সম্ভোগ মিলন
সম্ভোগ মিলন ।। ধানশী ।।
শারদ পূর্ণিমা, নিরমল রাতি,
উজর সকল বন।
মল্লিকা মালতী, বিকশিত তথি,
মাতল ভ্রমরাগণ।।
তরুকুল ডাল, ফুল ভরি ভাল,
সৌরভে পূরিল তায়।
দেখিয়া সে শোভা, জগমনোলোভা,
ভুলিল নাগর রায়।।
নিধুবনে আছে, রতন বেদিকা,
মণি মাণিক্যেতে বাঁধা।
ফটিকের তরু, শোভিয়াছে চারু,
তাহাতে হীরার ছাঁদা।।
চারিপাশে সাজে, প্রবাল মুকুতা,
গাঁথনি আঁটনি কত।
তাহাতে বেড়িয়া, কুঞ্জ-কুটীর,
নিরমাণ শত শত।।
লেতের পতাকা, উড়িছে উপরে,
কি তার কহিব শোভা।
অতি রম্য স্থল, দেব অগোচর,
কি কহিব তার আভা।।
মাণিকের ঘটা, কিরণের ছটা,
এমতি মণ্ডপ ঘর।
চণ্ডীদাস বলে, অতি অপরূপ,
নাহিক তাহার পরে।।
————–
উজর – উজ্জ্বল। তথি – তথায়।
সম্ভোগ মিলন ।। কামোদ ।।
রমণী মোহন, বিলসিতে মন,
হইল মরমে পুনি।
গিয়া বৃন্দাবনে, বসিলা যতনে,
রমিতে বরজধনী।।
মধুর মুরলী, পূরে বনমালী,
রাধা রাধা বলি গান।
একাকী গভীর, বনের ভিতর,
বাজায় কতেক তান।।
অমিয়া নিছনি, বাজিছে সঘন,
মধুর মুরলী গীত।
অবিচল কুল, রমনী সকল,
শুনিয়া হরল চিত।।
শ্রবণে যাইয়া, রহল পরশিয়া,
বেকতে বাজিছে বাঁশী।
আইস আইস বলি, ডাকয়ে মুরলী,
যেন ভেল সুখ রাশি।।
আনন্দ অবশ, পুলক মানস,
সুকুমারী ধনী রাধে।
গৃহ কর্ম্ম যত, হৈল বিসরিত,
সকল করিল বাধে।।
রাইয়ের অগ্রেতে, যতেক রমণী,
কহয়ে মধুর বাণী।
ওই ওই শুন, কিবা বাজে তান,
কেমন করিছে প্রাণী।।
সহিতে না পারি মুরলীর ধ্বনি,
পশিল হিয়ার মাঝে।
বরজ তরুণী, হইল বাউরী,
হরিল কুলের লাজে।।
কেহ পতি সনে, আছিল শয়নে,
ত্যজিয়া তাহার সঙ্গ।
কেহ বা আছিল, সখির সহিত,
কহিতে রভস রঙ্গ।।
কেহ বা আছিল, দুগ্ধ আবর্ত্তনে,
চুলাতে রাখি বেসালি।
ত্যজি আবর্ত্তন, হই আগুয়ান,
ঐছন সে গেল চলি।।
কেহ শিশু লয়ে, কোলেতে করিয়া,
দুগ্ধ করায় পান।
শিশু ফেলি ভূমে, চলি গেল ভ্রমে,
শুনি মুরলীর গান।।
কেহ বা আছিল, শয়ন করিয়া,
নয়নে আছিল নীদ।
যেমন চোরাই, হরণ করিল,
মানসে কাটিল সীঁদ।।
কেহ বা আছিল, রন্ধন করিতে,
তেমনি চলিয়া গেল।
কৃষ্ণমুখী হৈয়া, মুরলী শুনিয়া,
সব বিসরিত ভেল।।
সকল রমণী ধাইল অমনি,
কেহ কাহা নাহি মানে।
যমুনার কূলে, কদম্বের মূলে,
মিলল শ্যামের সনে।।
ব্রজ নারীগণে দেখিয়া তখন,
হাসিয়া নাগর রায়।
রাস বিলসন, করল বচন,
দ্বিজ চণ্ডীদাস গায়।।
————–
পুনি – পুনঃ। বরজধনী – ব্রজাঙ্গনা। পূরে – শব্দ করে। বনমালী – শ্রীকৃষ্ণ। অবিচল কুল – রমণী সকল যাহারা কুলভ্রষ্টা নহে। বেকতে – ব্যক্তে–স্ফূত ধ্বনিতে। ভেল – হইল। বিসরিত – বিস্মৃত। রভস – রহস্য। আগুয়ান – অগ্রসর। মানসে কাটিল সীঁদ – মনের ভিতর সীঁদ কাটিয়া চোরে যেন হৃদয় চুরি করিল। কাহা – কাহাকে।
সম্ভোগ মিলন ।। সুহই ।।
কদম্বের বন হৈতে,
কিবা শব্দ আচম্বিতে
আসিয়া পশিল মোর কাণে।
অমৃত নিছিয়া ফেলি,
কি মাধুর্য্য পদাবলী,
কি জানি কেমন করে মনে।।
সখিরে! নিশ্চয় করিয়া কহি তোরে।
হাহা কুলাঙ্গনাগণ,
গ্রহিবারে ধৈর্য্যগণ,
যাহে হেন দশা হৈল মোরে।।
শুনিয়া ললিতা কহে,
অন্য কোন শব্দ নহে,
মোহন মুরলী ধ্বনি এহ।
সে শব্দ শুনিয়া কেনে,
হৈলা তুমি বিমোহনে,
রহ নিজ চিতে ধরি থেহ।।
রাই কহে কেবা হেন,
মুরলী বাজায় যেন,
বিষামৃতে একত্র করিয়া।
জল নহে হিমে জনু,
কাঁপাইছে সব তনু,
শীতল করিয়া মোর হিয়া।।
অস্ত্র নহে মন ফুটে,
কাটারিতে যেন কাটে,
ছেদন না করে হিয়া মোর।
তাপ নহে উষ্ণ অতি,
পোড়ায় আমার মতি,
চণ্ডীদাস ভাবি না পায় ওর।।
————–
আচম্বিতে – আচম্কায়, হঠাত। বিমোহনে – বিমোহিত। রহ নিজ চিতে ধরি থেহ – নিজের চিত্ত স্থির করিয়া থাক।
সম্ভোগ মিলন ।। ললিত ।।
এক শয়নে, ননদিনী সনে,
শুতিয়া আছিনু, সই!
যে ছিল মরমে, বঁধুর ভরমে,
মরম তাহারে কই।।
নিদের আলসে, বঁধুর ধাধসে,
তাহারে করিনু কোরে।
ননদী উঠিয়া, রুষিয়া বলিছে,
বঁধুয়া পাইলি কারে।
এত টীটপনা জানে কোন্ জনা,
বুঝিনু তোহারি রীতি।
কুলবতী হইয়া, পরপতি লৈয়া,
এমতি করহ নিতি।।
যে শুনি শ্রবণে, পরের বদনে,
নয়ানে দেখিনু তাই।
দাদা ঘরে এলে, করিব গোচর,
ক্ষণেক বিরাজ রাই।।
নিঠুর বচনে, কাঁপিছে পরাণ,
মরিয়া রহিনু লাজে।
ফিরাইয়া আঁখি, গরবেতে থাকি,
সঘনে আমারে যজে।।
এক হাতে সখী, কচালিয়া আঁখি,
নয়ানে দেখি যে আর।
চণ্ডীদাস কয়, কিবা কুল ভয়,
কানুর পিরীতি যার।।
————–
শুতিয়া – শুইয়া। বঁধুর ধাধসে – বঁধু ভ্রমে অর্থাৎ বঁধু মনে করিয়া। কোরে – কোলে। রুষিয়া – রাগ করিয়া। যজে – তর্জ্জন গর্জ্জন করে।
সম্ভোগ মিলন ।। ললিত ।।
আর একদিন সখি শুতিয়া আছিনু।
বঁধুয়ার ভরমে ননদী কোরে নিনু।।
বঁধু নাম শুনি সেই উঠিল রুষিয়া।
কহে তোর বঁধু কোথা গেল পলাইয়া?
সতী কুলবতী কুলে জ্বালি দিলি আগি।
আছিল আমার ভালে তোর বধভাগী।।
শুনিয়া বচন তার অথির পরাণি।
কাঁপয়ে শরীর, দেখি আঁখির তাজনি।।
কেমনে এড়াব সখি! তাপিনীর হাতে।
বনের হরিণী থাকে কিরাতের সাতে।।
দ্বিজ চণ্ডীদাসে বলে পিরীতি এমতি।
যার যত জ্বালা তার ততই পিরীতি।।
————–
নিনু – লইলাম। আগি – আগুণ। অথির – অস্থির। তাজনি – তর্জ্জন। কিরাতের – ব্যাধের।
সম্ভোগ মিলন ।। বিভাস ।।
পরাণ বঁধুকে, স্বপনে দেখিনু,
বসিয়া শিয়র পাশে।
নাসার বেশর, পরশ করিয়া,
ঈষৎ মধুর হাসে।।
পিঙল বরণ, বসন খানি,
মুখানি আমার মুছে।
শিথান হইতে, মাথাটী বাহুতে,
রাখিয়া শুতল কাছে।।
মুখে মুখ দিয়া, সমান হইয়া
বঁধুয়া করল কোলে।
চরণ উপরে, চরণ পসারি,
পরাণ পাইনু বোলে।।
অঙ্গ পরিমল, সুগন্ধি চন্দন,
কুঙ্কুম কস্তূরী পারা।
পরশ করিতে, রস উপজিল,
জাগিয়া হইনু হারা।।
কপোত পাখীরে, চকিতে বাঁটুল,
বাজিলে যেমন হয়।
চণ্ডীদাস কহে, এমতি হইলে,
আর কি পরাণ রয়।।
————–
সম্ভোগ মিলন ।। গান্ধার ।।
সাত পাঁচ সখী করে, বসিয়া ছিলাম রঙ্গে,
হেন কালে পাপ ননদিনী।
দেখিয়া আমাকে, তার কাছে ডাকে,
“আইসহ শ্যাম সোহাগিনী।।”
রাধা বিনোদিনি! তোমারে বলিতে কি?
চাই দুই তিন কথা, যে কথা তোমার,
বড়ই শুনিয়াছি।।
তুমি কোন দিনে, যমুনা সিনানে,
গিয়াছিলা নাকি একা?
শ্যামের সহিতে, কদম্ব তলাতে,
হৈয়াছিল নাকি দেখা?
সেই দিন হৈতে, সেইত পথেতে,
করে নাকি আনাগোনা?
রাধা রাধা বলি, বাজায় মুরলী,
তাহে হৈল জানা শুনা।।
যে দিন দেখিব, আপন নয়নে,
তা সঞে কহিতে কথা।
কেশ ছিঁড়ি বেশ, দূরে তেয়াগিব,
ভাঙ্গিব বাড়িয়া মাথা।।
একি পরমাদ, দেহ পরিবাদ,
এছার পাড়ার লোকে।
পর চরচায়, যে থাকে সদায়,
সাপে খাক্ তার বুকে।।
গোকুল নগরে, গোপের মাঝারে,
এত দিন বসি মোরা।
কভু না জানিনু, কভু না শুনিনু,
শ্যাম কাল কি গোরা।।
বড়ুয়ার ঝিয়ারী, বড় নাম ধরি,
তাহে বড়ুয়ার বৌ।
নিরমল কুলে, এ কথা যে তোলে,
সেই নারী গরল খাউ।।
চিত দড় করি, থাকলো সুন্দরী,
যেন কভু নাহি টলে।
কাহার কথায়, কার কিবা হয়,
বড়ু চণ্ডীদাস বলে।
————–
আইসহ – আইস। আনাগোনা – যাতায়াত। সঞে – সঙ্গে। চরচায় – চর্চ্চায়।
সম্ভোগ মিলন ।। সুহই ।।
একদিন যাইতে ননদিনী সনে।
শ্যাম বন্ধুর কথা পড়ি গেল মনে।।
ভাবে ভরল মন চলিতে না পারি।
অবশ হইল তনু, কাঁপে থর হরি।।
কি করিব সখি সে হইল বড় দায়।
ঠেকিনু বিপাকে আর না দেখি উপায়।।
ননদী বোলয়ে হেঁলো কি না তোর হইল?
চণ্ডীদাস বলে উহার কপালে যা ছিল।।
————–
সম্ভোগ মিলন ।। শ্রীরাগ ।।
আমার পিয়ার কথা কি কহিব সই।
যে হয়, তাহার চিতে স্বতন্তরী নই।।
তাহার গলার, ফুলের মালা,
আমার গলায় দিল।
তার মত, মোরে করি,
সে মোর মত হৈল।।
তুমি সে আমার, প্রাণের অধিক,
তেঞি সে তোমারে কহি।
এ যে কাজ, কহিতে লাজ,
আপন মনেই রহি।।
তাহার প্রেমের, বশ হৈয়া,
যে কহে তাহাই করি।
চণ্ডীদাস, কহয়ে ভাষ,
বালাই লইয়া মরি।।
————–
স্বতন্তরী – ছাড়া, বিচ্ছিন্না। তেঞি – তাই।
সম্ভোগ মিলন ।। সিন্ধুড়া ।।
এমন পিরীতি কভু দেখি নাই শুনি।
নিমিখে মানয়ে যুগ, কোরে দূর মানি।।
সমুখে রাখিয়া করে বসনের বা।
মুখ ফিরাইলে তার ভয়ে কাঁপে গা।।
এক তনু হৈয়া মোরা রজনী গোঙাই।
সুখের সাগরে ডুবি, অবধি না পাই।।
রজনী প্রভাত হৈলে কাতর হিয়ায়।
দেহ ছাড়ি যেন মোর প্রাণ চলি যায়।।
সে কথা কহিতে সই বিদরে পরাণ।
চণ্ডীদাস কহে ধনি সব পরমাণ।।
————–
নিমিখে মানয়ে যুগ, কোরে দূর মানি – চক্ষের নিমিষ পড়িলে যুগ বলিয়া মনে করে এবং এমন কি কোলে করিয়াও দূর মনে করে। বা – হাওয়া, বাতাস। গোঙাই – কাটাই। পরমাণ – প্রামাণ্য।
* পদসমুদ্র গ্রন্থে জ্ঞানদাসের ভণিতাযুক্ত দৃষ্ট হয়।
সম্ভোগ মিলন ।। সিন্ধুড়া ।।
“আমি যাই যাই” বলি বোলে তিন বোল।
কত না চুম্বন দেই, কত দেই কোল।।
পদ আধ যায় পিয়া, চায় পালটিয়া।
বয়ান নিরখে কত কাতর হইয়া।।
করে করে ধরি পিয়া শপথি দেয় মোরে।
পুনঃ দরশন লাগি কত চাটু বোলে।।
নিগূঢ় পিরীতি পিয়ার আরতি বহু।
চণ্ডীদাস কহে হিয়ার মাঝারে রহু।।
————–
পদ আধ যায় পিয়া, চায় পালটিয়া – পিয়া এক পা আধ পা যায় এবং ফিরিয়া ফিরিয়া চায়।
চাটু – প্রিয় বাক্য।
সম্ভোগ মিলন ।। মল্লার ।।
এ ঘোর রজনী, মেঘের ঘটা,
কেমনে আইল বাটে।
আঙ্গিনার মাঝে, বঁধুয়া ভিজিছে,
দেখিয়া পরাণ ফাটে।
সই! কি আর বলিব তোরে।
বহু পুণ্য ফলে, সে হেন বঁধুয়া,
আসিয়া মিলল মোরে।।
ঘরে গুরুজন, ননদী দারুণ,
বিলম্বে বাহির হৈনু।
আহা মরি মরি, সংকেত করিয়া
কত না যাতনা দিনু।
বঁধুর পিরীতি, আরতি দেখিয়া,
মোর মনে হেন করে
কলঙ্কের ডালি, মাথায় করিয়া,
আনল ভেজাই ঘরে।।
আপনার দুঃখ সুখ করি মানে,
আমার দুখের দুখী।
চণ্ডীদাস কহে, বঁধুর পিরীতি,
শুনিয়া জগৎ সুখী।।
————–
বাটে – পথে।
আঙ্গিনার মাঝে, বঁধুয়া ভিজিছে – পাঠান্তর–“আঙ্গিনার কোণে, তিতিছে বঁধুয়া”।–প্রা, কা, সং।
ঘরে গুরুজন, ননদী দারুণ – বিভিন্নপাঠ–“নহি স্বতন্তরী, গুরুজন ডরে”।–প্রা, কা, সং।
আনল ভেজাই ঘরে – ঘরে আগুণ দিই।
সম্ভোগ মিলন ।। বিভাস ।।
শ্যামলা বিমনা, মঙ্গলা অবলা,
আইল রাইয়ের পাশে।
যদি স্বতন্তরে, তথাপি রাধারে,
পরাণ অধিক বাসে।।
দেখি সুবদনী, উঠিলা অমনি,
মিলিল গলায় ধরি।
কত না যতনে, রতন আসনে,
বসায় আদর করি।।
রাই মুখ দেখি, হৈয়া মহাসুখী,
কহয়ে কৌতুক কথা।
রজনী-বিলাস, শুনিতে উল্লাস,
অমিয় অধিক গাথা।
হাস পরিহাসে, রসের আবেশে,
মগন হইলা রাধা।
চণ্ডীদাস বাণী, নিশির কাহিনী,
শুনিতে লাগয়ে সাধা।।
————–
শ্যামলা বিমনা, মঙ্গলা অবলা – রাধার সখীগণ। অমিয় – অমৃত। সাধা – সাধ।
সম্ভোগ মিলন ।। বিভাস ।।
একলি মন্দিরে, আছিলা সুন্দরী,
কোরহি শ্যামর চন্দ।
তবহু তাহার, পরশ না ভেল,
এ বড়ি মরম ধন্ধ।।
সজনী পাওল পিরীতি ওর।
শ্যাম সুন্দর, পিরীতি শেখর,
কঠিন হৃদয় তোর।।
কস্তূরী চন্দন, অঙ্গের ভূষণ,
দেখিতে অধিক জোরি।
বিবিধ কুসুমে, বাঁধিল কবরী,
শিথিল না ভেল তোরি।।
এমন কমল, বিমল মধুর,
না ভেল পুলক সাজ।
হেরইতে বলি, কবরী হেরলী,
বুঝি না করলি কাজ।।
কিয়ে ঋতুপতি, বসতি বিষয়,
তেজিয়া, দেয়লি ভঙ্গ।
চণ্ডীদাস কহে, এ দোষ কাহার,
দৈবে সে না ভেল সঙ্গ।।
————–
কোরহি শ্যামর চন্দ – কোলে শ্যামচাঁদ। তবহুঁ – তথাপি। বড়ি – বড়। ওর – সীমা। হেরলী – দেখিলি।
সম্ভোগ মিলন ।। সওয়ারি ।।
নিতই নূতন, পিরীতি দুজন,
তিলে তিলে বাঢ়ি যায়।
ঠাঞি নাহি পায়, তথাপি বাড়ায়,
পরিণামে নাহি খায়।।
সখি হে! অদ্ভুত দুহুঁ প্রেম।
এত দিন ঠাঞি, অবধি না পাই,
ইথে কি কষিল হেম।।
উপমার গণ, সব কৈল আন,
দেখিতে শুনিতে ধন্দ।
একি অপরূপ, তাহার স্বরূপ,
সবারে করিল অন্ধ।।
চণ্ডীদাস কহে, দুহুঁ সম নহে,
এখানে সে বিপরীত।
এ তিনভুবনে, হেন কোন জনে,
শুনি না দরবে চিত।।
————–
নিতই – নিত্য। ঠাঞি – স্থান। দরবে – দ্রবীভূত।
সম্ভোগ মিলন ।। সিন্ধুড়া ।।
এমন পিরীতি কভু দেখি নাই শুনি।
নিমিখে মানয়ে যুগ, কোরে দূর মানি।।
সমুখে রাখিয়া করে বসনের বা।
মুখ ফিরাইলে তার ভয়ে কাঁপে গা।।
এক তনু হৈয়া মোরা রজনী গোঙাই।
সুখের সাগরে ডুবি, অবধি না পাই।।
রজনী প্রভাত হৈলে কাতর হিয়ায়।
দেহ ছাড়ি যেন মোর প্রাণ চলি যায়।।
সে কথা কহিতে সই বিদরে পরাণ।
চণ্ডীদাস কহে ধনি সব পরমাণ।।
————–
নিমিখে মানয়ে যুগ, কোরে দূর মানি – চক্ষের নিমিষ পড়িলে যুগ বলিয়া মনে করে এবং এমন কি কোলে করিয়াও দূর মনে করে। বা – হাওয়া, বাতাস। গোঙাই – কাটাই। পরমাণ – প্রামাণ্য।
* পদসমুদ্র গ্রন্থে জ্ঞানদাসের ভণিতাযুক্ত দৃষ্ট হয়।
সম্ভোগ মিলন ।। সুহই ।।
একে কুলবতী ধনী তাহে সে অবলা।
ঠেকিল বিষম প্রেমে কত সবে জ্বালা।।
অকথন বেয়াধি এ, কহা নাহি যায়।
যে করে কানুর নাম, ধরে তার পায়।।
পায়ে ধরি কাঁদে সে চিকুর গড়ি যায়।
সোণার পুতলি যেন ভূমেতে লোটায়।।
পুছয়ে কানুর কথা ছল ছল আঁখি।
কোথায় দেখিলা শ্যাম কহ দেখি সখি।।
চণ্ডীদাস কহে কাঁদ কিসের লাগিয়া।
সে কালা আছয়ে তোর হৃদয়ে জাগিয়া।।
————–
পুছয়ে – জিজ্ঞাসা করে।