বিপ্রলব্ধা
বিপ্রলব্ধা ।। ধানশী ।।
বন্ধুর লাগিয়া, শেজ বিছাইনু,
গাঁথিনু ফুলের মালা।
তাম্বুল সাজনু, দীপ উজারিনু,
মন্দির হইল আলা।।
সই! পাছে এ সব হবে আন।
সে হেন নাগর, গুণের সাগর,
কাহে না মিলল কান?
শাশুড়ী ননদে, বঞ্চনা করিয়া,
আইনু গহন বনে।
বড় সাধ মনে, এ রূপ যৌবনে,
মিলিব বন্ধুর সনে।।
পথ পানে চাহি, কত না রহিব,
কত প্রবোধিব মনে?
রস শিরোমণি, আসিবে এখনি,
বড়ু চণ্ডীদাস ভণে।।
————–
শেজ – শয্যা। তাম্বুল সাজনু – পান সাজিলাম। উজারিনু – উজ্জ্বল করিলাম। কান – কানু।
বিপ্রলব্ধা লক্ষণঃ–
“সখীর আশ্বাসে ধনী স্থির করি মন। প্রিয় আগমন পথ করি নিরীক্ষণ।।
বৃক্ষের পত্রে পত্রে যদি শব্দ হয়। এই আইসে প্রিয় বলি উঠিয়া বৈঠয়।।
দূতী পাঠাইয়া দিলা প্রিয়ার কারণে। ফিরিয়া আইলা দূতী বজ্র হেন মনে।।
এই রূপ বিচ্ছেদ বিষাদে নিশি যায়। …………।।”
–ভক্তমাল।
বিপ্রলব্ধা ।। শ্রীরাগ ।।
দ্বারের আগে, ফুলের বাগ,
কি সুখ লাগিয়া রুইনু।
মধু খাইতে খাইতে, ভ্রমর মাতল,
বিরহ জ্বালাতে মৈনু।।
জাতী রুইনু, যূথি রুইনু,
রুইনু গন্ধ মালতী।
ফুলের বাসে, নিদ্ নাহি আসে,
পুরুষ নিঠুর জাতি।।
কুসুম তুলিয়া, বোঁটা তেয়াগিয়া,
শেজ বিছাইনু কেনে?
যদি শুই তাই, কাঁটা ভুকে গায়,
রসিক নাগর বিনে।।
রতন মন্দিরে, সখীর সহিতে,
তা সনে করিনু প্রেম।
চণ্ডীদাস কহে, কানুর পিরীতি,
যেন দরিদ্রের হেম।।*
————–
বাসে – সুবাসে; সৌগন্ধে।
* পদসমুদ্র
বিপ্রলব্ধা ।। ধানশী ।।
দুকাণ পাতিয়া, ছিল এতক্ষণ,
বঁধু পথ পানে চাই।
পরভার নিশি, দেখিয়া অমনি,
চমকি উঠিল রাই।।
পাতায় পাতায়, পড়িছে শিশির,
সখীরে কহিছে ধনী।
বাহির হইয়া, দেখলো সজনি,
বঁধুর শবদ শুনি।
পুন কহে রাই, না আসিল বঁধু,
মরমে রহল ব্যথা।
কি বুদ্ধি করিব, পাষাণে ধরিয়া,
ভাঙ্গিব আপন মাথা।।
ফুলের এ ডালা, ফুলের এ মালা,
শেজ বিছাইনু ফুলে।
সব হৈল বাসি, আর কেন সই,
ভাসাগে যমুনাজলে।।
কুঙ্কুম কস্তূরী, চুবক চন্দন,
লাগিছে গরল হেন।
তাম্বুল বিরস, ফুলহার ফণী,
দংশিছে হৃদয়ে যেন।।(১)
সকল লইয়া, যমুনায় ডার (২),
আর ত না যায় দেখা।
ললাটের সিন্দূর, মুছি কর দূর,
নয়ানের কাজর রেখা।।
আর না রাখিব, এছার পরাণ,
না যাব লোকের মাঝে।
থর হও রাই (৩), চলু চণ্ডীদাস,
আনিতে নিঠুর রাজে (৪)।।
————–
(১) ফুলের হার সর্প হইয়া যেন হৃদয়কে দংশন করতেছে।
(২) ফেলিয়া দাও।]
(৩) স্থির হও রাই।
(৪) নিষ্ঠুর রাজা–শ্রীকৃষ্ণ।
বিপ্রলব্ধা ।। সুহিনী ।।
সে যে বৃষভানু সুতা। মরমে পাইয়া ব্যথা।। সজল নয়ান হৈয়া। রহে পথপানে চাইয়া। ফুল শেজ বিছাইয়া। রহয়ে ধেয়ানী হৈয়া।। উজর চাঁদনি রাতি। মন্দিরে রতন বাতি।। কহে সব ভেল আন। কাহে না মিলল কান।। সকল বিফল হৈল। আধ রজনী গেল।। শ্যাম বঁধুয়ার পাশ। চলু বড়ু চণ্ডীদাস।।
————–
বিপ্রলব্ধা ।। সুহিনী ।।
রহয়ে ধেয়ানী হৈয়া – মৌনী হইয়া রহে। চলু – চলিল।