ক্ষ্যাপা তিনজন – ১৪

চোদ্দ

বিশ্রাম নেয়ার পর শেভ আর গোসল করে চাঙ্গা বোধ করছে রনি। হর্স স্প্রিঙসের একজন সৎ নাগরিক ওকে একটা সোরেল ধার দিয়েছে। টপারের মত না হলেও ঘোড়াটা ভাল। এই এলাকার সবাই ভাল ঘোড়ার কদর বোঝে।

‘মনে হয় সায়মনের সাথে আমাদের দেখা করা ভাল,’ প্রস্তাব রাখল ডেড- শট। ‘এতে অংশ নিতে পারলে ও খুব খুশি হবে।’

বিরক্ত ভাবে তাকাল মারফি। ‘তুমি ওকে ডাকতে যেতে চাও? জনি রিগের সাথে আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। শুনেছি লোকটা ভয়ানক।’

‘লোকটার ঝাঁঝ আছে,’ মন্তব্য করল ডেড-শট। ‘সেটা ওর ভাবেই বোঝা যায়।’

‘ভাল লোক, খারাপ পথে গেছে,’ বলল রনি। ‘ওর সাথে আমার বেশ কিছু কথা হয়েছে। যতটা জেনেছি, তাতে মনে হয় সে শার্পির ডান হাত।’

‘তোমার কি মনে হয় শার্পিকে র‍্যাঞ্চেই পাওয়া যাবে?’

‘হয়তো। সে আশপাশেই কোথাও থাকবে। এত সহজে হাল ছাড়বে না ও।’

‘রনি,’ বাম দিকে মাথা ঝাঁকাল ডেড-শট-’সম্প্রতি গরু তাড়িয়ে নিয়েছে কেউ।’

সোরেলটাকে এগিয়ে নিয়ে ট্র্যাক খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখল রনি। ‘হ্যাঁ। গোটা বিশেক গরু। দক্ষিণে নেয়া হয়েছে।’

‘মনে হচ্ছে গরুগুলো সব নিয়ে পালাবার মতলব,’ বলল ডেড-শট।

শার্পির লোকজন যদি গরু জড়ো করার কাজে ব্যস্ত থাকে, তবে র‍্যাঞ্চহাউসে কম লোকই থাকবে। ঘোড়ার গতি বাড়াল রনি। অন্য দুজনও তাল রেখে ওর সাথে এগোল।

ব্ল্যাক মাউন্টিনের কাছাকাছি পৌঁছে একটা প্রতিফলিত আলোর ঝিলিক দেখল রনি। মুখ তুলে তাকাল অনেক দূর থেকে আলোটা এসেছে, সুতরাং রাইফেলের নল থেকে নয়। প্রায় তিন মাইল দূরে উঁচু একটা টিলার দিকে চেয়ে আছে রনি। ‘ওখান থেকে কেউ আমাদের ওপর নজর রাখছে।’

‘দেখুক,’ কাঁধ উঁচিয়ে একটা সিগারেট তৈরি করায় মন দিল ডেড-শট। ‘ওরা তো জানেই আমরা আসছি।’

কয়েক মিনিট পরে দূর থেকে কালো বিন্দুর মত একটা ঘোড়াকে এগোতে দেখল রনি। ‘আশ্চর্য! লোকটা সোজা আমাদের দিকেই ছুটে আসছে,’ বলল সে।

ওরাও এগোচ্ছে। আরোহীর ওপর নজর রেখেছে-কেউ কথা বলছে না। অশ্বারোহী আরও কাছে এলে ওকে চিনতে পারল রনি। ‘হাওড়ি, জেরোমি,’ ঘোড়া থামিয়ে বলল রনি। ‘এমন তড়িঘড়ি কোথায় যাচ্ছ?’

‘তোমাদের জন্যেই নজর রেখেছিলাম!’ উত্তেজিত স্বরে বলল কিশোর। ‘ওই শার্পি লোকটা সাত-আটজন লোক নিয়ে তোমাদের জন্যে ফাঁদ পেতে তৈরি হয়ে বসে আছে! অ্যামবুশ করবে!

‘তোমরা যখন পৌঁছবে শার্পি ছাড়া বাইরে আর কাউকে দেখতে পাবে না, কিন্তু স্টোররূম, কামারশালা আর র‍্যাঞ্চহাউসে ওর লোকজন রাইফেল আর শটগান নিয়ে লুকিয়ে থাকবে। শার্পির সিগন্যাল পাওয়া মাত্র গুলি করে তোমাদের ঝাঁঝরা করে ফেলবে। ড্যাডি বলেছে তোমার আপাতত সরে পড়াই ভাল। শার্পিকে যদি ধরতে চাও, আর কোথাও ধোরো!’

‘ধন্যবাদ, জেরোমি।’ মুর্খ তুলে দিগন্তের দিকে তাকাল রনি, তারপর আবার ছেলেটার দিকে ফিরল। ‘র‍্যাঞ্চহাউসে কয়জন থাকবে?’

‘দুজন। টিচ আর মার্ক। পাইয়ূট আর মার্কের ভাই ফাজ থাকবে কামারশালায়। ফিউরি স্টোররুমে আর আলফনসো থাকবে করালে। আর সার্ট ডেভিসের পাথরের ভিতর থাকার কথা। ‘

‘জনি রিগ কোথায় থাকবে?’ প্রশ্ন করল রনি।

‘জানি না। প্ল্যান করার সময়ে ও উপস্থিত ছিল না।’

ধীরে সোরেলটাকে হাঁটিয়ে আগে বাড়ল রনি। র‍্যাঞ্চের কোথায় কি আছে __ দেখতে পাচ্ছে। অ্যাপাচি এলাকায় যেমন রীতি, প্রত্যেকটা র‍্যাঞ্চই একেকটা ছোট দুর্গের মত করে তৈরি করা হয়েছে। তবে সার্কেল এইচ বার ডির মত দুর্ভেদ্য নয়।

প্রকাণ্ড র‍্যাঞ্চহাউসটা বাঙ্কহাউসের মুখোমুখি। বাঙ্কহাউসের পাশেই হচ্ছে কামারশালা। এর ঠিক উলটো দিকে র‍্যাঞ্চহাউসের সংলগ্ন স্টোররূম। ওটার মাথায় বিরাট বড় বার্ন, ভিতরে উঁচু খড়ের গাদা এবং ওটার পাশেই করাল।

এর উলটো পাশটা খোলা। পাথর আর ঝোপঝাড় রয়েছে ওখানে। প্রতিরক্ষার জন্যে ওটা ভাল বটে, কিন্তু আবার র‍্যাঞ্চের ওপর আক্রমণ আনার জন্যেও ওটা বেশ সুবিধাজনক জায়গা।

রনি ওখানেই এসে দাঁড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগেও সে তাই করেছে। কিন্তু এবার র‍্যাঞ্চের চারকোনা উঠানে পা দেয়ামাত্র তিন দিক থেকে গুলির মুখে পড়বে ও।

ফিরে যাওয়ার কথা একবারও ওর মাথায় আসেনি। প্রচণ্ড জেদি ধরনের লোক রনি। যা করতে বেরিয়েছে তা করতে পারবে না, এটা মানতে সে রাজি নয়।

‘এবার তুমি জোরে ঘোড়া ছুটিয়ে সরে পড়ো, জেরোমি,’ উপদেশ দিল রনি। ‘ওরা আমাদের সাথে তোমাকে দেখে ফেললে তোমার মুশকিল হবে। এখন থেকে এটা আমাদের সমস্যা।’

ছেলেটা চলে যাওয়ার পর কয়েক মিনিট রনি কথা বলল না। তারপর মন্তব্য করল, ‘মনে হচ্ছে পুরো দলটাকে একসাথে শেষ করার এটা একটা ভাল সুযোগ।’

‘আমারও তাই ধারণা,’ বলল মারফি। ‘ওরা ওইভাবে ছড়িয়ে থাকায় আমাদের দারুণ সুবিধা হবে।’

‘কিন্তু সুবিধাটা তুমি কোথায় দেখছ?’ প্রতিবাদ করল ডেড-শট। আমরা এতদিকে একবারে কিভাবে গুলি ছুঁড়ব?’

‘তা করতে যাব কেন?’ বলল রনি। ‘আমার যতদূর বিশ্বাস তোমরা আমার সাথে আছ এটা ওরা জানে না। তাই তোমরা হচ্ছ আমার তুরুপের তাস। আমি দালানের ফাঁকে খোলা জায়গায় বেরিয়ে দাঁড়াব, যেন ওরা আমাকে দেখতে পায়। ওদিক দিয়ে তোমরা দুজন বড় কাজটা সারবে। ঘরের ভিতর ওই লোকগুলোকে তোমরা শেষ করবে-বা কিছু লোককে অন্তত সরাবে।’

‘পাথরের ভিতর ওই লোকটা ডেড-শটের জন্যে খুব সহজ কাজ,’ বলল মারফি।

‘আমি কেন?’ খেপে উঠল ডেড-শট। ‘আমি কেন মারপিট থেকে এত দূরে আটকা থাকব?’

‘কারণ তুমি রাইফেলে বেস্ট শট, ভালমানুষের মত বলল মারফি। ‘ওকে সরিয়ে ওখান থেকে তুমি ওরা যেসব জানালা দিয়ে গুলি করবে সেগুলো কাভার করতে পারবে।’

‘আর তুমি?’ সন্দিগ্ধ সুরে জানতে চাইল ডেড-শট। ‘তুমি ওই সময়ে কি করবে?’

‘কেন, আমি প্রথমে র‍্যাঞ্চহাউস আক্রমণ করব! তুমি সামনে থেকে গুলি ছুঁড়বে, আমি পিছন দিয়ে ঢুকব।’

‘ঠিক আছে, মারফি,’ রনি রাজি হলো। ‘আমি শার্পিকে আর পরে স্টোররূম সামলাব। তুমি র‍্যাঞ্চহাউসে কাজ সেরে করালে আলফনসোর পিছনে যাবে।’

ওরা বেশ দ্রুত এগোচ্ছে এখন। রনির ইঙ্গিতে ওরা প্রস্পরের থেকে দূরে সরে গেল। রনি দেখল শার্পির লোকজন কয়েকশো গরু ড্রাইভের জন্যে র‍্যাঞ্চের পুব সীমান্তের দিকে নিয়ে জড়ো করেছে। অর্থাৎ ওরা প্রথমে পুব দিকে রওনা হয়ে পরে নর্থ স্টার রোড ধরে দক্ষিণে মেক্সিকো বর্ডারে যাবে।

র‍্যাঞ্চহাউসটা যখন রনির চোখে পড়ল তখন সূর্য মাথার উপরে উঠেছে। গতি কমাল সে। মুখটা শুষ্ক হয়ে উঠল, পেটের ভিতরটাও কেমন যেন খালি খালি ঠেকছে। সে জানে যখন উঠানে গিয়ে দাঁড়াবে, মৃত্যু ওকে চারপাশ থেকে ঘিরে থাকবে।

যদি ডেড-শট বিফল হয়? কিংবা মারফি? যদি কোথাও ভুল হয়? লড়াই করে ওখান থেকে বেরোনো ছাড়া ওর আর কোন উপায় থাকবে না। জীবনের সব থেকে বড় একটা ঝুঁকি সে নিতে চলেছে। সোরেলটাকে হাঁটিয়ে এগোবার সময়ে গলা ছেড়ে গান ধরল রনি। ওটাই ডেড-শটের জন্যে সার্ট ডেভিসকে সরাবার সিগন্যাল।

এই সময়ে নিজের প্ল্যান পরিবর্তন করল রনি। ঘোড়ার নিরাপত্তাই এর কারণ। সে চায় না একটা ফসকে যাওয়া গুলিতে ঘোড়াটা মরুক। ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে বাড়ির কোনার দিকে সরে গেল রনি।

ওর সামনে উঠানটা সাদাটে-গোলাপী। বাড়ির কিনার ঘেঁষে কিছুটা তুষার রয়েছে, বাকিটা গলে গেছে। আবহাওয়া যথেষ্ট ঠাণ্ডা হওয়া সত্ত্বেও সে লক্ষ করল র‍্যাঞ্চহাউসের জানালা খোলা রয়েছে।

‘শার্পি!’ ওর স্বরটা খোলা উঠানে জোরাল শোনাল। ‘বাইরে এসো!’

যেন সঙ্কেত পেয়েই, বার্ন থেকে বেরিয়ে এল শার্পি বুমার।

‘আমাকে ডাকছ, ড্যাশার?’

রনি দেখল বিশাল লোকটা চোখ কুঁচকে বাড়ির ছায়ায় ওকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে। ওর জন্যে ব্যাপারটা একটু কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন। মারফি যদি বিফলও হয়, র‍্যাঞ্চহাউসের ভিতর থেকে লোকগুলো ওকে সহজে গুলি লাগাতে পারবে না। কিন্তু রনি জানে মারফি বিফল হবে না। আজ পর্যন্ত কখনও তা হয়নি।

‘নিশ্চয়! শুনলাম তুমি আমাকে শিকার করার জন্যে খুঁজে বেড়াচ্ছ? ভাবলাম কাজটা তোমার জন্যে একটু সহজ করে দিই।’

‘তুমি আমার গুটিয়ে আনা খেলা পণ্ড করেছ, ড্যাশার।’ আরও দুই কদম এগিয়ে এল বুমার। ‘তোমাকে দেখা যায়, এমন জায়গায় বেরিয়ে এসো!’

দ্রুত নজরে পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখছিল রনি। বুঝল র‍্যাঞ্চহাউস থেকে গুলি খাওয়ার ঝুঁকি না নিয়েও কিছুটা বেরোনো সম্ভব। আলফনসো দ্রুত সরে না গেলে সেও শার্সি মাঝখানে থাকায় গুলি করতে পারবে না। সত্তর গজ ব্যবধানে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে ওরা। রনি কয়েক পা এগোল। বুমারও এগোচ্ছে ওর দিকে।

ওদিকে জঙ্গলটাকে ঘুরে যে ছোট টিলার মাথায় সার্ট পজিশন নিয়ে বসেছে তার তলায় ঘোড়া নিয়ে পৌঁছে গেল ডেড-শট ওয়াইল্স্। গাছের ছায়ায় পুরু তুষারে খুরের শব্দ মোটেও শোনা গেল না। ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে অ্যাপাচি কায়দায় উপরে উঠছে সে। রনি এখন কতটা বিপদের মুখে থাকবে বুঝেই ভয়ঙ্কর আর মরিয়া হয়ে উঠেছে ও। যেভাবেই হোক ওকে সময় মত পৌছতেই হবে। উপরে উঠে পাথরের আড়ালে উবু হয়ে বসা ভারী গড়নের লোকটাকে দেখতে পেল।

লম্বা দুটো লাফে এগিয়ে গেল ডেড-শট। বুটের তলায় তুষার গুঁড়ো হওয়ার শব্দে মুখ তুলে তাকাল সার্ট। রাইফেল ফেলে নেকড়ের মত দাঁত দেখিয়ে লোকটা ছুরি বের করল। হত্যার নেশায় ডেড-শটের দিকে ঝাঁপিয়ে এল। ওয়াইল্স বুঝতে পারছে গুলি করা চলবে না। কারণ শব্দ হলেই নিচের উঠানে গোলাগুলির ঝড় উঠবে-এবং রনিই হবে সবার টার্গেট। এক পা পিছিয়ে ঝাঁপের মাঝেই লোকটার ছুরি বাড়ানো হাতের কব্জি ধরে হেঁচকা টানে ওকে তুষারের স্তূপের ওপর আছড়ে ফেলল।

লোকটার হাত থেকে ছুরি ছুটে গেল, জোরে মাথা ঠুকে গেছে ওর। কিন্তু সার্ট শক্ত লোক। পরক্ষণেই লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল। সেও শব্দ করে নিচের অ্যামবুশ পণ্ড করতে চাইছে না। ভালুকের মত লোকটা লড়তে পছন্দ করে। দ্রুত এগিয়ে হাতুড়ির বাড়ির মত প্রচণ্ড একটা ঘুসি খেয়ে কয়েকটা দাঁত হারাল সে। চোয়ালে পরবর্তী ঘুসিটা খেয়ে ওর খুলির ভিতর ঘণ্টা বেজে উঠল। মাথা নিচু করে আবার এগোতে গিয়ে আরেকটা ঘুসি আর কনুইয়ের মার খেল। জোরে লাফ দিতে গিয়ে সার্টের পা পিছলে গেল। মুখ থুবড়ে পড়ার আগেই ডেড-শটের হাঁটু ওর চিবুকে আঘাত করল।

লোকটা পড়ে গেল। ডেড-শট পাথরের আড়ালে ঝাঁপিয়ে পড়ে রাইফেলটা তুলে নিল।

.

ডেড-শট যখন টিলায় উঠছে, ওই সময়ে মারফি র‍্যাঞ্চহাউসের পিছনে পৌঁছেচে। ওদিকে কোন দরজা নেই। জানালা খোলার চেষ্টা করল সে, কিন্তু পারল না, হয় লক করা আছে, নইলে তুষারে জমে গেছে। দ্বিতীয় বা তৃতীয় জানালাতেও সুবিধা হলো না। এই সময়ে মেক্সিকান রাঁধুনী ওকে দেখতে গেল। তাড়াতাড়ি এগিয়ে ভিতর থেকে ওটা খোলার চেষ্টা করল মহিলা। কোন ফল হলো না।

আগুনের ওপর থেকে কেতলিটা এনে জানালায় গরম পানি ঢেলে দিল। মারফির ঠেলায় এবার জানালা উঠে গেল। ভিতরে ঢুকে বড় কামরায় চলে এল সে।

ফায়ারপ্লেসের পাশে রাইফেল হাতে দাঁড়িয়ে আছে টিচ। মার্ক জানালার কাছে উবু হয়ে তৈরি।

‘অস্ত্র ফেলে দাও, বয়েজ,’ নিচু স্বরে বলল ডাগ, ‘নইলে ঝুঁকি নাও!’

ওই মুহূর্তে উঠানে গোলাগুলি শুরু হলো। মার্ক ঝুঁকি নিয়ে হারল। খোলা পিস্তলটা ওর হাতেই ছিল, ওটার মুখ ফেরাতেই ম্যাজিকের মত দুটো পিস্তলই ডাগের হাতে উঠে এল। বারুদের শিখা দেখা গেল পিস্তলের মুখে। শিখার ওপর দিয়ে টিচের মুখের দিকে চাইল ডাগ। দেখল লম্বা লোকটা রাইফেল ঘুরিয়ে গুলি করছে। ধাক্কা খেয়ে পিছিয়ে গেল মারফি। টিচকে কেশে রক্ত তুলে হাঁটু মুড়ে পড়ে যেতে দেখে বুঝল ওর গুলি ব্যর্থ হয়নি। জানালার ধারে পড়ে আছে মার্কের লাশ। দরজার দিকে ছুটল ডাগ।

রনি কি করছে সেদিকে একবারও চেয়ে দেখল না সে। ওর ধারাই এমনি, ওকে যে কাজ দেয়া হয়েছে সেটা সে শেষ করবে। করালের দিকে ছুটল ও। মাত্র নতুন পজিশন বেছে নিয়ে গুলি করার জন্যে তৈরি হয়েছিল আলফনসো। এই সময়ে ডাগকে ছুটে আসতে দেখল। ওর চোখ রনির দিক থেকে এদিকে ফিরল। বিপজ্জনক রকম কাছে এসে পড়েছে ডাগ। ওর দিকে দ্রুত একটা গুলি ছুঁড়ল আউটল। অনুভব করল একটা বুলেট ওর কাঁধে বিঁধেছে। হাত থেকে পিস্তল পড়ে গেল ওর, আবার ওটা তুলে নিয়ে করালের ভিতর দিয়ে ছুটল আলফনসো। মারফিও ঘুরে ওর পিছনে ছুটল, তক্তার ফাঁক দিয়ে গুলি ছুঁড়ছে।

পড়ে গিয়ে কাশল আলফনসো। তারপর উঠে লাফিয়ে করালের উপরের মোটা তক্তাটা ধরে উপরে উঠল। মারফি পা ফাঁক করে পিস্তলগুলো তাক করে দাঁড়িয়ে আছে। ওর ঠাণ্ডা চোখে মৃত্যু দেখতে পেল আলফনসো। নিজের আঘাতগুলো মারাত্মক বুঝতে পেয়ে হঠাৎ হেসে উঠল।

‘ইউ লাকি ডগ!’ বলল সে, ‘লাকি ডগ! আমি তোমাকে খুন করব!’

লাফিয়ে নিচে নামল লোকটা। আশ্চর্যজনক ভাবে নিজের পায়েই খাড়া রইল। দাঁত বের করে হাসছে আউটল।

‘তুমি আমাকে শেষ করেছ, কিন্তু আমি সঙ্গী চাই!’

পিস্তল তুলল সে, এবং মারফির কোল্টগুলো একের পর এক মৃত্যু-শেল গেঁথে চলল ওর দেহে। পায়ে পায়ে পিছিয়ে শেষে পড়ে গেল আলফনসো।

.

মারফি যখন জানালা দিয়ে র‍্যাঞ্চহাউসে ঢুকছে; এবং ডেড-শট টিলার ওপর লড়ছে; রনি তখন শার্পির মুখোমুখি খোলা জায়গায় বেরিয়ে এসেছে। শার্পি বুমার, যে কখনও ভয় কাকে বলে জানেনি, হঠাৎ কেমন যেন একটা অনিশ্চয়তা অনুভব করল। ওই তোবড়ানো হ্যাট, কালো চুল, নীল ঠাণ্ডা চোখ, একটু কুঁজো কাঁধ, আর কাউম্যানের ছোট পদক্ষেপে হাঁটা-ওটাই রনি ড্যাশার, এবং ওটাই মৃত্যু।

ওই পরিষ্কার, সূর্যের আলোয় উজ্জ্বল দিনে ওই মুহূর্তে বুমার অনুভব করল ওর সময় এসেছে। ওই লোকটাকে দেখার পর থেকেই তার এত সতর্ক পরিকল্পনা, এবং যেসব ঝুঁকি নিরাপদ আর নিশ্চিত ছিল, সেগুলো সব ওলট- পালট হয়ে যেতে শুরু করেছে-সবই বিফল হয়েছে।

তবু, সব বোঝার পরও তার ঠাণ্ডা, রুক্ষ চেহারা একেবারে নির্বিকার থাকল। শার্পি বুমার জানে যে মানুষ একবারই মরে। জীবনে আর সবকিছু বহুবার করা গেলেও মাত্র একবারই মরা যায়। একটা মানুষ গর্ব নিয়ে বাঁচতে না পারলেও, গর্বের সাথে মরতে নিশ্চয়ই পারে।

ওদের মধ্যে দূরত্ব যখন তিরিশ গজ, তখন থেমে দাঁড়াল বুমার। মুহূর্তের জন্যে সামনে দাঁড়ানো রনির প্রতি কেমন একটা অদ্ভুত হৃদ্যতা অনুভব করল সে। হয়তো সত্যিকার ফাইটারের রীতিই এমন। অন্তত ওয়াইল্ড বিল হিককের- মত সে পিছন থেকে পিঠে গুলি খেয়ে একটা জুয়াড়ীর হাতে মরবে না। কিংবা বিলি দা কিডের মত অন্ধকারে খুন হবে না। সে এখানে দিনের আলোয় দাঁড়িয়ে সামনা-সামনি লড়ে মরবে, এবং ড্যাশারকেও সাথে নিয়ে যাবে।

‘কেমন বুঝছ, ড্যাশার?’ ওর স্বরটা কর্কশ। ‘দেখা যাক তুমি আসলে কতটা ভাল!’

পরস্পরের দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওরা। দুজনেই জানে অন্যজন কি অনুভব করছে, কারণ ওরা দুজনেই ফাইটার। ওদের জীবন-ধারা যত ভিন্নই হোক জাত, বর্ণ, বা ধর্ম যা-ই হোক, একজন ফাইটার অন্যজনকে পুরোপুরিই বোঝে। পিস্তল কথা বলা শুরু করার আগে বুমার আবার কথা বলল।

‘জানো, বাছা, এটা যাওয়ার একটা চমৎকার উপায়। সূর্যের আলোয় তুষার গলার আওয়াজ শুনতে শুনতে বিদায় নেয়া যাবে!’

ওর হাত দুটো ঝাঁপিয়ে পিস্তল বের করার জন্যে নিচে নামল। যেন অদৃশ্য সঙ্কেতেই চারদিক থেকে গোলাগুলির আওয়াজ উঠল।

মানুষের কাছে চরম উৎকণ্ঠায় ভরা অনিশ্চয়তার মুহূর্তগুলোয় সময় যেন হঠাৎ স্থির হয়ে যায়। সেকেণ্ডে ঘটে যাওয়া ঘটনাও মনে হয় লম্বা লম্বা মিনিট জুড়ে ঘটছে।

শার্পি বুমারের বিশাল থাবা দুটো মৃত্যু ডেকে আনার- অনুশীলন করা অভ্যস্ত ভঙ্গিতে পিস্তলের বাঁটের ওপর পড়ে হাতে চমৎকার আরামদায়ক একটা অনুভূতি জাগাল। বিদ্যুৎ ঝলকের মত দ্রুত গতিতে খাপ থেকে পিস্তল দুটো লাফিয়ে উঠে এসে লক্ষ্য স্থির করল, তবু শ্বাস রুদ্ধকর একটা ক্ষণে ওর চোখের সামনেই রনি ড্যাশারের পিস্তল দুটোর মাথা থেকে আগুনের শিখা ছিটকে বেরোল।

বুলেটের আঘাতে খিঁচানির ভঙ্গিতে শার্পির দাঁত বেরিয়ে এল। গাল আরও গভীর গর্তে ঢুকল। হ্যাটটা কিভাবে কোথায় চলে গেছে। ওর মুখে লড়াইয়ের কালো ধোঁয়াটে একটা গন্ধ, এবং সে গুলি করে চলেছে, আবার, আবার, আবার!

ওই গোলাগুলির সামান্য টুকরো একটা ক্ষণে প্রথম গুলিতেই যে সে অনুভূতির ভারসাম্য হারিয়েছে তা সে জানতেও পারল না। দ্বিতীয় গুলি ওর বাম হাত ফুঁড়ে হাড় ফাটিয়ে মাংস ছিঁড়ে বেরিয়ে গেল। সে জানতেও পারল না ওর দেহটা রনির গুলিতে একবার ডাইনে আবার বাঁয়ে ফিরছে বারংবার। এবং ওর নিজের গুলিগুলো ওরই পায়ের কাছে মাটিতে ঢুকছে।

বিশাল গানম্যানের দেহটা ছিন্নভিন্ন না হওয়া পর্যন্ত রনি থামল না। জানে লোকটার মধ্যে এক ফোঁটা জীবন অবশিষ্ট থাকলেও সে বিপজ্জনক, কারণ সে ফাইটার। হয়তো লোকটা নিষ্ঠুর, ক্রিমিন্যালও, কিন্তু তার পরেও সে ফাইটার।

মাত্র একবার থেমে জানালা দিয়ে দ্রুত একটা গুলি ছুঁড়েছিল ড্যাশার। তারপর নিজের কাজটা শেষ করেছে। উঠানে হাত-পা ছড়িয়ে পড়া শার্পির লাশ রেখে স্টোররূমের দিকে ছুটল রনি।

ফিউরি রয়েছে ওখানে। লোকটা রনিকে হত্যা করবে বলে প্রতিজ্ঞা করেছে, অনেক গালাগালিও করেছে। সেই হিংস্র আর নিষ্ঠুর গানম্যানই অবাক বিস্ময়ে দেখেছে, ভয়ানক পরাক্রমশালী শার্সি বুমার কিভাবে রনির পিস্তলের মুখে শোচনীয় মৃত্যু বরণ করল। হঠাৎ ওর গলায় ভারী আর তেতো কি যেন ঠেকে গেল। বুমারকে ছেড়ে রনি ওর দিকেই রওনা হয়েছে দেখে ভয়ার্ত পশুর চিৎকারের মত একটা শব্দ ফিউরির গলা চিরে বেরিয়ে এল।

ঘুরে উলটো দিকের জানালা খামচে খোলার চেষ্টা করল সে। যত বড়াই করেছে সব ভুলে গেল; ভুলে গেল ওর প্রতিজ্ঞা আর জিঘাংসা।

ঠাণ্ডায় জমে যাওয়া জানালা খুলতে না পেরে একটা চেয়ার তুলে কাঁচটা ভেঙে ফেলল। তারপর জানালা দিয়ে বাইরে ঝাঁপ দিল। জানালায় লেগে থাকা ভাঙা কাঁচের টুকরোয় ঘষা খেয়ে ফিউরির চামড়া কয়েকটা গভীর লম্বা ফালি হয়ে কেটে গেল। বাইরে ঝাঁপিয়ে পড়েই চিৎকার দিয়ে বনের দিকে ছুটল। কিন্তু গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বেরোল না—গলা বসে গেছে ওর।

মতিভ্রমে পাগল হয়ে উঠেছে সে, ওর কেবল একটাই চিন্তা, এখান থেকে সরে পড়তে হবে, পালাতে হবে ওকে। হঠাৎ ভয়ার্ত চোখে পিছন ফিরে চাইল ফিউরি। জানালার ফ্রেমে রনির মুখ দেখতে পেয়ে তাক না করেই দ্রুত একটা বুনো গুলি ছুঁড়ল। টিলার মাথা থেকে একটা রাইফেল গর্জে উঠল, আধপাক ঘুরে তুষারের ওপর পড়ে গেল, ওর বড়াই বা ভয়, কিছুই আর রইল না। রক্তে তুষার রাঙা হলো, ওটা মানুষের রক্তের মতই লাল।

কামারশালার দিক থেকে কয়েকটা গুলির শব্দ এল। তারপর ঘোড়ার খুরের আওয়াজ শোনা গেল-ক্রমেই ওটা মিলিয়ে যাচ্ছে। পিস্তলে গুলি ভরছে রনি। করালের দিক থেকে খুঁড়িয়ে এগিয়ে এল ডাগ।

‘অল্প জখম হয়েছি আমি,’ বলল সে, ‘তুমি চোট পেয়েছ?’

‘না।’ একটু চিন্তিত হয়ে উঠল রনি। ‘ডেড-শট কোথায়?’

‘আসছি!’ নিজেই জবাব দিল ডেড-শট। পাথুরে টিলার ওপর থেকে নেমে এসেছে সে।

‘ফিউরি?’ প্রশ্ন করল ডাগ।

‘মরেছে,’ জানাল ওয়াইল্স্।

‘বাড়ির ভিতর দুজন আমার হাতে মরেছে,’ রিপোর্ট দিল মারফি। ‘আলফনসোও শেষ।’

একটু দম নিয়ে ডেড-শট বলল, ‘পাইয়ূট আর ফাজ ভেগেছে। পালাতে দেখে ওদের আর মারিনি। টিলার মাথায় লোকটা জ্ঞান হারিয়েছিল। কিন্তু পরে উঠে ছুরি হাতে আমাকে আক্রমণ করে মরেছে।’

উঠানে বেরিয়ে তোবড়ানো হ্যাটটা তুলে নিল রনি। ফাইটের সময়ে ওটা পড়ে গেছিল।

‘কেবল একজনের হদিস পাওয়া গেল না,’ বলল সে। ‘জনি রিগ।’

‘হয়তো ভেগেছে,’ যোগান দিল ডেড-শট।

‘অসম্ভব!’ জোর প্রতিবাদ জানাল মারফি। ‘ও পালাবার লোক না।’

অনেকগুলো ঘোড়ার খুরের শব্দে তিনজনই মুখ তুলে তাকাল। ডেড-শট রাইফেল কাঁধে তুলল।

‘দাঁড়াও!’ রাইফেলের ব্যারেল ধরে ফেলল রনি। ‘ওটা সায়মন ড্রিল, আর ওদের র‍্যাঞ্চের লোকজন।’

সায়মন উঠানে এসে থামল। ঘোড়াটা রক্তের গন্ধে শার্পির লাশ থেকে সভয়ে সরে দাঁড়াল। ওদিকে তাকাল র‍্যাঞ্চার। ‘মরে গেছে?’

‘হ্যাঁ, মোট ছয়জন মরেছে। পাইয়ূট আর ফাজ পালিয়েছে। তবে জনি রিগকে কোথাও দেখতে পাইনি।’

‘দারুণ দেখালে বটে তোমরা!’ বলে উঠল ডি বার র‍্যাঞ্চার। ‘ক্ষ্যাপা তিনজনই সব মেরে সাফ করে দিলে! তোমরা আসছ শুনেই ছুটে এসেছিলাম। কিন্তু দেখছি আমাদের জন্যে কিছুই অবশিষ্ট রাখোনি। আমরা কিছু করতে পারলাম না।’

‘করতে চাইলে অবশ্য এখনও করতে পারো,’ বলল রনি, ‘এখানে ওই মহিলা রাঁধুনী ছাড়া আর একটা লোকও বেঁচে নেই-তুমি যদি তোমার দুজন লোককে আপাতত এইখানে রেখে যাও, তাহলে হ্যাডলের খুব উপকার হয়।’

‘অবশ্যই, প্রতিবেশীর জন্যে আমি নিশ্চয় তা করব। তুমি চিন্তা কোরো না।’

‘আমি হ্যাডলেকে খবর জানাতে আলমা যাব, ফেরার সময় তোমার বাকস্কিনটাও নিয়ে আসব। চমৎকার ঘোড়া! এমন মাউন্টিন হর্স আমি আর দেখিনি।’

‘তোমার পছন্দ হয়েছে শুনে খুশি হলাম। তুমি আমার যা উপকার করেছ তাতে ওই ঘোড়াটা এমনিতেই তোমার প্রাপ্য হয়ে গেছে-ওটা আমার তরফ থেকে একটা ছোট্ট উপহার।’

‘কিন্তু তা কি করে হয়? এমন একটা ঘোড়া-’ আপত্তি তুলল রনি।

‘ওটা না নিলে তোমার সাথে আমার বন্ধুত্ব শেষ- আমার র‍্যাঞ্চে পাই খেতেও তোমাকে ডাকব না!’ মিটিমিটি হাসছে সায়মন।

চিন্তাযুক্ত ভঙ্গিতে চিবুক চুলকাল রনি। ওর নীল চোখ দুটো খুশিতে চকচক করছে। ‘এমন কঠিন হুমকির সামনে তোমার প্রস্তাব না মেনে আর কি উপায়? পাই ছাড়া যাবে না।’

মারফি ডেড-শটের দিকে চাইল। ‘ও পাই-এর কথা বলল না? অ্যাপ্‌ল পাই?’

‘ওই রকমই তো শোনাল।’ গম্ভীর হওয়ার ভান করল ডেড-শট। ‘কিন্তু আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। সত্য-মিথ্যা যাচাই করার জন্যে সোজা বার ডিতে পৌঁছে তদন্ত করা দরকার!’

ওরা ঘোড়া আনতে রওনা হলো। রনি বলল, ‘সায়মন, আমি তোমাকে আগেই সাবধান করছি। ওই দুজন কিন্তু খাওয়াতে ফাইটিঙের মত ওস্তাদ!’

.

কামরায় ঢুকে রনি দেখল বাড হ্যাডলে বিছানায় বসা। ডাক্তারের যোগ্য চিকিৎসায় মাত্র কয়েকদিনেই ওর চেহারায় কিছুটা জৌলুস ফিরে এসেছে। রনিকে দেখেই খুশিতে উচ্ছ্বসিত হয়ে হাত বাড়িয়ে দিল বাড়। ‘ওহ্, তোমাকে দেখে আশ্বস্ত হলাম!’ বলল সে। ‘সেদিন তুমি যে মূড়ে বেরিয়ে গেলে, আমার তো ভয়ই হচ্ছিল তুমি হয়তো নিজেরই কোন অনর্থ ঘটিয়ে বসবে। এখন বলো, ওদিককার কি খবর?’

‘ভালই,’ বলে একটা চেয়ারে বসে পড়ল রনি। ‘তোমাকে আজ অনেক সুস্থ দেখাচ্ছে।’

‘সুস্থ? রীতিমত চাঙ্গা হয়ে উঠেছি! এখন নিজে নিজে কয়েক পা হাঁটতেও পারি! অ্যাবট তো বলছে রোজ একটু একটু হাঁটা অভ্যাস করলে এক মাসের মধ্যেই আমি দৌড়ে বেড়াতে পারব! কিন্তু ওদিকে সার্কেল এইচের কি খবর?’

‘বেশ ভাল। এবারের শীতটা ভালই কাটবে মনে হচ্ছে-বুড়োকে উত্ত্যক্ত না করে মুখ খুলবে না রনি—’গরুগুলো শীত নামার আগেই র‍্যাঞ্চের পুবে জড়ো করা হয়েছে—’

‘ওসব গরু-ঘোড়ার খবর কে শুনতে চেয়েছে!?’ খেপে উঠল বাড। ‘শার্পির কথা বলো!’

‘শার্সি?’ জিজ্ঞেস করল রনি। ‘ও, হ্যাঁ, ওই লোকটা! শার্পির কথা বলব?’

‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, ওর কি হলো বলো!’ কৌতূহল আর ধরে রাখতে পারছে না বাজ।

‘মরে গেছে। ওর লোকজনও সবাই মরেছে-কেবল দুজন দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে।’ পুরো ঘটনা ধীরেধীরে খুলে বলল রনি।

‘মোট কথা র‍্যাঞ্চটা এখন পুরো তোমার দখলে। বর্তমানে সায়মন ড্রিল তোমার হয়ে র‍্যাঞ্চের দেখাশোনা করছে। হ্যাঁ, ওই বাণ্ডি বুল লোকটাও তোমার র‍্যাঞ্চ দখল করার ফিকিরে ছিল, কিন্তু সেও মারা গেছে। ডি র‍্যাঞ্চের একজন ওর লাশ পেয়েছে। ট্র্যাক দেখে বোঝা গেছে জনি রিগকে পিছন থেকে গুলি করার চেষ্টা করেই মারা পড়েছে ও। তবে জনির কোন খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। লোকটা স্রেফ হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।’

‘ওর কোন ট্র্যাকই পাওয়া যায়নি?’ উদ্বিগ্ন স্বরে প্রশ্ন করল বাড। ‘ও কিন্তু ভয়ানক লোক।

‘জানি। সার্কেল এইচের কাছাকাছি পর্যন্ত ওর ট্র্যাক পাওয়া গেছে। হয়তো ওখানে গোলাগুলির শব্দ পেয়েই সে অন্যদিকে সরে গেছে। কিন্তু ওর কথা থাক, বাক উইলিয়ামসের কাছে তোমার পাওনা পনেরো হাজার ডলার আমি আলমার ব্যাঙ্কে তোমার নামে জমা করে দিয়েছি। এখন এখানে আমার কাজ শেষ।’

‘তাহলে টাকাটা তুমি সত্যিই এনেছিলে?’

‘হ্যাঁ, আমার সাথেই ছিল। শার্পির কেড়ে নেয়ার ভয়েই সার্কেল এইচে তোমার হাতে দিইনি।’

‘তুমি ঠিকই করেছিলে, শয়তানটা টাকার গন্ধ পেলেই আমার থেকে কেড়ে নিত।’

বাইরে চমৎকার উজ্জ্বল চাঁদের আলো। শীতের শুরুতেই কেবল এত আলো হয়। রাস্তার তুষার গলে গেছে। যেখানে সূর্যের আলো ভালমত পৌঁছে না, তেমন কয়েকটা ছায়াঘেরা জায়গাতেই কেবল তুষার জমে রয়েছে। পুবের মোগোলনসের উঁচু চূড়াগুলো চাঁদের আলোয় ঠিক হীরার মতই ঝিলিক দিচ্ছে। দৃশ্যটা অসম্ভব আর অবিশ্বাস্য রকম সুন্দর।

.

যেখানে রনি ড্যাশার বসে হ্যাডলেদের সাথে কথা বলছে, তার উলটো দিকে কয়েক বাড়ির পরেই একটা খালি কেবিন। কেবিনের ভিতর একটা লোক পটবেলি স্টোভের গনগনে আগুনে কাঠ যোগাচ্ছে। মাঝেমাঝে আগুনের কাছে হাত নিয়ে আঙুলগুলো গরম করে নিচ্ছে। অন্ধকার কামরায় কোন বাতি নেই, কেবল আগুনের অল্প আলো।

রনি যাদের ঈগল সেলুন থেকে তাড়িয়েছিল, ওটা তাদেরই একজনের কেবিন ছিল। এখন পরিত্যক্ত। কামরার একমাত্র জানালা দিয়ে ডক অ্যাবটের দরজা স্পষ্ট দেখা যায়।

সিগারেট নিভিয়ে আগুনের পাশে স্থির হয়ে বসল লোকটা। শিকারির মতই ধৈর্যের সাথে দরজাটার ওপর নজর রেখেছে ও। দক্ষ শিকারি জনি রিগ। রনি ড্যাশারকে খুন করার জন্যে সে অপেক্ষা করছে।

আর বেশিক্ষণ ওকে অপেক্ষা করতে হবে না। রনি তার ঘোড়ার পিঠ থেকে স্যাডল নামায়নি দেখেই রিগ বুঝে নিয়েছে আলমায় রাত কাটাবে না সে। কিন্তু তা না হলেও কোন অসুবিধে ছিল না। রনিকে খুন করার জন্যে শুধু এক রাত কেন এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতেও রিগের আপত্তি নেই। সে তৈরি। প্রচুর শুকনো খাবার আর জ্বালানি কাঠের সাপ্লাই কেবিনে সংগ্রহ করে রেখেছে। রনির ওপর তাকে প্রতিশোধ নিতেই হবে। এটাই পশ্চিমের রীতি। কেউ খুন হলে, দোষ যারই হোক, হত ব্যক্তির আত্মীয় বা বন্ধুকে তার প্রতিশোধ নিতেই হবে। নইলে সে পুরুষ বলেই গণ্য হবে না।

এই দুনিয়ায় জনি রিগের আলীগ-স্বজন কেউ নেই। চিরকাল সবার কাছ থেকে সে কেবল অবহেলা আর অন।দরই পেয়ে এসেছে। কোন মানুষের কাছ থেকে স্নেহ, মমতা, ভালবাসা, বা সহানুভূতি সে আজ পর্যন্ত কখনও পায়নি। ছিটে-ফোঁটা যেটুকু পেয়েছে, তা কেবল একজনের কাছ থেকেই-শার্পি বুমার। পৃথিবীতে জনির বন্ধু বা আপন বলতে ওই একটা লোকই ছিল। তাকে গুলি করে হত্যা করেছে ড্যাশার -সুতরাং জনি বেঁচে থাকতে রনির নিস্তার নেই। জনি জানে শার্পি নিষ্ঠুর ছিল, খারাপ ছিল, অনেক অন্যায় কাজ করেছে, কিন্তু তবু সে তার বন্ধু ছিল। তার প্রতি কোন অন্যায় আচরণ সে করেনি। তাই রনিকে হত্যা করে প্রতিশোধ না নেয়া পর্যন্ত ওর শান্তি নেই।

.

বাড় হ্যাডলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে উঠে দাঁড়াল রনি। আজ রাতেই মাইনারের কেবিন থেকে সায়মনের উপহার দেয়া বাকস্কিনটা সংগ্রহ করে সে ফিরতি পথ ধরবে।

বিদায় জানাতে সদর দরজা পর্যন্ত এল সুজানা। রনি দরজা খোলার পর ওর কনুইয়ে হাত রাখল মেয়েটা।

‘রনি, তুমি কি সোজা বাকের ওখানেই ফিরছ?’

‘না। রনির চোখ রাস্তার বাড়িগুলো দেখতে দেখতে অন্ধকার কেবিনটার ওপর গিয়ে থামল। একটু থেমে আবার এগোল। ‘না, আমি দক্ষিণে কিছুটা ঘুরে দেখে তারপর ফিরব।’

‘তুমি কি এক জায়গায় স্থির থাকতে পারো না? কবে সংসার পাতবে? এখানেই থেকে যাও না কেন, রনি?’ আবেগের সাথে মেয়েটা বলে চলল, ‘ওহ্, তুমি কাছে থাকলে আমার বড় ভাল লাগে। ইদানীং তুমি না থাকলে আমার অসহ্য ঠেকে।’

হাসল রনি। মেয়েটা কি বলতে চায় ও বুঝতে পারছে। মেয়েটা ভাললাগাকেই ভালবাসা ঠাউরে বসে আছে। ‘শোনো, সু, আমার সঙ্গ তোমার ভাল লাগে, এটা ঠিক। কিন্তু এটা ভালবাসা নয়। তোমার এই অনুভূতি হয়তো কৃতজ্ঞতা, ভাললাগা, আর কিছু শ্রদ্ধাবোধ একসাথে মিশে সৃষ্টি হয়েছে। ভালবাসার জন্যে সমবয়সী কাউকে তোমার দরকার।’ একটু থেমে রনি আবার বলল, ‘রেডের কথা তোমার মনে আছে? যাকে তুমি নাচের পার্টিতে চড় মেরেছিলে?’

‘ওর কথা তুমি কিভাবে জানলে?’ লজ্জায় একটু লাল হলো সুজানা।

‘সায়মনের র‍্যাঞ্চে শুনেছি। বেচারা তোমাকে খুব ভালবাসে।’

‘তাহলে আর আসেনি কেন? আমি তো ওর জন্যে বেশ কয়েকদিন অপেক্ষা করেছি। আসেনি বলে ধরে নিয়েছি ও আমাকে ভালবাসে না।’

‘জার্‌কির কাছে তোমার প্রিয় বেড়ানোর জায়গায় তো? সেও রোজই গেছে, তোমাকে দূর থেকে লুকিয়ে দেখেছে, কিন্তু কাছে যেতে সাহস পায়নি। সবার সামনে ওই রকম একটা মোক্ষম চড় খাওয়ার পর কোন্ মুখে যাবে? বাডের অ্যাকসিডেন্টের পরেও মাঝেমাঝে সে তোমাকে দেখার আশায় ওখানে গেছে, কিন্তু তুমিই আর ওদিকে যাওনি।’

‘কিন্তু আমি কিভাবে যাব? আমার হাত-পা যে বাঁধা ছিল-তুমি তো জানো!’

‘হ্যাঁ, আমি জানি, কিন্তু ও কিভাবে জানবে?’

‘জানো, ওকে আমারও খুব ভাললাগে, কিন্তু কখনও মুখ ফুটে বলিনি। ও আমাকে আরও আগে কেন চুমো খায়নি-সেই রাগেই তো আমি চড় মেরেছিলাম!’

‘নারীর মন দেবায়ে ন জান্তি!’ মন্তব্য করল রনি।

‘কি বললে?’

‘কিছু না। বলছিলাম, তোমার তরফ থেকে কোন ইঙ্গিত না পেলে তোমার মনের কথা ও কি করে বুঝবে? এইভাবেই তরুণ তরুণীর মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। ওদের অপরিণত মন পরস্পরের থেকে অনেক বেশি আশা করে। কচি মন ভাবে, ও কেন এই সহজ ব্যাপারটা বুঝল না? কিন্তু তার অভিমানী মন বুঝতে চায় না, যে তার ওই সহজ ব্যাপারটাই সহজ ভাষায় প্রকাশ না করলে, অন্যজন সহজে বুঝতে পারবে না। কারণ, অন্যজন, একই পরিস্থিতি আর এক পরিবেশে বড় হয়নি। এই জন্যে কেবল আকার ইঙ্গিতে নয়, মাঝেমাঝে স্পষ্ট কথায় নিজের মনোভাব প্রকাশ করা প্রয়োজন।’ রনির মনে হলো সে বেশি কথা বলছে। তার সারা জীবনের অভিজ্ঞতা সে অল্প কথায় ব্যক্ত করে ফেলেছে। এই সতেরো বছর বয়সের মেয়ে তার কতটুকু বুঝবে তাতে ওর যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কিন্তু সে অবাক হয়ে লক্ষ করল এই সদ্য যৌবনপ্রাপ্তা মেয়েটা যেন গত কয়েক মিনিটে আরও পরিণত হয়ে উঠল। প্রসঙ্গ পালটাল সে, ‘আচ্ছা, ওই বাড়িটাতে কে থাকে?’ পরিত্যক্ত অন্ধকার কেবিনটা দেখাল সে।

‘ওইটা? ওটা তো খালি!’ বলল সু। ‘কেবিনের আউটল মালিক তোমার তাড়া খেয়ে পালিয়েছে। সেও সেদিন ঈল্‌ সেলুনেই ছিল।’

মাথা ঝাঁকাল রনি। তার প্রশ্নের প্রকৃত জবাবটা পেয়ে গেছে ও। কয়েকটা ঘরের ছাদে এখনও তুষার জমে রয়েছে। চাঁদের আলোয় সবই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কিন্তু যেসব ছাদে তুষার রয়েছে সেসব বার্ন বা ছাপরায় আগুন জ্বালা হয়নি। ওখানে কোন উজ্জ্বল বাতিও জ্বলছে না। বাতি জ্বালানো বাড়িগুলোর ছাদে কোন তুষার নেই। কারণ ভিতরের আগুনের গরমে তুষার গলে গেছে। কিন্তু ওই অন্ধকার কেবিনের ছাদে কোন তুষার নেই।

‘আমি যাই,’ বলল রনি।

‘আবার আসবে তো?’ নিজের অশোভন আচরণে কিছুটা বিব্রত হয়েই প্রশ্ন করল সুজানা।

‘অবশ্যই,’ বলল রনি। সে জানে, ‘আসব না’ বলার চেয়ে ‘আসব’ বলাটাই নিরাপদ-এবং চলতি। ‘নিশ্চয়ই আসব। কিন্তু তুমি একটু বুঝে চোলো- অন্তত রেডকে কিছুটা বুঝতে দিও।’

বারান্দা পার হয়ে নেমে এল রনি। ওর মনোযোগ সম্পূর্ণ অন্য দিকে। হাসল সে। জানে কি আসছে। অভিজ্ঞতা সতর্ক হতে শিখিয়েছে ওকে। সুজানার দিকে ফিরে সে বলল, ‘আবার দেখা হবে, সুজানা। মনে হয় রাস্তার মাথায় আমাকে একটু থামতে হবে। বাডকে তুমি আমার শুভেচ্ছা জানিও।’

জানালায় একটা ক্ষীণ আলো ওর চোখে পড়ল। নিভে গেল ওটা। নিশ্চিত হলো সে। টপারকে নিয়ে এগিয়ে কেবিনের কাছে পৌঁছে থেমে দাঁড়াল। শীপস্কিন কোটের কলারটা উঠিয়ে ঘোড়া থেকে নামল।

কেবিনের দরজা খুলে একটা লোক বেরিয়ে এল। ওর পরনে একটা ভারী বাফেলো কোট। কোটের বোতামগুলো খোলা।

ক্রস ড্র! নিজের মনেই ভাবল রনি। অত্যন্ত ফাস্ট। জনি রিগ ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে। ওর বুটের তলায় কেবিন-সংলগ্ন তুষার ভাঙছে। রাস্তায় পৌঁছে থেমে দাঁড়াল। মৃত্যুর পূর্বাভাস চেনার ক্ষমতা ওর জন্মায়নি। সহজ সরল যুবক সে। ভাবাবেগে চলছে। ওর মাথায় কেবল একটাই চিন্তা-ড্যাশারকে হত্যা করতে হবে। এবং ওর বিশ্বাস সে তা পারবে।

‘হাওডি, ড্যাশার।’ নিচু স্বরে বলল সে।

‘হাওডি, জনি। আমি জানতাম তুমি এখানে আছ।’

‘কিভাবে?’ বিস্মিত হলো সে। ‘তুমি কেমন করে জানবে?’

‘কেবিনের ছাদে কোন তুষার নেই,’ বলল রনি। ‘যেসব বাড়িতে আগুন জ্বালা হয়েছে, ওগুলোর ছাদেই কেবল তুষার নেই। আগুনের তাপে গলে গেছে।’

চট করে পিছন ফিরে তাকাল সে। দেখল, সত্যিই ওই ছাদে কোন বরফ নেই।

‘আমি ওই ভাবে কখনও ভাবিনি।’ শব্দ করে হেসে উঠল সে। ‘তোমার মাথা আছে! কিন্তু দুঃখের বিষয় তাতে কোন কাজ হবে না-তুমি এখন মরবে।’

‘পাগলামি কোরো না, জনি। জানি তুমি সত্যিই ফাইটার। কিন্তু নিজের জীবনটা এভাবে নষ্ট কোরো না। শনির কবল থেকে মুক্তি পেয়েছ-এখন ভাল পথে চলো।’

‘শনি? ও ছিল আমার বন্ধু। তুমি শার্পিকে মেরেছ। না; তোমার নিস্তার নেই।’

‘শোনো, রিগ। খুন-খারাবিতে তোমার কোন লাভ হবে না। তুমি ভাল লোক। আর কোথাও গিয়ে একটা র‍্যাঞ্চ-ট্যাঞ্চ করে জীবন কাটাও।’

‘তুমি বেশি কথা বলছ, রনি। তোমাকে আমি পছন্দ করি। তোমার সাথে আমার ব্যক্তিগত কোন বিরোধ নেই। কিন্তু-তুমি শার্পিকে মেরেছ। ভাল হোক, খারাপ হোক, সে ছিল আমার বন্ধু। একমাত্র বন্ধু। তোমাকে মেরে আমার খারাপ লাগবে-কিন্তু তুমি তো পশ্চিমের রীতি জানো। তৈরি হও!’

রিগের ডান হাত আলতো ভাবে খোলা ওভার কোটের বাম ধার ছুঁয়ে আছে। পিস্তলের বাঁট মাত্র কয়েক ইঞ্চি দূরে। ‘সরি, রনি-!’

কোমর থেকে ওর দেহটা ঘুরল। পিস্তল তুলেই গুলি করল সে। অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্র গতি।

রনির পিস্তল খাপ ছাড়ল। সামান্য দেরি হয়েছে ওর। চুল পরিমাণ। প্রায় একই সাথে ফায়ার করল দুজন। তাড়াহুড়া করে ট্রিগার টিপেছে রিগ। বেশি ফাস্ট।

বাঁচতে হলে গানম্যানকে প্রথম যা শিখতে হয়-গুলি ছোড়ার পূর্ব মুহূর্তে ক্ষণিক সতর্ক বিবেচনা-সেটাই ওর শেখা হয়নি। ওর বুলেটটা রনির শীপস্কিন কোটের কাঁধে গভীর দাগ কেটে বেরিয়ে গেল। দ্বিতীয়টা কোটের ভারী ভাঁজের ভিতর হার্টের এক ইঞ্চি দূর দিয়ে গেল, দেহ ছুঁলো না।

কোমরের পাশ থেকে গুলি করেছে রনি। একটাই। পড়ে যাওয়া লোকটার কাছে ছুটে গেল সে। মারা যাচ্ছে রিগ। ওর চোখে অবিশ্বাস।

‘শোধ নেয়া হলো না।’ মরণ যন্ত্রণায় কুঁচকে উঠল রিগের মুখ। ‘শার্পি আমার বন্ধু ছিল।’

ধীরে মাথা ঝাঁকাল রনি। সে জানে, ব্যক্তিগত শত্রুতা নয়, এটা পশ্চিমের রীতি।

***

1 Comment
Collapse Comments

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *