে আইলাম ভাবে — দিনে দিনে তহবিল টুটে,
আসলে উশুল মিলে না;
বুঝি আমার কর্মদোষে রে মন বিধির কৃপাবিন্দু পাইলাম না।
একটি নদীর তিনটি নালা রসিক যারা বুঝবে তারা,

অরসিকে বুঝতে পাইলাম না;
বুঝি আমার কর্ম দোষে রে মন আমার সাধন সিদ্ধি হইল না।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে–ঠেকিয়া রইলাম মায়া জালে,
গুরু কি ধন চিনতে পাইলাম না,
বুঝি আমার কর্ম দোষেরে মন আমার সাধন সিদ্ধি হইল না।

অ (১৬), হা ৯৩৩), গো (৬৪), সুধী/১৫

পাঠান্তর : গো আ : দিনে … পাইলাম না > দিন গেল বেপথ বেসেবে / বুঝি আমার কর্মদোষে/সাধন সিদ্ধি হইল না বেচলাম জিনিষ নগদ বাকি / লইয়া গেল সব দিয়া ফাঁকি/আর কতদিন বসে থাকি / আসল উসল হইল না; বুঝি আর … হইল না > × × ঠেকিয়া > পড়িয়া; আমার সাধন. হইল না > ঘাটে যাওয়া হইল না।

৮৪৫

মন তুই কার ভরসে রইলে বসে
আশার আশে দিন তো গেল।।ধু।।
যায় রে সুদিন না হইল দিন
দুঃখের যামিনী আইল।
ছাড় মন খুটিনাটি ময়লা মাটি
খাঁটি হইয়ে পথে চল।।
মায়াফল কর ছেদন যাই বৃন্দাবন
সাধের তরী ঘাটে রইল।
থাকতে জোয়ার হও হুশিয়ার
সাধের তরী বাইয়ে চল।।
গাইয়ে নামের সারি … ধর পাড়ি
তৈরে যাবে গহিন জল।
অনুরাগ বাতাসে পাইলে শ্রদ্ধা পালে
যারে প্ৰেম সিন্ধু কূল।।
রাধারমণ বলে উলটা কলে কলে
প্ৰেমনগরে চল।
প্ৰভু রঘু কহেন পষ্ট না হয় কষ্ট
বুঝাব রাধা নামের ফল।

য/৮৩

৮৪৬

মনবেপারী ধরছে পাড়ি, রংপুরের হাটে
লোভের পুঞ্জি নিল ছয় জনায়ে লুইটে।
রঙের নাও রঙের বৈঠা তাতে দিলাম মাঝি ছটা।
উজান বাতাস পাইলে নাও যায় ছুইটে।।
রঙের হাট রঙের বানা রঙের কারবার
রঙের পাসার কিনে রঙিলা হাটে।।
ভাইবে রাধারমণ বলে মানব জীবন যায় বিফলে
পারের কান্ডারী নিতাই বসিয়া আছে ঘাটে।।

আশা/২

৮৪৭

মন যদি যাবে বৃন্দাবন ছাড়বে কমতির সঙ্গ
সুসঙ্গে করবে গমন।।ধু।।
যার দর্শনেতে আনন্দ বাড়ে রে অ পাষাণ মন
করে কৃষ্ণপ্রেমের উদ্দীপন।।ধু।।
সচ্চিদানন্দ হরিপুরে রসের কুটা ঢাকা শহরে
আনন্দ মদন।।
আনন্দ চিন্ময় রস রে ও পাষাণ মন কেলি
গিরি গোবৰ্ধন।।১।।
কামানুগা রসের গতি চব্বিশ গুরুর চব্বিশ বতি
উলটা গতি উলটা সাধন
ঠিক থাকে যেন নিক্তির কাটা বেকলে
অকালে হবে মরণ।।২।।
মণিকুটা মণিপুরে অর্ধচন্দ্ৰ বিরাজ করে
ত্ৰিপুর্ণীহিত তিন ধারে এক মিলন।
নদীর ধারে চিনিয়া দিও পাড়ি রে পাষাণ মন,
কহে শ্ৰীরাধারমণ।।৩।।

রা/৭

৮৪৮

মনের মানুষ না পাইলে
মনের কথা কইয়ো না–
প্রাণ-সজনি, না না না।।
কুসঙ্গীয়ার সঙ্গ ছাড়ো,
হায় রে, সদায় শুরুর সঙ্গে ধরে গো।
ওরে রঙেঙ্গর গুটি চালান কইরে
বন্ধ কইরো না।।
যদি তোমার ভাগ্যে থাকে–
হায় রে, মনের মানুষ পাইবে বসে গো।
ওরে, অসময়ে চলতে গেলে
কেও তো চলবে না।
ভাইবে রাধারমণ বলে,
হায় রে, মনের মানুষ ধরতে গেলে গো–
ওরে, মনের মানুষ ধরতে গেলে
ধরা দিব না।

শ্রী/৩১৭

৮৪৯

মনের মানুষ পাবি নি গো ললিতে বল না
মানুষ মিলে মন মিলে না, হায় গো
মনের মানুষ পাইলাম না।
আমার উপায় বল না। কার ঠাঁইন বলিব সখী চিত্তের বেদনা
সুখের সময় সবাই সুহৃদ দুঃখের দুঃখী দেখি না।।
কারে সখী করি আপনা ব্ৰহ্মার দুর্লভ প্ৰেম সামান্যে জ্বলে না
আত্মসুখে সুখী জগৎ পরার দুঃখ বুঝে না।।
মানুষ সাধন হইল না এ দেশেতে মনের মত মানুষ পাইলাম না।
মানুষে গো প্ৰাণ সঁপিব রাধারমণের এই বাসনা।

য/৮৫

৮৫০

(তাল-লোভা)

মাইয়া কি তায় চিনলে না রে মন।।ধু।।
মাইয়ার অনন্ত গুণ জুলন্ত আগুন মাইয়াতে জন্মমরণ।।চি।।
করেন মাইয়ার সাধন নন্দের নন্দন দ্বাপর যুগে বৃন্দাবন
মাইয়ার মান ঘুচাইতে জুড়িহাতে মাঘে রাইরা চরণ সাধন।।১।।
মাইয়ার প্ৰেমরসে ভাসে পেয়ে উজ্জ্বল রসের আস্বাদন।
মাইয়ার রুদপেতে স্বরূপ মিশাইয়ে শ্যাম অঙ্গ হয় গৌরবরন।।২।।
দেবের দেব মহাদেব জানেন মাইয়ার মতন
নিয়ে উরে হৃদি শিরে নারী করে কৃষ্ণযোগ সাধন।।৩।।
আছে রসিক দ্বাদশ গোস্বামী মাইয়ার প্রেমে মহাজন
আমি বামন হইয়ে চান্দ ধরতে আশা কহে শ্ৰী রাধারমণ।।৪।।

রা/১০

৮৫১

(খেমটা)

মাইয়া কৃষ্ণভজনের মূল মাইয়ার প্ৰেম পাথরে
সাতার দিয়ে অনায়াসে মিলবে কুল।।ধু।।
মন হরিয়ে নেয় মনোহারী হরিহরে সমতুল।।
সাত রজ তম মাইয়া জগৎ মাইয়ার অনুকুল।।১।।
হরিহর জানেন যে মাইয়ার মর্ম, মাইয়া প্ৰেমরসের ফুল
মাইয়া যার পানে চায় আড় নয়নে তার কি রাখে জাতিকুল।।২।।
কামিনীর কামসাগরে কামকুভীরে গণ্ডগোল
তুমি সহজ মাইয়ার সঙ্গে করা শ্ৰী রাধারমণের কুল।।৩।।

রা/১৪

৮৫২

(লোভা)

মাইয়া তো নয় সামান্য লোক যার প্রেমে আপনি কৃষ্ণ
দিয়াছেন প্রেমের তমসুক।।ধু।।
নিরানন্দে যাবে সরে হেরে মাইয়ার মুখ।।চি।।
মাইয়ার কাছে জগৎ খোরে কেহ তো তারে চিনতে নারে
মাইয়া যারে কৃপা করে যে জানে তার মনে কি সুখ।।
পাতলা লোকে মাতাল বলে এই যে বড় দুখ।।।১।।
গঙ্গাধরে চিনে তারে গঙ্গা রাখে শিরোপরে
চৈড়ে আছে মরার মত, মাইয়াকে পাতিয়া দিছে বুক
রাধারমণ ভণে মাইয়ার কাছে আছে সুখদুখ।।২।।

রা/১২, য/৩৫

পাঠান্তর : মাইয়া তো নয় > এতো নয়, নিরানন্দ… মুখ > x) x, মাইয়া … কি সুখ > মাইয়ার যারে দরকার সে জানে তার মনে কি সুখ। গঙ্গা ধরে. মড়ার মত > মাইয়া চিনাইন মহেশ্বরে মাইয়ার চরণ ধরইন শিরে আরেক মাইয়া হৃদি পরে। রাধারমণ ভণে… সুখ দুখ > গোসাঁই রাধারমণ বলে মাইয়ার কাছে থাকলে বড় সুখ।।

৮৫৩

মাইয়া সামান্য তো নয়, মাইয়াতে উৎপত্তি সৃষ্টি
মাইয়াতে উৎপত্তি প্ৰলয়।।ধু।।
অনন্তগুণ মাইয়ার কাছে সর্বশক্তিময়।।চি।।
মাইয়া জানেন মহেশ্বরে মাইয়ার চরণ ধরে শিরে।
আরেক মাইয়া হাদি পরে উলঙ্গ হইয়া রয়।
মাইয়ার কাছে বস্তু আছে সাধনেতে সিদ্ধ হয়।।১।।
মাইয়ার প্ৰেমে বান্ধা হরি দাসখতে দস্তখত করি।
সাধলেন মাইয়ার চরণ ধরি সে মাইয়া কে সামান্য কয়।
দেবদানব গন্ধৰ্ব মানব সে মাইয়ার বশে রয়।।২।।
স্ত্রীরত্নধন বহু কষ্ট যদি কারো ভাগ্যে ঘটে
মরে ভূতের বেগার খাইটে না পাইয়ে মাইয়ার পরিচয়।
রসিক জানে মাইয়ার মর্ম, রাধারমণ কয়।।৩।।

রা/১১, গো (১৮)

পাঠান্তর : মাইয়াতে … সৃষ্টি > মাইয়াতে সৃষ্টি স্থিতি; মাইয়ার কাছে … হয় > মাইয়ার কাছে শক্তি আছে সাধিলে সিদ্ধি হয়; সে মাইয়া কয় > সে সামান্য মাইয়া নয়; না পাইয়ে … পরিচয় > সুপুত্র মাইয়ার পরিচয়; মাইয়ার মর্ম -> মাইয়ার কদর।

৮৫৪

মানুষ তারে চিন রে ভাইবে দেখ তোর দেহায় মাঝে বিরাজ করে কে?
আট কুঠারী ষোল তালা মধ্যে হীরার দ্বার
দেহার মাঝে গুরু থইয়া শিষ্য হইলায় করে।
বৃন্দাবনে তিনটি কমল একটি কমল সাদা
এক কমলে কৃষ্ণচন্দ্ৰ আর কমলে রাধা
ভাইবে রাধারমণ বলে এইবার এইবার
জপিলে অজপামন্ত্র হইবে নিস্তার।

গো (২৬১)

৮৫৫

মুখে একবার হরি বল ওরে মন দিন বিফলে গেল
সাধের মানব জনম দুৰ্ল্লভ জনম আর নি
ভবে হবে বল।।
দশ ইন্দ্ৰিয় না হলে বিশ, মন আমার বাউল
কামক্রোধ রত্নধন সমৰ্পণ যে দিল
আসল সহিতে ভরা শুকনায় ডুবিল।।
ভেবে রাধারমণ বলে মন আমার বাউল
জিতে না পুরিল আশ মরিলে কি পুরিব।

য/৮৭

৮৫৬

যাবে নি রে মন সহজ ভাবের বাজারে।।ধু।।
মদনগঞ্জের বেচাকিনি করবে দরে।।চি।।
কৃষ্ণমন্ত্রে দীক্ষণ করি ছেদন কর কর্মডুরি
তিমিরান্ধ দূর করি
অপার ভেবের কান্ডারী অদ্বৈত নিতাই পার করে।।১।।
গুরুবাক্য কর বিশ্বাস শ্রদ্ধাজলে ভাবের প্রকাশ
হাওরে শুরুর দাস
গুরুশিষ্য একাত্মা হইলে যাইতে সে পারে।।২।।
সে হাটের বাজারী যারা প্ৰেম দিয়ে রস খরিদ করা
সহজের ধারা
রাধারমণ ভনে বেচাকিনি রসিক দোকানদার।।৩।।

য/৯০

৮৫৭

যাবে যদি মন সহজ ভাবের দেশে।।ধু।।
অধর মানুষ বিরাজ করে সহজ। রসে।।চি।।
হিংসা নিন্দা খুটিনাটি কৈতবাদি ময়লামাটি
ছেড়ে হও খাটি
ত্যেজে গোরল হও রে সরল রিপু, ইন্দ্ৰিয় নেও বশে।।১।।
সহজ রসে অধর ধরা সহজের ফুল জিতে মরা
হইলে হয় সারা
দেহতরী শ্ৰদ্ধা পালে অনুরাগ বাতাসে।।২।।
সহজরস আনন্দ চিন্ময় সহজ ভাবে নারী প্রেমের উদয়
সাধলে সিদ্ধ হয়
রাধারমণ বলে মন রে রইলে কার আশে।।৩।।

য/৯১

৮৫৮

যারে দেখলে নয়ন যায় ভুলে,
ভাবের মধু কে দিল ঢেলে।।ধু।।
ভাবের মানুষ রূপে চিনা যায়
ছয় জন গো দাড়ে বইয়া নয় জনে দাড় বায়,
তার উলটা কুরা, উলটা জোড়া, উলটা বাদাম যায় ঠেলে।
একখানা চারকার ষোলখানা পাতি,
দুই ধারে বসাইয়া দিছে প্ৰধান দুই খুটি
তালে মানে এক হইলে ঘুরিব চরকার সামালে।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে,
ভাব ছাড়া হইলে তারে মানুষ কেটা বলে,
ভাব ছাড়া মড়া কাষ্ঠ ভাসাই দেও নি গভীর জলে।

আ (২৪)

৮৫৯

যারে মনপ্ৰাণ দিলে ত্ৰাণ পাইতে পারি কৈ।।ধু।।
যে দেশে অধর মানুষ তার দেশের দেশী
হইলেম কৈ।।চি।।
শুনিয়াছি সাধু শাস্ত্ৰেতে দূরে নয় নিকটে আছে
তারে ধরতে গেলে না দেয় ধরা শ্ৰীগুরুর কাছে
রসিক জানে রসের মর্ম তার রসে ডুবে দেখলাম কৈ।।১।।
সে দেশে যাওয়া বিষম দায় মধ্যে মায়া জলধিপ্রায়
তার ওপারে প্রেমের সাগর দেখ লহর উঠতেছে
তার ওপারে রসের মানুষ তারা বাতাস পাইলে শীতল হই।।২।।
অষ্টাদশ ডাকুয়া পথে আর কত অনুচর আছে
যে গুরু বাক্য দিয়াছে ভয় কি তার আছে
গুরু পথের কান্ডারী শ্ৰী রাধারমণ কই।।৩।।

য/৯৪

৮৬০

রস ছাড়া রসিক মিলে না জল ছাড়া মীনের জীবের মরণ
রসিক চাইয়া ডুবল রাধার মন।
সখী গো যে ঘাটে জল ভারতে গেলাম সে ঘাটে
ইংরেজের কল
এগো কলসীর মুখে ঢাকনি দিয়ে সন্ধানে ভরিব জল।
সখী গো দলে দলে অষ্টদলে শতদলে বৃন্দাবন
এগো কুন ফুলেতে ব্ৰহ্মাবিষ্ণু প্রেমের গুরু মহাজন
এগো দস্তা পিতল একই রকম মিশে না গো কী কারণ
এগো সোনায় সোহাগা মিশে মন মিশে না কী কারণ
রসিক চাইয়া ডুবল রাধারমণ।

জ/১

৮৬১

(তাল-খেমটা, রাগ-মনোহর সাই)

রাধার প্রেমাসিন্ধু মাঝে রসরাজে পাতিয়াছে
প্ৰেমরসের খেলা।।ধু।।
সাগরের তিনটি নদী নিরবধি প্ৰেমরসে
হয় উথালা।
যাইয়ে প্ৰেমসরোবর উঠেছে লহর তিনপদ্মে
ত্রিপিনির মেলা।।১।।
সাগরের রাশি করে রূপনেহারে রসে ঠেসে
কদমতলা।
কামিনীর কামতরঙ্গে মন্দমাতঙ্গে চরণতলে
শঙ্কর ভুল।।২।।
রসের উলটা গতি অটল রতি উলটকমল
উলটা তালা।
রাধারমণের মত রঘুনাথ রসেশ্বরী
চান্দের মেলা।।৩।।

রা/২

৮৬২

(রাগ-মনোহর সাই, তাল–খেমটা)

রাধার প্রেমাসিন্ধু মাঝে রসে মাইজে কালাচান্দ নবীন গৌরা।।ধু।।
কামানুগা রসের গতি পঞ্চািরতি ভেদ করিয়ে সাধন করা।
রাগের চব্বিশ গুরু কল্পতরু বেদবিধি সিদ্ধান্ত ছাড়া।।১।।
দৈবযোগে নিশাকালে সুযোগ পাইয়ে নিসবিকায়ে নেহার কড়া।
হইয়ে মড়ার মত ধীর শান্ত কালভুজঙ্গের লেঞ্জে ধরা।।২।।
ভুজঙ্গের মাথে মণি চিন্তামণি মণির সুধা মুলে ধরা
রাধারমণ বলে সুধাপানে ক্ষুধাতৃষ্ণা বারণ করা।।৩।।

রা/১

৮৬৩

রূপ সাগরে নিত্য-কমল ফুটিয়াছে নির্মল কায়
হায়রে মন মানুষ ধরা দায়।।ধু।।
দলে উৎপত্তি মৃণাল, রূপে রসে ডগমগি অমৃত রসাল।
উলটা দলে বালামখানা, রসিকজন জানে তায়
চন্দ্ৰ সূর্যের গতি না চলে, গিরি গুহার অন্তরালে
নিবৃত্তি স্থলে।
প্ৰেম বাতাসে উতলা, চটকে দামিনী প্ৰায়
প্ৰভু রঘু বলে পথ-নিশানা, ভুবছে যদি ডুবে থাক
আখি তুইল না।
তার সাক্ষী আছে পঞ্চানন, শ্ৰী রাধারমণে গায়।

য/ ৯৮

৮৬৪

লোভে লবেনিরে নগরবাসী বিশ্বাসে আকাশের এক ফুল।।ধু।।
দেব ঋষি না পায় ধ্যানে, সে ফুল মহাদেবের অনুকুল।।চি।।
ফুলের মূল যে দেশে, থাকে শূন্য আকাশে
বিন্দুমধ্যে আছে আকাশ, আছে বিন্দু আকাশে
লোভেতে অকুর ফুলের সুদৃঢ় বিশ্বাসে যার বাড়ে মূল।
অতি শুদ্ধ সুনিৰ্মল, ফুলের নাহি টলাটল
সাধু সঙ্গে বাড়ে লতা, পাইলে শ্রবণাদি জল
ফুলের গন্ধে মকরন্দ, রামানন্দ আদি অলিকুল।
কহে শ্ৰীরাধারমণ, সজল উজ্জ্বল বরণ
ফুলের মাঝে বিরাজ করে আনন্দ মদন।

ফুলের মধুসুধাসিন্ধু গৌর নিতাই সুরধনী কুল।

য/১০০

৮৬৫

(খেমটা)

শুন মাইয়ার পরিচয়।।ধু।।
অনন্ত মাইয়া দেখ চাইয়া এক মাইয়া সৃষ্টি প্ৰলয়।। চি।।
এক মাইয়া অনন্তজীবে প্রধানা প্রকৃতি হয়
আরেক মাইয়া শিবহৃদে উলঙ্গে দাঁড়াইয়া রয়।।১।।
আরেক মাইয়া নিত্য দেশে অখণ্ডমণ্ডলে রয়।
যে মাইয়া কৃষ্ণলীলায় শতকোটি রাধা হয়।।২।।
সমঞ্জুসা সাধারণী আত্মসুখের চিন্ময় রয়
যে মাইয়া নবকৃষ্ণ ভজে সে মাইয়া তো মাইয়া নয়।।৩।।
মাধুর্যে সমর্থ মাইয়া গৌণমুখ্য পাঁচ ভেদ হয়
কৃষ্ণ সুখে দেহ রেখে আহার নিদ্রা মৈথুন ভয়।।৪।।
শুদ্ধ মাইয়ার পঞ্চশত গুণ আটচল্লিশ লক্ষণা হয়।
ঐ চরণের অভিলাষে শ্ৰী রাধারমণে কয়।।।৫।।।

র/১৫

৮৬৬

(তাল–খেমটা, মনোহর সাই)

শ্ৰী রাধার প্ৰেমবাজারে নিষবিকারে উজ্জ্বল রসের বেচাকিনি।।ধু।।
হইয়ে সিন্ধুমথন অমূল্যরতন কতই চান্দের হয় আমদানি।
এ যে সজলরসে ঢাকা দেখো মদনগঞ্জে হয়। রপ্তানি।।১।।
যে হাটের মূল মহাজন মদনমোহন তৈল সারা করে কামিনী
রসের আশি ওজন কীটের মতন কাম রেখে হইয়ে নিষ্কাষিনী।।২।।
ধীর শান্ত ধীর ললিত পায়ের খেয়ানী
অকুল গঙ্গাসাগর উঠেছে লহর শ্ৰীরাধারমণের বাণী।।৩।।

রা/৩

৮৬৭

সজনী, আমি ভাবের মরা মইলাম না,–
স’জ পিরিতি হইল না।
সহজ পিরিতি হইতে পারে–
দুইজন হইলে একমানা।
মধুর লোভে কাল ভমরে
করছে আনা-যানা।
শুকাইলে কমলার মধু
ফিরে ভমর আসবে না।।
আর ভাইবে রাধারমণ বলে —
মনের ওই বাসনা।
সহজ পিরিত সিংহের দুধ
মাটির বাসনে টিকে না।

শ্ৰী/১৩৯

৮৬৮

সজনী পিরিত কি ধন চিনিলায় না, পাতল স্বভাব গেল না।
রূপ দেখিয়া নয়ন পাগল গুণের পাগল ময়না,
হৃদয় পিঞ্জিরার পাখি সয়াল ঘুরে বেড়ায় দেখ না।
পিরিতি অমূল্য ধূঢ় যত্ন শূন্য থাকে না,
কাল নদীতে সাঁতার দিলে সাধনের বল থাকে না।
একটা নদীর তিনটি নালা বাইতে পাইলাম না,
সেই নদীতে ডুব দিলে তন্ত্রমন্ত্র লাগে না,
ভাবিয়া রাধারমণ বলে সাধন ভজন হইল না,
পড়িয়া রইলাম ঘুমের ঘোরে গুরু কী ধন চিনলাম না।

আহো/১০ (৫), শ্রী/২৩৭, হা (৩১), গো (২৩), ঐ (৫০)

পাঠান্তর : হা : তিনটি নালা বাইতে পাইলাম না > তিনটি নাল যাইতে পারলাম না।
গো : গুণের পাগল ময়না > গুণের পাগল অইলায় না, মনেতে মন পাগল বনে পাগল, ময়না; সয়াল ঘুরে বেড়ায় দেখ না > সয়ালে বেড়ায় দেখা না; যত্ন শূন্য > রতন শূন্যে; কাল নদী > কাম নদীতে; তিনটি নালা… পাইলাম না তিন ধারা চিনতে পারলাম না; ডুব দিলে চিনতে পারলে; পড়িয়া রইলাম ঘুমের ঘোরে > বেভুলেত দিন গয়াইলাম।

৮৬৯

সহজ সাধন রে মন গুরু ভজনা রইল না।।ধু।।
গুরু কৃষ্ণ রূপে রে মন শাস্ত্ৰে ঠিকানা।। চি।।
মন জন্ম গুরু কল্পতরু, দীক্ষা শিক্ষা গুরু
গুরু কল্পতরুরে মন, তার কি নাম না।
গুরু নিঃশ্বাসেতে মুক্ত রে মন ভব বন্দনা।
মন শ্ৰীরাধারমণের গাথা, শুনিয়ে ভগবদ গীতা
সাধু সঙ্গে কৃষ্ণ রে মন ভক্তি-সাধনা।

য/১২৯

৮৭০

তাল-খেমটা

হরি বল রে বদনে, শ্রবণে শুন রে কৃষ্ণনাম
ত্বরা পুর্ণ হবে মনস্কাম।।ধু।।
মন রে হরিনাম প্রভুর মর্ম,
ধন্য কলিকালে ছয় গোস্বামীর ধর্ম
তারা হইয়ে জীতে মরা সাধিয়া গেছে অধর ধরা,
রসিকের করণ বিষয় জীবন ডুইবে থাকা অভিরাম।।
মন রে নামের মূল্য চৈতন্য দেশে
শ্রবণাদি চৌষট্ট্যিাঙ্গ ভক্তিরসে
বাড়ে ভক্তি কল্পলতা
অনুরাগ ভালোভাবে পাতা
ভক্তি লতায় প্রেমের কলি ফুল ফুটে তার অবিরাম।
অজপাতে রেল বসাইয়ে
নামের গাড়ি নিষ্ঠা চাকে যোগান দিয়ে
চালায় নিঃশ্বাসের ইঞ্জিন প্ৰাপের কয়লায় কামের আগুন
শ্ৰীরাধারমণে বলে অতি জলে সাঙ্গ হরে কৃষ্ণ নাম।

যা/১০৩, তী/১২

পাঠান্তুর : হরি বল রে প্রভুর মর্ম -> শ্রবণে শুন রে কৃষ্ণনাম/ ও তোর পূর্ণ হবে মনস্কাম/ হরি বল রে বদনে হরির নামে তিন প্রভুর মর্ম অধর ধরা > অধম ধরা, রসিকের… ডুইবে বসিয়ে ধরম বিষম করণ বসে উইঠে; অনুরাগ >.পাতা অনুরাগ ডালভারের পাতা; চালায়…ইঞ্জিন > বিশ্বাসের ইঞ্জিন; পাপের > কামের; অতজলে সাঙ্গ > শতদল শব্দ।

৮৭১

হরি বল রে সুজন নাইয়া, হরি বলা হরি বল।।
কাঁচা ডালে ধরছে মধু, শুকনা ডালে ফল।
আলগা থাকি পাড়িয়া আনে যার আছে আকল।।
আগাপাছা ছয়জন মাঝি মধ্যে নিত্যানন্দ
মস্তুলেতে শ্ৰীচৈতন্য ডেঙ্কা মারিয়া চল।।
বিষম ডাকাতির ঘাটে করছি চলাচল
ঘুমাইও না চেতন থাকিও ঘুমাইলে বেকল।।
ভাইবে রাধারমণ বলে শুন রে অজ্ঞান মন
মিছা আইলাম এ সংসারে মায়াতে পাগল।

ক ম /১

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *