একলব্য – ৩

ওরে যাত্রী, 
… ঘরের মঙ্গলশঙ্খ নহে তোর তরে, 
নহে রে সন্ধ্যার দীপালোক, 
নহে প্রেয়সীর অশ্রুচোখ। 
পথে পথে অপেক্ষিছে কালবৈশাখীর আশীর্বাদ 
শ্রাবণরাত্রির বজ্রনাদ। 
পথে পথে কণ্টকের অভ্যর্থনা, 
পথে পথে গুপ্তসৰ্প গূঢ়ফণা। 
নিন্দা দিবে জয়শঙ্খনাদ- 
এই তোর রুদ্রের প্রসাদ। 

.

সায়াহ্ন। 

পাহাড়ি পথ 

এবড়োখেবড়ো। জঙ্গলাকীর্ণ। ঘন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে সরু একটা পথ এগিয়ে গেছে সামনের দিকে। অরণ্যবিজ্ঞ ব্যাধ সংবাদ এনেছে, এই পথ দিয়ে এগোলে একটা সময়ে হস্তিনাপুরের রাজপথের সন্ধান মিলবে। তবে তা বহু যোজন দূরে। বহু ক্রোশ, বহু যোজন অতিক্রম করলে তবেই কাঙ্ক্ষিত রাজপথের দেখা পাওয়া যাবে। 

ওই সরু পথ ধরে একলব্য এগিয়ে চলেছে হস্তিনাপুরের দিকে। একা। আজ প্রত্যুষে যাত্রা শুরু করেছে একলব্য। যাত্রার সূচনাতে বেশকিছু সৈন্যসামন্ত তার সঙ্গে ছিল। বহুটা পথ একসঙ্গে এসেছিল তারা। হিরণ্যধনুর নির্দেশনা ছিল হস্তিনাপুর পর্যন্ত তারা একলব্যের সঙ্গে যাবে। যাত্রার সময় একলব্য নিশ্চুপ থাকলেও একটা সময়ে সৈন্যদের থামিয়েছিল সে। বলেছিল, ‘তোমরা রাজধানীতে ফিরে যাও। আমি এই দুর্গম পথ বেয়ে একাই যাব, হস্তিনাপুরে। 

দলপ্রধান বলেছিল, ‘আমরা আপনার আদেশ মানতে অক্ষম যুবরাজ। মহারাজ যা বলেছেন, তা-ই মানতে হবে আমাদের। হস্তিনাপুর পর্যন্ত আপনার সঙ্গ না ছাড়ার নির্দেশ আছে আমাদের ওপর।’ 

‘রাজার আদেশ রাজ্যসীমার অভ্যন্তরে বলবৎ থাকে। এখন আমরা মহারাজ হিরণ্যধনুর রাজ্যসীমার বাইরে। এখানে তাঁর আদেশ কার্যকর নয়। এই দলের প্রধান তুমি। কিন্তু এখানে আমিই সর্বাধিক মর্যাদাবান। মর্যাদাবানের আদেশ রক্ষা করা তোমার কর্তব্য দলপতি।’ একলব্য জানে—এ খোঁড়া যুক্তি। রাজ্যের ভেতরে বা বাইরে সৈন্যরা রাজাদেশ মানতে বাধ্য। জেনেও একলব্য একথা বলেছে। কেউ তার সঙ্গে থাকুক—এটা সে চাইছিল না। অনেক লোক সঙ্গে থাকলে গতি শ্লথ হয়, মনোসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। সে দ্রোণাচার্যের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে। যেন সে তীর্থদর্শনে যাচ্ছে। তীর্থার্থীরা ঘর থেকে বেরোলেই তাদের মনপ্রাণ তীর্থমুখী হয়ে যায়। জাগতিক বিষয়-আশয় তাদের কাছে তুচ্ছ মনে হয়। মনে শুধু এই ভাবনা ক্রিয়াশীল থাকে, কখন তীর্থদর্শনে সক্ষম হব। একলব্যের মনেও তীর্থদর্শনের আকুতি। কখন দ্রোণাচার্যের শ্রীচরণে নিজকে সমর্পণ করে পরম তৃপ্তি লাভ করবে? কবে আচার্যের শিষ্যত্ব প্রাপ্ত হয়ে নিজেকে ধন্য মনে করবে? এই সৈন্যদল, এই সাড়ম্বরতা তার কাছে অর্থহীন বলে মনে হচ্ছে। তার জীবনে মহার্ঘ হলো আচার্য দ্রোণের শিষ্যত্ব লাভ। তাই দলপতিকে এই খোঁড়া যুক্তি দেখাতে দ্বিধা করল না একলব্য। 

দলপতি কিন্তু বুদ্ধিমান। বিনীত গলায় বলল, ‘রাজ্য সীমানার বাইরে রাজাদেশ অন্যের কাছে গৌণ। কিন্তু সেই রাজ্যের প্রজার কাছে বা সৈন্যের কাছে রাজাদেশ সর্বদা, সর্বস্থানে মাননীয় এবং পালনীয়। আপনার আদেশ মানতে না পারার জন্য ক্ষমা চাইছি যুবরাজ।’ 

ফাঁপরে পড়ে গেল একলব্য। বুঝল—-আদেশ দিয়ে এদের রাজি করানো যাবে না; আবেগ দিয়ে এদের পরাস্ত করতে হবে। গলায় যতটুকু সম্ভব আবেগ ঢেলে বলল, ‘দেখো, আমি যাচ্ছি গুরুর কাছে। গুরুর কাছে যেতে হয় নিরাভরণ হয়ে। দীন বেশে একনিষ্ঠ মনে গুরুদর্শনে যেতে হয়। তোমরা আমার আভরণ। তোমরা যতক্ষণ আমার সঙ্গে থাকবে, আমার মনে তীব্র একটা অহংকার কাজ করবে—আমি রাজপুত্র, আমার চারদিকে সৈন্যসামন্ত, বাজনাবাদ্যের জয়ডঙ্কা। এসবকিছু আমার ভেতরের একনিষ্ঠতাকে চুরমার করে দিচ্ছে। যে ভক্তি গুরুপ্রাপ্তির সর্বোত্তম পথ, তা একেবারেই নস্যাৎ করে দিচ্ছে তোমাদের উপস্থিতি। সুতরাং তোমরা আমাকে সাহায্য কোরো, তোমরা ফিরে যাও। আমি একান্ত মনে গুরুকে স্মরণ করতে করতে হস্তিনাপুরের দিকে এগিয়ে যাই।’ 

আবেগ সব মানুষকে কোনো না কোনো সময়ে স্পর্শ করে। আর বক্তা যদি হর্তাকর্তা কেউ হন, তাহলে অধীনস্থদের সেই আবেগ তীব্রভাবে আবৃত করে। একলব্যের আবেগজড়ানো কথাগুলো দলপতিকে স্পর্শ করল। আমতা আমতা করে বলল, ‘মহারাজ যদি অপরাধ ধরেন? যদি জিজ্ঞেস করেন, যুবরাজ একলব্যকে অর্ধপথে ত্যাগ করে কেন চলে এসেছ?’ 

‘বাবা আমার ভাবাবেগ জানেন। আমার তৃপ্তির মূল্য তাঁর কাছে সর্বাধিক। তোমরা বুঝিয়ে বললে বাবা বুঝবেন। ফিরে যাও তোমরা। আমাকে একা যেতে দাও।’ একলব্য বলল। 

দলপতি বলল, ‘ঠিক আছে, আমরা ফিরে যাব। কিন্তু আমার একটা কথা আপনাকে রাখতে হবে। দু’জন পথপ্রদর্শক সৈন্য আপনার সঙ্গে যাবে। এই পথের অন্ধিসন্ধি জানে ওরা। জন্তুজানোয়ারের গতিবিধি বোঝে। চড়াই-উত্রাইয়ের খোঁজখবর ওদের নখদর্পণে। ওরা আপনাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে, হস্তিনাপুর পৌঁছে দেবে।’ 

‘ঠিক আছে। আমি রাজি।’ মৃদু বক্র একটা হাসি একলব্যের সারা মুখে ছড়িয়ে পড়ল। 

.

ফিরে গিয়েছিল সৈন্যদল। ডঙ্ক আর লখা থেকে গিয়েছিল। দ্বিপ্রহর হতে কিছুটা সময় বাকি তখন। পথচলা শুরু করেছিল আবার। আগে ডঙ্ক, পাছে লখা। মাঝখানে একলব্য। চলতে চলতে চলতে সূর্য মাথায় স্থির। রাজমাতা বিশাখা সঙ্গে আহারসামগ্রী দিয়েছিলেন। একটা বিশাল বটবৃক্ষের নিচে আহারে বসল একলব্য। একটু দূরে ডঙ্ক আর লখা। অনতিদূরে সরোবর, প্রাকৃতিক। 

আহার শেষ করে ডঙ্ককে একলব্য বলল, ‘ফিরে যাও তোমরাও।’ 

ডঙ্ক আকাশ থেকে পড়ল, ‘এ কী বলছেন যুবরাজ! ফিরে যাব! আমাদের ঘাড়ে কয়টি মাথা আছে! মহারাজ আমাদের মাথা কাটবেন।’ 

যুবরাজ একলব্য ইনিয়েবিনিয়ে অনেক কথা বোঝাল তাদের। দলপতিকে বলা কথাগুলো ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে তাদের মতো করে বোঝাল। কিন্তু ডঙ্করা নাছোড়, ‘জটিল পথ। দুর্গম। ভীষণাকার জঙ্গল। রাত্রি ভয়ঙ্কর। পথঘাট কিছুই চিনেন না আপনি। বেঘোরে প্রাণ যাবে আপনার। না যুবরাজ, আপনার নির্দেশ মানব না আমরা।’ 

একলব্যের একবার ইচ্ছে হলো প্রচণ্ড ধমক দেয়। বলে, ‘এখনই ফিরে যাও তোমরা। নইলে মুণ্ডচ্ছেদ করব।’ 

কিন্তু একলব্য জানে—এ ধরনের মানুষ জীবন দিতে রাজি, রাজাদেশ লঙ্ঘন করতে নয়। তা ছাড়া, এই ঘটনার সঙ্গে নিষাদরাজ হিরণ্যধনুর একমাত্র পুত্রের জীবনসংশয়ের ব্যাপারটি জড়িত যে। নিজেকে সংযত করল একলব্য। শান্ত স্বরে বলল, ‘দেখো, তোমাদের মতো আমিও তো ব্যাধসন্তান। ছোটবেলা থেকেই এই অরণ্য, এই শ্বাপদ, পর্বতের এই বন্ধুর পথ আমার চেনা। এই পথ দিয়ে হয়তো কোনোদিন আমি আসি নি, কিন্তু এ ধরনের পথের প্রকৃতি তো আমার জানা। তা ছাড়া পথের পাশে পাশে তপোবন। মুনিঋষিদের সাহায্য পাব আমি। পথের সন্ধান জেনে নেব ওদের কাছ থেকে। রাত্রিকালে বা দ্বিপ্রহরে তপোবনে অতিথি হব। এভাবে একদিন পৌঁছে যাব আমি, আমার কাঙ্ক্ষিত স্থানে।’ 

ডঙ্ক আর লখা চুপ থেকে ছিল। 

সেই দ্বিপ্রহর থেকে একলব্যের একা হাঁটা। হাঁটতে হাঁটতে এখন সায়াহ্ন। হাঁটা থামায় নি একলব্য। যতদূর সম্ভব একটানা হেঁটে পথ ফুরাতে হবে তাকে। 

এখন তার হাঁটায় গতি নেই। দুপুরের আহারের পর, ডঙ্ক আর লখাকে ফেরত পাঠানোর পর, জোর কদমে হাঁটা শুরু করেছিল সে। সঙ্গে তেমন ভারী কিছু ছিল না। পিঠে শরভর্তি তৃণ আর বাঁ কাঁধে ঝুলানো ধনুকটি। কোমরে কুঠার গোঁজা। ব্যাধরা একে টাঙ্গি বলে। গোঁজা টাঙ্গিটির হাতল কাঠের। ফলকটি লোহার। এক ধার ধারালো, অন্য ধার ভোঁতা। ধারালো দিক দিয়ে কাটা যায়, ভোঁতা দিক দিয়ে আঘাত করা যায়। নিকট-যুদ্ধে এটি দিয়ে শত্রুকে খণ্ডবিখণ্ড করা যায়। টাঙ্গি দিয়ে গাছ কেটে বনভূমিতে পথও করা যায়। বালক-বয়স থেকে একলব্যের টাঙ্গিপ্রীতি প্রবল। এই টাঙ্গিটি তার আবাল্য সঙ্গী। সকল আবরণ-আভরণ ত্যাগ করলেও একলব্য তীর-ধনুকের সঙ্গে টাঙ্গিটাও রেখে দিয়েছে নিজের সঙ্গে। 

কোনো খাবার সে নিজের সঙ্গে নেয় নি। ডঙ্ক সাধাসাধি করেছিল খাবারের পোঁটলাটি সঙ্গে নেওয়ার জন্য। একলব্যের এককথা নিরাভরণ হয়েই সে গুরুতীর্থের দিকে এগোবে। দ্বিপ্রহরে সৈন্যদের বিদায় করে নিজের শরীর থেকে রাজকীয় আবরণ খুলে ফেলেছিল। ডঙ্ক এবং লখার হাতে গছিয়ে দিয়ে বলেছিল, ‘তোমরাই রাখো এগুলো। বিক্রি করলে কিছু কড়ি মিলবে তোমাদের।’ 

সাধারণ বেশ ধারণ করেছিল একলব্য। পরনে একখণ্ড বস্ত্র, ঊর্ধ্বাঙ্গে রোদ-শীত নিবারণার্থে মোটা এক টুকরা কাপড়। পাদুকাও ত্যাগ করেছিল সে। 

ডঙ্ক বিস্মিত গলায় বলেছিল, ‘কাঁটা-খন্দকে ভর্তি পাহাড়ি পথটি। পা রক্তাক্ত হয়ে যাবে যে।’ 

লখার অনুরোধে আর পরামর্শে পায়ে বল্কল বেঁধে নিয়েছিল একলব্য, পাদুকার মতো করে। প্রথমদিকে পথ চলতে অসুবিধা হলেও এখন সয়ে গেছে। 

দুপুর গড়িয়ে বেলা অপরাহ্ণের দিকে গেলে গতি কমে এসেছিল একলব্যের। রাজপুত্র। তেমন করে কষ্টসহিষ্ণুতা রপ্ত করতে হয় নি তাকে কোনোদিন। আজই প্রথম কষ্টকর পথের যাত্রী হয়েছে সে। ফলে ক্লান্তি আর অবসন্নতা তাকে একটু একটু করে গ্রাস করতে শুরু করেছে। কিন্তু নিজের মন আর দেহের মধ্যে ক্লান্তিকে স্থান দিতে রাজি নয় সে। এখন থেকে তাকে স্বাবলম্বী হতে হবে। আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। অবসাদকে নিজের মনের মধ্যে জায়গা দিলে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে না সে। 

মনে যতই জোর থাকুক, দেহেও তো জোর থাকতে হবে। অশেষ শ্রম শেষে দেহ ও বিশ্রাম চায়। একলব্য বুঝতে পারে এবার তাকে থামতে হবে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। আঁধার এবার পৃথিবীকে গ্রাস করা শুরু করবে। 

কিন্তু কোথায় থামবে সে? কোথায় রাত কাটাবে? আশপাশে তো কোনো জনমানুষের চিহ্ন নেই। কোনো তপোবনেরও সন্ধান মিলবে কি না কে জানে? হঠাৎ একলব্যের চোখ পড়ল আকাশের দিকে। পুবাকাশে বিরাট গোলাকার চাঁদ উঠেছে। পূর্ণিমা বোধ হয়। তিমির আর জোছনার দ্বন্দ্ব চলছে তখন প্রকৃতিতে। কে কাকে হটাবে? হাঁটা থামাল না একলব্য। আরও কিছুদূর হাঁটার পর একটা আলো তার চোখে পড়ল। 

শাণ্ডিল্য ঋষির তপোবন। শাণ্ডিল্য-গোত্রধারার প্রবর্তক শাণ্ডিল্যমুনি। ঈশ্বরকে পাওয়ার তিনটি মার্গ শাস্ত্রকাররা নির্দেশ করেছেন—জ্ঞানমার্গ, কর্মমার্গ এবং ভক্তিমার্গ। ভক্তিসূত্রের প্রচারক শাণ্ডিল্যমুনি। ঋষি শাণ্ডিল্যকে ঘিরে এই তপোবনে এক অবিমিশ্র মানবজীবনবোধের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। তপ, জপ, কর্ম—যা-ই এখানে নিষ্পন্ন হোক, সবকিছুর পেছনে ভক্তিবোধ সক্রিয়। এই তপোবনে মানব এবং মানবেতর প্রাণী সমানভাবে মূল্যায়িত হয়। কোনো প্রাণীকে হীন চোখে দেখা হয় না। সব প্রাণীতে প্রাণ আছে। শাণ্ডিল্য ঋষির এই তপোবনে সকল প্রাণ এক মূল্যসূত্রে গাঁথা। এখানে নেই আর্য- অনার্যের ভেদাভেদ, এখানে গাত্রবর্ণের ওপর নির্ভর করে মানুষের সঙ্গে আচরণ করা হয় না। কারণ এই আশ্রমের মূলকথা—ভালোবাসা। সকল আশ্রমবাসীর হৃদয় ভালোবাসাময়। শাণ্ডিল্য ঋষিকে ঘিরে যে শিষ্যবর্গের অবস্থান, সবারই অন্তর স্নিগ্ধ, সহনশীল, শান্ত। এই তপোবনের উঠানে একলব্য যখন গিয়ে দাঁড়াল, সাদরে সম্ভাষিত হলো। 

সংসারত্যাগী শাণ্ডিল্য। তপোবনবাসী সাধক। শ্মশ্রুমণ্ডিত মুখমণ্ডল। চোখ দুটো দিয়ে অন্তঃকরণ পড়তে পারেন। এই ঋষির জীবনে লৌকিক হৃদয়চর্চার কোনো স্থান নেই। ঈশ্বরসাধনায় তাঁর সর্বসত্তা উৎসর্গীকৃত। ভেতরে কোনো অস্থিরতা নেই। 

একলব্যকে কাছে টেনে নিলেন শাণ্ডিল্য। পথশ্রান্তি দূর করার জন্য শিষ্যদের নির্দেশ দিলেন। একলব্য সমভিব্যাহারে রাত্রির আহার করলেন তিনি। আহার্যদ্রব্য বলতে ফল- মূল—এসব। আহার শেষে ঋষি শাণ্ডিল্য অগ্নিকুণ্ডের চারদিকে সশিষ্য আসন গ্রহণ করলেন। সংক্ষেপে একলব্যের কাছে তার পথচলার কারণ জেনে নিলেন মুনিবর শাণ্ডিল্য। ‘তোমার জয় হোক’ বলে আলাপ শেষ করলেন। শয্যাকক্ষ নির্দেশ করার জন্য একজন শিষ্যকে আদেশ দিলেন। একলব্যকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘সকালে যাত্রার আগে কিছু মুখে দিয়ে যেয়ো।’ 

প্রত্যুষে ঘুম ভাঙল একলব্যের। তারও আগে তপোবন জেগে গেছে। অতি প্রত্যুষে ঋষি শাণ্ডিল্য শয্যাত্যাগ করেন। শিষ্য সমভিব্যাহারে অদূর সরোবরে গিয়ে অবগাহন করেন। তারপর তপোবনে প্রত্যাগমন করেন। সমবেত কন্ঠে সূর্যপ্রণাম সম্পন্ন করেন। শিষ্যরা ভিক্ষার উদ্দেশে বের হয়ে যান। ঋষি শাণ্ডিল্য ধ্যানে মগ্ন হয়ে পড়েন। 

সূর্যপ্রণামের সমবেত কণ্ঠধ্বনিতে একলব্যের ঘুম ভেঙেছে। পর্ণকুটিরের তৃণশয্যায় উঠে বসেছে সে। গত দিনের পথ হাঁটার ক্লান্তি তখনো সারা শরীরে জড়িয়ে আছে। 

আড়মোড়া ভেঙে ক্লান্তি দূর করতে চাইল একলব্য। শরীরে অবসাদকে প্রশ্রয় দিলে চলবে না। তার আরাধ্য এখনো অনেক দূরে। বহু পথ অতিক্রম করার পর সেই আরাধ্যের সান্নিধ্য পাওয়া যাবে। 

শয্যা থেকে উঠে দাঁড়াতে যাবে, ওই সময় এক শিষ্য গৃহদরজায় এসে দাঁড়ালেন। বললেন, ‘যুবরাজ, সূর্যোদয় হয়ে গেছে। আপনার প্রস্তুতির সময় পার হয়ে যাচ্ছে। আর বিলম্ব করা ঠিক হবে না। আপনার প্রাতরাশ প্রস্তুত। প্রাতঃকৃত্য শেষ করে আসুন।’ 

একলব্য মাথা নত করে বলল, ‘আমি তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে আসছি।’ তার সমস্ত মুখে কৃতজ্ঞতার হাসি ছড়িয়ে পড়ল। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *