গোষ্ঠ বিহার
গোষ্ঠ বিহার ।। কামোদ ।।
ব্রজকুল বাল, রাজ পথে আইল,
লইয়া ধেনুর পাল।
সঙ্গে সখাগণ ভায় বলরাম,
শ্রীদাম সুদাম ভাল।।
সুবল সঙ্গেতে, তার কান্দে হাত,
আরপি নাগর রায়।
হাসিতে হাসিতে সঙ্কেত বাঁশীতে,
এ দুই আখর গায়।।
এ কথা আনেতে না পারে বুঝিতে
সুবল কিছু সে জানে।
হৈ হৈ বলি রাজপথে চলি,
কমন গরিছে বণে।।
গবাক্ষে বদন দিয়া প্রেমময়ী,
রূপ নিরীক্ষণ করে।
দোঁহার নয়নে, নয়ন মিলল
হৃদয়ে হৃদয় ধরে।।
দেখিতে শ্রীমুখ মণ্ডল সুন্দর,
ব্যথিত হইলো রাধা।
এ হেন সম্পদ, বনে পাঠাইতে,
তিলেকৈ না করে বাধা।।
কেমন যশোদা মায়ের পরাণ,
পুথলি ছাড়িয়া দিয়া।
কেমনে রয়েছে, গ্রহমাঝে বসি,
চণ্ডীদাসে কহে ইহা।।
——————-
শ্রীদাম, সুদাম, সুবল – শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় সখা। রায় – শ্রীকৃষ্ণ। দুই আখর – “রাধা” । আনেতে – অন্যলোকে। প্রেমময়ী – শ্রীরাধিকা। তিলেকৈ – তিলেকের নিমিত্ত।
গোষ্ঠ বিহার ।। ধানশী ।। (গবাক্ষ হইতে শ্রীরাধিকার আক্ষেপোক্তি।)
কি আর বলিব মায়।
কিছু দয়া নাই, তাহার হৃদয়ে,
একথা বলিব কায়।।
মায়ের পরাণ, এমন কঠিন,
এহেন নবীন তনু।
অতি খরতর, বিষম উত্তাপ,
প্রখর গগন ভানু।।
বিপিনে বেকত, ফণি কত শত,
কুশের অঙ্কুর তায়।
ও রাঙা চরণে, ছেদিয়া ভেদিবে,
মোর মনে ইহা ভায়।
ননীর অধিক, শরীর কোমল,
বিষম রবির তাপে।
কি জানি অঙ্গ গলিয়া পড়য়ে,
ভয়ে সদা তনু কাঁপে।।
কেমন যশোদা, নন্দঘোষ পিতা,
এ হেন সম্পদ ছাড়ি।
কেমন হৃদয়, ধরিয়া রয়েছে,
এই মনে আমি ডরি।।
ছারেখারে যাঙ, এ সব সম্পদ,
আনলে পুড়িয়া যাক।
হেন নবীনে, বনে পাঠাইয়া,
পায় কত সুখ পাক।।
চণ্ডীদাস বলে, শুন বিনোদিনি,
সকল সপথ মানি।
যাহার কারণে, বনেতে গমন,
আমি সে কারণ জানি।।
——————-
যাঙ – যাক।
গোষ্ঠ বিহার ।। শ্রীরাগ ।।
ঘন শ্যাম শরীর কেলিরস,
যমুনাক তীর বিহার বনি।
শ্রীদাম সুদাম, ভায়া বলরাম,
সঙ্গে বসুদাম রঙ্গে কিঙ্কিনী।।
ঘন চন্দন ভাল, কাণে ফুল ডাল,
অঙ্গে গিরি লাল, কিয়ে চলনি।
লুফিছে পাঁচনি, বাজিছে কিঙ্কিণী,
পদ নূপুর ঝুনুরুনু শুনি।।
কত যন্ত্র সুতান, কলারস গান,
বাজায়ত মান, করি সুমেলে।
যব বেনু পূরে, মৃগ পাখি ঝুরে,
পুলকে তরু পল্লব পুষ্পফলে।।
কেহ রূপ চাহে, কেহ গুণ গায়ে,
কেহ প্রেমক আনন্দে বোল কহে।
চণ্ডীদাস, মনে অভিলাষ
স্বরূপ অন্তরে জাগি রহে।।
——————-
কিঙ্কিনী – এক সখা। ভাল – গিরি মাটি। কিঙ্কিণী – ঘুঙুর। পূরে – নিনাদ করে।