নবম অধ্যায় – ২১০০ সালে মানুষের জীবনের চালচিত্র

নবম অধ্যায় – ২১০০ সালে মানুষের জীবনের চালচিত্র

জানুয়ারি, ২১০০, সকাল ৬.১৫

ধরো, তুমি নতুন বছরে সারা রাত ধুমধাম নববর্ষ উদযাপন শেষে বেশ দারুণ একটি ঘুম দিলে। হঠাৎ তোমার ঘরের দেয়াল আলোকিত হয়ে উঠল স্ক্রিনের মতো। একটি পরিচিত, বন্ধুত্বসুলভ মুখচ্ছবি ভেসে উঠল। এটি ‘মলি’-একটি সফটওয়্যার প্রোগ্রাম যেটি তুমি সদ্য কিনেছ। মলি উল্লাসিত কণ্ঠে ডাক দিল——জন ওঠো। তোমাকে অফিসে স্বশরীরের প্রয়োজন। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

“এক মিনিট অপেক্ষা করো, মলি! তুমি ছেলেমানুষি করছো।”-বলে তুমি বিড়বিড় করতে থাকলে। ‘এটি নতুন বছরের ‘প্রথম দিন এবং আমি একটি ঘোরের মধ্যে আছি। যাহোক এতো গুরুত্বপূর্ণ কী এমন হলো?

ধীর-স্থিরভাবে তুমি উদাসমনে বাথরুমে প্রবেশ করলে। যখন তুমি মুখ ধোয়ার কাজে ব্যস্ত তখন আয়নায়, টয়লেটে, সিংকে লুকায়িত শত শত ডিএনএ এবং প্রোটিন সেন্সর কাজ শুরু করে দিল, সেগুলো তোমার শ্বাসপ্রশ্বাস ও ত্যাগকৃত তরলবস্তুসমূহের বিকিরিত অণুসমূহ বিশ্লেষণ করল তোমার দেহে কোনো রোগব্যাধি আছে কিনা তা যাচাই করার জন্য।

বাথরুম থেকে বের হয়ে তুমি তোমার ঘাড়ে কিছু তার স্পর্শ করালে যার মাধ্যমে তুমি তোমার ঘরের টেলিপ্যাথিক নিয়ন্ত্রণ করলে : তুমি মানসিকভাবে তোমার তাপমাত্রা বাড়ালে, শ্রুতিমধুর সঙ্গীত বাজালে, রোবটকে রান্নাঘরে তোমার জন্য নাস্তা তৈরি করতে বললে, কফি আনতে নির্দেশ করলে, এবং তোমার চৌম্বকীয় গাড়িটিকে গ্যারেজ থেকে বের হয়ে তোমাকে তুলে নেওয়ার আদেশ দিলে।

যখন তুমি রান্নাঘরে প্রবেশ করলে তুমি দেখলে রোবটটি ডিম ভাজছে যেমনটি তুমি পছন্দ কর।

তারপর তুমি কন্টাক লেন্স চোখে পরলে এবং ইন্টারনেটে যুক্ত হলে। মিটমিট করছে, তুমি অনুভব করলে তোমার চোখের রেটিনায় ইন্টারনেট সংযুক্ত হয়েছে, সেখানে ভেসে ওঠা খবরের হেডলাইনগুলো কফি খেতে খেতে দেখে নিলে।

মঙ্গলগ্রহের ঘাঁটি থেকে অতিরিক্ত সরবরাহ চাওয়া হয়েছে। সেখানে আগাম শীত পড়েছে। সেখানে যারা স্থায়ী আবাস শুরু করেছে তারা যদি তাদের কলোনিজম-এর পরবর্তী ধাপ সম্পন্ন করতে চায় তাহলে শীতলীকরণ প্রক্রিয়া মোকাবিলায় তাদের আরও সরঞ্জামাদি দরকার। মঙ্গল গ্রহের তাপামাত্রা পৃথিবীর মতো বৃদ্ধি করার প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রথম স্টারশীপ যাত্রা শুরু করার জন্য প্রস্তুত। পিনের মাথার মতো আকারের লক্ষ লক্ষ ন্যানোবট চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে নিক্ষেপিত হবে, যেগুলো বৃহস্পতির কক্ষপথ ব্যবহার করে ঘুরবে এবং কাছাকাছি কোনো গ্রহের দিকে এগিয়ে চলবে। অন্য কোনো তারকাজগতে পৌঁছাতে এসব ন্যানোবটগুলোর কয়েক বছর সময় লাগবে।

এখনও আরেকটি ভিনগ্রহের প্রাণী স্থানীয় চিড়িয়াখানায় যুক্ত হতে যাচ্ছে। এই সময়ে এই ধরনের লম্বা দাঁতের বাঘ দেখা যায় না, তুন্দ্রা অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত ডিএনএ ব্যবহার করে রূপান্তর করে এটিকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। অনেক অনেক বিলুপ্ত প্রাণীর ডিএনএ পুনরুদ্ধার করার মাধ্যমে পৃথিবী সব চিড়িয়াখানায় রাখার জন্য এসব প্রাণী ক্লোন করা হচ্ছে।

স্পেস এলেভেটরগুলো কয়েক বছর ধরে মহাশূন্যে ঘুরে বেড়ানোর পর এখন তারা খুব অল্প সংখ্যক পর্যটককে বাইরে আকাশে ভ্রমণের সুযোগ দিচ্ছে। শুরুর সময়ের চেয়ে মহাশূন্যে ভ্রমণের খরচ সম্প্রতি ৫০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ফিউশন প্লান্টসমূহ প্রায় পঞ্চাশ বছরের পুরনো হয়ে গেছে। সেগুলো এখন কিছু কিছু নষ্ট করে নতুন প্লান্ট নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।

আমাজান জঙ্গলে ছড়িয়ে পড়া মারাত্মক ভাইরাস নিয়মিত বিজ্ঞানীরা মনিটরিং করছেন। যতদূর সম্ভব একটা ক্ষুদ্র অঞ্চলে এটি আটকে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে, তবে এর প্রতিষেধক এখনও নেই। বিজ্ঞানীদের একটি দল এটির জিন বিন্যাস আবিষ্কার করে এটির দুর্বল দিক চিহ্নিত করে এটি মোকাবিলার উপায় বের করার চেষ্টা করছে।

হঠাৎ একটি বিষয়ে তোমার চোখ আটকে গেল—

অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ম্যানহাটান-এর বাঁধে একটি বড় ছিদ্র দেখাতে দিয়েছে। যদি বাঁধটি সংস্কার করা না হয় পুরো শহর ডুবে যাবে, অন্য কয়েকটি শহর অতীতে যেমন করে ডুবে গেছে।

‘উহ-ওহ্’ শব্দ করে নিজেকে নিজে বলে উঠলে এজন্যই অফিস আমাকে ডেকেছে এবং ঘুম থেকে উঠতে বলেছে।

তুমি তোমার নাস্তা, পোশাকের কথা বাদ দিয়ে দরজা খুলে বেড়িয়ে পড়লে। তোমার গাড়ি যেটি গ্যারেজ থেকে নিজে নিজে বের হয়ে তোমাকে নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। তুমি টেলিপ্যাথিকভাবে তোমাকে নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব অফিসে যেতে আদেশ করলে। চৌম্বকীয় গাড়িটি দ্রুত ইন্টারনেট, জিপিএস এবং অসংখ্য চিপস যা রাস্তার ট্রাফিক মনিটরিং করছে-এসব সরঞ্জামের সাথে যুক্ত হলো।

অতিপরিবাহী পথ দ্বারা তৈরিকৃত চৌম্বকীয় গদির উপর দিয়ে ভেসে যাওয়ার মত তোমার চৌম্বকীয় গাড়িটি তোমাকে চুপচাপ অফিসে পৌঁছে দিল। হঠাৎ মলির মুখচ্ছবি তোমার গাড়ির জানালায় ভেসে উঠল। বলে উঠল——জন, তোমার অফিসের সর্বশেষ বার্তা হলো-কনফারেন্সরুমে সবার সাথে দেখা করতে। এছাড়াও তোমার বোনের একটি ভিডিও বার্তা আছে তোমার জন্য।’

গাড়িটি নিজে নিজে চলতে থাকা অবস্থায় তুমি তোমার বোনের বার্তাটি পড়ে নিলে। তোমার হাতের ঘড়িতে তার মুখমণ্ডল ভেসে উঠল। বার্তাটি এলো—’জন, মনে রেখো এই সপ্তাহের শেষ দিনে কেভিনের জন্মদিন পার্টি। ওর বয়স হবে ছয় বছর। তুমি ওকে একটি রোবট কুকুর কিনে দেবে বলেছিলে। আচ্ছা তুমি কি কাউকে দেখতে পাচ্ছ? আমি ব্রিজের উপর খেলা করছি এমন একজনের সাথে যাকে দেখলে তুমি খুশি হবে।’

নিজে নিজে তুমি বলে উঠলে— ‘উহ- ওহ’!

তুমি তোমার গাড়ি নিয়ে উড়তে পছন্দ করো! এতে বাধাবিপত্তি বা পথগর্ত নিয়ে চিন্তার কিছু নেই, যেহেতু এটি রাস্তার স্পর্শ ছাড়াই ঊর্ধ্বমুখে চলছে। এটিই সবচেয়ে ভালো। এতে জ্বালানি বেশি দরকার হয় না কারণ কোনো ঘর্ষণক্রিয়া এটির গতিবেগকে ধীর করে দেয় না।(তুমি বিড়বিড় করে বলতে থাকলে, গত শতাব্দীতে এটি বিশ্বাস করা কত কঠিন ছিল—যখন ঐ শতকের প্রথম দিকে জ্বালানি সংকট ছিল। তুমি মাথা ঝাঁকিয়ে ভাবলে ঘর্ষণের প্রতিক্রিয়া মোকাবিলায় বেশিরভাগ জ্বালানি অপচয় হয়েছে।)

তুমি অতীত মনে করলে যখন চৌম্বকীয় মহাসড়ক প্রথম চালু হলো তখনকার সময়ের কথা। মিডিয়া তিরস্কার করে বলেছিল বৈদ্যুতিক যুগের অবসান হতে যাচ্ছে চৌম্বকীয় যুগের উত্থানে। প্রকৃতপক্ষে তুমি বিন্দু মাত্রও বৈদ্যুতিক যুগকে অনুভব করছো না। বাইরে তাকিয়ে দেখলে-গাড়ি, ট্রাক এবং ট্রেন শা শা করে তোমার পাশ দিয়ে বাতাসে ভেসে চলছে। তুমি বুঝলে চৌম্বকীয় এই পদ্ধতিই চলাচলের পথ এবং অর্থ সাশ্রয়ী।

তোমার গাড়ি তোমাকে শহরের ডাম্পিং অঞ্চলে নিয়ে গেল। তুমি দেখলে সেখানে বেশিরভাগ বর্জ্য হলো কম্পিউটারের এবং রোবটের যন্ত্রাংশ। চিপস্- এর দাম নেই বললেই চলে-পানির দামের চেয়ে কম। অকেজোগুলো সারা পৃথিবীর শহরগুলোর ডাম্পিং অঞ্চল এসবে ভরা। একটি কথা প্রচলিত হয়ে গেছে-চিপস্ দিয়ে ভূমিসমূহ পরিপূর্ণ করে দেয়ার।

অফিস

অবশেষে তুমি তোমার অফিসে পৌঁছলে—যেটি একটি স্বনামধন্য নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়। যখন তুমি প্রবেশ করলে তখনই লেজার তোমার আইরিশ যাচাই করে তোমার মুখ শনাক্ত করল। কোনো প্লাস্টিকের পরিচয়পত্রের আর প্রয়োজন হলো না। তোমার দেহই তোমার পরিচয় বহন করে।

কনফারেন্স রুমটি প্রায় শূন্য, তোমার অল্প কয়েকজন সহকর্মী টেবিলের চারপাশে বসে আছে। কিন্তু তারপর তুমি যখন চোখে কন্টাক লেন্স পড়লে তোমার সহকর্মীদের থ্রিডি চিত্র বাস্তবে ভেসে উঠল টেবিলের চারপাশে। এগুলো তোমার ঐসব সহকর্মী যারা অফিসে স্বশরীরে না এসে তাদের হলোগ্রাফি পাঠিয়ে দিয়েছে।

তুমি রুমটি একনজরে দেখে নিলে। তোমার কন্টাক্ট লেন্স টেবিলে বসা সহকর্মীদের শনাক্ত করল, তাদের জীবনবৃত্তান্ত এবং অতীত কর্মচিত্র তুলে ধরল। তুমি লক্ষ করলে কন্টাক্ট লেন্স কয়েকটি বড় শট নিল। তুমি তখন মনের মাঝে কনফারেন্সে উপস্থিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের একটি নোট করে নিলে।

হঠাৎ করে তোমার বস্ এর ছবি তার চেয়ারে প্রতীয়মান হলো। তিনি ঘোষণা করলেন, ‘প্রিয় মহোদয়গণ, তোমরা অবগত আছ যে হঠাৎ করে মানহাটান বাঁধ ছিদ্র হতে শুরু করেছে। এটি ভীষণ মারাত্মক তবে যথা সময়ে এটি আমরা অবলোকন করেছি। সুতরাং ধসে পড়ার মতো ঘটনা হয়তো ঘটবে না। দুঃখজনক বিষয় হলো এখন পর্যন্ত যেসব রোবট পাঠানো হয়েছে সেগুলো এটি সংস্কার করতে ব্যর্থ হয়েছে।’

তাৎক্ষণিকভাবে, আলো কমে গেল এবং তুমি পানির নিচের বাঁধের থ্রিডি চিত্র স্পষ্টভাবে দেখতে পেলে। তুমি পুরোপুরি এখন পানিতে নিমজ্জিত এবং বাঁধের উপর স্পষ্ট ফাটল তোমার চোখের সামনে ভাসতে লাগল।

ছবিটি ঘুরতে থাকল, তুমি নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করলে ছিদ্রটি কোথায় হয়েছে। একটি বড় এবং গভীর ক্ষত তোমার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। তোমার বস বলতে থাকলেন-রোবট যথেষ্ট নয়। এটি এমন একটি ছিদ্র যা তাদের প্রোগ্রামিংয়ে উল্লেখ নেই। ওখানে আমাদের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোকজন পাঠানো দরকার—যিনি পরিস্থিতি সঠিকভাবে বুঝতে ও সমাধান করতে পারবে। আমার বলতে মনে নেই, তোমাদের মনে করিয়ে দিতে চাই—যদি আমরা ব্যর্থ হই তবে নিউইয়র্কের পানির নিচে বিলীন হয়ে যাওয়া শহরগুলোর মতো পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।

গ্রুপের সবাই শিহরিত হয়ে উঠল। সবাই জানে সেই বড় শহরগুলোর নাম যা সমুদ্রের পানির লেভেল বেড়ে যাওয়ায় বিলীন হয়ে গেছে। যদিও নবায়নযোগ্য প্রযুক্তি ও ফিউশন শক্তি ফসিল পুড়িয়ে শক্তি উৎপাদনের জায়গা বেশ কয়েক দশক ধরে প্রতিস্থাপন করেছে যা বর্তমান গ্রহের ব্যবহৃত শক্তিসমূহের মধ্যে মূলশক্তি তবুও মানুষজন কার্বন ডাই অক্সাইডের কারণে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে যা গত শতাব্দীর প্রথমদিকে আবহাওয়া মণ্ডলে নির্গত হয়েছিল।

অনেক আলোচনার পর, সিদ্ধান্ত হলো সেখানে মেরামতের জন্য মানব নিয়ন্ত্রিত একটি রোবট পাঠানো হবে। সেখানে তুমি এলে। তুমি রোবটটি ডিজাইন করতে সাহায্য করলে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মানব কর্মীদের ক্যাপসুলে রাখা হলো, যেখানে তাদের মাথার চারপাশে ইলেক্ট্রোডগুলো লাগানো হলো—তাদের মস্তিষ্ক থেকে প্রাপ্ত সংকেত রোবট সঙ্গে টেলিপ্যাথিক যোগাযোগ করতে পারবে। রোবটগুলো যা দেখে এবং অনুভব করবে—তাদের ক্যাপসুল থেকে, তা কর্মীরাও দেখতে এবং অনুভব করতে পারবে। এটি ঠিক তেমন যেন কোনো সুপার হিউমানের নতুন দেহ ছাড়া—তবে শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকার মতোই।

তুমি তোমার কাজের জন্য সংগত কারণেই গর্বিত। এসব টেলিপ্যাথেটিকালি নিয়ন্ত্রিত রোবট অনেক বার তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছে। চাঁদের ভিত্তি মূলত মানুষের কর্মীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যারা পৃথিবীতে তাদের ক্যাপসুলে আরামদায়ক এবং নিরাপদে অবস্থান করে। কিন্তু যেহেতু একটি রেডিও সংকেত চাঁদ পৌঁছাতে প্রায় এক সেকেন্ড সময় লাগে, তার মানে এই শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত এই সময় বিলম্ব সামঞ্জস্য করে কাজ সম্পাদন করার।

(তুমি তোমার রোবটগুলোকে মঙ্গলের ভিত্তিতেও রাখতে পছন্দ কর। কিন্তু এটি একটি সংকেতের জন্য বিশ মিনিট সময় নেয় মঙ্গলে পৌঁছাতে এবং বিশ মিনিট ফিরে আসার জন্য, মঙ্গলে রোবটদের সাথে যোগাযোগ করা খুব কঠিন হবে কাজ হবে। হায়! আমাদের সব অগ্রগতির জন্য, এমন একটি জিনিস আছে যা আমরা সামঞ্জস্য করতে পারি না : তা হলো আলোর গতি। )

কিন্তু সভার কিছু বিষয় তোমাকে এখনও পীড়া দিচ্ছে।

অবশেষে, তুমি তোমার বসের কথা নিয়ন্ত্রণ করার চিন্তা করলে। ‘স্যার, আমি এটা বলার জন্য বিব্রত, কিন্তু বাঁধের ছিদ্রটি দেখে সন্দেহজনকভাবে আমার মনে হয়, ফাটলটি আমাদের নিজস্ব রোবটগুলোর একটি চিহ্নের মতো।’

একটি জোড়ালো মুরমুর শব্দ অবিলম্বে রুম পূরণ করে ফেলল। আপত্তির ক্রমবর্ধমান শব্দ তুমি শুনতে পেলে : ‘আমাদের নিজস্ব রোবট? অসম্ভব। ভ্রান্ত। এটা আগে কখনো ঘটেনি!’ বলে সবাই প্রতিবাদ করল।

তারপর তোমার বস রুম শান্ত করল এবং গম্ভীরভাবে বলে উঠল ‘আমি ভীত ছিলাম যে কেউ এই সমস্যাটি উত্থাপন করবে, তাই আমাকে বলতে হবে যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা কঠোরভাবে গোপন রাখা উচিত। আমরা আমাদের নিজস্ব প্রেস রিলিজ ইস্যু না হওয়া পর্যন্ত, এই তথ্য এই রুমের বাইরে যেতে দেব না। হ্যাঁ, ছিদ্রটি এমন একটি রোবটগুলোর দ্বারা সৃষ্ট হয়েছিল যা হঠাৎ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।’

কোন্দলে সভাটি ভেঙে গেল। উপস্থিত লোকজন তাদের মাথা ঝাঁকিয়ে ভাবতে লাগল—এটা কীভাবে হতে পারে?

‘আমাদের রোবটগুলোর একটি নিখুঁত রেকর্ড আছে,’ তোমার বস জোর দিয়েই বলল-’নিখুঁত স্পষ্ট। কোন একটি একক রোবট কোন ক্ষতি করেনি, কখন করেনি। তাদের অব্যর্থ ও নিরাপদ কার্যপ্রক্রিয়া বারবার কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। আমদের কাছে সে রেকর্ডও আছে। কিন্তু তোমারা জানো যে, আমাদের সর্বশেষ প্রজন্মের উন্নত রোবটগুলো কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার করে, যা সর্বাধিক শক্তিশালী, এমনকি মানুষের বুদ্ধিমত্তার কাছে পৌঁছাতে পারে। হ্যাঁ, মানুষের বুদ্ধি। এবং কোয়ান্টাম থিওরিতে, সবসময় একটি ছোট কিন্তু নিশ্চিত সম্ভাবনা রয়েছে যে কিছু ভুল হতে পারে। এই ক্ষেত্রে, এই পাগলামিটা ঘটেছে।’

তুমি তোমার চেয়ারে ফিরে বসলে। খবরটি শুনে বিহ্বল হয়ে পড়লে।

হোম অ্যাগেইন

একটি কর্মমুখর লম্বা দিন পার করে, প্রথমে ছিদ্রটি সংশোধন করার জন্য রোবট মেরামতের ক্রু সংগঠিত করে এবং তারপর এই সমস্যাটি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত, কোয়ান্টাম কম্পিউটারগুলো ব্যবহার করে এমন সমস্ত পরীক্ষামূলক রোবটগুলো নিষ্ক্রিয় করতে সহায়তা করে, অবশেষে তুমি আবার বাড়িতে ফিরে এলে। তুমি ক্লান্ত। তুমি যখন তোমার সোফায় আরাম করার জন্য হেলে পড়লে তখনই মলির ছবি তোমার স্ক্রিনে দেখা গেল। সে বলল—’জন, তোমার জন্য ডাঃ ব্রাউন থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা আছে।’

ডাঃ ব্রাউন? তোমার রোবট ডাক্তার কী বলতে হবে?

‘তাকে পর্দায় দেখাও’, তুমি মলিকে বললে। ডাক্তার ব্রাউন প্রাচীর পর্দায় প্রদর্শিত হলো। ‘ডাঃ ব্রাউন’ এতটাই বাস্তবসম্মত যে তুমি মাঝে মাঝে ভুলে যাও যে সে কেবলই একটি সফ্টওয়্যার প্রোগ্রাম।

‘তোমাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত, জন, কিন্তু কিছু আছে যা তোমাকে আমার মনোযোগ আকর্ষণ করতে হবে। গত বছর তোমার স্কিইং দুর্ঘটনাটির কথা মনে আছে নিশ্চয়, যেটি তোমাকে প্রায় হত্যা করেছিল?’

কীভাবে তুমি ভুলে যেতে পারলে? আল্পসের অবশিষ্টাংশে স্কিইং করার সময় তুমি যখন একটি গাছের মধ্যে কীভাবে নিচে পড়ে গেলে, তুমি এখনও বেঁকে থাকো। যেহেতু অ্যালপিনের বেশিরভাগ বরফ ইতোমধ্যেই গলিত হয়েছে, তাই তোমাকে খুব উচ্চতায় একটি জায়গা বেছে নিতে হবে। এই ভূখণ্ডে তুমি অভ্যস্ত নও, যদি তুমি দুর্ঘটনাক্রমে ঢাল ভেঙ্গে এবং ঘণ্টায় ৪০ মাইল বেগে গাছের গুচ্ছের মধ্যে পড়ে গেলে। সেকি!

ডাঃ ব্রাউন বলে চললেন, ‘আমার রেকর্ডগুলো দেখায় যে তুমি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলে, একটি সংঘাতের শিকার হয়েছ এবং ব্যাপক অভ্যন্তরীণ আঘাতের ভুক্তভোগী, কিন্তু তোমার কাপড় তোমার জীবন বাঁচিয়েছে।’

যদিও তুমি অজ্ঞান ছিলে, তবুও তোমার জামাকাপড়গুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি অ্যাম্বুলেন্স ডেকেছিল, তোমার মেডিকেল ইতিহাস আপলোড করেছিল এবং তোমার সুনির্দিষ্ট সমন্বয় স্থাপন করেছিল। তারপর হাসপাতালের রোবটগুলো রক্তচাপ বন্ধ করার জন্য মাইক্রো সার্জারি করে রক্তপাত বন্ধ করে, ক্ষুদ্র ক্ষয়প্রাপ্ত রক্তবাহী নালিগুলো সেলাই করে এবং অন্যান্য ক্ষতিগুলো সংস্কার করে।

‘তোমার পাকস্থলি, লিভার, এবং অন্ত্র এতই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যা ঠিক করার উপায় ছিল না’ ব্রাউন তোমাকে স্মরণ করিয়ে দিল। ‘সৌভাগ্যক্রমে, আমরা সঠিক সময়ে নতুন অঙ্গ সৃষ্টি করতে পেরেছিলাম।’

হঠাৎ, তুমি নিজেকে একটি রোবটের মতো কিছু মনে করলে, টিস্যু ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত অঙ্গগুলো থেকে তোমার শরীরের বেশির ভাগ অংশই তৈরি-এই ভেবে।

‘তুমি জান, জন, আমার রেকর্ডগুলোও দেখায় যে আমরা তোমার ছিন্নভিন্ন বাহুটিকে পুরোপুরি যান্ত্রিকভাবে প্রতিস্থাপন করতে পারতাম। সর্বশেষ রোবট বাহুটি তোমার বাহুর চেয়ে পাঁচ গুণ শক্তিসম্পন্ন ছিল। কিন্তু তুমি অস্বীকার করেছ।’

তুমি উত্তর দিলে, ‘হ্যাঁ, আমি অনুমান করছি যে আমি এখনও একটি পুরনো-ফ্যাশনের লোক। আমি যেকোনো দিন স্টিলের উপর মাংস বসিয়ে নিতে পারব’ তুমি বললে।

‘জন, আমাদের তোমার নতুন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর একটি পর্যায়ক্রমিক চেকআপ করতে হবে। তোমার এমআরআই স্ক্যানার বাছাই কর এবং ধীরে ধীরে তোমার পাকস্থলির এলাকায় এটি প্রেরণ কর।’

তুমি বাথরুমে গেলে এবং সেল ফোন আকারের একটি ছোট ডিভাইস ধীরে ধীরে তোমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্ক্রিনিং করল। অবিলম্বে প্রাচীর পর্দায়- তোমার অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গসমূহের থ্রি-ডি ইমেজ পেলে।

‘জন, আমরা এই ছবি বিশ্লেষণ করতে যাচ্ছি-তোমার শরীর কীভাবে সেরে উঠছে। যাহোক, আজ সকালে তোমার বাথরুমে প্রাপ্ত ডিএনএ সেন্সরগুলো তোমার প্যানক্রিয়াসে ক্যান্সার বেড়েছে বলে জানাচ্ছে।’

ক্যান্সার? হঠাৎ তুমি সোজা হয়ে দাঁড়ালে। তুমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লে। ‘কিন্তু আমার ক্যান্সার কয়েক বছর আগে নিরাময় হয়ে গিয়েছে। কেউ এই বিষয়ে আমার সাথে আর কথা বলছে না। আমার ক্যান্সার হতে পারে কীভাবে?”

‘আসলে, বিজ্ঞানী ক্যান্সার নিরাময় করেন না। শুধু বলতে পারি যে আমরা ক্যান্সার শনাক্ত করতে পেরেছি, একটি স্থিরাবস্থা। ক্যান্সার অনেক ধরনের আছে। সাধারণ ঠাণ্ডার মতো। আমরা তা নিরাময় করি না। আমরা কেবল এটি উপশম করে রাখি। আমি সেই ক্যান্সার কোষগুলোকে নিষ্ক্রিয় করতে শত শত ন্যানোপার্টিকেলের কয়েকটিকে আদেশ দিয়েছি। এটি শুধু রুটিন কাজ। কিন্তু এই হস্তক্ষেপ ছাড়া সম্ভবত তুমি প্রায় সাত বছরে মারা যাবে’ এসব বলে তিনি বিমর্ষ হলেন।

‘ওহ, এটি মুক্তি’, তুমি নিজেকে নিজে বললে।

‘হ্যাঁ, কয়েক বছর আগের টিউমার ফর্মের ক্যান্সার আজ আমরা স্পষ্ট করতে পেরেছি’, বলেন ডা: ব্রাউন।

‘টিউমার? ওটা কী?

‘ওহ, ক্যান্সার একটি ধরনের জন্য এটি একটি পুরনো-ফ্যাশন শব্দ। এটা ভাষা থেকে প্রায় অদৃশ্য। আমরা তাদের এখন আর দেখি না’ বলেন ডাঃ ব্রাউন।

তারপর তুমি এই সমস্ত উত্তেজনায় বুঝতে পারলে যে, তোমার বোন তোমাকে কাউকে নিয়ে যাওয়ার জন্য হুমকি দিয়েছে। তুমি আবার মলিকে ডাকলে।

‘মলি, আমি এই সপ্তাহান্তে কিছু করিনি, তাই আমার জন্য একটি ডেটমেট খুঁজে বের কোরো? তুমি জানো কি ধরনের ব্যক্তি আমি পছন্দ করি।

‘হ্যাঁ, তোমার পছন্দগুলো আমার স্মৃতিতে প্রোগ্রাম করা আছে। ‘ ইন্টারনেট স্ক্যান করার এক মিনিটের পর, মলি তার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ প্রার্থীদের প্রোফাইল প্রদর্শন করল, যারা তাদের প্রাচীর স্ক্রিনের সামনে বসে আছেন, একই প্রশ্ন করে।

প্রার্থীদের স্ক্যান করার পরে, তুমি অবশেষে তোমার ডাকে সাড়া দেয়া এমন একজনকে নির্বাচন করলে। কারেন নামে পরিচিত এই ব্যক্তিটি, বিশেষভাবে তার মাঝে বিশেষত্ব আছে তুমি নিজে নিজে এটি মনে করে। ‘মলি, কারেনকে একটি মার্জিত বার্তা পাঠাও, যদি তাকে এই সপ্তাহান্তে পাওয়া যায় তবে জিজ্ঞেস কোরো। একটি নতুন শুরু হওয়া রেস্টুরেন্ট আছে— সেখানে আমরা যেতে চাই।’

তারপর মলি একটি ভিডিও মেইল কারেনের প্রোফাইলে পাঠাল।

সেই রাতে, তুমি কিছু সহকর্মীকে বিয়ারের জন্য এবং ফুটবল দেখার জন্য আমন্ত্রণ করলে-রিলাক্স করার জন্য। তোমার বন্ধুরা হোলোগ্রাফিক ইমেজগুলোর মাধ্যমে তোমার লিভিং রুমে উপস্থিত হয়ে খেলাটি দেখল, তবে যেকোনোভাবে, ঘরের আড্ডাটিই আনন্দদায়ক-বন্ধুদের উত্তেজনার সাথে যোগদান করার সাথে আরও উপভোগ্য। তুমি কল্পনা করতে থাকলে সম্ভবত এটি হাজার হাজার বছর আগে কেমন ছিল, যখন গুহাবাসীদের একে অন্যের সাথে বাস করত।

হঠাৎ, পুরো লিভিং রুম আলোকিত হয়ে উঠল, এবং মনে হলো তুমি ফুটবল মাঠে ৫০-গজ লাইনের মধ্যেই আছ। চতুর্থাংশ এগিয়ে একজনে একটি পাস করে, তুমি তার পাশে ডানে দাঁড়ানো। যেন খেলা তোমার চারপাশ ঘিরেই হচ্ছে।

অর্ধেক সময়, তুমি এবং তোমার বন্ধুরা খেলোয়াড়দের নিয়ে আলাপ শুরু করলে। বিয়ার এবং পপকর্নের সাথে, বিতর্ক উতপ্তভাবে চলল। কে সবচেয়ে বেশি প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে, কঠোর অনুশীলন করে, সেরা কোচ পান এবং সেরা জিন থেরাপিস্ট থাকে। তোমার হোম টিম সকলেই একমত, লিগটিতে সেরা জিন বিশেষজ্ঞ রয়েছে, যে টাকা দিয়ে সেরা জিনগুলো কিনে নিতে পারে। তোমার বন্ধুরা বাসা ত্যাগ করার পরে, তুমি ঘুমাতে যেতে খুব উদগ্রীব হলে তাই দ্রুত পোকার খেলার সিদ্ধান্ত নিলে।

‘মলি’, তুমি জিজ্ঞেস কর, ‘দেরি হয়ে গেছে, কিন্তু আমি পোকার খেলা একটি সেট খেলতে চাই। আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি, কেউ ইংল্যান্ড, চীন, ভারত, অথবা রাশিয়ায় জেগে থাকতে পারে, যারা এই মুহূর্তে কিছু খেলতে চায়।’

‘কোনো সমস্যা নেই’, মলি বলল। পর্দায় প্রদর্শিত প্রতিশ্রুতিশীল মুখগুলো ভেসে উঠল। প্রতিটি প্লেয়ারের থ্রি-ডি চিত্রগুলো তোমার লিভিং রুমে সম্পৃক্ত হয়ে থাকে, সেরাট ব্লাফ-কে দিতে পারে তুমি তা দেখতে পছন্দ কর।

তুমি নিজের কাছে বললে যে, এটি মজার, হাজার হাজার মাইল দূরে দূরবর্তী দেশগুলোতে তুমি বেশি পরিচিত পাশের প্রতিবেশীদের চেয়ে। জাতীয় সীমানাগুলো এই সময়ে তেমন কিছুই নয়।

পরিশেষে, তুমি অবশেষে খেলা চালু করার আগে বাথরুম আয়না উপস্থিত হলে, মলি আবার তোমাকে বাধা দিল |

‘জন, কারেন তোমার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। সবকিছু এই সপ্তাহান্তে জন্য সেট করা হবে। আমি নতুন রেস্টুরেন্ট একটি রিজার্ভ করব। নিজের সম্পর্কে কারেন যে প্রোফাইলটি লিখেছে সেটি তুমি দেখতে চাও? তুমি কি প্রোফাইলের সঠিকতা যাচাই করতে ইন্টারনেট স্ক্যান করতে চাও? মানুষ এই শব্দের সাথে এখন বেশ পরিচিত হয়েছে… আহ… তাদের প্রোফাইল মিথ্যা।’

তুমি ‘না’ করলে। ‘বরং সপ্তাহান্তের শেষের জন্যই এটি সারপ্রাইজ হিসেবে থাকুক।’ সেই পোক গেম খেলার পরে, তুমি আবার নিজেকে ভাগ্যবান বোধ করলে।

দ্য উইকএন্ড

আজ সপ্তাহান্ত, কেনাকাটা করার সময় এবং কেভিনের জন্য একটি উপহার কিনতে হবে। ‘মলি, পর্দায় শপিং মল দেখাও।’

প্রাচীর পর্দায় তাৎক্ষণিক শপিং মলের ছবি দেখা গেল। তুমি তোমার হাত এবং আঙুলের তরঙ্গ ইশারায় প্রাচীর পর্দায় ইমেজ মলের মধ্যে একটি পথ চিহ্নিত করলে। তুমি খেলনার দোকানের ইমেজ পৌঁছা পর্যন্ত একটি ভার্চুয়াল যাত্রা করলে। হ্যাঁ, তাদের কাছে ঠিক তেমনটি আছে যেমন খেলনা রোবট পোষা প্রাণী তুমি চাও। তোমাকে টেলিপ্যাথিকভাবে শপিং মলে নিয়ে যাওয়ার জন্য তুমি গাড়িটি অর্ডার করলে। (তুমি অনলাইনে খেলনাটি অর্ডার করতে পারতে। অথবা তুমি ব্লুপ্রিন্টগুলো ইমেল করতে পারতে, এবং তারপরে তোমার ফ্যাব্রিকেটর প্রোগ্রামেবল জিনিস ব্যবহার করে স্ক্র্যাচ থেকে বাড়ির খেলনাটি সম্পৃক্ত করতে পারতে। কিন্তু মাঝে মাঝে অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হওয়া এবং দোকান থেকে কেনাকাটা ভালো লাগে।)

তুমি তোমার চৌম্বক গাড়ি চালিয়ে বের হলে, বাইরে তাকালে এবং হাঁটার সময় মানুষজনকে কথা বলতে দেখলে। এটি একটি চমৎকার দিন। তুমি সব ধরনের রোবট দেখতে পেলে। রোবট কুকুরের হাঁটা। রোবট ক্লার্ক, রান্না করার রোবট, অভ্যর্থনা জানানোর রোবট এবং পোষা প্রাণী। মনে হচ্ছে প্রতিটি কাজ বিপজ্জনক, পুনরাবৃত্তিমূলক, বা শুধু রোবট দ্বারা মানুষের সাথে কাজের সদৃশ করা হচ্ছে। আসলে, রোবট এখন বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তোমার চারপাশে ঐসব ব্যক্তিদের বিজ্ঞাপন যে কেউ মেরামত, পরিষেবা, আপগ্রেড, বা রোবট তৈরি করতে পারেন। রোবোটিক্স ক্ষেত্রে এখন উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। রোবট ব্যবসা শেষ শতাব্দীর অটোমোবাইল শিল্পের তুলনায় বড়। এবং বেশিরভাগ রোবট চোখের আড়ালেই থাকে, নীরবভাবে শহরটির অবকাঠামো মেরামত এবং প্রয়োজনীয় পরিষেবাদি বজায় রাখছে।

খেলনা দোকান পৌঁছানোর সময়, একটি রোবট ক্লার্ক প্রবেশদ্বারে তোমাকে স্বাগত জানাল। ‘আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি?’ এটা বলে।

‘হ্যাঁ, আমি একটি রোবট কুকুর কিনতে চাই।’

তুমি সর্বশেষ রোবট কুকুরগুলো দেখে নিলে। এই পোষা রোবট কী করতে পারে, আশ্চর্য! তুমি নিজেকে বলতে থাকলে। তারা খেলা, দৌড়ানো, কোনো কিছু আনা, একটি কুকুর যা কিছু করতে পারে-এগুলোও তার সবই করতে পারে। সবকিছু। তবে কার্পেটের উপর মূত্র ত্যাগ ছাড়া। তুমি মনে মনে ভাবলে, সম্ভবত এ কারণেই বাবা-মা তাদের বাচ্চাদের জন্য এগুলো কিনেছেন।

তারপর তুমি রোবট ক্লার্ককে বললে, ‘আমি আমার ছয় বছর বয়সী ভাতিজার জন্য একটি রোবট পোষা প্রাণী কিনতে চাই। সে একটি খুব বুদ্ধিমান, হ্যান্ডসাম ধরনের বাচ্চা। কিন্তু সে কখনো কখনো লাজুক এবং শান্ত। কোন রোবট কুকুর তাকে তার শেলফ থেকে বের করতে আনতে সাহায্য করতে পারে?’

রোবট উত্তর দিল, ‘দুঃখিত, স্যার। এটি আমাদের প্রোগ্রামিংয়ের বাইরে। সম্ভবত আমি একটি স্পেস খেলনা দেখাতে পারি যদি তুমি আগ্রহ করেন?’

তুমি রোবটের চিন্তা বাদ দিলে, এগুলো যতই বহুমুখী কর্মকাণ্ড করতে পারে, তবে মানুষের আচরণ বুঝতে পারার আগ পর্যন্ত সে এক দীর্ঘ পথ।

তারপর তুমি পুরুষদের ডিপার্টমেন্ট স্টোর গেলে। যেহেতু তুমি তোমার বান্ধবীকে বিমোহিত করতে চাও, তাই পুরনো পোশাক-পরিচ্ছদ প্রতিস্থাপন করার সময়। তুমি কিছু ডিজাইন দেখলে। সেগুলো সব আড়ম্বরপূর্ণ, কিন্তু তারা সব ভুল আকারের। তুমি হতাশ হলে। কিন্তু তারপর তুমি তোমার ক্রেডিট কার্ডটি বের করলে, যা তোমার সমস্ত সুনির্দিষ্ট থ্রি-ডি পরিমাপ ধারণ করে। তোমার তথ্যটি কম্পিউটারে সরবরাহ করা হলো এবং তারপরে একটি কারখানায় একটি নতুন স্যুট কাটা হলো এবং শীঘ্রই তোমার কাছে বিতরণ করা হলো। একটি নিখুঁত আকার সব সময়ের জন্য।

শেষ পর্যন্ত, তুমি সুপার মার্কেটে গেলে। বাজারের প্রতিটি প্লাস্টিকের আইটেমে লুকানো সমস্ত চিপ স্ক্যান করে এবং তারপরে তোমার কনট্যাক্ট লেন্সগুলোতে স্থাপিত মূল্যের সাথে তুলনা করে দেখলে শহরের কোন দোকানটিতে সবচেয়ে সস্তা, সর্বোত্তম পণ্য রয়েছে। সর্বনিম্ন দাম সম্পর্কে আর অনুমান করার কিছুই নেই।

দ্য ডেট

তুমি পুরো সপ্তাহজুড়ে এই তারিখের জন্য উন্মুখ ছিলে। কারেনের সাথে দেখা করার প্রস্তুতি নিচ্ছ, তুমি অবাক হলে যে তোমার নিজের কাছে নিজেকে স্কুলজীবনের ছাত্রের মতো মনে হচ্ছে। ডিনারের পরে তুমি কারেনকে তোমার অ্যাপার্টমেন্টে আমন্ত্রণ জানাবে বলে মনস্থির করলে, তবে তোমার ঘরের আসবাবপত্র কিছুটা পুনরায় সাজাতে হবে। সৌভাগ্যবশত রান্নাঘর কাউন্টার এবং লিভিং রুমে আসবাবপত্র অধিকাংশ প্রোগ্রামযোগ্য আইটেম দ্বারা তৈরি করা।

মলিকে তুমি বললে, ‘তুমি কি আমাকে আসবাবপত্র প্রস্তুতকারকের প্রস্তাবিত নতুন রান্নাঘরের কাউন্টার এবং আসবাবপত্রগুলোর তালিকা দেখতে পার? আমি আসবাবপত্র পুনঃপ্রোগ্রাম করতে চাই। এগুলো পুরনো লাগছে।’

দ্রুতই সর্বশেষ তৈরিকৃত আসবাবপত্রে নকশা ছবি পর্দায় ভেসে উঠল ‘মলি, দয়া করে এই রান্নাঘর কাউন্টার, সোফা এবং এই টেবিলটির জন্য ব্লুপ্রিন্টগুলো ডাউনলোড করো এবং তারপর সেগুলোকে ইনস্টল করো।’

যখন তুমি ডেটিংয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলে, মলি তখন আসবাবসমূহের ব্লুপ্রিন্ট ডাউনলোড এবং ইনস্টল করছিল। তাৎক্ষণিকভাবে, রান্নাঘর কাউন্টারটপ, লিভিং রুম সোফা, এবং টেবিলটি দ্রবীভূত হতে শুরু করে, পিন্ডের মতো দেখাচ্ছে এমন কিছুতে পরিণত হয় এবং তারপরে ধীরে ধীরে নতুন রূপ নেয়। এক ঘণ্টার মধ্যে, তোমার অ্যাপার্টমেন্ট ব্র্যান্ডনিউ রূপ নিল। (সম্প্রতি, তুমি ইন্টারনেটে রিয়েল এস্টেট বিভাগটি স্ক্যান করছো এবং লক্ষ্য করেছো যে প্রোগ্রামযোগ্য আইটেমগুলো দ্বারা তৈরি করা আসবাবপত্রসমূহে ঘরগুলো বেশ ফ্যাশনেবল হয়ে উঠছে। আসলে, তোমার প্রকৌশল সংস্থাতে, মরুভূমিতে একটি শহর সম্পূর্ণরূপে নির্মাণের উচ্চভালিাষী পরিকল্পনা রয়েছে যেটি প্রোগ্রামযোগ্য বস্তুসমূহ দ্বারা তৈরি করা হবে। একটি বোতাম চাপ দেওয়া হবে, এবং বলা হবে ঠিকাছে!-তখনই তাৎক্ষণিক শহরটি সৃষ্টি হয়ে যাবে।

তোমার অ্যাপার্টমেন্ট এখনও কেমন এবড়োথেবড়ো দেখায়, তুমি সিদ্ধান্ত নিলে পরিবর্তন করার। তুমি তোমার হাত তরঙ্গের মতো নেড়ে ওয়ালপেপার প্যাটার্ন পরিবর্তন এবং রং অবিলম্বে পরিবর্তন করলে। বুদ্ধিমান ওয়ালপেপার অবশ্যই দেয়াল নতুন রং করে নিল, “যাক হচ্ছে”, তুমি নিজেকে বললে।

তুমি পথ বরাবর কিছু ফুল স্থাপন করলে, এবং অবশেষে তোমার ডেটিংয়ের জন্য বের হলে। তুমি আনন্দে অবাক হলে। সরাসরি তোমকে টোকা দেওয়া হচ্ছে। কিছু একটা ক্লিক করা হচ্ছে।

ডিনারের করতে করতে তুমি জানতে পারলে কারেন একজন শিল্পী। সাধারণত, সে রসিকতা করে বলল, তার টাকা নেই, সে ক্ষুধার্ত ও দরিদ্রতার জন্য রাস্তার পাশে চিত্রগুলো বিক্রি করে। কিন্তু না, সে একজন খুবই সফল ওয়েব ডিজাইনার। আসলে, তার নিজের কোম্পানি আছে। সবাই সাধারণত, ওয়েবের জন্য সর্বশেষ ডিজাইন চায়। সৃজনশীল শিল্পের বিশাল চাহিদা আছে এখন

সে আঙুল দিয়ে বায়ুর মধ্যে কিছু বৃত্ত আঁকা, এবং তার কিছু অ্যানিমেশন সেট করল। এরপর সে গর্বিতভাবে বলল, ‘এখানে আমার সর্বশেষ কিছু সৃজনশীলতা রয়েছে।’

তুমি মন্তব্য করলে, ‘আমি একজন প্রকৌশলী হিসাবে জানি, আমি সারা দিন রোবট দিয়ে কাজ করি। কিছু কাজ তারা করে যা প্রশংসনীয়, উন্নত, কিন্তু সময়ে সময়ে বেশ বোকার মতো কাজও করতে পারে। তোমার ক্ষেত্রে কী? রোবটগুলো ঠিকমতো কাজ করে?”

‘অবশ্যই না’, বলে সে প্রতিবাদ করল। কারেন বলল-সে সৃজনশীল মানুষের সাথে একচেটিয়াভাবে কাজ করেন, যেখানে সর্বাধিক মূল্যবান পণ্য হলো কল্পনাশক্তি, কিছু উন্নত রোবটগুলোর মধ্যেও এর অভাব রয়েছে।

সে বলল, ‘আমি পুরনো ধ্যানধারণার হতে পারি, কিন্তু আমার ক্ষেত্রে, আমরা কেবল কপি তৈরি করতে বা ক্লারিক্যাল কাজ করতে রোবট ব্যবহার করি’, গর্বিতভাবে সে বলে উঠল। ‘আমি সেই দিনটি দেখতে চাই যখন রোবটগুলো আসলেই আসল কিছু করতে পারবে, যেমন রসিকতা, একটি উপন্যাস লেখা বা সিম্ফনি রচনা করা।’

সেটি এখনও ঘটেছে না, কিন্তু এটা হতে পারে, তুমি মনে মনে ভাবলে।

সে যখন কথা বলছিল, একটি প্রশ্ন তোমার মনে জাগল। তার বয়স কত? চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে মানুষ যেকোনো বয়সের হতে পারে। তার ওয়েব সাইটে তার বয়স কত উল্লেখ ছিল না। কিন্তু সে পঁচিশ বছরের এক দিন বেশিও হবে না।

তাকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পর, তুমি অলসভাবে স্বপ্নে ভাসতে শুরু করলে। তার মতো একজন ব্যক্তির সাথে বাস করতে কেমন লাগবে তোমার? তার সাথে বাকি জীবন কাটানোর জন্য? কিন্তু এমন কিছু আছে যা তোমাকে বিরক্ত করছে। এটা সারা দিন তোমাকে ভাবাচ্ছে।

তুমি প্রাচীর পর্দার মুখোমুখি হলে এবং বললে, ‘মলি, দয়া করে আমার জন্য ডা. ব্রাউনকে ফোন কর।’ তুমি তাৎক্ষণিক কৃতজ্ঞতা বোধ করলে যে রোবোটিক্স ডাক্তারদের দিনে যেকোনো সময় কল করা যায়। এবং তারা অভিযোগ বা ঘ্যান ঘ্যান করে না। এটা তাদের প্রোগ্রামিং অংশ না।

ডা: ব্রাউন-এর ইমেজ অবিলম্বে প্রাচীর পর্দায় প্রদর্শিত হলো। ‘বাবা, কী তোমাকে বিরক্ত করছে?’ পিতৃসুলভভাবে তিনি জিজ্ঞেস করলেন।

‘ডাক্তার সাহেব, তোমাকে একটা প্রশ্ন করতে হবে যা আমাকে সাম্প্রতিক সময়ে বিরক্ত করছে।’

‘হ্যাঁ, এটা কী?’ ডঃ ব্রাউন জিজ্ঞেস করলেন।

‘ডাক্তার,’ তুমি বললে, ‘আর কত দিন আমি বাঁচব বলে তুমি মনে করো?’ ‘তুমি কি তোমার প্রত্যাশিত জীবন জানতে চাও? আচ্ছা, এটি আমরা সত্যিই জানি না। তোমার রেকর্ড বলছে তুমি বাহাত্তর বছর বয়সী, কিন্তু জৈবিকভাবে তোমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ত্রিশ বছর বয়সী। তুমি জেনেটিকভাবে দীর্ঘতর থাকার জন্য পুনর্গঠন করা প্রথম প্রজন্মের একজন ছিলে। ত্রিশ এর পরে তোমার বয়স আর বাড়বে না এটি বেছে নেওয়া হয়েছিল। তোমার প্রজন্মের যথেষ্ট লোক এখন মারা গেছে, তাই আমাদের সাথে কাজ করার জন্য তাদের কোনো তথ্য নেই। সুতরাং তুমি আর কতদিন বেঁচে থাকবে তা জানার কোনো উপায় নেই। ‘

‘তাহলে তুমি কি মনে করো আমি চিরকাল বেঁচে থাকব?’ তুমি জিজ্ঞাসা করলে।

‘এবং অমর থাকব?’ ব্রাউন অসমর্থন করে বলল ‘না, আমি তা মনে করি না। যে চিরকাল বেঁচে থাকে এবং যার জীবনকাল দীর্ঘ হবে-তার মধ্যে একটি বড় পার্থক্য যেটি এখনও পরিমাপ করা হয়নি।’

‘কিন্তু আমি যদি বয়স না জানি’, তুমি প্রতিবাদ করে বললে, “তখন কীভাবে কী করতে হবে কখন পেতে হবে…’ তুমি বাক্য শেষ না করে থেমে গেলে। ‘আহ, ঠিক আছে … তুমি দেখো, আমি একজনের সাথে দেখা করেছি, আহ, বিশেষ, এবং, আমি মনে করি আমি তার সাথে জীবন কাটানোর পরিকল্পনা করতে চাই, আমি কীভাবে আমার জীবনকে তার সাথে সামঞ্জস্য করতে পারি? যদি আমার প্রজন্মের কেউ জীবিত না থাকে, তবে ‘কীভাবে আমি জানব কখন বিয়ে করতে হবে, বাচ্চা নিতে হবে এবং কখন অবসর নেওয়ার পরিকল্পনা করব? তুমি জানো, আমি কীভাবে আমার জীবনের মাইলফলক সেট করতে পারি?’

‘আমি তার উত্তর জানি না। তুমি দেখ, মানব প্রজাতিটি এখন একধরনের গিনিপিগ’, বলেন ডা: ব্রাউন। ‘আমি দুঃখিত, জন। তুমি এখানে অনিরূপিত জলো মতো অবস্থায় আছ।’

কয়েক মাস পর

কয়েক মাস তোমার এবং কারেনের জন্য বিস্ময়কর। তুমি তাকে ভার্চুয়াল রিয়ালিটি পার্লারে নিয়ে যাও, এবং তার সাথে খুনসুটি করো, তাকে নিয়ে কল্পনা বিলাসে জীবনযাপন করে খুব মজা পাও। যেন তুমি আবার বাচ্চা ছেলের মতো। তুমি একটি খালি চেম্বারে প্রবেশ করলে। ভার্চুয়াল বিশ্বের সফ্টওয়্যারটি তোমার কন্টাক্ট লেন্স লাগালে এবং দৃশ্যগুলো তৎক্ষণাৎ বদলে গেল। একটি প্রোগ্রামে, তুমি ডাইনোসর অনুভব করলে, তুমি ছুটে চলেছো সব জায়গায়, অন্য ডাইনোসর ঝোপঝাঁটি থেকে বেরিয়ে আসতে দেখলে। অন্য একটি প্রোগ্রামে, তুমি মহাকাশের এলিয়েন বা দস্যুদের সাথে লড়াই করে তোমার স্পেসশীপকে রক্ষা করছো। অন্যটিতে, তুমি প্রজাতি এবং আকারে পরিবর্তন করে ঈগলে রূপ নিয়ে বাতাসে ওড়ার সিদ্ধান্ত নিলে। এবং অন্য একটি প্রোগ্রামে তুমি রোমান্টিক দক্ষিণ সি দ্বীপে ঘুরে বেড়ালে, বা চাঁদের আলোতে গানের সাথে সাথে বাতাসে নেচে নেচে ভেসে বেড়ালে।

কিছুক্ষণ পরে, তুমি এবং কারেন নতুন কিছু চেষ্টা করতে চাইলে। কাল্পনিক জীবনযাপনের পরিবর্তে, বাস্তব জীবনযাপনের সিদ্ধান্ত নিলে। সুতরাং, যখন তোমরা উভয়ের একসাথে অবকাশের সুযোগ পেলে, তুমি পুরো ইউরোপ ঘুরে দেখার সিদ্ধান্ত নিলে।

তুমি প্রাচীরটিকে বললে, ‘মলি, কারেন এবং আমি ইউরোপে অবকাশ যাপন করতে চাই। এ তুমি দয়া করে ফ্লাইট, হোটেল এবং কোনো বিশেষ আয়োজন থাকলে তার খোঁজ কর। তারপরে সম্ভাব্য শো বা ইভেন্টগুলো তালিকাবদ্ধ কর যা আমাদের পছন্দ হতে পারে। তুমি আমাদের পছন্দগুলো জানো’ কয়েক মিনিটের মধ্যে মলি একটি বিস্তারিত ভ্রমণ ক্যাটালগ প্রস্তুত করে দিল।

পরে, রোমান ফোরামের ধ্বংসাবশেষ পেরিয়ে যাওয়ার সময় তুমি দেখতে পেলে রোমান সাম্রাজ্যটি তোমার কন্টাক্ট লেন্সগুলোতে পুনরুত্থিত হয়েছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কলাম, পাথর এবং ধ্বংসাবশেষ পেরিয়ে তুমি এবার সেই দৃশ্যটি দেখলে যা এককালে ইম্পেরিয়াল রোমের গৌরবের শীর্ষে ছিল।

ইতালীর স্থানীয় দোকানগুলোতে দরকষাকষি করে শপিং করা খুব আনন্দ দিল। তুমি যার সাথে কথা বলছো তার অনুবাদগুলো স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছ এবং আর কোনো গাইডবুক এবং আনাড়ি মানচিত্র নেই। সবকিছু তোমার কন্টাক্ট লেন্সে রয়েছে।

রাতে, রোমের আকাশে দেখলে পরিষ্কারভাবে তোমার তোমার কন্টাক্ট লেন্সে তারাগুলো নক্ষত্রমণ্ডলে সাজানো আছে। আকাশ জুড়ে দৃষ্টিনন্দন হয়ে আছে শনির রিংগুলো, ধূমকেতু, সুন্দর গ্যাসের মেঘ এবং বিস্ফোরিত নক্ষত্রগুলো এর সবই দেখতে পারলে।

একদিন, কারেন অবশেষে তার বয়স নিয়ে একটি গোপন সত্য প্ৰকাশ করে। এটি একষট্টি। যাইহোক, এটি আর গুরুত্বপূর্ণ তেমন কিছুই না।

‘তো, কারেন, তুমি কি বেশ আনন্দ বোধ কর যে আমরা এত দিন বেঁচে আছি?’

‘হ্যাঁ, হ্যাঁ!’ সে তৎক্ষণাৎ জবাব দেয়। তুমি জানো, আমার দাদি এমন স্বপ্ন জীবন পেয়েছেন যখন মহিলারা বিবাহ করে মাত্র, একটি পরিবার ছিল একটি ক্যারিয়ারে ভিত্তি করে। তবে আমি অনুভব করতে চাই যে আমি তিনটি ক্যারিয়ারের সাথে তিনবার পুনর্জন্ম লাভ করেছি এবং কখনো পিছনে ফিরে তাকাই নি! প্রথমত, আমি বেশ কয়েকটি দেশে ভ্রমণ করেছি, বিশ্ব ভ্রমণ করছিলাম—ভ্রমণ এটি একটি দুর্দান্ত জীবন। পর্যটন এমন একটি বিশাল শিল্প, যার প্রচুর কাজ রয়েছে। পরে, আমি আরও প্রাসঙ্গিক কিছু করতে চেয়েছিলাম। সুতরাং আমি আইনজীবী হয়েছি, কেস নিয়ে এবং লোকদের রক্ষা করতে আমি যত্নবান থেকেছি তারপরে, আমি আমার শৈল্পিক দিকটায় লিপ্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং আমার ওয়েব ডিজাইন সংস্থা শুরু করেছি। এবং তুমি কিছু জানো? আমি গর্ব বোধ করি আমি কখনই কোনো রোবট ব্যবহার করি না। কোনো রোবট ব্যক্তিগত ট্যুর গাইড হতে পারে না, আদালতে মামলা জিততে পারে না বা সুন্দর শিল্পকর্ম তৈরি করতে পারে না।

তা সময়ই বলবে, নজে নিজে ভাবলে।

তুমি জিজ্ঞাসা করলে, ‘এবং তুমি কি চতুর্থ ক্যারিয়ারের পরিকল্পনা করছো?’

সে তোমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল ‘ঠিক আছে, যদি আরও ভাল কিছু করার সুযোগ আসে।’

শেষ পর্যন্ত কারেনকে বললে, ‘যদি আমরা বয়স বাড়ানো বন্ধ করি, তবে তুমি কীভাবে জানবেন যে কখন উপযুক্ত সময় হবে, বিয়ে করার, বাচ্চা নেওয়ার এবং একটি পরিবার গড়ে তোলার? আমার জৈবিক ঘড়িটি কয়েক দশক আগে উইন্ডোটির বাইরে গিয়েছিল। তাই আমি ভাবছি, সম্ভবত বসতি স্থাপন এবং একটি পরিবার থাকা নিয়ে।

‘মানে নিজের সন্তান?’ খানিকটা অবাক হয়ে কারেন বলল। এটি এমন একটি বিষয় যা আমি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করিনি। ঠিক আছে, তবে তা সময়ের উপর নির্ভর করে। সে দুষ্টুভাবে হেসে বলল, ‘তবে সঠিক লোকটি যদি পাই তবে এটির সমস্ত কিছুই তার নির্ভর করে।’

পরবর্তীতে, তুমি এবং কারেন বিয়ের বিষয়ে আলোচনা করলে এবং কোন বাচ্চার জন্য তুমি কী নাম রাখতে চাও, এবং তোমর বাচ্চাকে কি জিন দ্বারা গঠিত দেখতে চাও তাও আলোচনা করলে।

তুমি প্রাচীরের স্ক্রিনে গেলে এবং বললে, ‘মলি, তুমি কি আমাকে সর্বশেষ জিনগুলোর তালিকা দেখাতে পার যা সরকার দ্বারা অনুমোদিত?’ তালিকাটি স্ক্যান করার সাথে সাথে তুমি চুলের রং, চোখের রং, উচ্চতার জন্য বিভিন্ন জিন দেখতে পেলে, গঠন এবং এমনকি কিছু ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য যা এখন দেওয়া হচ্ছে। তালিকা প্রতি বছর বাড়ে বলে মনে হয়। তুমি নিরাময়যোগ্য বংশগত রোগগুলোর দীর্ঘ তালিকাও দেখতে পেলে। যেহেতু তোমার পরিবারে বহু বছর ধরে সিস্টিক ফাইব্রোসিস ছড়িয়ে ছিল, তবে এটি নিয়ে চিন্তা করা এখন আর লাগবে না এজন্য স্বস্তি অনুভব করলে।

অনুমোদিত জিনগুলোর তালিকাটি স্ক্যান করে তুমি অনুভব করলে যে তুমি কেবল ভবিষ্যতের পিতা বা মাতা নও, তবে এক রকম ঈশ্বর, যে নিজের মতো করে ইমেজে অর্ডার দিয়ে একটি শিশু তৈরি করতে পার।

তারপরে মলি বলল, ‘একটি প্রোগ্রাম রয়েছে যা শিশুর ডিএনএ বিশ্লেষণ করতে পারে এবং তারপরে তার ভবিষ্যতের মুখ, দেহের আকার এবং ব্যক্তিত্বের যুক্তিসংগত সংলগ্নতা দেয়। তুমি কি এই প্রোগ্রামটি ডাউনলোড করে দেখতে চাও এবং ভবিষ্যতে তোমার সন্তানের চেহারাটি কী হবে দেখতে চাও?’

তুমি উত্তর দিলে, ‘না, ‘কিছু বিষয় রহস্য হিসেবে ছেড়ে দেওয়া উচিত।’

এক বছর পর

কারেন এখন গর্ভবতী, তবে তার চিকিৎসকরা তাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে স্পেস লিফটে যাত্রায় কোনো বিপদ নেই, যা এখন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত।

‘তুমি জানো,’ এবং কারেনকে সমর্থন করে বললে, ‘ছোটবেলায় আমি সবসময় বাইরের মহাকাশে যেতে চাইতাম। তুমি জানো, মহাকাশ বিষয়ক কর্মকাণ্ড। তবে একদিন আমি ভাবলাম কয়েক মিলিয়ন গ্যালন উদ্বায়ী রকেট জ্বালানির উপরে বসে আছি যা একটি একক স্পার্ক দিয়ে বিস্ফোরিত হতে পারে। তারপর মহাকাশ ভ্রমণের জন্য আমার উদ্যম কিছুটা কমতে শুরু করে। তবে স্পেস লিফট আলাদা। পরিষ্কার, নিরাপদ, কোনো গোলযোগ নেই। এটাই ভ্রমণের জন্য ভালো।’

তুমি এবং কারেন লিফটে ওঠার সাথে সাথে অপারেটর আপ বোতামটির মতো দেখতে তা চাপ দিল। তুমি অর্ধেক অন্তর্বাসের মতো ওড়ার দৃশ্যের ন্যায় ডিপার্টমেনটগুলো দেখতে আশা করলে। পরিবর্তে, তুমি নিজেকে বাইরের মহাকাশে উড়ে যাওয়ার মতো অনুভব করলে। তুমি ধীর গতি থেকে দ্রুত বাতাসে ওঠার সাথে সাথে অনুভব করলে বেগ বাড়ছে। লিফটে থাকা গেজটি পড়ছে, ‘১০ মাইল, ২০ মাইল, ৩০ মাইল…’

বাইরে, তুমি দৃশ্যপট পরিবর্তন হতে দেখলে, একের পর এক। এক মুহূর্তে, তুমি বায়ুমণ্ডলো মধ্যে উড়ে গিয়ে মেঘের পাশ দিয়ে গেলে। তারপরে আকাশটি নীল থেকে বেগুনি হয়ে একটি গভীর কালোতে পরিবর্তিত হয় এবং অবশেষে তুমি দেখতে পেলে তারকাদের সমস্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে সাজানো নক্ষত্রমণ্ডল তৈরি করতে শুরু করেছে যেমনটি তুমি আগে কখনো দেখোনি, দূরত্বে জ্বলজ্বল করে। কোটি কোটি বছর ধরে পৃথিবী থেকে প্রদর্শিত হওয়ায় কিছু তারা জ্বলজ্বল করছে না তবে উজ্জ্বলতার সাথে সেসব তারা দেখা যায়।

লিফটটি ধীরে ধীরে পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০০ মাইল দূরে একটি স্টপেজে আসে। এখান থেকে, তুমি একটি চমকপ্রদ দৃশ্য দেখলে যা তুমি কেবল ছবিতে দেখেছিলে।

নিচের দিকে তাকিয়ে তুমি হঠাৎ পৃথিবীকে সম্পূর্ণ নতুন আলোতে দেখতে পেলে। তুমি মহাসাগর, মহাদেশ এবং মেগাসিটির আলোকসজ্জা দেখতে পাচ্ছ যা বাইরের মহাকাশে জ্বলজ্বল করে।

মহাকাশ থেকে, পৃথিবী এতটাই নির্মল মনে হয়েছে যে, মানুষ কতটা নির্বোধ না হলে সীমান্তগুলোতে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ছড়িয়ে দেয় তা বিশ্বাস করা বেশ কঠিন। এই জাতিগুলো এখনও বিদ্যমান, তবে যোগাযোগটি তাৎক্ষণিক এবং সর্বব্যাপী যখন এমন যুগে আজকের দিনে তারা অনেকটা স্পষ্ট, কম প্রাসঙ্গি বলে মনে হয়।

কারেন তোমার কাঁধে মাথা রাখার সাথে সাথে তুমি বুঝতে শুরু করলে যে তুমি একটি নতুন গ্রহের সভ্যতার জন্মের সাক্ষী। এবং তোমার বাচ্চা এই নতুন সভ্যতার প্রথম নাগরিকদের মধ্যে থাকবে।

এবং তারপরে তুমি তোমার পিছনের পকেট থেকে একটি পুরনো, জীর্ণ একটি বই বের করে আনলে এবং ১০০ বছরেরও বেশি আগে মারা যাওয়া এমন ব্যক্তির কথাগুলো পড়লে। এটি তোমাকে গ্রহসভ্যতা অর্জনের আগে মানবতার মুখোমুখি চ্যালেঞ্জগুলোর কথা মনে করিয়ে দিল—

মহাত্মা গান্ধী একসময়ে লিখেছিলেন- কর্ম ছাড়া-সম্পদ অর্জনের বাসনা, বিবেক করে বন্দি-আনন্দ কামনা। শুধুই জ্ঞান অর্জন-চরিত্র না করে গঠন, নৈতিকতা ভুলে গিয়ে-বাণিজ্য, বিপণন। মানবতার গান না গেয়ে-বিজ্ঞান, গবেষণা, ত্যাগের চেতনা না রেখে-ইবাদত, প্রার্থনা। নীতি ছাড়া যতসব রাজনীতির বাহার, গান্ধীজী বলেন—এসবই শিকড় সহিংসতার।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *