3 of 4

৪.০৭ আবু কাশেমের অঙ্গবাস

এক সময়ে কাইরো শহরে আবুকাশেম নামে এক অর্থগৃধ্ব উনুনী বাস করতো। আল্লাহ তাকে অনেক দিয়েছিলেন। বিষয় সম্পত্তি পয়সা কড়ির প্রাচুর্য ছিলো যথেষ্ট। তা সত্ত্বেও লোকটির ধন-লিপ্সা আর কমে না। পয়সা বাঁচাবার সে কি প্রাণান্তকর প্রয়াস ছিলো তার। লোকে তাকে চশমখোর হাড়কঞ্জুস বলতো।

ওর সাজ-পোশাক দেখে পথের দীনতম ভিখিরি ছাড়া আর কিছুই মনে হতো না। আলখাল্লার মতো শত সহস্র তালিতাপ্তি দেওয়া একখানাই চোগাচাপকান বারোমাস তার অঙ্গে শোভা পেত। ঐ মহামূল্য অঙ্গবাস ছাড়া আবু কাশেমের আলাদা কোনও অস্তিত্ব কেউ কল্পনা করতে পারতো না। অনেকে তামাশা করে বলতো, আবুকাশেম মারা গেলে পর ঐ পোশাকটাকে যাদুঘরে রেখে দেওযা হবে ভবিষ্যৎ বংশধরদের দেখার জন্য। কাশেমের মাথার তেল-চিটচিটে শতছিন্ন পাগড়ীটা ছিলো আরও বাহারী। এমন তার সুবাস আতঙ্কে কেউ তার ধারে কাছে ঘেঁষতো না। সেই খুশবু একবার আঘ্রাণ করলে অন্নপ্রাশনের আহার্য আবার প্রত্যক্ষ হয়ে যেত। কাশেমের চোগাচাপকান আর পাগড়ীর প্রকৃত বর্ণ কিরূপ ছিলো তা নিয়ে বহু চিন্তাবিদের বহুবিধ সারগর্ভ গবেষণা ছিলো। কারণ সৃষ্টির আগে থেকে, ঐ বেশবাস ওর অঙ্গে ওঠার পর আর কখনও জল স্পর্শ করেনি। সুতরাং কালে আর তেলে (জলে নয় কিন্তু) প্রকৃত বর্ণ কবে যে বিলীন হয়ে গেছে আজ আর তা কেউ স্মরণ করতে পারে না।

জুতোর অবস্থা ছিলো আরও মজাদার। এমন আজব জুতো কোনও কালে কেউ দেখেনি। সেলাই সেলাইএ জর্জরিত তার সারা অঙ্গ। আর সূচ বেঁধানোের কোনও জায়গা নাই। সবচেয়ে দেখার মতো ছিলো জুতোর চারপাশের দাঁত বের করা কাটাগুলো। ছোট বড় নানারকম কাটায় কণ্টকিত ছিলো। হঠাৎ কেউ দেখলে আঁৎকে উঠবে। কারণ কাঁটাগুলো মেসিন গানের মতো চারপাশে মোতায়েন করা হয়েছে বলে প্রতিভাত হবে। ভালো করে লক্ষ্য করলে অবাক হয়ে ভাবতে হবে, যে অসাধারণ দক্ষতায় রিপু-কর্ম করা হয়েছে, এবং তার ফলে জুতোর আসল চেহারা যেভাবে পরিবর্তিত হয়ে এক অভিনব নতুন আকৃতি লাভ করেছে কোনও সুনিপুণ মুচি এক যুগ কসরত করেও হুবহু ঐ রকম আর এক জোড়া বানিয়ে দিতে পারবে না। মোট কথা ওর জুতো জোড়াটার হাল নাল, কাটা সেলাই, ও জোড়াতালির এক জগঝম্প সংস্করণ বলা চলে। ওজনে এবং আয়তনে তার জুড়ি পাওয়া যাবে না। ভাবা যায় না, ঐ রকম আধমণি ওজনের একহাত লম্বা একজোড়া জুতো পায়ে নিয়ে সে অবাধে চলা-ফেরা করতে কী ভাবে! কিন্তু যারা কাশেমকে দেখেছে তারা ওর কেরামতি দেখে তারিফ না করে পারেনি। কাশেম জুতো পরে সারা শহর বার দশেক চষে ফেলতো রোজ। কোনও অসুবিধেই হতো না,ওর। কাশেমের জুতো জোড়াটা তকালে কাইরোর কিংবদন্তী হয়ে উঠেছিলো। যদি কারও স্বভাব-চরিত্রকে জাঁদরেল বলে বোঝাতে চাইতো, লোকে বলতো; মানুষটা যেন কাশেমের চপ্পলের মতো বাজখাই। যদি কোনও মাদ্রাসার মৌলভীর গোমড়া মুখের বর্ণনা দিতে যেত, বলতো, লোকটার মুখের দিকে তাকানো যায় না—যেন কাশেমের চপ্পল। কুলিরা একটু ভারি মোট বইতে বইতে ক্লান্ত হয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলতো, বাবা, এতো মোট না, কাশেমের চপ্পল। যদি কোনও লোক অভ্যাস দোষে কখনও নেমন্তন্ন বাড়িতে একটু বেশি মাত্রায় ভোজন করে পেটটা উঁই করতো, যারা পেট রোগা স্বল্পহারী তারা ঈর্ষাকাতর হয়ে চুকলি কাটতো, দেখ দেখ, লোকটা লোভে পরে খেয়ে পেটটা কেমন কাশেমের চপ্পলের মতো জয়ঢাক করে ফেলেছে। সত্যিকথা বলতে কি, সাধারণ মানুষ কারণে অকারণে কাশেমের জুতোর প্রসঙ্গ টেনে আনতো।

ব্যবসায় একদিন কাশেমের মোটামুটি মালকড়ি নাফা হলো। কাশেম ভাবলো, আজ সে পয়সা খরচা করে হামামে গোসল করে ভালোমন্দ কিছু একটা খানা-পিনা করবে। কাশেমের কুষ্ঠিতে এ ধরনের কথা লেখা নাই। কিন্তু কেন জানি না, বহুকাল পরে তার শখ হলো।

দোকানপাট বন্ধ করে জুতো জোড়া কাঁধে ঝুলিয়ে সে হামামের দিকে ছুটলো। আজকাল সব সময় জুতো জোড়া সে পায়ে না দিয়ে বেশির ভাগ সময় কাঁধে ঝুলিয়েই চলা-ফেরা করতো। ওর ধারণা এতে পায়ে চোট লাগলেও জুতো জোড়াটায় তাপ্পি কম লাগাতে হবে।

হামামে পৌঁছে দোরগড়ায় জুতোটাকে সাজিয়ে রেখে সে ভিতরে ঢুকলো গোসল করতে। বছরখানেক জল স্পর্শ করেনি সে। সুতরাং কয়েক পর্দা ময়লা চিটেগুড়ের মতো লেপটে গিয়েছে সারা অঙ্গে। ডলাই মলাইকাররা মোটা বুরুশ দিয়ে ঘষে ঘষেও তা আর সাফ করতে পারে না। প্রায় ঘন্টা ছয়েক ধরে কায়দা কসরত করে কোনও রকমে তারা খানিকটা সাফ করে গোসল করিয়ে ছেড়ে দিলো। স্নান সমাপন করে কাশেম বাইরে এসে দেখে, তার জুতো জোড়াটা উধাও। কে বা কারা চুরি করে পালিয়েছে। কিন্তু চোর ব্যাটা রসিক আছে। কাশেমের জুতোর দিকে নজর অনেকেরই ছিলো, কাশেম জানতো। দাঁও পেলে যে তারা কসুর করবে না, তাও সে আশঙ্কা করেছিলো। তবে তার জুতোর বদলে অন্য এক জোড়া বাহারী নতুন জুতো রেখে যাবে তারা, ভাবতে পারেনি। কাশেম দেখলো, তার জোড়াটা নাই, কিন্তু তার জায়গায় হালকা হলুদ রঙের সুন্দর একজোড়া চপ্পল তারা রেখে গেছে ওর জন্য। কাশেম অবলীলাক্রমে ঐ জুতোয় পা গলিয়ে দেখলো বেশ মাপে মাপে হয়ে গেলো। ভেবে অবাক হলো, চোরটা কখন কীভাবে তার পায়ের মাপটাও চুরি করে নিয়েছিলো। তা না হলে এমন ঠিক মাপের জুতো সে কিনবে কি করে। তার জন্য? কাশেম ভাবে, যাক ভালোই হলো। জুতোটা একটু পুরোনো হয়ে গিয়েছিলো। অনেক দিন ধরেই পালটাবো পালটাবো করছিলাম। তা চোর ব্যাটাই তার ব্যবস্থা করে দিয়ে গেলো।

কাশেম আর দাঁড়ালো না। হারেম থেকে বেরিয়ে হন হন করে বাড়ির পথে রওনা হলো।

কিন্তু আসল ব্যাপারটা একটু অন্য রকম। কাশেম বেরুবার কিছুক্ষণ আগে কাজী সাহেব হারেমে ঢুকেছেন গোসল করতে। কাশেম যে চপ্পল পরে মনের আনন্দে নাচতে নাচতে বেরিয়ে গেলো আসলে তা ঐ কাজী সাহেবেরই জুতো।

তা হলে কাশেমের সেই মার্কামারা জুতোটা গেলো কোথায়? দ্বাররক্ষী অনেকক্ষণ ধরে কাশেমের বদখদ চপ্পলটাকে সদর দরজার সামনে পড়ে থাকতে দেখে ছড়ির ডগা দিয়ে ঠেলতে ঠেলতে দরজার পাল্লার আড়াল করে রেখে দিয়েছিলো। কারণ, খদ্দেররা ঐ ধরনের একটা নোংরা বীভৎস বস্তু দেখে নাক সিটকে পাশ কাটিয়ে ভিতরে প্রবেশ করছিলো। দারোয়ানের মনে হয়েছিলো এমন অবাঞ্ছিত জিনিস সদর দরজায় শোভা পেতে থাকলে হামামের সম্ভ্রান্ত খদ্দেররা সব পালিয়ে যেতে পারে। ভেবেছিলো, কাশেম যখন গোসল সেরে বাইরে বেরুবে তখন সে বের করে দেবে তাকে। কিন্তু ঘটনাচক্রে তা আর ঘটেনি। কাশেমের স্নান করতে সময় লেগেছে অনেক। এর মধ্যে ফটকের দারোয়ান বদল হওয়ার সময় হয়েছে। আগের দারোয়ান বাড়ি চলে গেছে। দরজায় দাঁড়িয়েছে নতুন লোক। এবং আগের দারোয়ান ঘরে ফেরার আকুলতায় কাশেমের জুতোর কথাটা বেমালুম ভুলে গেছে।

বিপত্তি বাধলো এখানেই।

কাজী সাহেব গোসল সেরে হামাম থেকে বেরিয়ে দেখেন তার চপ্পল নাই। সঙ্গে সঙ্গে পেয়াদা বরকন্দাজরা তটস্থ হয়ে খোজাখুঁজি শুরু করলো। এবং অল্পক্ষণের মধ্যে কাশেমের সেই জগৎ বিখ্যাত জাঁদরেল জুতো জোড়া দরজার আড়াল থেকে টেনে বের করলো তারা। সকলেই সঙ্গে সঙ্গে চিনতে পারলো সেটা কাশেমের সম্পত্তি।

কাজীর হুকুমে তখুনি কাশেমকে পাকড়াও করে আনা হলো তার সামনে। জুতো জোড়া কাঁধে ঝুলিয়ে কোরবানীর খাসীর মতো এসে দাঁড়ালো সে। কাজী সাহেব জুতো জোড়া কেড়ে নিয়ে কাশেমকে ফটকে পাঠালো। সেখানে অবশ্য কাশেম কয়েদখানার সেপাইদের হাতে আদর অভ্যর্থনার কোনও ত্রুটি পায়নি।

সারা দেহ ব্যথায় জরজর। দিনকয়েক ফাটক খেটে ছাড়া পাওয়ার পর, ঘরে ফিরে এসে ক্ষোভে দুঃখে সব আগে সে তার ঐতিহাসিক অপয়া জুতো জোড়াটা নীলের জলে বিসর্জন দিয়ে এলো।

এর কয়েকদিন পরে। এক জেলে নীলে মাছ ধরছিলো। একবার জাল গুটাতে গিয়ে বেশ ভার ভার মনে হলো তার। ভাবলো, ভাগ্য বুঝি সুপ্রসন্ন হয়েছে, হয়তো বড় সড় গোছের মাছ জড়িয়ে গছে তার জালে। অনেক সন্তর্পণে এবং বেশ কায়দা কসরত করে জালখানাকে তীরে তুলে আনলো সে। —আ আ -হ, জেলে চিৎকার করে ওঠে, তার জালের সুতো ছিঁড়ে-খুড়ে একশা হয়ে গেছে।

কাশেমের জুতো জোড়া জালে জড়িয়ে এই সর্বনাশ করেছে। গরীব বেচারা জেলে। তার জীবিকার একমাত্র হাতিয়ার জালখানার দশা দেখে সে হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো, এখন আমি কি করে খাবো?

রাগে কাঁপতে কাঁপতে জেলে কাশেমের দোকানে আসে। জুতো জোড়াটা দোকানের মধ্যে জোরসে ছুঁড়ে মারে। আর সঙ্গে সঙ্গে তাকে সাজানো বড় বড় কাচের জারে লেগে কয়েকটা ওষুধ ভর্তি জার ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায়। নানা বর্ণের ওষুধের ঢল নামে ঘরের মেঝেয়। জেলে কুঁসতে ফুঁসতে বলে, আমার মুখের অন্ন নষ্ট করলে এই শাস্তিই পেতে হয়, বুঝলে কাশেম সাহেব? দেখ, আমার জালের অবস্থাখানা দেখ। তোমার ঐ জুতোর কাটা আমার রুজি-রোজগারের পথ বন্ধ করে দিয়েছে আজ।

কাশেমের চোখ ফেটে জল বেরিয়ে পড়ে। তার এতো টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয়ে গেলো এই অপয়া জুতো জোড়ার জন্যে। দাঁত মুখ খিচিয়ে ওঠে সে জুতোটার দিকে তাকায়। যেন এখুনি বুঝি আস্ত চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে ওটাকে। কিন্তু অমন উপাদেয় বস্তু কী করেই বা গলাধঃকরণ করে!

ঠিক করলো মাটির তলায় পুঁতে রাখবে সে। যাতে ভবিষ্যতে আর ওটাকে নিয়ে নতুন ঝামেলায় জড়াতে না হয়। সুতরাং সে সামনের বাগানের মধ্যে একটা গর্ত খুঁড়ে তার মধ্যে জুতো জোড়াকে রেখে কবর দিয়ে দিলো।

কাশেমের এক প্রতিবেশির সঙ্গে ওর বেশ অসদ্ভাব ছিলো। লোকটিও তাকে তাকে ছিলো। কাশেমকে বাগানে গর্ত খুঁড়তে দেখে সে কোতয়ালীতে ছুটে গিয়ে খবর দিয়ে এলো যে, আবু কাশেম সরকারকে ফাঁকি দিয়ে অনেক টাকাকড়ি রোজাগার করে। এবং বাগানের মধ্যে সেগুলো সে পুঁতে রাখে।

কোতোয়াল অবিশ্বাস করতে পারে না। এমন ঘটনা তো প্রায়ই ঘটছে। সরকারের নজর থেকে আড়াল রাখার জন্য অনেক বে-আইনি সম্পদ অনেকেই এইভাবে মাটির নিচে লুকিয়ে রাখে। সঙ্গে সঙ্গে সে পেয়াদা পাঠিয়ে কাশেমকে পাকড়াও করে নিয়ে এলো তার সামনে।কাশেম যতই বলে, জী না, টাকা পয়সা কিছুনা, ওটা আমার পায়ের ছেড়া জুতো জোড়া। কিন্তু ঘুষখোর কোতোয়াল ওসব কথায় বিশ্বাস করে না। মোটামুটি টাকা ঘুষ দিয়ে তবে সে ছাড়া পায়।

রাত্রি প্রভাত হয়ে আসে। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে থাকে।

 

সাতশো পঁচানব্বইতম রজনীতে আবার সে বলতে শুরু করে :

নিদারুণ হতাশা দুঃখ ক্ষোভে ঘরে ফিরে এসে যত অনিষ্টের মূল ঐ জুতো জোড়াটা হাতে নিয়ে সে কয়েক ক্রোশ দূরে গিয়ে একটা নালার জলে ফেলে দিয়ে আসে। কিন্তু এমনি মন্দ কপাল, স্রোতের টানে গড়াতে গড়াতে গিয়ে আটকে যায় এক জল-সেচ কলের চাকায়। সঙ্গে সঙ্গে কটা অচল হয়ে থেমে যায়। মালিক ছুটে এসে দেখে আবু কাশেমের সেই ছেড়া চপ্পলটা তার কলের চাকার দাঁতের মধ্যে ঢুকে পড়ে অনেক গুলো দাঁত ভেঙে দিয়েছে।

কলের মালিক কাশিমের নামে মামলা দায়ের করে দিলো। বিচারে ক্ষতি পূরণ বাবদ শুধু অনেক টাকা গচ্চাই দিতে হলো না, সশ্রম কারাদণ্ডও ভোগ করতে হলো তাকে বেশ কিছুকাল। অবশ্য ফাটকের কর্তাকে মোটামুটি ঘুষ খাইয়ে কয়েকদিন পরেই সে বাড়ি ফিরে আসতে পেরেছিলো।

মনের দুঃখে, টাকার শোকে মুহ্যমান হয়ে কিছুদিন ঘরেই বসে কাটায়। জুতো জোড়াটা বাড়ির পিছন দিকে ছাতের কার্ণিশের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে—যাতে আর ঐ সর্বনাশা বস্তুটিকে

স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করতে না হয়।

কাশেমের বাড়ির পিছনেই আর একটা বাড়ি। ও বাড়ির বাঘা কুকুরটা ঝুলন্ত জুতো জোড়াকে করায়ত্ত করার জন্য ও-বাড়ির দোতলা থেকে এ্যাঁইসা জোরে এক লাফ দিলো যে, একেবারে এসে পড়লো এ বাড়ির ছাতের মাঝখানে। কাশেম তখন ছাতে বসে বৈকালিক শোভা উপভোেগ করছিলো। কুকুরটা লাফিয়ে এসে আর পড়ার জায়গা পেলো না। পড়বি তো পড় একেবারে আবু কাশেমের গায়ের উপর! কুকুরটার ধারালো থাবা বৃদ্ধ কাশেমের চোয়ালের খানিকটা মাংস খুবলে নিয়ে গেলো। উফ, সেকি রক্তারক্তি কাণ্ড। পাড়ার লোকরা ধরাধরি করে হাসপাতলে নিয়ে গেলো তাকে। দিন দুই বাদে মাথা মুখ গলা পেঁচিয়ে পেল্লাই এক পাগড়ী সমান পটি বেঁধে ঘরে ফিরে এলো সে। হেকিম বদ্যি হাসপাতালের খরচ বাবদ এক গাদা টাকা বেরিয়ে গেলো। ক্ষতের চেয়ে খরচের ব্যথাটাই বেশি করে কাতর করে ফেললোকাশেমকে।

তার এই শেষ বিপর্যয়ে মাথা আর ঠিক রাখতে পারলো না কাশেম। জুতো জেড়াটি নিয়ে ছুটে গেলো সে কাজীর কাছে। সাশ্রনয়নে কাঁদতে কাঁদতে বললল, আমার এই জুতো জোড়াটা আমার সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে হুজুর। এর জন্যে আমার যা গচ্চা গেছে তাতে আমি আজ সর্বস্বান্ত! এখন ঘরে আর ফুটো পয়সা নাই। ভিক্ষে করে ছাড়া পোড়া রুটির জোগাড় করতে পারবো না। এটাকে যতই ছাড়াতে চাইছি কিছুতেই ছাড়ছে না আমাকে। তাই আজ আপনার কাছে নিয়ে এসেছি। এটা আমি আপনার হেপাজতেই রেখে যাচ্ছি হুজুর। এরপর থেকে এই জুতোর জন্য কারো কোন ক্ষয় ক্ষতি হলে আমি আর দায়ী হবো না, এই আমি বলে গেলাম।

এই বলে কাশেম সেই প্রকাশ্য আদালতের মেঝেয় তার এতোকালের সঙ্গী জুতো জোড়াটাকে বয়ান তালাক দিয়ে ছুটে বেরিয়ে গেলো।

কাজী হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়লেন।

একটুক্ষণ পরে শাহরাজাদ আবার একটা নতুন কিস্‌সা বলতে শুরু করে :

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *