অধ্যায় ২
কিছু একটা পড়ে যাওয়ার শব্দে সম্বিত ফিরে পেলো ইয়াসুকো। একটা পিতলের ফুলদানি, ওটা দিয়েই টোগাশিকে আঘাত করেছে মিশাতো ইয়াসুকোর বেন্টেন-টেই’তে যোগ দেয়া উপলক্ষে এই ফুলদানিটা ইয়ানোজাওয়া দম্পতি তাকে উপহার দিয়েছিল।
“মিশাতো!” একটা আর্তচিৎকার দিয়ে সেদিকে এগিয়ে গেলো ইয়াসুকো।
কিন্তু মিশাতোর কোন ভাবান্তর নেই, স্রেফ পাথরের মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে একটা ঘোরের মধ্যে ঢুকে গেছে যেন। কিছুক্ষণ ওভাবেই থাকার পর তার চোখজোড়া প্রাণ ফিরে পেলো। এতক্ষনে বুঝতে পারলো কি করে ফেলেছে। ঘুরে ইয়াসুকোর দিকে তাকালো চোখ বড় বড় করে।
ওদিকে টোগাশি টলতে টলতে উঠে দাঁড়াল, ঘাড়ের পেছনটায় হাত বোলাচ্ছে। চোখ-মুখ লাল হয়ে আছে রাগে। মিশাতোর দিকে এগুলো সে, “হারামির বা-”
“খবরদার! না,” টোগাশি কিছু করার আগেই ওদের দু-জনের মাঝে এসে গেলো ইয়াসুকো।
“সর্ আমার সামনে থেকে,” ইয়াসুকোকে জোরে একটা ধাক্কা দিয়ে বলল টোগাশি। দেয়ালের সাথে মাথা ঠুকে গেলো তার।
মিশাতো ঘুরে দৌড় দিতে যাবে এই সময় টোগাশি তার ঘাড় ধরে একটা হ্যাচকা টান দিলো, এত জোরে যে, দু-জনেই মেঝেতে পড়ে গেলো। সাথে সাথে মিশাতোর উপর চড়ে বসলো টোগাশি। চুলের মুঠি এক হাতে ধরে অন্য হাত দিয়ে মিশাতোর গালে জোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো, “তোকে আজ মেরেই ফেলবো কুত্তার বাচ্চা,” জানোয়ারের মত আওয়াজ বেরিয়ে এলো তার গলা দিয়ে।
আজকে ওকে সত্যি মেরে ফেলবে ও। সত্যিই মেরে ফেলবে-মনে মনে আতঙ্কিত বোধ করতে লাগলো ইয়াসুকো।
হাটু গাড়া অবস্থাতেই কিছু একটার খোঁজে আশেপাশে তাকালো ইয়াসুকো। কোটাটসু হিটারটার নিচ দিয়ে একটা তার বের হয়ে আছে। টান দিয়ে সেটাই সকেট থেকে খুলে নিলো সে। ওটার আরেক প্রান্ত তখনও কোটাটসু হিটারটার সাথে লাগানো। উঠে দাঁড়িয়ে তারটা দিয়ে একটা ফাঁস বানালো।
এরপর নিঃশব্দে টোগাশির পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। সে তখনও মিশাতোকে ক্রমাগত আঘাত করে যাচ্ছে আর অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করছে। ফাঁসটা তার গলায় পরিয়ে দিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে টেনে ধরলো ইয়াসুকো।
টোগাশি এতক্ষনে বুঝতে পারলো কি ঘটতে চলেছে তার সাথে, অজান্তেই তার মুখ দিয়ে একটা দুর্বোধ্য আওয়াজ বের হয়ে আসলো। উলটে পড়ে গেলো সে। হাত দিয়ে ফাঁস থেকে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করছে কিন্তু ইয়াসুকো একটুও ঢিল দিলো না। এই লোকটা তার আর তার মেয়ের জীবনে একটা অভিশাপ। তার মেয়েকে এই দানবটার হাত থেকে বাঁচাতেই হবে। ঝেড়ে ফেলতে হবে তাদের জীবন থেকে। আজ যদি এই সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায় তবে আর কখনো সেটা সম্ভব হবে না।
কিন্তু টোগাশি ইয়াসুকোর তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালি। মরিয়ার মত গলা থেকে ফাঁসটা খোলার চেষ্টা করছে সে। একটু একটু করে তারটা ছুটে যেতে থাকলো ইয়াসুকোর হাত থেকে। ততক্ষণে মিশাতো কিছুটা ধাতস্থ হতে পেরেছে। এবার সে-ও হাত লাগালো। টোগাশির হাতগুলোতে খামচি দিতে থাকলো যাতে করে সে গলা থেকে তারটা না খুলতে পারে। এরপর বুকের উপর চেপে বসলো সর্বশক্তি দিয়ে।
“জোরে মা, জোরে! তাড়াতাড়ি।”
ইয়াসুকোর মন থেকে শেষ দ্বিধাবোধটুকুও দূর হয়ে গেলো। চোখ বন্ধ করে যত জোরে সম্ভব তারটা টানতে লাগলো সে। পুরো শরীর কাঁপছে উত্তেজনায়।
এভাবে কতক্ষণ চলে গেলো সে নিজেও বলতে পারবে না। “মা, থামো, মা!” মিশাতোর গলার আওয়াজে বাস্তবে ফিরে আসলো অবশেষে। হিটারের তারটা মুঠো করে ধরে রাখা অবস্থাতেই চোখ খুলল সে।
টোগাশির মুখটা ভেসে উঠলো সামনে। নিষ্প্রাণ চোখদুটো সিলিঙের দিকে তাকিয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে। চেহারাটা নীলাভ হয়ে গেছে শ্বাস না নিতে পারায়। আর ফাঁসের কারণে গলায় একটা গভীর লাল দাগ। মুখ দিয়ে লালা ঝরছে। একদম নাড়াচাড়া করছে না সে। চমকে তারটা ছেড়ে দিলো ইয়াসুকো। টাটামি ম্যাটের উপর পড়ে থপ করে একটা বাড়ি খেলো টোগাশির মাথা। তবুও কোন প্রতিক্রিয়া নেই। মারা গেছে সে।
মিশাতোর দিকে তাকিয়ে দেখলো, তার স্কুলের ইউনিফর্মটা ছিড়ে গেছে জায়গায় জায়গায়, স্কার্টটাও কুঁচকে আছে। হাতাহাতির ফলাফল। দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে মেয়েটা। কিছুক্ষণ মা-মেয়ে একে অপরের দিকে নিরবে তাকিয়ে থাকলো। দু-জনের চোখেই স্পষ্ট ভয়। কিন্তু মুখ ফুটে কথা বের হচ্ছে না কারোর।
“কী করবো এখন আমরা?” নিজেকেই যেন প্রশ্নটা করলো ইয়াসুকো। “মেরে ফেলেছি আমি ওকে!”
“মা…”
ইয়াসুকো মেয়ের দিকে তাকালো। মিশাতোর চেহারা সাদা হয়ে আছে, কিন্তু চোখজোড়া লাল। গালে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। টোগাশি যখন ওকে মারছিল তখন নিশ্চয়ই কাঁদছিল সে।
আবার টোগাশির দিকে তাকালো সে। দোটানায় ভুগছে, মনে হচ্ছে টোগাশি এখনই আবার জীবন ফিরে পেলে ভালো হত। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হচ্ছে, ওভাবে মৃত অবস্থাতেই ভালো আছে দানবটা। যদিও এখন আর তার ভাবা না ভাবাতে কিছু আসে যায় না। মারা গেছে সে এটা আর বদলে ফেলা যাবে না কখনও।
“এটার জন্যে সে নিজেই দায়ি,” যেন ইয়াসুকোর মনের কথা বুঝতে পেরেই বলল মিশাতো। এরপর নিচুস্বরে কাঁদতে শুরু করলো হাটুতে মুখ গুজে।
“এখন কী করবো-” ইয়াসুকো বলতে শুরু করেও থেমে গেলো। কারণ কলিংবেলটা বেজে উঠেছে। এক অজানা আতঙ্ক এসে ভর করলো তার মধ্যে।
মিশাতোও ভেজা চোখ বড় বড় করে তাকালো তার দিকে। দু-জনের মনেই একই প্রশ্ন-কে হতে পারে?
এরপর কেউ নক করলো দরজায়, “মিসেস হানাওকা?” একটা পুরুষ মানুষের কণ্ঠ ভেসে এলো বাইরে থেকে।
এই গলার আওয়াজ আগেও শুনেছে, কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারলো না কোথায় শুনেছে। একদম জমে গেছে সে। মিশাতোও ভয় পেয়েছে।
আবার নক হলো দরজায়।
“মিসেস হানাওকা?
বাইরে যে-ই এসে থাকুক না কেন সে জানে, তারা বাসায় আছে। দরজাটা খুলতেই হবে তাদেরকে। কিন্তু এই লাশটা থাকা অবস্থায় কিভাবে?
“তোমার ঘরে গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দাও। বাইরে আসবে না একদম,” আস্তে করে মিশাতোকে নির্দেশ দিলো ইয়াসুকো। মাথাটা কাজ করতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে।
আবার নক হলো দরজায়।
গভীর একটা নিঃশ্বাস নিলো ইয়াসুকো। এমন ভাব করতে হবে যেন কিছুই হয়নি। অন্যান্য দিনের মতই সাধারন একটি সন্ধ্যা। “কে?” খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো সে। অভিনয় করতে হবে তাকে এখন। শ্বাসরোধ করে কাউকে মেরে ফেলার পরে একজন মহিলাকে যেরকম অভিনয় করতে হয় সেরকম। “কে ওখানে?”
“ইয়ে, আমি…ইশিগামি। আপনাদের প্রতিবেশি,” জবাব এলো।
এতক্ষণ তাদের বাসায় যা ঘটছিল, বাইরে থেকে নিশ্চয়ই কিছুটা হলেও শোনা গেছে। প্রতিবেশিদের মনে সন্দেহ জাগতেই পারে। মি. ইশিগামি এজন্যেই নিশ্চয়ই দেখতে এসেছে সব কিছু ঠিক আছে কিনা।
“একটু অপেক্ষা করুন, খুলছি,” ইয়াসুকো শান্ত স্বরে বলার চেষ্টা করলো। কিন্তু কতটা শান্ত শোনাচ্ছে তার গলা সে ব্যাপারে সন্দেহ আছে।
আশেপাশে একবার নজর বোলাল সে। মিশাতো ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। এবার টোগাশির লাশটার দিকে দৃষ্টি গেলো তার। যেভাবেই হোক লুকাতে হবে এটাকে।
কোটাটসু হিটারের টেবিলটা বাঁকা হয়ে আছে। স্বাভাবাকি অবস্থা থেকে অনেক সামনে এগিয়ে এসেছে। টেনে সেটাকে ঘরের মাঝখানে টোগাশির ওপরে নিয়ে আসলো। ভারি কভারের কারণে টোগাশির লাশটা ঢাকা পড়ে গেছে ওটার নিচে। কোন টেবিল রাখার জন্যে অবশ্য খুবই অদ্ভুত একটা জায়গা সেটা। কিন্তু এখন আর কিছু করার নেই। এতেই কাজ চালাতে হবে।
নিজের কাপড়চোপড় ঠিক করতে করতে সামনের দরজার দিকে এগিয়ে গেলো সে। এ সময় দরজার পাশে টোগাশির জুতাজোড়া চোখে পড়লো। সেগুলোরও ব্যবস্থা করলো যাতে করে বাইরে থেকে দেখা না যায়।
এরপর সাবধানে দরজার চেইনটা আবার জায়গামত লাগিয়ে দিলো। আরো কিছুটা সময় অপেক্ষা করে আস্তে করে ছিটখানিটা খুলে বাইরে তাকালো। ইশিগামির গোলগাল মুখটা দেখা যাচ্ছে। একদম ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে আছে সে। মুখ দেখে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। কেমন যেন অস্বস্তি বোধ করতে লাগলো ইয়াসুকো।
“জি? কিছু বলবেন?” খুব কষ্টে মুখে হাসি টেনে বলল ইয়াসুকো। “আপনাদের বাসা থেকে শোরগোল শুনলাম মনে হলো,” ইশিগামি অভিব্যক্তিহীনভাবে বলল। “কিছু হয়েছে?”
“না, না। কিছু হয়নি,” জোরে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল ইয়াসুকো। “আপনাকে বিরক্ত করার জন্যে দুঃখিত।”
“ওহ্, আচ্ছা। আমি ভাবলাম হঠাৎ করে এত আওয়াজ,” এই বলে ইশিগামি তার পেছনে উঁকি দিতে লাগলো। ঘরটা দেখা যাচ্ছে দরজার ফাঁক দিয়ে।
“আসলে, একটা তেলাপোকা দেখে ভয় পেয়েছিলাম,” কিছু না ভেবেই বলে দিলো সে।
“তেলাপোকা?”
“হ্যা। আমি আর আমার মেয়ে মিলে ওটাকে মারার চেষ্টা করছিলাম। এজন্যেই বোধহয় শব্দ হয়েছে…”
মেরে ফেলেছেন?”
চেহারা শক্ত হয়ে গেলো ইয়াসুকোর, “কি?”
“তেলাপোকাটা। মেরে ফেলেছেন ওটাকে?”
“হ্যা…হ্যা, মেরেছি,” ইয়াসুকো মাথা নিচু করে বলল। “এখন সবকিছু ঠিক আছে। ধন্যবাদ।“
“ঠিক আছে তাহলে। কোন ধরণের সাহায্যের দরকার হলে বলবেন।’
“অবশ্যই। অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে। বিরক্ত করার জন্যে আবারও দুঃখিত,” একবার বাউ করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো ইয়াসুকো। ওপাশে ইশিগামি নিজের বাসায় ফিরে গিয়ে দরজা লাগানো পর্যন্ত অপেক্ষা করলো সে। এরপরে অনেকক্ষণ ধরে চেপে রাখা নিঃশ্বাসটা ছেড়ে দিলো। হাটু গেড়ে বসে পড়লো ওখানেই।
পেছনের দরজাটা খোলার শব্দ শুনতে পেলো এরপর।
“মা?”
বেশ কিছুক্ষণ পর আস্তে করে উঠে দাঁড়াল ইয়াসুকো, কিন্তু কোটাসু টেবিলের নিচে চোখ পড়তেই আবার রাজ্যের হতাশা এসে ভর করলো দুচোখে। “এটা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না আমাদের হাতে।”
“এখন কী করবো আমরা?” কিছুক্ষণ আগে তার মা’র প্রশ্নটারই পুণরাবৃত্তি করলো মিশাতো।
“পুলিশকে ফোন দেয়া ছাড়া আর কীইবা করার আছে, বলো?”
“পুলিশের কাছে ধরা দেবে?”
“এটা ছাড়া অন্য কোন ভালো উপায় মাথায় আসছে তোমার? আমি মেরে ফেলেছি ওকে!
“তাহলে তোমার কি অবস্থা হবে চিন্তা করতে পারছো?”
“আমি জানি না,” চুলগুলো ঠিক করতে করতে বলল ইয়াসুকো। এতক্ষনে মনে হচ্ছে, তার চেহারাটা নিশ্চয়ই একদম বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। পাশের বাসার লোকটা না জানি কী ভেবেছে। যদিও তাতে কিছু এসে যায় না।
“তোমার কি জেল হয়ে যাবে?” মিশাতো জিজ্ঞেস করলো, তার গলায় স্পষ্ট ভয়।
“হতে পারে,” হাল ছেড়ে দেয়ার ভঙ্গিতে একবার হাসলো ইয়াসুকো। “আমি তো আসলেও ওকে খুন করেছি, তাই না?”
জবাবে মিশাতো জোরে জোরে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, “কিন্তু এটা হলে তো তোমার সাথে অবিচার করা হবে।”
“কেন?”
“কারণ তোমার কোন দোষ নেই। সম্পুর্ণ দোষ ঐ লোকটার আমাদের সাথে তো তার সব সম্পর্ক চুকে গিয়েছিল। কিন্তু সে কয়েকদিন পরপর ঠিকই উদয় হতো, আমরা যেখানেই পালাই না কেন। জাহান্নাম বানিয়ে ছেড়েছিল আমাদের জীবনটা! এর কারণে কোনভাবেই জেল হতে পারে না তোমার।“
“খুন খুনই, মিশাতো। কেউ এর পেছনের কাহিনী দেখতে যাবে না,” ইয়াসুকো ক্লান্ত স্বরে মেয়েকে বোঝানোর চেষ্টা করলো ঠিকই কিন্তু তার নিজের কাছেই এখন ব্যাপারটা অন্যরকম লাগতে শুরু করেছে। ঠিকই তো, তার কাছে আসলেই অন্য কোন উপায় ছিল না। আরেকটা ব্যাপারেও চিন্তা করতে হবে। সে নাইটক্লাবের চাকরিটা ছেড়েছে যাতে করে তার মিশাতোকে একজন নর্তকির মেয়ের পরিচয়ে বড় হতে না হয়। সেখানে তার জেল হয়ে গেলে মিশাতোকে সবাই কি বলবে? খুনির মেয়ে? কিন্তু যা ঘটে গেছে সেটাকেও তো আর বদলানো যাবে না।
এখন এসব চিন্তা করলে চলবে না। তার মেয়েকে যাতে করে পুলিশ কোন প্রকার সন্দেহ না করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে-নিজেকে বোঝালো সে।
কর্ডলেস ফোনটা ঘরের এক কোণায় রাখা আছে। এগিয়ে গিয়ে সেটা হাতে তুলে নিলো ইয়াসুকো।
“না, মা!” ছুটে এসে তার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করলো মিশাতো।
“ছাড়ো!”
“না মা, এটা রাখো! ফোন দিয়ো না কাউকে,” ইয়াসুকোর কব্জি শক্ত করে ধরে বলল মিশাতো। ব্যাডমিন্টন খেলতে খেলতে তার হাতের জোর যে অনেক বেড়ে গেছে সেটা টের পেলো ইয়াসুকো।
“ছাড়ো তো।”
“না, মা! আমি কোনভাবেই এটা করতে দিতে পারি না তোমাকে। দরকার হলে আমি নিজেই পুলিশের কাছে গিয়ে ধরা দেবো।”
“কী বলো! তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে!”
“আমিই ওকে প্রথম আঘাত করেছিলাম। তুমি তো শুধু আমাকে ওই পিশাচটার হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলে। তার পরেও আমি সাহায্য করেছি তোমাকে। এই খুনের দায়ভার আমারও কম নয়,” মিশাতো গম্ভীরভাবে বলল কথাগুলো।
ইয়াসুকোর সারা শরীর অবশ হয়ে আসল। সে সুযোগে তার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিলো মিশাতো। সেটা নিয়ে ঘরের অন্য কোণায় চলে গেলো সে।
ইয়াসুকোর মাথায় চিন্তার ঝড় বইছে। মিশাতো যদি আসলেও পুলিশকে বলে, সে নিজে খুন করেছে তাহলে কি পুলিশ বিশ্বাস করবে ওর কথা? শুধু ওর মুখের কথার কোন দাম আছে ওদের কাছে?
না, পুলিশ আরো ভালোমত তদন্ত করে দেখবে নিশ্চয়ই। টেলিভিশনে সে দেখেছে, তারা কিভাবে এসব কেস তদন্ত করে। প্রমাণ চাইবে তারা। আর এটা পাওয়ার জন্যে সবকিছু একদম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা হবে। প্রতিবেশিদের জিজ্ঞেস করা হবে, ফরেনসিক টিম আসবে আর তারপর…
ইয়াসুকোর দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলো। পুলিশ তাকে যতই জেরা করুক না কেন, সে কোনভাবেই মিশাতোর সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করবে না। কিন্তু পুলিশ যদি তদন্ত করে সত্যটা বের করে ফেলে? সবকিছু শেষ হয়ে যাবে।
সে চিন্তা করার চেষ্টা করলো খুনটাকে অন্যকোন দিকে প্রবাহিত করা যায় কিনা। যেখানে পুলিশ তাকে ছাড়া আর কাউকে সন্দেহই করবে না। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই সেগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলল। কারণ এখন যদি সে পুলিশকে ধোঁকা দিতে চায় তাহলে তারা অবশ্যই সেটা বুঝে ফেলবে। যেভাবেই হোক মিশাতোকে বাঁচাতে হবে। মেয়েটা তার মতই হয়েছে, প্রতিকূলতার সাথে যুদ্ধ করে টিকতে পারবে সে। মিশাতোকে বাঁচাতে গিয়ে যদি তার নিজের জীবনটা বিলিয়েও দিতে হয়, তাতেও সে রাজি।
কিন্তু কী করবো আমি? কিছু কি করার আছে?
এ সময় একটা শব্দ কানে ভেসে এলো তার। ঠিকমতো খেয়াল করে বুঝতে পারলো ফোনটা বাজছে। মিশাতো এখনও ধরে রেখেছে ওটা। চোখ বড় বড় করে সেটা দেখছে সে এখন
ইয়াসুকো সেদিকে হাতটা বাড়িয়ে দিতে মিশাতো আস্তে করে তাকে ফোনটা দিয়ে দিলো।
নিজেকে একটু ধাতস্থ করে ফোনটা রিসিভ করলো সে, “হ্যালো? হানাওকা বলছি।”
“হ্যালো, আমি ইশিগামি। পাশের বাসার…“
ইয়াসুকো অবাক হয়ে গেলো। এই শিক্ষক আবার ফোন করলো কেন? কি চাই এবার তার? “জি, বলুন? কিভাবে সাহায্য করতে পারি?”
“না, মানে…আমি ভাবছিলাম, এখন আপনারা কি করবেন।” ইয়াসুকো কিছুই বুঝতে পারলো না, লোকটা কি বলতে চাইছে, “দুঃখিত, বুঝলাম না আপনার কথা?”
“আসলে বলতে চাচ্ছিলাম…” এটুকু বলার পর ইশিগামি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। “আপনারা যদি পুলিশকে ফোন করতে চান তো সেটা আপনাদের ব্যাপার। আর যদি তা না করতে চান তবে আমি বোধহয় কাজে লাগতে পারি আপনাদের।”
“কি?” ইয়াসুকোর মুখটা হা হয়ে গেলো। কী বলছে লোকটা!
“আমি বরং আপনাদের ওখানে এসেই কথা বলি?” ইশিগামি আস্তে করে বলল। “আসবো?”
“কি? না! এখন আসবেন না!” ইয়াসুকোর কথা আটকে যেতে লাগলো। ঠান্ডা ঘাম ছুটছে সারা শরীরে।
“দেখুন, মিস হানাওকা,” ইশিগামি শান্তভাবে বলল পরের কথাগুলো, “একটা লাশের বন্দোবস্ত করা কিন্তু খুব কঠিন। একজন মহিলার পক্ষে সেটা একা একা করা কখনোই সম্ভব নয়।“
ইয়াসুকো বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।
লোকটা নিশ্চয়ই দেয়ালের ওপাশ থেকে সব শুনতে পেরেছে।
টোগাশির সাথে তার ঝগড়া, এরপরে মিশাতোকে সে যা যা বলছিল- সব।
সব শেষ, ইয়াসুকো মাথা নিচু করে ভাবলো। এখন আর বাঁচার কোন উপায় নেই। তাকে পুলিশের কাছে ধরা দিতেই হবে। কিন্তু এমনভাবে সেটা করতে হবে যাতে তারা মিশাতোকে সন্দেহ না করে।
“মিস হানাওকা, আপনি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন?”
“জি, শুনছি।”
“আমি কি আসবো?”
“বললাম তো একবার–” এটুকু বলে মিশাতোর দিকে তাকালো সে। মেয়েটার চোখে ভয় আর কৌতূহল। ও নিশ্চয়ই ভেবে অবাক হচ্ছে তার মা কার সাথে ফোনে কথা বলছে এখন।
ইশিগামি যদি সব শুনেই থাকে, তাহলে সে নিশ্চয়ই মিশাতোর সংশ্লিষ্টতার কথাও জানে। আর সে যদি একবার পুলিশকে সে-ব্যাপারে কিছু বলে, তবে তো…
একবার ঢোক গিলল ইয়াসুকো, “আচ্ছা, আসুন। আপনার সাথে আমার অন্য একটা ব্যাপারেও কথা ছিলো।”
“আসছি এখনই,” ইশিগামি জবাব দিলো ওপাশ থেকে।
“কো?” ইয়াসুকো ফোন রাখার সাথে সাথে মিশাতো প্রশ্ন করলো।
“পাশের বাসার লোকটা। মি. ইশিগামি।”
“কেন? তিনি কিভাবে—”
“পরে সব খুলে বলবো তোমাকে। এখন তোমার ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দাও। জলদি!”
মিশাতোকে উদ্ভ্রান্ত দেখালেও সে আর কথা না বাড়িয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো। ঘরের দরজাটা লাগানোর সাথে সাথেই বাইরে ইশিগামির পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলো ইয়াসুকো।
কিছুক্ষণ পর কলিংবেলের শব্দ ভেসে এলে দরজাটা খুলে দিলো সে।
ইশিগামি বাইরে দাঁড়িয়ে আছে, চেহারায় স্পষ্ট কৌতুহল। এরইমধ্যে বাসায় গিয়ে নীল রঙের একটা জ্যাকেট চাপিয়েছে। কিছুক্ষণ আগেও এটা তার পরনে ছিল না।
“আসুন।”
আস্তে করে মাথা নেড়ে ভেতরে ঢুকে গেলো ইশিগামি।
ঢুকেই কালক্ষেপণ না করে কোটাটসু হিটারের কভারটা সরিয়ে দিলো সে। কোনপ্রকার দ্বিধাবোধ করলো না। এরপর হাটু গেড়ে বসে টোগাশির লাশটা পরীক্ষা করতে শুরু করলো। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে যেন গভীর ভাবনায় ডুবে গেছে। ইয়াসুকো লক্ষ্য করলো, হাতে একটা দস্তানা পরা আছে তার।
একটু অপেক্ষা করে ইয়াসুকোও তার পাশে হাটু গেড়ে বসে পড়লো। টোগাশির চেহারা থেকে প্রাণের সকল চিহ্ন মুছে গেছে। মুখ থেকে কিছুটা লালা ঝরে পড়েছে মেঝেতে।
“আপনি আমাদের সব কথাবার্তা শুনতে পেয়েছিলেন, তাই না?” ইয়াসুকো জিজ্ঞেস করলো।
“কি শুনতে পেয়েছি?”
“দেয়ালের ওপাশ থেকে সব শোনা যায় নিশ্চয়ই?”
“না, আমি আপনাদের কোন কথাবার্তা শুনিনি। এই বিল্ডিঙে এক বাসা কথা অন্যবাসার কথাবার্তা শোনা যায় না। সাউন্ডপ্রুফ বলতে পারেন,” ইয়াসুকোর দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলল ইশিগামি।
“তাহলে আপনি কিভাবে- “
“কিভাবে বুঝলাম?”
ইয়াসুকো মাথা নেড়ে সায় দিলো।
জবাবে ইশিগামি ঘরের এক কোণায় ইঙ্গিত করলো। একটা খালি ক্যান পড়ে আছে সেখানে। ওটা থেকে কিছুটা ছাই বের হয়ে মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
“কিছুক্ষণ আগে যখন আমি নক করেছিলাম তখন সিগারেটের ধোঁয়ার গন্ধ নাকে এসেছিল। আপনাদের বাসায় মেহমান এসেছে ভেবে জুতোর খোঁজে দরজার দিকে তাকিয়েও কোনকিছু চোখে পড়েনি। আর আপনার ঘরের ভেতর যখন তাকালোাম তখন বুঝলাম কোটাটসু টেবিলটার নিচে কেউ আছে। তারটাও সকেটে ঢোকানো নেই। কেউ যদি লুকাতেই চাইতো তবে সে তো পেছনের ঘরে চলে যেতে পারতো। তার মানে দাঁড়াল, ওখানে যে-ই থাকুক না কেন সে লুকিয়ে নেই, বরং তাকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। কিছুক্ষণ আগের হৈহল্লার আওয়াজ আর আপনার চুলের ওরকম অগোছালো অবস্থা দেখে দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে বেশি সময় লাগেনি আমার। ওহ্, আরেকটা ব্যাপার। এই বিল্ডিঙে কোন তেলাপোকা নেই। কয়েক বছর ধরে এখানে থাকছি আমি, কিন্তু একটাও চোখে পড়েনি আমার।”
ইয়াসুকো অবাক হয়ে ইশিগামির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো। একদম শান্ত স্বরে কথাগুলো বলল লোকটা। গলার স্বর একবারের জন্যেও চড়া হলো না। এভাবেই নিশ্চয়ই ছাত্রদের সাথে কথা বলে ভদ্রলোক, ভাবলো সে।
তীক্ষ্ণ বুদ্ধি তার, না-হলে কি ঘটেছে এতটা নিখুঁতভাবে বুঝতে পারার
কথা নয়। তা-ও দরজার বাইরে থেকে মাত্র একবার নজর বুলিয়ে। অবাক হওয়ার সাথে সাথে কিছুটা স্বস্তিবোধ করতে থাকলো ইয়াসুকো। কি ঘটেছে জানলেও কিভাবে ঘটেছে এটা নিশ্চয়ই জানে না লোকটা।
“ও আমার প্রাক্তন স্বামী,” সে বলল। “কয়েক বছর ধরে আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। তবুও আমাদের পিছু ছাড়তো না সে। বাসায় এসে বসে থাকতো, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার হাতে টাকা দিতাম আমি। এবারও সেজন্যেই এসেছিল। কিন্তু আমার পক্ষে আর সহ্য করা সম্ভব হয়নি…” ইয়াসুকো নিচের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলল। সব কথা অবশ্য বলা যাবে না। মিশাতোর ব্যাপারটা লুকিয়ে রাখতে হবে।
“আপনি কি পুলিশের কাছে যাবেন, সব বলে দেবেন?
“সেটা ছাড়া তো আর কোন উপায় দেখছি না। যদিও মিশাতোর সাথে অবিচার করা হবে, তবুও…” সে আরো কিছু বলতো কিন্তু মিশাতোর ঘরের দরজা খোলার আওয়াজে থেমে গেলো মাঝপথেই। হন্তদন্ত হয়ে তার সামনে এসে দাঁড়াল মিশাতো।
“না, মা! সেটা আমি তোমাকে কখনোই করতে দেবো না।”
“চুপ করো, মিশাতো।”
“না, চুপ করবো না আমি। শুনুন মি. ইশিগামি, আমি আপনাকে বলছি কে ঐ লোকটাকে খুন করেছে….”
“মিশাতো!” ইয়াসুকো ধমকে উঠলো।
মিশাতো চুপ করে গেলো ঠিকই, কিন্তু তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তার মার দিকে তাকিয়ে থাকলো। চোখজোড়া লাল হয়ে গেছে কাঁদতে কাঁদতে।
“মিস হানাওকা,” ইশিগামি আস্তে করে বলল, “আমার কাছ থেকে কিছু লুকোবার দরকার নেই।”
“আমি কিছুই লুকোচ্ছি না–”
“আমি জানি খুনটা আপনি একা করেননি, আপনার মেয়েও সাহায্য করেছে।”
“না, ওর কোন দোষ নেই। আমি একাই করেছি সবকিছু,” জোরে জোরে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল ইয়াসুকো। “ও স্কুল থেকে আসার আগেই টোগাশিকে খুন করেছি আমি।”
ইশিগামির চেহারা দেখেই বোঝা গেলো সে এসব কথা বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করছে না। “ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠবে,” মিশাতোর দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলল সে।
“আমি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছি না, বিশ্বাস করুন!” ইশিগামির হাটুতে হাত রেখে কথাগুলো বলল ইয়াসুকো।
কিছুক্ষণ তার হাতের দিকে তাকিয়ে থেকে লাশের দিকে আবার মনোযোগ দিলো ইশিগামি। “পুলিশ কি ভাববে এটাই দেখার বিষয়। তাদেরকে এত সহজে বোকা বানানো যাবে বলে মনে হয় না।”
“কেন না?” বলেই ইয়াসুকো বুঝলো, সে সত্যিটা স্বীকার করে নিলো মাত্র।
ইশিগামি লাশটার ডানহাতের দিকে ইশারা করলো। “ওখানে কিন্তু খামচির দাগ দেখা যাচ্ছে। আমার ধারণা তাকে পেছন থেকে শ্বাসরোধ করার সময় নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল সে। আর খামচির দাগ দেখে বোঝা যাচ্ছে, কেউ তাকে সেটা থেকে বিরত করার চেষ্টা করছিল। পুলিশের চোখেও এটা সহজেই ধরা পড়বে।”
“এটাও আমারই কাজ,” ইয়াসুকো জোর দিয়ে বলল।
“মিস হানাওকা, এটা অসম্ভব।”
“কেন?”
“আপনি তো তাকে পেছন থেকে শ্বাসরোধ করেছিলেন, তাই না? তাহলে একই সময়ে আপনি সামনে থেকে তার হাতে খামচি দেবেন কিভাবে? সেজন্যে তো আপনার চারটা হাত দরকার।”
ইয়াসুকো বলার মত আর কিছু খুঁজে পেলো না। নিজেকে ফাঁদে আটকা পড়া ইঁদুর বলে মনে হচ্ছে। চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলো সে, কাঁধদুটো ঝুলে পড়েছে তার। ইশিগামি যদি একবার দেখেই এত কিছু বুঝতে পারে, তাহলে পুলিশ আরো ভালোমত বুঝবে।
“আমি চাই না মিশাতো এসবের সাথে কোনভাবে জড়িয়ে যাক। ওকে বাঁচাতেই হবে…”
“আমিও চাই না তুমি জেলে যাও, মা,” মিশাতো বলল। তার চোখের কোণে আবার পানি চিকচিক করছে।
“আমি জানি না এখন কী করবো!” ইয়াসুকো হতাশ কণ্ঠ বলল। ঘরের পরিবেশ কেমন যেন ভারি হয়ে উঠছে। অস্থির লাগতে লাগলো তার।
“মি. ইশিগামি,” মিশাতো বলল, “আপনি তো এখানে এসেছেন মা’কে আত্মসমর্পণ করার কথা বলতে, তাই না?”
“আমি তোমাদের সাহায্যের জন্যেই ফোনটা করেছিলাম,” কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দিলো ইশিগামি। “যদি তোমরা পুলিশের কাছে আত্মসমৰ্পণ করতে চাও, করতে পারো। কিন্তু সেটা যদি না করো, তাহলে বলবো, তোমাদের দু-জনের পক্ষে সবকিছু সামলানো বেশ কঠিন হবে।”
ইয়াসুকোর এই সময় হঠাৎ করে একটা কথা মনে পড়লো। ইশিগামি ফোনে বলছিল, একা একজন মহিলার পক্ষে লাশ লুকোনো বেশ কঠিন কাজ।
“পুলিশের কাছে ধরা না দিয়েও এ থেকে বাঁচার কোন উপায় কি আছে আমাদের?” মিশাতো জিজ্ঞেস করলো।
ইয়াসুকো দেখলো ইশিগামি গভীর চিন্তায় মগ্ন।
“আমার মনে হয় তোমাদের কাছে দুটো উপায় আছে এখন। এমন ভাব করতে হবে যেন কিছুই ঘটেনি অথবা যা ঘটেছে তার সাথে তোমাদের কোন সম্পর্ক আছে বলে স্বীকার করা যাবে না। কিন্তু যা-ই করো না কেন, লাশটার কোন ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে।”
“সেটা কি করতে পারবো আমরা?”
“মিশাতো,” ইয়াসুকো দৃঢ়স্বরে বলল। “আমরা এরকম কিছু করবো না।”
“ওফ্ মা! চুপ করো তো,” এটা বলে আবার ইশিগামির দিকে তাকালো সে। “আপনার কি মনে হয় সেটা করা সম্ভব আমাদের পক্ষে?”
“কঠিন হবে কাজটা, কিন্তু অসম্ভব কিছু না,” ইশিগামি শান্তস্বরে জবাব দিলো।
“মা,” মিশাতো বলল। “মি. ইশিগামি আমাদের সাহায্য করতে
পারবেন। এটা ছাড়া অন্য কোন উপায়ও নেই আমাদের হাতে।”
“কিন্তু আমি এটা হতে দিতে-” কথার মাঝেই ইশিগামির দিকে তাকালো ইয়াসুকো।
একদৃষ্টিতে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে সে। অপেক্ষা করছে তাদের সিদ্ধান্তের।
সায়োকোর কথাটা মনে পড়ে গেলো তার। সে বলেছিল মি. ইশিগামি তাকে পছন্দ করে। এজন্যেই প্রতিদিন তাদের দোকানে লাঞ্চ কিনতে যায়।
ভাগ্যিস সায়োকো তাকে জানিয়েছিলো কথাটা। না-হলে ইশিগামির মানসিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠতো তার মনে। কোন কারণ ছাড়া একজন লোক কেন তাদেরকে এভাবে যেচে পড়ে সাহায্য করতে চাইবে? তার নিজেরও তো গ্রেফতার হবার ঝুঁকি আছে।
“আমরা যদি লাশটা লুকাই, কেউ কি সেটা খুঁজে পাবে না?” ইয়াসুকো জিজ্ঞেস করলো।
“আমরা কিন্তু এখনো ঠিক করিনি লাশটা লুকোবো কিনা,” ইশিগামি জবাব দিলো। “মাঝে মাঝে কিছু জিনিস না লুকানোই ভালো। সব তথ্য হাতে আসার পর ঠিক করা যাবে লাশটা নিয়ে কি করবো আমরা। কিন্তু একটা ব্যাপার নিশ্চিত, লাশটাকে এখানে ফেলে রাখা যাবে না কোনভাবেই।”
“কোন বিষয়ে তথ্যের কথা বলছেন আপনি?”
“এই লোকটার ব্যাপারে তথ্য,” মি. ইশিগামি লাশের দিকে ইশারা করে বলল। “সে কি রকম জীবন-যাপন করতো। তার বয়স, পেশা, এখানে আসার কারণ-এসব। তার কি কোন পরিবার আছে এখন? দয়া করে বলবেন না এসব উত্তর আপনার জানা নেই।”
“আসলে, আমি-”
“না, থাক,” ইশিগামি তার কথার মাঝখানেই বললো। “আগে এই লাশটা এখান থেকে সরাতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সবকিছু পরিস্কারও করা দরকার। এখানে চারদিকে প্রমাণের ছড়াছড়ি এখন, এব্যাপারে আমি নিশ্চিত,” কথাটা বলেই লাশটার মাথার দিকে চলে গেলো সে, এরপর সেটাকে ধরে উপরের দিকে ওঠালো
“সরাবো? কিন্তু কোথায়?”
“আমার বাসায়,” ইশিগামি এমন ভঙ্গিতে কথাটা বলল যেন এটাই একমাত্র উপায়। এরপর লাশটা ঘাড়ে তুলে নিলো। তার শক্তি দেখে অবাক না হয়ে পারলো না ইয়াসুকো। খেয়াল করে দেখলো তার নীল রঙের জ্যাকেটটার কলারে ‘জুডো ক্লাব’ লেখা। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজের অ্যাপার্টমেন্টে লাশটা নিয়ে গেলো ইশিগামি। ইয়াসুকো আর মিশাতোও তার পিছু পিছু গেলো। তার বাসাটা পুরো এলোমেলো। এখানে সেখানে গণিতের বইপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। লাশটা ঘাড়ে থাকা অবস্থাতেই সেগুলো পা দিয়ে সরিয়ে একটা জায়গা খালি করে নিলো সে। আস্তে করে লাশটা শুইয়ে রাখলো মেঝের ওপর।
এরপর তাদের মা-মেয়ের দিকে নজর ফেরাল সে। “মিস হানাওকা, আপনি এখানেই থাকুন। মিশাতো বাসায় গিয়ে সবকিছু পরিস্কার করা শুরু করে দিক। ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে যতটা সম্ভব ভালোমত পরিস্কার করতে হবে সবকিছু।”
মিশাতো মাথা নেড়ে মা’র দিকে তাকালো। চেহারাটা সাদা হয়ে গেছে তার। এরপর আর কালক্ষেপণ না করে বের হয়ে গেলো সেখান থেকে।
“দরজাটা বন্ধ করে দিন,” ইশিগামি তার দিকে তাকিয়ে বললেন।
“আচ্ছা,” ইয়াসুকো নির্দেশ পালন করলো চুপচাপ, এরপর অস্বস্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো সেখানেই।
“ভেতরে আসুন। আপনাদেরটার মত অবশ্য অতটা পরিস্কার না আমার বাসা।”
একটা কুশন বের করে লাশটার পাশে মেঝেতে রেখে দিলো ইশিগামি। কিন্তু ইয়াসুকো সেই কুশনটাতে না বসে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বসলো। লাশটা দেখতে ইচ্ছে করছে না তার একদমই। এতক্ষণে বুঝতে পারলো ওটা দেখে কিছুটা ভয়ও পাচ্ছে।
“আমি দুঃখিত, আমার ওটা ওখানে রাখা উচিত হয়নি,” বলে কুশনটা তার দিকে বাড়িয়ে ধরলো ইশিগামি। “এটা নিন দয়া করে।”
“না, ঠিক আছি আমি,” আস্তে করে মাথা নেড়ে বলল ইয়াসুকো। ইশিগামি কুশনটা একটা চেয়ারের ওপর রেখে দিয়ে লাশটার পাশে বসে পড়লো।
লাশের গলার কাছটাতে কেমন যেন লাল হয়ে ফুলে উঠেছে এখন। “ইলেকট্রিক তারটা, তাই না?”
“জি?”
“আপনি একটা ইলেক্ট্রিক তার দিয়ে ওনার গলা পেঁচিয়ে ধরেছিলেন বোধহয়?”
“হ্যা, হিটারের তারটা,” ইয়াসুকো বলল।
“আমিও তাই ভেবেছিলাম,” ইশিগামি গলার ফোলা জায়গাটার দিকে তাকিয়ে বলল। “ওটা সরিয়ে ফেলতে হবে আপনাকে। থাক, আমিই ব্যবস্থা করবো সবকিছুর,” এই বলে ইয়াসুকোর দিকে তাকালো সে। “ওনার সাথে কি আজ দেখা করার কথা ছিল আপনার?“
“না! ওরকম কোন কথাই ছিল না,” জোরে মাথা নেড়ে বলল ইয়াসুকো। “দুপুরের দিকে আচমকাই আমাদের দোকানে এসে হাজির হয় ও। এরপর সন্ধ্যাবেলায় আমরা একটা রেস্তোরাঁয় দেখা করি। দেখা করার কথা না বললে সে দোকান থেকে যেত না। এরপর আমি ভাবিনি ও আমার বাসায়ও এসে পড়বে।”
“একটা রেস্তোরাঁয়?”
“হ্যা।”
তাহলে তো সাক্ষি থেকে যাবে, ইশিগামি ভাবলো। এরপর লাশের পরনের জ্যাকেটটার পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিলো সে। দুটো ভাঁজ করা দশ হাজার ইয়েনের নোট বের হয়ে আসলো।
“এই টাকাটাই আমি—”
“আপনিই এটা ওনাকে দিয়েছিলেন?”
সে মাথা নেড়ে সায় জানালে ইশিগামি তার দিকে নোটগুলো বাড়িয়ে ধরলো, কিন্তু ইয়াসুকো সেগুলো নিলো না।
এরপর ইশিগামি তার নিজের স্যুটের পকেট থেকে ওয়ালেটটা বের করে সেখান থেকে দশ হাজার ইয়েনের দুটো নোট বের করলো, আর অন্য নোটগুলো সেগুলোর জায়গায় রেখে দিলো। ইয়াসুকোর দিকে ইয়েনগুলো বাড়িয়ে ধরে বলল, “আমি বুঝতে পারছি কেন আপনি ওগুলো নিতে চাইছেন না।”
ইয়াসুকো একটু দ্বিধাবোধ করে টাকাগুলো নিয়ে বলল, “ধন্যবাদ।”
“ঠিক আছে তাহলে,” এই বলে ইশিগামি আবার লাশের পকেট হাতড়াতে লাগলো। এবার টোগাশির ওয়ালেটটা বের হয়ে এলো। সেখানে কিছু খুচরা পয়সা, একটা ড্রাইভিং লাইসেন্স আর কয়েকটা রশিদ পাওয়া গেলো।
“শিনজি টোগাশি…পশ্চিম শিনজুকু, শিনজুকু ওয়ার্ড। আপনার কি মনে হয়ে সে ওখানেই থাকতো আজকাল?” লাইসেন্সটা দেখার পর সে জিজ্ঞেস করলো।
ইয়াসুকো মাথা দোলালো, “আমি ঠিক জানি না এ ব্যাপারে, কিন্তু আমার মনে হয় না। সে আগে নিশি-শিনজুকুতে থাকতো ঠিকই। কিছুদিন আগে কোথায় যেন শুনেছিলাম, ভাড়া না দেয়ার কারণে তাকে সেখানকার বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়।”
“ড্রাইভিং লাইসেন্সটা দেখে মনে হচ্ছে সেটা গত বছর নবায়ন করা হয়েছিল, সেখানে কিন্তু ঠিকানা পরিবর্তন করা হয়নি।”
“আমি নিশ্চিত সে এক জায়গায় বেশিদিন থাকতে পারতো না। কারণ ভালো কোন চাকরি ছিল না। দীর্ঘদিন ধরে ঠিকমতো ভাড়া দেয়ার সামর্থ্যও ছিলো না।”
“এটাই হবে বোধহয়,” ইশিগামি একটা রশিদের দিকে খেয়াল করে বলল। ওখানে লেখা : ওগিয়া বোর্ডিং হাউজ। রশিদে লেখা আছে দু-রাতের জন্যে ৫২০০ ইয়েন পরিশোধ করে দেয়া আছে অগ্রিম। তার মানে প্রতি রাতে ২৬০০ করে।
ইশিগামি কার্ডটা ইয়াসুকোকে দেখালো। “আমার মনে হয় সে এখানেই ছিল এই কয়দিন। আর সে যদি চেকআউট না করে বের হয়ে যায় তবে তার জিনিসপত্র খুব তাড়াতাড়িই সরিয়ে ফেলবে কর্তৃপক্ষ। পুলিশকেও ফোন দিতে পারে। অবশ্য অনেকেই পুলিশি ঝামেলা করতে চায় না ইদানিং, কারণ রুমের ভাড়া না দিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার মত লোকের অভাব নেই। তবুও আমাদের মাথা থেকে ব্যাপারটা ঝেড়ে ফেললে চলবে না।“
ইশিগামি আবার লাশের পকেটগুলো তল্লাশি করতে লাগলো। একটা চাবি পাওয়া গেলো, সেটার সাথে যে রিঙটা আছে সেখানে লেখা ৩০৫।
ইয়াকোকে দেখে মনে হলো না সে চাবিটা চিনতে পেরেছে।
এ সময় পাশের বাসা থেকে ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের মৃদু আওয়াজ ভেসে আসলো। মিশাতো ওখানে সবকিছু যতটা সম্ভব ভালোভাবে পরিস্কার করার চেষ্টা করছে।
যেভাবেই হোক ওদেরকে উদ্ধার করতে হবে এই বিপদ থেকে, ইশিগামি মনে মনে বলল। এত সুন্দর একজন মহিলার সাথে অন্য কোনও উপায়ে ঘনিষ্ঠ হতে পারবে না সে। তার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করতে হবে ওদেরকে বাঁচানোর।
লাশটার দিকে তাকালো সে। একটা জড় পদার্থের সাথে আর কোন পার্থক্য নেই ওটার এখন। লোকটার মুখ দেখে অবশ্য মনে হচ্ছে, বয়স কম থাকা অবস্থায় খুব সুন্দর ছিল সে। গত কয়েক বছরে নিশ্চয়ই ওজন বেড়ে গিয়েছিলো।
আর ইয়াসুকো এই লোকটার প্রেমেই পড়েছিলো। কেমন যেন ঈর্ষাবোধ হতে লাগলো ইশিগামির। কিন্তু মাথা নেড়ে ওসব চিন্তা ঝেড়ে ফেলল সে। এই সময়ে এমন চিন্তা-ভাবনা আসছে কিভাবে মাথায়?
“তার সাথে ইদানিং কারো ভালো যোগাযোগ ছিল?” ইশিগামি আবার প্রশ্ন করায় ফিরে গেলো।
“আমি জানি না। বেশ কিছুদিন যাবত আমাদের কোন দেখা-সাক্ষাত ছিল না।”
“আগামিকাল সে কি করতো সে ব্যাপারে জানেন কিছু? কারো সাথে দেখা করার কথা ছিল?”
“না, আমি কিছুই বলতে পারছি না এ ব্যাপারে, দুঃখিত,” ইয়াসুকো বলল।
“আরে, আমি এমনি জিজ্ঞেস করছিলাম। আপনার জানার কথাও নয় এগুলো,” এই বলে ইশিগামি লোকটার ঠোঁটদুটো ফাঁকা করে দাতগুলো পরীক্ষা করে দেখলো। একটা দাঁত সোনা দিয়ে বাঁধানো। “তার মানে ডেন্টিস্টের কাছে ওনার দাঁতের রেকর্ড থাকবে।”
“আমরা যখন বিবাহিত ছিলাম তখন সে নিয়মিত দাঁতের ডাক্তারের কাছে যেত।”
“সেটা কত বছর আগের কথা?”
“পাঁচ বছর ধরে আমাদের ডিভোর্স হয়েছে।”
“পাঁচ বছর? তাহলে তো এতদিনে পুরনো রেকর্ড ফেলে দেয়ার কথা। আচ্ছা পুলিশের কাছে ওনার কোন ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে?”
“আমার মনে হয় না। অবশ্য ডিভোর্সের পরে যদি কিছু ঘটে থাকে সে ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না।”
“তাহলে সে সম্ভাবনাও আছে।”
“হতে পারে…”
লোকটা যদি বড়সড় কোন অপরাধ না-ও করে থাকে তবুও পুলিশের কাছে তার রেকর্ড থাকাটা অসম্ভব কিছু নয়। কারণ ট্রাফিক আইন ভাঙলেও এখানে থানায় যেতে হয়।
তার মানে তারা যেভাবেই লাশটার বন্দোবস্ত করুক না কেন, এক না এক সময়ে সঠিক পরিচয় ঠিকই বের হয়ে আসবে সেটা খুঁজে পাওয়া গেলে। এটা তাদেরকে মেনে নিতেই হবে। তবুও, তাদের সময় নিয়ে সবকিছু করতে হবে। আঙুলের ছাপ পুরো বিষয়টাকে আরো জটিল করে তুলবে।
পরিস্থিতি সহজ নয় মোটেও। লাশটা খুঁজে পাওয়ার পর পুলিশ অবশ্যই হানাওকাদের বাসায় আসবে। আর পুলিশি জেরার মুখে মা-মেয়ে কতক্ষণ টিকবে এ ব্যাপারে ইশিগামি নিশ্চিত নয়। দূর্বল কোন গল্প ফেঁদে বসলে গোয়েন্দারা খুব সহজেই সেটা ধরে ফেলবে। কাহিনীতে কোন অসঙ্গতি চোখে পড়ামাত্র সেটা নিয়ে ঘাটতে শুরু করবে তারা।
তাদেরকে খুব যৌক্তিকভাবে একটা গল্প সাজাতে হবে এই বিপদ থেকে বাঁচতে হলে। আর যুক্তি দিয়ে চিন্তা করলে যেকোন সমস্যারই সমাধান করা সম্ভব।
চোখ বন্ধ করে চিন্তা করতে লাগলো ইশিগামি। গণিত নিয়ে কোন সমস্যায় পড়লে এভাবেই চিন্তা করে সমাধান বের করে সে। অন্য সব চিন্তাগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে কেবল গণিত নিয়েভাবে। সূত্রে সূত্রে ভরে ওঠে মাথার ভেতরটা। কিন্তু এবার কোন সূত্র নয়, বরং অন্য ব্যাপার ঘুরতে লাগলো তার মাথায়।
কিছুক্ষণ পর চোখ খুলল সে। অ্যালার্ম ঘড়িটার দিকে তাকালো। সাড়ে আটটা বাজে। এরপর ইয়াসুকোর দিকে তাকালে একটা ঢোক গিলে পিছিয়ে গেলো সে।
“ওনার কাপড়চোপড়গুলো খুলতে আমাকে সাহায্য করুন।”
“কি?” দারুণ অবাক হলো সে।
“লাশের গা থেকে সব জামা কাপড় খুলে ফেলতে হবে। আর সেটা করতে হবে লাশ শক্ত হয়ে যাবার আগেই,” লাশের গা থেকে জ্যাকেট খুলতে খুলতে বলল সে।
“ঠিক আছে,” এই বলে ইয়াসুকো এগিয়ে আসলো সাহায্যের জন্যে। কিন্তু তার হাত কাঁপতে লাগলো।
“আচ্ছা থাক, আপনি বরং আপনার মেয়েকে সাহায্য করুন গিয়ে। আমি এদিকটা সামলাচ্ছি,” ইশিগামি বলল।
“আমি আসলেই দুঃখিত,” আস্তে করে এটা বলে উঠে দাঁড়াল সে। “মিস হানাওকা,” পেছন থেকে ইশিগামি ডাক দিলে সে ঘুরে তাকালো। “আপনার একটা অ্যালিবাই দরকার।”
“অ্যালিবাই? কিন্তু আমার তো কোন অ্যালিবাই নেই।”
“এজন্যেই তো একটা অ্যালিবাই তৈরি করতে হবে আমাদের,” বলল সে। “আমার ওপর ভরসা রাখুন। একটু যুক্তি দিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলে এই বিপদ থেকে বেঁচে যাবো আমরা।”