ক্ষ্যাপা তিনজন – ৫

পাঁচ

তাকিয়ে থেকে রাইডারদের যাওয়া দেখে রনির দিকে মুখ ফেরাল সায়মন। ওর চেহারায় বিস্ময়ের ছাপ সুস্পষ্ট।

‘ওহ্, দারুণ ফাস্ট তোমার হাত!’ বলল সে। ‘বার্কার ছিল একজন পেশাদার পিস্তলবাজ!’

‘তাই নাকি?’ খালি কার্তুজ ফেলে পিস্তল দুটোয় গুলি ভরে খাপে রাখল রনি। ‘শার্সি তাহলে কিছু পেশাদার গানম্যান পুষছে?’

‘ওর লোকজন প্রত্যেকেই পিস্তলবাজ। আজ তুমি আমার জীবন বাঁচিয়েছ। লোকগুলো আমাকে খুন করার উদ্দেশ্য নিয়েই এখানে এসেছিল। আরও অনেককে ওরা এইভাবে মেরেছে।’ একটা খুশি খুশি ভাব ফুটে উঠেছে র‍্যাঞ্চারের চেহারায়। ‘আজ ওদের কিছুটা শিক্ষা হয়ে গেল। এর আগে কেউ ওদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সাহস পায়নি। ওরা বুক ফুলিয়ে যা-খুশি তাই করে বেড়িয়েছে।’

‘তোমার গরু খোয়া যাচ্ছে?’

‘কিছু, কিন্তু খুব সামান্যই। ওদের বড় কোন মতলব আছে বেশ বুঝতে পারছি।’

‘ম্যাকক্লিল্যানের ব্যাঙ্ক ডাকাতি সম্পর্কে তুমি কিছু জানো?

চট করে মুখ তুলে তাকাল সায়মন। ‘জানি? না, জানি না, তবে ওই বিষয়ে আমি কিছু চিন্তা-ভাবনা করেছি। ওই লোকগুলো দিব্যি টাকা নিয়ে সটকে পড়ল। প্ল্যান মাফিক কাজ করেছে ওরা-অত্যন্ত ধূর্ত প্ল্যান!’

ডি বার পর্যন্ত বাকি পথ ওদের প্রায় নীরবেই কাটল। পাশ দিয়ে ডায়মণ্ড ক্রীক বয়ে যাচ্ছে। র‍্যাঞ্চহাউস, আস্তাবল, বাঙ্কহাউস আর করাল একটা চারকোনা জায়গা ঘিরে রেখেছে। ভিতরে ঢোকার জন্যে একটা কাঠের গেট রয়েছে। অ্যাপাচিদের বিরুদ্ধে লড়ার জন্যেই এই ব্যবস্থা।

‘তিন-চারবার আমাদের ওপর অ্যাপাচিরা হামলা চালিয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই আমরা ওদের হটিয়ে দিয়েছি।’ একটা টিনের বেসিনে রনির মুখ-হাত ধোয়ার ফাঁকে কথা বলছে সায়মন। ‘অবশ্য একবার আমরা একজন কাউহ্যাণ্ডকে খুইয়েছি। লোকটা বাইরে রয়ে গেছিল।’

খাবার-ঘরটা নিচু ছাদের লম্বা একটা ঘর। শক্ত গড়নের এক মেক্সিকান মহিলা ভিতরে ঢুকে টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখতে শুরু করল। অল্পক্ষণের মধ্যেই কাউহ্যাণ্ডরা দল বেঁধে ঢুকে যার-যার জায়গায় বসে খাওয়া শুরু করল। খাবারটা ভাল। পরিমাণেও যথেষ্ট। রনি টের পায়নি ওর কতটা খিদে পেয়েছে, মাংসের প্লেটটা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে বড় আরেক চাকা মাংস তুলে নিল সে।

খাওয়া শেষ করে রনি উঠতে যাচ্ছে দেখে হেসে উঠল ড্রিল। ‘করছ কি?’ বলল সে। ‘আসল জিনিসই তো তোমার খাওয়া হয়নি! এই মেক্সিকান মহিলা সীমান্তের এপারে এসে একটা রান্না খুব ভাল শিখেছে-চমৎকার অ্যাপ্‌ল পাই বানায়।’

চট করে আবার বসে পড়ল রনি। কাপে কফি ঢেলে নিল।

‘আজকে বার্কারকে দেখলাম,’ মন্তব্য করল একজন কাউহ্যাণ্ড। ‘রেঞ্জে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। আমি ধারণা করেছিলাম তোমাকে খুঁজছে। আমরা সবাই মিলে বেরোবার জোগাড় করছি, এই সময়ে দেখলাম তুমি ফিরছ।’

‘ভাল মত দেখে নিয়েছ তো?’ বলল সায়মন, ‘কারণ ওকে আর তুমি দেখতে পাবে না। ‘

সে চিৎকার করলেও হয়তো এত দ্রুত সবার মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারত না। টেবিলে অ্যাপ্‌ পাই হাজির হয়েও ওদের মনোযোগ টলাতে পারল না। ওরা ড্রিলের ওপর থেকে চোখ সরিয়ে রনিকে দেখে আবার ড্রিলের দিকে তাকাল। লাল চুলওয়ালা একজন কাউহ্যাণ্ড ব্যাখ্যা দাবি করল।

শান্ত ভাবে, সবার আকুতি ভরা নজর উপেক্ষা করে ফর্ক দিয়ে অ্যাপ্‌ল্‌ পাই কাটল সায়মন। পাইটা পুরো আড়াই ইঞ্চি চওড়া, এবং রসাল। পশ্চিমের কোন র‍্যাঞ্চে একটা পাইকে চারটের বেশি ভাগ করার কথা কেউ ভাবতেই পারে না।

নীরবে পাই চিবিয়ে কফিতে একটা চুমুক দিল সায়মন। শেষে লাল চুলের লোকটাই আবার বলল, ‘আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারছি না-কি ঘটেছে?’

‘আমার সাথে বার্কারের কিছু কথা কাটাকাটি হয়েছে আজ,’ বলল সায়মন। ‘এই বন্ধু আমার পক্ষ নিল। তারপর একটা ভুল করে বসল বার্কার।’

কাপটা তুলে একটা লম্বা চুমুক দিয়ে ওটা আবার নামিয়ে রাখল র‍্যাঞ্চার।

‘অর্ধেক পেটে রেখে কথা বোলো না!’ খেপে উঠল লাল চুলের লোকটা, ‘কি ঘটেছে তাই বলো!’

হাসল সায়মন। ‘বললাম তো ভুল করে বসল বার্কার। সত্যিই ভুল করল, পিস্তলের দিকে হাত বাড়াল সে।’ ঘড়ি দেখার ভান করল র‍্যাঞ্চার। ‘এই সময়ে সার্কেল এইচে ওরা বার্কারকে বুট হিলে কবর দেয়ার ব্যবস্থা করছে।’

সবাই ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ‘মানে-তুমি ওকে হারিয়ে দিয়েছ?’

প্রশ্ন করল একজন।

‘আমি না,’ বলল সায়মন। ‘আমার এই বন্ধু। ওর দুটো পিস্তলই একসাথে গর্জে উঠল। একটা গুলি বার্কারের পকেটে তামাকের থলি ফুটো করল, অন্যটা ফিউরির হাত থেকে ওর পিস্তলটা ফেলে দিল। জিনের ওপর স্থির অপেক্ষায় থাকল আমার বন্ধু-কিন্তু চোখের সামনে ওর বিদ্যুৎ-গতি ড্র দেখার পর ওদের কারও ঝামেলা করার শখ থাকল না। এই সময়ে আমি আমার রাইফেল বাগিয়ে ধরলাম। ড্যাশার প্রস্তাব দিল ওরা যেন লাশ তুলে নিয়ে সরে পড়ে।’

‘ড্যাশার?’ রেড সামনে ঝুঁকে রনিকে খুঁটিয়ে দেখল। ‘মানে, বার ২০-র রনি ড্যাশার?

‘বার ২০-তে ছিলাম,’ স্বীকার করল রনি। ‘এখন ঘুরে বেড়াচ্ছি।’

‘তুমি এদিকে কিছুদিন থেকে গেলে ভালই হয়,’ গম্ভীর ভাবে বলল রেড। ‘এখানে বুমার নামে একটা লোক আছে, ওর সাথে তোমার দেখা হওয়া দরকার।’

‘ওকে সময় দাও,’ বলল সায়মন। ‘ও ফিউরিকে বলেছে সে যেন শার্পিকে খবর দেয় রনি ড্যাশার শীঘ্রি দেখা করতে আসছে। শার্পি যেন কার্পেট বিছিয়ে, বা পিস্তল হাতে, যেভাবে খুশি তৈরি থাকে!’

‘না!’

‘হ্যাঁ, ঠিক ওই কথাই বলেছে!’

পাইটা সত্যিই ভাল। দ্বিতীয় একটা টুকরো নিজের প্লেটে তুলে নিল রনি। ওদিকে চেয়ে সায়মন মন্তব্য করল, ‘এই র‍্যাঞ্চের খাওয়াটা দারুণ। কেউ কাজ করতে চাইলে তার এখানেই কাজ নেয়া উচিত!’

রনি দাঁত বের করে হাসল, কিন্তু কিছু বলল না। পরে র‍্যাঞ্চের কর্মচারীদের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করল, ‘বাড হ্যাডলের মেয়েটাকে ইদানীং কেউ দেখেছ? আমি ওকে শেষ যখন দেখি তখন একেবারে হাড্ডিসার ছিল।’

রেড হাসল। ‘সেটা নিশ্চয় বহুদিন আগের কথা,’ বলল সে। ‘বর্তমানে পেকোসের এপাশে ওর মত সুন্দরী আর দুটো নেই! বিশ্বাস করো, ওর প্রতিটা অঙ্গ অপূর্ব সুন্দর!’

‘ওর হাতটা কেমন, রেড?’ হাসছে সায়মন। অন্যান্য কাউহ্যাণ্ডও শব্দ করে হেসে উঠল।

রেডের মুখটা লাল হয়ে উঠল। অপ্রস্তুত হয়ে ক্ষুব্ধ চোখে সবাইকে একবার দেখে রনির দিকে ফিরল। ‘ওদের কথা তুমি শুনো না! মানুষের পিছনে লাগা ওদের স্বভাব!’

এলোচুলের একজন কাউবয় মুখ তুলে রনির দিকে চেয়ে চোখ টিপল। ‘মেয়েটাকে একবার নাচের পার্টিতে নিয়ে গেছিল রেড। পরে সুজানাকে চুমো খাওয়ার চেষ্টা করেছিল। ওহ্, ওকে কী চড়টাই না মারল মেয়েটা! তিন দিন পাঁচ আঙুলের ছাপ ছিল ওর গালে! তবু ওর লজ্জা নেই-প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে, লুকিয়ে লুকিয়ে মেয়েটাকে দেখতে যেত। হ্যাডলের অ্যাকসিডেন্টের পর অবশ্য মেয়েটা আর ওখানে বেড়াতে যায় না।’

রেড সরাসরি রনিকে প্রশ্ন করল, ‘তুমি কি সত্যি-সত্যিই সার্কেল এইচে যাচ্ছ?’

‘হ্যাঁ, সম্ভবত আগামীকাল।’

‘আমরা সবাই তোমার সাথে যাব,’ ঘোষণা করল সায়মন।

‘না, আমি একা যাব,’ বলল রনি। তারপর আবার বলল, ‘তবে দেখা না দিয়ে ওখানে পৌঁছার পথ যদি আমার জানা থাকে তাহলে সুবিধা হবে।’

একটা বুড়ো মুখ তুলে তাকাল। ‘দুটো রাস্তা আছে, কিন্তু দুটোই কঠিন। প্রথমটা হিলার পশ্চিম শাখা ধরে হট স্প্রিঙসের ছয় মাইল উপরে পৌছে ট্রেইলটা উত্তরে তিন মাইল গেছে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে, তারপর পশ্চিমে মোড় নিয়ে সার্কেল এইচের দিকে এগিয়েছে।

‘দ্বিতীয়টা ওয়েস্ট ফর্কের অন্যপাশে লিট্ল ক্রিক ধরে উপরে উঠে হোয়াইটওয়াটার ক্রিক যেখানে মিশেছে সেখানে পার হয়েছে। ওটার খুব কাছেই একটা কেবিন আছে। কেবিন থেকে সার্কেল এইচ র‍্যাঞ্চ ঠিক ছয় মাইল পশ্চিমে। ফর্কের উত্তর দিকের ভাঙাচোরা এলাকা দিয়ে এগোলে র‍্যাঞ্চহাউসের খুব কাছে পৌঁছানো সম্ভব।’

‘ওটার পশ্চিমে মগোলন্‌স্ আর জার্‌কি মাউন্টিস্,’ বলল সায়মন। ‘বিশ্বাস করো ওটা খুব রুক্ষ এলাকা। জ্যাকসন মেসার পর থেকেই পাহাড় আরও উঁচু হতে শুরু করেছে। শোনা যায় ওখানে টার্কিফেদার নামে একটা গিরিপথ আছে, কিন্তু আমরা কেউ দেখিনি বা জানি না ওটা কোথায়। হয়তো নিছক উড়ো কথা।’

মাথা নাড়ল বুড়ো। ‘ওখানে সত্যিই একটা পাস্ আছে, সায়মন। আমি নিজে কখনও ওই পথে পার হইনি বটে, কিন্তু যারা পেরিয়েছে তাদের মুখেই শুনেছি। স্নো ক্রীক ট্রেইলটা নিচে নেমে প্রায় মিলিয়ে গেছে, কিন্তু জন্তু- জানোয়ারের আবছা ট্রেইলের মত এগিয়ে ওটা মগোলন্‌স্ পার হয়ে সিলভার ক্রীক ট্রেইলে পড়ে আলমায় গেছে। কেউ ঠেকায় পড়লে টার্কিফেদার পাস্ পেরিয়ে হোয়াইটওয়াটার বলডিকে দক্ষিণে রেখে পশ্চিমে এগোলে আলমায় পৌঁছতে পারবে।’

‘ভাল,’ মন্তব্য করল সায়মন, ‘কিন্তু তোমার ওই পথে চলার কোন প্রয়োজন পড়বে না, তুমি লিট্ল ক্রিক ট্রেইল ধরেই সার্কেল এইচে পৌঁছতে পারবে। ওই পথে র‍্যাঞ্চহাউসের দুশো গজের মধ্যে হাজির হলেও কেউ টের পাওয়ার সম্ভাবনা কম।’

মাথা ঝাঁকাল রনি। যা শুনেছে সব মনের মধ্যে ভাল ভাবে গেঁথে নিল। এসব ব্যাপারে পশ্চিমের লোকজনের স্মৃতিশক্তি অসাধারণ। কোনদিন ওই এলাকায় না গেলেও কল্পনায় পুরোটা ছবির মত দেখতে পায়। নিখুঁত বিবরণ দেয়ার ক্ষমতাও ওদের অদ্ভুত।

.

পরদিন সকালে রনির ঘুম ভাঙল। রাতটা সায়মনের র‍্যাঞ্চেই কাটিয়েছে সে। আড়মোড়া ভেঙে মাথার পিছনে হাত রেখে বাঙ্কেই শুয়ে থাকল। সে আবিষ্কার করেছে আবার ঘুমিয়ে না পড়লে বিছানাই চিন্তা করার জন্যে সবথেকে ভাল জায়গা।

সন্ধ্যা থেকে শুরু করে অনেক রাত পর্যন্ত বুড়ো কাউহ্যাণ্ডের সাথে আলাপ করেছে ও। জায়গা মত প্রশ্ন করে প্রয়োজনীয় অনেক খুঁটিনাটি প্রশ্ন জেনে নিয়েছে। কথা বলতে পছন্দ করে বুড়ো, রনির মত মনোযোগী শ্রোতা পেয়ে সেও মন খুলে গল্প করেছে।

সার্কেল এইচে লোকজনের সংখ্যা কত জিজ্ঞেস করায় কাউহ্যাণ্ড বলেছিল, ‘আসা-যাওয়ার মধ্যে জনা বিশেক আছে।’ কিন্তু পরক্ষণেই চতুর বুড়ো রনির উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে ধূর্ত দৃষ্টিতে চেয়ে বলেছিল, ‘তোমার যদি ওখান থেকে দ্রুত সরে পড়ার প্রয়োজন হয় তবে সোজা পশ্চিমে যেয়ো। তাহলে ওদের বাধ্য হয়ে দুই ভাগ হয়ে এগোতে হবে। একদল ক্রসিঙের ওই কেবিনটার দিকে যাবে, অন্যদল জ্যাকসন মেসার উত্তরে ছুটে মিডল্ ফর্কের ক্রসিঙে পৌঁছবে। ওইভাবে ওরা ধারণা করবে তোমাকে আটকে ফেলেছে-কিন্তু তুমি লিলি পীক পার হয়ে পশ্চিমে জার্‌কিসে গিয়ে নিরাপদে ঘাঁটি গাড়বে। ওরা যদি তোমার খোঁজে ওখানে ঢোকে, তাহলে বুঝতে হবে ওদের চেয়ে বড় গাধা আর কেউ নেই। তবে অ্যাপাচিদের জন্যে তোমাকে চোখ খোলা রাখতে হবে!’

কম্বল সরিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে তৈরি হয়ে নিল রনি। সবার সাথে নাস্তা সেরে বেরিয়ে পড়ল। আজ সায়মনের দেয়া একটা বাকস্কিনে চড়েছে ও, টপারকে বিশ্রাম নেয়ার জন্যে র‍্যাঞ্চে রেখে এসেছে। টপারের মত না হলেও ঘোড়াটা পাহাড়ী পথে কিভাবে চলতে হয় বোঝে। ভাল ঘোড়া।

মাঝ-দুপুরের দিকে কেবিনের ট্রেইলে এসে উঠল রনি। এই প্রথম কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছে। শুনেছে এই ট্রেইলটা আউটলদের কাছে পরিচিত এবং ওরা মাঝেমাঝে এটা ব্যবহারও করে। ট্রেইল ধরে এগোনো বোকামি হবে, তাই ক্যানিয়নে নামল সে।

অগভীর ঝর্না ধরে দুমাইল এগিয়ে দেখল সামনে দশফুট উঁচু দেয়ালের মত পথ আটকে রেখেছে প্রায় খাড়া একটা জলপ্রপাত। নিজে বেয়ে উপরে উঠতে পারবে বটে, কিন্তু ঘোড়া নিয়ে ওঠা অসম্ভব। বুঝল ফিরে যেতে হবে।

কিন্তু আশ্চর্য! ঘোড়াটাই জলপ্রপাত এড়িয়ে উপরে ওঠার পথ খুঁজে বের করল। একটু ডান দিকে সরে পাথরের ফাঁকে-ফাঁকে সাবধানে পা ফেলে এগিয়ে গেল বাকস্কিন। কখনও পানিতে নামছে আবার বেরোচ্ছে।

উপরে উঠে দেখল আরেকটা ঝর্না পশ্চিম দিক থেকে বয়ে এসেছে। দুটো ঝর্না যেখানে মিলেছে তার কিছুটা উপরে আছে ও। কেবিনের পথ খুঁজে বের করে জঙ্গলে ঢুকে থামল রনি। ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে কিছু ঘাস ছিঁড়ে নিয়ে ঘোড়ার পাগুলো ডলে দিল। কারণ, বরফ গলা ঝর্নার পানি অত্যন্ত ঠাণ্ডা। ঘোড়াটাকে বেঁধে কেবিনের দিকে হেঁটে এগিয়ে গলার স্বর শুনতে পেল।

ঝপ করে মাটিতে শুয়ে ক্রল করে একটা গাছের গুঁড়ির পিছনে আড়াল নিল। মাথাটা সামান্য উঁচু করে শিকড়ের ওপর দিয়ে উঁকি দিয়ে দুজনকে দেখতে পেল রনি। একজন কেবিনের বারান্দায় বসে আছে, অন্যজন ঘোড়ার পিঠে। যে, মাত্র পৌঁছেচে সে-ই কথা বলছে।

‘হ্যাঁ, বার্কার।’ নিচু স্বরে একটু গুঞ্জন শোনা গেল, তারপর একই লোক জবাব দিল, ‘গতকাল বিকেলে। লোকটা বলেছে ওর নাম রনি ড্যাশার।’

‘লোকটা একাই আছে?’ সন্দিগ্ধ স্বরে প্রশ্ন করল গার্ড।

‘তাই মনে হয়,’ জবাব দিল আরোহী। ‘ও সায়মন ড্রিলের সাথে ছিল, কিন্তু জনি রিগ ওকে ক্লিফটনসে দেখেছে, তখন সে একাই ছিল।’

‘ও একা থাকলেই বাঁচি,’ অসন্তোষ প্রকাশ করল গার্ড। ‘ওই আউটফিটের কথা আমি শুনেছি, ওদের একজনের সাথে কারও ঝামেলা হলেই দেখা যায় সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ড্যাশারের তরুণ সঙ্গী ডাগ মারফি একাই একটা কঠিন রাসলার দলকে শেষ করেছিল। ডাচ বিলকেও সে-ই গুলি করে মেরেছে।’

‘ড্যাশারের মিস নেই, বার্কারের হার্ট ফুটো করে দিয়েছে ও।’

‘ফিউরির কি হয়েছে?’

‘ফিউরি? ও আহত গ্রিজলির মত মেজাজ দেখাচ্ছে। ড্যাশার গুলি করে ওর হাত থেকে পিস্তল ফেলে দিয়েছে। হাতের উলটো পিঠে গভীর খাঁজ কেটে গুলিটা বেরিয়ে গেছে—ওই জখম চট করে সারবে না। সে বলে বেড়াচ্ছে হাত ভাল হলেই ড্যাশারকে খুন করবে।’

ঘোড়ার মুখ ফেরাল রাইডার। ‘শার্পির নির্দেশ মত এদিককার খবর নিয়ে গেলাম। পরে আবার দেখা হবে।’

‘থেকে যাও। আমার কাছে এক প্যাকেট তাস আছে।’

‘তা হয় না। শার্পি ইদানীং অস্থির হয়ে উঠেছে। হয়তো এখানেও এসে হাজির হতে পারে-তুমি তো জানো তাহলে কি ঘটবে।’

ঘাসের ওপর শুয়েই রনি লোকটাকে ঘোড়া হাঁটিয়ে চলে যেতে দেখল। কেবিনের গার্ড উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে ক্লিফের ধার থেকে রাইডারকে ঝর্না পার হতে দেখে আবার ফিরে এল। তারপর হাতের রাইফেলটা নামিয়ে রেখে সাপার তৈরি করায় মন দিল।

রনি উঠতে গিয়েও একটু ভেবে চুপচাপ শুয়েই থাকল। সাপার তৈরি হওয়ার আগে লোকটাকে কব্জা করে লাভ নেই-তাহলে নিজের সাপার নিজেই তৈরি করতে হবে। লোকটাকে যথেষ্ট সময় দিয়ে কোনাকুনি ভাবে কেবিনের দিকে এগোল, যেন ভিতর থেকে ওকে দেখা না যায়।

মাঝ-বয়সী গার্ড কেবিনে গজর-গজর করছে। হঠাৎ একটা ফ্রাইঙ-প্যান হাতে দরজা দিয়ে বেরিয়ে বারান্দার কিনারে দাঁড়িয়ে প্যান-ধোয়া পানি উঠানে ফেলল। ফেরার জন্যে ঘুরতেই দেখল দরজার পাশে পিস্তল হাতে দাঁড়িয়ে আছে রনি।

থমকে আড়ষ্ট হয়ে ঢোক গিলল গার্ড। ‘তুমি কে? কি চাও?’ কোনমতে নিজেকে সামলে নিয়ে সে প্রশ্ন করল।

‘আমি ড্যাশার,’ শান্ত স্বরে বলল রনি, ‘সাপার চাই। দুজনের জন্যে যথেষ্ট তৈরি করেছ?’

অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে আছে লোকটা। ‘করব; কিন্তু তুমি ওই পিস্তলটা নামাও। আমি কোন দোষ করিনি।’

‘তাহলে গানবেল্টটা খুলে নিচে ফেলো,’ সদয় স্বরে বলল রনি। ‘বাধ্য না হলে তোমাকে মারার ইচ্ছা আমার নেই।’

বাম হাতে বেল্টটা খুলে নিচে ফেলে রনির নির্দেশ মত সরে দাঁড়াল গার্ড। কেবিনে ঢুকে দরজার পাশে দেয়ালে হেলান দেয়া রাইফেল থেকে গুলিগুলো বের করে নেয়ার পর বারান্দা থেকে গার্ডের-পিস্তল তুলে লোকটাকে সামনে রেখে কেবিনে ফিরল।

স্টোভে খাবার তৈরি করছে গার্ড। দুটো ট্রেইলের ওপরই নজর রাখার জন্যে সুবিধা মত জায়গা বেছে নিয়ে বসেছে ড্যাশার। ব্যাপারটা লক্ষ করে লোকটা মন্তব্য করল, ‘নজর রেখে লাভ নেই; এখন আর কেউ আসবে না।’

‘না এলেই ভাল,’ নির্বিকার স্বরে বলল রনি। ‘নইলে ঝামেলা কমাতে হয়তো তোমাকেই আমার আগে গুলি করতে হবে।’

‘না! আমাকে মেরো না!’ লোকটা ভয় পেয়েছে। ‘সত্যি বলছি আমি চুপচাপ মেঝের ওপর বসে থাকব-কোন ঝামেলা করব না! গুলি খাওয়ার শখ আমার নেই!’

দুজনে মুখোমুখি বসে নীরবে খাচ্ছে। খাওয়ার ফাঁকে লোকটা বারবার ভীরু চোখে তাকাচ্ছে। রনির মুখ দেখে বোঝার চেষ্টা করেছে শেষ পর্যন্ত সে জানে বাঁচবে কিনা।

খাওয়া শেষ করে টেবিল থেকে সরে বসল রনি। গার্ডের সন্ত্রস্ত অবস্থা টের পেয়ে সে বলল, ‘তোমাকে ভালমানুষ বলেই মনে হচ্ছে। এখনই ঘোড়ায় চেপে সরে পড়াই তোমার উচিত-সোজা দক্ষিণে।’

‘শার্সি আমাকে খুন করে ফেলবে!’ প্রতিবাদ করল গার্ড। ওর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। বারবার ঢোক গেলায় কণ্ঠা ওঠা-নামা করছে। ও আমাকে ছাড়বে না!’

‘শার্পি এদিকে ব্যস্ত থাকবে, তোমার পিছনে ধাওয়া করার সময় পাবে না ও। সার্কেল এইচ কয়েকদিনের মধ্যেই নরক হয়ে উঠবে। প্রচণ্ড গোলাগুলি হবে ওখানে। শার্পির খেলা শেষ। অনেক মানুষ মরবে। আমি তোমাকে একটা শেষ সুযোগ দিচ্ছি, মিছে ওর মত একটা ঠগের জন্যে বেঘোরে প্রাণ হারিয়ে তোমার কোন লাভ নেই।’

ঢোক গিলে চোয়াল চুলকাচ্ছে গার্ড। রনি ড্যাশারের অসাধারণ ক্ষমতার কথা সে জানে, কিন্তু তবু পুরো আস্থা আসছে না।

‘এত লোকের বিরুদ্ধে তুমি একা কি করবে?’ মনের দ্বিধাটা কথায় প্রকাশ করল গার্ড।

‘আমি একা কে বলল? বার ২০ থেকে আরও লোক আসছে। চূড়ান্ত একটা নিষ্পত্তি না করে আমরা কেউ ফিরব না।’ রনি জানে কথাটা সত্যি না হলেও পুরোপুরি মিথ্যে নয়। বাক উইলিয়ামসের সাথে এবিষয়ে কোন কথা না হলেও সম্ভবত বুড়ো লোক পাঠাবে বলেই ও ধারণা করছে।

গার্ডের মনে আর সন্দেহ রইল না। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল ও।

‘ঠিক আছে, আমার ঘোড়াটা ওদিকে গাছের আড়ালে রাখা আছে-আমি সরে পড়ছি।’

নিজে সামনে দাঁড়িয়ে থেকে ওকে রওনা করিয়ে দিল রনি। তারপর বাকস্কিনটাকে কেবিন থেকে কিছুটা দূরে নিয়ে রাতের জন্যে গাছের তলায় ক্যাম্প করল।

ভোর হওয়ার আগেই বেরিয়ে পড়ল রনি। সার্কেল এইচ র‍্যাঞ্চহাউস যখন ওর চোখে পড়ল তখন পুবের আকাশ ফিকে হতে শুরু করেছে। একটা এভারগ্রীনসের ঘন ঝোপের ভিতর ঘোড়াটাকে বেঁধে হেঁটে এগিয়ে র‍্যাঞ্চহাউসের কাছাকাছি পাইনে ছাওয়া একটা ছোট টিলার ওপর পাথরের আড়ালে ঘাঁটি গেড়ে বসল। সকালে র‍্যাঞ্চের লোকজন সবাই একসাথে নাস্তা খাবে। তারপর কারা কাজে যাচ্ছে, আর র‍্যাঞ্চে কোথায় কে থাকল তা ভাল করে বুঝে নিয়ে তবেই সে নিচে নামবে। শার্পি বুমার, বা বাণ্ডি বুলের সাথে সামনা-সামনি কথা বলাই ওর উদ্দেশ্য।

একে-একে আটজনকে বাঙ্কহাউস থেকে বেরোতে দেখল রনি। পোশাক দেখে ওদের চিনে রাখল। হাতে পট্টি-বাঁধা লোকটা ফিউরি। আহত হলেও এখন সে নেকড়ের চেয়েও ভয়ানক। কারণ গানম্যানের কাছে গর্ব খর্ব হওয়ার থেকে বড় অপমান আর নেই।

নাস্তা সেরে কিছুক্ষণের মধ্যেই লোকগুলো ঘোড়া নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। কেবল ফিউরি আর একটা লম্বা লোক বাঙ্কহাউসেই রয়ে গেল। ধৈর্য ধরে অপেক্ষায় রইল রনি। শার্সি বা বাণ্ডিকে এখনও দেখতে পায়নি। লোকগুলো অদৃশ্য হওয়ার অল্পক্ষণ পরে একটা ছাই রঙের ঘোড়া উঠানে এসে থামল। ওটার আরোহী, বাণ্ডি। ওই ঘোড়াটাকেই এলক মাউন্টিনের দিকে যেতে দেখেছে বলে মনে হচ্ছে ওর।

মুখ তুলে চেয়ে র‍্যাঞ্চহাউসের বারান্দায় কারও সাথে কথা বলল বাণ্ডি।

‘হ্যাঁ, ভোরের আগেই রওনা হয়েছি। বীভারের লাইন কেবিনে ছিলাম।’ তারপর অন্য একটা প্রশ্নের জবাবে বলল, ‘না, পথে কাউকে দেখিনি।’

শার্সি বুমার বারান্দা থেকে নেমে এগিয়ে এল। ওকে দেখেই চিনতে পারল রনি, কারণ লোকটা অস্বাভাবিক রকম লম্বা। যদিও দূরত্ব বেশি নয়, তবু চোখে দূরবীন লাগিয়ে ওদের দুজনকে খুঁটিয়ে দেখল। শার্পি কি যেন বলায় ঝট করে মুখ তুলে তাকাল বাণ্ডি। ‘বার্কারকে মেরেছে?’ ওর স্বরে বিস্ময়।

উঠে নিজের ঘোড়ার কাছে ফিরে এল রনি। বিনোকিউলার স্যাডল-ব্যাগে রেখে জিনে চেপে বাকস্কিনটাকে হাঁটিয়ে টিলা থেকে নামল। উঠানের দুজন আর রনির মাঝে র‍্যাঞ্চহাউসের কোনাটা থাকায় ওকে দেখতে পায়নি কেউ। তিরিশ ফুটের মধ্যে চলে আসার পর ঘোড়ার খুরের শব্দে ওরা মুখ তুলে চাইল।

‘হাওডি, শাৰ্পি, বাণ্ডি!’ ওদের বুঝে ওঠার সময় দিল রনি। ‘আমি ড্যাশার।’

দুজনের কেউ নড়ল না। বিস্ময়ে আড়ষ্ট হয়ে গেছে। অপ্রত্যাশিত ভাবে রনিকে দেখে হতবাক।

‘ভাবলাম পুরানো বন্ধু হ্যাডলের সাথে দেখা করে যাই,’ শান্ত স্বরে বলল সে। ‘শুনেছি তোমরাও আছ।’

ঘোড়ার আড়াল নিয়ে নিচে নামল রনি। তারপর লাগাম ছেড়ে দিয়ে সামনে এগোল। জানে ঘোড়াটা স্থির দাঁড়িয়ে থাকবে।

স্বভাবজাত ভাবে পিস্তলের দিকে হাত বাড়াতে চাইছে শার্সি, রনিকে মেরে ফেলতে চাইছে, কিন্তু ওর সহজাত বুদ্ধি বাধা দিচ্ছে।

‘নিশ্চয়, ড্যাশার!’ বলল সে। ‘বুড়োর মুখে তোমার কথা অনেক শুনেছি। দুঃখের বিষয় লোকটা অসুস্থ। খুব খারাপ অবস্থা।’

‘তোমার কিছু লোকের সাথে পরশু আমার দেখা হয়েছিল,’ জানাল রনি। ‘ওরা ট্রেইলে আমাকে বাধা দিয়েছিল।’

‘হ্যাঁ, এমন একটা ঘটনা ঘটায় আমি দুঃখিত, ড্যাশার।’ শার্পি এখন নিজেকে সম্পূর্ণ সামলে নিয়েছে। মনেমনে পরবর্তী প্ল্যান আঁটছে। ‘রাসলারদের নিয়ে এদিকে অনেক ঝামেলা হচ্ছে, তাই রেঞ্জে স্ট্রেঞ্জার দেখলেই লোকজনের হাত নিশপিশ করে।’

ব্যাপারটা যে ড্রিলের রেঞ্জে ঘটেছে, এবং ড্রিলকেই ঠেকানো হয়েছিল, এই সত্যটা দুজনেই উপেক্ষা করল।

‘বাড কি ভিতরে? ওর সাথে একটু দেখা করতে চাই।’

‘সেও তোমাকে দেখলে খুশি হবে,’ শান্ত স্বরে বলল বুমার। ‘কিন্তু ঘণ্টা দুয়েকের আগে তা হবে না। দশটার আগে সে কখনও ওঠে না। ডাক্তারের নির্দেশ।’

ওর ঠাণ্ডা দৃষ্টি রনির চোখের ওপর স্থির হলো। পুরো এক মিনিট পরস্পরের দিকে চেয়ে রইল ওরা। তারপর শার্পির কঠিন মুখে হাসি ফুটে উঠল।

‘নাস্তা খেয়েছ? আমরা এইমাত্র খেয়ে উঠলাম। চলো, ভিতরে এসো।’

ফিউরি বাঙ্কহাউসের দরজায় দাঁড়িয়ে অবিশ্বাসে বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছে। রনি ড্যাশার এখানে! সম্মানিত অতিথিকে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে! রাগে জ্বলে উঠে এগোল সে, কিন্তু পরক্ষণেই ওর গতি ধীর হলো। হাতের অবস্থা খারাপ, অপেক্ষা করাই ভাল।

পরিস্থিতি বুঝে শার্পিই প্রথমে সিঁড়ি দিয়ে উঠে ভিতরে ঢুকল, ওর পিছনে বুল। এই বিশেষ ক্ষেত্রে অতিথিকে শেষে ঢুকতে দেয়াই ভদ্রতা।

টেবিল এখনও পরিষ্কার করা হয়নি। হাতের ইশারায় রনিকে বসতে বলে ওরাও বসল। চেঁচিয়ে আরও কফি আর একজনের জন্যে নাস্তা আনার নির্দেশ দিল শার্সি। রাঁধুনী ঘরে ঢুকে টেবিলে খাবার রাখল। মুখ তুলে দরজায় অপূর্ব একটা মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিস্ময়ে হাঁ হয়ে গেল রনির মুখ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *