দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ৯

অধ্যায় ৯

পাস্তার শেষটুকু ভাগাভাগি করে নিলো ওরা। ওয়াইনের বোতলটাও খালি হয়ে এসেছে। ইয়াসুকো তার ওয়াইন গ্লাসে শেষ চুমুক দিয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। শেষ কবে এত ভালো ইটালিয়ান খাবার খেয়েছে মনে করতে পারছে না।

“আরো ওয়াইন লাগবে?” কুডো জিজ্ঞেস করলেন, চোখের নিচ দিকে লালচে একটা আভা ছড়িয়ে পড়েছে তার।

“না, আর কিছু লাগবে না আমার, ধন্যবাদ। আপনার জন্যে কিছু বলছেন না কেন?”

“আমারও লাগবে না। ডেজার্টের জন্যে জায়গা বাঁচিয়ে রাখছি,” একটা ন্যাপকিন দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললেন কুডো।

এর আগেও ক্লাবে কাজ করার সময় কুডোর সাথে বাইরে ডিনারে গেছে ইয়াসুকো কিন্তু কোনবারই এক বোতল ওয়াইনে থেমে থাকেননি তিনি।

“অ্যালকোহল কমিয়ে দিচ্ছেন নাকি?”

“চেষ্টা করছি। বয়সের দিকেও তো খেয়াল রাখতে হবে।”

“ঠিকই করছেন। নিজের প্রতি খেয়াল রাখা ভালো।”

“ধন্যবাদ,” হেসে বললেন তিনি।

কাজের মাঝখানে আজ আগেভাগেই ফোন করে ডিনারের কথা জিজ্ঞেস করেছিলেন। ইয়াসুকো প্রথমদিকে দ্বিধায় ভুগছিল যাবে কিনা, পরে রাজি হয়ে যায়। যদিও এই রকম বিপদের সময়ে কারো সাথে ডিনারে যাওয়ার ব্যাপারটা তার কাছে ভালো ঠেকছিলো না। তার মেয়ের তো আরো খারাপ লাগবে শুনলে, বেচারি এসব কিছুতে মুষড়ে পড়েছে। আর ইশিগামির ব্যাপারটাও ভাবতে হবে, অনেক বড় ঝুঁকি নিয়ে তাদের সাহায্য করছে ভদ্রলোক। আর কতদিন এরকম নিঃশর্তভাবে সাহায্য করে যাবে সেটা বলা মুশকিল।

কিন্তু পরে তার মনে হয় সে যদি না করে দেয় তাহলে সেটাই অস্বাভাবিক দেখাবে। কুডোকে না বলার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ তো নেই। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যদি তাকে কুডো ডিনারের কথা জিজ্ঞস করতেন, তবে সে হ্যা-ই বলতো। কিন্তু এখন হঠাৎ করে না করে দিলে সায়োকোর মনেও সন্দেহ জাগতে পারে।

মনে মনে অবশ্য ইয়াসুকো জানতো সে নিজেকেই সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করছে এসব বলে। আসলে তার নিজেরও কুডোকে দেখতে ইচ্ছে করছিল।

সে জানে না কুডোর প্রতি তার অনুভূতিটা ঠিক ভালোবাসা কিনা। আসলে সেদিন তিনি দোকানে আসার আগে গত একবছরে তার কথা মনেই পড়েনি। কিন্তু তবুও তিনি যখন তাকে ডিনারের কথা জিজ্ঞেস করেছিলেন তখন নিজেকে খুবই সুখি মনে হচ্ছিল তার। কোন প্রেমিক তাকে বাইরে খাওয়াতে নিয়ে যাবার প্রস্তাব দিলে যেমন লাগে সেরকম।

এটাও হতে পারে, তার জীবনের সব ঝামেলাগুলোকে একপাশে সরিয়ে একান্তে কিছু সময় কাটাতে চাচ্ছিল সে। চাইছিল কেউ তার সাথে একজন আদর্শ ভদ্রলোকের মত আচরণ করুক।

যেকারণেই হোক না কেন, কুডোর সাথে ডিনারে এসে ভুল করেনি সে। ভালো কাটছে তার সময়টা।

“তোমার মেয়ে আজ রাতে কি খাবে?” কফিতে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন কুডো।

“আমি তার জন্যে একটা মেসেজ রেখে এসেছি, বাইরে থেকে যা ইচ্ছা আনাতে পারে সে। মনে হয় পিজ্জা অর্ডার করবে, ওটাই বেশি পছন্দ তার।”

“বেচারি, একা একা পিজ্জা খাচ্ছে। যেখানে আমরা এখানে বসে মজা করে ইটালিয়ান খাচ্ছি।”

“আমার মনে হয় এখানে আসার চেয়ে টিভি দেখতে দেখতে পিজ্জা খেতেই তার বেশি ভালো লাগবে। এরকম ফর্মাল ডিনারে ওর অনীহা আছে।”

“হতে পারে,” কুডো বললেন। “কিংবা হয়তো আমার মত অপরিচিত একজন লোকের সাথে বসে ডিনার করাটা তার পছন্দ হবে না। যাই হোক, পরেরবার কিন্তু ওকেও বলবো আমি। সুশি খেতে যেতে পারি আমরা একসাথে।”

“অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। কিন্তু ওর ব্যাপারে অত চিন্তা না করলেও চলবে।“

“চিন্তা করছি না, তোমার মেয়ের সাথে আসলেও দেখা করতে চাই আমি,” কুডো লাজুক ভঙ্গিতে কফির কাপ থেকে চোখ উঠিয়ে বললেন।

তিনি যখন ফোন করেছিলেন ইয়াসুকোকে তখন মিশাতোকে আনার ব্যাপারেও জোর দিচ্ছিলেন। সে খুব খুশি হয়েছিল এটা ভেবে যে, তিনি মন থেকে ওর সাথে দেখা করতে চান।

কিন্তু সে এটাও জানতো মিশাতোকে আনা যাবে না। একে তো এরকম জায়গায় খেতে সে পছন্দ করে না, তার ওপর এমন স্পর্শকাতর মুহূর্তে সে যদি অপরিচিত কারো সাথে দেখা করে তাহলে নার্ভের ওপর চাপ পড়বে। বিশেষ করে আলোচনাটা যদি টোগাশির খুনের দিকে মোড় নেয়। আর সে এটাও চায় না তার মেয়ে তাকে অন্য একজন লোকের সাথে দেখুক।

“এবার আপনার ব্যাপারে বলুন। নিজের পরিবারের সাথে রাতের খাবারটা যে খেলেন না সেটা কি ঠিক হলো?”

“আসলে…” কুডো কফির কাপটা টেবিলে নামিয়ে রেখে বললেন। “আজকে তোমাকে এখানে নিয়ে আসার আরেকটা কারণ হলো আমার নিজের ব্যাপারে কথা বলা।“

ইয়াসুকো ভুরু উঁচু করে তার চোখের দিকে তাকালো।

“ইয়ে মানে, আমি, আমি কিন্তু এখন একা।”

ইয়াসুকো বিস্ময় গোপন করতে পারলো না।

“আমার স্ত্রীর অগ্নাশয়ের ক্যান্সার হয়েছিল। অপারেশনও করিয়েছিলাম, কিন্তু ততদিনে বড্ড দেরি হয়ে যায়। রোগটা ধরা পড়ার আগপর্যন্ত সে একদম সুস্থই ছিল। তারপরই হঠাৎ করে সব শেষ হয়ে গেলো।”

তিনি এমন স্বরে কথাগুলো বলছিলেন যে, ইয়াসুকোর বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছিল। বেশ খানিকক্ষণ চুপচাপ তার দিকে তাকিয়ে থাকলো সে।

“আসলেই?” অবশেষে বলল সে।

এরকম কোন কিছু নিয়ে নিশ্চয়ই ঠাট্টা করবো না আমি,” একটা শুকনো হাসি হেসে বললেন কুডো।

“না, অবশ্যই না। আমি আসলে বুঝে উঠতে পারছিলাম না কী বলবো,” নিচের দিকে তাকিয়ে বলল। “আমি আসলেও দুঃখিত। আপনার জন্যে নিশ্চয়ই খুব খারাপ ছিল সময়টা।’

“তা ছিল। কিন্তু বললাম না, হঠাৎ করেই শেষ হয়ে গিয়েছিল সবকিছু।”

“আপনি কবে জেনেছিলেন, তার ক্যান্সার হয়েছে?”

“গত বছরের আগের বছর…তার মানে দু-বছর আগে,” কিছুক্ষণ ভাবার পর জবাব দিলেন কুডো।

“আমি তো তখনও ম্যারিয়ানে ছিলাম, আর আপনিও নিয়মিত আসতেন ক্লাবে।”

কুডো হেসে উঠলেন ঠিকই, কিন্তু সে হাসিতে প্রাণ ছিল না। “খুব অদ্ভুত মনে হচ্ছে আমাকে, তাই না? আমার স্ত্রী ক্যান্সারে ভুগছে আর আমি ক্লাবে ক্লাবে ঘুরছি।”

ইয়াসুকো কি বলবে ভেবে পেলো না। তার কেবল কুডোর সে- সময়কার হাসি হাসি মুখের কথা মনে হতে লাগলো।

“ধরে নাও সবকিছু থেকে একটু দূরে থাকতে চাইছিলাম আমি, “ মাথা চুলকে বললেন তিনি।

ক্লাবে তার শেষ দিনটার কথা মনে পড়ে গেলো ইয়াসুকোর। একটা ফুলের তোড়া তাকে দিয়েছিলেন তিনি। যেখানেই যাও তোমার জন্যে শুভকামনা। সুখে থেকো সবসময়

সেই কথাগুলো দিয়ে কি বোঝাতে চেয়েছিলেন তিনি? ঐ মুহূর্তে তার সময়টা নিশ্চয়ই ইয়াসুকোর চেয়েও খারাপ ছিল। তবুও হাসি-মুখে বিদায় জানিয়েছিলেন তিনি।

“এসব গম্ভীর কথাবার্তা বলার জন্যে দুঃখিত,” কুডো একটা সিগারেট বের করে বললেন। “আমি আসলে বলতে চাচ্ছিলাম, আমার পরিবার নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না।”

“আর আপনার ছেলে? তার তো সামনে পরীক্ষা, তাই না?”

“আমার বাবা-মা তার খেয়াল রাখছে এ মুহূর্তে। ওর কলেজ থেকে ওদের বাসাটাই কাছে। আর আমি যে ওকে খুব একটা সাহায্য করতে পারি তা-ও না। আমার ধারণা, দেখভাল করার মত কাউকে পেয়ে আমার মা খুশিই হয়েছেন।”

“তাহলে এখন একদম একা একা জীবন কাটাচ্ছেন আপনি?”

“তুমি যদি দিনের পর দিন কাজ থেকে এসে ঘুমের পর আবার সকালে উঠে কাজে যাওয়াকে ‘জীবন কাটানো” বলো, তবে সেটাই করছি।”

“গতবার কিন্তু আপনি এসব কথা বলেননি।”

“বলার প্রয়োজনবোধ করিনি। তোমার জন্যে চিন্তা হচ্ছিল তাই দেখা করতে এসেছিলাম। কিন্তু এবার যখন তোমাকে ডিনারের প্রস্তাব দিলাম, তখন জানতাম আমার পরিবার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে তুমি। সেটা করার অধিকারও আছে তোমার। তাই বলে দিলাম সব।”

“আমার ধারণাই ছিল না…” ইয়াসুকো চোখ নামিয়ে বলল।

কুডো মনে মনে কি চাচ্ছেন সেটা বুঝতে বাকি রইলো না তার। মিশাতোর সাথেও সেজন্যেই দেখা করতে চাচ্ছেন।

রেস্তোরাঁ থেকে বের হয়ে কুডো তাকে আগের দিনের মতই ট্যাক্সি করে বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেলেন।

“ডিনারের জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ,” ট্যাক্সি বের হয়ে যাবার আগে বলল ইয়াসুকো।

“আশা করি এটা শেষবারের মত নয়।“

“আচ্ছা,” কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর মুখে হাসি টেনে এনে বলল ইয়াসুকো।

“গুড নাইট তাহলে। তোমার মেয়েকে আমার পক্ষ থেকে আদর করে দিও।”

“গুড নাইট,” ইয়াসুকো জানে মিশাতোর সাথে আজকের সন্ধ্যাটা নিয়ে আলাপ করা সহজ কোন কাজ হবে না। সে তাকে জানিয়ে এসেছে, সায়োকো আর ইয়ানোজাওয়ার সাথে বাইরে খেতে যাচ্ছে।

ট্যাক্সিটা চলে যেত দেখলো সে। এরপরে সিঁড়ি বেয়ে তার অ্যাপার্টমেন্টে পৌছে গেলো। ভেতরে ঢুকে দেখে মিশাতো পা ভাঁজ করে টিভির সামনে বসে আছে। পাশে একটা খালি পিজ্জার বাক্স।

“কি খবর?” তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো মিশাতো।

“আমি দুঃখিত বাবু, দেরি হয়ে গেলো।”

ইয়াসুকো মেয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারছে না। মনে হচ্ছে তার চোখ দেখেই সে বুঝে ফেলবে সবকিছু।

“কোন ফোন এসেছিল?”

“ফোন?”

“হ্যা, মি. ইশিগামির?” মিশাতো আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো। “না। আমি মোবাইল বন্ধ করে রেখেছিলাম

“ওহ্,” মৃদুস্বরে বলল মিশাতো।

“কেন, কিছু হয়েছে নাকি?”

“না, মানে…” মিশাতো একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল। “তিনি বেশ কয়েকবার বাসা থেকে বের হয়েছেন আজ সন্ধ্যায়। আমি জানালা দিয়ে তাকে দেখেছি। মনে হচ্ছিল তোমাকে ফোন দিতেই যাচ্ছিলেন তিনি।”

“ওহ্…”

সে বোধহয় আসলেও ফোন দিয়েছিল, ইয়াসুকো ভাবলো। কুডোর সাথে কথা বলার সময়ও একবার এই সম্ভাবনাটা মাথায় উঁকি দিয়েছিল তার। ইশিগামি যে কুডোকে আজ বেন্টেন-টেইয়ে দেখে ফেলেছে এ ব্যাপারটাও খোঁচাচ্ছিল তাকে। অবশ্য কুডো তাকে একজন সাধারণ কাস্টমারের চেয়ে বেশি কিছু ভাবেননি।

আজকেই তাকে আসতে হলো, তা-ও অমন অদ্ভুত সময়ে। আর সাথে একজন ‘বন্ধু’ ছিল তার। এর আগে কখনও বন্ধু নিয়ে আসেনি সে।

ইশিগামির অবশ্যই কুডোকে চিনতে পারার কথা। সে নিশ্চয়‍ই কিছু একটা সন্দেহও করেছে তাদের দু-জনকে একসাথে দেখে। বিশেষ করে আগের দিন ট্যাক্সি করে তাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটার পর সন্দেহ জাগারই কথা। ফোন করে সে যে কী বলবে কে জানে।

কোটটা হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখছিল এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলে ইয়াসুকো অবাক হয়ে তার মেয়ে দিকে তাকালো একবার। দু-জনেই জমে গেছে। একবার মনে হলো ইশিগামি এসেছে, কিন্তু এরকম ঝুঁকি তো নেয়ার কথা নয় তার।

“কে?” দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো সে।

এতরাতে বিরক্ত করার জন্যে দুঃখিত, কিন্তু আপনাকে কিছু প্রশ্ন করার ছিল,” একটা অপরিচিত লোকের কন্ঠস্বর ভেসে এলো। চেইন লাগানো অবস্থাতেই দরজাটা খুলল সে, একটু ফাঁক হলো সেটা। ওপাশে লোকটাকে দেখার সাথে সাথে চিনে ফেলল।।

“হোমিসাইড ডিটেক্টভ কিশিতানি, ম্যাম। এর আগের দিন কুসানাগি স্যারের সাথে এসেছিলাম আমি,” জ্যাকেটে হাত দিয়ে পুলিশের ব্যাজ বের করে বলল সে।

“জি, মনে আছে আমার,” ইয়াসুকো হলওয়েতে উঁকি দিয়ে বলল। কুসানাগিকে দেখা গেলো না কাছে পিঠে।

দরজাটা বন্ধ করে মিশাতোকে চোখ দিয়ে একবার ইশারা করলো ইয়াসুকো। সে ঘরে গিয়ে স্লাইডিং দরজাটা বন্ধ করে চেইনটা সরিয়ে পুরোপুরি খুলে দিলো দরজাটা। “আবার কি?”

“ঐ সিনেমাটার ব্যাপারে কথা বলতে এসেছি-” ডিটেক্টিভ মাথা নেড়ে বলল।

ভুরু কুঁচকে ফেলল ইয়াসুকো। ইশিগামি তাকে আগেই সাবধান করে দিয়েছিল, পুলিশ সিনেমাটার ব্যাপারে তার সাথে কথা বলতে আসবে। এখন দেখা যাচ্ছে তার কথাই ঠিক।

“সিনেমাটার ব্যাপারে আবার কী কথা? সে নিয়ে তো একবার বলেছি আমি সব।”

“হ্যা, আপনি পূর্ণ সহযোগিতাই করেছিলেন সেবার। আসলে ঐ ছেঁড়া অংশগুলো চাচ্ছিলাম।”

“ছেঁড়া অংশ? মানে টিকেটের ছেঁড়া অংশ?”

“হ্যা। কুসানাগি স্যার বোধহয় ওগুলো সাবধানে রাখতে বলে গিয়েছিলেন গতবার?”

“একটু দাঁড়ান।”

ইয়াসুকো রান্নাঘরের ড্রয়ার থেকে ওগুলো নিয়ে এসে ডিটেক্টিভের হাতে দিলো। একটা তার আরেকটা মিশাতোর। সে খেয়াল করে দেখলো কিশিতানি গ্লোভস পরে আছে।

“আমি একজন সন্দেহভাজন, তাই না?”

“না না, ওরকম কিছু না,” তীব্রভাবে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল কিশিতানি। “আসলে কোন সন্দেহভাজন খুঁজে পাচ্ছি না আমরা, সেজন্যে এসব করতে হচ্ছে। ভিক্টিমের সাথে সম্পর্ক আছে এমন সবাইকে এক এক করে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে যাচাই করে।”

“এই ছেঁড়া অংশগুলো কিভাবে আপনাদের সে কাজে সাহায্য করবে?”

“সেটা তো বলতে পারবো না আমি, কিন্তু কোন না কোনভাবে কাজে লাগতে পারে এগুলো। আসলে, সেদিন আপনারা সিনেমাটা দেখতে গিয়েছিলেন-এটা প্রমাণ করতে পারলেই ভালো হত। এরপরে অন্য কিছু কি মনে পড়েছে আপনার? সেদিনের পর থেকে?”

“না, যা যা ঘটেছে সবই আপনাদের বলেছি।”

“ঠিক আছে, ধন্যবাদ,” কিশিতানি ঘরে চোখ বুলাতে বুলাতে বলল। “খুব ঠান্ডা পড়েছে ইদানিং, তাই না? আপনারা কি ঐ কোটাটসু হিটারটা প্রতি শীতেই ব্যবহার করেন?”

“কোটাটসুটা? হ্যা, তা করি…” ইয়াসুকো হিটার টেবিলটার দিকে তাকিয়ে বলল। আসলে সেদিকে তাকিয়ে বিস্ময় গোপন করতে চাইছে সে।

“কতদিন ধরে ব্যবহার করছেন ওটা?”

“এই ধরুন পাঁচ ছয় বছর তো হবেই। কেন?”

“না, এমনি,” কিশিতানি মাথা ঝাঁকিয়ে বলল। “আজ কি বাইরে কোথাও গিয়েছিলেন নাকি? দেরি করে বাসায় ফিরেছেন মনে হচ্ছে।”

ইয়াসুকো অবাক হয়ে গেলো প্রশ্নটা শুনে। তার মানে পুলিশ তার ফেরার জন্যে বাইরে অপেক্ষা করছিল। ট্যাক্সিটাকে অবশ্যই দেখেছে তারা।

মিথ্যা কথা বলা যাবে না।

“এক বন্ধুর সাথে ডিনারে গিয়েছিলাম, “ যতটা সম্ভব স্বাভাবিকভাবে বলার চেষ্টা করলো ইয়াসুকো, কিন্তু উত্তরটা সন্তুষ্ট করতে পারলো না ডিটেক্টিভকে।

“ট্যাক্সিতে যে আপনার সাথে ছিল, সেই তো? তাকে কিভাবে চেনেন আপনি? আশা করি ব্যক্তিগত প্রশ্ন করছি দেখে কিছু মনে করবেন না, “ ডিটেক্টিভের গলা শুনে আসলেও লজ্জিত মনে হলো।

“আমি কোথায় ডিনারে গিয়েছিলাম সেটাও কি বলতে হবে?”

“কিছু মনে করবেন না, ম্যাম। কিন্তু আপনাকে এসব কথা না জিজ্ঞেস করলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে কথা শুনতে হবে আমাকে,” কিশিতানি বোকার মত হেসে বলল। “তবে নিশ্চিন্তে থাকুন, আপনার বন্ধুকে বিরক্ত করবো না আমরা। তা, কোথায় গিয়েছিলেন আপনারা?”

“ওনার নাম কুডো। আমি আগে যে ক্লাবে কাজ করতাম সেখানে নিয়মিত যাতায়াত ছিল তার। টোগাশির সাথে আমার সম্পর্কের কথা তিনি জানতেন। টিভিতে খবরটা দেখার পরে আমাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন তিনি, এজন্যেই দেখা করি আমরা।”

“কি করেন তিনি?”

“শুনেছি একটা প্রিন্টিং কোম্পানি চালান, কিন্তু এর চেয়ে বেশি কিছু জানি না।”

“তার ফোন নম্বর আছে আপনার কাছে?”

ইয়াসুকো বিরক্ত হয়ে তার দিকে তাকালো।

“দয়া করে বোঝার চেষ্টা করুন,” কিশিতানি ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বলল, “খুব জরুরি না হলে আমরা তার সাথে যোগাযোগ করবো না। আর করলেও সেটার কথা কেউ জানবে না, আপনাকে নিশ্চিত করে বলছি আমি।”

ইয়াসুকো অসন্তোষ গোপন না করেই ব্যাগ থেকে ফোন বের করে কুডোর নম্বরটা কিশিতানিকে বললে সে দ্রুত একটা নোটপ্যাডে টুকে নিলো।

এরপরে কিশিতানি আবার কুডো সম্পর্কে সবকিছু জানতে চাইলো। প্রতিবারই বোকার মত একটা হাসি দিয়ে পরের প্রশ্নটা করছে সে। একসময় ইয়াসুকো খেয়াল করলো, কুডো সম্পর্কে যা যা জানে সব বলে দিয়েছে ডিটেক্টিভকে।

কিশিতানি চলে যাওয়ার পরে ইয়াসুকো দরজা বন্ধ করে সেখানেই বসে পড়লো। খুবই ক্লান্ত লাগছে তার।

এরপর স্লাইডিং দরজাটা খুলে যাবার শব্দ কানে আসলো তার। মিশাতো ঘর থেকে বের হয়েছে। “তারা এখনও সিনেমাটা সম্পর্কে সন্দেহ করছে, তাই না?” মেয়েটা তার কাছে এসে বলল। “সবকিছু ইশিগামির কথামতই হচ্ছে।”

“আমি জানি,” ইয়াসুকো দাঁড়িয়ে মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে আদর করে দিলো।

“মা, আমি ভেবেছিলাম তুমি বেন্টেন-টেইয়ের লোকদের সাথে বাইরে খেতে গিয়েছো।”

মিশাতোর দিকে তাকালো ইয়াসুকো। ভুরু কুঁচকে আছে মেয়েটা। “তুমি সব কিছু শুনছিলে?”

“অবশ্যই, না শোনার কি আছে।”

“ওহ্…..” হিটিং টেবিলের নিচে পা ঢোকাতে ঢোকাতে বলল ইয়াসুকো। ডিটেক্টিভটাও এটার ব্যাপারে প্রশ্ন করছিল।

“এরকম সময়ে কারো সাথে খেতে গেলে কিভাবে তুমি মা?”

“আমি না বলতে পারিনি। যার সাথে বাইরে গিয়েছিলাম, তিনি আগে আমার খুব ভালো বন্ধু ছিলেন। আর আমার মানে আমাদের ব্যাপারে খুব চিন্তা হচ্ছিল তার, এজন্যেই খোঁজ নিতে এসেছিলেন। তোমাকে আগে এসব খুলে না বলার জন্যে দুঃখিত।”

“না, মা…ঠিক আছে। আমি শুধু “

পাশের বাসার দরজাটা বন্ধ হবার আওয়াজ কানে আসলো তাদের। এরপর সিঁড়ি বেয়ে কারো নেমে যাওয়ার আওয়াজ ভেসে এলো। একে অপরের দিকে তাকালো মা-মেয়ে।

“তোমার ফোনটা কোথায় মা?”

“এখন খোলা সেটা।”

কিছুক্ষণ পরে ইয়াসুকোর ফোনটা বেজে উঠলো।

X

ইশিগামি সে-রাতে তৃতীয়বারের মত ফোনবুথ থেকে ইয়াসুকোর নম্বরে ডায়াল করলো। আগের দু-বার ফোন বন্ধ দেখাচ্ছিল বলে তার খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছিল, কারণ এর আগে প্রতিবারই রিং হবার সাথে সাথে ফোন ধরেছিল ইয়াসুকো। কিন্তু ওপাশের কন্ঠটা শুনেই সে বুঝে গেলো, মিছেমিছি দুশ্চিন্তা করছিল সে এতক্ষণ।

ইশিগামি কিছুক্ষণ আগে ইয়াসুকোদের বাসার কলিংবেলের আওয়াজ শুনতে পেয়েছিল। ইয়াসুকো তাকে জানালো পুলিশ এসেছিল আবার। সে জানতো তারা আবার আসবে। এবার টিকেটের ছেঁড়া অংশ নিতে এসেছিল ডিটেক্টিভ। এটাও আগে ভেবে রেখেছিল সে। টিকেটের ছেঁড়া অংশটা সিনেমা হলে জমা হওয়া অংশগুলোর সাথে মিলিয়ে দেখা হবে। ইয়াসুকোর আঙুলের ছাপও মিলিয়ে দেখা হবে ওখানে পাওয়া অংশটার সাথে। যদি সেটা মিলে যায় তাহলে প্রমাণ হয়ে যাবে ইয়াসুকোরা সে রাতে সিনেমা হলে গিয়েছিল। সিনেমাটা দেখেছিল কিনা সেটা অবশ্য প্রমাণ হবে না। যদি আঙুলের ছাপ না মিলে তাহলে ইয়াসুকোর প্রতি পুলিশের সন্দেহ আরো ঘনীভূত হবে।

আর এবার কোটাটসু হিটারের কথাও জিজ্ঞেস করেছিল ডিটেক্টিভ, এটাও সে আগে থেকে ধারণা করতে পেরেছিল।

“আমার ধারণা, কি দিয়ে খুনটা করা হয়েছে তারা সেটা ধরতে পেরেছে।”

“মানে?”

“হিটারের তারটা। ওটাই তো ব্যবহার করেছিলেন আপনি, তাই না?” রিসিভারের ওপাশটা নীরবই থাকলো। ইয়াসুকো বোধহয় সেদিনের ঘটনাটা মনে করছে।

“গলায় ফাঁস দিয়ে কাউকে মারা হলে সেখানে দাগ বসে যায়,” ইশিগামি ব্যাখ্যা করলো। এভাবে সরাসরি কথাগুলো বলতে তার একটু অস্বস্তি লাগছে, কিন্তু এখন এসবের ধার ধারলে চলবে না। “ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট খুব উন্নত আজকাল। গলার দাগ দেখেই তারা বলে দিতে পারবে কি দিয়ে খুন করা হয়েছে।”

“এজন্যেই তাহলে ডিটেক্টিভ কিশিতানি হিটারের ব্যাপারে প্রশ্ন করছিলো?”

“তা যে করবে সেটা আগে থেকেই জানতাম। চিন্তা করবেন না, আমি ব্যবস্থা করে রেখেছি।“

সে জানতো খুনে কি ব্যবহার করা হয়েছে সেটা বের করে ফেলবে পুলিশ। এজন্যেই হানাওকাদের হিটারটা নিজের কাছে এনে রেখেছে, আর তার হিটারটা দিয়ে দিয়েছে ওদের। হানাওকার হিটারটা এখন তার ক্লোজেটে বন্দি। তাদের ভাগ্য ভালো, তাদের হিটার দুটোর তার ভিন্ন রকমের। ডিটেক্টিভরা যদি হানাওকাদের তারটা পরীক্ষা করেও দেখে তাহলে আরেকটা কানাগলিতে ঢুকে পড়বে।

“এছাড়া আর কি জিজ্ঞেস করেছে?”

“আর কি…” ইয়াসুকোর গলার আওয়াজ মিলিয়ে গেলো।

“মিস হানাওকা? হ্যালো?”

“জ্‌-জি?”

“কোন সমস্যা?”

“না, কিছু না। আমি মনে করার চেষ্টা করছিলাম, আর কি জিজ্ঞেস করেছিলেন।”

“ওহ্।”

“আর কিছু বলেননি। শুধু বলছিলেন আমি যদি প্রমাণ করতে পারি আসলেও সিনেমা হলে গিয়েছিলাম তাহলে সন্দেহের তালিকা থেকে আমার নাম বাদ দেয়া হবে।”

“হ্যা, সিনেমার অ্যালিবাইটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাদের জন্য। এটা আমার পরিকল্পনারই অংশ। এ নিয়ে চিন্তা করবেন না।”

“ধন্যবাদ। আপনার কথা শুনে স্বস্তি পেলাম।”

ইয়াসুকোর কথাটা শুনে ইশিগামির ভেতরটা আবার যেন কেমন করতে লাগলো। কিছুক্ষণ আগের দুশ্চিন্তার কথা প্রায় ভুলেই গেলো সে। বেন্টেন- টেইয়ে দেখা হওয়া লোকটার কথা জিজ্ঞেস করবে কিনা চিন্তা করলো। আজও ইয়াসুকোকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে গেছে, জানালা দিয়ে খেয়াল করেছে ইশিগামি।

“এটুকুই বলার ছিল আমার। আপনার কি খবর, মি. ইশিগামি? আপনার কোন সমস্যা হয়েছে?” ইয়াসুকো তাড়াতাড়ি জিজ্ঞেস করলো। ইশিগামি বুঝতে পারলো সে অনেকক্ষণ যাবত কিছু বলছে না।

“না, কিছু না। দয়া করে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক জীবন-যাপন করবেন। আমি নিশ্চিত, পুলিশ আবার আসবে নতুন প্রশ্ন নিয়ে। কিন্তু আপনার ভয় পেলে চলবে না।“

“জি, বুঝতে পেরেছি।“

“ঠিক আছে তাহলে। গুড নাইট।”

উত্তরের জন্যে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে রিসিভারটা রেখে দিলো সে। নিচের স্লট থেকে টেলিফোন কার্ডটা বের হয়ে আসলো।

X

কুসানাগির রিপোর্ট শোনার পর হতাশা গোপন করলো না মামিয়া। চেয়ারে দোল খেতে খেতে প্রশ্ন করলো, “তাহলে খুনের ঘটনার পরে এই কুডো লোকটার সাথে ইয়াসুকো হানাওকার দেখা হয়েছে? তুমি কি সে ব্যাপারে নিশ্চিত?”

“লাঞ্চবক্স শপের মালিক দু-জন তো এ কথাই বলেছে। আমার মনে হয় না তাদের মিথ্যে কথা বলার কোন দরকার আছে। কুডোকে দেখে নাকি ইয়াসুকো তাদের মতই অবাক হয়েছিল। অবশ্য সেটা অভিনয়ও হতে পারে।”

“নাইটক্লাবের হোস্টেস ছিল সে আগে। অভিনয়ের ক্ষমতাটা তার জন্মগত হবার কথা,” কুসানাগির দিকে তাকিয়ে বলল মামিয়া। “যাই হোক, এই কুডোর ব্যাপারে আরো খোঁজ খবর নাও। খুনের ঘটনাটার পরপরই যে সে উদয় হলো এ ব্যাপারটা আমার পছন্দ হচ্ছে না।”

“জি, চিফ,” কিশিতানি মাঝখান দিয়ে বলল। “কিন্তু মিস হানাওকার মতে, টোগাশির খুনের ব্যাপারটা শোনার পরে সে কারণেই তার সাথে দেখা করতে আসে কুডো। কাকতালিয় নয় ঘটনাটা। আর তারা যদি আসলেও কোন চক্রান্ত করে থাকে, তাহলে ওরকম খোলাখুলিভাবে রেস্তোরাঁতে দেখা করারও কথা নয়।”

“বলা যায় না। হয়তো বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্যেই ও কাজ করেছে তারা,” কুসানাগি বলল।

কিশিতানি ভুরু কুঁচকে তার উর্ধ্বতন অফিসারের দিকে তাকালো। “হতে পারে, কিন্তু- “

“আপনি কি চান আমরা সরাসরি কুডোর সাথে কথা বলি?” মামিয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো কুসানাগি।

“বলতে পারো। সে যদি আসলেও এসবের সাথে জড়িত থাকে তাহলে মুখ ফসকে কিছু বেরিয়ে যেতেও পারে।”

বাউ করে বেরিয়ে আসলো দু-জনেই।

“ওরকম অনুমান করে কথা বলা বন্ধ করা উচিত তোমার,” বের হয়ে যাবার সময় কিশিতানিকে সতর্ক করে বলল কুসানাগি। “তাহলে সেটাকে তোমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে অপরধিরা।”

“মানে?”

“কুডো আর মিস হানাওকার ব্যাপারে তোমার ধারণার কথাটা বলছি। হতে পারে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক, কিন্তু সেটা গোপন করে রেখেছিল তারা এতদিন। এর থেকে ভালো সঙ্গি আর কোথায় পাবে মিস হানাওকা?”

“তাহলে এতদিন পরে প্রকাশ্যে দেখা-সাক্ষাত শুরু করলো কেন তারা?”

“অনেক কারণ হতে পারে। সম্পর্ক বেশিদিন লুকিয়ে রাখা যায় না, এক সময়ে বেরিয়েই পড়ে। হয়তো তারা ভেবেছে সবার সামনে মেলামেশা শুরু করার মোক্ষম সময় এটা।”

কিশিতানি মাথা নাড়লো ঠিকই, কিন্তু তার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে পারছে না সে।

এডোগাওয়া পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে কুসানাগির গাড়িতে চড়ে বসলো তারা। “ফরেনসিকের ধারণা কোন ধরণের বৈদ্যুতিক তার দিয়ে খুন করা হয়েছে টোগাশিকে,” সিটবেল্ট বাঁধতে বাঁধতে বলল কিশিতানি। “এক ধরণের কাপড়ে মোড়ানো সেটা।”

“হুম। হিটারে যেরকম তার ব্যবহার করা হয় সেরকম। এই যেমন কোটাসুর মত কিছু একটা।”

“ক্ষতস্থান থেকে তারের নকশাটা বের করতে পেরেছে ওরা।”

“হ্যা, তো?”

“আসলে হানাওকাদের বাসাতেও একটা কোটাটসু হিটার আছে, দেখেছি আমি। ওটার তার কিন্তু ওরকম কাপড়ে মোড়ানো নয়। রাবারের তৈরি ওটা।”

“তো?”

“না, এটুকুই।”

“কোটাটসু ছাড়াও আরো অনেক ধরণের বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র আছে, কিশিতানি। আর এমনও হতে পারে, তারটা রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পেয়েছে খুনি?”

“জি…” বিড়বিড় করে বলল কিশিতানি।

এর আগের দিন পুরোটা সময় ইয়াসুকো হানাওকার ওপর নজর রেখেছে কিশিতানি আর কুসানাগি। তার কোন সঙ্গি আছে কিনা এটা বের করাই তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল।

কাজ শেষে মিস হানাওকা এক লোকের সাথে ট্যাক্সিতে করে একটা দামি রেস্তোরাঁতে গিয়েছিল। পুরোটা সময় বাইরে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেছে দু-জন।

একসময় খাওয়া-দাওয়া শেষে বের হয়ে আসে তারা। এরপর সরাসরি একটা ট্যাক্সি নিয়ে ইয়াসুকোর অ্যাপার্টমেন্টে চলে যায়। লোকটা অবশ্য ট্যাক্সি থেকে বের হয় না। কিশিতানিকে প্রশ্ন করতে পাঠিয়ে লোকটার পিছু নেয় কুসানাগি। সৌভাগ্যবশত তাদের খেয়াল করেনি কেউ।

লোকটা ওসাকিতে একটা বড় অ্যাপার্টমেন্টে থাকে। দরজার বাইরে বড় করে তার নাম লেখা ছিল : কুনিয়াকি কুডো।

কুসানাগি এটা মেনে নিয়েছে ইয়াসুকো যদি আসলেই টোগাশিকে খুন করে থাকে, তবে কাজটা একা করেনি সে। একজন পুরুষ সঙ্গি দরকার তার। আর সে সঙ্গি লোকটাই হয়তো আসল খুনি।

তাহলে মি কুডোই কি সেই লোক? কিশিতানিকে যখন সে সম্ভাব্য ঘটনাটা শোনাচ্ছিল, তার নিজের কাছেও অবিশ্বাস্য ঠেকছিল সেটা। তার ধারণা আবারও ভুল পথে এগোচ্ছে তারা।

আরেকটা ব্যাপার তাকে খুব খোঁচাচ্ছে। বেন্টেন-টেইয়ের বাইরে থেকে ইয়াসুকোর ওপর নজর রাখার সময় দু-জন অপ্রত্যাশিত লোককে সেখানে ঢুকতে দেখেছে সে। মানাবু ইউকাওয়া আর ইয়াসুকো হানাওকার পাশের ফ্লাটে ইশিগামি নামের গণিতের যে শিক্ষক ভদ্রলোক থাকেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *