• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

০৪. সামাজিক ধনের উৎপাদন ও বণ্টন

লাইব্রেরি » নীহাররঞ্জন রায় » বাঙালীর ইতিহাস (আদিপর্ব) » ১৫. ইতিহাসের ইঙ্গিত » ০৪. সামাজিক ধনের উৎপাদন ও বণ্টন

সামাজিক ধনের উৎপাদন ও বণ্টন

এই গ্রন্থের নানা অধ্যায়ের আলোচনায় সমাজেতিহাসের একটি ইঙ্গিত অত্যন্ত প্রশস্ত ভাবে ধরা পড়িয়াছে। আমার মনে হয়, এই ইঙ্গিতটিই প্রাচীন বাঙালীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ইঙ্গিত। সেই জন্যই এই ইঙ্গিতটিকে সংহত সমগ্রতায় এখানে উপস্থিত করিতে চেষ্টা করিতেছি; এই ইঙ্গিত সামাজিক ধনোৎপাদন ও বণ্টনপদ্ধতিগত, সামাজিক ধনের গতি ও প্রকৃতিগত।

সামাজিক ধনের উৎপাদন ও বণ্টন

খ্ৰীষ্টপূর্ব-শতকীয় বাঙলার আদিম কৌমস্তরে সামাজিক ধনের উৎপাদন ও বণ্টন পদ্ধতি কী ছিল ও তাহার ক্রমবিবর্তন কী ভাবে হইয়াছিল। তাহা নিশ্চয় করিয়া বলিবার উপায় নাই। তবে, আদিম সমাজের গতি-প্রকৃতি অনুযায়ী কী হওয়া সম্ভব সে সম্বন্ধে অনুমান করা খুব কঠিন নয়; তাহা এই গ্রন্থেরই নানা অধ্যায়ে ব্যক্ত করিয়াছি। কাজেই, সেই সুদূর কাল সম্বন্ধে অনুমানসিদ্ধ তথ্যের পুনরুক্তি এখানে আর করিতেছি না। তবু, একথা বলা বোধ হয় প্রাসঙ্গিক যে, মোটামুটি খ্ৰীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ-পঞ্চম শতক হইতে আরম্ভ করিয়া আনুমানিক খ্ৰীষ্টোত্তর প্রথম শতক পর্যন্ত গাঙ্গেয় ও প্রাচ্য ভারতবর্যের প্রধান ধনোৎপাদন উপায় ছিল কৃষি, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যক্তিগত ও যৌথ গৃহশিল্প এবং কিছু ব্যাবসা-বাণিজ্য। ধন কেন্দ্রীয়কৃত হইত বড় বড় গৃহপতিদের এবং শ্রেষ্ঠী ও সার্থিবাহদের হাতে। জাতকের গল্প ও অন্যান্য প্রাচীন বৌদ্ধ সাহিত্যে নানা প্রমাণ এ-সম্বন্ধে বিক্ষিপ্ত এবং মনীষী রিচার্ড ফিখ তাহা খুব ভালো করিয়াই দেখাইয়া দিয়াছেন। কিন্তু ব্যাবসা-বাণিজ্যের পুরাপুরি সুবিধাটা গাঙ্গেয় ও প্রাচ্য-ভারত অপেক্ষা বেশি পাইত উত্তর, পশ্চিম ও মধ্যভারত। একটু লক্ষ্য করিলেই দেখা যাইবে, পুণ্ড্রবর্ধন, তাম্রলিপ্তি, পাটলীপুত্র প্রভৃতি সত্ত্বেও প্রধান প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র ও বন্দরগুলি ছিল বেশির ভাগই উত্তর-পশ্চিমে, মধ্য-ভারতে এবং বিশেষ ভাবে পশ্চিম-ভারতের সমুদ্রোপকূলে! বস্তুত, সমসাময়িক ভারতবর্ষের সমস্ত বাণিজ্যপথগুলির গতি একান্তই পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমমুখী। কিন্তু ব্যাবসা-বাণিজ্যের কথা যতই থাকুক, শ্রেষ্ঠীসােৰ্থবাহদের কথা যতই পড়া যাক, প্রাচীন বৌদ্ধ সাহিত্য বিশ্লেষণ করিলে বুঝিতে বাকী থাকে না যে, অন্তত গাঙ্গেয় ও প্রাচ্য-ভারতের জীবন ছিল একান্তই কৃষিকেন্দ্রিক। ব্যাবসা-বাণিজ্য সাধারণত বোধ হয় বিনিময়েই চলিত; চিহ্রাঙ্কিত মুদ্রার প্রচলন যথেষ্ট ছিল, পাওয়াও গিয়াছে প্রচুর, কিন্তু তাহার ভিতর স্বর্ণ বা রৌপ্যমুদ্রা প্রায় দেখিতেছি না। ইহার অর্থ বোধ হয় এই যে, ব্যাবসা-বাণিজ্য সত্ত্বেও আধুনিক ধনবিজ্ঞানের ভাষায় আমরা যাহাকে বলি বাণিজ্যসাম্য বা ব্যালেন্স অফ ট্রেড তাহা ভারতবর্ষের স্বপক্ষে ছিল না, অথবা থাকিলেও স্বর্ণ এবং রৌপ্য (মুদ্রার আকারেই হোক আর তালের আকারেই হোক) কেন্দ্রীকৃত হইয়া থাকিত মুষ্টিমেয় শ্রেষ্ঠী, সার্থবাহ, গৃহপতি প্রভৃতি এবং রাষ্ট্রের হাতেই, অর্থাৎ সামাজিক ধন সমাজের সকল স্তরে বণ্টিত হইত না, ছড়াইয়া পড়িবার বেশি উপায় ছিল না; উদ্ধৃত্তি ধনের পরিমাণও বোধ হয় খুব বেশি ছিল না। বাঙলাদেশ গাঙ্গেয় ভারতের অন্যতম পূর্বপ্রত্যন্ত দেশ। পুণ্ড্রবর্ধনের মত বাণিজ্য-নগর এবং তাম্রলিপ্তির মতন বন্দর-নগর তাহার ছিল সত্য, কিন্তু তৎসত্ত্বেও উত্তর-ভারতের ব্যাবসা-বাণিজ্যে বাঙলার এবং তদানীন্তন বাঙালীর স্থান খুব বেশি ছিল বলিয়া মনে হয় না, কারণ বাঙালীর সমাজ তখনও একান্তই কৌমাবদ্ধ; সর্বভারতীয় সভ্য জীবনের তরঙ্গাভিঘাত তখনও ভালো করিয়া সেই সমাজে লাগেই নাই। বহুদিন পর্যন্ত বাঙলাদেশ ছোট ছোট গৃহশিল্প, পশুপালন ও কৃষিলব্ধ জীবনোপায়েই অভ্যস্ত ছিল। কিছু কিছু বহির্দেশী ব্যাবসা-বাণিজ্য যাহা ছিল তাহা উত্তর-গাঙ্গেয় ভারতের সঙ্গে তুলনীয় নয়, এমন কি খুব উল্লেখযোগ্যও বোধ হয় নয়।

বৈদেশিক বাণিজ্যের বিবর্তন ও সামাজিক ধন

শ্ৰীক্টোত্তর প্রথম শতকের মাঝামাঝি হইতেই ভারতবর্যের সর্বত্র এই অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন আরম্ভ হয় এবং সামাজিক ধন উত্তরোওর বর্ধিত হইয়া, জীবনধারণের মান উত্তরোত্তর উন্নত হইয়া চতুর্থ ও পঞ্চম শতকে, ভারতবর্ষ যথার্থতি সোনার ভারতে পরিণতি লাভ করে; এই দুই শতাব্দী জুড়িয়া যথাযথ এবং আক্ষরিক অর্থে ভারতবর্ষে স্বর্ণযুগের বিস্তৃতি। এই বিবর্তন-পরিবর্তনের প্রধান কারণ, ব্যাবসা-বাণিজ্যের বিস্তৃতি। বস্তুত, এই কয়েক শতক ধরিয়া ব্যাধসা-বাণিজ্য, বিশেষভাবে বৈদেশিক বাণিজ্য ক্রমবর্ধমান এবং এই ব্যাবসা-বাণিজ্যই সামাজিক ধনোৎপাদনের প্রধান উপায়। খ্ৰীষ্টোত্তর প্রথম শতকের মাঝামাঝি হইতে উত্তর ও দক্ষিণ-ভারত সুবিস্তুত রোম-সাম্রাজ্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ সামুদ্রিক বাণিজ্য সম্বন্ধে আবদ্ধ হয়। তাহার আগেও বহুশতাব্দী ধরিয়া পূর্ব-ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলির সঙ্গে জলপথে ভারতবর্ষের একটা বাণিজ্য সম্বন্ধ ছিল; এই দেশগুলিতে ভারতীয় নানা দ্রব্যাদির চাহিদাও ছিল; কিন্তু বাণিজ্যটা প্রধানত ছিল আরব বণিকদের হাতে। কিন্তু মোটামুটি ৫০ খ্ৰীষ্ট তারিখ হইতে নানা কারণে রোম সাম্রাজ্য এবং ভারতবর্ষ প্রত্যক্ষভাবে এই বাণিজ্য ব্যাপারে লিপ্ত হইবার সুযোগ লাভ করে এবং দেশে ধনাগামের একটি স্বর্ণদ্বার ধীরে ধীরে উন্মুক্ত হয়। বস্তুত, এই বাণিজ্য ব্যাপারে সাক্ষাৎভাবে আমাদের দেশ এত লাভবান হইতে আরম্ভ করে, এত রোমক সোনা বহিয়া আসিতে আরম্ভ করে যে, দ্বিতীয় শতকে ঐতিহাসিক প্লিনি অত্যন্ত দুঃখে বলিতে বাধ্য হইয়াছিলেন, যে-ভাবে ভারতবর্ষে সোনা বহিয়া যাইতে আরম্ভ করিয়াছে। এ-ভাবে বেশি দিন চলিলে সমস্ত রোমক সাম্রাজ্য স্বর্ণহীন, রক্তহীন হইয়া পড়িবে। সিন্ধুদেশের সমুদ্রোপকূল হইতে আরম্ভ করিয়া গঙ্গা-বন্দর ও তাম্রলিপ্তি পর্যন্ত সমস্ত উপকূল বহিয়া কুড়িটিরও বেশি ছোট বড় সামুদ্রিক বন্দর, প্রতি বন্দরে বৈদেশিক বাণিজ্যোপনিবেশ। এই সব বন্দর, বিশেষভাবে পশ্চিম ভারতের ভৃগুকচ্ছ, সুরাষ্ট্র, কল্যাণ প্রভৃতি বন্দর আশ্রয় করিয়া জাহাজে জাহাজে রোমক সোনার স্রোত বহিয়া আসিত সমুদ্রতীরস্থ ভারতবর্ষে সর্বত্র। বস্তুত, পশ্চিম-ভারতে এই স্বর্ণদ্বারের অধিকার লইয়াই তো শাক-সাতবাহন সংগ্রাম, দ্বিতীয়-চন্দ্রগুপ্তের পশ্চিম-ভারত অভিযান, স্কন্দগুপ্তের বিনিদ্র রজনী যাপন। কারণ, এই দ্বার করাঢ়াত হওয়ার অর্থই হইতেছে দেশে ধনাগমের একটি প্রশস্ত পথ বন্ধ হওয়া। দক্ষিণ-ভারতের দ্বার ছিল অনেক; কাজেই দুর্ভাবনার কারণ ছিল না; কিন্তু উত্তর-ভারতের প্রধান পথ ঐ গুজরাটের বন্দরগুলি আর স্বল্পাংশে গঙ্গা ও তাম্রলিপ্তি বন্দর। এই বৈদেশিক সামুদ্রিক বাণিজ্যলব্ধ স্বণই গুপ্ত আমলের স্বর্ণ যুগের ভিত্তি। এই সুদীর্ঘ কয়েক শতাব্দী ধরিয়া মনন ও কল্পনা, ধর্ম ও জ্ঞান-বিজ্ঞান, কলা ও সাহিত্যে ভারতীয় বৃহৎ ও গভীর চেতনা সঞ্চারের মূলে, জীবনধারণের মানকে উন্নত স্তরে উত্তীর্ণ করিবার মূলে; এই মান উন্নত না হইলে, চেতনা সঞ্চারিত না হইলে সাংস্কৃতিক জীবন উন্নত হয় না।

শুধু এই সামুদ্রিক বাণিজ্যই নয়। বহু প্ৰাচীন কাল হইতেই উত্তর-পূর্ব চীনের পূর্বতম সমুদ্রোকুল হইতে আরম্ভ করিয়া মধ্য-এশিয়ার মরুভূমি পার হইয়া পামীরের উষ্ট্রপৃষ্ঠ বাহিয়া আফগানিস্তানের ভিতর দিয়া ইরাণ-দেশ অতিক্রম করিয়া একেবারে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত যে সুদীর্ঘ আন্তরেশীয় প্রাস্তাতিপ্রান্ত পথ সেই পথ দিয়াও একটা বৃহৎ বাণিজ্য বিস্তৃত ছিল। প্রথম চন্দ্ৰগুপ্ত মৌর্যের পশ্চিমাভিযানের ফলে ভারতবর্য সর্বপ্রথম এই পথের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্বন্ধসূত্রে আবদ্ধ হয় এবং তাহার কিছুদিন পর হইতেই নানা বিদেশী বণিককুলের সঙ্গে বাণিজ্যসূত্রে ভারতবর্ষ। ধনাগমের এক নূতন পথ খুঁজিয়া পায়। খ্ৰীষ্টপূর্ব ও খ্রীষ্টোত্তর প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয় শতকে শক-কুষাণ অভিযানের সঙ্গে সঙ্গে এই পথ বিস্তৃততর এবং বাণিজ্য গভীরতর হয় এবং তাহার ফলে দেশে স্বর্ণপ্রবাহের আর একটি দ্বার উন্মুক্ত হয়। পঞ্চম শতকে গুণাভিযানের পূর্ব পর্যন্ত এই দ্বার উন্মুক্তই ছিল, কিন্তু হ্রণরা মধ্য-এশিয়ার সঙ্গে ভারতবর্ষের এই সম্বন্ধ বিপর্যস্ত করিয়া দেয়।

এই সুবিস্তৃত এবং সুপ্রচুর লাভজনক বৈদেশিক ব্যাবসা-বাণিজ্যই প্রত্যক্ষভাবে দেশের শিল্পকে, বিশেষভাবে দেশের বস্ত্র ও গন্ধশিল্পকে, দস্তু ও কণ্ঠশিল্পকে অগ্রসর করিয়া দেয়, কোনও কোনও কৃষিজাত দ্রব্যের চাহিদা বাড়াইয়া কৃষিকেও অগ্রসর করে। এই সবের ফলে বাণিজ্যলব্ধ ধন সমাজের নানাস্তরে বণ্টিত হইতে আরম্ভ করে এবং সাধারণ কৃষক এবং গ্রামবাসী গৃহস্থেরও জীবনের মান অনেকাংশে উন্নত হয়। সাধারণ গৃহস্থের ভাণ্ডারেও স্বর্ণমুদ্রা এই যুগেরই সামাজিক লক্ষণ।

এই সুবিস্তৃত বৈদেশিক ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য, এই কয়েক শতাব্দী জুড়িয়া ভারতবর্ষের সর্বত্র সুবর্ণমুদ্রার প্রচলন; বিশেষত তৃতীয়-চতুর্থ শতক হইতেই এই সুবর্ণমুদ্রা একেবারে নিকষোত্তীর্ণ খাটী সুবর্ণমুদ্রা এবং তাহার ওজন বাড়িতে বাড়িতে প্রমথকুমার গুপ্তের আমলে এই মুদ্রা একেবারে চরম শিখরে উঠিয়া গিয়াছে; ধাতব মূল্যে, শিল্পমূল্যে, আকৃতি-প্রকৃতিতে এই মুদ্রার সত্য কোনও তুলনা নাই! এই কয়েক শতকের রৌপ্যমুদ্রা সম্বন্ধেও একই কথা বলা চলে। এ-তথ্যও উল্লেখযোগ্য যে, এই সুবর্ণমুদ্রা ও রৌপ্যমুদ্রার নাম যথাক্রমে দীনার ও দ্রাহ্ম , এবং এই দুইই এই যুগের লাভজনক বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রতীক। আর, এই যুগে নগর-সভ্যতার বিস্তাব ও সমৃদ্ধ নাগরিক আদর্শের যে-পরিচয় বাৎসায়নের কামসূত্রে দেখিতেছি, তাহা তো প্রত্যক্ষভাবে এই সামাজিক ধনের উপরই প্রতিষ্ঠিত।

উত্তর-ভারতের পূর্ব প্রত্যন্ত দেশ হওয়া সত্ত্বেও এই সুবৃহৎ বৈদেশিক, বিশেষভাবে সামুদ্রিক-বাণিজ্যে বাঙলাদেশ অন্যতম অংশীদার হইয়াছিল এবং সেই বাণিজ্যলব্ধ সামাজিক ধনের কিছুটা অধিকার লাভ করিয়াছিল। স্মরণ রাখা প্রয়োজন, গঙ্গাবিন্দর ও তাম্রলিপ্তি বাঙলার সমৃদ্ধ সামুদ্রিক বন্দর; খ্ৰীষ্টোত্তর প্রথম শতকের আগে হইতেই এই বন্দরদ্বয়ের কথা নানাসূত্রে শোনা যাইতেছে, আমদানী-রপ্তানীর খবরও পাওয়া যাইতেছে। বাঙলাদেশ, বিশেষভাবে উত্তরবঙ্গ গুপ্তাধিকারে আসিবার পর হইতেই বৃহত্তর ভারতবর্ষের সঙ্গে তাহার যোগসূত্র আরও ঘনিষ্ঠ হয় এবং এই বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি ক্রমশ আরও বাড়িয়াই চলে। বস্তুত, পঞ্চম-ষষ্ঠ শতকে দেখিতেছি উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গে গ্রামের সাধারণ গৃহস্থও ভূমি কেনাবেচা করিতেছেন স্বর্ণমুদ্রায়। স্বর্ণমুদ্ৰাই যে এ-যুগের মুদ্রামান, এ-সম্বন্ধে বোধ হয় সন্দেহ করা চলে না। তাহা ছাড়া বাঙলাদেশের সর্বত্র এই যুগে দেখিতেছি, শাসনাধিকরণগুলিতে রাজ্যপাদোপজীবী ছাড়া আর যে তিনজন থাকিতেন। তাঁহাদের একজন নগরশ্রেষ্টী, একজন প্রথম সার্থিবাহ, একজন প্রথম কুলিক, অর্থাৎ প্রত্যেকেই শিল্প ও ব্যাবসা-বাণিজ্যের প্রতিনিধি। সমসাময়িক সমাজ ও রাষ্ট্র শিল্প-ব্যাবসা-বাণিজ্যকে কতখানি মূল্য দিত। তাহা এই তথ্যে সুস্পষ্ট।

বস্তুত, কিছুটা পরিমাণে কৃষিনির্ভরতা সত্ত্বেও ভারতবর্ষ ও বাঙলার এই কয়েক শতকের সমাজ প্রধানত ও প্রথমত ব্যাবসা-বাণিজ্য ও শিল্পনির্ভর, অর্থাৎ ধনোৎপাদনের প্রথম ও প্রধান উপায় শিল্প ও ব্যাবসা-বাণিজ্য, কৃষি অন্যতর উপায় মাত্র। তাহা ছাড়া, যেহেতু বৈদেশিক ব্যাবসা-বাণিজ্যে শিল্পজাত দ্রব্যের চাহিদাই ছিল বেশি সেই হেতু ব্যবসা-বাণিজ্যলব্ধ অর্থ শ্রেষ্টী ও সার্থিবাহিকুল এবং রাষ্ট্রের হাতে কেন্দ্রীকৃত হওয়ার পরও মোটামুটি একটা বৃহৎ অংশ শিল্পীকুলের হার্তেও গিয়া পৌঁছিত। অধিকন্তু, গ্রামবাসী গৃহস্থের ভূমি কেনাবেচায় স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন দেখিয়া মনে হয় গৃহপতি এবং কৃষক সমাজেও উৎপাদিত ধনের কিছু অংশ আসিয়া পড়িত। ইহারই প্রত্যক্ষ ফল জীবনধারণের মানের উন্নতি ও প্রসার এবং সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি।

কিন্তু ৪৭৫ খ্ৰীষ্ট শতকে বিরাট রোম-সাম্রাজ্য ভাঙিয়া পড়িল; পূর্ব-পৃথিবীর সঙ্গে তাহার ব্যাবসা-বাণিজ্য বিপর্যস্ত হইয়া গেল। তবু, যতদিন পর্যন্ত মিশর দেশ ও আফ্রিকার পূর্ব কুলে কৃলে সাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ যাহা কিছু অবশিষ্ট ছিল ততদিন তাহাকে আশ্রয় করিয়া বিগত সুদীর্ঘ পাঁচ শতাব্দীর সুবিস্তৃত বাণিজ্যের অবশেষ আরও কিছুদিন বঁচিয়া রহিল; সে-জৌলুস বা সে-সমৃদ্ধি বহুলাংশে কমিয়া গেল, সন্দেহ নাই, কিন্তু একেবারে অন্তৰ্হিত হইল না। সমস্ত ষষ্ঠ শতক এবং সপ্তম শতকের অর্ধাংশ প্রায় এই ভাবেই চলিল, কিন্তু ইতোমধ্যেই মহম্মদ-প্রবর্তিত ইসলামধর্মকে আশ্রয় করিয়া আরবদেশ আবার ধীরে ধীরে মাথা তুলিতে আরম্ভ করিয়াছে এবং ৬০৬-৭ খ্রীঃ তারিখের পর একশত বৎসরের মধ্যে স্পেন হইতে আরম্ভ করিয়া একেবারে চীনদেশের উপকূল পর্যন্ত আরব বাণিজ্যতরী ও নৌবাহিনী সমস্ত ভূমধ্য-সাগর, লোহিত্য-সাগর, ভারত-মহাসাগর এবং প্রশান্ত-মহাসাগর প্রায় ছাইয়া ফেলিল। ৭১০ খ্রীষ্ট শতকে পশ্চিম-ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যের অন্যতম আশ্রয় সিন্ধুদেশ চলিয়া গেল আরব বণিকের হাতে এবং সিন্ধু গুজরাটের স্বর্ণদ্বার প্রায় বন্ধ হইয়া গেল বলিলেই চলে। রোম-সাম্রাজ্যের ধ্বংসের ফলে ভূমধ্যসাগরীয় ভূখণ্ডে ভারতীয় শিল্প ও গন্ধ দ্রব্যাদির চাহিদাও গেল কমিয়া। অন্যদিকে পূর্ব-ভারতে তাম্রলিপ্তির বন্দরও একাধিক কারণে বন্ধ হইয়া গেল।

এই দুই শত বৎসরের বাণিজ্যিক অবস্থার সদ্যোক্ত বিবর্তন-পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ ছাপ পড়িয়াছে সমসাময়িক স্বর্ণমুদ্রার উপর, কারণ, আমি আগেই বলিয়াছি, প্রাচীন ভারতবর্ষে স্বর্ণমুদ্রার উন্নত বা অবনত অবস্থা বা অপ্রচলন আমাদের সমৃদ্ধ বা অবনত বৈদেশিক বাণিজ্যের দোতক। ইতিহাসের যে-পর্বে বৈদেশিক বাণিজ্য-সমতার লাভ আমাদের পক্ষে, আধুনিক পরিভাষায় আমরা যে পরিমাণে favourable trade balance আহরণ করিয়াছি তখন সেই পরিমাণে আমাদের স্বর্ণমুদ্রা উন্নত ও সমৃদ্ধ, প্রচলন বিস্তৃত; যখন তাহা নাই তখন স্বর্ণমুদ্রাও নাই, অথবা থাকিলেও তাহার নিকষামূল্য, ওজন্যমূল্য এবং শিল্পমূল্য আপেক্ষিকত কম। রৌপ্যমুদ্রা সম্বন্ধেও প্রায় একই কথা বলা চলে। এ-কথার প্রমাণ পাওয়া যাইবে, ষষ্ঠ ও সপ্তম-শতকের উত্তর-ভারতীয় মুদ্রার ইতিহাসে। এই দুই শতক জুড়িয়া মুদ্রার ক্রমাবনতি কিছুতেই ঐতিহাসিকের দৃষ্টি এড়াইবার কথা নয়। প্রথম স্তরে দেখা যাইবে স্বর্ণমুদ্রার ওজন ও নিকষামূল্য ক্রমশ কমিয়া যাইতেছে; দ্বিতীয় স্তরে স্বর্ণমুদ্রা নকল ও জাল হইতেছে; তৃতীয় স্তরে রৌপ্যমুদ্র স্বর্ণমুদ্রাকে হাঁটাইয়া দিতেছে; চতুর্থ স্তরে রৌপ্যমুদ্রা অবনত হইতেছে, পঞ্চম স্তরে রৌপ্যমুদ্রাও অন্তৰ্হিত। ভারতবর্ষের সর্বত্রই যে একেবারে একই সময়ে বা একেবারে সুনির্দিষ্ট স্তরে স্তরে এইরূপ হইয়াছে তাহা নয়; কোথাও কোথাও হয়তো গচ্ছিত স্বর্ণ বা স্বর্ণমুদ্রা পরবর্তীকালে গলাইয়া নূতন স্বর্ণমুদ্র চালাইবার চেষ্টা হইয়াছে, কিন্তু সে-চেষ্টা বেশিদিন চলে নাই বা পরিণামে সার্থক হয় নাই, বা তাহার ফলে উচ্চ শ্রেণীর ধাতবমুদ্রার যে গতিপ্রকৃতির কথা এইমাত্ৰ বলিলাম। তাহারও ব্যত্যয় বিশেষ হয় নাই।

ধনসম্বল অধ্যায়ে বাঙলাদেশে মুদ্রার বিবর্তন সম্বন্ধে একটু বিস্তৃত আলোচনা করিয়াছি; এখানে আর তাহার-পুনরুক্তি করিব না। সেই বিবরণ-বিশ্লেষণে সুস্পষ্ট ধরা যায় যে, মুদ্রার এই ক্রমাবনতির প্রধান ও প্রথম কারণ বৈদেশিক ব্যাবসা-বাণিজ্যের অবনতি। সেই অবনতির হেতু একাধিক। সে-সব কারণ এই গ্রন্থেই নানাস্থানে উল্লেখ ও আলোচনা করিয়াছি। ব্যাবসা-বাণিজ্যের এই অবনতিতে শিল্প-প্রচেষ্টারও কিছুটা অবনতি ঘটিয়াছিল সন্দেহ নাই, গুণ বা নিপুণতার দিক হইতে না হউক, অন্তত পরিমাণের দিক হইতে। কারণ, বহির্দেশে যে-সব জিনিসের চাহিদা ছিল সে-সব চাহিদা কমিয়া গিয়াছিল; তাহা ছাড়া এই বাণিজ্যে দেশের বণিকদের প্রত্যক্ষ অংশ যখন পরোক্ষ অংশে পরিণত হইয়া গেল তখন সঙ্গে সঙ্গে লাভের পরিমাণ কিছুটা কমিয়া যাইবে ইহা কিছু বিচিত্র নয়। এই সব কারণে সমাজে কৃষি-নির্ভরতা বাড়িয়া যাওয়া খুবই স্বাভাবিক এবং অষ্টম শতক হইতে দেখা যাইবে গাঙ্গেয় ভারতে, বিশেষভাবে বাঙলাদেশে ঐকান্তিক কৃষিনির্ভরতা ক্রমবর্ধমান এবং আদিপর্বের শেষ অধ্যায়ে, অর্থাৎ অষ্টম হইতে ত্ৰয়োদশ শতকের বাঙলাদেশ একান্তই কৃষিনির্ভর, অর্থাৎ কৃষিই ধনোৎপাদনের প্রথম ও প্রধান উপায়, শিল্প ও ব্যাবসা-বাণিজ্য অন্যতম উপায় হইলেও তেমন লাভবান নয়, অর্থাৎ বাণিজ্য-সমতা দেশের স্বপক্ষে আর নাই; পূর্ব-দক্ষিণ সমুদ্রশায়ী দ্বীপ ও দেশগুলির সঙ্গে কিছু কিছু ব্যাবসা-বাণিজ্য থাকা সত্ত্বেও নাই!

ঐকান্তিক ভূমি ও কৃষিনির্ভরতায় রূপান্তর

অষ্টম শতকের গোড়া হইতেই পূর্ব ভূমধ্য-সাগর হইতে আরম্ভ করিয়া প্রশান্ত-মহাসাগর পর্যন্ত ভারতবর্ষের সমগ্র বৈদেশিক সামুদ্রিক ব্যাবসা-বাণিজ্য আরব ও পারসীক বণিকদের হাতে হস্তান্তরিত হইয়া যাইতে আরম্ভ করে এবং দ্বাদশ-ত্ৰয়োদশ শতক পর্যন্ত সে-প্রভাব ক্রমবর্ধমান। দক্ষিণ-ভারত বহুদিন পর্যন্ত, কতকাংশে হইলেও, এই আরব বণিকশক্তির সঙ্গে (এবং পূর্ব-সমুদ্রে চীনা বণিক-শক্তির সঙ্গে) কিছুটা পরিমাণে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রক্ষা করিয়া নিজেদের বাণিজ্য লব্ধ ধনের ভারসাম্য রক্ষা করিয়াছিল, কিন্তু উত্তর-ভারতে তাহা সম্ভব হয় নাই! তাহার সমস্ত পথই গিয়াছিল। রুদ্ধ হইয়া; এবং তাঙ্গার ফলে বাঙলাদেশও এই বৃহৎ বািণজ্যসম্বন্ধ হইতে বিচু্যত হইয়া পড়িয়াছিল। তবু প্ৰাচ্যদেশের বাঙলা-বিহার পালরাজাদের আমলে একটা সজ্ঞান, সচেতন চেষ্টা করিয়াছিল স্থলপথে হিমালয়শায়ী কাশ্মীর, তিব্বত, নেপাল, ভূটান, সিকিম প্রভৃতি দেশের সঙ্গে একটা বাণিজ্য-সম্বন্ধ গড়িয়া তুলিতে এবং কিছুদিনের জন্য অন্তত কিছুটা পরিমাণে সে-চেষ্টা সার্থকও হইয়াছিল, সন্দেহ নাই। এই ধরনের একটা চেষ্টা পূর্ব-দক্ষিণ সমুদ্রশায়ী ব্ৰহ্মদেশ, শ্যাম, চম্পা, কম্বোজ, যবন্দ্বীপ, বলিদ্বীপ, সুবর্ণদ্বীপ প্রভৃতির সঙ্গেও হইয়াছিল। কিন্তু কোনও চেষ্টাই যথেষ্ট সার্থকতা লাভ করিয়া এই পর্বের বাঙলার ঐতিহাসিক কৃষিনির্ভরতা ঘুচাইতে পারে নাই, বরং তাহা ক্রমবর্ধমান হইয়া পাল-আমলের শেষের দিকে এবং সেন-আমলে বাঙলাদেশকে একেবারে ভূমিনির্ভর, কৃষিনির্ভর গ্রাম্যসমাজে পরিণত করিয়া দিল। এই পর্কে যে স্বর্ণমুদ্রা, রৌপ্যমুদ্রা, এমনকি কোনও প্রকার ধাতব মুদ্রার সাক্ষাৎই আমরা পাইতেছি না, ইহার ইঙ্গিত তুচ্ছ করিবার মতন নয়।

এই ঐকান্তিক ভূমি ও কৃষিনির্ভরতা প্রাচীন বাঙলার সমাজ জীবনকে একটা স্বনির্ভর স্বসম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত স্থিতি ও স্বাচ্ছন্দ্য দিয়াছিল, এ-কথা সত্য; গ্রাম্য জীবনে এক ধরনের বিস্তৃত ও পরিব্যাপ্ত সুখশান্তিও রচনা করিয়াছিল, সন্দেহ নাই; কিন্তু তাহ সমগ্র জীবনকে বিচিত্র ও গভীর অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ করিতে পারে নাই; ইতিহাসের কোনও পর্বে কোনও দেশেই তাহা সম্ভব হয় নাই, হওয়ার কথাও নয়। আমি আগে বলিতে চেষ্টা করিয়াছি, আমাদের কৌম ও আঞ্চলিক চেতনার প্রাচীর যে আজও ভাঙে নাই তাহার অন্যতম কারণ এই একান্ত ভূমিনির্ভর কৃষিনির্ভর জীবন। শিল্প ও ব্যাবসা-বাণিজ্যের বিচিত্র ও গভীর সংগ্ৰামময়, বিচিত্ৰ বহুমুখী অভিজ্ঞতাময় এবং বৃহত্তর মানবজীবনের সঙ্গে সংযোগময় জীবনের যে ব্যপ্তি ও সমৃদ্ধি, যে উল্লাস ও বিক্ষোভ, বৃহতের যে উদ্দীপনা তাহা স্বল্প পরিসর গ্রামকেন্দ্ৰিক কৃষিনির্ভর জীবনে সম্ভব নয়। সেখানে জীবনের ছন্দ শান্ত, সীমিত, তাল সমতাল; সে-জীবনে পরিমিত সুখ ও পারিবারিক বন্ধনের আনন্দ ও বেদনা, সুবিস্তৃত উদার মাঠ ও দিগন্তের, নদীর ঘাট ও বটের ছায়ার সৌন্দর্য। যাহাই হউক, বাঙলাদেশের আদিপর্বের শেষ অধ্যায় এই ভূমি ও কৃষিনির্ভর সমাজ-জীবনই মধ্যপর্বের হাতে উত্তরাধিকারস্বরূপ রাখিয়া গেল, আর রাখিয়া গেল তাহার প্রাচীনতর পর্বের সমৃদ্ধ শিল্প ব্যাবসা-বাণিজ্যের সুউচ্চারিত স্মৃতি। সেই স্মৃতি মধ্যযুগীয় বাঙলা সাহিত্যে বহমান। আমাদের প্রাচীন গ্রামবিন্যাস, রাষ্ট্রবিন্যাস, শ্রেণী ও বর্ণবিন্যাস, শিল্প ও সংস্কৃতি, ধর্মকর্ম সমস্তই বহুলাংশে সদ্যোক্ত গ্রামকেন্দ্রিক কৃষিনির্ভর সমাজ-জীবনের উপর প্রতিষ্ঠিত।

Category: ১৫. ইতিহাসের ইঙ্গিত
পূর্ববর্তী:
« ০৩. প্রাচীন বাঙালীর গ্রামকেন্দ্ৰিক জীবন ও গ্রামীণ সংস্কৃতি
পরবর্তী:
০৫. রাষ্ট্রীয় সত্তার স্বাতন্ত্র্য »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑