দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১৯

অধ্যায় ১৯

ইয়াসুকো চুপচাপ পার্কের বেঞ্চটাতে বসে আছে। কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছে সে। হৃৎপিণ্ডের প্রতিটা স্পন্দনের আওয়াজ কানে লাগছে তার।

কিভাবে সম্ভব একজন লোকের পক্ষে?

ইশিগামি কখনই ইয়াসুকোকে বলেনি সে টোগাশির লাশটার কি করেছে। আপনাকে ওটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না, সব বন্দোবস্ত হয়ে গেছে-ফোনের ওপাশ থেকে শান্ত গলায় এটাই বলতো সে।

ইয়াসুকো কখনই এটা ভেবে পায়নি, পুলিশ কেন তার কাছে টোগাশি খুন হওয়ার পরের দিনের অ্যালিবাই চাইতো। ডিটেক্টিভরা তার বাসায় আসার আগেই ইশিগামি তাকে ঠিকমত বলে দিয়েছিল দশ তারিখ রাতের বেলা কি কি করতে হবে। সে অনুযায়িই কাজগুলো করে গেছে সে, কারণ না জেনেই। ডিটেক্টিভরা যখন তার অ্যালিবাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করেছিল, তখন সে একদম সত্যি কথাটাই বলেছে। কিন্তু তার সেই অফিসারদের জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হচ্ছিল : আপনারা বার বার দশ তারিখ রাতের কথা জিজ্ঞেস করছেন কেন?

এখন সব বুঝতে পারছে। ইশিগামি সবাইকে অবিশ্বাস্য একটা ফাঁদে ফেলেছে। সবকিছু জানার পরেও সেটা বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছে না তার। আর সেটা বিশ্বাস করতে চায়ও না সে। তার মত একজন সাধারণ মধ্যবয়স্ক মহিলার জন্যে কেন ইশিগামি নিজের জীবনটা এভাবে নষ্ট করবে? তার এই আত্মত্যাগের মূল্য কখনও শোধ করতে পারবে না সে।

দু-হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বসে থাকলো সে। কিচ্ছু ভালো লাগছে না এখন। ইউকাওয়া বলেছে পুলিশকে সে নিজে থেকে কিছু জানাবে না। ইয়াসুকোকে নিষ্ঠুর এক সিদ্ধান্তের সম্মুখিন করিয়ে দিয়ে চলে গেছে সে। ওভাবেই বসে থাকলো অনেকক্ষণ, দাঁড়ানোরও শক্তি নেই।

হঠাৎ করে তার কাঁধে টোকা দিলো কে যেন। চমকে তাকালো সে।

একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে বেঞ্চের পাশে। উদ্বিগ্ন চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ওটা যে কুডো এটা বুঝতেও বেশ খানিকটা সময় লাগল তার।

“কিছু হয়েছে?”

কুডোর কথা ভুলেই গিয়েছিল সে। তিনি নিশ্চয়ই এতক্ষণ রেস্তোরাঁতে অপেক্ষা করার পর তাকে খুঁজতে বেরিয়েছেন।

“আমি দুঃখিত, মি. কুড়ো…আমি আসলে খুব ক্লান্ত,” এর থেকে ভালো কোন অজুহাত খুঁজে পেলো না। সে আসলেই ক্লান্ত, তবে শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবে।

“তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?” কুডো শান্ত গলায় প্রশ্ন করলেন।

কিন্তু ইয়াসুকোর কাছে তার গলার আওয়াজ আজকে বেশিই শান্ত মনে হলো। এখনকার পরিস্থিতির সাথে মানাচ্ছে না সেটা। সত্যটা জানেন না তিনি। আর সেটা না জানা যে কত বড় অপরাধ, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে এখন ইয়াসুকো।

“আমি…ঠিক আছি,” বলে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেই ভারসাম্য হারিয়ে ফেলল সে। কিন্তু পড়ে যাবার আগেই কুডো ধরে ফেললেন তাকে।

“কিছু হয়েছে? তোমাকে একদম ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে।”

“না, কিছু না,” ইয়াসুকো বলল। কি ঘটেছে সেটা কাউকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয় তার পক্ষে।

“আমার মাথাটা একটু ঘুরাচ্ছিল তাই এখানে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। কিন্তু এখন ভালো লাগছে,” একটু জোর গলায় কথাগুলো বলার চেষ্টা করলো ইয়াসুকো, কিন্তু পারলো না।

“আমার গাড়ি পাশেই পার্ক করে রেখেছি, যাওয়ার আগে একটু বিশ্রাম নিয়ে নেবে?”

“কোথায় যাওয়ার আগে?” তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো ইয়াসুকো।

“একটা রেস্টুরেন্টে সাতটার সময় টেবিল রিজার্ভ করে রেখেছি আমি, কিন্তু আধাঘন্টা দেরি হলে ওরা কিছু মনে করবে না।“

“ওহ্।”

রেস্টুরেন্ট শব্দটাও কেমন যেন অচেনা লাগছে তার কাছে। এখন কি গলা দিয়ে কিছু নামবে তার? এরকম দমবন্ধ অবস্থাতেও কি মুখে হাসি নিয়ে বসে থাকতে হবে তাকে? যদিও মি. কুডোকে দোষারোপ করতে পারছে না সে, তিনি তো আর কিছু জানেন না।

“আমি দুঃখিত,” মাথা নেড়ে বলল ইয়াসুকো, “আমার মনে হয় না আজ কোথাও যাওয়া সম্ভব হবে আমার পক্ষে। অন্যকোন দিন…”

“ঠিক আছে,” তার হাতে হাত রেখে বললেন কুডো। “আজকে তোমাকে দেখে আসলেও ক্লান্ত লাগছে। আর এই কয়েক দিনে অনেক ঝড় বয়ে গেছে তোমার ওপর দিয়ে। আমারই আজকে বাইরে যাওয়ার কথা বলা উচিত হয়নি। আমি দুঃখিত।“

কুডোর ভদ্রতায় আবারও মুগ্ধ না হয়ে পারলো না ইয়াসুকো। তার জন্যে আসলেও চিন্তা করেন তিনি। কিন্তু সে কি এসবের যোগ্য?

তার হাত ধরে পাশাপাশি হাটতে লাগল ইয়াসুকো। একটু দূরেই তার গাড়িটা পার্ক করে রাখা। সেখানে পৌঁছে তাকে বাসায় দিয়ে আসতে চাইলেন কুডো। ইয়াসুকো না বলবে ভেবেও রাজি হয়ে গেলো শেষপর্যন্ত। অ্যাপার্টমেন্টে ফেরার পথটা একা একা গেলে ফুরোতেই চাইবে না আজকে।

“তুমি কি আসলেই ঠিক আছো?” কুডো আবার জিজ্ঞেস করলেন গাড়িতে ওঠার পর। “কিছু হয়ে থাকলে আমাকে নির্দ্বিধায় খুলে বলতে পারো তুমি।”

“না, আসলেই ঠিক আছি আমি,” ইয়াসুকো হাসির ভঙ্গি করে বলল। তার চেহারা নিশ্চয়ই করুণ দেখাচ্ছে এখন, সেজন্যেই বারবার ওকথা জিজ্ঞেস করছেন কুডো। হঠাৎ মনে পড়লো, আজকে কিছু একটা বলতে চেয়েছিলেন তিনি।

“আপনি কী যেন জরুরি কথা বলবেন বলেছিলেন?”

“হ্যা,” রাস্তা থেকে চোখ না সরিয়ে বললেন কুডো। “কিন্তু আজ মনে হচ্ছে সেটার জন্যে ভালো সময় নয়।”

“আপনি নিশ্চিত?”

“হ্যা।”

জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগল ইয়াসুকো। সূর্য ডুবে গেছে, রাত নেমে এসেছে শহরের বুকে। এমন করে যদি তার জীবনেও অন্ধকার নেমে আসত এ মুহূর্তে!

এই সময় ইয়াসুকোর অ্যাপার্টমেন্টের সামনে কুডো গাড়িটা থামালেন। “বিশ্রাম নাও, পরে ফোন করবো আমি।”

মাথা নেড়ে বেরিয়ে যাবার জন্যে দরজার হ্যান্ডেলে হাত রাখলো সে কিন্তু সেই সময় হঠাৎ কুডো বললেন, “দাঁড়াও”

ইয়াসুকো ঘুরে দাঁড়াতেই বুঝতে পারলো, এতক্ষন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন তিনি।

“আজকেই কথাটা বলতে হবে আমাকে,” এই বলে পকেট থেকে একটা ছোট বাক্স বের করলেন কুডো। “জানি, সিনেমাতে এরকম দেখা যায়, তবুও…” বাক্সটা খুললেন। সুন্দর একটা হীরার আঙটি জ্বলজ্বল করছে ওটার ভেতর।

“মি. কুডো…!” ইয়াসুকোর মুখ হা হয়ে গেলো।

“এখনই কিছু জানাতে হবে না তোমাকে,” তিনি বললেন। “মিশাতোর ব্যাপারটাও চিন্তা করে দেখতে হবে। অত তাড়া নেই আমার। কিন্তু এটা জেনে রাখো, তোমাদের দু-জনকেই সুখে রাখতে পারবো আমি,” এই বলে আঙটির বাক্সটা তার হাতে গুজে দিলেন। “নিয়ে যাও এটা। মনে করবে, একজন বন্ধুর পক্ষ থেকে উপহার। কখনও বোঝা হতে দেবে না একে। যদি জীবনের বাকি সময়টা আমার সাথে কাটাতে চাও, তবেই স্বার্থক হবে এটার উদ্দেশ্য। আর না-হলেও সমস্যা নেই।“

ইয়াসুকো বুঝতে পারলো না কী বলবে। আঙটিটা দেখার পর থেকে কুডোর কথা ঠিকমত কানেও ঢুকছে না তার।

“আমি জানি তোমার কাছে একদম অপ্রত্যাশিত ব্যাপারটা,” কুডো বোকার মত হেসে বললেন। “কিন্তু বললামই তো, এখনই কিছু জানাতে হবে না তোমাকে। ধীরেসুস্থে জানিও।”

ইয়াসুকোর মনের মধ্যে এখন চিন্তার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কুড়োর সাথে কাটানো ভালো মুহূর্তগুলোর ছবি ভেসে উঠছে বার বার। কিন্তু ওসব ছাপিয়ে একজনের ছবি জায়গা করে নিলো তার মনে-ইশিগামি।

“আমি…আমি ভেবে দেখবো,” অবশেষে বলল সে।

সন্তুষ্ট হয়ে মাথা নাড়লেন কুডো। ইয়াসুকো তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বের হয়ে গেলো গাড়ি থেকে।

সিঁড়ি বেয়ে নিজের ফ্ল্যাটে যাওয়ার সময় না চাইতেও চোখ চলে গেলো পাশের দরজাটার দিকে। মেইলবক্সটাতে চিঠি উপচে পড়ছে কিন্তু কোন খবরের কাগজ দেখা গেলো না। নিশ্চয়ই যাবার আগে খবরের কাগজ দিতে না বলে গেছে ইশিগামি। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়লো সে।

মিশাতো ফেরেনি এখনও। লাইট জ্বালিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো ইয়াসুকো। শেল্ফ থেকে একটা বিস্কুটের কৌটো নামিয়ে ঢাকনাটা সরাল। পুরনো চিঠিপত্র এখানেই জমা করে রাখে তারা। খামের বান্ডিলটা বের করে আবার ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দিলো সে। একটা চিকন খাম পড়ে আছে সেখানে। গায়ে কোন ঠিকানা লেখা নেই। ওটার ভেতরে একটা দাগটানা কাগজে কিছু কথা লেখা।

ইশিগামি শেষবার ফোন করার আগে অন্য তিনটা চিঠির সাথে এটাও রেখে দিয়েছিল তাদের মেইলবক্সে। এখানেই লেখা আছে কিভাবে ইশিগামির অনুপস্থিতিতে কাজ করতে হবে তাদেরকে। সম্ভাব্য প্রতিটা অবস্থার সমাধান লেখা আছে। শুধু তার একার জন্যে নয়, মিশাতোর কথাও লেখা আছে সেখানে। এটার কারণেই পুলিশের মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে তারা। অক্ষরে অক্ষরে সব নির্দেশ পালন করেছে। ইয়াসুকোর মনে হয়েছিল, এখন যদি কোন ভুল করে সে তবে ইশিগামির এতদিনের কষ্ট, আত্মত্যাগ সব বৃথা হয়ে যাবে। মিশাতোও নিশ্চয়ই অমনটা ভেবেছিল।

নির্দেশনার শেষে তার উদ্দেশ্যে একটা বার্তা লিখে দিয়েছিল ইশিগামি :

আমার বিশ্বাস মি. কুডো একজন সৎ ও কর্মঠ লোক। তাকে বিয়ে করলে আপনার আর মিশাতোর দিকে যে ভাগ্যদেবি মুখ তুলে তাকাবেন সেটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। আমাকে নিয়ে ভাববেন না। আর নিজেকে দোষ দেবেন না কখনই। আপনি যদি সুখি না হন, তবে আমি যা যা করেছি তার পুরোটাই বৃথা যাবে।

লেখাটা পড়ার সময় আর কান্না চেপে রাখতে পারলো না ইয়াসুকো। অঝোর ধারায় চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল। এতটা গভীরভাবে কেউ ভালোবাসেনি তাকে কখনও। এরকম ভালোবাসার অস্তিত্বে বিশ্বাসিও ছিল না সে। কিন্তু ইশিগামির মত একজন মানুষ তার জন্যে অন্তরে ধারণ করেছিল সেটা।

কুডোর দেয়া আঙটিটা হাতে নিয়ে দেখতে লাগল সে। ইশিগামির ইচ্ছেটাকে সম্মান করা উচিত তার। কিন্তু সে কি আসলেও পারবে সুখি হতে। একবার ভাবলো, পুলিশের কাছে গিয়ে সব বলে দেবে, কিন্তু তাতেও তো বাঁচানো যাবে না ইশিগামিকে, আসলেও একটা খুন করেছে সে।

আঙটিটার দিকেই তাকিয়ে ছিল সে, এমন সময় তার ফোনটা বেজে উঠলো, স্ক্রিনে একটা অপরিচিত নম্বর দেখাচ্ছে। ফোনটা ধরলো সে।

“হ্যালো?”

“হ্যালো? আপনি কি মিশাতো হানাওকার মা বলছেন?” একটা অপরিচিত কন্ঠস্বর ভেসে আসল ওপাশ থেকে।

“হ্যা, কিছু হয়েছে?” পেটের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল তার। “আমার নাম সাকানো, মিশাতোর ক্লাস টিচার আমি। এভাবে হঠাৎ বিরক্ত করার জন্যে দুঃখিত।”

“কোন সমস্যা? মিশাতো ঠিক আছে?”

“আসলে…তাকে আমরা জিমনেশিয়ামের বাইরে অচেতন অবস্থায় পেয়েছি। কব্জির কাছটা পুরো রক্তাক্ত অবস্থায় ছিল তার।”

“কি…?!”

“অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে, এজন্যে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাকে। চিন্তা করবেন না, ঠিক হয়ে যাবে সে। কিন্তু আমার মনে হয়েছে, আত্মহত্যার চেষ্টা…”

লোকটা বলতেই থাকলো, কিন্তু একটা শব্দও ঢুকছে না ইয়াসুকোর কানে।

X

একটা বদ্ধ ঘরে চুপচাপ বসে আছে ইশিগামি। কঠিন একটা গাণিতিক সমস্যা নিয়ে চিন্তা করছে। তাকে এই ঘর থেকে বের হতে দেয়া হবে না তো কি হয়েছে? কাগজ আর কলম পেলেই সময় কেটে যাবে তার। কর্তৃপক্ষ যদি তার হাত বেধেও রাখে, তবুও তার মগজটাকে তো আর থামাতে পারবে না তারা।

কেউ তার কাজকে মূল্যায়ণ না করলেও সমস্যা নেই। সেগুলো প্রকাশিত হলে অবশ্যই খুশি হত সে; কিন্তু গণিতের প্রকৃত সৌন্দর্য তো আর প্রকাশ পাবে না কাগজগুলোতে। গণিত কোন প্রতিযোগিতাও নয় যে, সেটাতে প্রথম হতে হবে তাকে, তত্ত্বগুলো নিজের জন্যে আবিষ্কার করতে পারলেই খুশি থাকবে সে।

এই জায়গাটায় আসতে অনেক সময় লেগেছে তার। অথচ একসময় জীবনের অর্থ খুঁজতে খুঁজতে হতাশ হয়ে পড়েছিল সে। বেঁচে থাকার মানে খুঁজে পাচ্ছিল না। প্রতিদিন মৃত্যুচিন্তা ভর করতো তার মাথায়।

একবছর আগের একটা দিনের কথা এখনও পরিস্কার মনে আছে তার…

একটা মোটা দড়ি নিয়ে তার অ্যাপার্টমেন্টে দাঁড়িয়ে ছিল সে। সিলিঙের কোথায় সেটা লাগালে সুবিধা হয় সেটা ভাবছিল। খুব শীঘ্রই আবিষ্কার করে, পুরো অ্যাপার্টমেন্টে ফাঁসিতে ঝোলার মত কোন জায়গার ব্যবস্থা করতে পারছে না। অবশেষে সিলিঙ ফ্যানের সাথে দড়িটা পেঁচায়। টান দিয়ে বোঝে তার ভার নিতে পারবে ফ্যানটা।

কোন পরিতাপ ছিল না ইশিগামির। তার মৃত্যুতে কারো কিছু এসে যাবে না। তার জীবনের কোন অর্থ নেই।

একটা টুলের ওপর দাঁড়িয়ে ফাসের ভেতর গলা ঢোকানোর চেষ্টা করছিল সে এমন সময় কলিংবেলটা বেজে উঠল।

ভাগ্যের কি খেলা!

দরজাটা খোলা উচিত। বলা যায় না, জরুরি কোন কাজেও আসতে পারে কেউ।

দরজা খুলে দু-জন মহিলাকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে। কিন্তু কিছুক্ষন পরেই বুঝতে পারে, তারা আসলে মা-মেয়ে। জানতে পারে উল্টোদিকের অ্যাপার্টেমেন্টে নতুন উঠেছে তারা।

সেদিন প্রথম দেখামাত্রই ইয়াসুকোর প্রেমে পড়ে গিয়েছিল সে। অমন অনুভূতি আগে কখনও হয়নি তার। আত্মহত্যার সব চিন্তা মাথা থেকে উবে যায় মুহূর্তেই। জীবনকে আবার উপভোগ করতে শুরু করে সে। সময় পেলেই তার কথা ভাবতো, একসাথে থাকলে তাদের জীবনটা কেমন হতে পারতো, কল্পনা করতো মনের চোখে। হঠাৎ করেই তার নিস্তরঙ্গ জীবনের সাথে জড়িয়ে যায় মিশাতো আর ইয়াসুকো।

তাকে একেবারে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়ে এনেছে তারা। এজন্যে সে তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। তাই যখন বিপদে পড়লো হানাওকারা, তাদের সাহায্য করাটাই স্বাভাবিক মনে হয়েছে তার কাছে। প্রতিদানের একটা সুযোগ বলে মনে হলো সেটাকে।

টোগাশির লাশটা দেখার পরেই একটা পরিকল্পনা জমাট বাঁধতে শুরু করে তার মাথায়। তাকে যেভাবেই হোক লাশটা লুকিয়ে ফেলতে হবে। কিন্তু পুরোপুরিভাবে লাশ গুম করে ফেলা খুব কঠিন কাজ। আর কোন একভাবে সেটা করলেও সব সময় সেটা আবিষ্কারের ভয়ে থাকতে হবে হানাওকাদের। কিন্তু তাদের সে কষ্ট দেখা সম্ভব হবে না তার পক্ষে।

একটা উপায়েই ইয়াসুকো আর তার মেয়ের জীবনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে সে-তাদের সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে হবে কেসটা থেকে। এমনভাবে সব সাজাবে যাতে প্রাথমিকভাবে সবাই ইয়াসুকোকে সন্দেহ করলেও পরে অন্যদিকে নজর দিতে বাধ্য হবে।

আর তখনই বাস্তুহারাদের ওখানে নতুন আসা ইঞ্জিনিয়ার লোকটার কথা মনে পড়ে ইশিগামির। তার অনুপস্থিতি কারো মনে কোন প্রশ্নের উদ্রেক ঘটাবে না।

দশ তারিখ ভোরে লোকটার সাথে কথা বলতে যায় সে। ইঞ্জিনিয়ার বরাবরের মতই অন্য বাস্তুহারাদের থেকে একটু দূরে বসে ছিল।

“আপনার জন্যে একটা কাজ আছে আমার কাছে,” ইশিগামি লোকটাকে বলেছিল। এরপরে সে নিজেকে একটা ইঞ্জিনিয়ার ফার্মের ম্যানেজার হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলে একটা প্রজেক্টের জন্য জরুরিভিত্তিতে একজন পরিদর্শক দরকার তাদের।

প্রথমদিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল ইঞ্জিনিয়ার লোকটা, “আমাকে কেন?” জিজ্ঞেস করেছিল সে।

“আসলে,” ইশিগামি ব্যাখ্যা করে বলেছিল, “আমাদের নিয়মিত পরিদর্শক হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেছে। কিন্তু পরিদর্শক ছাড়া কাজ শুরু করার অনুমতিও মিলছে না। এখন আর ইন্টারভিউয়ের ব্যবস্থা করার মত পরিস্থিতি নেই, তাই বাধ্য হয়েই…”

এরপর লোকটাকে অগ্রিম পঞ্চাশ হাজার ইয়েন দেওয়ার প্রস্তাব দিলে রাজি হয়ে যায় সে। তখন লোকটাকে নিয়ে টোগাশির ভাড়া করা ঘরটাতে যায় ইশিগামি। সেখানে আগে থেকেই বাছাই করে রাখা টোগাশির একটা শার্ট আর প্যান্ট পরতে দেয় ইঞ্জিনিয়ারকে।

সন্ধ্যার দিকে লোকটাকে নিয়ে মিজু স্টেশনে চলে আসে ইশিগামি। আগে থেকেই শিনোজাকি স্টেশন থেকে একটা সাইকেল চুরি করে রেখেছিল। সবচেয়ে নতুন সাইকেলটা বেছে নিয়েছিল সে, যাতে মালিক খুব তাড়াতাড়ি পুলিশে রিপোর্ট করে। আরেকটা সাইকেলেরও বন্দোবস্ত করে রেখেছিল। এটা ইকিনো স্টেশন থেকে চুরি করা একদম পুরনো তালাবিহীন একটা সাইকেল। নতুন সাইকেলটা ইঞ্জিনিয়ারকে চালাতে বলে ইশিগামি। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর একসাথে এডোগাওয়া নদীর তীরের নির্জন জায়গাটায় রওনা দেয় তারা।

এরপরে যা ঘটেছিল সেটা ভাবলে এখনও খারাপ লাগে তার। লোকটা জানতেও পারেনি তাকে কেন মেরে ফেলা হচ্ছে।

দ্বিতীয় খুনটার ব্যাপারে কাউকে জানতে দেয়া যাবে না- বিশেষ করে হানাওকাদের। এজন্যেই টোগাশিকে যে তারটা দিয়ে খুন করেছিল ইয়াসুকো সেটা ব্যবহার করে একই কায়দায় ইঞ্জিনিয়ার লোকটাকে খুন করে সে।

টোগাশির লাশটাকে বাসায় ছয় টুকরো করে কাটে সে। এরপর ওগুলো প্রতিটা আলাদা আলাদা ব্যাগে ভরে সুমাইদা নদীতে ফেলে দেয়। পাথর ভরে দিয়েছিল ব্যাগগুলোতে যাতে ভেসে না ওঠে। তিনরাত ধরে আলাদা আলাদা সময়ে কাজটা করে সে। পুলিশ যদি কোন একটা ব্যাগ আবিষ্কারও করে ফেলে তা-ও লাশের পরিচয় বের করতে পারবে না। কারণ টোগাশি সে সময়ের মধ্যেই মৃত বলে প্রমাণিত হয়ে যাবে। আর একজন মানুষ কখনও দু-বার মরতে পারে না।

একমাত্র ইউকাওয়া ছাড়া তার চালটা যে কেউ ধরতে পারেনি এ ব্যাপারে সে নিশ্চিত। আর এজন্যেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেয় ইশিগামি। অবশ্য এই পরিকল্পনাটা সে অনেক আগে থেকেই করে রেখেছিল, পর্যাপ্ত প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিল সেজন্যে।

কুসানাগিকে সব খুলে বলামাত্রই তাকে টোগাশির খুনের আসামি করা হবে। পুলিশও কোনভাবে প্রমাণ করতে পারবে না, তারা ভুল লোকের লাশ নিয়ে তদন্ত করেছে এতদিন।

এখন আর ফিরে যাবার কোন পথ নেই, চাইলেও সেটা পারবে না সে। সেরকম ইচ্ছেও নেই তার। মানাবু ইউকাওয়া যতই চেষ্টা করুক না কেন, কোর্টে তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ দেখাতে পারবে না।

এই খেলায় আমিই জয়ি, ভাবলো সে।

এই সময় একটা বেল বেজে উঠলে বুঝতে পারলো হোল্ডিং সেলে কেউ দেখা করতে এসেছে তার সাথে। কর্তব্যরত গার্ড চেয়ার থেকে উঠে গেলো।

কিছুক্ষণ আলোচনার পরে ভেতরে ঢুকলো এক লোক। ডিটেক্টিভ কুসানাগি। তার ঘরটার সামনে এসে অপেক্ষা করতে থাকলো সে। গার্ড এসে একবার ইশিগামির সারা শরীর তল্লাশি করে কুসানাগির হাতে তুলে দিলো তাকে।

তাকে নিয়ে হোল্ডিং সেল থেকে বেরিয়ে গেলো কুসানাগি। “ঠিক আছেন তো?” হঠাৎ করেই জিজ্ঞেস করলো ডিটেক্টিভ।

“সত্যি কথা বলতে কি, একটু ক্লান্ত লাগছে আমার। যত তাড়াতাড়ি আইনি ঝামেলা শেষ করা যায় তত ভালো হবে আমার জন্যে,” শান্তস্বরে উত্তর দিলো সে।

“চিন্তা করবেন না, এই শেষবারের মত জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে আপনাকে নিয়ে যাচ্ছি আমি। কেউ একজন এসেছে আপনার সাথে দেখা করতে।”

ভুরু কুঁচকে গেলো ইশিগামির। কে হতে পারে?

জিজ্ঞাসাবাদ করার ঘরটার সামনে গিয়ে দরজা খুলে দিলো কুসানাগি। মানাবু ইউকাওয়া বসে আছে ভেতরে। গম্ভীর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো সে।

সর্বশেষ বাধা, নিজেকে প্রস্তুত করতে করতে ভাবলো ইশিগামি।

X

বেশ খানিকটা সময় দুই বন্ধু চুপচাপ বসে থাকলো। একটা টেবিলের দু- পাশে মুখোমুখি হয়ে বসেছে তারা। কুসানাগি একটু দূরে দেয়ালে হেলান দিয়ে তাদের দিকে নজর রাখছে।

“তোমাকে একটু শুকনো দেখাচ্ছে,” ইউকাওয়া বলল।

“তাই? খাওয়া-দাওয়া তো ঠিকমতই করছি।”

“শুনে খুশি হলাম,” ঠোঁট ভিজিয়ে বলল ইউকাওয়া। “আচ্ছা, তোমাকে যে আধপাগল প্রেমিক বলছে সবাই এতে তোমার লজ্জা লাগছে না?”

“কিন্তু আমি তো সেটা নই!” ইশিগামি জবাব দিলো। “ইয়াসুকো হানাওকাকে গোপনে নিরাপত্তা দিয়ে আসছিলাম আমি এতদিন পুলিশকে সেটা বহুবার বলেছি।”

“আমি জানি তুমি এখনও তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছো। আর পুলিশকে কি গল্পো শুনিয়েছো সেটাও জানি।”

ইশিগামি বিরক্ত হয়ে কুসানাগির দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনাদের তদন্তে কি কোন কাজে লাগবে এই আলোচনা?”

কুসানাগি কিছুই বলল না।

“আমি যা জানি সব কুসানাগিকে খুলে বলেছি,” ইউকাওয়া বলল। “বলেছি, তুমি আসলে কি করেছো আর কাকে খুন করেছো।”

“তুমি কি ধারণা করো সে-ব্যাপারে যার সাথে খুশি আলাপ করতে পারো।”

“আমি ইয়াসুকো হানাওকাকেও বলেছি সব।”

ইশিগামির চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। কিন্তু একটু পরেই শুকনো একটা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো সে, “কোন পরিতাপ দেখেছো তার মধ্যে? আমার প্রতি কি সে কৃতজ্ঞ? শুনেছি, সে নাকি এমন ভাব করছে যেন ঐ শয়তানটা থেকে তাকে মুক্তি দেইনি আমি।”

ইশিগামির অভিনয় ক্ষমতা দেখে কুসানাগি অবাক না হয়ে পারলো না। কারো পক্ষে যে কোন কাজে এতটা ডুবে যাওয়া সম্ভব ইশিগামিকে না দেখলে সেটা বিশ্বাসই হত না তার।

“তুমি বোধহয় এখনও ভাবছো আসল সত্যটা কেউ জানে না। কিন্তু তোমার ধারণা ভুল,” ইউকাওয়া বলল। “মার্চের দশ তারিখে সুমাইদা নদীর তীর থেকে একজন লোক হারিয়ে যায়। বাস্তুহারাদের একজন। কোনভাবে যদি তার পরিচয় বের করতে পারি তাহলে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হবে। এরপর তাদের কারো ডিএনএ অ্যানালাইসিস করে এডোগাওয়া নদীর তীর থেকে পাওয়া লাশের আলামতের সাথে মিলিয়ে দেখবে ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট। আর সেটা মিলে গেলেই প্রমাণ হয়ে যাবে, ওটা টোগাশির লাশ নয়। আসল সত্যটা বেরিয়ে আসবে।“

“আমি জানি না তুমি কী বলছো,” ইশিগামি হেসে বলল। “কিন্তু যে লোকটার কথা বললে কেবলই, তার তো মনে হয় না কোন পরিবার আছে। আর থাকলেও সেটা খুঁজে বের করে পরীক্ষা করতে অনেক সময় লাগবে। ততদিনে কোর্টে আমার বিচার শুরু হয়ে যাবে। নিজেকে দোষিই দাবি করবো আমি। একবার রায় দেয়া হয়ে গেলে কেসও বন্ধ হয়ে যাবে। পুলিশও তখন কিছু করতে পারবে না।”

“তোমাকে আরেকটা কথা বলতে চাই আমি,” ইউকাওয়া বলল।

এক ভুরু উঁচু করে তার দিকে তাকালো ইশিগামি।

“তোমার মত একজন বন্ধুকে হারাতে হলে সত্যিই খুব কষ্ট পাবো আমি। তা-ও এরকম একটা কারণে।” ইউকাওয়ার চেহারা দেখে মনে হলো আসলেও খারাপ লাগছে তার।

কিছু বলতে গিয়েও বলল না ইশিগামি। কিছুক্ষন পরে কুসানাগির দিকে তাকিয়ে বলল সে, “ওনার বোধহয় আর কিছু বলার নেই। এখন কি ফিরে যেতে পারি আমি?”

ইউকাওয়ার দিকে তাকালো কুসানাগি। মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল সে। দরজা খুলে ইশিগামিকে নিয়ে বেরিয়ে এলো কুসানাগি। পেছনে ইউকাওয়া।

এ সময় সামনের হলওয়ে থেকে দু-জন মানুষকে তাদের দিকে এগিয়ে আসতে দেখলো ইশিগামি। একজন হচ্ছে জুনিয়র ডিটেক্টিভ কিশিতানি, তার সাথে একজন মহিলা। দূর থেকে মহিলার চেহারাটা বুঝতে পারলো না সে। কিন্তু একটু পরেই চিনতে পারলো। দ্রুত হয়ে গেলো তার হৃদস্পন্দন।

ইয়াসুকো হানাওকা!

“কি হচ্ছে এসব?” জুনিয়র ডিটেক্টিভের কাছে জানতে চাইলো কুসানাগি।

“স্যার, কিছুক্ষণ আগে মিস হানাওকা স্টেশনে যোগাযোগ করেন। আর আ-আপনি বিশ্বাস করতে…” তোতলাতে লাগল কিশিতানি।

“আরে, ঠিকমত কথা বলো।”

“আপনি বিশ্বাস করতে পারবেন না, কী বলেছেন তিনি!”

“শুধু তোমাকেই বলেছে?”

“না, চিফও ছিলেন সেখানে।”

কুসানাগি বিজয়ির দৃষ্টিতে তাকালো ইশিগামির দিকে। একদম ফ্যাকাসে হয়ে গেছে গণিত-শিক্ষকের মুখ। চোখ লাল করে ইয়াসুকোর দিকে তাকিয়ে আছে সে।

“আপনি এখানে কি করছেন?” প্রায় ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করলো ইয়াসুকোকে।

আর স্বাভাবিক থাকতে পারলো না ইয়াসুকো। অশ্রুর ধারা নেমে আসল চোখ বেয়ে। কান্নার দমকে কেঁপে উঠছে সারা শরীর। ইশিগামির সামনে এসে হাটু গেড়ে বসে পড়লো সে।

“আমি দুঃখিত… আমি আসলেও দুঃখিত। কিন্তু আমাদের বাঁচাতে গিয়ে যে কাজটা করেছেন আপনি….”

“কী বলছেন এসব? এখানে এসেছেন কেন? কি করছেন এখানে?!” ইশিগামিকে দেখে মনে হচ্ছে, পাগল হয়ে গেছে সে।

“আমি জানি আমাদের সুখি দেখতে চেয়েছিলেন আপনি। কিন্তু সেটা…সেটা অসম্ভব। আমি যা করেছি তার শাস্তি আমাকেই পেতে হবে। আমি দোষি, মি. ইশিগামি। আপনার সাথে আমারও শাস্তি হওয়া উচিত।” এই বলে ইশিগামির সামনে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে কাঁদতে থাকলো ইয়াসুকো।

উন্মাদের মত মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে পেছনে সরে গেলো ইশিগামি। কষ্টে ফেঁটে পড়বে যেন তার চেহারা। এরপরে হঠাৎ করে ঘুরে দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে একটা জান্তব চিৎকার করে উঠলো সে। অসহায় সেই চিৎকার শুনে যে কেউ বুঝতে পারবে, কতটা কষ্ট হচ্ছে তার।

দু-জন গার্ড ছুটে এলো তাকে ধরার জন্যে।

“ধরবে না ওকে,” ইশিগামি আর তাদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বলল ইউকাওয়া। “অন্তত ওকে কাঁদতে তো দিতে পারো তোমরা!”

ঘুরে ইশিগামির ঘাড়ে হাত রাখলো সে।

পাশে দাঁড়িয়ে ইশিগামিকে উন্মাদের মত চিৎকার করতে দেখলো কুসানাগি। তার মনে হচ্ছে, চিৎকারের চোটে গণিত শিক্ষকের আত্মাটাই বুঝি বের হয়ে আসবে।

***

1 Comment
Collapse Comments

what a story.. i became fan of Higashino !

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *