তেরো
জ্যাক বিকহ্যামের মৃত্যুর খবর শুনে মর্মাহত হলো ফ্রেডরিক আর্থার। বিকেলেই খবরটা পেয়েছে সে। আটত্রিশ জন মারা গেছে, শতাধিক আহত।
জ্যাক বিকহ্যামকে পছন্দ করত আর্থার। স্কুলে পড়ার সময় থেকে সে এ লোকটির ভক্ত। বয়স বাড়ার সাথে সাথে লোকটির প্রতি শ্রদ্ধাও বেড়ে যাচ্ছিল আর্থারের। অনেকেই বিকহ্যামের সমালোচনা করত। দু’বার মানুষটার সাথে দেখা হয়েছে আর্থারের। তাঁর রসবোধ এবং বিশ্ব রাজনীতি সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান মুগ্ধ করেছে তাকে। অনেকে বিকহ্যামকে সোভিয়েত চর বলতেও দ্বিধা করেনি। কিন্তু তাঁকে তাঁর অবস্থান থেকে এক চুল নড়াতে পারেনি। আর্থারের কাছে বিকহ্যাম ছিলেন সন্ন্যাসীর মত। সূক্ষ্ম রসবোধ সম্পন্ন মজার মানুষ।
রাতে স্টাডি রুমে বসে টেপ করা টিভি নিউজ দেখছিল আর্থার। সন্ধ্যার খবরে করুণ ঘটনাটা সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে। কুকুরটা বিকহ্যামের গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে, বুড়ো মানুষটা ডিগবাজি খেয়ে পড়ে যাচ্ছেন প্ল্যাটফর্ম থেকে, এই দৃশ্যে চোখ বুজে ফেলল আর্থার।
ঘোড়াগুলো উন্মত্ত হয়ে ওঠার দৃশ্যে খবর-পাঠক বলল, মেট্রোপলিটান পুলিশের ইতিহাসে এমন ঘটনা এই প্রথম। ঘোড়াগুলোকে এমনভাবে ট্রেনিং দেয়া, কোন অবস্থাতেই তাদের উত্তেজিত হয়ে ওঠার কথা ছিল না। তদন্তের ব্যবস্থা করা হচ্ছে কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটল জানার জন্যে।
ভিডিও টেপটা মিনিট বিশেক দেখল আর্থার। শীলা সন্ধ্যার খবরটা তার অনুরোধে রেকর্ড করে রেখেছে। নতুন করে আবার প্রোগ্রামটা চালাল আর্থার। ভিড়টাকে কাভার করছে ক্যামেরা, একজনকে দেখে চোখ পিটপিট করল ও। নেলসন্স কলামের নিচে দাঁড়িয়ে আছে পল বুহের। কিন্তু ও ওখানে কি করছে?
টেপটা আবার চালাল আর্থার। একটা ছেলে লাফিয়ে নামছে বেদি থেকে, বুহেরের হাতটা ধরল। ক্লোজ-আপে মুখটাকে পর্দায় নিয়ে এল ও। চেনা চেনা লাগছে মুখটা। কোথায় যেন দেখেছে? হঠাৎ মনে পড়ে গেল আর্থারের… ডেমিয়েন থর্নের মুখ ওটা। এমব্যাসীতে ডেমিয়েনের যে ছবি আছে সেটার বয়স পনেরো বছর কমিয়ে দিলে ঠিক অমনই লাগবে দেখতে।
‘ওহ, গড, বিড়বিড় করল আর্থার। তারপর কি ভেবে বুহেরের নাম্বারে ফোন করল। এটা-সেটা বলার পর আসল প্রসঙ্গে চলে এল আর্থার। জানতে চাইল র্যালিতে বুহেরের সাথে ছেলেটা কে ছিল। অস্বীকার করে বসল বুহের। র্যালিতে তার সাথে কোন ছেলে ছিল না। আর্থার মনে করিয়ে দিল, টিভিতে সে দেখেছে একটা ছেলে বুহেরের হাত ধরেছে। বুহের বলল, ধাক্কাধাক্কির সময় হয়তো অমন ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু এ বিষয়টা নিয়ে আর্থারের মত মানুষের এত কৌতূহলের কারণ বুঝতে পারছে না সে।
‘এমনি,’ বলে এড়িয়ে গেল আর্থার। রেখে দিল ফোন। তারপর আবার চালু করল ভিডিও টেপ। ট্রাফালগার স্কোয়ারের করুণ ঘটনাটাকে রিউইন্ড এবং ফরোয়ার্ড করে বারবার দেখল। শেষে দুটো ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে গেল ওর কাছে: ওই ছেলেটা ডেমিয়েন থর্নের জ্যান্ত সত্তা আর বুহের মিথ্যা বলেছে তাকে। আসলে ছেলেটাকে সে চেনে। কিন্তু বুহের মিথ্যা কেন বলল ভেবে পেল না ফ্রেডরিক আর্থার। ব্রান্ডির গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে মনে পড়ল একটা কথা বুহেরকে জিজ্ঞেস করতে সে ভুলে গেছে। ডেমিয়েন থর্নের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া এবং দাফন সম্পর্কে একটা প্রশ্ন করবে ভেবেছিল ও।