দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১৩

অধ্যায় ১৩

কিনশিকো স্টেশন থেকে ক্লাব ম্যারিয়ান পাঁচ মিনিটের দূরত্বে। একটা বড় বিল্ডিঙের ছয় তলায় ক্লাবটা। আশেপাশে আরো কয়েকটি নামকরা ক্লাব আছে এদিকে। বিল্ডিঙের লিফটটা পুরনো, ওপরে ওঠার সময় ক্যাঁচকোঁচ আওয়াজ করে।

কুসানাগি তার হাতের ঘড়িটার দিকে তাকালো একবার, কেবল সন্ধ্যা সাতটা বাজছে। জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্যে মোক্ষম সময়। খুব বেশি কাস্টমার থাকার কথা নয় এখন। অবশ্য এরকম জায়গা সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে।

লিফট থেকে নেমে অবাক হয়ে গেলো সে, ভেতর থেকে হৈ-হট্টগোলের আওয়াজ ভেসে আসছে। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে গেলো। সারি করে প্রায় বিশটা টেবিল পাতা আছে, যার অর্ধেকই ভরে গেছে এরমধ্যে। কাস্টমারদের কাপড়চোপড়ের ধরণ দেখে মনে হচ্ছে বেশিরভাগই মালদার পার্টি।

“এর আগে গিনজায় এক ক্লাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে গিয়েছিলাম আমি,” কিশিতানি তার কানে ফিসফিস করে বলল। “সেখানকার যে হেড হোস্টেস ছিলেন তিনি বলেছিলেন অর্থনৈতিক মন্দার পর থেকে তাদের দোকানে লোকজনের যাতায়াত হঠাৎ করেই খুব কমে গেছে, এখন বুঝতে পারছি সে লোকগুলো কোথায় উধাও হয়েছিল। এখানে।”

“আমার সেরকমটা মনে হচ্ছে না,” কুসানাগি বলল। “গিনজাতে উঁচু পর্যায়ের লোকের যাতায়াত বেশি, আর একবার ভালো জিনিসের স্বাদ পেলে তার অভ্যাস ত্যাগ করা বেশ কঠিন। তা সে যতই খারাপ সময় আসুক না কেন।”

একজন ওয়েটারকে ডাক দিলো সে, কালো রঙের স্যুট পরে আছে লোকটা। তাকে বলল ম্যানেজারের সাথে কথা বলতে চায় তারা। আন্তরিক হাসিটা উধাও হয়ে গেলো ওয়েটারের মুখ থেকে, তাদের সেখানে রেখে পেছনের দিকে চলে গেলো সে।

কিছুক্ষণ পর আরেকজন ওয়েটার এসে তাদের একটা টেবিলে বসতে অনুরোধ করলো।

“কিছু নেবেন আপনারা?” জিজ্ঞেস করলো সে।

“আমার জন্যে একটা বিয়ার,” কুসানাগি অর্ডার করলো।

“সেটা কি ঠিক হবে?” ওয়েটার চলে যাওয়ার পরে জিজ্ঞেস করলো কিশিতানি। “কাজে এসেছি আমরা।”

“কিছু না খেলে কাস্টমাররা সন্দেহ করবে।”

“তাহলে তো চা নিলেও হত।”

“বারে এসে চা খাওয়ার কথা শুনেছো কখনও?”

কাজের সময় মদ্যপান উচিত কিনা, সেটা নিয়েই তর্ক করছিল তারা এমন সময় রূপালি রঙের ড্রেস পরা সুন্দরি এক মহিলার আগমন ঘটলো তাদের টেবিলে। বয়স চল্লিশের আশেপাশে হবে, চেহারায় ভারি মেকআপ। চুলগুলো খোপা করে রাখা। মুগ্ধ চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকলো কুসানাগি, একটু শুকনো গড়নের কিন্তু সুন্দরি মহিলা।

“স্বাগতম,” তিনি বললেন। “আপনারা আমার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলেন?” মৃদু হেসে প্রশ্নটা করলেন তিনি।

“পুলিশের লোক আমরা,” নিচু গলায় বলল কুসানাগি।

কিশিতানি বুক-পকেট থেকে ব্যাজটা বের করার আগেই হাত ধরে তাকে থামালো সে। “প্রমাণ দরকার আপনার?”

“তার প্রয়োজন দেখছি না,” এই বলে কুসানাগির পাশের খালি চেয়ারটাতে বসে একটা বিজনেস কার্ড বের করে টেবিলের ওপর রাখলো। সেখানে লেখা : সোনোকো শিশুমুরা।

“আপনিই এখানকার হেড হোস্টেস?”

“বলতে পারেন,” মোহনীয় একটা হাসি দিয়ে বলল শিশুমুরা।

“ব্যবসা ভালোই চলছে দেখি আপনাদের,” কুসানাগি আশেপাশে

তাকিয়ে মন্তব্য করলো।

“দেখে যতটা মনে হচ্ছে ততটা ভালো না, আবার খারাপও না।”

“দুই ডিটেক্টিভই মাথা নাড়লো কথাটা শুনে।

“যেকোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে ক্লাবটা। সায়োকো এখান থেকে চলে গিয়ে লাঞ্চ শপটা দিয়ে ভালোই করেছে।”

কুসানাগির অবশ্য মনে হচ্ছে না, ব্যবসার অবস্থা অতটা খারাপ। তা না-হলে শিশুমুরার মত একজন মহিলার থাকার কথা নয় এখানে।

“এর আগেও আমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে লোক এসেছিল বোধহয়?”

“কয়েকবার এসেছিল, প্রত্যেকবারই মি. টোগাশির ব্যাপারে জানতে চেয়েছে। আপনারাও কি সেজন্যেই এসেছেন?”

“এভাবে আপনার সময় নষ্ট করার জন্যে দুঃখিত।”

“আগে যারা এসেছিল তাদেরকে যা বলেছি, আপনাকেও সেটাই বলবো আমি। পুরো ব্যাপারটার জন্যে যদি ইয়াসুকোকে দোষি ভাবেন আপনারা, তবে ভুল পথে এগোচ্ছেন। খুনের কোন মোটিভ নেই তার।”

“না,” হাত নেড়ে বলল কুসানাগি। “ইয়াসুকোর ওপর কিছু চাপাচ্ছি না আমরা। আসলে তদন্তের কাজটা ঠিকমতো এগোচ্ছে না এখনও, তাই আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করতে চাইছি।”

“নতুন করে? হুম,” একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল হেড হোস্টেস।

“টোগাশি এখানে পাঁচই মার্চ একবার এসেছিল, এরকমটাই তো বোধহয় জানিয়েছিলেন?”

“হ্যা। এতদিন পরে তাকে দেখে অবাক হয়ে যাই আমি।”

“তাকে আগে থেকেই চিনতেন নাকি?”

“দু-একবার দেখেছিলাম। আকাসাকাতে ইয়াসুকোর সাথে কাজ করতাম আমি। সেখান থেকেই চিনি আমি তাকে। তখনকার দিনে ব্যাপক খরচের হাত ছিল তার। আর দেখতেও বেশ হ্যান্ডসাম ছিল।’

তার কথা বলার ধরণ থেকে কুসানাগি ধারণা করলো মার্চে যে টোগাশির সাথে দেখা হয়েছিল শিশুমুরার তার সাথে আগের টোগাশির রাত-দিন তফাৎ।

“এখানে এসে ইয়াসুকো হানাওকার খোঁজ করছিল টোগাশি, তাই তো?”

“আমার ধারণা সে সবকিছু মিটমাট করে ফেলতে চাচ্ছিল। কিন্তু তবুও তাকে কিছু বলিনি আমি। কারণ আমি জানি বেচারি ইয়াসুকোকে কি রকম অত্যাচার করতো সে। তাই মুখ বন্ধ রাখাটাই ঠিক হবে ভেবেছিলাম। কিন্তু অন্য এক মেয়ে সব বলে দেয় টোগাশিকে। ইয়ানোজাওয়াদের লাঞ্চ শপটার ব্যাপারে জানতো সে। আর কথা বের করার ব্যাপারে বেশ পারদর্শি ছিল লোকটা।”

“বুঝতে পেরেছি,” মাথা নেড়ে বলল কুসানাগি। দীর্ঘদিন হোস্টেস হিসেবে কাজ করার পর হুট করে উধাও হয়ে যাওয়া একজন মহিলার পক্ষে আসলেও কঠিন।

“আচ্ছা, কুনিয়াকি কুডো নামে কেউ এখানে প্রায়ই আসে নাকি?” প্রশ্ন করার ধরণ পাল্টিয়ে বলল কুসানাগি।

“মি. কুডো? প্রিন্টিং কোম্পানির মি. কুডো?”

“জি।”

“মাঝে মাঝেই আসেন। তবে ইদানিং কমে গেছে তার আসা,” শিশুমুরা একদিকে ঘাড় কাত করে বলল। “কেন? কিছু করেছেন নাকি তিনি?”

“না, না। তবে আমরা শুনেছি তিনি নাকি ইয়াসুকো হোস্টেস থাকাকালীন এখানকার বাঁধা কাস্টমার ছিলেন?”

মাথা নেড়ে সায় জানাল শিশুমুরা। “জি, ঠিকই শুনেছেন। ইয়াসুকোর সাথে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল তার।”

“ক্লাবের বাইরেও দেখা-সাক্ষাত করতেন নাকি তারা?”

“আসলে…” আবারও ঘাড় কাত করে বলল মহিলা, “এখানকার অনেকের সেরকম ধারণাই ছিল। তবে আমি মনে করি তাদের সম্পর্কটা ক্লাবেই শুরু আর ক্লাবেই শেষ।”

“কেন?”

“ইয়াসুকো যখন আকাসাকাতে ছিল তখন তারা সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ ছিল। কিন্তু এখানে আসার পরে টোগাশির সাথে ইয়াসুকোর ঝামেলাটা বোধহয় ধরে ফেলেন মি. কুডো। এরপর থেকে ইয়াসুকোর কাস্টমারের চেয়ে বন্ধুর ভূমিকাই বেশি পালন করতেন তিনি। এর চেয়ে বেশিদূর গড়ায়নি তাদের সম্পর্কটা।”

“কিন্তু মিস হানাওকার ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবার পরে তো তারা দেখা- সাক্ষাত শুরু করতে পারে…”

জোরে মাথা ঝাঁকিয়ে না করে দিলো শিশুমুরা। “মি. কুডো ওধরণের লোকই নন, ডিটেক্টিভ। ইয়াসুকোকে তিনি সবসময়ই টোগাশির সাথে সম্পর্কটা ভালো করে ফেলার পরামর্শ দিতেন। এরপরে যদি তিনি নিজেই ওপথে পা বাড়ান তাহলে তো মনে হবে, গোড়া থেকেই তেমন ইচ্ছে ছিল তার। আসলে ইয়াসুকোর প্রতি শারীরিকভাবে আকৃষ্ট ছিলেন না তিনি। ইয়াসুকোর ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবার পরেও তাদের মধ্যে সম্পর্কের ধরণটা পাল্টায়নি। তাছাড়া মি. কুডো তো নিজেও বিবাহিত।”

তার মানে, মি. কুডোর স্ত্রী যে মারা গেছে এক বছর আগে এ ব্যাপারে সোনোকো শিশুমুরার কোন ধারণা নেই। কুসানাগি আর আগ বাড়িয়ে তাকে একথা জানালো না।

মি. কুডো আর ইয়াসুকো সম্পর্কে শিশুমুরা যা যা বলল তার বেশিরভাগই সঠিক বলে মনে হলো তার কাছে। দু-জন মানব-মানবীর মধ্যে সম্পর্কের ধরণটা একজন হোস্টেসের চেয়ে ভালো আর কে বলতে পারবে? আর কুসানাগির নিজেরও অনেকটা শিশুমুরার মতই ধারণা। কুডো আসলেও নির্দোষ। তার মানে প্রসঙ্গ বদলানোর সময় এসে গেছে।

পকেট থেকে একটা ছবি বের করে হেড হোস্টেসকে দেখালো সে, “এনাকে চেনেন?”

ছবিটা টেটসুয়া ইশিগামির। একদিন স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে এটা তোলে কিশিতানি। ছবিতে দূরে কোথাও তাকিয়ে আছে সে। ইচ্ছে করেই পাশ থেকে তোলা হয়েছে ছবিটা, যাতে করে ধরা পড়ার সম্ভাবনা না থাকে।

শিশুমুরা ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “কে এটা?”

“এনাকে চেনেন না আপনি?

“না। এই ক্লাবে কখনও আসেনি সে।”

“ওনার নাম ইশিগামি। পরিচিত লাগছে নামটা?”

“মি. ইশিগামি…”

“হয়তো মিস হানাওকা কিছু বলেছে আপনাকে তার ব্যাপারে?”

“দুঃখিত, সেরকম কিছু মনে করতে পারছি না।“

“একটা হাইস্কুলের টিচার তিনি। কোন টিচার সম্পর্কে কিছু বলেছিল সে আপনাকে?”

“না,” শিশুমুরা উত্তর দিলো। “তার সাথে প্রায়ই এটাসেটা নিয়ে কথা হয় আমার, কিন্তু এরকম কিছু বলেনি আমাকে।”

“ইয়াসুকো অন্য কারো সাথে কোন সম্পর্কের ব্যাপারে কিছু বলেছিল কি?”

প্রশ্নটা শুনে একটা শুকনো হাসি দিলো শিশুমুরা

“ সেদিন যে ডিটেক্টিভটা এসেছিলেন তিনিও এই প্রশ্নটা করেছিলেন। তাকে যে উত্তর দিয়েছি আপনাকেও সেটাই বলছি-ইয়াসুকো আমাকে সেরকম কিছুই বলেনি। হয়তো কারো সাথে সম্পর্ক আছে তার, কিন্তু আমাকে সে ব্যাপারে জানাতে চাইছে না এখনই। কিন্তু আমার মনে হয় না এরকম কিছু ঘটছে। কারণ মিশাতোকে ঠিকমত বড় করতেই হিমশিম খাচ্ছে সে। এ মুহূর্তে এসব প্রেম-পিরিতির ভুত তার মাথায় চাপবে বলে মনে হয় না। আর এটা যে শুধু আমার একার ধারণা তা নয়, সায়োকোও এরকমটাই ভাবে।”

চুপচাপ মাথা নাড়লো কুসানাগি। সে অবশ্য আশাও করেনি এখানে এসে ইশিগামির ব্যাপারে কিছু জানতে পাবে। তাই বিশেষ হতাশ হলো না। কিন্তু ইয়াসুকোর জীবনে যদি এখন কেউ না থেকে থাকে, তাহলে গোটা ব্যাপারটায় তাকে সাহায্য করলো কে?

এসময় একজন কাস্টমার ভেতরে ঢুকলে আগ্রহ নিয়ে সেদিকে তাকালো শিশুমুরা।

“আপনি বলছিলেন, ইয়াসুকোর সাথে প্রায়ই কথা হয় আপনার? শেষ কবে কথা বলেছিলেন তার সাথে?”

“যেদিন মি. টোগাশির খবরটা টিভিতে দেখলাম, সেদিন। খুবই অবাক হয়েছিলাম আমি ওটা দেখে। এটা অবশ্য আগেও জানিয়েছি আমি আপনাদের।”

“মিস হানাওকার গলা কেমন শোনাচ্ছিল তখন?”

“স্বাভাবিকই বলতে গেলে। ও আমাকে বলেছিল, পুলিশ নাকি ইতিমধ্যেই তার সাথে কথা বলে গেছে।”

আমাদের সাথেই কথা বলেছিলেন তিনি, মনে মনে বলল কুসানাগি। “আচ্ছা, আপনি কি তাকে জানাননি, টোগাশি তার খোঁজে এখানে এসেছিল?”

“না, বলিনি। আসলে কিভাবে বলবো বুঝতে পারছিলাম না। মন খারাপ হয়ে যেত বেচারির।”

তার মানে ইয়াসুকো হানাওকা এটা জানতো না, টোগাশি তার খোঁজ করছিল। আর সেটা না জানলে খুনের পরিকল্পনা করাও সম্ভব না তার পক্ষে।

“একবার ভেবেছিলাম বলবো, কিন্তু সেদিন তাকে এত হাসিখুশি শোনাচ্ছিল যে বলতে পারিনি।”

“সেদিন মানে?” একটু খটকা লাগলো কুসানাগির। “আপনি কি শেষবার যেদিন ইয়াসুকোর সাথে কথা বলেছিলেন, টোগাশিকে নিয়ে খবরটা দেখার পর, ঐদিনের কথাই বলছেন? নাকি অন্য কোনদিন?”

“ওহ্, ঠিক ধরেছেন। আমি এর আগের একদিনের কথা বলছিলাম। টোগাশির সাথে দেখা হবার চার-পাঁচদিন পরে হবে সেটা। ফোন করে একটা মেসেজ দিয়ে রেখেছিল সে। তাই কলব্যাক করেছিলাম আমি।”

“কবেকার ঘটনা সেটা?”

“একটু দাঁড়ান,” এই বলে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করলো শিশুমুরা। কুসানাগি ভেবেছিল, কললিস্ট দেখবেন তিনি কিন্তু সেটা না করে ক্যালেন্ডার বের করে দেখতে লাগলেন হেড হোস্টেস। কিছুক্ষণ পরে কুসানাগির দিকে তাকিয়ে বললেন, “মার্চের দশ তারিখ।”

“মার্চের দশ তারিখ?” অবাক হয়ে একে অন্যের দিকে তাকালো কুসানাগি আর কিশিতানি। “আপনি নিশ্চিত?”

“হ্যা।”

সেদিনই খুন হয়েছিল শিনজি টোগাশি।

“আপনার কি মনে আছে কখন ফোন করেছিলেন তাকে?”

“কাজ শেষে বাসায় গিয়ে ফোন দিয়েছিলাম। রাত একটার দিকে হবে। সে আমাকে বারোটার আগে ফোন করে না পেয়ে মেসেজ দিয়ে রেখেছিল। সে সময় ক্লাবে ব্যস্ত ছিলাম আমি।”

“কতক্ষণ কথা বলেছিলেন আপনারা?”

“আধঘন্টা তো হবেই। এরকম লম্বা সময় ধরেই গল্প করি আমরা।”

“তার মোবাইল ফোনে কল দিয়েছিলেন আপনি?”

“না, বাসার ফোনটাতে।”

“আশা করি কিছু মনে করবেন না, এভাবে বলছি দেখে। আপনি বলছেন, রাত একটায় ফোন দিয়েছিলেন, তার মানে তো ততক্ষণে এগারো তারিখ হয়ে গিয়েছিল, তাই না?”

“জি, ওভাবে চিন্তা করলে এগারো তারিখই হবে।”

ফোন করে কি রকম মেসেজ দিয়ে রেখেছিলেন তিনি?”

“শুধু বলেছিল, আমার সাথে কথা বলতে চায়, কাজ শেষে যাতে তাকে ফোন দেই।”

“কি নিয়ে কথা বলেছিলেন আপনারা?“

“সেরকম কিছু না। একটা শিয়াটসু ম্যাসাজ পার্লারের নাম জানতে চাইছিল সে, যেখানে আমি একবার থেরাপির জন্যে গিয়েছিলাম। পিঠে ব্যথার জন্যে।“

“শিয়াটসু? আচ্ছা। এরকম ব্যাপার নিয়ে আগেও কথা হয়েছে নাকি আপনাদের মধ্যে?”

“হ্যা, তা তো হয়েছেই। প্রায়ই এরকম অদরকারি ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে কথা বলি আমরা। আমার ধারণা কথা বলে সময় কাটানোর জন্যেই ফোন দেয় সে।”

“প্রতিবারই কি এত রাত করে ফোন দেয়?”

“প্রতিবারই না, কিন্তু ওরকম সময়ে ফোন করা ওর পক্ষে অস্বাভাবিক কিছু না। বেশিরভাগ সময়ে আমার ছুটির দিনগুলোতেই কথা হয়, কিন্তু সেদিন সে-ই আগে ফোন দিয়েছিল, তাই…

“আচ্ছা,” মাথা নেড়ে বলল কুসানাগি। শিশুমুরাকে তার সময়ের জন্যে ধন্যবাদ জানিয়ে কিশিতানিকে ওঠার জন্যে ইঙ্গিত করলো। কিন্তু ক্লাব থেকে বের হয়ে যাবার সময় কুসানাগি বুঝতে পারলো, তথ্যগুলো জেনে সন্তুষ্ট হতে পারেনি সে।

কিনশিকো স্টেশনে যাবার পথে সে ব্যাপারেই চিন্তা করতে লাগল কুসানাগি। শিশুমুরা শেষ যে ফোন কলটার কথা বলেছিল সেটাই খোঁচাচ্ছে তাকে বেশি। ইয়াসুকো হানাওকা দশ তারিখ মধ্যরাতের পর তার বাসার ফোন থেকেই কথা বলছিল। তার মানে, ততক্ষনে বাসায় ফিরে এসেছিল সে।

ডিপার্টমেন্টে অনেকের ধারণা খুনটা দশ তারিখ রাত এগারটার পরে কোন সময়ে করা হয়েছে। আর ইয়াসুকোই যদি খুনটা করে থাকে, তাহলে কারাওকে বারে যাবার পরেই সেটা ঘটেছে। কিন্তু খুব কম লোকই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করছে এই ধারণাটা। কারণ ঐ সময়ে যদি ইয়াসুকোকে খুনটা করতে হত, তাহলে কারাওকে বার থেকে বের হয়েই ঘটনাস্থলে ছুটতে হত তাকে। কিন্তু শিশুমুরার সাথে ফোনে কথা বলতে হলে তো তাকে মধ্যরাতের আগেই বাসায় পৌছুতে হবে। সেটা সম্ভব না, কারণ বাস কিংবা ট্রেনে করে এত তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরা যেত না। আর খুব কম অপরাধিই ট্যাক্সি ব্যবহার করে। টোগাশির লাশটা যেখানে পাওয়া গেছে তার আশেপাশে ট্যাক্সি খুঁজে পাওয়াও মুশকিল।

তাছাড়া ঐ সাইকেলের ব্যাপারটা তো আছেই। ওটা সকাল দশটার পরে চুরি করা হয়েছিল। ঘটনা অন্যদিকে ঘোরানোর জন্যে ইয়াসুকোই যদি কাজটা করে থাকে, তাহলে শিনোজাকি স্টেশনেও যেতে হয়েছিল তাকে। সেটা যদি না হয়, মানে টোগাশি নিজেই সাইকেলটা চুরি করে, তাহলে আরেকটা প্রশ্ন থেকে যায় : সাইকেল চুরির পর থেকে রাতে ইয়াসুকোর সাথে দেখা করার আগপর্যন্ত কি করছিল টোগাশি?

কুসানাগি আগেই ভেবে দেখেছে, খুনটা যদি দশটার পরে হয়ে থাকে তাহলে কারাওকে বার থেকে বের হবার পরে কোন অ্যালিবাই তৈরির প্রয়োজন নেই ইয়াসুকোর। আর অ্যালিবাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করলেও উত্তর তৈরিই থাকবে, কারণ শিশুমুরার সাথে ফোনে কথা বলেছিল সে।

আর এ ব্যাপারটাই বেশি খোঁচাচ্ছে তাকে।

“ইয়াসুকো হানাওকার সাথে প্রথম যেদিন কথা বলেছিলাম আমরা সেদিনের কথা মনে আছে?” হঠাৎ কিশিতানিকে জিজ্ঞেস করলো কুসানাগি।

“হ্যা, কেন?”

“তোমার কি মনে আছে, কিভাবে তাকে অ্যালিবাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম আমি? সে দশ তারিখে কোথায় ছিল এটা কি জিজ্ঞেস করেছিলাম?”

“কিভাবে জিজ্ঞেস করেছিলেন এটা ঠিক মনে নেই, কিন্তু ওরকমই কিছু একটা বলেছিলেন।”

“উত্তরে সে বলেছিল, ঘটনার দিন বিকেলে কাজ থেকে ফিরে মেয়েকে নিয়ে বাইরে গিয়েছিল রাতে। সিনেমা দেখার পর একটা কারাওকে বারে যায় তারা, মাঝখানে একটা নুডলস শপে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে। তার মানে রাত এগারোটা নাগাদ বাসায় ফেরার কথা তাদের, তাই না?”

“জি।”

“আর এইমাত্র হেড হোস্টেসের কাছ থেকে আমরা জানলাম সেদিন মধ্যরাতের পর দু-জনের মধ্যে কথা হয়েছিল। তবে আগে থেকে ফোন করে মেসেজ দিয়ে রেখেছিল ইয়াসুকো।”

“জি?”

“তাহলে সেদিন যখন তাকে অ্যালিবাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করলাম আমি, ফোনকলের কথা উল্লেখ করলো না কেন সে?”

“প্রয়োজন বোধ করেনি হয়তো।”

“কেন করেনি?” কুসানাগি থেমে জিজ্ঞেস করলো কিশিতানিকে। “ইয়াসুকো যদি বাসার ফোনটা ব্যবহার করেই থাকে তাহলে তো সেটা প্রমাণ করে দিচ্ছে, ঐ সময়ে সে বাসাতেই ছিল।”

“তা ঠিক। কিন্তু আপনি তার তরফ থেকে চিন্তা করুন। সিনেমা হল আর কারাওকে বারের কথা বলাই হয়তো যথেষ্ট মনে হয়েছিল তার কাছে। আমার ধারণা, আপনি যদি তাকে জিজ্ঞেস করতেন, বাসায় ফেরার পরে সে কি কি করেছিল, তাহলে অবশ্যই ফোনকলের ব্যাপারটা জানতে পারতেন।”

“তোমার কি মনে হয়, শুধু এই কারণেই ফোনকলের কথাটা বলেনি সে?”

“আপনার কাছে অন্য কোন কারণ আছে নাকি? সে যদি বানিয়ে কোন অ্যালিবাইয়ের কথা বলতো তাহলেও একটা কথা ছিল, কিন্তু এখানে তো সেরকম কিছু ঘটেনি। একটা অ্যালিবাইয়ের কথা বলতে না-হয় ভুলেই গেছে সে। এটা নিয়ে এত গবেষণা করার কি আছে?”

কুসানাগি তার পার্টনারের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে হাটতে শুরু করলো। এর সাথে কথা বলে লাভ নেই, মনে মনে বলল। শুরু থেকেই ইয়াসুকোকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টায় আছে সে।

ইউকাওয়ার সাথে দুপুরের আলোচনার কথা মনে পড়লো। তার বন্ধু বলছিল, ইশিগামি যদি এসবের সাথে জড়িত থেকে থাকে তাহলে খুনটা পূর্বপরিকল্পিত হবার সম্ভাবনা কম। আর এ ব্যাপারে একরকম নিশ্চিতই মনে হচ্ছিল তাকে।

“খুনটা যদি পূর্বপরিকল্পিত হত, তাহলে সিনেমা হলের ঘটনাটাকে অ্যালিবাই বানাতো না সে,” ইউকাওয়া বলছিল। “কারণ আগাগোড়াই এই অ্যালিবাইটা নড়বড়ে, ইশিগামির মত মানুষের সেটা ভালোমতই বোঝার কথা। কিন্তু আরেকটা বড় প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ইয়াসুকোকে সাহায্য করার পেছনে ইশিগামির কি কারণ থাকতে পারে? বুঝলাম টোগাশি তার প্রতিবেশিকে জ্বালাতন করছিল, আর এজন্যে তার কাছে সাহায্য চায় সে। কিন্তু খুনোখুনির কি দরকার ছিল? আরো তো সমাধান আছে।”

“এ প্রশ্ন কেন? তাকে বিপজ্জনক মনে হয় না তোমার?”

“সেদিক ভেবে কথাটা বলছি না আমি। একটু চিন্তা করে দেখো, কাউকে খুন করা কিন্তু কোন যৌক্তিক সমাধান নয়। সমস্যা আরো বাড়ায় এটা। এ ধরণের কাজ ইশিগামি করবে বলে মনে হয় না।” এরপরে কিছুক্ষণ চুপ করে আরেকটা কথা যোগ করে ইউকাওয়া, “অবশ্য উল্টোটাও ঘটতে পারে। ইশিগামির কাছে যদি মনে হয়, খুনটাই একমাত্র যৌক্তিক সমাধান তাহলে সেই ঘৃণ্য কাজটা করতে তার হাত কাঁপবে না।”

“তো, তোমার কি মনে হয়, এসবের সাথে কিভাবে জড়িত ইশিগামি?”

“সে যদি কোনভাবে জড়িত থাকে তবে আমি বলবো, খুনটা সে নিজহাতে করেনি। সেটার ব্যাপারে পরে জেনেছিল সে। তাহলে ঘটনাটা সামাল দেয়ার জন্যে তার হাতে আর কি উপায় থাকলো? পুরো ঘটনাটা যদি লুকোনো সম্ভব হত, তবে সেটাই করতো সে। আর সেটা অসম্ভব হলে তার মূল চেষ্টা থাকবে তদন্তের কাজে বাঁধার সৃষ্টি করা, পুলিশকে বিভ্রান্ত করা। ইয়াসুকো হানাওকা আর তার মেয়েকে হয়তো সে নির্দেশ দিয়ে দিয়েছে কিভাবে ডিটেক্টিভদের সাথে কথা বলতে হবে, এ ব্যাপারে। কখন কোন প্রমাণ তাদের হাতে তুলে দিতে হবে এটাও বলে দেয়ার কথা। আসলে তার রচিত নাটকের স্ক্রিপ্টই আউড়াচ্ছে মা-মেয়ে।”

ইউকাওয়ার কথা মেনে নেয়ার অর্থ হচ্ছে, ইয়াসুকো হানাওকা আর মিশাতো এতদিন তাদেরকে যা যা বলেছে তা সবই ইশিগামির বুদ্ধি। পর্দার পেছন থেকে সে-ই কলকাঠি নাড়ছে সবকিছুর

“অবশ্য,” ইউকাওয়া শেষের দিকে বলেছিল। “পুরোটাই আমার ভুল ধারণা হতে পারে। ইশিগামি হয়তো এসবের সাথে জড়িতই নয়। আমি মনেপ্রাণে আশা করছি যাতে সে এসবের সাথে জড়িত না হয়।”

ইউকাওয়ার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যা বলছে সেটা আসলেই চাইছিল সে। কারণ এতদিন পরে হারানো বন্ধুকে ফিরে পেয়ে এত দ্রুত আবার তাকে চিরতরে হারাতে চায় না।

কিন্তু ইউকাওয়া যে ইশিগামিকে শুরু থেকেই সন্দেহ করছিল সে-কথা কুসানাগিকে বলেনি। তবুও ইউকাওয়ার ওপর ভরসা আছে তার। কারণ সহজে ভুল হয় না ডিটেক্টিভ গ্যালেলিওর।

ইয়াসুকো দশ তারিখ রাতের অ্যালিবাইটার কথা বলল না কেন তাদের? খুন করার পরে যদি অ্যালিবাইটা তৈরি করে থাকে সে, তবে তো আগ্রহ নিয়ে সেটা জানানোর কথা তার। কিন্তু ইশিগামি যদি তাকে না বলে দেয় তবে ভিন্ন কথা। হয়তো প্রয়োজনের চেয়ে বেশি একটা কথা বলাও নিষেধ আছে তার।

হঠাৎ করে আরেকটা কথা মনে পড়লো। কুসানাগি যখন ইয়াসুকোর টিকেটের ছেঁড়া অংশের কথা ইউকাওয়াকে জানিয়েছিল তখন অদ্ভুত একটা সতর্কবাণী দিয়েছিল সে। বলেছিল- ‘একজন সাধারণ অপরাধি কিন্তু টিকেট নিয়ে অতটা সাবধানি হবে না। ওগুলো যদি আসলেও অ্যালিবাই তৈরি করার জন্যে কেনা হয়ে থাকে আর ওরকম সাধারণ একটা জায়গায় রাখা থাকে, তাহলে বুঝতে হবে, যার বিরুদ্ধে লাগতে যাচ্ছো তোমরা সে কোন সাধারণ অপরাধি নয়।’

X

ছয়টা পার হয়ে গেছে, অ্যাপ্রনটা খুলে রাখবে ইয়াসুকো, এমন সময় একজন কাস্টমার ঢুকলো বেন্টেন-টেইয়ে। “স্বাগতম,” বলেই জমে গেলো। লোকটাকে আগেও দেখেছে সে। ইশিগামির পুরনো বন্ধু ইনি।

“মনে আছে আমার কথা?” হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলো সে। “এখানে আগেও এসেছি আমি, ইশিগামির সাথে।”

“জি, মনে আছে,” আগের হাসিটা আবার ফিরে আসলো ইয়াসুকোর মুখে।

“এদিকেই এসেছিলাম কাজে আর আপনাদের দোকানটার কথা মনে পড়লো। সেদিন যেটা নিয়েছিলাম, খুব ভালো ছিল খেতে।”

“শুনে খুশি হলাম।”

“আজকে… আজকে স্পেশাল প্যাকেজটাই নেবো। হবে না? সেদিন তো শেষ হয়ে গিয়েছিল।”

“অবশ্যই,” এই বলে পেছনে ঘুরে একটা স্পেশাল প্যাকেজের অর্ডার দিলো ইয়াসুকো। অ্যাপ্রনের ফিতাগুলো খুলতে শুরু করলো সে।

“আপনি কি বাসায় যাচ্ছিলেন এখন?”

“জি, ছটা পর্যন্ত ডিউটি আমার।”

“ওহ্, আচ্ছা। সরাসরি অ্যাপার্টমেন্টেই যাবেন এখন?”

“হ্যা।”

“সাথে গেলে কিছু মনে করবেন? একটু কথা ছিল আপনার সাথে।“

“আমার সাথে?”

“হ্যা, আসলে…একটা উপদেশ দরকার আমার। ইশিগামির ব্যাপারে, “ হেসে বলল লোকটা।

অস্বস্তিতে পড়ে গেলো ইয়াসুকো। “তার সাথে আসলে অত ভালো পরিচয় নেই আমার,” অবশেষে বলল।

“আপনার বেশি সময় নষ্ট করবো না আমি। হাটতে হাটতেই কথা বলবো,” নরম সুরে বললেন ইউকাওয়া।

“ঠিক আছে, বেশিক্ষণ না তাহলে,” লোকটাকে এড়ানোর কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে বলল ইয়াসুকো।

লোকটা নিজের পরিচয় দিয়ে বলল, সে ইম্পেরিয়াল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞানের একজন অধ্যাপক। ইশিগামিও ওখান থেকেই পড়াশোনা করেছে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই লাঞ্চবক্সটা তৈরি হয়ে গেলে একসাথে দোকান থেকে বেরিয়ে আসল দু-জন। ইয়াসুকো সাইকেল নিয়ে এসেছিল কাজে, কিন্তু এখন সেটা পাশে নিয়ে হাটতে লাগল। কিছুক্ষণ পরেই তার হাত থেকে সাইকেলটা নিয়ে নিলো ইউকাওয়া। ইয়াসুকোর হয়ে সে নিজেই ঠেলতে লাগলো ওটা।

“তাহলে ইশিগামির সাথে বেশি কথাবার্তা হয় না আপনার?”

“খুব কম। দোকানে আসলে কথা হয় মাঝে মাঝে।”

“হুম,” এই বলে কী যেন ভাবতে লাগল ইউকাওয়া।

“আপনি কিসের উপদেশের কথা বলছিলেন যেন?” ইয়াসুকো জিজ্ঞেস করলো ভয়ে ভয়ে।

কিন্তু উত্তর দিলো না ইউকাওয়া। ইয়াসুকোর চিন্তাটা বাড়তে বাড়তে অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেলে অবশেষে মুখ খুলল সে, “খুব সহজ সরল ও।”

“কে?”

“ইশিগামির কথা বলছি। খুবই সহজ সরল সে, একদম স্পষ্টবাদি। কোন সমস্যায় পড়লে সবচেয়ে সহজ সমাধানটা খুঁজে বের করাই তার অভ্যাস। খুব ভেবেচিন্তে সামনে আগায়, কোন সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে না। কিন্তু গণিতের জন্যে সেটা কাজে দিলেও বাস্তব জীবনটা এত সহজ নয়। তারপরও বরাবরের মত এরকমটাই করে আসছে সে।”

“মি. ইউকাওয়া, আমি কিন্তু…“

“দুঃখিত, আমার কথা হয়তো দুর্বোধ্য ঠেকছে আপনার কাছে,” ইউকাওয়া হেসে বলল। “আপনি কি নতুন অ্যাপার্টমেন্টটায় আসার পরে তার সাথে দেখা করেছিলেন?”

“হ্যা, সব প্রতিবেশির সাথেই দেখা করেছিলাম আমরা।“

“আর তখনই কি লাঞ্চশপে আপনার চাকরির কথাটা তাকে জানান?”

“জি, কিন্তু এসব কথা জিজ্ঞেস করছেন কেন আপনি?”

“আমার ধারণা তারপর থেকেই বেন্টেন-টেইয়ে নিয়মিত যাতায়াত শুরু করে সে, তাই না?”

“হতে পারে।”

“আমি জানি তার সাথে খুব একটা কথা হয় না আপনার, কিন্তু তার কোন আচরণ কি অদ্ভুত মনে হয়েছিল আপনার কাছে?”

ইয়াসুকো বিভ্রান্ত হয়ে গেলো শেষ প্রশ্নটা শুনে। এরকম কোন কিছুর আশা করছিল না সে।

“দয়া করে বলবেন এসব কথা কেন জিজ্ঞেস করছেন আপনি? তাহলে হয়তো উপদেশ দিতে সুবিধা হত।”

“কারণ, ইশিগামি আমার বন্ধু। আর তাকে আরো ভালোমত জানতে চাই আমি,” হাটতে হাটতেই বলল ইউকাওয়া।

“আসলে লাঞ্চশপে আমরা খুবই কম কথা বলি, তাই বেশি সাহায্য করতে পারবো না আপনাকে।”

“আশা করি আপনি এতদিনে বুঝে গেছেন, ইশিগামি কেন লাঞ্চ কিনতে প্রতিদিন বেন্টেন-টেইয়ে আসে। খুব কম কথাবার্তা হলেও আপনার সাথে যোগাযোগের এটাই একমাত্র মাধ্যম তার।”

ইউকাওয়াকে খুব গম্ভীর দেখাচ্ছিল এই কথাটা বলার সময়। ইয়াসুকোর সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। হঠাৎ করেই সে বুঝতে পারছে, এই লোকটা জানে ইশিগামি তাকে পছন্দ করে। আর সেটার কারণ খুঁজে বের করার জন্যেই প্রশ্নগুলো করছে।

একটা জিনিস ভেবে অবাক হয়ে গেলো ইয়াসুকো, সে নিজে কোনদিন এ ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা করেনি আগে। সে এতটাও সুন্দরি নয় যে দেখামাত্র তার প্রেমে পড়ে যাবে কেউ। এর পেছনে নিশ্চয়ই অন্য কোন কারণ আছে।

“দুঃখিত, আসলে বলার মত কিছু নেই আমার। তার সাথে আমার কতবার কথা হয়েছে এটা আমি হাতে গুণে বলে দিতে পারবো।”

“আচ্ছা, তার সম্পর্কে আপনার মতামত কি?”

“জি?”

“সে যে আপনাকে পছন্দ করে এটা তো বুঝতেই পেরেছেন নিশ্চয়ই? সেটার ব্যাপারে আপনার মতামত কি?”

এভাবে সরাসরি জিজ্ঞেস করায় হকচকিয়ে গেলো ইয়াসুকো। লজ্জায় লাল হয়ে গেলো তার গালগুলো। অন্য সময় হলে হেসে উড়িয়ে দেয়া যেত ব্যাপারটা, কিন্তু এক্ষেত্রে সে পদ্ধতি কাজ করবে না। “আসলে এটা নিয়ে কখনও চিন্তা করে দেখিনি। মানে, তিনি একজন ভালো লোক, এ ব্যাপারে নিশ্চিত আমি। আর বুদ্ধিও নিশ্চয়ই ভালো, গণিতের শিক্ষক যেহেতু, “ নিচের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো সে।

“বাহ্, আপনি দেখছি তার ব্যাপারে ভালোই জানেন!”

“’জানি’ বলতে আপনি যা বোঝাতে চাচ্ছেন সেরকম কিছু না।“

“ঠিক আছে তাহলে, এভাবে আপনাকে বিরক্ত করার জন্যে দুঃখিত, “ এই বলে ইয়াসুকোর সাইকেলটা ফিরিয়ে দিলো সে। “ইশিগামিকে আমার পক্ষ থেকে গুড নাইট জানাবেন।”

“তার সাথে তো দেখা হবে না-“

কিন্তু ইতিমধ্যেই বাউ করে ঘুরে হাটা শুরু করে দিয়েছে ইউকাওয়া। সেদিকে তাকিয়ে থাকলো ইয়াসুকো। কেন যেন খুব ভয় হচ্ছে তার।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *