কুঞ্জভঙ্গ
কুঞ্জভঙ্গ ।। সুহই ।।
পদউধ কাক, কোকিলের ডাক,
জানাইল রজনী শেষ।
তুরিতে নাগরী, গেলা নিজ ঘরে,
বাঁধিতে বাঁধিতে কেশ।।
অবশ আলিসে, ঠেসনা বালিসে,
ঘুমে ঢুলু ঢুলু আঁখি।
বসন ভূষণ, হৈয়াছে বদল,
তখন উঠিয়া দেখি।।
ঘরে মোর বাদী, শাশুড়ী ননদী
মিছা তোলে পরিবাদ।
জানিলে এখন, হইবে কেমন,
বড় দেখি পরমাদ।।
চণ্ডীদাস কহে, শুনলো সুন্দরি,
তুমি সে বড়ুয়ার বহু।
শ্যামের মোহন, গুণের কারণ,
লখিতে নারিবে কেহু।।
————–
পদউধ – দৈয়াল।
জানাইল রজনী শেষ – পাঠান্তর–“জাগিয়া যামিনী শেষ।”–প, ক, ত।
জানিলে এখন, হইবে কেমন, বড় দেখি পরমাদ – পাঠান্তর–“কানুর পিরীতি, কি জানি হইল, বড় দেখি পরমাদ।।”-প্রা, কা, সং।
বহু – বধু।
গুণের – পাঠান্তর-“মায়ার।” প্রা, কা, সং।
লখিতে নারিবে কেহু – বিভিন্নপাঠ–“রাখিতে না পারে কেহ।।”–প, ক, ত।
কুঞ্জভঙ্গ ।। ধানশী ।।
প্রভাতকালের কাক, কোকিল ডাকিল
দেখিয়া রজনী শেষ।
উঠিয়া নাগর, তুরিত গেল যে,
বাঁধিতে বাঁধিতে কেশ।।
সই তোরে সে বলিয়া কথা।
সে বঁধু কালিয়া, না গেল বলিয়া,
মরমে রহল ব্যথা।।
রহিয়া আলিসে, ঠেসনা বালিসে,
ঢুলু ঢুলু দুটি আঁখি।
বসনে বসনে বদল হৈয়াছে,
এখন উঠিয়া দেখি।।
ঘরে মোর বাদী, শ্বাশুড়ী ননদী,
মিছা করে পরিবাদ।
ইহাতে এমন, করিব কেমন,
কি হইল পরমাদ।।
চণ্ডীদাস কহে, মনের আহ্লাদে,
শুনহে রসিক জন।
সদা জ্বালা যার, তবে সে তাহার,
মিলয়ে পিরীতি ধন।।
————–
কুঞ্জভঙ্গ ।। সিন্ধুড়া ।।
আজুকার নিশি, নিকুঞ্জে আসি,
করিল বিবিধ রাস।
রসের সাগরে, ডুবাইল মোরে,
বিহানে চলিল বাস।।
শুনহে সুবল সখা।
সে হেন সুন্দরী, গুণের আগরি,
পুন কি পাইব দেখা?
মদনে আগুলি, গলে গলে মিলি,
চুম্বন করিল যত।
কেশ বেশ যদি, বিথার হইল,
তাহা বা কহিব কত?
অশেষ বিশেষ, বচন কহিয়া,
আবেশে কইয়া কোরে।
অঙ্গের পরশে, হিয়া ডুবাইল,
কেমনে পাসরি তারে?
চণ্ডীদাস কহে, শুনহে নাগর!
এ বড় লাগল ধন্ধ।
সে রাধা রমণী, রস শিরোমণি,
তোমারে করল বন্ধ।
————–
আগরি – আগার–ডালি। বিথার – বিস্তার–বিস্তৃত।