৫ঝ. গীতিসংগ্রহ – বাসকসজ্জা

গীতিসংগ্রহ  – বাসকসজ্জা

৫৮৪
আইলায় নারে শ্যাম রসময় রসের বিনোদিয়া
অভাগিনী চাইয়া রইছে পন্থ নিরখিয়া।।
চাইতে চাইতে কমলিনীর দিনত গেল গইয়া
আগে যদি জানিতাম যাইবায় রে ছাড়িয়া।।
সারা নিশি পোষাইতাম হৃদয় কমলে লইয়া
গাছের পাকিয়া রইল রে বন্ধু খাইলায় না আসিয়া।।
পানের বিড়ি বানাইয়াছি খাইলায় না আসিয়া
বন্ধু তুমি না খাইলেরে কে খাইবে আসিয়া।।
ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
পাইলে বন্ধু ধরমু গলে না দিমু ছাড়িয়া।

ক.মি/১১

৫৮৫

আইলে বসনচুরা মনোহরা পায়ে লাগাব বেড়ি
তারে হাজির করব কিশোরীর কাছারী।।
ফাটকেতে আটক রাখব মনের মতো শাস্তি দিব
প্ৰেম শিকলে তারে করিব গ্রেফতারি
ভাইবে রাধারমণ বলে, কি করব তার লোহার শিকলে
আমি কুলবধূর কুল রাখিতে নারি।।

নমি/৩

৫৮৬

আইলো নাগো প্ৰাণবন্ধু কালিয়া
মুই অভাগী কলঙ্কের ভাগী হইনু কার লাগিয়া।।
গাঁথিয়া বনফুলের মালা মালা হইল দ্বিগুণ জ্বালা
সয় না প্ৰাণে মালা দিতাম কার গলে তুলিয়া।।
বহু আশা ছিল মনে মিশিতাম প্ৰাণবন্ধুর সনে
মুই অভাগী প্ৰাণে মরি মদন জ্বালায় জ্বলিয়া।
ভাইবে রাধারমণ বলে প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে
কুঞ্জবিহারী বংশীধারী তোরা দে আনিয়া।।

গো (২৮৯), হা (১৯), তী/৩০

৫৮৭

আমার জীবনের সাধ নাই গো সখী জীবনের সাধ নাই
দেহের মাঝে যে যন্ত্রণা কারে বা দেখাই।।
নিতি নিতি মালা গাঁথি জলেতে ভাসাই
অতি সাধের চুয়া চন্দন কার অঙ্গে লাগাই।।
একা ঘরে বইসে আমি রজনী পোষাই–
আজ আসিব কাল আসব বইলে রজনী পোষাই।।
ভাইবে রাধারমণ বলে কমলিনী রাই
অতি সাধের যুগলচরণ আমি অধমে যে পাই।।

সুখ / ১৮

৫৮৮

আমারে বন্ধুয়ার মনে নাই রাই গো
আমারে বন্ধুয়ার মনে নাই।।ধু।।
জাতি যুতি ফুল মালতী বিনা সুতে মালা গাথি গো
আইল না শ্যাম কুঞ্জে আমার কাল গলে পরাই
চুয়া-চন্দন ফুলের অঞ্জন কটরায় ভরি রাখলে গো
দেখলে চন্দন উঠলে কান্দন আমি কার অঙ্গে ছিটাই।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে শুন গো ধনি রাই
পাইলে শ্যামে ধরমু গলে ছাড়াছাড়ি নাই।।

গো (২২০)

৫৮৯

আর বন্ধু নি আমার–
রে নিদায়-পাষাণ বন্ধরে।।
তুমি যদি হাওরে আমার,
সত্য কথা কও সারাসার।
ওয়রে, তোমার লাগি, কতই কইলাম–আর রে।।
বন্ধু যদি যাও রে ছাড়ি–
গলে দিমু কাটালি ছুরি।
ওয়রে তোমার লাগি–
ত্যজিতাম পরান রে।।
আর চুয়া চন্দন থইছি আমি
কটরায়-কটয়ায় ভরি
ওরে, দেখলে চন্দন উঠে কান্দন—
কার অঙ্গে ছিটাই রে।।
আর কেওয়া পুষ্প, ফুল মালতী–
আমি বিনা সুতায় মালা গাঁথি।
ওয়রে দেখলা মালা উঠে জ্বালা
কার গলে পরই রে।।
আর ভাইবে রাধারমণ বলে,
প্ৰেমানলে অঙ্গ জ্বলে :
ও তার নয়ন জলে বক্ষ যায়–ভাসিয়া রে

শ্রী/৩৪৯

৫৯০

আসবে শ্যাম কালিয়া কুঞ্জ সাজাও গিয়া
এগো কেন গো রাই কানিতে অমাছ পাগলিনী হইহয়া।
জাতিযুথী ফুলমালতী আন গো তুলিয়া
এগো মনোসাধে সাজাব কুঞ্জ সব সখী মিলিয়া।।
আতর গোলাপ চুয়াচন্দন কটরায় ভরিয়া
এগো আমার বন্ধু আইলে দিও ছিটাইয়া ছিটাইয়া।।
লং এলাচি জায়ফল জাতি বাটতে সাজাইয়া।
আমার বন্ধু আইলে দিও খিলি মুখেতে তুলিয়া।।
ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
এগো আসবে তোমার প্রাণবন্ধ বাঁশিটি বাজাইয়া।।
শ্রীশ/১, হা/২২ (৯), গো (২৭৬)

৫৯১

এগো বৃষভানুর মাইয়া কৃষ্ণ সাজায় সব সখীগণ লইয়া।
ফুল বিছানা সাজন করি ফুলের বালিশ ফুল মশারি
তার উপরে চান্দুয়া টানাইয়া।।
দারচিনি মাখনছানা লুচি পুরী বরফি ছানা
সাজাই রাখলাম প্ৰাণবন্ধের লাগিয়া
ভাইবে রাধারমণ বলে শুন গো তোমরা সকলে
আমি চাইয়া রইলাম পন্থ নিরাখিয়া।

শা/৬

৫৯২

কী হইল কী হইল সখী গো সখী কি হইল যন্ত্রণা।।ধু।।
চিত্তে অনল জ্বালাইয়া দিল শ্যাম কালিয়া সোনা।।চি।।
এগো পুরাইয়া লয় মনের সাধ আমার বিড়ম্বনা
সব সখীগণ মিলে তারা গো তারা করে কুমন্ত্রনা।।১।।
এগো তুষের অনলের মত জ্বলে ঘইয়া ঘইয়া
কেওয়া কেতকী ফুলে গো সাজাইয়া বিছানা।।২।।
এগো আসিব তোমার প্রাণবন্ধ শ্যামকালিয়া সোনা
ভাইবে রাধারমণ বলে গো সখী ভাইবো না ভাইবো না।।৩।।

সুখ / ২৫

৫৯৩

কেন কুঞ্জে না আসিল কঠিন শ্যামরায়।।ধু।।
সখী গো তোরা সব সখীগণ যা লো বনে বনে
বৃন্দাবনে যালো বৃন্দে বন্ধু অন্বেষণায়।।চি।।
চেয়ে দেখা প্ৰাণসই গো শশী অস্ত যায়
বন্ধু বিনে প্ৰাণ আমার রাখা দায়।।১।।
সখীগো শুন শুন প্ৰাণ সই গো মোর নিবেদন
দারুণ বিরহে প্ৰাণ করে উচাটন।।২।।
শ্যামনাম লয়ে প্ৰাণ উড়ে যেতে চায়
মনোচোরা মদনমোহন রয়েছে যথায়।।৩।।
সখী গো চেয়ে দেখো প্ৰাণ সই গো নিশি গাইয়া যায়
আর কি আসিবে কুঞ্জে নিঠুর শ্যামরায়।।৪।।
অতি সাধের বকুলমালা বাসি হইয়া যায়
আসিল না প্ৰাণেশ্বর করি কি উপায়।।৫।।
দেখ গো কান্দিয়া কান্দিয়া রাই কুঞ্জের বাহির হয়
কুঞ্জবনের তরুলতায় জিজ্ঞাসা করয়।।৬।।
রাধারমণ বলে রাই কিবা পাগলিনী হয়
সখীরা ধরিয়া রেখে রাধাকে বুঝায়।।৭।।

সুহা/১১, রা/১০২

৫৯৪

তোরা দোষিও না গো আমারে, প্রেম করা কি জানে রাখালে
ও প্ৰাণ বৃন্দে জ্বালাইয়া ঘৃতের বাতি, আর সাজাই ফুল মালতী
কুঞ্জ সাজাই অতি যতনে, আমার ফুলের শয্যা বাসি হইল গো
বৃন্দে, বন্ধ আইল না নিশি শেষে
জাতি জুতি ফুল মালতী, আমি বিনা সুতে মালা গাঁথি
গাঁথি মালা অতি যতনে, আমার সেই মালা হইল জ্বালা
গো বৃন্দে, মালা দিলাম না বন্ধের গলে।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে, আমার মনের দুঃখ রইল মনে গো
এ তুষের আনলের মত জল দিলে দ্বিগুণ জ্বলে।।

য/১৫৩

৫৯৫

তোরা শুন গো শ্রবণে ধীর সমীরে বনে গো
বাজে বাঁশি সুমধুর স্বরে।।ধু।।
সকল সঙ্গিনী মিলি বনফুল তুলি গো
সাজাও তো নিকুঞ্জ কুটিরে।।
শরৎ পূর্ণিমা নিশি অতি সুশীতল গো
মনোলোভা হেরি শশধরে।।
প্ৰফুল্লিত মল্লিকাদি সৌরভ ছড়াইল গো
গন্ধে আমোদিত করে।।
রসে অভিলাষ হরি নিশিতে গহনে গো
ঘন ঘন মোহন বংশীস্বরে।।
সুচিত্র পালঙ্কোপরি বিচিত্র কুসুমে গো
করা শয্যা শ্যাম মনোহরে।।
কুসুমে রচিয়া শয্যা পুষ্পের বালিশ গো
শতদল দিয়া চারিধারে
মাঝে মাঝে কনকচাঁপা চামেলি গো
কহে রাধারমণ কাতরে।।

য/৫৫

৫৯৬

দুখ কইয়ো গো,
চান্দ-মন্দিরে নিরলে নিয়া।।
আর তাপিনী লো,
তাপে তাপে জনম গেল গইয়া।।
ওরে, পাইলে কইয়ো–
চিরদিন মরিামু ঝুরিয়া।।
আর লং–এলাচি জায়ফল-জত্রী
বাটায় ভরিয়া–
ওয়রে, বন্ধু আইলে দিয়ো পান
আদর করিয়া।।
আর চাতক বইলা মেঘের আশে
চরণ—পানে চাইয়া–
গো চান্দ মন্দিরে নিরলে নিয়া।।
আর ভাইবে রাধারমণ বলে,
শুনো রে কালিয়া :

পরা কি আপন হইব–
পিরিতের লাগিয়া।

শ্রী/৩৫০

৫৯৭

দূতী তারে কর মানা শ্যাম যে আমার কুঞ্জে আয় না।।ধু।।
নানা জাতি ফুল তুলি সাজাইয়াছি ফুল বিছানা
আসবে বলে প্ৰাণবন্ধু সারা রাইতে নিদ্ৰা আয় না।।
নানা জাতি ফুল ফুইটিয়াছে ভ্ৰমর আইসে মধু খায় না
কত ভ্ৰমর অইল গেল রাইরে কমলে মধু চায় না।।
ভাইবে রাধারমণ বলে রাইর বিচ্ছেদে প্ৰাণ বাঁচে না
আইবি গো তোর চিকন কালা পুরাবে মনের বাসনা।।

সুখ/৩২

৫৯৮

প্ৰাণ সাইগো আমি রইলাম কার আশায়।
পাষণে বান্ধিয়াছে হিয়া নিদারুণ কালায়।।
মনপবন বহে যায় সুখের নিশি পুষাইয়া যায়।
কৃষ্ণচূড়া ফুলের মালা বাসি হইয়া যায়।
কুহুকুহু রবে কোকিলায় গায়
ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
ধৈর্য ধর কমলিনী আসবে শ্যামকালিয়া।

হা (১৪)

৫৯৯

প্ৰাণ সই রজনী পুষাইয়া গেল প্ৰাণবন্ধু কই।।ধু।।
প্ৰাণবন্ধ প্ৰাণবন্ধু বলে ক্ষণে উঠি ক্ষণে বই।।চি।
সাজাইয়া ফুলের শয্যা যত্ন করি থই
না আসিল প্ৰাণকৰ্ম্ম কোথায় রইল সই।।১।।
শুইলে স্বপনে দেখি রসের কথা কই
জাগিয়া উঠিয়া দেখি বন্ধু কই আর আমি কই।।২।।
ভাইবে রাধারমণ বলে শুনলো সই
এগো অগ্নিকুণ্ড সাজন করে অনলে পুড়াই।।৩।।

রা/১৪৮

৬০০

বল না বল না সখী কি করি উপায় গো
নিশি গত প্ৰাণনাথ রহিল কোথায় গো।।
জ্বলতেছে শরীর আমার মদন জ্বালায় গো
কার কুঞ্জে রইয়াছে নিলয় না পাই গো।।
সাজাইয়াছি ফুলবিছানা আসিবার আশায়
সেই আশা নৈরাশা হইল ভাবে বুঝা যায় গো।
গাঁথিয়া বনফুলের মালা আসিবার আশায়
সেই আশা ভুজঙ্গ হইয়া দংশিল আমায়।
সৰ্পের বিষ ঝারলে নামে প্রেমের বিষ উজায় গো
এগো বন্ধু বিনে এ সংসারে আমার ঔষধ এ সংসারে নাই গো।।

সর্ব/৩

৬০১

বাঁচিবার সাধ নাই গো সখী বাঁচিবার সাধ নাই
দেহার মাঝে কি যন্ত্রণা করে বা দেখাই।।ধু।।
গাঁথিয়া বনফুলের মালা নিশিটি পোহাই
প্ৰাণবন্ধু আইলো না গো কার গলে পাইরাই।
একা বসি বাসরেতে নিশিটি পোহাই
আজ আসবে কাল আসবে বলে মনরে বুঝাই
আতর গোলাব চুয়াচিন্দন কটরায় সাজাই
আইল না মোর প্রাণবন্ধু কার অঙ্গে ছিটাই।
ভাবিয়া রাধারমণ বলে কমলিনী রাই
অন্তিমকালে শ্ৰীচরণে পাই যেন ঠাই।

গো (২৩০)

৬০২

বাসর শয্যা সাজাই কার আশায়
কই রইল মোর বন্ধু শ্যামরায়
ওগো বিচ্ছেদ আগুন জ্বলছে হিয়ায়
আতর গোলাপ কস্তুরী আনি
পুষ্পশয্যা করি সাজাইবার আশায়
ফুলের শয্যা বাসি আইল না গো কালশশী
আমার বাসি শয্যা ভাসাও যমুনায়
প্ৰাণ যাবে মোর নিশিগতে তাইতো তোমরা আমার সাথে
অধীন রমণ বলে রাইখ রাঙা পায়।

মি/১৬

৬০৩

বাহির হইয়া শুন সজনী, ঐ করে কোকিলায় ধ্বনি
ডালে বসে কোকিলা পাখী, কুহু কুহু রব শুনি
আমার বন্ধু না আইল কুঞ্জে পোহাইল রজনী
গাঁথিয়া বনফুলের মালা মালা হইল দ্বিগুণ জ্বালা
আমার সাধ ছিল ফুলে ফুলে সাজাইতাম রসিকমণি।
ভাইবে রাধারমণ বলে আসবে বন্ধু নিশা কালে
আমার প্রাণবন্ধু আসিলে কুঞ্জে আমি হইতাম যৈবনদানী।

ক ময়ী/২

৬০৪

যাও গো দূতী পুষ্পবনে পুষ্প তুলো গিয়া
আমি সাজাইতাম বাসর শয্যা প্ৰাণবন্ধুর লাগিয়া।।
কাচা কাঞ্চন পুষ্প আন গো তুলিয়া
আন টগর মালী সন্ধ্যামালী বকফুল ভরিয়া।।
বিকশিত ফুলের মধু হইগেল তিতা
কোন প্ৰাণে গেলা বন্ধু পন্থহারা হইয়া।।
ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
অবশ্য আসিবা বন্ধু ফুলের মধু খাইয়া।

সর্ব/৫, নৃ/৬

পাঠান্তর : যাওগো …গিয়া > যাওরে ভ্রমর পুষ্প বনে পুষ্প আন গিয়া; কাচ কাঞ্চন……. ভরিয়া > অপরাজিতা, টগর মালি, বকফুল তুলিয়া/ওগো সঞ্জাইতাম বাসরশয্যা সব সখীগণ লইয়া, গাথিতাম ফুলের মালা প্রাণবন্ধুর লাগিয়া; বিকশিত… তিতা > সন্ধ্যামালী ফুলের মালা বাসি হইয়া গেলো; কোন প্ৰাণে ..xx..হারা হইয়া > কোন পথে গেলা ভ্রমর পথ ছারাইয়া; মনেতে ভাবিয়া > থাক পুষ্প লইয়া, অবশ্য… খাইয়া > আসিবা তোমার বন্ধু বাশারী বাজাইয়া।

৬০৫

সখী রাত্র হইল ভোর
আইনা না মোর প্রাণ প্রিয়া নিদয়া-নিষ্ঠুর।।ধু।।
ঘুরে ঘুরে পরে পরে পদ করিলাম খুর
পন্থপানে চাইতে চাইতে আবি কইলাম ঘোর
এক সখীর হন্তে ধরি আর সখী বলে
ঘোর অন্ধকার রাত্রি পদ নাহি চলে।
গাথিয়া মালতীর মালা আহ্বাদে প্ৰতুল
আইল না প্ৰাণবন্ধু নিদয়া নিষ্ঠুর।
সর চিনি মাখন ছানা আতর মধুর
কার লাগি আনিলাম করিয়া প্রচুর।
কার লাগি আনিলাম সই গো অইয়া ঘরের চোর
ভাইবে রাধারমণ বলে বন্ধু রৈছেন ব্ৰজপুর।।

গো (১৩৯)

৬০৬

সজনী—সই গো,
আমি রইলাম কার আশায় :
চুয়া-চন্দন–ফুলের মালা–
আমি থাইছি কটরায়।।
সজনী—সই গো।।
গাঁথিয়া বনফুলের মালা
আমি দিতাম কার গলায় :
একেলা মন্দিরে ঝুরি–
না আইল শ্যামরায়।
সজনী—সই গো।।
নিশি অলন শেষকালে বন্ধু
ডাকছে কোকিলায় :
দারুণ কোকিলার সুরে–
আমার বন্ধে আমায় ছাড়িয়া যায়
সজনী–সেই গো।।
ভাইবে রাধারমণ বলে,
আমি ঠেকিয়াছি প্রেমদায় :
দারুণ আঙ্খির জলে–
আমার ঝিল-মিল করিয়া যায়
সজনী–সই গো।

শ্রী/২৫২

৬০৭

সুচিত্রে আমি কার লাগি গাঁথিলাম গো
বিনাসুতে বিচিত্র মালা।
মালা সে কি লো আর দ্বিগুণ জ্বলে
কৃষ্ণপ্ৰেম বিচ্ছেদের মালা পরাইব প্ৰাণবন্ধুর গলে।
গাঁথিয়াছি মালতীর মালা বকুলে।
সেই মালা ভুজঙ্গ হইয়া দংশিল মুই অবলে
চুয়া চন্দন গো ঘষে রাখিয়াছি কটরা ভরে
সব সখী মিইল্যা।
সেই চন্দন হইল গো বাসি আইল না গো চিকন কালা
ভাইবে রাধারমণ বলে আইল না গো প্ৰাণবন্ধু শুন গো সকলে
এগো আসবে আমার প্রাণবন্ধু রাধার মরণ হইলে।

সুহা/১

৬০৮

সোনা-বন্ধু কালিয়া,
আইল না শ্যাম কি দোইষ জানিয়া।
বড়ো লইজ্জা পাইলাম–নিকুঞ্জে আসিয়া।।
আর মনে বড়ো আশা করি–
আইল না। শ্যাম–বংশীধারী।
কতো চুয়া-চন্দন কটরায় ভরিয়া।।
আর গাঁথিয়া বন-ফুলের মালা
মালা হইল দ্বিগুণ জ্বালা।
ও মালা নেও, নেও,
দেও মালা জলেতে ভাসাইয়া।।
আর ভাইবে রাধারমণ বলে,
প্ৰেমানলে অঙ্গে জ্বলে :
ও তার নয়নজলে
বক্ষ যায় ভাসিয়া।।

শ্রী/৩৮১

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *