দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ৭

অধ্যায় ৭

ইশিগামিকে দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল ইয়াসুকো। ইদানিং লোকটার শান্ত চেহারা দেখলে তার নিজের ভেতরটাও শান্ত হয়ে যায়। সে খেয়াল করেছে গতরাতে ইশিগামির বাসায় একজন মেহমান এসেছিল। সারারাত লাইট জ্বলেছে। তার ভয় হচ্ছিল গোয়েন্দাটা বুঝি এসেছে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করতে।

“স্পেশাল প্যাকেজটা নেবো আমি,” বরাবরের মতই বলল ইশিগামি। ইয়াসুকোর দিকে তাকাচ্ছে না, অন্যদিনের মতই।

“অবশ্যই, একটু অপেক্ষা করুন,” বলল সে। এরপর নিচুস্বরে যোগ করলো, “গতকাল আপনার বাসায় কেউ এসেছিল?”

ইশিগামি অবাক হয়ে গেলো প্রশ্নটা শুনে, তাড়াতাড়ি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো আশেপাশে কেউ আছে কিনা, “এভাবে কথা বলা উচিত হচ্ছে না, ফিসফিসিয়ে বলল সে। “আমাদের ওপর নজর রাখতে পারে ওরা।”

“আমি দুঃখিত,” বলে তাড়াতাড়ি কাউন্টারের পেছনে সরে আসল ইয়াসুকো।

এরপর দু-জনেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে লাঞ্চ তৈরি হওয়ার জন্যে অপেক্ষা করতে লাগলো। কেউ কারো দিকে তাকালোও না একবার।

রাস্তার দিকে একবার নজর দিলো ইয়াসুকো। কাউকে দেখা যাচ্ছে না বাইরে, অবশ্য পুলিশ যদি সত্যিই নজর রেখে থাকে তাহলে খালি চোখে দেখতে পাবার কথাও নয়।

পেছন থেকে বক্স লাঞ্চটা দিয়ে গেলে সেটা ইশিগামির দিকে এগিয়ে দিলো সে।

“আমার এক পুরনো সহপাঠি এসেছিল গতকাল,” টাকা দেয়ার সময় বলল ইশিগামি।

“কি?”

“ইউনিভার্সিটির এক পুরনো সহপাঠি দেখা করতে এসেছিল। আপনাকে যদি বিরক্ত করে থাকি তাহলে দুঃখিত,” যতটা সম্ভব আস্তে কথাগুলো বলল সে।

“না না, আমার কোন অসুবিধে হয়নি,” হেসে জবাব দিলো ইয়াসুকো।

মেঝের দিকে তাকিয়ে কথা বলছে সে, যাতে বাইরে থেকে কেউ দেখলেও বুঝতে না পারে। “না, মানে… আমি ভাবছিলাম, সচরাচর আপনার বাসায় তো কেউ আসে না।”

“আমিও অবাক হয়ে গিয়েছিলাম তাকে দেখে।”

“আপনার ভালোই সময় কেটেছে তাহলে। শুনে খুশি হলাম।

“ধন্যবাদ,” ব্যাগটা হাতে নিতে নিতে বলল ইশিগামি। “সন্ধ্যায়…” তার মানে আজ সন্ধ্যায় ফোন দেবেন তিনি। ইয়াসুকো হেসে মাথা নাড়লো জবাবে। ইশিগামিকে পেছন থেকে বেরিয়ে যেতে দেখলো সে। এরকম একজন লোকেরও যে বন্ধু থাকতে পারে সেটা ভেবে অবাকই লাগছে তার।

সকালের কর্মব্যস্ততার পর দুপুরের বিরতির সময়টা ইয়ানোজাওয়াদের সাথে কাটাতে পেছনে গেলো ইয়াসুকো। সায়োকো মিষ্টি জিনিস খেতে ভালোবাসে, ইয়াসুকোকে দেখে একটা বিন কেক তার দিকে এগিয়ে দিলো সে। মি. ইয়ানোজাওয়া অবশ্য মিষ্টি জিনিসের খুব একটা ভক্ত নন। তাই কেকের দিকে না তাকিয়ে চায়ের কাপটা উঠিয়ে নিলেন তিনি

“তোমাকে কি কালকেও বিরক্ত করেছে ওরা?”

“কারা?”

“ঐ হতচ্ছাড়া পুলিশগুলো,” সায়োকো ভুরু কুঁচকে বলল। “আমাদের তো ছাড়তেই চাইছিল না কালকে। আমি ভেবেছি রাতে নিশ্চিত তোমার বাসায় যাবে ওরা,” এই বলে স্বামীর দিকে তাকালো সে সমর্থনের আশায়। মাথা নেড়ে সায় জানালো ইয়ানোজাওয়া।

“না। সেদিনের পরে আর আসেনি ওরা।”

আসলে মিশাতোকে স্কুলের পরে একবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশগুলো। কিন্তু সেকথা বলার প্রয়োজনবোধ করলো না সে।

“যাক। বাঁচলে তাহলে।”

“তারা নিশ্চয়ই কিছু নিয়মমাফিক প্রশ্ন করা ছাড়া অন্য কোন ঝামেলা করেনি,” ইয়ানোজাওয়া বলল। “ইয়াসুকোকে তো আর সন্দেহ করছে না ওরা।”

“যাই হোক না কেন, টোগাশি যে খুন হবার আগে এখানে আসেনি তাতে আমি খুশি। তা না-হলে ইয়াসুকোর পেছনে আরো ভালোমত লাগতো পুলিশগুলো।”

“ভয় দেখিয়ো না তো মেয়েটাকে,” ইয়ানোজাওয়া তার স্ত্রীকে বলল।

“আরে, ওদেরকে তো চেনো না তুমি। মনে নেই ঐ গোয়েন্দাটা, কুসানাগি না কী যেন বলছিল, টোগাশি নাকি ম্যারিয়ান ক্লাবেও গিয়েছিল ইয়াসুকোর খোঁজে?” এই ম্যারিয়ান ক্লাবেই সায়োকো আর ইয়াসুকো আগে কাজ করতো। “সে বলেছিল তার ধারণা টোগাশির এখানে আসার কথা। মনে মনে কিছু একটা চলছিল ঐ ব্যাটার, আমি তখনই ধরতে পেরেছিলাম।”

“হতে পারে, কিন্তু টোগাশি তো আর এখানে আসেনি, তাই না? আমাদের দুশ্চিন্তা না করলেও চলবে।”

“এজন্যেই তো আমি বললাম, শয়তানটা এখানে না আসাতে খুব ভালো হয়েছে। না-হলে আমাদের ইয়াসুকোকে একটুও নিস্তার দিত না ওরা।“

ইয়ানোজাওয়া হাত নেড়ে তার স্ত্রীর কথা উড়িয়ে দিলো। ওরা যদি জানতে পারে টোগাশি এখানে এসেছিল, তাহলে কি হবে? পেটের ভেতরটা কেমন জানি করে উঠলো ইয়াসুকোর

“যাই হোক না কেন, হাল ছেড়ে দেয়া চলবে না তোমার, ইয়াসুকো, সায়োকো বলল। “ওরা আবার আসবে তোমার সাথে কথা বলতে, দেখো। আসাটাই স্বাভাবিক, কারণ হাজার হলেও টোগাশি তোমার স্বামী ছিল। কিন্তু যখন ওরা বুঝতে পারবে টোগাশির খুনের সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই, তখন আর জ্বালাবে না। আমি জানি শয়তানটা এখনও তোমাকে জ্বালাতন করতো।”

জোর করে মুখে হাসি ফোটাল ইয়াসুকো।

“সত্যি কথা বলতে কি, আমি আসলে খুশিই হয়েছি সে মারা গেছে, “ সায়োকো স্বান্ত্বনা দেয়ার ভঙ্গিতে বলল।

“আহ্, সায়োকো,” ভুরু কুঁচকে বলল ইয়ানোজাওয়া।

“আরে, বলতে দাও আমাকে। তুমি তো জানো না ইয়াসুকোকে কতটা ভুগিয়েছে ঐ হারামি।”

“শুধু তুমি জানো, না?”

“কিছুটা তো জানিই। ইয়াসুকো অনেক কিছুই খুলে বলেছে আমাকে। সে ম্যারিয়ানে কাজ করা শুরুই করেছিল ঐ জানোয়ারটার হাত থেকে বাঁচার জন্যে, তাই না ইয়াসুকো? আমি জানি না কে তাকে খুন করেছে, কিন্তু তার সাথে দেখা হলে একবার হাত মেলাতাম আমি।”

ইয়ানোজাওয়া বিরক্ত হয়ে বের হয়ে গেলো ঘর থেকে। সায়োকো অসন্তোষ নিয়ে সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, “তোমার কি মনে হয় ইয়াসুকো? কে মেরেছে টোগাশিকে? কোন পাওনাদার হবে হয়তো, কি বলো?”

“কে জানে?” ইয়াসুকো কাঁধ তুলল।

“যাই হোক, তুমি ওর হাত থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছো এতেই আমি খুশি,” কেকের শেষ টুকরোটা মুখে তুলে নিতে নিতে বলল সায়োকো।

ইয়াসুকো কিছুক্ষণ পরে সামনে ফিরে গেলো। ইয়ানোজাওয়াদের কথাবার্তা শুনে মনে হয় না তারা কিছু সন্দেহ করেছে। বরং তারা ভাবছে কেসটা ইয়াসুকোর জন্যে হয়রানি ছাড়া আর কিছু নয়। তাদের ধোঁকা দিতে কষ্ট লাগছিল তার, কিন্তু সে যদি গ্রেফতার হয় তাহলে আরো বড় বিপদে পড়বে তারা। বেন্টেন-টেইয়ের ব্যবসাতেও ধ্বস নামবে সন্দেহ নেই। সত্যটা লুকানো ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই তার এখন

সন্ধ্যা পর্যন্ত যান্ত্রিকভাবে কাজ করে গেলো সে। মাঝে মাঝেই সেদিনটার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু জোর করে ওগুলো মাথা থেকে দূরে ঠেলে দিলো বারবার।

ছয়টা নাগাদ দোকানে ভিড় কমে আসলো একদম। এই সময় হুট করে দরজাটা খুলে গেলো।

“স্বাগতম,” অভ্যাসবশত বলে উঠলো সে। কিন্তু আগুন্তুককে দেখে পরের কথাগুলো মুখেই রয়ে গেলো। “আপনি”

“কি খবর?” হেসে তাকে জিজ্ঞেস করলো লোকটা। চোখের নিচে ভাঁজ পড়ে গেছে তার।

“মি. কুডো! আপনি এখানে কি করছেন?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো সে।

“কি করছি মানে? লাঞ্চবক্স কিনতে এসেছি,” এই বলে কাউন্টারের সামনে টাঙানো লাঞ্চবক্সের ছবিগুলো দেখতে লাগলেন। “বেশ ভালো মেন্যু দেখি।”

“নিশ্চয়ই ম্যারিয়ানের কেউ বলেছে এখানকার কথা।”

“ওরকমই কিছু একটা,” হেসে বললেন তিনি। “বেশ কয়েকদিন পর সেদিন ওখানে গিয়েছিলাম আমি।”

ইয়াসুকো পেছনে ঘুরে জোরে ডাক দিলো, “সায়োকো! তাড়াতাড়ি আসো! তুমি বিশ্বাসই করবে না!”

“কি হয়েছে?” হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে আসতে লাগলো সায়োকো।

“মি. কুডো এসেছেন,” ইয়াসুকো হেসে জবাব বলল।

“কি? মি. কুডো…” পেছন থেকে বেরিয়ে এলো সায়োকো। অ্যাপ্রনটা খুলে ফেলেছে। সামনে দাঁড়ানো লোকটাকে দেখে বলে উঠলো, “ একি! মি. কুডো! আপনি?”

“আপনাকে দেখে খুব ভালো লাগছে। কেমন যাচ্ছে আপনাদের দিনকাল? দেখে তো ভালোই মনে হচ্ছে।”

“এই তো, চলছে কোনরকম। এতদিন পড়ে আপনাকে দেখে খুব ভালো লাগছে। তা, কি মনে করে?”

“তেমন কিছু না। আপনাদের সাথে দেখা করতেই এলাম,” ইয়াসুকোর দিকে তাকিয়ে বললেন কুডো। নাক চুলকাচ্ছেন তিনি। এটা তার একটা পুরনো অভ্যাস। কিছু বলতে লজ্জা পেলে এটা করেন।

আকাসাকার ক্লাবটাতে ইয়াসুকো যখন কাজ করতো তখন নিয়মিত সেখানে যেতেন মি. কুডো। ওখানে গিয়ে সবসময় ইয়াসুকোর খোঁজ করতেন তিনি। দুয়েকবার বাইরে ডিনারেও গেছে তারা। মাঝে মাঝে ক্লাব বন্ধ হয়ে যাবার পরে একসাথে বারে যেত তারা। সে যখন টোগাশির হাত থেকে বাঁচার জন্যে ম্যারিয়ানে চলে আসে, তখন একমাত্র মি. কুডোকেই সেটা জানিয়েছিল। এরপরে ম্যারিয়ানের নিয়মিত কাস্টমার হয়ে যান মি. কুডো। ম্যারিয়ানের চাকরিটা ছেড়ে দেয়ার কথাটাও তাকেই প্রথম জানিয়েছিল ইয়াসুকো। তার এখনও মনে আছে সেদিন মি. কুডোর কথাটা শুনে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। বলেছিলেন, “যেখানেই যাও তোমার জন্যে শুভকামনা।”

এরপরে তার সাথে আর দেখা হয়নি।

কিছুক্ষণ পরে ইয়ানোজাওয়া বেরিয়ে আসলে চারজন মিলে পুরনো দিনের গল্পে মশগুল হয়ে গেলো।

অনেকটা সময় কথাবার্তা বলার পরে সায়োকো ইয়াসুকোকে তাড়াতাড়ি ছুটি নিতে বলল আজকের জন্যে। মি. কুডোর সাথে একটু ঘোরাঘুরি কিংবা চা খেতে যেতে পারবে তাহলে সে।

কুডোর দিকে তাকালো ইয়াসুকো।

“যদি তোমার সময় হয় আর কি,” বললেন তিনি। তবে মনে মনে নিশ্চয়ই সেরকমই ইচ্ছে ছিল তার আগে থেকেই।

“একটু অপেক্ষা করুন,” হেসে জবাব দিলো ইয়াসুকো।

কিছুক্ষণ পর দোকান থেকে বের হয়ে শিনোহাশি রোড ধরে হাটতে লাগলো তারা।

K

সাসপেক্ট এক্স

“সত্যি কথা বলতে আমি তোমাকে ডিনারে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আজ আর সে কষ্ট দেবো না। তোমার মেয়ে নিশ্চয়ই বাসায় অপেক্ষা করছে,” হাটতে হাটতে বলল কুডো। ইয়াসুকো আকাসাকাতে থাকতেই তাকে তার মেয়ের কথা জানিয়েছিলো।

“আপনার ছেলে কেমন আছে?”

“ভালো। থার্ড-ইয়ারে উঠে গেছে সে। সামনে পরীক্ষা।“

কুডো একটা ছোট প্রিন্টিং কোম্পানির ম্যানেজার। পশ্চিম টোকিওর ওসাকিতে স্ত্রী আর ছেলেকে নিয়ে থাকেন।

রাস্তার পাশে একটা কফিশপে গেলো তারা। ইয়াসুকো ইচ্ছে করেই মোড়ের রেস্তোরাঁটাতে গেলো না।

“ম্যারিয়ানে তোমার খোঁজ নিতে গিয়েছিলাম আমি,” কুডো বললেন। “আমার মনে ছিল তুমি বলেছিলে, সায়োকোর লাঞ্চশপে কাজ করবে। কিন্তু সেটার ঠিকানা তো আমি জানতাম না।”

“আমার কথা এরকম হঠাৎ করেই মনে হলো আপনার?”

“আসলে তা না,” কুডো একটা সিগারেট জ্বালিয়ে বললেন। “টেলিভিশনে খুনের খবরটা দেখি আমি। তখনই তোমাকে নিয়ে চিন্তা শুরু হয়। টোগাশির কথা শুনে একটু খারাপই লাগছে।”

“ওহ্…আপনি যে ওকে চিনতে পেরেছেন সেটা ভেবে অবাক লাগছে আমার।”

জবাবে হাসলেন কুডো। এরপর একবার ধোঁয়া ছেড়ে বললেন, “চিনবো না কেন? পর্দায় বড় করে টোগাশি নামটা দেখাচ্ছিল তো। আর সেটা কোনদিনও ভোলা সম্ভব হবে না আমার পক্ষে।”

“…আমি দুঃখিত।”

“আরে, তুমি ক্ষমা চাচ্ছো কেন,” হাত নেড়ে বললেন কুডো।

ইয়াসুকো জানত কুডো তাকে পছন্দ করেন। আসলে মনে মনে সে-ও খানিকটা পছন্দ করতো তাকে। কিন্তু ওটুকুই। বেশ কয়েকবার তাকে হোটেলে নিয়ে যেতে চেয়েছেন কুডো। কিন্তু প্রতিবারই ভদ্রভাবে না বলে দিয়েছে সে। কারণ বিবাহিত একজন লোকের সাথে জড়ানোর ইচ্ছে ছিল না তার। আর তখন সে নিজেও বিবাহিত ছিল। অবশ্য কুডো কিংবা অন্য কাস্টমারকে একথা জানায়নি তখন।

একবার ট্যাক্সি করে ইয়াসুকোকে বাসায় নামিয়ে দেয়ার সময় টোগাশির সাথে দেখা হয়ে যায় কুডোর। ইয়াসুকো তার সিগারেট কেসটা ট্যাক্সিতে ফেলে গিয়েছিল, সেটাই ফেরত দিতে বাসায় নক করেছিলেন কুডো। কিন্তু দরজা খুলে দেয় টোগাশি। মাতাল অবস্থায় ছিল সে তখন। কুডোকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে ধরে নেয়, না বলা সত্ত্বেও জোর করে ইয়াসুকোকে হোটেলে নিয়ে যাওয়ার জন্যে এসেছে। তখন চোখমুখ বন্ধ করে কুডোকে পেটানো শুরু করে সে। ইয়াসুকো এসে তাকে না থামালে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারতো।

কিছুদিন পর ক্ষমা চাওয়ার জন্যে টোগাশিকে কুডোর অফিসে নিয়ে যায় ইয়াসুকো। টোগাশিও সুবোধ বালকের মত ক্ষমা চায়, কারণ সে জানতো কুডো যদি পুলিশের কাছে অভিযোগ করে তাহলে তার কপালে খারাবি আছে।

তবুও কুডো তেমন কিছু বলেননি তাকে। শুধু সাবধান করে বলে দেন স্ত্রীকে চিরদিন নাইটক্লাবে কাজ করতে দিতে পারে না সে। জবাবে কিছু না বলে একবার শুধু বাউ করেছিল টোগাশি।

এরপরেও নিয়মিত ক্লাবে আসতেন কুডো। ইয়াসুকোর সাথেও আগের মতনই ব্যবহার করতেন। কিন্তু ক্লাবের বাইরে দেখা-সাক্ষাত করা বন্ধ করে দিয়েছিল তারা। কুডোই তাকে আইনজীবির ঠিকানাটা দিয়েছিলেন। যার সহায়তায় টোগাশিকে ডিভোর্স দেয় সে।

এতদিন পর, কফির টেবিলে বসে তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন কুডো। “কেসটাতে তুমি জড়িয়ে যাবে না তো?”

“পুলিশ বেশ কয়েকবার এসেছে বাসায়। কিন্তু ওটুকুই।”

“আমি জানতাম তারা আসবে,” কুডো দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন। “চিন্তা করার মত কিছু নয় আসলে,” ইয়াসুকো হেসে নিশ্চিত করলো তাকে।

“মিডিয়াও নিশ্চয়ই তোমার পেছনে উঠে পড়ে লেগেছে?”

“না, সেরকম কিছু ঘটেনি এখনও।”

“যাক। অবশ্য টোগাশির খুনের ব্যাপারটাকে অতটা গুরুত্বও দেয়নি ওরা। কিন্তু কেউ যদি ঘাটাতে আসে তোমাকে আমি সাহায্য করতে পারবো সে ব্যাপারে।”

“ধন্যবাদ, আগের মতনই আছেন আপনি।“

কুডো লজ্জা পেয়ে গেলেন। কফির কাপ হাতে নিতে নিতে বললেন, “আমি খুশি তুমি কোনভাবে এর সাথে জড়িত নও বলে।”

“অবশ্যই আমি জড়িত না। আপনি কি ভেবেছিলেন, আমি ওকাজ করেছি?”

“না, তা নয়। তোমাকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছিল আমার, এই যা। হাজার হলেও তোমার প্রাক্তন স্বামীকে খুন করা হয়েছে। তোমাকে তো ফাঁসিয়েও দিতে পারে কেউ।”

“সায়োকোও একই কথা বলছিল। আপনারা সবাই আমাকে নিয়ে একটু বেশিই দুশ্চিন্তা করেন।”

“এখন তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে, আমি আসলেও অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করছিলাম। টোগাশির সাথে তোমার ডিভোর্সের তো পাঁচবছর হয়ে গেলো প্রায়। এখনও দেখা-সাক্ষাত হত তোমাদের মাঝে?”

“ওর সাথে?”

“হ্যা, টোগাশির কথাই বলছি।”

“একদমই না,” জবাব দিলো সে। খেয়াল করে দেখলো মুখের পেশিগুলো আপনা আপনিই শক্ত হয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু একটু পরেই কুডো অন্য বিষয় নিয়ে কথা বলতে শুরু করায় অস্বস্তিকর ভাবটা কেটে গেলো দ্রুত। কুডো তার জীবন কাহিনী বলা শুরু করেছেন। ইয়াসুকো খেয়াল করলো, তিনি কেবল তার ছেলের কথাই বলছেন, স্ত্রীর কথা একবারের জন্যেও মুখে আনছেন না। কুডোর সাথে তার স্ত্রীর সম্পর্ক কেমন সেটা জানা নেই ইয়াসুকোর।

কফিশপ থেকে তারা যখন বের হলো তখন বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে।

“আমার দোষ এটা,” কুডো ইয়াসুকোর কাছে ক্ষমা চেয়ে বললেন। “সোজাসুজি বাসায় গেলে আর বৃষ্টির মাঝে আটকা পড়তে হত না তোমাকে।”

ইয়াসুকো মাথা নেড়ে বলল, “আরে, না, আপনার দোষ হতে যাবে কেন?”

“তোমার বাসা কি এখান থেকে বেশি দূরে?”

“সাইকেলে করে গেলে দশ মিনিটের ব্যাপার।”

“সাইকেল? তাহলে তো ঝামেলা হয়ে গেলো,” মেঘলা আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন কুডো।

“ব্যাপার না। আমার কাছে একটা ছাতা থাকে সবসময়। কালকে বাসা থেকে একটু তাড়াতাড়ি বেরুলেই চলবে।”

“আমি নামিয়ে দেই তোমাকে।”

“না না, তার দরকার হবে না।”

কিন্তু কুডো ইতিমধ্যেই একটা ট্যাক্সি ডেকে ফেলেছেন।

“আগামিবার একসাথে ডিনার করি আমরা?” ট্যাক্সি চলতে শুরু করলে বললেন কুডো। “তোমার মেয়েকেও নিয়ে এসো সাথে করে।”

“তাকে নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবে না। কিন্তু আপনার-”

“আরে, আমি যেকোন সময়ই আসতে পারবো। এখন আর অতটা ব্যস্ত নই।”

ইয়াসুকো আসলে তার স্ত্রীর কথা জিজ্ঞেস করতে চাইছিল, কিন্তু আর কথা বাড়ালো না সে। তার কাছে মনে হলো কুডো ইচ্ছে করেই এড়িয়ে যাচ্ছেন ব্যাপারটা।

ইয়াসুকোর মোবাইল নম্বর জানতে চাইলেন কুডো। সেটা তাকে না দেওয়ার কোন কারণ খুঁজে পেলো না সে।

ইয়াসুকোর অ্যাপার্টমেন্টের সামনে ট্যাক্সি নিয়ে আসলেন কুডো। কিন্তু তার পাশের দরজাটা খুলছিল না, তাই নামতে হলো।

“তাড়াতাড়ি ঢুকে যান নইলে ভিজে যাবেন,” ফুটপাথে দাঁড়িয়ে বলল ইয়াসুকো।

“শিঘ্রই দেখা হচ্ছে তাহলে।

ইয়াসুকো মৃদু হেসে মাথা নাড়লো কেবল।

কুডো ট্যাক্সিতে ওঠার সময় ইয়াসুকোর পেছনে কাউকে দেখে থেমে গেলেন। ইয়াসুকোও মাথা ঘোরাল ভালোমত খেয়াল করার জন্যে। অন্ধকারে দেখা যাচ্ছিল না ঠিকমতো। কিন্তু তবুও বুঝতে অসুবিধা হলো না তার, ইশিগামি দাঁড়িয়ে আছে সিঁড়ির নিচে।

তাকে দেখে মনে হচ্ছে এতক্ষণ ধরে সেখানে দাঁড়িয়ে তাদেরকে দেখছিল সে। একটু পর ছাতা ফুটিয়ে রাস্তায় নেমে গেলো ইশিগামি।

“ফোন দেবো আমি,” যাবার আগে বলে গেলেন কুডো। ট্যাক্সির লাইটটা মিলিয়ে যেতে দেখলো ইয়াসুকো। এতক্ষণে সে খেয়াল করলো বুকের ভেতর তার হৃৎপিণ্ডটা লাফাচ্ছে। কতদিন পর একজন পুরুষ মানুষের সাথে ভালো সময় কাটালো সে!

বাসায় ফিরে দেখলো মিশাতো টিভি দেখছে।

“কিছু হয়েছে আজকে?”

মিশাতো ভালোমতই জানে তার মা স্কুলের কথা জিজ্ঞেস করছে না। “না, কিছু না। মিকাও কিছু বলেনি, তার মানে পুলিশ এখনও যোগাযোগ করেনি ওর সাথে।”

কিছুক্ষণ পরে ইয়াসুকোর মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। ডিসপ্লেতে একটা পাবলিক ফোনের নম্বর দেখাচ্ছে।

“হ্যালো?”

“ইশিগামি বলছি,” পরিচিত কণ্ঠটা ভেসে আসলো ওপাশ থেকে। “কিছু ঘটেছে আজকে?”

“সেরকম কিছু না।”

“ঠিক আছে। দয়া করে সাবধানে থাকবেন। পুলিশ কিন্তু এখনও আপনাকে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেয়নি। সবকিছু আরো ভালোমত খতিয়ে দেখবে তারা।

“বুঝতে পেরেছি।”

“আর কিছু হয়েছে নাকি আজ?”

“কি?” ইয়াসুকো জিজ্ঞেস করলো অবাক স্বরে। “কেবলই তো বললাম কিছু হয়নি।”

“জি, ঠিক আছে। দুঃখিত। কাল আবার ফোন করবো আমি,” ফোন কেটে দেয়া হলো ওপাশ থেকে।

ইয়াসুকো ঠিক বুঝতে পারলো না, কী হলো। মি. ইশিগামিকে আগে কখনও এভাবে কথা বলতে শোনেনি সে। নিশ্চয়ই কুডোর সাথে তাকে দেখার কারনেই শেষের কথাটা জিজ্ঞেস করেছিলো।

ইয়াসুকো জানে ইশিগামি কেন তাদেরকে এভাবে সাহায্য করছে। সায়োকোর কথাটা নিজেও বিশ্বাস করে সে এখন। ইশিগামি পছন্দ করে তাকে।

হঠাৎ করে একটা প্রশ্ন উদয় হলো তার মনে। সে যদি অন্য কারো সাথে ঘনিষ্ঠ হয় এখন, ইশিগামি কি তখনও তাকে সাহায্য করবে? ইয়াসুকো ঠিক করলো কুডোর সাথে ডিনারে যাবে না। আর গেলেও সেই কথা ইশিগামিকে বলা যাবে না। হঠাৎ করেই গোটা ব্যাপারটা অদ্ভুত ঠেকল তার কাছে। কতদিন এভাবে ইশিগামির সতর্ক চোখকে ফাঁকি দিয়ে চলতে হবে তাকে?

সে কি টোগাশির ঝামেলাটা মিটে যাওয়া না পর্যন্ত অন্য কোন পুরুষ মানুষের সাথে দেখা করতে পারবে না?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *