ক্ষ্যাপা তিনজন – ১২

বারো

সাদা তুষারের পবিত্র আচ্ছাদনে ঢাকা আলমা শহরটা যেন নীরবে শুয়ে আছে। কেবল ঈগল সেলুনে যথারীতি উজ্জ্বল বাতি জ্বলছে আর খুব চড়া আওয়াজে যা চলছে, ওটাই ওদের মতে মিউজিক। জনা ছয়েক শক্ত চেহারার লোক অলস ভাবে সময় কাটাচ্ছে বারে-ওরা যে কবে শেষ পুরো একটা দিনের কাজ করেছে, তা অনেকেই মনে করতে পারবে না। তাসের টেবিলেও আছে কয়েকজন—সবাই, ড্যাশারকে কোথাও দেখা গেছে, এমন একটা খবর পাওয়ার অপেক্ষায় আছে। তবে, ওদের স্থির বিশ্বাস, ড্যাশার পাহাড়েই মারা গেছে। ভোর হতে আর বেশি বাকি নেই। পাঁচশো ডলার অনেক টাকা। ওই টাকার জন্যে পাঁচটা খুন করতেও ওরা দ্বিধা করবে না। কিন্তু সময় যতই যাচ্ছে নিরাশ হয়ে পড়ছে ওরা। এখন টাকা রোজগারের আশা ছেড়ে শুয়ে পড়ার কথা ভাবছে।

ভোর হওয়ার এক ঘণ্টা আগে সুজানা আর বাডকে নিয়ে পিছনের রাস্তা দিয়ে সোজা ডাক্তার অ্যাবটের বাসায় পৌঁছল রনি। লোকটা বাডের পুরানো বন্ধু। অত্যন্ত ক্লান্ত আর কাহিল অবস্থায় বাড়কে ডাক্তারের হাতে তুলে দিয়ে বেরোবার জন্যে ঘুরল সে। সুজানা ওর কনুই ছুঁলো।

‘রনি! কোথায় যাও?’ মেয়েটার স্বরে উদ্বেগ।

আগত ভোরের ধূসর আলোয় রনির নীল চোখে তুষার-শীতল একটা ভাব দেখতে পেল সুজানা। এমন আগে আর কখনও দেখেনি।

‘আমি যাচ্ছি,’ সোজাসাপ্টা গলায় বলল সে। ‘তুমি এখানে থেকে তোমার বাবার দেখাশোনা করো, সু। ওই ঈগল সেলুনের লোকগুলোর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি আমি। ওরা আমার জন্যেই অপেক্ষা করছে, ওদের নিরাশ করতে চাই না।’

‘খুব সাবধান, রনি। প্লীজ!’

‘অবশ্যই সাবধান থাকব আমি। ওদের একটা উচিত শিক্ষা হওয়া দরকার।’

রনির গালে আর চিবুকে খোঁচা খোঁচা দাড়ি গজিয়েছে। কঠিন আর হিংস্র হয়ে উঠেছে ও। তুষারের মধ্যে কষ্টকর যাত্রা, ফাইট না করে পালাতে বাধ্য হওয়ার তিক্ততা, একজন খোঁড়া লোক আর একটা অসহায় মেয়ের কাছ থেকে শার্পি বুমারের চুরি করার নীচ মনোবৃত্তি, ইত্যাদি সব মিলে ওর মনের অবস্থা এখন এমন একটা পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে ওই লোকগুলোর মোকাবিলা না করা পর্যন্ত ওর ঘুম, বিশ্রাম, সব হারাম হয়ে গেছে। এখনই ওকে একটা কিছু করতে হবে।

ওরা কেউ কিছু শুরু করলেই হলো। রাগে রনির সারা শরীর জ্বলছে, মুখটাও তেতো হয়ে আছে। সেলুনের জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে সময় নষ্ট করল না। সোজা দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকল সে। দরজা বন্ধ করার শব্দ ওর পিছনে ডবল-ব্যারেল শটগানের মতই গর্জে উঠল। চমকে ফিরে তাকাল সবাই। ওদের চোখ থেকে তন্দ্রার ভাব মুহূর্তে কেটে গেল।

দরজার সামনে পা ফাঁক করে দাঁড়িয়েছে রনি। চোখ দুটো বরফ-শীতল, কিন্তু ওর ভিতরে যেন প্রলয়-ভৈরব নাচছে। ‘আমি রনি ড্যাশার!’ আজ রাতে দ্বিতীয়বারের মত সে নিজের নাম ঘোষণা করে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল। ‘তোমরা কেউ আমাকে খুঁজছ?’

মেঝের সাথে যেন সবার পা সেঁটে গেছে। নিশ্চল মূর্তির মত চেয়ে আছে ওরা। ‘কে চাও, বলো!’ ওর স্বরটা ঠাণ্ডা, ভয়ানক। হিসহিসিয়ে সে আবার বলল, ‘শুনলাম আমার মাথার দাম নাকি পাঁচশো ডলার! তোমাদের মধ্যে কোন কয়োটি টাকাটা চাও? বলো! চেষ্টা করো!’

কেউ নড়ছে না। ওর ভয়ঙ্কর খ্যাপা চ্যালেঞ্জের মুখে অপ্রস্তুত অবস্থায় ধরা পড়েছে ওরা। যাকে মৃত বলে ধরে নিয়েছিল সেই লোকই হঠাৎ সশরীরে সামনে হাজির হয়ে ওদের হতবাক করে দিয়েছে। কেউ জবাব দিল না।

রাগে ফেটে পড়ল রনি। লম্বা পা ফেলে এগিয়ে বারের ওপর থেকে একটা হুইস্কি ভরা গ্লাস তুলে নিয়ে সামনের ছয়জনের চোখে-মুখে ছিটিয়ে মারল। তারপর গোড়ালির ওপর ঘুরে তাসের টেবিলটা মেঝের ওপর উলটে ফেলল। ‘এসো!’ আমন্ত্রণ জানাল সে। ‘যে কেউ, কিংবা সবাই! দেখি তোমরা টাকার বিনিময়ে কিভাবে মানুষ খুন করো!’

তবু কেউ নড়ল না। বারের লোকগুলো কেবল হাত তুলে চোখ মুছে চোখের জ্বালা কমাবার চেষ্টা করল। কিন্তু যারা তাস খেলছিল তারা নড়া দূরে থাক, মেঝের ওপর ছড়িয়ে পড়া তাস বা টাকা-পয়সার দিকে পর্যন্ত তাকাল না। একদৃষ্টে ওরা খেপা রনিকে দেখছে। প্রতিবাদে কেউ একটা কথাও বলল না।

‘ঠিক আছে! উঠে দাঁড়াও! তুমি প্রথম!’ তাসের টেবিলে বসা একজনকে দেখাল রনি। ‘পিস্তল টেবিলের ওপর রেখে তোমার ঘোড়া নিয়ে শহর ছেড়ে বেরিয়ে যাও!’

‘অ্যা? এই আবহাওয়ায়?’ লোকটা প্রতিবাদে আরও কিছু বলতে চেয়েছিল, কিন্তু রনিকে এক পা আগে বেড়ে পিস্তল ড্র করার জন্যে কনুই বাঁকা করে তৈরি হতে দেখে চুপ হয়ে গেল।

‘হ্যাঁ! এই তুষারের মধ্যে! আমি এর ভিতর পাহাড় পার হয়েছি—দেখি তোমাদের সেটা কতটা পছন্দ হয়! হ্যাঁ,’ একে-একে বাকি সবার দিকে তাকাল রনি, ‘তোমাদের সবাইকে বলছি! ঘোড়া নিয়ে শহর ছেড়ে বেরিয়ে যাও! কিন্তু তোমাদের পিস্তলগুলো এখানেই থাকবে!’

এবার মালিকের ওপর রনির দৃষ্টি স্থির হলো। হাঁটুতে রনির গুলি খেয়ে লোকটার ডান পা আড়ষ্ট হওয়ার পর সে আর ওটা ভাঁজ করতে পারে না-পা টেনে টেনে চলে। ‘তোমার কথা আমার মনে আছে, রাস্টি বেল। তুমিও আমাকে চেনো। এখনই এই সেলুন বন্ধ করে বিদায় হও! হলক্ট্রকের এপাশে আর থেমো না, বুঝেছ?’

‘শোনো, রনি, অনুনয় করল রাস্টি, ‘আমার পায়ের এই অবস্থা, তাছাড়া এখানে আমার টাকা খাটছে!’

‘তোমার কপাল খারাপ! যে লোকের সেলুনে এইসব খুনী আর বদমাশের আড্ডা, তাকে এখানে ব্যবসা করতে দেয়া হবে না! তুমি আমাকে জানো, রাস্টি। হয় দোকান বন্ধ করো, নইলে পিস্তল ধরো!’

একটা ঢোক গিলে দীর্ঘশ্বাস ফেলল বেল। ‘যাক, হয়তো এদিকে এবার শীতটা একটু কড়াই পড়বে।’ ধীরে কামরার চারপাশে তাকাল সে। ‘এই মুহূর্ত থেকে’-স্বরটা হুতাশে ভরা-’এই সেলুন বন্ধ করা হলো।’

সাবধানে লোকগুলো একে-একে উঠে পিস্তল খুলে রেখে দরজার দিকে এগোল। একটা লোক কেবল খুলে রাখা পিস্তলটার দিকে চেয়ে ইতস্তত করল। ‘আমার পুরো মাসের বেতনের টাকা দিয়ে আমি ওটা কিনেছিলাম,’ বলল সে। ‘ওটা কি পরে ফেরত পাব?’

‘না।’ একটুও নরম হলো না ক্ষ্যাপা রনি। ‘পরের বার তোমার গান কেনার পয়সা রোজগার হলে তুমি হয়তো ভাল সঙ্গ আর ভাল কাজে ওটা ব্যবহার করতে শিখবে। বেরোও!’

দশ মিনিটের মধ্যেই সেলুনটা অন্ধকার আর নীরব হলো। বারের পিছন থেকে একটা দড়ি নিয়ে পিস্তলগুলোকে মালার মত গেঁথে কাঁধে ঝুলিয়ে বেরিয়ে এল রনি।

শেরিফের দরজায় দুমদাম কিলের শব্দে লাল ফ্ল্যানেলের আণ্ডারশার্ট পরা অফিসার মোজা পায়েই ঘুম জড়ানো চোখে দরজায় এল। ‘এত হট্টগোল কিসের? তোমাকে হাজতে ভরার আগেই বাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে নেশা কাটাও!’

ওর কথার কোন জবাব না দিয়ে কাঁধ থেকে পিস্তলের মালা মেঝের ওপর নামিয়ে রাখল রনি। ওদিকে চেয়ে শেরিফের চোখ বিস্ফারিত হলো। ‘এসব কোত্থেকে—’

রনি চোখ তুলে তাকাল। ঠাণ্ডা চোখ দুটোর দিকে চেয়ে একটু পিছিয়ে গেল শেরিফ। ‘আমি এইমাত্র ঈল্‌ সেলুন একেবারে বন্ধ করে দিয়ে আসলাম,’ শান্ত স্বরে জানাল রনি। ‘ওখান থেকে আমি যাদের তাড়িয়েছি, এগুলো তাদের পিস্তল। এগুলো নিয়ে তুমি যা খুশি করতে পারো, কিন্তু ওদের ফেরত দিলে আমি ফিরে এসে তোমার গোঁফ একটা একটা করে টেনে তুলে নেব!’

‘কি বললে?’ রাগে লাল হলো শেরিফের চেহারা। ‘শোনো, ইয়াং ম্যান-’ এতক্ষণে ওর কথার যথার্থ অর্থ মাথায় ঢুকতেই কথা থামিয়ে ঢোক গিলল সে।

‘তুমি ঈল্‌ সেলুন বন্ধ করে দিয়েছ?’ অবিশ্বাসে চড়া শোনাল শেরিফের স্বর। ‘এই অস্ত্রগুলো ওদের থেকে ছিনিয়ে এনেছ?’

ড্যাশার ততক্ষণে রাস্তা ধরে রওনা হয়ে গেছে। সকালে হাঁটতে বেরিয়ে একজন শেরিফের অফিসের সামনে থেমে পিস্তলগুলো অবাক চোখে দেখল। ‘এই! ওই লোকটা কে?’ রনির পিঠের দিকে তাকিয়ে নতুন লোকটাকে চিনতে না পেরে প্রশ্ন করল সে।

শেরিফের ঘোর তখনও কাটেনি। লোকটার দিকে বোকা দৃষ্টিতে চেয়ে সে বলল, ‘মিস্টার, লোকটা কে তা জানি না, কিন্তু এমন কঠিন লোক পেকোসের পশ্চিমে কখনও আসেনি! ক্ষ্যাপা লোক!’

.

টার্কি স্প্রিঙস ক্যানিয়নের দিকে চলেছে বুল। খেলা এখন শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। নিজের লোকগুলোকে এখন ওর কাজে লাগাতে হবে।

সার্কেল এইচে যা ঘটেছে তা বাণ্ডি জানে না। রুবেন হর্স স্প্রিঙসের দিকেই গেছে মারফির সতর্ক বাণী নিয়ে। ভাগ আর ডেড-শটও র‍্যাঞ্চ থেকে বেরিয়ে পড়েছে। ওরা র‍্যাঞ্চ ছেড়ে আসা আরোহীদের ট্র্যাক অনুসরণ করছে। হঠাৎ দেখল একজন ট্রেইল ছেড়ে উত্তর দিকে গেছে। লোকটা থেমে ঘোড়ার পেটি টাইট করেছে। তুষারের ওপর নতুন বুটের ছাপ দেখে অভিজ্ঞ ট্র্যাকার মারফি বুঝল লোকটা কে। বাণ্ডি যেখানে যাচ্ছে ওরাও সেখানেই যেতে চায়। অবিরাম তুষার পড়ছে, বেশি পিছনে না পড়লে ট্র্যাক অনুসরণ করা খুব সহজ। তুষারের পর্দার জন্যে বেশ কাছে থাকলেও বাঙি ওদের দেখতে পাবে না।

তবু ওই তুষারের কারণেই শেষে ট্রেইল হারাল। একটা খোলা জায়গায় জোর বাতাস তুষার উড়িয়ে নিয়ে গেছে। আবার ট্র্যাক খুঁজে পেতে ওদের প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগল। এতে অনেক পিছনে পড়ে গেল ওরা। তুষার বেশ দ্রুত ভরাট করে ফেলছে ট্র্যাক।

টার্কি স্প্রিঙসে আদেশের অধীর অপেক্ষায় ছিল চারজন। বাণ্ডি পৌঁছে ওদের প্রত্যেককে একশো ডলার করে দিল। জানাল, বাকি নয়শো ওরা ঠিক মত নির্দেশ পালন করার পর পাবে। ডেভ আর রুডি মিসিসিপির লোক। সঙ্কর কিওয়া, বুডা, টেক্সাসের টেক্সের সাথে অ্যাবিলিনে যোগ দিয়েছে।

ওদের একটা বিশেষত্ব হচ্ছে, টাকার অঙ্ক ঠিক হলে বাছ-বিচারের বালাই নেই, যেকোন জায়গায়, যেকোন মানুষকে ওরা খুন করতে পারে। এবং গোলাগুলিতে কারও মোকাবিলাতেই ওদের বুক কাঁপবে না। উপযুক্ত লোকই বাছাই করেছে বাণ্ডি। কাজ বুঝিয়ে দিয়ে হর্স স্প্রিঙসের দিকে রওনা হলো সে।

এর ঠিক এক ঘণ্টা পরে দুজন রাইডার বাত্তির ট্রেইল ধরে ক্যানিয়নে ঢুকল। বুড়াই ওদের প্রথম দেখেছে। সঙ্গীদের দৃষ্টি ওদিকে আকর্ষণ করে সে প্রশ্ন করল, ‘ওদের চেনো?’

‘মনে হয় এদের দুজনের কথাই বাণ্ডি বলছিল,’ জবাব দিল ডেভ। ‘ওরাও লিস্টে আছে।’

‘কিন্তু এদের তেমন গুরুত্ব নেই,’ মন্তব্য করল রুডি। ‘পাত্তা দিও না।’

কাঁধ উঁচাল টেক্স। ‘দেরি করে কি লাভ?’ প্রশ্ন করল সে। হাতের মুঠোয় যখন এসেছে শেষ করে দিলেই হয়। ব্যাটারা বাত্তিকে ট্রেইল করছে।’ গানবেল্টটা ঠিক মত বসিয়ে নিয়ে করালের দিকে এগোল সে।

বুডার রাইফেলটা রয়েছে ওর হাতে। সরে কেবিনের দরজার সামনে একটা বেঞ্চে বসল সে। রাইফেলটা হাঁটুর ওপর। ডেভ আর রুডি পরস্পর থেকে দশ ফুট দূরে খোলা জায়গাতেই ডাগ আর ডেড-শটের পৌঁছানোর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে।

মারফি লোকগুলোর অলস ভঙ্গিতে দাঁড়ানো, আর রাইফেলের ইঙ্গিত লক্ষ করেছে। ‘ভাল,’ মন্তব্য করল সে, ‘এই লোকগুলো দেখছি ঝামেলা করার জন্যে তৈরি হয়েই অপেক্ষা করছে।’

‘নিশ্চয় বাণ্ডির বন্ধু।

‘অর্থাৎ আমাদের শত্রু।’

‘তবু ওদের সাথে কথা বলে ভাবটা বুঝে দেখি। রনি সবসময়েই আগে বুঝে নিয়ে পরে গুলি করার পক্ষপাতী।’

কাছে এগিয়ে ডেভ আর রুডিকে এক নজর ভাল করে দেখে নিয়ে নিচে নামল মারফি। মাটির ওপর দাঁড়িয়ে কাজ করাই ওর পছন্দ।

‘কাউকে খুঁজছ?’ জানতে চাইল ডেভ।

‘বিশেষ কাউকে না। ওই লোকটার বন্ধু-বান্ধব সম্পর্কে একটু কৌতূহল।’

‘আমাদের কথা বলছ?’

ডেড-শট ঘোড়ার পিঠ থেকে নামেনি। সে জবাব দিল, ‘না। টাকা ছাড়া তোমরা কাউকে বন্ধু বলে স্বীকার করো বলে আমার মনে হয় না। এখানে যেন আউটল ক্যাম্পের মত একটা গন্ধ পাচ্ছি।’

‘তোমার মুখের কোন ট্যাক্স নেই মনে হচ্ছে, স্ট্রেঞ্জার!’

‘লোকে এমন বদনাম আমাকে আগেও দিয়েছে, তাই না, মারফি?’ ডেড- শটের চোখ বুডার ওপর। ‘জানো, ওই বেঞ্চে বসা লোকটা রাইফেল নিয়ে ওভাবে খেলা করলে গুলি খেতে পারে।’

‘ওকে কে গুলি করবে?’ প্রশ্ন তুলল ডেভ। শুরু যখন হয়েছে, ঘটনা তাড়াতাড়ি শেষ করতে চায় ও।

‘যে কেউ তার দিকে ওভাবে তাক করা রাইফেল দেখতে পছন্দ না করলেই গুলি করতে পারে।

লাগাম টেনে ঘোড়াটাকে সরিয়ে নিল ডেড-শট। বুডার রাইফেলের কোন টার্গেট থাকল না এখন।

‘তোমাদের এখান থেকে সরে পড়াই ভাল। তোমরা সার্কেল এইচ রেঞ্জে আছ।’

‘আমাদের অধিকার আছে।’

ডেভ ভাবছে এই বার ২০ আউটফিটের কথা সে শুনেছে। শক্ত দল।

‘হ্যাডলে তোমাকে অধিকার দিয়েছে?’ ডেড-শট প্রশ্ন করল।

‘হ্যাডলে?’ কর্কশ স্বরে হেসে উঠল ডেভ। ‘আরে ওই বুড়ো হাবড়ার কথা কে মানে? ও শেষ হয়ে গেছে!’

‘আমরা তা মনে করি না।’

ঘোড়াটাকে তিন কদম আগে বাড়াল ডেড-শট। এখন বুডা আর টেক্সের ঠিক মাঝখানে আছে ও। দুজনই ওর ওপর গুলি ছুঁড়তে পারবে, কিন্তু তাতে অন্যজন বিপদে পড়বে।

মারফি ঘোড়ার পাশ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে, হাত দুটো দুপাশে। ডাবল এক্স কাউহ্যাণ্ড দুজনই জানে পরিস্থিতি কেমন, আর কি করতে হবে।

হঠাৎ শব্দ করে হেসে উঠল ডাগ। ওর দিকে সন্দিগ্ধ চোখে তাকাল রুডি।

‘মনে হচ্ছে তোমরা কোথাও যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলে?’ বলল ডাগ। তোমরা বাণ্ডি বুলের থেকে কাজের আদেশ পেয়ে গেছ?’

‘ওকে আমরা চিনি না।’ ডেভ নার্ভাস বোধ করছে। ডেড-শটের অবস্থান ওর মোটেও পছন্দ হচ্ছে না। ‘লোকটা কে?’

‘যে লোকটা তার ঘোড়া ওইখানে থামিয়েছিল।’ আঙুল তুলে জায়গাটা দেখল ডাগ মারফি। তুষারের ওপর পরিষ্কার ট্র্যাক দেখা যাচ্ছে। ‘কথা বলতে সে কেবিনেও ঢুকেছিল।’

‘অনেক বুদ্ধি তোমার, তাই না?’ গোলমাল শুরু করার উপযুক্ত কথা খুঁজে পাচ্ছে না ও। এবং ঝামেলা শুরু করা ঠিক হবে কিনা তাও ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। ‘তুমি গোলমাল পাকাতে চাচ্ছ?’

‘হ্যাঁ।’ এক পা আগে বেড়ে থামল ডাগ। ‘তুমি চাও? সে যাক, তুমি চাও আর না চাও, তোমরা এখানে কি করছ তার ব্যাখ্যা দাও, নইলে কেটে পড়ো।’

বুড়া নার্ভাস হয়ে উঠছে। টেক্সাস টেক্স ফাইটে উৎসাহী, ওর কাছে এত কচকচানি ভাল লাগছে না। করালের কোনা থেকে একটু সরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করল সে, ‘এত কথার কি দরকার-গুলি করো!’

নিজে গান বের করতে হাত বাড়াল টেক্স। ডেড-শটের পিস্তল চোখের পলকে ওর হাতে উঠে এল। মুহূর্তে তুষারে ঢাকা ক্যানিয়নের ঠাণ্ডা নীরবতা গোলাগুলির গর্জনে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল।

ডেভের প্রথম শট প্রায় মিস করেও ডেড-শটের গানবেল্টের কোনায় লেগে ওকে আধপাক ঘুরিয়ে দিল। এই ফাঁকে ডাগ প্রথম গুলিতে ডেভ আর দ্বিতীয় গুলিতে রুডিকে গেঁথে ফেলল।

ডেড-শটের প্রথম গুলি ওর ভারসাম্য হারানোয় করাল পোস্টে লাগল। দ্বিতীয়টা লাগল টেক্সের বুকে। বুলেটটা ফুসফুস ফুটো করে পিছনের হাড়ে লাগল। টলে এক পা পিছিয়ে স্থির হয়ে গুলি করল টেক্স। গুলিতে ডেড-শটের ঘোড়াটা মরল, কিন্তু মালিকের জীবন বাঁচল, কারণ ঘোড়া পড়ে যেতে দেখে পিঠ থেকে লাফ দিল সে-ঠিক ওর কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল বুডার বুলেট।

লাফিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে তুষারে পিছলে পড়ে যাওয়ার পথে দ্রুত তিনটে গুলি ছুঁড়ল বুডাকে লক্ষ্য করে। সাহস হারিয়ে কেবিন ঘুরে আড়ালে সরে যাওয়ার মুহূর্তে পিছন ফিরে চেয়ে ডেড-শটের গুলি গলায় বিঁধে পড়ে গেল সে।

ওদিকে ডাগ সোজা এগিয়ে গেছিল রুডি আর ডেভের দিকে। ওরা পড়ার আগেই ওদের ভাগে আরও দুটো বুলেট জুটল। নিথর হয়ে পড়ে রইল দুটো লাশ। টেক্সাস টেক্স করালের খুঁটির সাথে বসে কেশে রক্ত ওঠাচ্ছে-ধীরে মারা যাচ্ছে ও। বুডা ডেড-শটের শেষ গুলিতে মরেছে-কয়েক ফুট দূরে পড়ে আছে ওর রাইফেল।

ডাগ আর ডেড-শট এগিয়ে গেল টেক্সের দিকে। ওর চিবুক বেয়ে রক্ত গড়াচ্ছে। বিষণ্ন চোখে লোকটা ওদের দেখল। ‘এমন ঘটবে ভাবিনি,’ বলল সে, ‘কিন্তু এটাই ভাগ্যে ছিল।’ কেশে থুতুর সাথে রক্ত ফেলল সে। ‘বিদায় জানাব, এমন কেউ নেই আমার। তবে হর্স স্প্রিঙসে মেবেলকে আমার ঘড়িটা দিও। মেয়েটা-মেয়েটা-ভাল ছিল।’

‘নিশ্চয়,’ কথা দিল ডেড-শট। ‘আমি নিজে তা করব।’

টেক্সের চোখ ঢুলে এল, তারপর আবার তীক্ষ্ণ হলো। ‘কোন-কোন রাগ নেই তো?’

‘না,’ বলল ডেডশট। ‘সব খেলার মাঝেই।’

‘হ্যাঁ।’ চোখ বুজল টেক্স।

.

বাণ্ডি বুল হর্স স্প্রিঙসে যায়নি। সার্কেল এইচে কি ঘটে না জেনে চুপচাপ হ  স্প্রিঙসে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে ওর কেন যেন ইচ্ছে করছে না। কৌতূহলেরই জয় হলো। কয়োটি ট্যাঙ্কসের কাছে পৌঁছে আবার টার্কি স্প্রিঙস ক্যানিয়নের পথ ধরল সে। কয়েক মিনিটের জন্য ডাগ আর ডেড-শটের দেখা পেল না বটে, কিন্তু ওদের রেখে যাওয়া কীর্তি সামনেই দেখতে পেল।

এক নজর দেখেই ওর পেট গুলিয়ে উঠল। মুখ ফিরিয়ে নিল বাণ্ডি। ডুবে যাওয়ার মত অনুভূতি হচ্ছে। এদের ওপরই ওর প্ল্যানের সফলতা নির্ভর করছিল। এখন একজনও বেঁচে নেই-কি করবে সে?

এখন ওর সামনে যেসব পথ খোলা আছে সেগুলো একে-একে বিবেচনা করতে শুরু করল। গোলাগুলিতে ওর হাতও ভাল, কিন্তু ঝুঁকি নিতে সে রাজি নয়। ভাসকো আর বার্কার মারা গেছে। এখন দক্ষ লোক মাত্র দুজন আছে যারা হয়তো ওকে সাহায্য করতে পারবে। কিন্তু ওদের সম্পর্কে বাণ্ডি মোটেও নিশ্চিত নয়, কারণ তার সাথে ওদের কারও বন্ধুত্ব নেই। ওরা হচ্ছে জনি রিগ আর ফিউরি।

শার্পির সাথে জনি রিগের যে কিছুটা ঘনিষ্ঠতা আছে তা বাণ্ডি জানে। কিন্তু ওর বিশ্বাস, উপযুক্ত দাম দিলে সব মানুষকেই কেনা যায়। রিগও ব্যতিক্রম নয়। বাণ্ডি সিদ্ধান্ত নিল রিগের সাথেই আলাপ করবে। লোকটা এখন কোথায় আছে জানে না। কিন্তু যেখানেই থাক, ওকে র‍্যাঞ্চে ফিরতেই হবে।

সার্কেল এইচে ফেরার পথে বিভিন্ন দুশ্চিন্তা আসছে ওর মাথায়। পরবর্তী এক ঘণ্টায় পথে তিনবার থেমে, সব ছেড়ে দিয়ে এখান থেকে পালিয়ে সরে পড়ার সিদ্ধান্ত প্রায় নিয়ে ফেলেও আবার মাথা নেড়ে মত পালটে এগোল।

চতুর্থবার যখন থামল, তখন অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। নাহ, এর কোন মানেই হয় না। এরই মধ্যে অনেক লোক মারা পড়েছে। চুপিচাপি কাজ উদ্ধার করার উপায় আর এখন নেই। অনেক প্রশ্ন উঠবে। তাছাড়া র‍্যাঞ্চে কি ঘটছে কিছুই সে জানে না। ওর সামনে অনেক বাধা-শার্পি, বার টোয়েন্টির ওই দুজন, রনি, হ্যাডলে, কতজনকে সরাবে ও? না। পশ্চিমের স্টেজকোচই ধরবে সে।

ঘোড়ার মুখ ফেরাল বাণ্ডি। হঠাৎ ঘড়িটার কথা ওর মনে পড়ল। কিছু কিছু তুচ্ছ জিনিসের ওপর মানুষের গভীর মায়া জন্মে যায়—চিরকাল আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়। ঘড়িটা এতকাল সে যত্ন করে আগলে রেখেছে-চোদ্দ বছর বয়সে ওয়ার অব রেভোলিউশনের কারণ সম্পর্কে একটা রচনা লিখে সে ওটা পুরস্কার পেয়েছিল। একটু ইতস্তত করে সে ঠিক করল, র‍্যাঞ্চ থেকে ওটা নিয়েই সরে পড়বে।

.

ওই দিনই রাতে হর্স স্প্রিঙসে পৌছল ডাগ আর ডেড-শট। রুবেন তার গল্প শুনিয়ে ওখান থেকে উত্তরে পাই টাউনের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেছে।

মেবেলের কাছে টেক্সাস টেক্সের ঘড়ি পৌঁছে দিয়ে ওল্ড করাল সেলুনে ঢুকল ওরা। বারে দাঁড়ানো লোকগুলোর বিস্মিত চেহারা দেখে বোঝা গেল ওখানে ওদের নিয়েই আলাপ হচ্ছিল।

খদ্দেরদের মধ্যে মরগ্যানই প্রথম কথা বলল। ‘জখম হয়েছ?’ মারফির কাঁধে বুলেটের আঁচড় রক্তের দাগ দেখিয়ে প্রশ্ন করল সে।

‘গুলির সামান্য আঁচড়,’ জবাব দিল ডাগ। তারপর সবার আরও জানার কৌতূহল দেখে বলল, ‘টার্কি স্প্রিঙস ক্যানিয়নে চারজনের সাথে আমাদের একটু গোলাগুলি হয়েছে। ওদের মধ্যে মিসিসিপির ডেভ আর রুডিও ছিল।

‘ওরা চারজনই শেষ?’

‘আমরা এখানে হাজির, তাই না?’

ডেড-শট ব্যাখ্যা দিল। ‘গোলাগুলি ওরাই শুরু করেছিল। বাণ্ডির সাথে ওদের কোন ডীল ছিল। আমরা পৌছার অল্প আগেই বাণ্ডি ওখানে গিয়েছিল। কাকে-কাকে মারতে হবে তার একটা লিস্ট ওদের দেয়া হয়েছিল-আমরাও ওই লিস্টে ছিলাম। সেই থেকেই শুরু—কিন্তু ওদের শেষ। ‘

রনির খবরের অপেক্ষায় ওখানেই রাত কাটাবার সিদ্ধান্ত নিল ডেড-শট আর ডাগ। রনি যদি পাহাড় পেরিয়ে আলমায় পৌঁছে থাকে তবে ওকে এই পথেই সার্কেল এইচে ফিরতে হবে, কারণ অন্য পাসগুলো তুষারপাতে বন্ধ হয়ে গেছে।

পরদিন বিকেলের আগে কোন খবর পাওয়া গেল না। বিকেলে যে লোকটা ঈল্‌ সেলুনে পিস্তল ফেরত পাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করেছিল, সে ক্লান্ত অবস্থায় এসে পৌছল ওল্ড করালে।

ওর কাছেই রনির খবর পাওয়া গেল। মারফির প্রশ্নের জবাবে সে দ্বিতীয়বার বলল, ‘হ্যাঁ, ওটা ড্যাশারই ছিল; কোন সন্দেহ নেই! আমরা সবাই ভেবেছিলাম ও পাহাড় আটকা পড়ে শীতে ঠাণ্ডা হয়েছে। কিন্তু ওর মরণ নেই! ও সত্যিই ভয়ঙ্কর লোক, ইচ্ছে করে না গেলে যমেও ওকে নিতে সাহস পাবে না! ঈগ্‌ল্‌ সেলুন বন্ধ করে দিয়েছে ও। রাস্টি বেল নাকি ওকে আগে থেকেই চিনত। ভয়ে বেচারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।’

ওল্ড করালের মালিক, ক্রদার্স শোনার জন্যে আর অপেক্ষা করল না। স্যাম হাডসন বারের পিছনে দাঁড়িয়ে গ্লাস পালিশ করছিল। ক্রদার্স ওর পাশে সরে এসে বলল, ‘স্যাম, আমার মনে হয় তোমারও ডাফেল ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে বিকেলের স্টেজেই কেটে পড়া ভাল।’

‘আমি?’ চমকে মুখ তুলল সে। ‘তুমি আমাকে ফায়ার করছ?’

‘ব্যাপারটা ওইভাবে নিও না,’ নরম সুরে বলল ক্রদার্স, ‘কিন্তু আমার উপায় নেই। বয়স হয়েছে, এখন রাস্টির মত আমাকেও দেশ ছাড়তে হলে মুশকিলে পড়ব। ড্যাশারের আউটফিট সম্পর্কে আমি জানি, ওরা একবার খেপলে আর রক্ষা নেই।’

‘কিন্তু শার্সি যদি ওকে শেষ করে?’ প্রশ্ন তুলল স্যাম।

‘আমার মনে হয় না পারবে। কিন্তু সেটাই যদি ঘটে, তুমি আবার কাজে ফিরে এসো। তোমার বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই। এই বারটাই আমার শেষ সম্বল। এটা আমি হারাতে চাই না।’

‘শার্পির কাছে আমি টাকা পাই।’

‘ভুলে যাও। আমার কাছে তুমি যা পাও, তা আমি মিটিয়ে দিচ্ছি, বিকেলের স্টেজেই তুমি রওনা হয়ে যাও।’

আর দেরি করল না স্যাম। এপ্রোন খুলে রেখে পিছনের কামরায় ঢুকল। স্টেজ আসার সময় হয়ে আসছে।

.

জার্‌কি মাউন্টিনসের পশ্চিমে রয়েছে শার্সি আর তার দলের ক্লান্ত রাইডাররা। র‍্যাঞ্চে ফিরে আসছে ওরা। শার্শিই লীড করছে। সে এখনও জানে না তার প্ল্যান কতটা বিফল হয়েছে। তবু চলার পথে বিভিন্ন দিক নিয়ে ভেবে নিজেকে যেন কিছুটা পরাজিতই মনে হচ্ছে ওর। ড্যাশারকে নিজের হাতে খুন করে হ্যাডলেদের ফিরিয়ে এনে আরও কিছুদিন রাখতে চেয়েছিল সে। কিন্তু তা আর হলো না।

আলফনসো এগিয়ে এসে শার্পির পাশাপাশি চলছে। আলফনসো কঠিন লোক, কিন্তু বিশ্বস্ত। ওকে বুমার পুরোপুরি বিশ্বাস করে। রাসলার হলেও লোকটার দায়িত্ব বোধ আছে, এবং ওর কথারও দাম আছে।

‘তুমি বাণ্ডি বুলকে ওর ব্র্যাণ্ড কেন রেজিস্ট্রি করতে দিয়েছ তা আমার মাথায় ঢুকল না,’ হঠাৎ বলে উঠল আলফনসো। ‘জানি আমার মাথায় বুদ্ধি কম, তবু ব্যাপারটা আমার কাছে সত্যিই ধাঁধা।’

ঝট করে মাথা তুলল বুমার। ‘কি? বুলের ব্র্যাণ্ড?’

‘হ্যাঁ। সার্কেল বি।’

‘ওটা আমার ব্র্যাণ্ড, বুলের না। ওটা আমার হয়ে রেজিস্ট্রি করেছে ও।

‘তাহলে সে তোমাকে মিথ্যা কথা বলেছে, শার্পি। আমি রেজিস্ট্রি বই দেখেছি। ওটা নিজের নামেই রেজিস্ট্রি করেছে ও।’

শার্সি বুমারের খুদে চোখ দুটো ঠাণ্ডা আর কুৎসিত হয়ে উঠল। ওই সুশ্রী চেহারার শয়তানটাকে বিশ্বাস করে সে তাহলে ভুল করেছে। তার আগেই আঁচ করা উচিত ছিল যে লোকটা সুবিধার নয়। কিন্তু ডীন ওর সম্পর্কে জোর সুপারিশ করেছিল। এবং ডীন খুব নির্ভরযোগ্য লোক। কিন্তু তাই কি? ওরা দুজনেই এর সাথে জড়িত নয় তো!

‘ধন্যবাদ, আলফনসো, শান্ত স্বরে বলল সে। ‘এই আউটফিটের খাটাশগুলোকে আমার মেরে সাফ করতে হবে।’

বেশ কিছুদূর নীরবেই এগোল ওরা। তারপর ঘোড়ার পিঠে একজনকে ওদের দিকে আসতে দেখল। লোকটা সায়মন ড্রিল।

শার্পির ভিতরে জমাট বাঁধা সমস্ত রাগ ওর ওপর গিয়ে পড়ল। ‘আরে! এ যে সেই বার ডি-র কয়োটি!’ বলল সে। ‘জঞ্জাল সাফ করতে শুরু করার জন্যে এটা খারাপ সময় নয়!’

থেমে দাঁড়াল সায়মন। শার্পিকে পিস্তলের দিকে হাত বাড়াতে দেখে সে হাত তুলল। ‘ওটা আপাতত স্থগিত রাখো,’ বলল সে, ‘তোমার জন্যে অনেক খবর আছে! আর ঝামেলা বাড়াতে যেয়ো না!’

‘তার মানে?’ শার্পির শক্ত চেহারায় একটু অপ্রস্তুত ভাব ফুটে উঠল।

হাসছে সায়মন। ‘তোমার খেলা শেষ হয়ে গেছে, শার্পি। রনির দুজন পার্টনারের বিরুদ্ধে চোরা-পিস্তল ধরতে গিয়ে টোনি মারা পড়েছে। রুবেন দেশ ছেড়ে চলে গেছে। টার্কি স্প্রিঙস ক্যানিয়নেও চারজন লোক রনির বন্ধুদের হাতে মারা পড়েছে। ওরা ছিল বাণ্ডি বুলের লোক। ওদিকে রনি হ্যাডলেদের নিয়ে নিরাপদেই আলমায় পৌঁছেচে। ওখানে পৌছে রনি ঈল্‌ সেলুন বন্ধ করে দিয়েছে। ওই আউটফিটের লোকজন দেশ ছেড়ে যে যেদিকে পারে পালিয়েছে!’

‘মিথ্যে কথা!’ চিৎকার করে উঠল বুমার। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না ও।

‘না, তা নয়। সিলভার ট্রেইলে যে দুজন রনিকে বাধা দিতে গেছিল তারাও মারা পড়েছে। ড্যাশার এখন আলমা ছেড়ে এদিকেই রওনা হয়েছে তোমার খোঁজে। হ্যাডলেরা আলমায় নিরাপদেই আছে। এখন আর তোমার নিস্তার নেই।

শার্সি বুমার তিক্তভাবে নিজের হাতের তালুর দিকে তাকিয়ে আছে। তাহলে শেষ পর্যন্ত এই পরিণতি! যাক, একটা জিনিস বাকি আছে। বাণ্ডি বুলকে সে খুন করবে। তারপর গরুগুলোকে জড়ো করে বর্ডারের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে। হয়তো সে নিছকই গরু চোর-এর বেশি কিছু নয়!

হ্যাঁ, হয়তো আরও একটা কাজ সে করবে। গরুগুলোকে পাঠিয়ে দিয়ে যাওয়ার আগে রনি ড্যাশারকে সে শেষ করবে। ওই লোকটাই আসলে এতসব অনর্থের মূল। হ্যাঁ, তাই সে করবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *