ক্ষ্যাপা তিনজন – ১৩

তেরো

ভোর বেলায় হর্স স্প্রিঙসে পৌছল রনি। ওল্ড করালের সামনে ঘোড়া রেখে ভিতরে ঢুকল। অবাক হয়ে দেখল ক্রদার্স ছাড়া ভিতরে আর কেউ নেই। ওকে ঢুকতে দেখে নিজের অজান্তেই একটু কেঁপে উঠল সেলুনের মালিক।

‘লোকজন সব কোথায়?’ ক্রদার্সের দিকে নড করে জিজ্ঞেস করল রনি। সাধারণত কিছু আজেবাজে লোক সবসময়েই সেলুনে ঘুরঘুর করে।

‘তোমাদের ভয়ে শহর ছেড়ে চলে গেছে। তোমার আউটফিটের দুজন লোক এখানেই আছে।’

‘স্যাম হাডসনকে দেখছি না?’

‘ওকে আমিই বিদায় করে দিয়েছি।’ বারের ওপর দুহাত রেখে একটু সামনে ঝুঁকল ক্রদার্স। ‘শোনো, ড্যাশার, আলমায় তোমার ঈল্‌ সেলুন বন্ধ করে দেয়ার খবর আমি পেয়েছি। এই সেলুনটাই আমার সম্বল, বুড়ো বয়সে আমাকে তুমি দেশ-ছাড়া কোরো না। প্লীজ!’

‘ঠিক আছে, স্যামকে যখন তুমি নিজে থেকেই তাড়িয়েছ, তখন তোমাকে একটা সুযোগ দিতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু তুমি যদি শার্পির লোকজনের সাথে কোনরকম সম্পর্ক রাখো, বা ওদের সাহায্য করো, তাহলে তোমার আর এখানে থাকা চলবে না। বুঝেছ?’

‘ভাল ভাবেই বুঝেছি, ড্যাশার। তোমাকে কি একটা ড্রিঙ্ক দেব? নাকি আগে মা বেকারের ওখানে নাস্তা খাবে? তোমার সঙ্গী দুজন ওখানেই ব্রেকফাস্ট করতে গেছে।’

বুড়ো মালিককে ধন্যবাদ জানিয়ে মা বেকারের নাস্তার খোঁজে রাস্তায় নামল রনি। সামান্য দু’এক পেঁজা তুষার পড়ছে। সাদা তুষারে ঢাকা হর্স স্প্রিঙসকে সুন্দর আর পবিত্র দেখাচ্ছে। এটাকে আউটল শহর হিসেবে ভাবাই যায় না এখন।

দরজা খুলে মা বেকারের খাবার দোকানে ঢুকল রনি। কোনায় বসে আছে ডাগ আর ডেড-শট। দুজনই ওকে ঢুকতে দেখেছে। ভিতরে ভিতরে রনিকে দেখে ওরা খুশিতে টগবগ করছে। কিন্তু মুখে তা একটুও প্রকাশ করল না।

‘তুষারে পাখা ঢেকে একটা টার্কি ঢুকছে, দেখো,’ বলল ডেড-শট। দুজনের মধ্যে সে-ই বয়সে বড়।

‘ওর কথা কানে তুলো না, রনি, ও মেবেল রোগে ভুগছে! ঘড়ি দিতে যাওয়ার পর থেকেই এই অবস্থা! মেয়েটা নাকি সত্যিই ভাল!’

রনি ওর কথার মানে কিছুই বুঝতে পারল না। কিন্তু ওরা এদিককার ঘটনা জানানোর পর সব পরিষ্কার হয়ে গেল। রনিও ওদিককার খবর সব জানাল।

টার্কি স্প্রিঙস ক্যানিয়নের ঘটনা শোনার পর রনি বলল, ‘আমিও এইরকমই কিছু ঘটছে বলে আঁচ করেছিলাম। এর পর বাণ্ডি বা শার্পির সাথে তোমাদের আর দেখা হয়েছে?’

‘র‍্যাঞ্চ ছাড়ার পর বাণ্ডির সাথে আর দেখা হয়নি। আর শার্পি বুমারকে আমরা দেখিনি। ওদের মোকাবিলা করতে চাও?’

‘অবশ্যই! যত শীঘ্রি সম্ভব। ওদের আমি ছাড়ব না।’

এই সময়ে দোকানের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকল জনি রিগ। ওখানেই দাঁড়িয়ে ওদের তিনজনকে খুঁটিয়ে দেখল। তারপর বসল।

ওর সাথে এই মুহূর্তে বিবাদে যাওয়ার ইচ্ছা রনির নেই। লোকটা শার্পির একজন কর্মচারীর বেশি কিছু নয়। নাস্তা সেরে সে বেরিয়ে যাওয়ার আগে রনি প্রশ্ন করল, ‘রিগ, তুমি শার্পির লোক?’

জনির মুখ সামান্য একটু ফিরল। মুহূর্তে রনির অবচেতন মন ওকে সতর্ক করল। লোকটা স্থির, শান্ত এবং সংযত।

‘হ্যাঁ। আমি ওর সাথেই আছি।’

‘তোমার সাথে ওর দেখা হলে জানিও আমি আসছি। ও যেন তৈরি থাকে।’

‘কারও তোয়াক্কা করে না ও।’

ঠাণ্ডা চোখে ওকে দেখল ডাগ মারফি। ‘তুমি কোথায় থাকবে?

‘যেখানে চাও,’ শান্ত স্বরে বলল জনি। ‘আমাকে দেশ-ছাড়া করার মুরোদ কারও নেই।’

‘ভাল কথা,’ বলল ডাগ। ‘তাহলে র‍্যাঞ্চেই দেখা হবে।’

‘ঠিক আছে। তখনই বোঝাপড়া হবে।’ বেরিয়ে গেল রিগ।

নাস্তা খাওয়ায় মন দিল রনি। ‘ঝাঁঝাল লোক,’ মন্তব্য করল সে। ‘এমন শক্ত লোক ওদের আরও আছে।’

‘মোট কতজন?’

‘জনা আষ্টেক হবে,’ বলল ড্যাশার। ‘সবাই শক্ত লোক।’

‘ফাইটটা তাহলে বেশ জমবে, কি বলো?’

.

সার্কেল এইচের উঠানে ওয়্যাগন দাঁড় করিয়ে র‍্যাঞ্চের মাসিক খাবার ভাঁড়ার ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে মরগ্যান। কিশোর ছেলেটা ওকে সাহায্য করছে। শার্পির জন্যে মরগ্যান যেসব কাজ করে তার মধ্যে এটাও একটা। খাবার ঘরে নিজের লোকজন সবাইকে জড়ো করে রনিকে হত্যা করার প্ল্যান বুঝিয়ে দিচ্ছে শার্পি। ময়দার বস্তা পৌঁছে দেয়ার সময়ে কথাগুলো জেরোমির কানে গেল। বারান্দায় দাঁড়িয়ে পুরোটাই সে শুনল।

জেরোমির জীবন বাঁচিয়েছিল রনি ড্যাশার কথাটা সে ভোলেনি। ওদের প্ল্যান শোনার পর থেকেই ভিতরে ভিতরে ছটফট করছে ছেলেটা। কিন্তু ওর কি করা উচিত বুঝে উঠতে পারছে না। ওয়্যাগন নিয়ে ফেরার পথে অনেকক্ষণ উসখুস করে শেষে মুখ খুলল।

‘যে লোকটা আমাদের প্রাণ বাঁচিয়েছিল তাকে আমাদের সাহায্য করা উচিত, বাবা।’

‘রনি ড্যাশারের কথা বলছ? কেন, ওর কি হয়েছে?’

‘এখনও কিছু হয়নি—হবে। ওই লোকগুলো ওকে খুন করার প্ল্যান করেছে।’

গম্ভীর হলো মরগ্যান। ‘ওদের প্ল্যানটা তুমি জানো?’

‘হ্যাঁ। আমি পুরোটাই শুনেছি।’

‘ওরা শিগগিরই আসবে,’ বলল মরগ্যান। ‘কোন্ পথে আসবে তার কোন ঠিক নেই।’ চুপ করে একটু ভাবল সে, তারপর বলল, ‘ওকে সাবধান করা দরকার। ঠিক আছে, লাইন ক্যাম্পে থেমে তোমাকে একটা ভাল ঘোড়া দেব। তুমি কূনি ট্যাঙ্কের পশ্চিমে যে উঁচু চূড়াটা আছে, সেটায় উঠবে। ওখান থেকে তিনটে ট্রেইলের ওপরই তুমি নজর রাখতে পারবে। ওদের দেখামাত্র ছুটে গিয়ে ওদের সাবধান করবে।’

‘কিন্তু ওখান থেকে আমি দেখে চিনব কিভাবে?’ প্রতিবাদ জানাল জেরোমি। অনেক দূর!’

‘এটা দিয়ে দেখতে পাবে।’

সীটের তলা থেকে একটা লম্বা মেরিন টেলিস্কোপ বের করল মরগ্যান।

‘শার্পি আমাকে এটা দিয়েছিল, যেন আমি দূর থেকে ওর রাইডারদের চিনে ঘোড়া তৈরি রাখতে পারি। আজ এটাই ওর বিরুদ্ধে কাজে লাগাব।’

.

যে কেবিনে গার্ডকে দিয়ে রান্না করিয়েছিল রনি, সেখানেই জনি রিগের দেখা পেল বুল। বারান্দায় একা বসে ছুরি দিয়ে একটা ডাল চাঁচছে জনি। ঘোড়া কাছে এগিয়ে নিয়ে নিচে নামল বাণ্ডি।

‘এই যে! তোমাকেই খুঁজছিলাম আমি!’

নীরবে মুখ তুলে তাকাল জনি। বাণ্ডিকে সে পছন্দ করে না-বিশ্বাসও করে না। পুরোপুরি একটা অন্য জগতের মানুষ জনি। লোকটার সাহসের অভাব নেই। যদিও ভুল লোকের কাছে, তবু সে বিশ্বস্ত

শার্পি নিষ্ঠুর, নির্দয় খুনী হলেও একটা দুর্বল মুহূর্তে সে দুর্দশাগ্রস্ত হাড্ডিসার এই যুবককে সাহায্য করেছিল। ওকে খাইয়েছে, একটা ঘোড়া, স্যা, পিস্তল আর সেই সাথে কিছু ডলারও দিয়েছিল। তারপর শার্সি নিজের পথে গেছে, আর জনি মাঝবয়সী একটা লোকের সাথে জুটে মহিষ শিকার করে বেড়িয়েছে। ওই সময়েই শার্পির দেয়া পিস্তলটা নিয়ে সে প্রচুর প্র্যাকটিস করেছে। অল্পদিনেই টের পেল পিস্তলে দক্ষতা ওর জন্মগত একটা গুণ। অস্বাভাবিক দ্রুত হাত আর তীক্ষ্ণ চোখ থাকায় পিস্তলের ব্যবহারে সে দারুণ পটু হয়ে উঠল।

ওর পার্টনার এর কিছুই জানত না। শিকারের মৌসুম শেষ হওয়ার পর টাকার বখরা নিয়ে ওকে ঠকাবার চেষ্টা করেছিল ওর পার্টনার। কথায় কথা বাড়ল। পিস্তলের দিকে হাত বাড়িয়ে লোকটা জীবনের শেষ ভুলটা করল। খাপ থেকে পিস্তল বের করারও সময় পায়নি বিস্ময় চোখে নিয়েই মরল সে।

ওই এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা মাত্র আসতে শুরু করেছে। টাউন মার্শাল ওকে গ্রেপ্তার করতে এল। পরবর্তী মার্শাল বিচক্ষণ লোক ছিল। তাই পরে নিজের সুবিধা মত সময়ে, নিজের ইচ্ছেতেই জনি শহর ছাড়ল। পরের দু’বছরে পাঁচজন লোক ওর সাথে তর্কে হারল। এতে মোট সংখ্যা সাতে গিয়ে দাঁড়াল। ওদের কেউই খাপ থেকে পিস্তল মুক্ত করার সময় পায়নি। এই সময়ে শার্সি বুমারের সাথে ওর আবার দেখা হলো।

শার্পি একটা ব্যাঙ্কে ডাকাতি করার সময়েই দেখা। মুখোশ পরা থাকলেও ওকে চিনতে ভুল করেনি জনি। শার্পির সঙ্গী গুলি খেয়ে মারা যাওয়ার পর জনি লড়াইয়ে যোগ দিল। এবং ওর সাথেই শহর ছাড়ল। ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ায় জনিকে চিনল শার্পি। অমূল্য বিশ্বস্ততার পরিচয় সে পেল। এরপর বহুবার ওরা পাশাপাশি লড়ে একে অন্যকে সাহায্য করেছে।

কিন্তু এসবের কিছুই বাণ্ডির জানা নেই। অবশ্য জানলেও হয়তো একই কথা দাঁড়াত, কারণ ওর দৃঢ় বিশ্বাস সবাইকেই কেনা সম্ভব।

‘এখানকার শো প্রায় খতম,’ সাবধানে কথা পেড়ে একটা লম্বা চুরুট ধরাল বাণ্ডি। ‘আমরা চড়ায় ঠেকেছি। অর্থাৎ শার্পি ঠেকেছে।’

জনি বুট জোড়া একটু সরাল, কথা বলল না।

‘এখন লোকজন জেনে ফেলেছে ও কেমন। অনেক শত্রু তৈরি করে ফেলেছে সে। আমার পক্ষেও ওকে আর বাঁচানো সম্ভব হবে না।

‘ড্যাশার আর তার দুই বন্ধু শীঘ্রি র‍্যাঞ্চে যাবে। শার্সি হয়তো মারা পড়বে, বা বাঁচবে, কিন্তু সেটা বড় কথা নয়, ঝামেলা এখানেই মিটবে না-এটা মাত্র শুরু। শার্সি পিস্তলের জোরেই সব করতে চাইছে, কিন্তু ওতে কাজ হবে না। কেবল একজনই এখন এই র‍্যাঞ্চটা পেতে পারে-মাত্র একজন!’

‘তুমি?’

চোখ তুলে তাকাল জনি। প্রথম থেকেই এই লোকটাকে সন্দেহ করে আসছে ও। টার্কি স্প্রিঙস ক্যানিয়নের লোকগুলোর কথাও ওর অজানা নয়। ডীনের সাথে গোপনে দেখা করার কথাও সে জানে, কিন্তু কি ঘটে সেটা দেখার অপেক্ষায় ছিল।

‘ঠিক তাই। একমাত্র আমিই র‍্যাঞ্চটা পেতে পারি এবং আইন-সম্মত উপায়ে এর দখলও রাখতে পারব। কিন্তু আমার একজন ভাল লোক দরকার, আমি দখল নেয়ার পর যে এই র‍্যাঞ্চটা চালাবে। তুমি তো জানো, আমি ক্যাটলম্যান নই, তবে এর ব্যবসার দিকটা বুঝি। গরু পালার ব্যাপার তুমি সামলাতে পারবে।’

হাঁটুর ওপর একটা পা তুলে বসল রিগ। আঁচ করতে পারছে এরপর কি আসছে। তবু কোন মন্তব্য না করে সবটা শোনার অপেক্ষায় রইল।

‘তোমাকে আমার খুব দরকার, জনি। দুজনে একসাথে কাজ করলে আমরা অনেক টাকা বানাতে পারব-বড়লোক হয়ে যাব। তুমি আমার পার্টনার হতে পারো। অনেক জমি আছে এদিকে-একটু চেষ্টা করলে সায়মন ড্রিলের র‍্যাঞ্চটাও আমরা নিয়ে নিতে পারব। একসাথে থাকলে আমরা সফল হব।’

‘হ্যাঁ,’ স্বীকার করল বিগ, ‘সম্ভবত। কিন্তু পার্টনার হতে হলে আমাকে আর কি করতে হবে?’

‘আমরা এই র‍্যাঞ্চটা পেতে পারি, জনি, কেবল দুজন লোক আমাদের পথে বাধা হয়ে আছে। ওদের একজন হচ্ছে ড্যাশার।’

মুখ তুলে তাকাল রিগ। ‘আর অন্যজন?’

‘শার্পি বুমার।’

অন্যমনস্ক ভাবে একটা ঘাস ছিঁড়ে নিয়ে চিবাতে চিবাতে ভাবছে গানম্যান। প্রস্তাবটা নিয়ে ভাবছে না, ভাবছে বাণ্ডি বুলের মত মানুষকে বিশ্বাস করে শার্সি কি বোকামিই না করেছে। এদের মত মানুষকে বিশ্বাস করতে নেই। থুতু ফেলল সে, তারপর বলল, ‘না।’

জবাব শুনে বাণ্ডি প্রথমে বিস্ময়ে চমকে উঠল, পরে রাগ হলো। বিস্মিত হয়েছে কারণ নিজের স্বার্থ সম্বন্ধে কোন মানুষ এতটা উদাসীন হতে পারে, এটা বিশ্বাস হচ্ছে না ওর। এবং রাগ হচ্ছে কারণ মোটের ওপর জনি রিগই ছিল ওর শেষ ভরসা। শার্পিকে একা সামলাবার মত ক্ষমতা বা সাহস ওর নেই। অবশ্য বেগতিক দেখে শাৰ্পি হয়তো পালিয়ে যেতে পারে, কিন্তু ওদিকে কি ঘটছে তার কিছুই ওর জানা নেই।

‘না?’ রেগে উঠল বাণ্ডি, ‘কি বলছ তুমি? এমন সুযোগ জীবনে দুবার আসে না, রিগ! টাকা, সমাজে প্রতিপত্তি, প্রতিষ্ঠা, দিনেদিনে আরও বড়লোক হওয়ার সুযোগ, এই সবই আমাদের হাতের মুঠোয়। শার্পি যা পারবে না, সেটা আমরা পারি। তুমি আর আমি। অথচ তুমি বলছ এটা চাও না?’

‘না, চাই না।’ উঠে দাঁড়াল রিগ। ‘তোমার ব্যাপারে বলছি,’ কঠিন শীতল চোখে বাণ্ডির দিকে তাকাল সে-’তুমি হচ্ছ একটা দুমুখো সাপ। এখন শার্পির সাথে যা করছ দুদিন পরে আমার সাথেও তাই করবে। মানুষের ছায়ার দামও তোমার নেই-তুমি ইঁদুরের চেয়েও অধম!’

ঠাণ্ডা ভাবে বাণ্ডির পায়ের কাছে থুতু ফেলে পিছন ফিরে নিজের ঘোড়ার দিকে এগোল রিগ।

এতটা সহ্য করা অসম্ভব। এটা তার পরিকল্পনার চূড়ান্ত পরাজয়। এই তুচ্ছ লোকটার অবজ্ঞায় রাগে জ্বলে উঠল বাণ্ডি। ঝট করে পকেট থেকে একটা ডেরিঞ্জার বের করল। সে যে পিস্তল রাখে সাথে, এটা যত্নের সাথেই এতদিন গোপন রেখেছিল।

ডেরিঞ্জার কক করল বাণ্ডি।

শব্দটা গানম্যানের সদা প্রস্তুত নার্ভের ওপর ইলেকট্রিক শকের মতই কাজ করল।

চলার মধ্যেই মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়াল রিগ। ঘোরার মাঝে পিস্তল বের করে ট্রিগার টিপে দিল।

৪৪ গুলির প্রচণ্ড ধাক্কায় ফুসফুস থেকে বাতাস বেরিয়ে গেল। এক পা পিছিয়ে ফুঁপিয়ে শ্বাস নিল বাণ্ডি। কি ঘটল বুঝে উঠতে পারছে না ও। ভেবেছিল ডেরিঞ্জারটাই বুঝি ওর হাতে ব্যাক ফায়ার করেছে। কিন্তু না-ওটা এখনও কক করা অবস্থাতেই আছে। তারপর দেখল জনি রিগের পিস্তলের মুখ থেকে চিকন রেখায় ধীর গতিতে ধোঁয়া উঠছে। বিভ্রান্ত চোখে চেয়ে আছে বাণ্ডি। ডেরিঞ্জারটা আঙুলের ফাঁক গলে তুষারের ওপর পড়ল। ওর চোখ ওটাকে অনুসরণ করল। দেখল তুষারের ওপর রক্ত।

তার রক্ত!

হঠাৎ বোধের উদয় হলো। মৃত্যুর বিভীষিকায় ওর গলা থেকে একটা চিৎকার বেরিয়ে মাঝপথেই থেমে গেল। কিন্তু বাণ্ডি জানল না চিৎকারটা শেষ হয়নি। এটাও জানল না সে-ই চিৎকার করেছিল। কিছুই জানল না ও–কোনদিন জানবেও না। মারা গেছে বাণ্ডি।

জনি রিগ ঘোড়ার পিঠে চড়ে একবার লাশটার দিকে ফিরে তাকাল, তারপর ধীর গতিতে র‍্যাঞ্চের দিকে এগোল। ওর মনে হচ্ছে আবার তুষার পড়বে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *