হাতাহাতির পর
একবার হাতি পোষার বাতিক হয়েছিল আমার কাকার। সেই হাতির সঙ্গেই একদিন তাঁর হাতাহাতি বেধে গেল। সে কথাও শুনেছিস। হাতির গুঁড় এবং কাকার কান খুব বেশি দূর ছিল না– সুতরাং তার আসন্ন ফল কি দাঁড়াবে তা আমি এবং হাতি দুজনেই অনুমান করতে পেরেছিলাম। কাকাও পারেনি তা নয়, কিন্তু দুঘর্টনা আর বলে কাকে! সেই কর্ণবধ–পর্বের পর থেকে এই পালার শুরু!
কান গেলে মানুষের যত দুঃখ হয় অনেক সময় প্রাণ গেলেও ততটা হয় না বোধ হয়। কান হারিয়ে কাকা ভারি মুশড়ে পড়েছিলেন দিনকতক।
কর্ণের বিপদ পদে পদে, এই কথাটাই কাকাকে বোঝাতে চেষ্টা করি। মহাভারত পড়েও যায়, তা ছাড়া, পাঠশালায় পড়বার সময় ছেলেরাও হাড়ে হাড়ে টের পায়। হাড়ে হাড়ে না বলে কানে কানে বললেই সঠিক হবে, কেন না কানের মধ্যে বোধহয় হাড় নেই, থাকলে ওটা আদৌ অত সুখকর মূলতব্য ব্যাপার হত না।
কাকাকে আমি বোঝাতে চেষ্টা করি। কিন্তু কাকা বোঝেন কিনা তিনিই জানেন। তত্ত্বকথা বোঝ সহজ কথা নয়। আর তাছাড়া তাঁকে বোঝাই মনে মনে, মুখ ফুটে কিছু বলবার আমার সাহস হয় না। কাকা যা বদরাগী, ক্ষেপে যেতে কতক্ষণ!
কাকাকে দেখলে আজকাল আমার ভয় হয়। কর্ণফ্লুত কাকা পদচ্যুত চেয়ারের চেয়েও ভয়াবহ। তার উপরে নির্ভর করা যায় না–করেছ কি কুপোকাৎ! আর আজকাল যে রকম কটমট করে তিনি তাকান আমার দিকে। মুখের পানে বড় একটা না, আমার কানের দিকে কেবল। ঐ দিকেই তার যত চোখ, যত ঝোঁক আর যত রোখ। আমি বেশ বুঝতে পারি আমার কর্ণসম্পদে তিনি বেশ ঈর্ষান্বিত। হাতির হাত থেকে বাঁচিয়েছি, এখন কাকার কবল থেকে কি করে কান সামলাই তাই হয়েছে আমার সমস্যা। কাকা একবার ক্ষেপে গেলে আমাকে তার নিজের দশায় আনতে কতক্ষণ?
তাই আমিও যতটা সম্ভব দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করি। নিতান্তই কাকার কাছাকাছি থাকতে হলে মর্মাহত হয়ে থাকি। এবং মনে মনেই তাকে সান্ত্বনা দিই।
অবশেষে একদিন সকালে কাকা অকস্মাৎ চাঙ্গা হয়ে ওঠেন। শিবু-শিবু–ডাক পড়ে আমার।
কাকার কাছে দৌড়োই কান হাতে করে। এত যখন হাঁকডাক, কি সর্বনাশ হবে কে জানে? প্রাণে মরতে ভয় খাই না, মারা গেলে আবার জন্মাবো, কিন্তু কানে মারা যাবার আমার বড় ভয়।
কোথায় ছিলিস এতক্ষণ? হয়েছে, সব ঠিক হয়েছে। আর কোন ভাবনা নেই! উৎসাহের
আতিশয্যে উথলে ওঠেন কাকা। আমি চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকি!
বুঝেছিস কিছু? কাকার প্রশ্ন হয়।
উঁহু–আমি দুকান নাড়ি। ঘাড় নাড়লেই কানরা নড়ে যায়, কেন যে তা জানি না, তবে বরাবর দেখে আসছি আমি।
রামপুরহাট যাব। টিকিট কিনে আনগে। একটা ফুল, একটা হাফ। তুই যাবি আমার সঙ্গে।
রামপুরহাট? হঠাৎ আমি বলে ফেলি।
হঠাৎ আবার কি? সেইখানেই তো যেতে হবে। আমার সবিস্ময়ে প্রশ্নে কাকা যেন হতভম্ব হয়ে যান।–বামাক্ষেপার জীবনী পড়িসনি? আর পড়বিই বা কি করে? বুড়ো হাতি হতে চললি কিন্তু ধর্মশিক্ষা হলো না তোর। যত বলি সাধু মহাত্মা যোগী-ঋষিদের জীবনী টিবনী পড়-–তা না, কেবল ডাণ্ডাগুলি, লুটু আর লাটাই। যদি তা পড়তিস তাহলে আর একথা জিজ্ঞেস করতিস না।
আমি আর জিজ্ঞাসা করি না। মৌনতা দ্বারা কেবল সম্মতি নয়, পাণ্ডিত্যের লক্ষণও প্রকাশ পায়, এই শিক্ষাটা আমার হয়ে যায়। না বলে কয়ে যদি সময়দার হওয়া যায় তাহলে আর কথা বলে কোন মুখ? কাকা স্বতঃপ্রবৃত্ত আমাকে সবিশেষ জ্ঞান দিতে উদ্যত হন। রামপুরহাটের কাছেই এক ঘোর মহাশ্মশান আছে, জানিস? এই দশ-বিশ মাইলের মধ্যেই। সেই শ্মশানে বসে কেউ যদি একটা না তিন লক্ষ বার কোনো দেবতার নাম জপ করতে পারে তাহলেই সিদ্ধি! নির্ঘাৎ! স্বয়ং বশিষ্টমুনি এই বর দিয়ে গেছেন। আমার ঠাকুর্দার কাছে শোনা। সেইখানেই আমি যাব।
সেখানে কেন কাকা? আমি একটু বিস্মিতিই হই। সিদ্ধির জন্য অত কষ্ট করে অতদূর যাবার কি দরকার? রামপুরহাট না গিয়ে, রামশরণ দুবেকে বললে এখনি তো এক লোটা বানিয়ে দেয়? কোনও হাঙ্গামা নেই? হা, সবটাতেই কাকার যেন বাড়াবাড়ি।
আমার সিদ্ধি মেডইজির ভূমিকা পড়ার মুখেই কাকা উসকে ওঠেন–উ হুঁ হু সে সিদ্ধি নয়। ও তো খেতে হয়, খেলে আবার মাথা ঘোরে। এ সিদ্ধি পেতে হয়। বামাক্ষেপা, বারদির ব্রহ্মচারী, আরও যেন কারা সব ঐ শ্মশানে বসে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন! জানিস না? আমি দুর্গা দুর্গা দুর্গা এইরকম জপ করে যাব, যেমনি না তিন লক্ষ বার পুরবে আমনি মা দুর্গা হাসতে হাসতে দশ হাত নেড়ে এসে হাজির হবেন। বাবা গণেশও শুঁড় নাড়তে নাড়তে আসতে পারেন। তারা এসে বলবেন–বৎস বর নাও–
তখন আমি যা বর চাইব, বুঝেছিস কিনা, সঙ্গে সঙ্গে ফলবে। তাকেই বলে সিদ্ধিলাভ। আমি যদি চাই, আমার আরো দুটো হাত গজাক,তক্ষুনি গজাতে পারে। হুঁ! তৎক্ষণাৎ!
শুনে আমার রোমাঞ্চ হয়। চতুর্ভুজ কাকার চেহারা কল্পনা করার আমি প্রয়াস পাই।
কিন্তু কাকাবাবু! চার হাত হলে তুমি পাশ ফিরে শোবে কি করে?
কিন্তু আমি তো হাত চাইব না। হাত আমার আছেই। দুটো হাতই আমার পক্ষে যথেষ্ট। এই নিয়েই পেরে উঠি না। পায়েরও আমার আর দরকার নেই। দুটো পা–আমার মোর দ্যান এনাফ। আমি কেবল চাইব আর একটা কান। কান না হলে আমাকে মানায় না, আয়নার দিকে তাকানোই যায় না। তাই বুঝেছিস কিনা অনেক ভেবে-চিন্তে ঠিক করলাম–রামপুরহাট! মন্ত্র বলে চারটে হাত কি চারটে পা যদি আমার গজাতে পারে তাহলে একটা মাত্র কান গজানো আর এমন কি?
কাকা তার কথায় পুনশ্চ যোগ করেন আবার–ইচ্ছে করলেই যদি আমি চতুস্পদ হতে পারি তাহলে এমন বিকর্ণ হয়ে থাকব কেন? কিসের তরে?
আমারও–দারুণ বিশ্বাস হয়ে যায়। মন্ত্রবলে কতো কি হয় শুনেছি, কান হওয়া আর কি কঠিন? কানেই যখন মন্ত্র দেয়, তখন মন্ত্রেও কান দিতে পারে। আশ্চর্য কিছু নয়। তিল লাখ বার কেবল দুর্গা কি কালী কি জগদ্ধাত্রী এর যে কোনো একটা নাম–উঁহু জগদ্ধাত্রী বাদ–চার অক্ষরের মন্ত্র তার মধ্যে আবার দস্তুরমত দ্বিতীয় ভাগ! জগদ্ধাত্রীর তিন লক্ষ মানে কালীর ছলক্ষের ধাক্কা। শক্তির আরাধনাতেই নাহক শক্তির বরবাদ নেহাত সময়ের অপচয়! পয়সা না লাগুক, কিন্তু দেবতার নামের বাজে খরচ করতেও আমি নারাজ।
কাকা, আমিও তাহলেও বর চেয়ে নেব যাতে না পড়ে শুনে ম্যাট্রিকটা পাশ করতে পারি। আমি একটু ভেবে নিই, কেবল পাশ করাই বা কেন, স্কলারশিপটা নিতেই বা ক্ষতি কি? যে বরে পাশ হয়, স্কলারশিপও তাতে হতে পারে, কি বল কাকা? মা দুর্গার পক্ষে কি খুব শক্ত হবে এমন?
আর ম্যাট্রিকই বা কেন? না পড়ে একে বারে এম্-এ? এম টা আমি আরো বড়ো করি।
বারে! আমি মরব জপ করে আর তুমি পাশ করবে না পড়ে? বাঃ-রে!–-কাকা খাপ্পা হয়ে ওঠেন।
তা হলে আমার গিয়ে আর কি হবে! আমি ক্ষুণ্ণ হই। তোমার সঙ্গে নাই গেলাম তবে, আমার তো আর কানের তেমন অভাব নেই।
পাগল! তা কি করে হয়? তোকে যেতেই হবে সঙ্গে। সিদ্ধিলাভ করা কি অতই সোজা নাকি, জপ করতে বসলেই তুলে দেয় যে,–
কে? পুলিসে?
উঁহু। পুলিশ সেখানে কোথা? শুনছিস মহাশ্মশান! বারো কোশের ভেতরে কোনো জনমানব নেই!
ও বুঝেছি! শেয়াল! বেশ তোমার বন্দুকটা নিয়ে যাব না হয়–কাছে এলেই দুম-দুড়ুম।
শেয়াল নয় রে পাগলা, শেয়াল নয়। ডাকিনী যোগিনী, ভুত পেরেত, ভালবেতাল–এরা সব এসে তুলে দেয়। সিদ্ধিলাভ করতে দেয় না।
ভুত-প্রেত শুনেই আমি হয়ে গেছি! তাল-বেতালের তাল আমাকেই সামলাতে হবে ভাবতেই আমার হৃৎকম্প শুরু হয়। কাকা-কাকা! কম্পিত কণ্ঠে থেকে আমার কেবল কা কা ধ্বনি বেরোয়, তার বেশি বেরোয় না।
আরে, ভয় কিসের তোর। আমি তো কাছেই থাকব। গতিক সুবিধের নয় দেখলে দুর্গা পালটে রাম-নাম করতে যাব না হয়। রাম-নামে ভুত পালায়। তবে রাম হচ্ছে খোট্টাদের দেবতা–তা হোক গে, রামও বর দিতে পারে। সীতা উদ্ধার করেছিলেন আর একটা কান উদ্ধার করতে পারবেন না? তবে কিনা দুর্গা-দুর্গাই হল গিয়ে মোক্ষম! রামকেও দুর্গার কাছে বর নিতে হয়েছিল।
তথাপি আমি ইতস্তত করতে থাকি।
আচ্ছা, এক কাজ করা যাক! তুই নাহয় রাম রাম জপিস-তাহলে তো আর ভয় নেই তোর? রামকে ভুলিয়ে ভালিয়ে পাশের ফিকিরও করে নিতে পারিস! আমার কোন আপত্তি নেই। ভোলানো খুব শক্ত হবে না হয়ত রামটা ভ্যাবা গঙ্গারাম। তা না হলে বাঁদরের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে এত মানুষ থাকতে? এতখানি বলে কাকাকে দম নিতে হয়–তা ছাড়া তোর দাঁত ব্যথা, পেট-কামড়ানো, সর্দিকাশি, লঙ্কা খেলে হেঁচকি ওঠা স্কুলের টাসক না হলে ডায়েরিয়া হওয়া–যত রাজ্যির ব্যারাম তো তোর লেগেই আছে, এসবও তোর সেরে যাবে শ্রীরামন্দ্রের মহিমায়।
পাশের কথায় আমার উৎসাহ সঞ্চার হয়। নতুন প্রস্তাবে কাকার সঙ্গে রফা করে ফেলতে দেরি হয় না একটুও। সেই দিনই আমরা রওনা দিই। সন্ধ্যার মুখে রামপুরহাটে পৌঁছানো; কাকার বন্ধু এক ডাক্তারের বাড়িতে আমাদের আবির্ভাব।
ডাক্তার ভদ্রলোক সে সময়ে একটা ঘোড়ার দর করছিলেন। একজন গেঁয়ো লোক ঘোড়া বেচতে এসেছিল, দিব্যি খাসা ঘোড়াটি–আকারপ্রকারে তেজী বলেই সন্দেহ হয়; প্রাথমিক কুশলপ্রশ্ন আদানপ্রদানের পরেই কাকা জিজ্ঞাসা করেন, ঘোড়া কেন হে হারাধন?
আর বল কেন বন্ধু! হারাধন ডাক্তার দুঃখ প্রকাশ করেন, দূর দূর যতো গ্রাম থেকে ডাক আসে, সেখানে তো মোটর চলে না, গরুর গাড়ির রাস্তাও নেই অনেক জায়গায়, সে স্থলে ঘোড়াই একমাত্র বাহন; অদূরস্থিত সাইকেলের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে–ওকে চেপে আর পোয় না ভাই! তাই দেখে শুনে একটা ঘোড়াই কিনছি এবার।
বেশ করেছ, বেশ করেছ। কাকার সর্বন্তকরণ সমর্থন–আমাদের স্বদেশী ঘোড়া থাকতে বিদেশী সাইকেল কেন হে! ঠিকই বুঝেছো এতদিনে। তা, তোমার ঘোড়াটিকে তো বেশ শান্তশিষ্ট বলেই বোধ হচ্ছে। কাছে গিয়ে কাকা ঘোড়ার পিঠ চাপড়ে সার্টিফিকেট দেন।
তোমার তো ছোটবেলায় ঘোড়ায় চড়ার বাতিক ছিল হে! ঘোড়া দেখলেই চেপে বসতে, ডাক্তার বলেন, কি রকম জানোয়ার কিনলাম, চড়ে একবার পরীক্ষা করে দেখবে না? আমার তো ঘোড়ায় চড়া প্র্যাকটিস করতেই কিছুদিন যাবে এখন!
তৎক্ষণাৎ অশ্ব-পরীক্ষায় সম্মত হন কাকা; হাতি-ঘোড়র ব্যাপারে বেশি বেগ পেতে হয় না রাজি করাতে কাকাকে। চতুম্পদের দিকে কাকার স্বভাবতই যেন টান। সে তুলনায় আমার দিকেই একটু কম বরং, পদগৌরব করার মত কিছু আমার ছিল না বলেই বোধ হয়।
ঘোড়ায় চাপবার বয়েস কি আছে আর? কাকা সন্দিগ্ধ সুরেই বলেন–দেখি তবু চেষ্টা করে। তারপর ডাক্তারবাবু, আমি এবং অশ্ববিক্রেতা-সর্বোপরি স্বয়ং অশ্বের ব্যক্তিগত সহযোগিতায় কষ্টেসৃষ্টে, কোনো রকম তো চেপে বসেন শেষটা।
কাকার দেহখানি তো নয়, ভারাক্রান্ত হয়ে ঘোড়াটা কেমন যেন ভড়কে যায় নড়বার নামটিও করে না। কাকা যতই হেট হেট করেন ততই সে লজ্জায় ঘাড় হেঁট করে থাকে।
অশ্ব বিক্রয়ের আশা ক্রমশই সুদূর রহিত হচ্ছে দেখে অশ্ববিক্রেতা বিচলিত হয়ে ওঠে; এবং তার হাতের ছিপটিও। কিন্তু যেই না ঘোড়ার পিঠে ছপাৎ করে একঘা বসিয়ে দেওয়া, অমনি ঘোড়াটা ঘুরপাক খেতে শুরু করে দেয়। এ আবার কি কাণ্ড! কাকা তো মরীয়া হয়ে ঘোড়ায় গলা জড়িয়ে ধরেন।
একদিকে ঘোড়ার ঘূর্ণবর্তের মধ্যে পড়ে ডাক্তারবাবুর শখের বাগানের দফা রফা, নানাপ্রকার গোলাপ গাছের চারা লাগিয়েছিলেন, ঘোড়া কেনবার কাছাকাছিই লাগিয়েছিলেন ঘোড়র পায়ে তাদের অপঘাতের আশঙ্কা তো করেননি কোনোদিন! অতঃপর অশ্ববর মুহুর্মুহ এগোতে আর পেছোতে থাকে, যে পথে এগোেয় সে পথে প্রায়ই পেছোয় না এবং বিদ্যুদ্বেগে অগ্রপশ্চাৎ গতির ধাক্কায় আর এক ধারের শাকসজির দফা সারে অশঙ্কুরে মুড়িয়ে যায় সব। এ-সমস্ত কয়েক মুহূর্তের ব্যাপার! আশ্চর্য ক্ষিপ্রতার সঙ্গে পরপর দুটি মহাদেশ এইভাবে বিধ্বস্ত করে অশ্বরত্ন নিদারুণ এক লাফ মারেন সেই এক লাফেই কাকা-পৃষ্ঠে, বাগানের বেড়া টপকে সামনের একটা নালা ডিঙিয়ে, তাকে অন্তর্হিত হতে দেখা যায়। আমিও দেরি করি না,তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের সাইকেলটায় চেপে পশ্চাদ্ধাবন করি। ঘোড়ার এবং কাকার। ধাবমান অশ্বকে সশরীরে খুব সামান্যই দেখা যায়, অল্পক্ষণ পরেই তিনি কেবল শ্রুতিগোচরহতে থাকে। দূর থেকে কেবল খটাখট কানে আসে; কিছুক্ষণ পরে পদধ্বনিও না–শুধুই চিহি চিহি। চিহিরই অনুসরণ করি।
অনেকক্ষণ অনেক ঘোরাঘুরির পর এক ধু-ধু প্রান্তরে এসে পড়ি। সন্ধ্যা কখন পেরিয়ে গেছে। আধখানা চাঁদের ম্রিয়মাণ আলোয় কোনরকমে সাইকেল চালিয়ে যাই কিন্তু সামনে যতদূর দৃষ্টি যায় কোথাও চিহ্নমাত্র নেই–না ঘোড়ার না সওয়ারের।
ইতস্তত সাইকেল চালাতে থাকি, কী করব আর? ফাঁকা মাঠ আর পরের সাইকেল পেলে কে ছাড়ে? কাকাহারা হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়ে কাকীর কাছে কী কৈফিয়ৎ দেব? মুখ দেখাব কি করে? সে ভাবনাও যে নেই তা নয়।
কে-রে? শিবু নাকিরে? শিবুই তো!
চমকে গিয়ে সাইকেল থামাই। দেখি কাকা এক উঁচু ঢিবির পাশে পা ছড়িয়ে পড়ে আছেন।
আঃ, এসেছিস তুই? বাঁচলুম।
তোমার ঘোড়া কোথায় কাকা?
আমায় ফেলে পালিয়েছে। কোথায় পালিয়েছে জানি না। কাকার দীর্ঘ নিঃশ্বাস পড়ে–আঃ হতভাগার পিঠ থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে বেঁচেছি! কিন্তু এ কোথায় এনে ফেলেছেরে? এও কি রামপুরহাট?
উঁহু, মনে তো হয় না। রামপুরহাট কত মাইল দূরে তা বলতে পারব না, তবে বেশ কয়েকঘন্টা দূরে।
তাহলে এ কোন জায়গা? তুই কি বলছিস তবে লক্ষ্মণপুরহাট?
লক্ষ্মণপুর হতে পারে, ভরতপুর হতে পারে, হনুমানপুর হওয়াও বিচিত্র নয়। কিন্তু হাটের চিহ্নমাত্র নেই কাকা। চারধারেই তো ধুধু মাঠ! সাইকেল করে চারদিকে ঘুরলাম, জনমানবের পাত্তাই নেই কোথাও।
তবে…তবে এই কি সেই মহাশ্মশান? কাকা নিজেই নিজের জবাব দেন, দুর্লক্ষণ দেখে তাই তো মনে হয়। দমকা হাওয়ায় মড়া-পোড়ানোর গন্ধও পেয়েছি খানিক আগে। আর, দু-একটা শেয়ালকেও যেতে দেখলাম যেন। তাহলে–তাহলে কি হবে? কাকার কণ্ঠে অসহায়তার সুর।
কাকার বিচলিত হওয়ার কারণ অমি বুঝি না।–কেন? এখানে আসবার জন্যেই তো আমাদের আসা? তাই নয় কি? তাহলে সিদ্ধিলাভের ব্যাপারটা শুরু করে দিলেই তো হয়।
আজই? আর রাত্রেই? আজ যে সিদ্ধিলাভের জন্য মোটেই আমি প্রস্তুত নইরে। আজ কি করে হয়?
যখন হয়ে পড়েছে তখন আর কি করা? আমি কাকার পাশে বসে পড়ি। –তেমন ঝোঁপ-ঝাড় নেই, বেশ ফাঁকাই আছে কাকা! ভূতপ্রেত এলে টের পাওয়া যাবে তক্ষুনি।
সমস্ত দিন ট্রেনে-খাওয়া-দাওয়া হয়নি। খিদেয় নাড়ী চিঁ চিঁ করছে, এই কি সিদ্ধিলাভের সময়? তোর কি কোন আক্কেল নেই রে শিবু? এ রকম বিপদ হবে জানলে কে আসতে চাইত–এই আমি নিজের কান মলছি, যদি আজ উদ্ধার পাই–?
তাঁর একমাত্র কানকে কাকা একমাত্ৰা মলে দেন। কিন্তু উদ্ধারের কোন ভরসাই মেলে না। ততক্ষণে চাঁদ ডুবে অন্ধকার ঘোরালো হয়ে আসে। দুহাত দূরেও দৃষ্টি অচল হয়। আমি কাকার কাছ ঘেঁষে বসি, আমায় গা ছমছম করতে থাকে।
অবশেষে কাকা বলেন–তাই করা যাক অগত্যা। তোর কথাই শুনি। আজ রাত্রে এখান থেকে বেরুবার যখন উপায় নেই, তখন কি আর করা? কাল সকালে একেবারে সিদ্ধি পকেটে করে হারাধানের বাড়ি ফিরলেই হবে। এই নে আমার কোট, এই নে পিরাণকাকা একে একে আমার হাতে তুলে দিতে থাকেন। জিজ্ঞাসা করি–তুমি কি খালি গা হচ্ছ কাকা–
বাঃ, হব না? সাধু সন্ন্যাসী কি কাপড়জামা পরে চাদর দিয়ে তপস্যা করে নাকি? তাহলে কি হয় রে মুখ? এই নে চাদর এই নে আমার গেঞ্জি–এই নে আমার–
আমি সচকিত হয়ে উঠি। অতঃপর পরবর্তী বস্তুটি কী তা বুঝতে আমার বিলম্ব হয় না।–উঁহু, কাপড়টা থাক কাকা। কাপড় পরাতে তত ক্ষতি হবে না–
তুই তো জানিস। কাকা রাগান্বিত হন, হা কাপড়টা থাক। তাহলেই আমার সিদ্ধিলাভ হয়েছে! তবে এত কাণ্ড করে দরজি ডাকিয়ে গেরুয়া রঙের কৌপীনই বা তৈরি করলাম কেন, আর অমন কষ্ট করে সেটা এঁটে পরতেই বা গেলাম কেন তবে?,
কাপড়ও আমার হাতে চলে আসে। সেই ঘুটঘুঁটে অন্ধকারের মধ্যে কৌপীনসম্বল কাকা কর্ণলাভের প্রত্যাশায় ঘোর তপস্যা লাগিয়ে দেন।
আমি আর কী করব? কাকার কাপড়টাকে মাটিতে পাতি, কোটকে করি বালিশ, গেঞ্জিটাকে পাশ বালিশ। তারপর আপাদমস্তক চাদর মুড়ি দিয়ে সটান হই। আমি দেখেছি, জেগে থাকলেই আমার যত ভয়, ঘুমিয়ে পড়লে আর আমার কোনো ভয় করে না!
অনেকক্ষণ অমনি কাটে। ঘুমেরও কোন সাড়া নেই, কাকারও না। সহসা একটা আওয়াজ–চটাস।
আমি চমকে উঠি! কাঁপা গলায় ডাকি–কাকা!
কাকার কোন সাড়া নেই। আরো বেশি করে আমি চাদর মুড়ি দিই।
আবার খানিক বাদে চটাস। এবার আওয়াজটা আরো যেন জোরালো।
আবার আমার আর্তনাদ–কাকা!
অন্ধকার ভেদ করে উত্তর আসে–উঁহুঁহুঁ!
কাকার চাপা হুঙ্কারে আমি নিরস্ত হই। আর উচ্চবাচ্য করি না। কাকার যোগভঙ্গ করে কি নিজের কানের বিঘ্ন ঘটাবে? অন্ধকারের মধ্যেই ওঁর হাত বাড়াতে কতক্ষণ?
অনেকক্ষণ কেটে যায়, আমার একটু তন্দ্রার মতো আসে। অকস্মাৎ ফের চটকা ভাঙে; উঠে বসি, শুনতে থাকিচটাচট চড় চটাচট-চট। অন্ধকার ফের চৌচির করে কেবল ঐ শব্দ, আর কিছু না এবং বেশ জোর জোর।
তবে কি–তবে কি…? ভয়ে আমার হাত পা গুটিয়ে আসে। তাহলে কি তাল-বেতালেই কাকাকে ধরে পিটাতে শুরু করে দিয়েছে নাকি? কিংবা ভূতপ্রেতরাই কাকাকে বেওয়ারিশ পেয়ে মজা করে হাতের সুখ করে নিচ্ছে? যাই হোক, কোনটাই ভাল কথা নয়।
আমি মরীয়া হয়ে ডাকতে শুরু করি–কাকা কাকা কাকা–!
বসতে দিচ্ছে নারে–
আওয়াজ পেয়ে আশ্বাস পাই। তবু যা হোক, আমার কাকান্ত ঘটেনি। ও-ও-ও কি-কি-কিসের শব্দ? আমার গলা কাঁপে।
আর বলিস না। করুণ কণ্ঠের সঙ্গে ওতপ্রোত হয়ে দারুণ দীর্ঘনিঃশ্বাস। একদম, বসতে দিচ্ছে না।
কিসে বসতে দিচ্ছে না? ভূতে?
উহুঁ!
ডাকিনী–যোগিনী?
উ হুঁহু।
তবে কি তাল-বেতাল?
নাঃ। মশায়। মশার ভারি উৎপাত রে!
ওঃ, তাই বল। মশার কথা শুনে ভরসা পাই। তাহলে অন্য মারাত্মক কিছু নয়! তোমার চাদর মুড়ি দিয়েছিলাম বলে বুঝতে পারিনি এতক্ষণ! তাইতো! কী রকম মশার ডাক শুনছে কাকা,–পন পনপিন– কী ডাকবে বাবা! এরাই তোমার সেই ডাকিনী নয়তো?
কে জানে! কাকার বিরক্তির তীক্ষ্মতায় অন্ধকার বিদীর্ণ হয়, কিন্তু ডাকিনী না হলেও যোগিনী যে, তা আমি বিলক্ষণ টের পাই, আমার গায়ের সঙ্গে যোগ হওয়া মাত্রই।
আবার চটাপট শুরু হয়। মনের সুখে গালে মুখে হাতে পায়ে সর্বাঙ্গে চড়াতে থাকেন কাকা।
চপেটাঘাত ছাড়া মশকবধের আর কী উপায় আছে? অতঃপর কেবল এই চড়-চাপড়ই চলতে থাকে! এবং বেশ সশব্দেই। তপস্যা ও মাথায় উঠে যায়।
কিন্তু মশার সঙ্গে মারামারিতে পারবেন কেন কাকা? প্রাণী হিসেবে ওরা খেচর, কাকা নিতান্তই স্থলচর। ওদের হল আকাশ পথে লড়াই আর কাকার ভূমিষ্ট হয়ে। তাছাড়া কাকার একাধারে দুপক্ষকে আক্রমণ–মশাকে এবং কাকাকে। কাজেই, কিছুক্ষণ যুদ্ধ করেই কাবু হয়ে পড়েন কাকাবাবু। রণে ক্ষান্ত তাকে পরাজয় স্বীকার করতে হয়। এই ঘোরর সগ্রামে, মশাদের মধ্যে নিহতদের আমি দিতে পারব না–তবে আহতদের মধ্যে একজনের নাম আমি বলতে পারি–খোদ আমার খুড়োমশাই।
তার বৈরাগ্য এসে যায় তপস্যায়। এমন অবস্থায় কার বা না আসে? তিনি বলেন–দে আমার কাপড়জামা। গ্যায়ের চাদরটাও দে। সিদ্ধিলাভ মাথায় থাক। কানে আমার কাজ নেই আর, ঘুমিয়ে বাঁচি।
বিছানা, বালিশ, মশারি সবই ফিরিয়ে দিতে হয়। অবিলম্বেই লম্বা হন কাকা! মাটিতে শুয়ে পরনের কাপড়কেই লেপে পরিণত করি, কি আর করব? তারই তলায় গা ঢাকা দিয়ে আত্মরক্ষা করতে হয় আমায়। লেপের প্রলেপে যতটুকু বাঁচোয়া!
অমন ভয়ঙ্কর রাতও প্রভাত হয়। আবার সূর্যের মুখ দেখি আমরা। ইতস্তত তাকাতেই চোখে পড়ে–সেই ঘোড়া! একটু দূরে উবু হয়ে বসে আছে। অদ্ভুত দৃশ্য! ঘোড়াকে এভাবে বসে থাকতে জীবনে কখনো দেখিনি। সারা রাত তপস্যা করছিল নাতো?
কাকা উৎসাহিত হয়ে ওঠেন–যাক বাঁচিয়েছো। এতখানি পথ আর হেঁটে ফিরতে হবে না। বর হোক, অশ্ববর তো পাওয়া গেল আপাতত!
কিন্তু পরমুহূর্তেই ওঁর উৎসাহ নিভে আসে। গত সন্ধ্যার দুর্ঘটনা স্মরণ করে উনি দমে যান। আমি কাকাকে অভয় দিই–সমস্ত রাত মশার কামড় খেয়ে শায়েস্তা হয়ে এসেছে ব্যাটা। দাঁড়াবার ওর খ্যামতা নেই বসে পড়েছে দেখছ না!
তাই বটে! কাকা ঈষৎ চাঙ্গা হল, তাহলে ঠুকঠুক করে বেশ নিয়ে যেতে পারবে। কি বলিস তুই!
নিশ্চয়। আর আমার তো সাইকেলই আছে–আমি জানাই।
কাছে গিয়ে ওকে উঠতে বলি–ব্যাটার কোনো গ্রাহ্যই নেই। কাকা কান মলে দেন। নিজের নয়, ঘোড়ার: তবুও সে নট নড়ন–চড়ন। গালে ওর আমি থাবড়া মারি, তথাপি নিৰ্দ্ধক্ষেপ! অগত্যা আমি আর কাকা দুজনে মিলে ল্যাজ ধরে ওকে টেনে তুলতে যাই। আমাদের প্রাণন্ত চেষ্টায় অবশেষে ও খাড়া হয়।
সারারাত চুপচাপ ছিল ঘোড়াটা! এত কাছেই ছিল অথচ! এর কারণ কিরে শিবু? কাকা জিজ্ঞাসা করেন, এতো লক্ষণ ভালো নয়।
জপ করছিলো বোধ হয়। আমি ব্যক্ত করি, সমাধি হয়ে গেছে দেখছ না।
তাই হবে। স্থানমাহাত্ম যাবে কোথায়? কাকা দীর্ঘনিঃশ্বাস পড়ে,-এ তো সিদ্ধিলাভের জায়গা, তবে, হ্যাঁ–যদি না তুলে দেয়–
সিদ্ধিলাভের কথায় কাকার কানের দিকে তাকাই। কানটা যথাস্থানেই নেই। কাকার সিদ্ধিলাভ আর হল না এ-যাত্রা! আমার দীর্ঘনিঃশ্বাস পড়ে!
কাকা ঘোড়ার পিঠে চাপেন। ঘোড়ার চলবার উদ্যোগই নেই, সেই পুরনো বদঅভ্যাস। আমাদের ছিপটি মারার সাহস হয় না। কালকের অত ঘোরা-ঘুরির পর–আবার? অনেক করে ওকে বোঝাই। বাপু বাছা বলে ঘাড়ে পিঠে হাত বুলিয়ে দিই ওর।
ও কেবল জবাব দেয়, চিঁ হিঁ হিঁ।
এই ভাবে বহুক্ষণ আমাদের কথোপকথনের পর ও রাজী হয়। হাঁটতে শুরু করে। কিন্তু এ আবার কি বদখেয়াল? পেছন দিকে হাঁটতে থাকে! হ্যাঁ, সটান পেছনেই।
গতিক দেখে তো প্রায় কেঁদে ফেলেন।–কান তো গেছেই, এবার কি ঘোড়ার পাল্লায় পড়ে প্রাণটাও বেঘোরে যাবে নাকিরে শিবু?
আমিও ভাবিত হইয়া কিন্তু ঘাবড়াতে দিই না কাকাকে। বলি–ভয় খেয়ো না কাকা। বুঝতে পেরেছি কি হয়েছে। আর কিছু না, ঘোড়াটা সিদ্ধিলাভ করেছে। একে স্থানমাহাত্ম, তার ওপরে কাল সারা রাত ঘোরতর তপস্যা–যাবে কোথায়? তার ফলেই ঘোড়ার এই কাণ্ড।
সিদ্ধিলাভ করেছে কি করে বুঝলি? কাকার কণ্ঠ করুণতর হয়।
এ আর বুঝছ না কাকা? যারা সিদ্ধিলাভ করে তারা কি আমাদের মতো হবে? তাহলে সিদ্ধপুরুষে আর আমাদের মতো কাঁচাপুরুষে তফাত কি? আমরা সামনে দিয়ে হাঁটি, সিদ্ধপুরুষ হাঁটবেন পেছনের দিকে। সিদ্ধিলাভ করলে পেছনে হাঁটতেই হবে। সিদ্ধপুরুষদের চালচলনই আলাদা। সিদ্ধঘোড়ারও।
আমার ব্যাখ্যা শুনে কাকার চোখ বড় হয়। তিনি তখন জাঁকিয়ে বসেন বাহনের পিঠে–যাক বাঁচা গেছে, সিদ্ধিলাভের ফাঁড়াটা ঘোড়া দিয়েই গেছে। আমার হলে কি রক্ষা ছিল? এই বাপু নিয়ে এতো বয়সে পেছন হাঁটাতে হলেই তো গেছলাম! অমন সিদ্ধি আমার পোষাত না বাপু!
আমি আন্দাজী রামপুরহাটের দিকে নির্ণয় করে নিয়ে সেই মুখো ঘোড়াটার পেছন ফেরাই। কাকা ঘুরে বসেন। বলেন দে, লেজটা তুলে দে আমার হাতে। ওর ল্যাজকেই লাগাম করব আজ। সিদ্ধপুরুষের আবার ল্যাজ কেন?
ল্যাজহস্তগত করে অনুরোধ করেন কাকা–এবার হাঁটা প্রভু! অনেকটা গানের সুরে মতো করে। ভজন গানের মতন।
আশ্চর্য, বলা মাত্রই ঘোড়াটা চলতে শুরু করে। বেশ ধীর চতুষ্পদক্ষেপে। রাগ হিংসা-ক্ষোভ-দুঃখ চালাকি-চতুরতা, কোন কিছুর বালাই নেই ওর ব্যবহারে। শুধু সিদ্ধ নয়, এ সমস্তই সুসিদ্ধ হওয়ার লক্ষণ।
ঘোড়া চলতে থাকে। পেছন ফিরিয়ে সামনের দিকে, কিংবা মুখ ফিরিয়ে পেছনের দিকে। যেটাই বলো।
আমিও সাইকেল চালিয়ে যাই। ওর পেছন-পেছন কিংবা মুখোমুখি।