কৃতজ্ঞতা ও ভূমিকা

কৃতজ্ঞতা

প্রথমেই আমি সেসব ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে এই বইটি আলোরমুখ দেখেছে। প্রথমেই ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি বইটির প্রকাশক, রজার স্কল-এর প্রতি-যিনি আমার লেখা আগের অনেক বইয়ের ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন এবং এই ধরনের একটি চ্যালেঞ্জিং বই লেখার আইডিয়া জাগ্রত করেছেন। এছাড়া ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি এডওয়ার্ড কাস্টেনমিয়ার-এর প্রতি-যিনি বেশ ধৈর্য নিয়ে অসংখ্য সাজেশন্স এবং বারবার পুনঃপুন পাঠের মাধ্যমে বইটির শক্তিশালী এবং বর্ধিত উপস্থাপনে সহায়তা করেছেন। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই, স্টুয়ার্ট ক্রিকেভস্কিকে—যিনি আমার এজেন্ট বহু বছর ধরে, তিনি সবসময় আমাকে নতুন এবং আরো উত্তেজনাপূর্ণ চ্যালেঞ্জ নিতে উৎসাহিত করেছেন।

এবং, অবশ্যই, আমি তিনশতরও বেশি বিজ্ঞানীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই- বিজ্ঞানসংক্রান্ত বিষয়ে, যাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি এবং যাদের সাথে আলোচনা করেছি। আমি বিবিসি-টিভি বা ডিসকভারি এবং বিজ্ঞান চ্যানেলগুলোর ক্যামেরা ক্রুকে তাদের ল্যাবরেটরিগুলোতে টেনে আনার জন্য এবং তাদের মুখের সামনে একটি মাইক্রোফোন এবং টিভি ক্যামেরা চাপিয়ে দেওয়ার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি-এটি তাদের গবেষণাকে ব্যাহত করেছে। কিন্তু আমি আশাকরি যে চূড়ান্ত পর্যায়ে এটি মূল্যবান কিছু একটা হবে।

আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই এই অগ্রগামী এবং পথ প্রবর্তক ব্যক্তিবর্গকে :

এরিচ চিভিয়ান, নোবেল বিজয়ী, সেন্টার ফর হেলথ অ্যান্ড দ্য গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট, হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল।

পিটার ডোহার্টি, নোবেল বিজয়ী, সেন্ট জুড চিলড্রেন রিসার্চ হাসপাতাল।

জেরাল্ড এডেলম্যান, নোবেল বিজয়ী, স্ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউট।

মারে গেল-মান, নোবেল বিজয়ী, সান্তা ফে ইনস্টিটিউট অ্যান্ড ক্যালটেক।

ওয়াল্টার গিলবার্ট, নোবেল বিজয়ী, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি।

ডেভিড গ্রস, নোবেল বিজয়ী, কাভলি ইনস্টিটিউট ফর থিওরিটিকাল ফিজিক্স।

প্রয়াত হেনরি কেন্দাল, নোবেল বিজয়ী, এমআইটি।

লিওন লেডারম্যান, নোবেল বিজয়ী, ইলিনয় ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি।

ইউইচিরো নাম্বু, নোবেল বিজয়ী, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়।

হেনরি পোলাক, নোবেল বিজয়ী, মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়।

জোসেফ রোবাত, নোবেল বিজয়ী, সেন্ট বার্থোলোমিউ হাসপাতাল।

স্টিভেন ওয়েইনবার্গ, নোবেল বিজয়ী, অস্টিন টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়।

ফ্রাঙ্ক উইলকেক, নোবেল বিজয়ী, এমআইটি।

আমির আকজেল, লেখক, ইউরেনিয়াম ওয়ারস্।

বুজ অ্যালডিন, সাবেক নাসা মহাকাশচারী, চাঁদে পা রাখা দ্বিতীয় মানুষ।

জ্যোফ অ্যান্ডারসেন, গবেষণা সহযোগী, যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার ফোর্স একাডেমি, দ্য টেলিস্কোপ বইয়ের লেখক।

জে বারব্রী, এনবিসি সংবাদ প্রতিবেদক, মুন শট বইয়ের সহলেখক।

জন ব্যারো, পদার্থবিদ, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, ইমপসেবলিটি বইয়ের লেখক।

মার্সিয়া বাটুসিক, আইনস্টাইনস্ আনফিনিশড সিম্ফনি বইয়ের লেখক।

জিম বেল, কর্নেল ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক জেফ্রি বেনেট, বিয়োন্ড ইউওএফও বইয়ের লেখক।

বব বারম্যান, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, সিক্রেট অফ দি নাইট স্কাই বইয়ের লেখক।

লেসলি বিসকার, জেনেটিক ডিজিজ রিসার্চ শাখার প্রধান, জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা।

পাইয়ার বিজনি, বিজ্ঞান লেখক, হাউ টু বিল্ড ইয়োর ওন স্পেসশিপ বইয়ের লেখক।

মাইকেল ব্ল্যাস, সাবেক বিজ্ঞানী জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট।

অ্যালেক্স বোয়েস, হোয়াক্সেসের মিউজিয়ামের প্রতিষ্ঠাতা।

নিক বোস্‌ট্রম, ট্রান্সহিউম্যানিস্ট, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়।

লে. কর্নেল রবার্ট বোম্যান, স্পেস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ ইনস্টিটিউট।

লরেন্স ব্রডি, জেনোম টেকনোলজি শাখার প্রধান, জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা।

রডনি ব্রুকস, সাবেক পরিচালক, এমআইটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ল্যাবরেটরি।

লেস্টার ব্রাউন, আর্থ পলিসি ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা।

মাইকেল ব্রাউন, জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক, ক্যালটেক।

জেমস ক্যান্টন, গ্লোবাল ফিউচার ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা, দ্য এক্সট্রিম ফিউচার বইয়ের লেখক।

আর্থার ক্যাপলান, পরিচালক, সেন্টার ফর বায়োথিক্স, পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

ফ্রেটজফ ক্যাপা, সায়েন্স অব লিওনার্দো বইয়ের লেখক।

সান ক্যারল, মহাবিশ্বতত্ত্ববিদ, ক্যালটেক।

অ্যান্ড্রু চিকিন, আ ম্যান অন দি মুন বইয়ের লেখক।

লেরয় চিয়াও, সাবেক নাসা মহাকাশচারী।

জর্জ চার্চ, পরিচালক, সেন্টার ফর কম্পিউটেশনাল জেনেটিকস, হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল।

থমাস কোচরান, পদার্থবিজ্ঞানী, প্রাকৃতিক সম্পদ প্রতিরক্ষা পরিষদ।

ক্রিস্টোফার কোকিনস, বিজ্ঞান লেখক, দ্য ফলেন স্কাই বইয়ের লেখক।

ফ্রান্সিস কলিন্স, জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক।

ভিক্সি কোলভিন, বায়োলজিক্যাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ন্যানো টেকনোলজির পরিচালক, রাইস ইউনিভার্সিটি।

নিল কমিনস, স্পেস ট্র্যাভেল অফ হেজার্ডস বইয়ের লেখক।

স্টিভ কুক, পরিচালক, স্পেস টেকনোলজি, ডাইনেটিক্স, সাবেক নাসা মুখপাত্ৰ ক্রিস্টিন কোসগ্রোভ, নরমাল এট এনি কস্ট বইয়ের লেখক।

স্টিভ ক্যাসিনস, প্রেসিডেন্ট ও সিইও, উইলো গ্যারেজ।

ব্রায়ান কক্স, পদার্থবিদ, ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি, বিবিসি বিজ্ঞান হোস্ট।

ফিলিপ কোয়েল, প্রতিরক্ষা সাবেক সহকারী সচিব, মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ।

ড্যানিয়েল ক্রেভিয়ার, এআই : দ্য টিমুলটুয়াস হিস্ট্রি অফ দ্য সার্চ ফর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বইয়ের লেখক এবং কোরকোর সিইও।

কেইন ক্রসওয়েল, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, ম্যাগনিফিসেন্ট ইউনিভার্স বইয়ের লেখক।

স্টিভেন কামার, কম্পিউটার বিজ্ঞান, ড্যুক ইউনিভার্সিটি।

মার্ক কাটকস্কি, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি।

পল ডেভিস, পদার্থবিজ্ঞানী, সুপারফোর্স বইয়ের লেখক।

আউবার ডি গ্রে, চিফ সায়েন্স অফিসার, সেনস ফাউন্ডেশন।

প্রয়াত মাইকেল ডার্টউজোস, সাবেক পরিচালক, কম্পিউটার বিজ্ঞান ল্যাবরেটরি, এমআইটি।

জেরেড ডায়মন্ড, পুলিৎজার পুরষ্কার বিজয়ী, ভূগোলের অধ্যাপক, ইউসিএলএ।

মারিট ডাইক্রিস্টিনা, প্রধান সম্পাদক, সায়েন্টিফিক আমেরিকান

পিটার ডিলওয়ার্থ, সাবেক এমআইটি এআই ল্যাব বিজ্ঞানী।

জন ডনঘু, ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ব্রেইনগেট নির্মাতা।

অ্যান ডুয়ান, কার্লো সাগানের বিধবা স্ত্রী, কসমস স্টুডিও।

ফ্রিম্যান ডাইসন, পদার্থবিজ্ঞানের এমেরিটাস অধ্যাপক, ইনস্টিটিউট ফর

অ্যাডভান্সড স্টাডি, প্রিন্সটন।

জনাথন এলিস, পদার্থবিদ, সিইআরএন বা সান।

ড্যানিয়েল ফেয়ারব্যাঙ্কস, রিলিকস্ অব ইডেন বইয়ের লেখক।

টিমোথি ফেরেস, ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির এমিরিটাস প্রফেসর, বার্কলে, কামিং অব এজ এন মিল্কিওয়ে বইয়ের লেখক।

মারিয়া ফিন্টেজো, চলচ্চিত্র নির্মাতা, পিবডি পুরষ্কার বিজয়ী, ম্যাপিং স্টেম সেল রিসার্চ।

রবার্ট ফিনকেলস্টাইন, এআই বিশেষজ্ঞ।

ক্রিস্টোফার ফ্ল্যাভিন, ওয়ার্ল্ডওয়াচ ইনস্টিটিউট।

লুই ফ্রেডম্যান, সহ-প্রতিষ্ঠাতা, প্ল্যানেটারি সোসাইটি।

জেমস গার্ভিন, নাসার সাবেক প্রধান বিজ্ঞানী, নাসা গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টার।

ইভ্যালিন গেটস, আইনস্টাইনস্ টেলিস্কোপ বইয়ের লেখক।

জ্যাক গাইগার, সহ-প্রতিষ্ঠাতা, ফিজিশিয়ানস্ ফর সোসাল রেসপন্সিবলিটি।

ডেভিড জেনার্টার, অধ্যাপক, কম্পিউটার বিজ্ঞান, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়।

নিল গারসেনফিল্ড, পরিচালক, বিটস এবং পরমাণু কেন্দ্র, এমআইটি।

পল গিলস্টার, সেন্টোরি ড্রিমসের লেখক

রেবেকা গোল্ডবার্গ, পরিবেশগত প্রতিরক্ষা তহবিলের প্রাক্তন সিনিয়র বিজ্ঞানী, মেরিন সায়েন্সের পরিচালক, পিউ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট।

ডন গোল্ডস্মিথ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, দ্য রানএওয়ে ইউনিভার্স লেখক।

সেথ গোল্ডস্টেইন, কম্পিউটার বিজ্ঞান এর অধ্যাপক, কার্নেগী মেলন ইউনিভার্সিটি।

ডেভিড গুডস্টাইন, পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক, ক্যালটেকের সাবেক সহকারী প্রভোস্ট।

জে. রিচার্ড গট তৃতীয়, অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি, টাইম ট্রাভেল ইন আইনস্টাইনস্ ইউনিভার্স বইয়ের লেখক।

প্রয়াত স্টিফেন জে গোল্ড, জীববিজ্ঞানী, হার্ভার্ড লাইটব্রিজ কৰ্প।

রাষ্ট্রদূত থমাস গ্রাহাম, গুপ্তচর উপগ্রহ বিশেষজ্ঞ।

জন গ্রান্ট, করাপ্টেড সায়েন্স বইয়ের লেখক।

এরিক গ্রিন, জাতীয় মানব জিনোম গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ।

রোনাল্ড গ্রিন, বেবিস বাই ডিজাইন বইয়ের লেখক।

ব্রায়ান গ্রিন, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত ও পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক, দ্য এলিগ্যান্ট ইউনিভার্স বইয়ের লেখক।

অ্যালান গুথ, পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক, এমআইটি, দ্য ইনফ্ল্যাশনারি ইউনিভার্সের লেখক

উইলিয়াম হ্যানসন, দ্য এজ অফ মেডিসিনের লেখক।

লিওনার্ড হেফলিক, স্যান ফ্রান্সিসকো মেডিকেল স্কুল এর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।

ডোনাল্ড হিলব্র্যান্ড, সেন্টার ফর ট্রান্সপোর্টেশন রিসার্চের পরিচালক, আর্গোন ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি।

ফ্র্যাঙ্ক ভন হিপ্পল, পদার্থবিদ, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি।

জাফরি হফম্যান, সাবেক নাসা মহাকাশচারী, অধ্যাপক, এরোনটিক্স ও আস্ট্রোনটিক্স, এমআইটি।

ডগলাস হোফাস্টার, পুলিৎজার পুরষ্কার বিজয়ী, গডেল, এসচে, বাচের লেখক।

জন হর্গান, স্টিভেন ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, দ্য এনড অব সায়েন্স এর লেখক।

জ্যামি হিউম্যান, মিথবাস্টার এর হোস্ট।

ক্রিস ইমপি, জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক, অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়, দ্য লিভিং কসমস এর লেখক।

রবার্ট আইরি, সাবেক বিজ্ঞানী এআই ল্যাব, এমআইটি, ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতাল।

পি. জে. জ্যাকবওয়েজ, পিসি ম্যাগাজিন।

জে জারোস্লাভ, এমআইটি এআই ল্যাবের প্রাক্তন বিজ্ঞানী।

ডোনাল্ড জোহানসন, পলিওনথ্রোপোলজিস্ট, লুসি আবিষ্কারক।

জর্জ জনসন, বিজ্ঞান সাংবাদিক, নিউইয়র্ক টাইমস।

টম জোন্স, সাবেক নাসা মহাকাশচারী।

স্টিভ কেস, জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং রেডিও হোস্ট।

জ্যাক ক্যাসলার, স্নায়ুবিজ্ঞানের অধ্যাপক, নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ফিইনবার্গ নিউরোসিস ইনস্টিটিউটের পরিচালক।

রবার্ট কিশেনার, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়।

ক্রিস কনিগ, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী।

লরেন্স ক্রস, অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি, দ্য ফিজিক্স অব স্টার ট্রেক বইয়ের লেখক।

রবার্ট লরেন্স কুন, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং দার্শনিক, পিবিএস টিভি সিরিজ ক্লোজার টু ট্রুথ।

রে কুর্জিভিল, উদ্ভাবক, দ্য এজ অব স্প্রিচুয়াল মেশিন বইয়ের লেখক। রবার্ট লানজা, জৈব প্রযুক্তি, এডভান্স সেল প্রযুক্তি।

রজার লনিউস, রোবটস্ ইন স্পেস বইয়ের সহ-লেখক।

স্ট্যান লি, মার্ভেল কমিক্স এবং স্পাইডার-ম্যানের নির্মাতা।

মাইকেল লেমনিক, সাবেক সিনিয়র বিজ্ঞান সম্পাদক, টাইম ম্যাগাজিন, ক্লাইমেট সেন্ট্রাল।

আর্থার লার্নার-ল্যাম, ভূতত্ত্ববিদ, আগ্নেয়গিরিবিদ, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

সাইমন লেভাই, হোয়েন সায়েন্স গোস রং বইয়ের লেখক।

জন লুইস, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়।

অ্যালান লাইটম্যান, এমআইটি, আইনস্টাইনস্ ড্রিমস্ বইয়ের লেখক।

জর্জ লিনহান, স্পেসশিপওয়ান লেখক।

শেখ লয়েড, এমআইটি, প্রোগ্রামিং দি ইউনিভার্স লেখক।

জোসেফ লাইককেন, পদার্থবিজ্ঞানী, ফারমি নাশনাল অ্যাক্সিলারেটর ল্যাবরেটরি।

প্যাটি মেস, এমআইটি মিডিয়া ল্যাবরেটরি।

রবার্ট মান, ফরেনসিক ডিটেকটিভ বইয়ের লেখক।

মাইকেল পল মেসন, হেড কেসেস বইয়ের লেখক।

ওয়াটসন প্যাট্রিক ম্যাক্রে, লেখক, কিপ ওয়াচিং স্কাইস্! গ্লেন ম্যাকগী, লেখক দ্য পারফেক্ট বেবি।

জেমস ম্যাকলার্কিন, এমআইটি এআই ল্যাবরেটরি, রাইস ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন বিজ্ঞানী।

পল ম্যাকমিলান, পরিচালক, স্পেসওয়াচ, অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়।

ফুলভিও মেলিয়া, পদার্থবিজ্ঞান এবং জ্যোতির্বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক, অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়।

উইলিয়াম মেলার, ইভোলিউশন আরএক্স এর লেখক।

পল মেট্জার, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ।

মার্কিন মিনস্কি, এমআইটি, দ্য সোসাইটি অফ মাইন্ডের লেখক।

হ্যান্স মোরাভেক, কার্নেগী মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অধ্যাপক, রোবোট বইয়ের লেখক।

প্রয়াত ফিলিপ মরিসন, পদার্থবিজ্ঞানী, এমআইটি।

রিচার্ড মুলার, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি, বার্কলে।

ডেভিড নাহামু, আইবিএম হিউম্যান ভাষা প্রযুক্তি সঙ্গে একসময় জড়িত ছিলেন। ক্রিস্টিনা নীল, আগ্নেয়গিরিবিদ, আলাস্কা ভলকানো অবজার্ভেটরি, ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে।

মাইকেল নোভ্যাসেক, কিউরেটর, জীবাশ্ম স্তন্যপায়ী, আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি।

মাইকেল ওপেনহেইমার, পরিবেশবিদ, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি।

ডিন অরনিশ, ক্লিনিকাল প্রফেসর অব মেডিসিন, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সান ফ্রান্সিসকো।

পিটার প্যালেস, মাইক্রোবায়োলজি প্রফেসর, মাউন্ট. মেডিসিন সিনাই স্কুল। চার্লস পেলেরিন, সাবেক নাসা অফিসার।

সিডনি পেরকোভিটস, পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক, এমোরি ইউনিভার্সিটি, হলিউড সায়েন্স বইয়ের লেখক।

জন পাইক, পরিচালক, গ্লোবালসিকিউরিটি অর্গ।

জনা পিঙ্কট, লেখক, ডু জেন্টলেমেন রিয়ালি প্রিফার ব্লন্ডিস্? টমাসো পোগিও, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, এমআইটি।

করি পাওয়েল, প্রধান সম্পাদক, ডিসকভার ম্যাগাজিন।

জন পাওয়েল, প্রতিষ্ঠাতা, জেপি এয়ারস্পেস।

রিচার্ড প্রেস্টন, দ্য হট জোন এবং দি ডেমন ইন দ্য ফ্রিজারের লেখক।

রমন প্রিনজ, এস্ট্রোফিজিক্সের অধ্যাপক, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন।

ডেভিড কোমম্যান, বিজ্ঞান লেখক, লেখক, দ্য রিলাক্ট্যান্ট মি. ডারউইন। ক্যাথরিন রামসল্যান্ড, ফরেনসিক বিজ্ঞানী।

লিসা রান্ডাল, তত্ত্বগত পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ড প্যাসেজের লেখক।

স্যার মার্টিন রেস, মহাজাগতিক বিজ্ঞান এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক, ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি, লেখক, বিফোর দি বিগেনিং।

জেরেমি রিফকিন, প্রতিষ্ঠাতা, ফাউন্ড অন ইকোনমি ট্রেন্ডস্।

ডেভিড রিকুইয়ার, পরিচালক, কর্পোরেট আউটরিচ, এমআইটি মিডিয়া ল্যাব। জেন রিসেলার, ইউনিয়ন অব কনসারন্ড সায়েন্টিস্ট।

স্টিভেন রোসেনবার্গ, জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট

অফ হেলথ।

পল সাফো, ভবিষ্যবক্তা, ইনস্টিটিউট ফর দ্য ফিউচার, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক পরামর্শক, অধ্যাপক

প্রয়াত কার্ল সাগান, কর্নেল ইউনিভার্সিটি, লেখক কসমস।

নিক সাগান, সহ-লেখক, ইউ কল দিজ দি ফিউচার। মাইকেল সালামন, নাসা ‘স বায়ন্ড আইনস্টাইন প্রোগ্রাম।

অ্যাডাম স্যাভেজ, হোস্ট, মিথবাস্টারস।

পিটার শোয়ার্জ, ভবিষ্যৎবিদ, গ্লোবাল বিজনেস নেটওয়ার্কের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, দ্য লং ভিউ এর লেখক।

মাইকেল শেরমার, স্কেপ্টিক্স সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা এবং স্কেপ্টিক পত্রিকা। ডোনা শেরলি, সাবেক ম্যানেজার, নাসা মঙ্গল অনুসন্ধান প্রোগ্রাম।

সেথ শস্তাক, সেটি ইনস্টিটিউট।

নীল শুবিন, অধ্যাপক, অর্গানিজমাল জীববিজ্ঞান এবং এনাটমি, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়, ইয়োর ইনার ফিস বইয়ের লেখক।

পল শচ, নির্বাহী পরিচালক এমিটিটাস, এসইটিআই লীগ।

পিটার সিঙ্গার, লেখক, ওয়ারেড ফর ওয়ার, ব্রুকিংস ইনস্টিটিউট। সাইমন সিং, লেখক, বিগ ব্যাং।

গ্যারি স্মল, আইব্রেনের সহ-লেখক।

পল স্পুডিস, প্ল্যানেটারি জিওলজি প্রোগ্রাম, নাসার মহাকাশ বিজ্ঞান, সোলার সিস্টেম বিভাগ।

স্টিভেন স্কুইরেস, কর্নেল ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক।

পল স্টেইনহার্ড, পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়, সহ-লেখক, এন্ডলেস ইউনিভার্স।

গ্রেগরি স্টক, ইউসিএলএ, রিডিজাইনিং হিউমানস এর লেখক।

রিচার্ড স্টোন, দ্য লাস্ট গ্রেট ইম্প্যাক্ট অন আর্থ, ডিসকভার ম্যাগাজিন। ব্রায়ান সুলিভান, হেইডেন প্ল্যানেটারিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। লিওনার্ড সাসকিন্ড, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক। ড্যানিয়েল টিমেট, অটিস্টিক সভান্ট, বোর অন অ ব্লু ডে এর লেখক। জেফরি টেলর, পদার্থবিজ্ঞানী, মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রয়াত টেড টেলর, মার্কিন পারমাণবিক ওয়ারহেড ডিজাইনার।

ম্যাক্স টেগমার্ক, পদার্থবিদ, এমআইটি।

অ্যালবিন টফলার, থার্ড ওয়েভ-এর লেখক।

প্যাট্রিক টাকার, ওয়ার্ল্ড ফিউচার সোসাইটি।

অ্যাডমিরাল স্ট্যান্সফিল্ড এম. টার্নার, সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্সের সাবেক পরিচালক। ক্রিস টার্নি, এক্সেটর ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাজ্য, আইস, মাড এন্ড ব্লাড এর লেখক। নিল ডিগ্রাস ট্রেসন, হেইডেন প্ল্যানেটারিয়ামের পরিচালক।

সেশ ভেলমুর, ফাউন্ডেশন ফর দ্য ফিউচার।

রবার্ট ওয়ালেস, স্পাইক্রাফটের সহ-লেখক, সাবেক পরিচালক সিআইএর প্রযুক্তিগত সেবা অফিস।

কেভিন ওয়ারউইক, হিউমান সাইবার্গ, রিডিং ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাজ্য।

ফ্রেড ওয়াটসন, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, স্টারজাজার লেখক।

প্রয়াত মার্ক ওয়েইজার, জেরক্স প্যারিস।

অ্যালান ওয়েসম্যান, দ্য ওয়ার্ল্ড উইথআউট আস লেখক।

ড্যানিয়েল ওয়ার্থিমার, এসটিআই এট হোম, ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি, বার্কলে।

মাইক ওয়েসলার, সাবেক বিজ্ঞানী, এমআইটি এআই ল্যাব।

আর্থার উইগিন্স, দ্য জয় অব ফিজিক্স-এর লেখক। এন্থনি ওয়িনশো-বরিস, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ কার্ল জিমমার, বিজ্ঞান লেখক, ইভোলিউশন লেখক। রবার্ট জিম্মারম্যান, লিভিং আর্থ বইয়ের লেখক। রবার্ট জবরিন, প্রতিষ্ঠাতা, মঙ্গল সমিতি।

“ভবিষ্যতের সাম্রাজ্য হবে মনের সাম্রাজ্য।” -উইনস্টন চার্চিল

ভূমিকা

(আগামী ১০০ বছরের পূর্বাভাস )

আমি যখন শিশু ছিলাম তখনকার দুটি ঘটনা আমাকে বর্তমান এই অবস্থায় পৌঁছাতে সাহায্য করেছে এবং মনের কোণে লুকানো দুটি আগ্রহ আমার পুরো জীবনকে গঠন করতে সাহায্য করেছে।

প্রথমত, যখন আমার বয়স আট বছর, আমার মনে আছে তখন আমার সব শিক্ষক একজন বড় বিজ্ঞানীর সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে আলোচনা করছিলেন, কারণ ঐ বিজ্ঞানী তখন সদ্য মৃত্যুবরণ করেছেন।

ঐ রাতে সংবাদপত্রগুলো তার অফিস এবং অসমাপ্ত কাজের ছবি প্রকাশ করেছিল। যার শিরোনাম ছিল—’এই যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী তার সর্ববৃহৎ কাজটি শেষ করে যেতে পারলেন না।’ আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করলাম এটি কী খুব কঠিন কাজ ছিল যে ঐ বিজ্ঞানী তা শেষ করে যেতে পারলেন না? এখানে জটিলতা এবং গুরুত্বপূর্ণ কী থাকতে পারে? আমার কাছে এটি সংগত কারণে বেশ আগ্রহের কারণ ছিল- এমনকি রহস্যময় মৃত্যুর কাহিনির চেয়েও। এবং বেশ উত্তেজনাকর মনে হয়েছিল দুঃসাহসিক অভিযানের গল্প থেকেও। আমার আগ্রহ জন্মে–আমার জানতেই হবে ঐ অসমাপ্ত কাজটি কী?

পরবর্তীকালে আমি ঐ বিজ্ঞানীর নাম জানতে পারি—তিনি আলবার্ট আইনস্টাইন এবং তার অসমাপ্ত কাজটি ‘একটি একীভূত তত্ত্ব’ সৃষ্টি করা, যার সমীকরণটি হবে এক ইঞ্চিরও কম দৈর্ঘ্যের। এটি মহাবিশ্বের গোপনীয়তা উন্মুক্ত করতে সক্ষম হবে এবং সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সাহায্য করবে।

কিন্তু ছেলেবেলায় আমার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা ছিল আমি যখন প্রতি শনিবার সকালবেলা টিভিতে নাকগুজে থাকতাম বুস্টার ক্রেভ অভিনীত ফ্লাস গর্ডন সিরিজ দেখার জন্য। আমি কল্পনায় চলে যেতাম মহাবিশ্বের এলিয়েন, স্পেসশিপ, রেগান যুদ্ধ, পানির নিচের শহর এবং বিশাল প্রকৃতির কাছে। আমি এসবে বাধা পড়ে থাকতাম। এটিই ছিল ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে আমার প্রথম প্রবেশ। এখনও আমি আশ্চর্য হই ঠিক ছেলেবেলার মতো যখন ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি।

যদিও সর্বমহলে এই সিরিজটি প্রশংসিত হয় কিন্তু এর প্রতিটি পর্ব দেখার পর আমি বুঝতে পারি এটি বিজ্ঞানী জার্কভ যিনি নেপথ্যে এই সিরিজটি নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি রকেটশিপ, অদৃশ্য বর্ম, আকাশের শহরগুলোর শক্তির উৎস ইত্যাদি আবিষ্কার করেছেন। বিজ্ঞানীরা ছাড়া ভবিষ্যৎ বলতে কিছু নেই। একজন সুদর্শন বা সুন্দরী প্রশংসা পেতে পারেন কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সব আশ্চর্যজনক ভবিষ্যতের আবিষ্কারক হলো অচেনা অজানা বিজ্ঞানীরা।

পরবর্তীতে আমি যখন উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পড়ি তখন থেকেই এই মহান বিজ্ঞানীর পদচিহ্ন অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং পরীক্ষার জন্য কিছু পড়াশুনা শুরু করলাম।

আমি এই বিশাল বিপ্লবের অংশ হতে চাইলাম। আমি জানতাম এটি বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিবে। আমি একটা পরমাণু চূর্ণ করার যন্ত্র বানানোর সিদ্ধান্ত নেই। আমার মায়ের কাছে অনুমতি চাইলাম আমাদের গ্যারাজে একটি ২.৩ মিলিয়ন ভোল্ট কণা ত্বরক যন্ত্র তৈরির জন্য। তিনি কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়লেন কিন্তু অবশেষে অনুমতি দিলেন। তারপর আমি ওয়েস্টিং হাউজ এবং ভেরিয়ন এসোসিয়েট-এর নিকট যাই এবং ৪০০ পাউন্ড স্বচ্ছ স্টিল, ২২ মাইল লম্বা কপারের তার এবং এভাবে গ্যারাজে একটি বিটাট্রন ত্বরক যন্ত্র তৈরি করি।

এর পূর্বে আমি একটি ক্লাউড চেম্বার তৈরি করেছিলাম। এটি ছিল একটি শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র-চিত্রগ্রহণ ট্রাকারসহ। কিন্তু চিত্রগ্রহণ মাত্রাটি যথেষ্ট ছিল না। আমার এখনকার লক্ষ্য একটি বিম এনিমেটর তৈরি করা। পরমাণু চূর্ণকরণ যন্ত্রের চৌম্বক কয়েল সফলভাবে ১০০০০ গজ চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল, যা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের চেয়ে ২০০০ গুণ বেশি। যা তত্ত্বগতভাবে তোমার হাতের হাতুড়িকে গলিয়ে দিতে সক্ষম। ঐ যন্ত্রটি ৬ কিলোওয়াটি শক্তি পর্যন্ত সৃষ্টি করতে সক্ষম ছিল, যা দিয়ে আমার ঘরের পুরো প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব। যখন আমি যন্ত্রটি চালু করলাম, এটি বাড়ির সব তড়িৎ যন্ত্র ফিউজ করে দিয়েছিল। আমার মা আশ্চর্য হলো যে তার এমন ছেলে কেন হলো না যে ফুটবল খেলবে!

সুতরাং, দুটি আগ্রহ আমার পুরো জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করেছে। তাহলো— মহাবিশ্বের একটি একীভূত তত্ত্বের ক্ষেত্রে পদার্থের সূত্ৰসমূহ জানার ইচ্ছা এবং ভবিষ্যৎ দেখার ইচ্ছা। এভাবে আমি বুঝতে পারলাম এই দুটো আগ্রহই একটি আরেকটির পরিপূরক। ভবিষ্যৎকে বোঝার উপায় হলো প্রকৃতির নিয়মগুলো অনুধাবন করা এবং তারপর সেগুলো আবিষ্কার, যন্ত্রপাতি, থেরাপি ইত্যাদিতে প্রয়োগ করা, যা আমাদের ভবিষ্যৎ সভ্যতাকে পুনঃরূপায়ণ করবে।

আমি অসংখ্য উদ্যোগ খুঁজে বের করেছি ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পূর্ব ধারণা দেয়ার জন্য—এগুলোর অনেকগুলোই ব্যবহার-উপকারী এবং বুদ্ধিদীপ্ত। যাহোক, ফিকশন লেখক এবং ভবিষ্যদ্বাণী দাতাদের লেখা যারা আসলে বিজ্ঞানের প্রাথমিক সূত্রসমূহ ছাড়াই পূর্ব ধারণা প্রদান করেন—এরা একঅর্থে বহিরাগত বিজ্ঞানের জগৎ থেকে। অপরদিকে, বিজ্ঞানীরা যারা মূলত ভবিষ্যৎকে তাদের গবেষণাগারে বসে সৃষ্টি করছেন এবং তারা এতই ব্যস্ত যে সাধারণ জনগণের জন্য ভবিষ্যতের রূপকল্প নিয়ে এই লেখার সময়ও তারা পান না। যদিও তারাই মূলত বিজ্ঞানের ঘরের লোক।

এ কারণেই আমার এই বইটি ভিন্ন। আমি আশা করি এই বইটি সেইসব বিজ্ঞানের জগতের মানুষদের ভবিষ্যৎ অকল্পনীয় সব আবিষ্কার সম্পর্কে ধারণা দিবে, যা আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে। এবং এটি বিশ্বাসযোগ্য, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করবে ২১০০ সালের বিশ্ব সম্পর্কে।

অবশ্যই, এটি অসম্ভব—পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত পূর্ব ধারণা করা ভবিষ্যৎ নিয়ে। আমার মতে, সবচেয়ে ভালো যে বিষয়টি এ ব্যাপারে করা যেতে পারে তাহলো—ঐ সমস্ত বিজ্ঞানী যারা ভবিষ্যৎ সৃষ্টির নেশায় সাধারণ মানুষের মতো পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তাদের মনকে গবেষণার জন্য উপযুক্ত করে তীক্ষ্ণভাবে সুচারু করা। তারা হলেন ঐ সব মানুষ যারা বিভিন্ন ডিভাইস তৈরি করছেন, বিভিন্ন জিনিস উদ্ভাবন করছেন এবং বিভিন্ন থেরাপি সৃষ্টি করছেন, যা আমাদের সভ্যতাকে বৈপ্লবিক উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাবে। এবং এই বইটি হলো তাদের গল্প। আমার সৌভাগ্য হয়েছে এই বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সামনের সারিতে বসার এবং আমি ৩০০ এরও বেশি বিজ্ঞানী চিন্তাবিদ, টেলিভিশন এবং রেডিও স্বপ্ন সারথিদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। আমি এটাও করেছি—টেলিভিশনের এদের

এদের গবেষণাগারে নিয়ে গিয়ে উল্লেখযোগ্য ডিভাইসসমূহ দেখিয়েছি যা আমাদের ভবিষ্যৎকে বদলে দিবে। বিবিসি টেলিভিশন, ডিসকভারি চ্যালেন এবং সায়েন্স চ্যালেনের কর্তৃপক্ষকে সম্মান প্রদর্শন করছি তারা অনেক বিজ্ঞান বিশারদকে স্বাগত জানিয়েছেন— যেসব বিজ্ঞানী ভবিষ্যৎ সৃষ্টি করার দুঃসাহস রাখে তাদের আবিষ্কার এবং উদ্ভাবন দ্বারা। আমি কোনো চিন্তা না রেখেই স্ট্রিং থিওরি নিয়ে আমার কাজ এবং গবেষকদের মন সুতীক্ষ্ণ করার বাসনা তুলে ধরেছি যা এই শতাব্দীতে বিপ্লব ঘটাবে এবং আমি বিশ্বাস করি বিজ্ঞানের জগতে, আমার কাঙ্ক্ষিত চাকরিটি হয়ে যাবে। এভাবে আমার ছেলেবেলায় স্বপ্ন সত্য হলো।

কিন্তু এই বইটি আমার পূর্বেরগুলো থেকে ভিন্ন। আমার আগের বইগুলো যেমন বিওন্ড আইনস্টাইন, হাইপার স্পেস এবং প্যারালাল ওয়ার্ল্ডস-ওসব বইয়ে আমি তত্ত্বীয় পদার্থবিদদের বিষয়সমূহ সুন্দর এবং বৈপ্লবিক দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনা করেছি, যা মহাবিশ্ব সম্পর্কে বুঝতে নতুনভাবে সহায়তা করবে। ‘ফিজিক্স অব দি ইম্পসিবল’ বইতে আমি পদার্থবিজ্ঞানের আবিষ্কারসমূহ নিয়ে আলোচনা করেছি, যা আমাদের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিকে হয়তো সম্ভব করে তুলবে।

এই বইটি আমার ‘ভিশন’ বইয়ের কাছাকাছি সেটিতে আমি আলোচনা করেছিলাম আগামী দশকগুলোতে বিজ্ঞানে কী কী উদ্ভাবন ঘটাতে পারে। আমি আনন্দিত আমার ঐ বইয়ের অনেক পূর্ব ধারণা এখন বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে। বৃহৎ পরিসরে আমার বইয়ের সঠিকতা মূলত পক্ষে আমি যেসব বিজ্ঞানীর সাক্ষাৎকার নিয়েছি তাদের প্রজ্ঞা এবং দূরদৃষ্টির ওপর নির্ভর করে।

কিন্তু এই বইটিতে ‘ভবিষ্যৎ’ আর বৃহৎ চিন্তার পরিসরে আলোচিত হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়ন, যা পরবর্তী ১০০ বছরে ঘটতে পারে এবং মানবসভ্যতায় পরিণতি শেষ পর্যন্ত কী বা কেমন হতে পারে। আগামী ১০০ বছরে যেসব চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ আসবে তা আমরা কীভাবে কাজে লাগাই তার ওপর নির্ভর করবে মানব সভ্যতার আগামী দিনের পরিণতি।

আগামী শতাব্দী সম্পর্কে পূর্ব ধারণা

ভবিষ্যৎ থেকে একটি শতাব্দী-পরবর্তী কিছু বছর সম্পর্কে পূর্বধারণা দেয়া একটি দুঃসাহসিক কাজ। এটি তেমনি একটি স্বাপ্নিক বিষয়, যা তথ্যপ্রযুক্তির চ্যালেঞ্জসমূহের মাধ্যমে মানব সভ্যতার ভবিষ্যৎ পাল্টে দিবে বলে বিশ্বাস করি আমরা।

১৮৩৩ সালে একজন বিখ্যাত ঔপন্যাসিক জুলে ভার্ন তিনি একটি ভবিষ্যদ্বাণীপূর্ণ উপন্যাস লেখেন, যার নাম ছিল—’প্যারিস ইন দি টুয়েনটি সেঞ্চুরি’। যেটি তিনি তার বিশাল নৈপুণ্য প্রয়োগ করে আসছে শতাব্দী নিয়ে তার ভবিষ্যৎ চিন্তাভাবনার। দুর্ভাগ্যবশত, সেই খসড়াটি হারিয়ে গিয়েছিল ঐ সময়ে কিন্তু প্রায় ১৩০ বছর পর তার নাতি এটি একটি নিরাপদ জায়গায় খুঁজে পান সেখানে জুলে ভার্নেই সতর্কতার জন্য হয়তো লুকিয়ে রেখেছিলেন। তার নাতি এটি বুঝতে পারলেন—তিনি একটি মূল্যবান জিনিস খুঁজে পেয়েছেন এবং ১৯৯৪ সালে তিনি এটি প্রকাশের ব্যবস্থা করেন এবং সেটি বেস্ট সেলার হয়।

১৮৬৩ সালের আগে, রাজার, সম্রাটরা তখনও শাসন করত তাদের রাজ্যসমূহে। তাদের অসচ্ছল প্রজাদের দিয়ে মাঠেঘাটে পরিশ্রমের কাজকর্ম করাতেন। আমেরিকাতে তখন যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা থেকে বেরিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, যা দেশকে দুরবস্থা থেকে মুক্তি দেয় এবং বিশ্বের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের বাতাস কেবলমাত্র বইতে শুরু করে। কিন্তু ভার্নে পূর্ব ধারণা করেছিলেন ১৯৬০ সালে প্যারিসে আকাশচুম্বী অট্টালিকা হবে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হবে, টেলিভিশন ত্বরক থাকবে, উচ্চগতির ট্রেন যাবে, গ্যাসেলিনের শক্তিতে চলবে গাড়ি, ফ্যাক্স মেশিন থাকবে এবং এমনকি ইন্টারনেটের মতো কিছুও থাকবে। কোনো ধরনের চাতুরিতা ছাড়া ভার্নে প্যারিসের আধুনিক রূপ তুলে ধরেছিলেন।

এটি আকস্মিক কোনো বিষয় ছিল না, কারণ কিছু বছর পরই তিনি (ভার্নে) আরেকটি উল্লেখযোগ্য পূর্বধারণা করেছিলেন। ১৮৬৫ সালে তিনি লিখেছিলেন— “ফ্রম দি আর্থ টু মুন” সেখানে তিনি মহাকাশচারী পাঠানোর ধারণা করেছিলেন যা প্রায় ১০০ বছর পর ১৯৬৯ সালে সত্য হয়। স্পেন্সশিপের আকার, স্থান ফ্লোরিডা. যা কেপ কানাবেরাল থেকে দূরে নয়, নভোচারীর সংখ্যা, ভ্রমণের সময় কাল, নভোচারীদের ওজনহীনতার অনুভূতি, সর্বশেষ আসরে স্পেন্সশিপের পতন এসবই ভার্নে ঠিকঠাক পূর্বাধারণা করেছিলেন। (শুধুমাত্র একটি বড় ভুল ছিল—রকেটের জ্বালানি হিসেবে তিনি গান পাউডারের চোখ কথা বলেন, যা তার নভোচারীদের চাঁদে নিয়ে যাবে সেটা ছিল রকেট চালনাকারী। কিন্তু তরল জ্বালানি সংবলিত-রকেট-পরবর্তী সত্তর বছর পরও আবিষ্কৃত হয়নি। )

এতটা নিখুঁতভাবে কীভাবে জুলে ভার্ন ১০০ বছর আগেই ভবিষ্যৎ শতক নিয়ে পূর্ব ধারণা করতে পারলেন? তার আত্মজীবনী যারা লিখেছেন কেউ তাকে বিজ্ঞানী বলেননি। তবে তিনি (জুলে ভার্ন) বিজ্ঞানীদের অবিরতভাবে প্রভাবিত করেছেন, ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের ভাবনার মাঝে প্রশ্ন উত্থাপিত করেছেন। তার সময়ের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারসমূহ নিয়ে তিনি বিশাল তথ্য সংগ্রহশালা করেছিলেন অন্য লেখকদের চেয়ে বেশি। কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন বিজ্ঞানীই হলো সভ্যতার চালনাযন্ত্র এবং এসব তথ্য সঞ্চারিত করেছেন ভবিষ্যৎ শতাব্দীতে যেসব অসম্ভব এবং অকল্পনীয় পরিবর্তন আসতে পারে তার ক্ষেত্রে। ভার্ন-এর কল্পনা এবং গভীর জ্ঞানের উৎস হলো সমাজের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের শক্তি রাখে তা— অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। প্রযুক্তি নিয়ে আরেকজন মহান স্বপ্নদ্রষ্টা হলেন লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি—যিনি একাধারে চিত্রশিল্পী, চিন্তাবিদ এবং ভবিষ্যৎ স্বপ্নদ্রষ্টা। ১৪০০ সালের শেষের দিকে, তিনি একটি সুন্দর যন্ত্রের চিত্র আঁকেন, যা একদিন আকাশে উড়বে-তিনি প্যারাস্যুট, হেলিকপ্টার, গ্লাইডার এবং এমনকি অ্যারোপ্লেন এর চিত্র এঁকেছিলেন। উল্লেখ্য, তার এই কল্পিত যন্ত্রের অনেকগুলো আজ আকাশে উড়ছে। (তার উড়ন্ত যন্ত্রটির একটি অতিরিক্ত উপাদান ছিল কমপক্ষে ১ হর্স পাওয়ারের মোটর, যা আরো ৪০০ বছরে হয়তো তৈরি হবে না।)

কী আশ্চর্যকর বিষয়- লিওনার্দো যে যন্ত্রটির চিত্র এঁকেছিলেন তা প্রায় ১৫০ বছর পরের চিন্তার ব্যাপার ছিল সেই সময়ে। ১৯৬৭ সালে, তার ধারণা পুনরায় উত্থাপিত হয় সাথে একটি ১৩ ডিজিটের হুইল যুক্ত করে—এটি ছিল নিওলার্দোর খসড়ার পূর্ণবিশ্লেষণ। যদি কেউ একটি যন্ত্র ঘোরানোর হাতলকে বোঝায় তার সাথে ঐ যন্ত্রের ভিতরের গিয়ারসমূহও ছন্দাবদ্ধভাবে ক্রিয়াশীল হবে গাণিতিক হিসাব অনুসারে। (ঠিক এ ধরনের যন্ত্রই ১৯৬৮ সালে তৈরি হয় এবং সঠিকভাবে চালিতও হয়)

এছাড়াও, ১৯৫০ সালে আরও একটি খসড়া চিত্র উন্মোচিত হয় সেদিন আঁকা হয়েছিল একজন স্বায়ক্রিয় (রোবটিক) যোদ্ধা—যিনি জার্মান-ইটালিয়ান বর্ম পরিহিত, তিনি নিজেই ওঠাবসা করতে পারেন, হাত, কাধ, চোয়াল ঘোরাতে পারেন। এটিও এখন তৈরি হয়েছে এবং কর্মক্ষম বটে।

জুলে ভার্নের মতো লিওনার্দোরও গভীর চিন্তাচেতনা ছিল ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা দেবার—যা ঐ সময়ের তার স্বতন্ত্র অগ্রগামী চিন্তার প্রকাশ। তিনি ছিলেন অন্যতম অংশ ঐসব লোকদের, যারা উদ্ভাবন বা আবিষ্কার নিয়ে চিন্তায় অগ্রগণ্য। এছাড়াও লিওনার্দে সবসময় পরীক্ষানিরীক্ষা করতেন, বিভিন্ন মডেল তৈরি করতেন, আঁকতেন—যা একজন মানুষের চিন্তাকে বাস্তবে রূপদান করার চাবিকাঠি।

ভার্নে এবং লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির অসংখ্য এবং অকল্পনীয় বুদ্ধিমত্তার আলোকে আমরা একটি প্রশ্ন তুলতে পারি—”২১০০ সালের পৃথিবী কেমন হবে সে সম্পর্কে কি পূর্ব ধারণা করা যায়? ভার্নে এবং লিওনার্দোর ঐতিহ্য অনুসরণ করে এই বইয়ে অগ্রগণ্য বিজ্ঞানীদের সম্পর্কে পরীক্ষানিরীক্ষা করা হবে যেসব বিজ্ঞানীরা মূলত তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করছেন যা আমাদের ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করে দিবে এই বইটি কোনো কল্প কাহিনির বইয়ের বা হলিউডের রিকষ্ট লেখকদের অতিরিক্ত কল্পনার কোনো উপজাত লেখনীও নয় বরং নিখুঁত বিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে রচনা করা হয়েছে যেসব গবেষণা এখন বিশ্বের বিভিন্ন বড় গবেষণাগারে পরিচালিত হচ্ছে।

এসব তথ্যপ্রযুক্তির আদি নমুনা বর্তমানে বিদ্যমান। “নিউরোম্যানসার” বইয়ের লেখক উইলিয়াম গ্যাবসনের মতে যিনি ‘সাইবার স্পেস’ শব্দটির উদ্ভাবক-একসময় তিনি বলেছিলেন, “ভবিষ্যৎ এখনই বিদ্যমান তবে এটি অবিন্যস্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

২১০০ সালের বিশ্ব সম্পর্কে ধারণা দেয়া খুবই কঠিন একটি কাজ কারণ আমায় ইতোমধ্যে বিজ্ঞানের গভীর উৎকর্ষ এবং অভ্যুত্থানের একটি সময়ে বর্তমানে বাস করছি যেখানে আবিষ্কারের গতি দিন দিন বেড়ে চলেছে। পুরো মানব সভ্যতার ইতিহাসে গত কয়েক দশকে বিজ্ঞানের অনেক জ্ঞান মানব কর্তৃক জানা হয়েছে আগের তুলনায় বেশি হারে। এবং ২১০০ সালের কাছাকাছি এই জ্ঞান বিগত কয়েক শতাব্দীর দ্বিগুণ হয়ে যাবে।

কিন্তু আগামী ১০০ বছর সম্পর্কে ভবিষ্যৎ ধারণা দেয়ায় উৎকৃষ্ট উপায় হলো ১৯০০ সালের বিশ্বকে একটু ফিরে দেখা যেখানে আমাদের দাদা-দাদি বা নানা-নানিরা কোনো ধরণের জীবন অতিবাহিত করতেন তা মনে করে দেখা।

সাংবাদিক মার্ক সুসিভান আমাদেরকে কল্পনা করতে বলেছিলেন এমন করে যেন কোন এক ব্যক্তি ১৯০০ সালে একটি পত্রিকা পড়ছেন। তার পত্রিকায় ১৯০০ সালের জানুয়ারির ১ তারিকের চিত্র ছিল এমন- আমেরিকানরা রেডিও নামে কোনো শব্দ জানে না, যার জন্য এখন থেকে আরও বিশ বছর অপেক্ষা করতে হবে। অথবা কোনো মুভির নাম জানে না, যা ভবিষ্যতে বিরাজ করবে। অথবা ছিল অটো মোবাইলের ধারণা ছিল শুধুমাত্র কল্পনা, ঘোড়া ছাড়া যানবাহন সেখানে অবটার নামে কোনো শব্দ ছিল না। কৃষকেরা ট্রাক্টরের নাম জানতো না, ব্যাংকাররা ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমের কথা ভাবত না। ব্যবসায়ীরা চেইন স্টোর সম্পর্কে জানতোই না অথবা সেলফ সার্ভিস শব্দটিই শোনেনি, তেলের জ্বালানি সংবলিত ইঞ্জিনের কথা জানত না নাবিকেরা, রাস্তার উপর গরুর পাল দেখা যেতো। ঘোড়া অথবা গাধার ঠেলাগাড়ি ছিল সাধারণত সর্বত্র বিরাজমান; কামাররা থাকতো গাছতলায় ছড়িয়ে বসে, যা ছিল বাস্তব চিত্র পরবর্তী ১০০ বছর সম্পর্কে পূর্ব ধারণা দেয়া ঠিক তেমন দুঃসাধ্য যেমন ১৯০০ সালের মানুষের কাছে ২০০০ সালের বিশ্ব সম্পর্কে ধারণা করা কঠিন ছিল। ১৮৯৩ সালে, শিকাগোতে বিশ্বর কলম্বিয়ানদের সম্মেলনে ৭৪ জন বিখ্যাত ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল পরবর্তী ১০০ বছর সম্পর্কে পূর্ব ধারণা দিতে। সেখানে যে সমস্যাটি ছিল তাহলো তারা প্রায় সবাই বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে খাটো করে দেখেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, অনেকেই সঠিক ধারণা দিয়েছিলেন একদিন আমাদের বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ থাকবে আটলান্টিক সাগর পাড়ি দিতে কিন্তু তারা ভেবেছিল বেলুন থাকবে সেখানে। সিনেটর জন জে ইনগাল বলেছিলেন, “সব নাগরিকের ক্ষেত্রে ওটি সাধারণ ব্যাপার হবে প্রত্যেকের একটি চলাফেরার জন্য বেলুন থাকবে যেমন সবার বাগি বা বুট আছে এখন। তারা অটো মোবাইলের কথা ভাবতে পারেননি তখন। পোস্টমাস্টার জেনারেল জন ওনামেকার বলেছিলেন যে, আমেরিকায় চিঠিপত্র আদান প্রদান হবে স্টেজ কোচ এবং ঘোড়ার বাহনের মাধ্যমে এমনকি আগামী ১০০ বছরেও।

বিজ্ঞানের এই অবমূল্যয়ন এবং উদ্ভাবনের ধারণা প্যাটেন্ট অফিস পর্যন্ত নিম্নমানের চিন্তা প্রসূত ছিল। ১৮৯৯ সালে চার্লস এইচ ডুয়েল তিনি আমেরিকায় প্যাটেন্ট অফিসের কমিশনার ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “সবকিছুই আবিষ্কৃত হয়ে গেছে, যা আবিষ্কৃত হওয়া সম্ভব।

মাঝেমধ্যে এই ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞগণ ও তাদের নাকের ডগায় কি ঘটছে তাও পুরোপুরি বুঝতে পারেননি। ১৯২৭ সালে হেরি এম এয়ার্নার যিনি ওয়ার্নার ব্রাদার-এর একজন প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন নির্বাক সিনেমার যুগে একটি মন্তব্য করেছিলেন “অভিনেতাদের কথা শুনতে চায় কোন অসভ্য।” এবং থমাস ওয়াল্টসন, যিনি IBM-এর চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি ১৯৪৩ সালে বলেছিলেন, “সারা বিশ্বে হয়তো পাঁচটি কম্পিউটার বিক্রি করার মতো বাজার আছে।”

বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের প্রতি অবমূল্যায়ন এমনকি নিউইয়র্ক টামস্ পত্রিকাকে প্রভাবিত করেছিল। ১৯০৩ সালে টাইমস পত্রিকায় বলা হয় উড়ন্ত যন্ত্রপাতি নিয়ে ভাবা সময়ের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। ঠিক কয়েকদিন আগে এমন মন্তব্য করা হয় যার কিছু দিন পরেই রাইট ভ্রাতৃদ্বয় উত্তর ক্যারিলিনার কিটি হকে তারা উড়োজাহাজ উড়িয়েছিলেন। ১৯২০ সালে টাইম পত্রিকা বিজ্ঞানী রবার্ট গর্ডারের সমালোচনা করে কারণ শূন্যস্থানে রকেট চলতে পারে না বলে এটি টাইমস্ পত্রিকা মন্তব্য করেছিল। ৪৯ বছর পর যখন এপোলো ১১-এর নভোচারী চাঁদে অবতরণ করেছিল তখন টাইমস্ এটিকে মূল্যায়ন করে এবং পুনরায় আগের মন্তব্যের উল্টো প্রতিবেদন করে। “এটি এখন প্রতিষ্ঠিত সত্য যে রকেট শূন্য স্থানেও কাজ করতে বা চলতে সক্ষম। আগের ভুলের জন্য টাইমস দুঃখিত।” এখানে শিক্ষণীয় ব্যাপার হলো ভবিষ্যতে যেকোনো কিছু ঘটতে পারে-এর বিপক্ষে মন্তব্য করার খুবই ক্ষতিকর।

ভবিষ্যৎ নিয়ে পূর্ব অনুমান কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বেশিরভাগ সময় তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রসরকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। ইতিহাস–আমরা বারবার বলি যা আশাবাদী লোকজন দ্বারা লেখা হয়, হতাশাবাদীদের দ্বারা নয়। প্রেসিডেন্ট ওয়েট ইশেনহোবার একসময় বলেছিলেন, “নৈরাশ্যবাদীরা কখনো যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারে না।”

এমনকি আমরা অবাক হয়ে দেখি বৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনী লেখকেরাও কীভাবে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারসমূহকে অবমূল্যায়িত করেন। যখন আমরা ১৯৬০ এর দশকের টিভি সিরিজ ‘স্টার ট্রেক’ দেখি— তুমি খেয়াল করে দেখবেন ২৩ শতকের তথ্যপ্রযুক্তিও সেখানে আছে। তার পূর্বেই টেলিভিশনের দর্শকেরা মোবাইল ফোন দেখতে শুরু করেছেন বহনযোগ্য কম্পিউটার দেখছেন, কথা বলতে পারে এমন যন্ত্র দেখছেন এবং টাইপ রাইটার যা নির্দেশনা দিতে সক্ষম তাও দেখছেন। এসব যন্ত্রপাতিই বর্তমানে বিদ্যমান। অতিশীঘ্র আমরা বৈশ্বিক অনুবাদ যন্ত্রও দেখব যা তুমি যা বলবেন সে কথাসমূহকে দ্রুত ভাষায় রূপান্তর করতে পারবে। এবং ‘ট্রাইকর্ডার’ যা দূর থেকে রোগ সনাক্ত করতে পারবে (র‍্যাপ ড্রাই ইঞ্জিন এবং ট্রান্সপোর্টার ছাড়া ২৩ শতকের বেশির ভাগ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এখনই বিদ্যমান)

এসব ধরনের ভুল মানুষকে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বোঝার ক্ষেত্রে বিভ্রান্ত করে যে কীভাবে আমরা পূর্ব ধারণা দেবার ক্ষেত্রে ঠুনকো বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে তথ্য প্রদান করি?

প্রকৃতির নিয়মসমূহ অনুধাবন করা

এখন আর আমরা বিজ্ঞানের অন্ধকার যুগে বাস করছি না। যখন বোল্ট এবং প্লাগের আলোর গোলাকে ঐশ্বরিক কাজ ভাবা হতো। আমাদের একটি বড় সুবিধা হলো— ভার্নে এবং লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি-এর সময়ের প্রকৃতির নিয়মসমূহ সম্পর্কে সঠিক ধারণা ছিল না।

পূর্ব অনুমান খুঁত থাকবেই তবে ধারণাসমূহকে কষ্টকর ভিত্তি প্রদানের একটি উপায় হলো—প্রকৃতির চারটি মৌলিক বল সম্পর্কে মনোভাব বোঝা যা পুরো মহাবিশ্বকে পরিচালিত করে। এই বলসমূহের যেকোনোটি বোঝা এবং ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে মনে হয় প্রতিবারই এগুলো মানব ইতিহাসকে বদলে দেয়।

প্রথম বল যেটি ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন তা হলো— মহাকর্ষ বল। আইজাক নিউটন আমাদের যে ব্যাখ্যাটি দিয়েছেন তা হলো বস্তু বলের বিপরীত দিকে ক্রিয়া করে যা রহস্যময় আত্মা বা অধিবিদ্যারর মতো নয়। এটি আমাদের শিল্পবিপ্লবের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে এবং বাষ্পীয় শক্তির সূচনা করেছে বিশেষ করে যান চলাচলের ক্ষেত্রে।

দ্বিতীয় যে বলটি ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন তা হলো-তড়িৎ চৌম্বক বল যা আমাদের শহরসমূহকে আলোকিত করেছে এবং আমাদের ব্যবহার্য যন্ত্রসমূহের শক্তির উৎস। যখন টমাস এডসন, মাইকেল ফ্যারাডে, জেমস ক্লার্ক, ম্যাকওয়েল এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীরা বিদ্যুৎ এবং চৌম্বকত্ব ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়েছেন তখনই অভাবনীয় ইলেকট্রনিক বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে যা অসংখ্য বৈজ্ঞানিক আশ্চর্যের জন্ম দিয়েছে। যখন আমরা দেখি বৈদ্যুতিক বিপর্যয়ে তখন হঠাৎ কয়েক বছর পিছনে চলে যাই।

তৃতীয় এবং চতুর্থ বল হলো দুটো নিউক্লিয় বল : দুর্বল এবং সবল নিউক্লিয় বল। যখন আইস্টাইন E = mc^২ সূত্রটি দিলেন এবং ১৯৩০ সালের দিকে যখন পরমাণুর বিশ্লেষণ আবিষ্কৃত হলো তখন বিজ্ঞানীরা প্রথমবার বুঝতে পারলেন এই বলসমূহ স্বর্গসমূহকে আলোকিত করে। তারকারাজির গোপন রহস্য উন্মোচিত করে ছিল এটি। শুধু তাই নয় পারবাণবিক অস্ত্রের বিশাল শক্তি জানা গেল, এটিও বলা যায় হয়তো একদিন এই শক্তির রুক্ষতা বা রূঢ়তা পৃথিবীর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে।

বর্তমানে, আমরা চারটি মৌলিক বল সম্পর্কেই মোটামুটি ধারণাকে, আয়ত্তে নিতে সক্ষম হয়েছি। প্রথম বল মহাকর্ষ বর্তমানে আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার সূত্রের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয় এবং অন্য তিনটি বল কোয়ান্টাম বলবিদ্যার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায় যা আমাদেরকে পরমাণুর অভ্যন্তরে বিশ্বের গোপন রহস্য উন্মোচিত করতে সহায়তা করেছে। অপরপক্ষে কোয়ান্টাম তত্ত্ব আমাদেরকে ট্রানজিস্টার, লেজার এবং আধুনিক সভ্যতার ডিজিটাল বিপ্লব উপহার দিয়েছে। একইভাবে, বিজ্ঞানীরা অণুর DNA-এর গোপন রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছেন কোয়ান্টাম তত্ত্ব ব্যবহার করে। মেশিন, রোবট এবং কম্পিউটারের সরাসরি ব্যবহারের ফসল হলো জৈব প্রযুক্তির বৈপ্লবিক গতি।

এরই ধারাবাহিকতায় আগামী শতাব্দির বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি নিয়ে আমরা আরও ভালো ধারণা পেতে সক্ষম হয়েছি। এটি সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত হবে এবং আমাদের অবাক করে দিবে, নির্বাক করে দিবে কিন্তু আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞানের ভিত্তি যদি অনির্ধারিত হয়ে যায়। এবং আমরা মৌলিক জ্ঞানের বড় কোনো পুনরাবৃত্তি কামনা করি না অন্তত পক্ষে নিকট ভবিষ্যতে। ফলে এই বইয়ে আমরা যে পূর্ব ধারণা দিবো তা কোনো অহেতুক অনুমান নয় বরং তথ্যপ্রযুক্তির ওপর যৌক্তিক ভিত্তির ওপর পূর্ব ধারণা দেওয়া হবে যা শেষ পর্যন্ত ফলাফল নিয়ে আসবে সঠিকভাবে। উপসংহারে, এখানে অনেক কারণ রয়েছে যার ভিত্তিতে ২১০০ সালের বিশ্ব নিয়ে একটি রূপরেখা আমরা বিশ্বাস করতে পারি। যেমন-

১. ৩০০ জন শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীর সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে এই বইটি লেখা যারা আবিষ্কারের জগতে অগ্রগণ্য বিজ্ঞানী।

২. একটি বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষতা যা এই বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে তা পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রসমূহের সাথে সংগতি রেখে।

৩. যে চারটি মৌলিক বল এবং প্রকৃতির মৌলিক সূত্রসমূহ যা আমরা জানি তার বড় ধরনের পরিবর্তন আপতত আমরা আশা করছি না।

৪. তথ্যপ্রযুক্তির যেসব তথ্য এই বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে তার সবই বর্তমানে বিদ্যমান।

৫. এই বইটি এমন একজন ‘ঘরের লোক’ দ্বারা লিখিত যিনি হাতে কলমে তথ্য প্রযুক্তির গবেষণার প্রত্যক্ষদর্শী।

অগণিত সময়কাল ধরে আমরা প্রকৃতির নৃত্যের পরোক্ষ দর্শক ছিলাম। আমরা ধূমকেতু, বিজলীর চমকানি, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত এবং দেখে আশ্চর্য হতাম, ভয় পেতাম, ভাবতাম এগুলো আমাদের চিন্তাভাবনার আয়ত্তের বাইরে। আদিমকালের জনগোষ্ঠীর কাছে প্রকৃতির এই শক্তিসমূহ ঐশ্বরিক রহস্যময় কারণ ছিল ভয়ের এবং পুজো করার তাই তারা পৌরাণিক ঈশ্বর বানিয়ে এদের নিয়ে আলাদা জগৎ কল্পনা করত। আদিম জনগোষ্ঠী বিশ্বাস করতো এই ঈশ্বরসমূহের প্রার্থনা করলে তারা দয়া পাবেন এবং তাদের আশাসমূহ পূরণ হবে।

আজ, আমরা প্রকৃতির সেই নৃত্যের কোরিওগ্রাফার এবং নৃত্যের খুটিনাটি সম্পাদন করতে সক্ষম। ২১০০ সালে আমরা প্রকৃতির নিয়ন্ত্রক হয়ে তার পুরোটা আয়ত্ব নিতে সক্ষম হবো।

২১০০ সাল : পুরানের ঈশ্বর হওয়ার সময়

বর্তমানে যদি আমরা কোনোভাবে অতীতে যেতে পারতাম এবং আমাদের পূর্বপুরুষদের দেখাতে পারতাম এখনকার সব আধুনিক বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিসমূহ তাহলে আমরা তাদের কাছে জাদুকর হিসেবে গণ্য হতাম। বিজ্ঞানে বিচিত্রতার মাধ্যমে আমরা তাদের জেট প্লেন দেখাতে পারতাম যা মেঘের উপর দিয়ে উড়ে যেত। রকেট দেখাতে পারতাম যা চন্দ্র এবং গ্রহ খুঁজে বের করছে, MRI স্ক্যানার দেখাতে পারতাম যা আমাদের দেহের অভ্যন্তরের চিত্র দেখাতো এবং সেলফোন যা আমাদের পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের মানুষের সাথে যুক্ত করেছে। যদি আমরা তাদের ল্যাপটপ, কম্পিউটার দেখাতে পারতাম যার মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে আমরা চিত্র ও বার্তা পাঠাতে পারি এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে, তারা এটিকে জাদু হিসেবে দেখতো! কিন্তু এতো কেবল শুরু মাত্র। বিজ্ঞান স্থির কোনো বিষয় নয়। আমাদের চারপাশে বিজ্ঞান জ্যামিতিকভাবে উন্মোচিত হচ্ছে। যদি তুমি বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধগুলো গণনা করো তবে দেখবে প্রতিদশকে তা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায় এবং তা চলছে, থেমে নেই। উদ্ভাবন এবং আবিষ্কারসমূহ পুরো অর্থনীতি, রাজনীতি এবং সামাজিক চিত্র পাল্টে দিচ্ছে অতীতের ভ্রান্ত বিশ্বাস ও পক্ষপাতিত্ব থেকে।

এখনই সময় ২১০০ সালের বিশ্ব কল্পনা করার দুঃসাহস দেখানোর।

২১০০ সালের মধ্যে আমাদের লক্ষ্য ঠিক তেমনি ঈশ্বরের মতো আমরা যাদের পুজো করতাম বা ভয় পেতাম। কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের উপকরণ কোনো ম্যাজিকের বিষয় বা জাদুর মিশ্রণ নয় বরং কম্পিউটার বিজ্ঞান, ন্যানা টেকনোলজি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জৈব প্রযুক্তি এবং সর্বপরি কোয়ান্টাম থিওরি যেগুলো আগামী দিনের প্রযুক্তিসমূহের ভিত্তি মূল।

২১০০ সালে পুরাণের ঈশ্বরের মতো। আমরা আমাদের মনের লক্ষ্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবো। কম্পিউটার নিরবে আমাদের চিন্তাকে ধরে ফেলতে পারবে এবং আমাদের ইচ্ছাকে প্রকাশ করতে পারবে বাস্তবে। আমরা চিন্তা দ্বারাই বস্তুকে স্থানান্তরিত করতে পারবো যা টেলিকাইনেটিক শক্তি হিসেবে পরিচিত এবং যা শুধুমাত্র ঈশ্বরের জন্য সংরক্ষিত। জৈবপ্রযুক্তির ব্যবহার করে আমরা নিখুঁত দেহ তৈরি করতে পারবো এবং আমাদের জীবনকাল দীর্ঘায়িত করতে পারবো যা ভূপৃষ্ঠের উপর কখনো হাঁটেনি। ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে আমরা একটি বস্তুকে এমন ক্ষুদ্র রূপ দিতে পারবো যা মনে হবে একেবারেই অদৃশ্য দৈর্ঘ্যের মতো। আমরা পরীর রথে চলব না তবে এমন মসৃণ যানবাহনে চলবো যা কোনো জ্বালানি ছাড়াই চলবে, বিরামহীনভাবে নির্বিঘ্নে বাতাসে ভেসে বেড়াবে। আমাদের ইঞ্জিনের মাধ্যমে গ্রহ নক্ষত্রসমূহের অসীম শক্তিকে ব্যবহার করতে পারবো। আমরা স্টারশীপ পাঠাতে সক্ষম হবো যা তার কাছাকাছি গ্রহ নক্ষত্র খুঁজে বের করবে।

যদিও এসব ঈশ্বরের মত কর্মকাণ্ডকে বেশি এগিয়ে ভাবার মতো মনে হয় তবে এসব প্রযুক্তির বীজ কিন্তু ইতিমধ্যে বপিত হয়েছে যা আমরা পূর্বে বলেছি। এটিই আধুনিক বিজ্ঞান, ম্যাজিক বা যাদু মন্ত্র নয়, যা আমাদের এমন ভাবনার শক্তির উৎস। আমি একজন কোয়ান্টাম পদার্থবিদ। প্রতিদিন আমি অতি পারমাণবিক কণা ঘরে যার দ্বার মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে তার সাথে সম্পর্কিত সমীকরণ নিয়ে কাজ করি। আমি সেই বিশ্বে বাস করি যেখানে ১১ মাত্রাবিশিষ্ট হাইপার স্পেস, ব্লাকহোল এবং মাল্টিভার্সের গেটওয়ে বর্তমান। কিন্তু কোয়ান্টাম থিওরির সমীকরণসমূহ গ্রহ-নক্ষত্রের বিস্ফোরণ ব্যাখ্যা করতে ব্যবহার করা হয় এবং এই সমীকরণসমূহ আমাদের ভবিষ্যতের রূপরেখা উন্মোচন করতেও বৃবহৃত হতে পারে। কিন্তু কোন ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তিগত পরিবর্তন নেতৃত্ব দিচ্ছে? যে দীর্ঘপথ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অতিক্রম করছে তার সর্বশেষ গন্তব্য কোথায়?

এসব বিষয়াদির উত্থান একটি গ্রহকেন্দ্রিক সভ্যতার সৃষ্টিপর কারণ হতে পারে থাকে পদার্থবিদগণ টাইপ-I সভ্যতা বলে থাকেন। এই রূপান্তর সম্ভবত ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রূপান্তর, যা খুব সুক্ষ্মভাবে অতীতের সব সভ্যতাকে বিদায় করে দিচ্ছে। এই গ্রহকেন্দ্রিক সভ্যতার প্রতিটি আকস্মিক নতুনত্বের জন্ম কোনো না কোনোভাবে সংবাদ শিরোনামকে প্রভাবিত এবং নিয়ন্ত্রিত করে। ব্যবসা, বাণিজ্য, সংস্কৃতি, ভাষা, বিনোদন, অবসর কর্মকাণ্ড এবং এমনকি যুদ্ধ সবকিছুই এই গ্রহকেন্দ্রিক সভ্যতার মাধ্যমে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সম্মুখীন হচ্ছে। গ্রহের শক্তির বহির্নির্গমণ হিসাব করলে আমরা ধারণা করতে পারি আমরা ১০০ বছরের মধ্যে পাইপ-I সভ্যতায় প্রবেশ করবো। অন্যথায় আমরা অরাকজকতা, ভুল ভ্রান্তির মধ্যে পতিত হবো, একটি গ্রহকেন্দ্রিক সভ্যতায় রূপান্তর তাই এড়ানো সম্ভব নয়, এই বিশাল, অনিয়ন্ত্রণ বলের ইতিহাস ও প্রযুক্তি যে কারও নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকবে।

মাঝে মাঝে কেন পূর্ব অনুমান সঠিক হয় না?

কিন্তু অনেক পূর্ব অনুমান যা তথ্যপ্রযুক্তির যুগে নেওয়া হয়েছিল তা ছিল ধারণাগত ভুল। উদাহরণস্বরূপ, অনেক ভবিষ্যৎ বক্তা ধারণা করেছিলেন কম্পিউটার আবিষ্কারের কারণে কাগজ অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে, অফিসগুলো চলবে কাগজ ছাড়া (পেপার লেস অফিস) প্রকৃতপক্ষে ঘটেছে তার উল্টো। এক দৃষ্টিতেই দেখা যাবে যেকোনো অফিসে কাগজের পরিমাণগত ব্যবহার আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।

কেউ কেউ আরও কল্পনাপ্রবণ হয়ে পেপারলেস সিটির কথাও ভেবেছিলেন। ভবিষ্যৎদ্রষ্টারা পূর্ব ধারণা করেছিলেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে টেলিকনফারেন্স সরাসরি মুখোমুখি দেখা-সাক্ষাত বা মিটিং অপ্রয়োজনীয় করে তুলবে। সুতরাং তাদের যাতায়াত করতে হবে না। প্রকৃতপক্ষে শহরগুলো আপনাতুমি শূন্যতায় ডুবে থাকবে, ভৌতিক নগরে পরিণত হবে যেহেতু লোকজন অফিসে না গিয়ে বাসায় বসেই কাজকর্ম সম্পাদন করবে।

একই রকমভাবে আমরা দেখবো ‘সাইবার টুরিস্ট’ কোচ পটেটো স সারাদিন তার সোফায় বসে কম্পিউটারে ইন্টারন্টের মাধ্যমে পুরো পৃথিবী ঘুরে বেড়াবে এবং বিভিন্ন দৃশ্য অবলোকন করবে। আমরা আরও দেখবো ‘সাইবার শপার’ যারা না হেঁটে তাদের কম্পিউটার সার্ভিসকে হাঁটাবে। শপিংমলগুলো দেউলিয়া হয়ে যাবে। এবং ‘সাইবার স্টুডেন্ট’ যারা তাদের সব ক্লাস অনলাইনে করবে যখন তারা গোপনে ভিডিও গেম অথবা বিয়ার পান করত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগ্রহীতার জন্য বন্ধ হয়ে যাবে আগ্রহ হীনতায়

অথবা, ‘পিচকার ফোনের’ ভাগ্য চিন্তা করো। ১৯৬৪ সালের বৈশ্বিক মেলায় AT & T ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছিল একটি TV স্কিনকে টেলিফোনের সাথে সংযুক্ত করে নতুন একটি পদ্ধতির সূচনাকল্পের যাতে করে তুমি ঐ ব্যক্তিকে দেখতে পারো যার সাথে তুমি কথা বলছ এবং সেও তোমাকে দেখতে পারবে। এই চিন্তা বাদ দেয়া হয়নি এখনো, AT & T কোম্পানি মাত্র ১০০টি পণ্য বিক্রি করেছিল যার প্রতিটির দাম ছিল ১ বিলিয়ন ডলার। যা খুবই ব্যয়বহুল ছিল।

পরিশেষে প্রচলিত মিডিয়া এবং বিনোদন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে এমনকি চিন্তা করা হয়েছিল। কিন্তু ভবিষ্যৎ দৃষ্টিতে ইন্টারনেট এমন এক বিশাল বিষয় হবে যার জন্য লাইভ থিয়েটারকে অর্থহীন করে দিবে, মুভি, রেডিও, এবং টিভি এগুলোর সবই কেবলমাত্র যাদুঘরে দেখা যাবে।

প্রকৃতপক্ষে, ঘটেছে তার উল্টোটা। ট্রাফিক জ্যাম আরও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে—যা নাগরিক জীনের একটি স্থায়ী রূপ নিয়েছে। লোকজন বিদেশে রেকর্ড পরিমাণে ভ্রমণ করছে যা টুরিজমকে এই গ্রহের একটি দ্রুত বর্ধনশীল শিল্পে পরিণত করেছে। ক্রেতারা বন্যার মতো বিভিন্ন স্টোরে ভিড় করছে একটি অর্থনীতির খারাপ সময়েও। ক্লাসরুম বন্ধ হয়ে যাবার পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রেকর্ড পরিমাণ ছাত্র ভর্তি করাচ্ছে। নিশ্চয়তার জন্য অনেকে যদিও টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে তাদের সহকর্মীর সাথে কাজ করছে কিন্তু শহরগুলো আদৌ ফাঁকা হয়নি। উল্টো শহরগুলো বড় শহরে পরিণত হচ্ছে। আজ এটি সহজ ইন্টানেটের মাধ্যমে ভিডিও কথোপকথন কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ এই সিনেমার মতো আচরণ নিয়ে উদাসীন বরং তারা খুলাখুলি কথোপকথন পছন্দ করেন। এবং অবশ্যই ইন্টারনেট পুরো মিডিয়া জগতের চিত্র পরিবর্তন করলেও মিডিয়া মোঘলরা ইন্টারনেটের মাধ্যমেই আয় করা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্থ কিন্তু টেলিভিশন, রেডিও, লাইভ থিয়েটার কোনোটি এখনও শেষ হয়ে যায়নি। মহাসড়কের বাতিগুলো এখন জ্বলে যেমনটি আগে জ্বলত।

কেইভম্যান প্রিন্সিপাল বা গুহা মানব নীতি

কেন এসব পূর্ব ধারণা বাস্তবে পরিণত হতে ব্যর্থ হয়? আমি মনে করি মানুষ এই অগ্রগামী চিন্তাকে বৃহৎ পরিসরে প্রত্যাখ্যান করে কারণ হিসেবে যেটি দেখানো যায় তা হলো কেইভম্যান নীতি। বংশগতি এবং ফসিলের কিছু প্রমানক আধুনিক মানুষ সম্পর্কে ইংগিত দেয় যারা দেখতে ঠিক আমাদের মতই অথচ তা প্রায় ১,০০,০০০ বছর পূর্বে আফ্রিকায় পাওয়া গেছে কিন্তু আমরা এমন কোন প্রমাণক পাইনি যা আমাদের মস্তিষ্ক বা ব্যক্তিত্বকে তখন থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত পরিবর্তনের স্বাক্ষর বহন করে। যদি তুমি সেই সময়ের কাউকে বেছে নাও যে শারীরবৃত্তীয়ভাবে আমাদের মতই, যদি তাকে তুমি গোসল করাও এবং সেভ করাও তাকে থ্রিপিস স্যুট পরাও এবং পরে তাকে ওয়াল স্ট্রীটে ছেড়ে দাও যে দৈহিকভাবে অন্যদের থেকে কোনো পার্থক্য বহন করবে না। সুতরাং আমাদের চাওয়া, স্বপ্ন, ব্যক্তিত্ব এবং ইচ্ছা সম্ভবত বেশি একটা পরিবর্তন হয়নি ১,০০,০০০ বছরেও। আমরা সম্ভবত আমাদের অতীত গুহা মানবের মতো এখনো চিন্তা করি।

বিষয় হলো : যখন আধুনিক প্রযুক্তি এবং আমাদের পূর্বপুরুষের ইচ্ছা এর মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় তখন এসব পূর্বপুরুষের ইচ্ছাই জিতে যায়। এটিই হলো গুহামানব নীতি বা কেইভ ম্যান প্রিন্সিপাল। উদাহরণস্বরূপ গুহা মানব সৰ্বদা চায় ‘হত্যার প্রমাণ’। এটি এমন গর্ব করার কিছু নয় যে বড় কিছু হাতছাড়া হয়ে গেলো। প্রতিবারই যখন এমন বড় কিছু আমাদের হাতছাড়া হয়ে যায় আমাদের হাতে নতুন প্রাণী আছে যথাযথ গল্প বলার জন্য! তেমনভাবে আমরা হার্ডকপি চাই যখন কোনো বিষয়ে আমরা কাজ করি। আমরা প্রকৃতিগতভাবে বিশ্বাস করি না আমাদের কম্পিউটারের ভিতরে ইলেকট্রনসমূহের ভেসে বেড়ানো। সুতরাং আমরা আমাদের ইমেইল এবং রিপোর্টস প্রিন্ট করি এমনকি যখন প্রয়োজন নেই আজও। সেজন্যই পেপারলেস অফিস কখনো বাস্তবে পরিণত হয়নি।

এভাবে, আমাদের পূর্বপুরষেরা সবসময় মুখোমুখি বা সরাসরি পারস্পরিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পছন্দ করতেন। এটি আমাদের অন্যদের সাথে বন্ধন গড়তে এবং তাদের মনে লুকায়িত আবেগ বুঝতে সাহায্য করত। এ কারণেই জনমানবশূন্য শহর বাস্তব রূপ নেয়নি। উদাহরণস্বরূপ একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তার অধীনস্ত কর্মকর্তাদের সতর্কভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চান। এটি অনলাইনের মাধ্যমে করা কঠিন কিন্তু সরাসরি একজন বস শারীরিক ভাষার মাধ্যমে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে পাওে অবচেতনে। মানুষজনকে কাছে থেকে পরিচালনার মাধ্যমে আমরা এক ধরনের সাধারণ কম্পন অনুভব করি এবং তাদের অন্তর্নিহিত শারীরিক ভাষার মাধ্যমে তাদের মস্তিষ্কের মধ্যে চলমান চিন্তাকে উপলব্ধি করতে পারি। এই কারণে আমাদের মতো পূর্বপুরুষেরা অনেক সহস্রবছর পূর্বে ভাষা উদ্ভাবন করেছিল এবং প্রায়শ শারীরিক ভাষা ব্যবহার করত তাদের চিন্তা এবং আচরণ বিনিময়ের ক্ষেত্রে।

একই কারণে সাইবার টুরিজম কখনো শক্ত ভিত্তি পায়নি। এটি এমন একটি বিষয় তাজমহলের ছবি দেখা কিন্তু অন্য বিষয়টি হলো সত্যিকারের দেখার ওপর একজনের সামষ্টিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। একইরকম একজন পছন্দের কণ্ঠশিল্পীর গানের সিডি শোনা আর তাকে সরাসরি কনসার্টে তার ভক্ত, হৈ হুল্লোল সমেত তার খেলা দেখা এক নয়। এর মানে হলো যদিও আমরা আমাদের পছন্দের ছবি, শিল্পী বা সেলিব্রেটিদের বাস্তব চিত্র ডাউনলোড করতে সক্ষম কিন্তু মঞ্চে নাটক দেখা, কোনো অভিনেতাকে সরাসরি পারফর্ম করতে দেখা এক রকম অনুভূতির নয়। পছন্দের তারকার অটোগ্রাফের জন্য দীর্ঘ লাইন বা অনুষ্ঠানের টিকিট কেনার দীর্ঘ লাইন দিতে ভক্তরা যায় যদিও তারা ফ্রিতে ইন্টারনেট থেকে ছবিটি ডাউনলোড করতে পারে তবুও।

এটি এই ব্যাখ্যা করে কেন ইন্টারনেট টিভি এবং রেডিওকে অকেজো করে দিতে সক্ষম নয়। যখন সিনেমা এবং রেডিও প্রথম এসেছিল মানুষ মঞ্চ নাটকের মৃত্যু হবে ভেবেছিল। যখন টেলিভিশন আসলো মানুষ মনে করলো সিমেনা এবং রেডিও এর দিন শেষ। আমরা এসব মিডিয়ারসহ অবস্থানের মধ্যে বর্তমানে কাজ করছি। এ থেকে শিক্ষা নেওয়া যায় কোনো এক ধরনের মিডিয়ার আবির্ভাবটি পূর্বেও অন্য মিডিয়া ধ্বংস করে না বরং একই অঙ্গনে অবস্থান করে। এই মিশ্রণ এবং সম্পর্ক যা মিডিয়া জগতে বিদ্যমান তা অবিরতভাবে পরিবর্তনশীল। ভবিষ্যতে যদি কেউ এসব মিডিয়ার সঠিক মিশ্রণে নতুন কিছু করতে পারেন তিনি বেশ ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন।

এই কারণে আমাদের পূর্ব পুরুষরা সর্বদা সরাসরি দেখাতে বিশ্বাসী ছিলেন, শোনা কথায় বিশ্বাস করতেন না। এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল বনে জঙ্গলে আমাদের অভিযোজনের ক্ষেত্রে গুজবে বিশ্বাস না করে বস্তুগত প্রমাণের ওপর নির্ভর করা। এমনকি বর্তমান শতকেও আমাদের এখনো সরাসরি থিয়েটার আছে, সেলিব্রেটিদের নিয়ে হৈহুল্লোর আছে, পূর্ববর্তী অতীতের আদিম ঐতিহ্য রয়েছে।

এছাড়াও আমরা শিকারীদের উত্তরসুরী প্রজন্ম। তাই আমরা অন্যদের টিভিতে দেখতে পছন্দ করি এমনকি ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিভির সামনে বসে থাকি আমাদের আদিম মানুষের বিভিন্ন ঘটনা দেখতেই থাকি কিন্তু তাৎক্ষণিক আবার ভয়ও পাই এটা ভেবে কেউ আমাদের দেখছে! চার সেকেন্ডের মধ্যে একজন অপরিচিতিকে দেখে নার্ভাস হয়ে পড়ি। দশ সেকেন্ড পরে আমরা এমনকি বিরক্ত হয় এবং শত্রুতা পর্যন্ত শুরু হয়। যার কারণেই অরজিনাল পিকচারটিউব ফ্লপ হয়েছে। এছাড়াও কে চায় অনলাইনে যাবার পূর্বে তার মাথা আঁচড়াতে? (বর্তমানে অবশ্য কয়েক দশক পরে, খুব শ্লথ গতিতে, কষ্টদায়ক অগ্রগতি ঘটেছে, ভিডিও কনফারেন্স এখন দেখা যাচ্ছে।)

বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন কোর্স করা সম্ভব। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাত্র-ছাত্রীদের দ্বারা কানায় কানায় পূর্ণ। পারস্পরিক ছাত্র এবং প্রফেসরদের মধ্যে মতবিনিময়ের মাধ্যমে প্রত্যেকের প্রতি আলাদা নজর এবং ব্যক্তিগত প্রশ্নে উত্তর আদান-প্রদান এখনো অনলাইনের চেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যাপার এবং অনলাইনে অর্জিত ডিপ্লোমার চেয়ে বাস্তবের মান চাকরি আবেদনে এখনো বেশি গুরুত্ব বহন করে।

সুতরাং হাইটেক এবং হাইটাচ-এর মধ্যে সর্বদা চলমান একটি প্রতিযোগিতা বিদ্যমান— যা হলো— চেয়ারে বসে টিভি দেখা বনাম বাইরে বের হয়ে স্পর্শ করে দেখা আমাদের চার পাশের সবকিছু। এই প্রতিযোগিতায় আমরা দুটোই চাই। যার কারণে এখনো লাইভ থিয়েটার আছে, রক কনসার্ট হয়, পেপারে লেখালেখি চলে, পেইন্টিংও আছে এই সাইবার স্পেস ও ভার্চুয়াল বাস্তবতার সময়েও। কিন্তু যদি আমায় আমাদের পছন্দের সেলিব্রেটির বা সঙ্গীত শিল্পীয় ফ্রি ছবি কাউকে দিতে চাই বা তার কনসার্টের টিকেট দিতে চাই, আমরা টিকেটাই নিবো। সুতরাং এই হলো কেইভম্যান প্রিন্সিপাল। আমরা দুটোই পছন্দ করি কিন্তু যদি একটিকে বেছে নিতে বলা হয় আমরা হাইটাচকেই বেছে নিবো আমাদের আদিম পূর্বপুরুষদের মতো করে।

কিন্তু এই নীতির একটি অনুসিদ্ধান্ত আছে। যখন বিজ্ঞানীরা ১৯৬০ সালের দিকে ইন্টানেট আবিষ্কার করেন তখন বিস্তর পরিসরে বিশ্বাস করা হতো— ইন্টানেট শিক্ষা, বিজ্ঞান এবং অগ্রগতির ক্ষেত্রে একটি ফোরাম উদ্ভব করবে। পক্ষান্তরে অনেকের ভীত ছিল—এটি পশ্চিমা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণহীন উন্মাদনায় বিচ্ছিন্নতায় নিমজ্জিত করবে যেমনটি বর্তমানে আছে। প্রকৃতপক্ষে, এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল না। কেইভম্যান নীতির অনুসিদ্ধান্ত হলো যদি তুমি মানুষের ভবিষ্যৎ সামাজিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া অনুমান করতে চাও, সাধারণভাবে আমাদের বর্তমান সময় থেকে ১,০০,০০০ বছর পূর্বে আমাদের সামাজিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া কল্পনা করে তাকে এক বিলিয়ন দিয়ে গুণ করে আঁচ করা যাবে। এর মানে হলো এখানে এমন একটি অবস্থা হবে যেমন— খোশগল্প, সামাজিক নেটওয়ার্কিং এবং বিনোদন। গুজব একটি গোত্রের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাপার দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনের জন্য বিশেষ করে নেতা এবং রোল মডেলের ক্ষেত্রে। লুপের বা বৃত্তের বাইরে থেকে যায় বংশপরম্পরা রক্ষা করে চলতে পারে না। তাদের ক্ষেত্রে। বর্তমানে আমরা দেশি মেড় মেড়ে দেয়ালে দেয়ালে সেলিব্রেটি ম্যাগাজিন টানানো এবং সেলিব্রেট নিয়ন্ত্রিত সংস্কৃতির উত্থান। গোত্রসমূহের সেসব গুজব থেকে বর্তমানে পার্থক্য শুধু এতোটুকু এসব গুজবের মাত্রা গণমাধ্যমের মাধ্যমে কয়েকগুণ বেড়ে যায় এবং এক সেকেন্ডেরও ক্ষুদ্রতম সময়ে পৃথিবীতে বহুগুণে ছড়িয়ে পড়ে

সামাজিক নেটওয়াকিং ওয়েবসাইটের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার ফলে অনেক তরুণ, বাচ্চা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বিলিয়নিয়ার হয়ে যাচ্ছে রাতারাতি, অনেক বিশ্লেষণ অতিক্রম করে, কিন্তু এটি এই নীতির আরও একটি উদাহরণ। আমাদের অভ্যুত্থানের ইতিহাসে, যারা বেশ বড় সামাজিক নেটওয়ার্ক তৈরি করে চলে তারা তাদের চলার উপকরণ, উপদেশ এবং সাহায্য সহজে পায় যা খাপ খাইয়ে নিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

শেষতক বিনোদন জগৎ বেড়ে চলছে। মাঝে মাঝে আমরা এটি গ্রহণ করতে চাইনা কিন্তু আমাদের সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিনোদননির্ভর। শিকার করার পর অদিম মানুষেরা নির্ভার থাকত এবং বিনোদন করত। এটি শুধু বন্দন টিকিয়ে রাখা নয় বরং অবস্থান করে নেওয়া তার গোত্রের মানে সে ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখত। নাচ বা গান কোনো দুর্ঘটনা নয় বরং এটি আমাদের সংস্কৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রাণী জগতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ, নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি যোগ্যও সক্ষম করে রাখাতে। যখন পুরুষ পাখি সুন্দর গান গায়, নানা ধরনের সুরে অথবা তার সহযাত্রীর সাথে বাতাসে ঘুরে বেড়ায়ে এটি বুঝাত— তার বিপরীত লিঙ্গকে দেখানোর জন্য যে— সে স্বাস্থ্যবান, দৈহিকভাবে সক্ষম এবং জীবাণুমুক্ত এবং তার মধ্যে যথাযথ বংশগতির উপকরণ আছে একসাথে চলার। চিত্রকর্ম শুধুমাত্র আনন্দের খোরাক নয় বরং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিকাশে যার মাধ্যমে প্রতিকীভাবে তথ্য উপাত্ত সাজানো থাকে।

সুতরাং বংশগতির মাধ্যমে আমাদেও ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন যদি না হয় তবে আমাদের আশা করতে পারি ভবিষ্যতে বিনোদনের শক্তি, ট্যাবলয়েড খোঁশখবর এবং সামাজিক নেটওয়ার্কিং আরও বৃদ্ধি পাবে, কমবে না।

বিজ্ঞান যেন তরবারি!

একদা আমি একটি সিনেমা দেখেছিলাম যা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমার পুরো ধ্যান ধারণা বদলে দিয়েছে চিরতরে। এটির নাম ছিলো ‘ফরবিডেন প্লানেট’ যা শেক্সপিয়ারের ‘দ্যা টেমপেস্ট’ অবলম্বনে নির্মিত। ঐ সিনেমায় একজন নভোচারী একটি আদিম সভ্যতার মুখোমুখি হয়েছিলো যা তার মহিমায় আমাদের থেকে লাখ লাখ বছর অগ্রগামী চিন্তায়। তারা তাদের প্রযুক্তির একটি উচ্চতর লোকে পৌঁছেছিল : অসীম শক্তি অর্জন কোনো প্রকার যন্ত্রপাতি ছাড়া, যা হলো ঐ ধরনের শক্তি যার মাধ্যমে যেকোনো কিছু করা সম্ভব তাদের মন ব্যবহার করে। তাদের চিন্তা একটি ক্লোসালা থার্মো নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট পর্যন্ত ছিল-যা গ্রহটিকে খনন করে নির্মিত এবং ঐটি তাদের যেকোনো ইচ্ছেকে বাস্তবে রূপ দিতে ব্যবহৃত হতো। অন্যভাবে বলা যায়, তাদের স্রষ্টার মতো শক্তি ছিল। আমাদেরও তেমন শক্তি থাকবে তবে আমাদের মিলিয়ন মিলিয়ন বছর অপেক্ষা করতে হবে না। আমাদের মাত্র একটি শতাব্দি অপেক্ষা করতে হবে। এবং বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির মধ্যে সেই ভবিষ্যৎ বীজ লুকায়িত দেখতে পাই। কিন্তু সিনেমাটিতে অবশ্য আরও একটি নৈতিক শিক্ষা বা গল্প ছিল— এটি স্বর্গীয় শক্তির পরিবেশে এই সভ্যতাকে সম্পৃক্ত করবে।

অবশ্যই বিজ্ঞান একটি দুধার বিশিষ্ট তরবারির মতো। এটি অনেক সমস্যার জন্ম দেয় যেমন করে এটি অনেক সমস্যার সমাধান করে থাকে এবং নতুন সমস্যাগুলো আরও উচ্চমাত্রার হয়। বর্তমান বিশ্বে দুটো প্রতিযোগিতামূলক ট্রেন্ড বা ধারা আছে: একটি হলো একটি গ্রহকেন্দ্ৰিক সভ্যতার সৃষ্টি যা সহনশীল, বিজ্ঞানসম্মত এবং ঐশ্বর্য্যমণ্ডিত কিন্তু অন্যটি হলো অরাজকতা এবং উপেক্ষা বাড়িয়ে দেওয়া যা আমাদের সমাজের বন্ধনকে ছিন্ন করে ফেলতে পারে। আমাদের মাঝে এখনো সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী, অনৈতিক আবেগ আছে-আমাদের আদিম পূর্বপুরুষদের মতো কিন্তু পার্থক্য হলো আমাদের এখন নিউক্লিয়ার, রাসায়নিক এবং জৈব প্রযুক্তিগত অস্ত্ৰ আছে। ভবিষ্যতে, আমরা এমন একটি রূপান্তর সৃষ্টি করতে সক্ষম হব-প্রকৃতির নৃত্য পরোক্ষভাবে না দেখে বরং সেই নৃত্যের নির্দেশক হবো, প্রকৃতির নিয়ন্ত্রক হব। পরিশেষে প্রকৃতির রক্ষক হবো। সুতরাং আমরা আশাবাদী আমরা তরবারিকে জ্ঞান এবং শান্তি দ্বারা ক্ষুরদার করতে পারব এবং আমাদের আদিম বর্বরতাকে বিলুপ্ত করতে পারব।

এখন আমরা পরবর্তী ১০০ বছর নিয়ে তত্ত্বীয় যাত্রা শুরু করবো- বিজ্ঞানের উদ্ভাবন এবং আবিষ্কারসমূহের প্রেক্ষিতে যা বিজ্ঞানীরা আমাকে বলেছেন যে তারা এটি করে দেখেছেন যা কম্পিউটারের দ্রুত অগ্রসর যাত্রা, মোবাইল যোগাযোগ, জৈব প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ন্যানো টেকনোলজির মাধ্যমে। এটি নিঃসন্দেহে বলা যায় এসব ভবিষ্যৎ সভ্যতাকে পরিবর্তন করে দিবে পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

“প্রত্যেকের নিজ নিজ কল্পনার সীমারেখা আছে পৃথিবীর সীমাবদ্ধতার জন্য।”-অর্থার স্কোফেনহার।

“কোন নৈরাশ্যবাদী ব্যক্তি গ্রহের গোপন তথ্য অথবা একটি অনাবিষ্কৃত ভূখন্ড আবিষ্কার অথবা মানুষের মনে একটি নতুন স্বর্গ সৃষ্টি করতে পারে না।”-হেলেন কিলার।

ছবি কৃতজ্ঞতা

১.১ জেফরি এল ওয়ার্ড ১.২ জেফরি এল ওয়ার্ড

১.৩ ড্যানিয়েল মিহাইলিস্কু / এএফপি

১.৪ মিগুয়েল আলভারেজ / এএফপি

২.১ অধ্যাপক ইয়ান লেকুন (উপরের ছবিটি)

২.১ অধ্যাপক আশুতোষ সাক্সেনার (নিম্ন বাম ছবিটি)

২.১ লোয়ার রাইট জেসন কেম্পিন / ওয়্যারআইমেজ (নিম্ন ডান ছবিটি)

৩.১ ব্রুনো ভিনসেন্ট / গেটি চিত্রসমূহ

৪.১ জেফরি এল ওয়ার্ড

৫.১ জেফরি এল ওয়ার্ড

৫.২ এএফপি / গেটি চিত্রসমূহ

৫.৩ জেফরি এল ওয়ার্ড

৬.১ জেফ্রি এল ওয়ার্ড

৬.২ জেফরি এল ওয়ার্ড

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *