রোডল
রিংকু আজ সাত বছরে পড়ল। এবারে তার জন্মদিনে বাবার উপহার রোডল। দু-বছর ধরে সে বায়না করছে রোডল কিনে দেওয়ার জন্যে। তার বন্ধু সোনি তো তিন বছর বয়স থেকেই রোডল নিয়ে খেলা করছে। দুটো রোডল ভেঙেও ফেলেছে ইতিমধ্যে। এখন তিন নম্বর তার সঙ্গী। রিংকুর বয়সি আর কেউ এই সুপাররাইজ বিল্ডিং-এ নেই, যার এখনও রোডল জোটেনি।
শুধু রিংকু কেন, তার মা-ও যত অবাক, তত খুশি। তাই বোধহয় মা-মেয়ে কেউ খেয়ালই করেনি যে রোডলের বাঁ চোখটা পাথরের মতো নীল। পলক পড়ছে না।
বাবা প্যাকিং কেস খুলে রোডলকে বার করলেন। হাত-পা-গুলো ছিল। সেগুলো জুড়ে তাকে দাঁড় করিয়ে পেটের মধ্যে ব্যাটারি ভরে সুইচ টিপতেই তার কান দুটো নীল হয়ে উঠল।
রিংকু হাততালি দিয়ে মাকে জড়িয়ে এক পাক ঘুরে নিল। এবার হাঁটবে, এবার হাঁটবে!
কিন্তু বাবা আবার রোডলের পেট থেকে ব্যাটারি বার করে নিয়েছেন। রিংকুর দিকে তাকিয়ে বাবা বললেন, রোডলের কান নীল হয়ে গেলে ওকে আর তখন কোনও হুকুম করবে না। তখন হুকুম করলে ও একেবারে বিগড়ে যেতে পারে।
-কিন্তু আমি তো ওকে কিছুই বলিনি, তাহলে কান নীল হয়ে গেল কেন?
–তুমি বলোনি, কিন্তু আমি ওকে আজ অনেকটা হাঁটিয়েছি।
–হাঁটিয়েছ! তাহলে আমায় নিয়ে গেলে না কেন? আমিও দেখতে পেতাম।
-না বাবা, ভেবেছিলাম, দু-জনে মিলে হাঁটতে হাঁটতেই ঘরে ঢুকে তোমাকে চমকে দেব। একটু দাঁড়াও, ব্যাটারিটা চার্জ করে নিলেই রোডল আবার চলাফেরা শুরু করবে।
মাত্র আধ ঘণ্টা হেঁটেই রোডলটা যেভাবে খোঁড়াতে আরম্ভ করেছিল, রিংকুর বাবা তাতে ভয় পেয়ে যান। তাই তাড়াতাড়ি সুইচ অফ করে আবার প্যাকিং বাক্সে ভরে ট্যাক্সি চড়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে তাঁকে।
আরও কিছুক্ষণ চার্জে রাখলে ভালো হত জেনেও রিংকুর তাগাদায় রোডলকে চালু করে দিতে হল।
রোডলের কী নাম হবে, রিংকু তা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল। প্রথমেই সে রোডলকে শিখিয়ে দিল, টুটু বলে ডাকলেই সে যেন সাড়া দেয়। রিংকু এখন রোডলের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। যতক্ষণ না সে থ্যাংক ইউ রিংকু বলছে, হাতটা ধরেই থাকতে হবে। এরপর থেকে রিংকু তাকে ছুঁলেই সে জেগে উঠবে। শুধু রিংকু ছুঁলে–আর কেউ তাকে জাগাতে পারবে না। আর কারও কথা শুনবে না, কারও আদেশ মানবে না। শুধু রিংকুর গলা আর তার স্পর্শ।
বিকেলবেলায় রিংকুর বন্ধুরা এল। কেক কাটা হয়ে গেছে। রিংকু টেবিলে সাতটা মোমবাতি জ্বেলে বলল, টুটু! টুটু! আজ আমার জন্মদিন। যাও! মোমবাতি নেবাবে না?
রোডল বলল, কেক কই?
রিংকু হেসে গড়িয়ে পড়ে, টুটুকে ঠকানো বেশ শক্ত দেখছি!
রিংকু গম্ভীর গলায় বলল, মোমবাতি নিবিয়ে দিতে বলছি না!
টুটু গুটিগুটি পায়ে টেবিলের কাছে এল, তারপর চেয়ার টেনে তার ওপর উঠল। মুখ নিচু করেও আবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল, তোমার বয়স কত?
রিংকুর বাবা যেন নিশ্চিন্ত হয়ে শ্বাস ফেললেন। মা জিজ্ঞেস করলেন, কী হল?
–না, কিছু না। রোডল যদি এই প্রশ্নটা না করেই ফুঁ দিত তাহলে বুঝতাম, পুরো ঠকিয়ে দিয়েছে।
–চুপ করো! রিংকুর সামনে এসব কথা কক্ষনো বলবে না।
মোমবাতি পর্ব শেষ, রিংকু তবু টুটুর ওপর নানা শাসন আর হুকুম চালিয়ে যাচ্ছে।
বন্ধুরা চলে যাবার পরে বাবা বললেন, রিংকু, তুমি তো জানো রোডলরা শুধু খেলার জন্য নয়। তুমি ওর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবে। তোমার অনেক কাজেই ও সাহায্য করবে।
রিংকু বলল, সে তো জানি, কিন্তু কী যে শিখি, কিছুই তো মাথায় আসছে না।
মা বলল, কেন! তোর বন্ধুরা যে অত ফুল দিয়ে গেল, কোনটার কী নাম, সে তো আমিও জানি না।
–ঠিক বলেছ! ঠিক বলেছ! রিংকু মা-র গলা জড়িয়ে ঝুলে পড়েছে।
বেগুনি রঙের ওপর কালো স্ট্রাইপ দেওয়া এক-পাপড়িওয়ালা ফুলটা নাকের কাছে ঠেকিয়ে টুটু বলল, অ্যান্ড্রোমিডার পাঁচ নম্বর পৃথিবী থেকে পেড়ে এনেছে। তারপর একটা করে ফুল তোলে আর বলে যায়–নীল গন্ধরাজ, ভেগাস থেকে। বুরুহিলা-স্যান্ডাস এম এর মেজ চাঁদ থেকে।
কিন্তু সবচেয়ে মজার যে ফুলটা–গোলাপি নরম একটা বলের মতো আর সারাক্ষণ ধুকপুক করছে-কুঁকড়ে যাচ্ছে আর ফুলে উঠছে–সেটা হাতে নিয়ে টুটু যেন অবাক হয়ে বসে রইল। ঘাড় কাত করে বার বার ডান চোখটা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। তারপর আবার ভাবছে। কিছু বলছে না।
রিংকুর বাবা বলেন, এটার নাম ও জানে না। ফুলটা সরিয়ে নাও, রিংকু।
-না, ওকে বলতেই হবে। এসব দুষ্টুমি চলবে না। এই ফুলটার নাম তো সবাই জানে। আমিও জানি। কত শক্ত শক্ত নাম বলে দিল আর এটার বেলায়…
বাবা টুটুর সুইচ অফ করে দিলেন।
–শোনো রিংকু, তুমি এরকম করলে তো হবে না। তাতে তোমার টুটুরই খারাপ হবে। তুমি জানো, টুটু মানুষ নয়। যন্ত্র। ওকে যা শেখানো হয়েছে, সেইটুকুই জানে। ও যখন তৈরি হয়, তখনও মানুষ বিটা গ্যালাক্সিতে পা দেয়নি। টুটু কী করে জানবে বলো, বিটা গ্যালাক্সির কোন পৃথিবীতে মাটির নীচে এই ফুল ফোটে?
বাবা ভেবেছিলেন, রিংকু ঠিক জিজ্ঞেস করবে, তুমি পুরোনো রোডল কিনলে কেন?
রিংকু কিন্তু আবার টুটুকে চালু করে দিয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। আর আপন মনে বলছে, টুটু, বুঝলি তুই একটা সেকেলে রোডল। তোর দামও নিশ্চয় কম। তা হোক–তুই খুব ভালো।
.
দিনরাত টুটুকে নিয়ে হইচই জুড়লে সমস্যা হত। ব্যাটারি চার্জ করার খরচ জোগাতে ফতুর। বিশেষ করে এই মডেলের রোডলগুলো খুব ইকনমিক নয়। কিন্তু রিংকু তা করেনি। টুটু বেশি পরিশ্রম করতে পারে না, সেটা সে বোঝে আর তাই রিংকু তাকে যখন তখন খাটাতে চায় না।
কিন্তু এখন রোজকার টিফিনের পয়সা থেকে কিছুটা জমাতে পারে। সেই জমানো পয়সায় সপ্তাহে একদিন আইসক্রিম খায়। টুটুই তাকে হিসেব করে বলে দেয়, কবে কী খাবে। তাতে পেটও ভরে, পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালোরি, প্রোটিন, ভিটামিন ইত্যাদিরও অভাব হয় না, আবার সস্তাও হয়। রবিবার বিকেলে আইসক্রিম কেনা যায়।
সেই রবিবার টুটু কিন্তু ওদের চিন্তায় ফেলে দিল। কখন বেরিয়েছে, কিন্তু ফেয়ার নাম নেই। সবাই ছটফট করছে। আজই তাকে প্রথম একা রাস্তায় বেরোতে দেওয়া হয়েছে। রিংকু এক মাসের মধ্যেই তাকে রাস্তাঘাট চিনিয়ে দিয়েছে।
কাল খেলার সময় পায়ে লেগেছিল বলে রিংকু বেরোয়নি। পাঁচ মিনা দিয়ে টুটুকে বলেছে আইসক্রিম কিনে আনতে। মিনিট পনেরোর বেশি তো লাগার কথা নয়। এদিকে এক ঘণ্টা হতে চলল।
টুটুর পায়ের পরিচিত চপাস চপাস শব্দ শুনেই সকলে উঠে দাঁড়াল। পা-টা যেন একটু টেনে টেনে হাঁটছে। হতেই পারে যে, ব্যাটারির চার্জ কমে এসেছে। এতক্ষণ লাগবে কে ভেবেছিল!
–টুটু! এত দেরি করলে কেন? কৈফিয়ত চাইল রিংকু।
রাস্তায় তোমার বন্ধুরা আমায় আটকে রেখেছিল। কত প্রশ্ন–কবে তোমাদের বাড়ি এসেছি, আমার বাঁ চোখটা ওরকম কেন–একের পর এক। তোমার এ বন্ধুরা আমায় আগে দেখেনি।
রিংকু টুটুকে নিয়ে কখনও খেলার মাঠে যায়নি বলেই বোধহয় ওরা কেউ খেয়াল করেনি, তারও একটা রোডল হয়েছে।
-তার জন্যে এত দেরি?
–ওরা যে বলল, আমি বাসি আইসক্রিম কিনেছি–বাজে জিনিস–তাই টেস্ট করে দেখাতে হল সেটা সত্যি নয়।
টুটু আইসক্রিমসুন্ধু হাত বাড়িয়ে ধরল।
–এ কী! দু-কাপ! দুটো কিনলে কী করে?
–ডাউনটাউন শপ থেকে। ওখানে জিনিসের দাম কম।
রিংকু বাবার মুখের দিকে তাকাল। দাম কম হলেও ওরা আইসক্রিম কেনার জন্য কখনও অতটা পথ হাঁটার কথা চিন্তাও করবে না।
টুটু বলে উঠল, কাপ দুটো আগে ফ্রিজে ঢুকিয়ে দাও। একটু গলে গেছে বোধহয়।
.
প্লেগ্রাউন্ডে এসে রিংকু প্রথমেই ক্যারাটে খেলা শুরু করে দিল। সিন্থেটিক ঘাসের সবুজ নরম মাঠ। ওর বন্ধুরা সকলেই এতদিনে যে যার রোডলের সঙ্গে প্র্যাকটিস করে বেশ ওস্তাদ হয়ে উঠেছে।
সোনি ছুটে এল, রিংকু! তুই রোডল কিনেছিস? বলিসনি তো? কী মজা।
সোনি এর আগে আগে কয়েকবার তার রোডলের সঙ্গে রিংকুকে খেলার সুযোগ দিয়েছিল।
রিংকু খুব গম্ভীর মুখে জানাল, টুটুর সব ভালো, কিন্তু একটু বুড়ো হয়ে গেছে। একটুতেই টায়ার্ড হয়ে যায়।
সোনি বলল, সো হোয়াট! প্যাঁচগুলো শিখে নেওয়াই আসল কথা। তারপর তো…
সোনি যা-ই বলুক, রিংকু জানে, নতুন রোডলরা অনেক নতুন নতুন প্যাঁচ জানে।
কিছুক্ষণ বাদে মাঠের ওপর ফুরফুর করে উড়ে এল একটা লাল হেলিকপ্টার। ক্রমেই নীচে নেমে আসছে। রিংকু মুখ তুলে তাকাল। হেলিকপ্টারে খোল দরজায় একটা লোক দাঁড়িয়ে, হাতে হোঁতকা চেহারার ক্যামেরা।
বাচ্চারা হাততালি দিয়ে অভ্যর্থনা জানাল। চ্যাঁচামেচি জুড়েছে–ভিডিয়ো ক্যামেরা, আমাদের টিভি তুলছে…
.
হেলিকপ্টার থেকে মাইক্রোফোন হেঁকে উঠল, তোমরা ওপর দিকে না তাকিয়ে খেলায় মন দাও। আমরা রোডল কোম্পানির লোক। তোমাদের খেলার ছবি তুলতে এসেছি। পরশু কমার্শিয়াল প্রোগ্রামে দেখতে পাবে। আটটা পঞ্চান্ন।
রিংকু আবার টুটুর সঙ্গে লড়াই জুড়ে দিয়েছিল, কিন্তু চমকে উঠল মাইক্রোফোনের শব্দে। একেবারে কানের কাছে।
–এই যে শোনো…।
রিংকু দেখে, হেলিকপ্টারটা ঠিক তার মাথার ওপর এসে দাঁড়িয়েছে। তার খোলা দরজা দিয়ে একটা লোক তাকেই লক্ষ করে হাত নেড়ে সরে যেতে বলছে।
মাইক্রোফোন আবার বলে উঠল, হ্যাঁ হ্যাঁ, তোমাকেই সরে যেতে বলা হচ্ছে। তুমি মাঠের বাইরে গিয়ে দাঁড়াও। ছবি তোলা শেষ হলে তখন এসো।
ব্যাপারটা রিংকুর মাথায় ঢোকে না।
–কী হল? শুনতে পাচ্ছ না? তোমার ওই বুড়ো রংচটা রোডল থাকলে আমাদের ছবিটাই মাটি হবে। বাবাকে বলল, নতুন রোডল কিনে দিতে। এসব অচল হয়ে গেছে।
চারধার থেকে সবাই হেসে ওঠে। বুড়ো রোড! রংচটা! রিংকুর রোডল বুড়ো রোডল!
রিংকু কারও দিকে তাকায় না। ঘাড় সিধে করে পা ঠুকে ঠুকে টুটুর হাত ধরে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে আসে। খেয়াল করেনি, সোনি কখন অ্যাম্বির হাত ধরে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
মন খারাপ করিসনি রিংকু। অনেক কষ্টে তোর বাবা…
–অ্যাটাক টুটু! অ্যাটাক!
সোনির রোডল অ্যাম্বির দিকে আঙুল তুলে হঠাৎ চিৎকার করে ওঠে রিংকু। সোনি থতমত খেয়ে যায়। সে তো ভালো কথাই বলেছে..
টুটু জাপটে ধরে অ্যাম্বিকে। গায়ের জোরে চেপে গুঁড়িয়ে দিতে চায়।
সোনি ভয় পেয়ে বলে, অ্যাম্বি। সাবধান! লড়াই করো। লড়াই। ফাইট ব্যাক।
সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বিও ধস্তাধস্তি জুড়ে দেয়।
সোনি বলে, ভালো চাস তো টুটুকে থামতে বল রিংকু। অ্যাম্বির গায়ে ওর চেয়ে ঢের বেশি জোর। টুটুকে ও মেরে ফেলবে।
কিন্তু পাগলের মতো চাঁচায়, টুটু, ওকে হারাতেই হবে। হারাতেই হবে। চালিয়ে যাও চালিয়ে যাও।
অ্যাম্বির ডান হাতের ঘুসি এসে পড়ে টুটুর ওপর। এতক্ষণে তার বাঁধন একটু ঢিলে হয়েছে। রিংকু বুঝতে পারে, অ্যাম্বির চেয়ে টুটুর ওজন বেশি, তার গায়ে লোহার চামড়াও আধুনিক রোডল অ্যাম্বির চেয়ে অনেক পুরু। টুটুও বোধহয় সেটা বোঝে, জানে যে এটাই তার অ্যাডভান্টেজ। ক্ষিপ্রতায় অ্যাম্বিকে সে ঠকাতে পারবে না। তার একমাত্র সুযোগ আলিঙ্গনের চাপ থেকেই আসতে পারে। টুটু তাকে যত জাপটে ধরতে যায়, অ্যাম্বি ততই বাঁধন খুলে সরে আসার চেষ্টা করি, ঘুসি চালায়, ছটফট করে। হঠাৎ অ্যাম্বি তার ডান পা টা হাঁটুর কাছে একটু ভাঁজ করার জায়গা করে নিয়ে টুটুর তলপেটে আঘাত করল। টাল সামলাতে পারল না টুটু। মাটিতে পড়ে গেল। অ্যাম্বি সেই ফাঁকে এক লাফে পাশে সরে গিয়ে লাথি কষাল টুটুকে। টুটু একটু সরে গেলেও আঘাত লাগল। হুমড়ি খেয়ে পড়ল। অ্যাম্বি ছুটে এসে পেছন থেকে তার গলা আঁকড়ে ধরল।
রিংকু দেখল, টুটুর কানটা নীলাভ হয়ে উঠেছে। সোনি বলল, রিংকু! টুটুকে যদি বাঁচাতে চাস
রিংকু কান্না চেপে বলে উঠল, ফিনিশ হিম টুটু! ফিনিশ হিম!
টুটু তার সমস্ত শক্তি দিয়ে অদ্ভুত এক প্যাঁচ মেরে ছিটকে ফেলল অ্যাম্বিকে। অ্যাম্বি লড়ছে তার যৌবন দিয়ে, টুটু লড়ছে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে।
টুটুর কানটার নীল রং আরও গাঢ় হয়ে উঠেছে।
টুটু টলমল করে এগিয়ে যাচ্ছে অ্যাম্বির দিকে। ছুটছে না কেন? ছুটে যাও টুটু। ছোটো!
টুটুর কানটা টকটকে বেগুনি।
অ্যাম্বি মাটি থেকে উঠে দাঁড়ানোর আগেই টুটু যদি ওকে ধরে ফেলতে পারে…
কিন্তু অ্যাম্বি উঠে দাঁড়িয়েছে। দু-পায়ে ভর রেখে নতুন করে লড়াই শুরু করার জন্য তৈরি।
হঠাৎ থমকে দাঁড়াল টুটু। তারপর দু-হাঁটু ভাঁজ করে বসে পড়ল মাটিতে। নিল-ডাউনের ভঙ্গি। তারপর সামনে মাটিতে দু-কনুইয়ের ভর রেখে মাথাটা ঝুলে পড়ল। কপালটা এসে ঠেকেছে মাটিতে।
অ্যাম্বি তাচ্ছিল্যভরে নিচু হয়ে এক হাতে তাকে পুঁটি ধরে টেনে দাঁড় করাল।
রিংকু ফিশফিশ করে বলল, হিট হিম নাই!
টুটু ডান হাতটা মুঠো করে অসতর্ক অ্যাম্বির চোয়ালে একটা হুক করার জন্য যেন স্লো মোশন ফিমের মতো হাত বাড়াল। কিন্তু ঘুসিটা মাঝপথেই ফুরিয়ে গেল টুটুর প্রাণের মতোই।
–চলে আয় অ্যাম্বি!
সোনি রিংকুর দিকে ফিরে তাকাল, আমার কোনও দোষ নেই। যেচে ঝগড়া বাধালি কেন?
সোনির কথা রিংকুর কানে যায়নি। সে আপন মনে বলছে, ওয়েল ডান টুটু। হোক না বুড়ো, সেকেন্ড হ্যান্ড–ফুল চার্জ থাকলে নিশ্চয় জিতত।
কিন্তু ফুল চার্জ করানোর মতো অবস্থা যে তাদের নেই, রিংকু সেটা এই বয়সেই বেশ বুঝেছে। [চাঁদের মাঠে ওয়ান ডে গ্রন্থে সংকলিত, ১৯৯২, পুনশ্চ]