০২.১৩ শবরোৎসব

শবরোৎসব

পূর্ব-ভারতে শবরদেব এক সুপ্রাচীন ও সুবিস্তৃত সংস্কৃতির অবশেষ আমাদের জীবনযাত্রার নানাক্ষেত্রে সুপরিস্ফুট। পাহাড়পুর মন্দিরের অসংখ্য মাটির ফলকে শবর নরনারীদের দৈনন্দিন জীবনের নানা ছবি যে-ভাবে উৎকীর্ণ আছে, মনে হয়, জনসাধারণের জীবনের সঙ্গে তাহাদের যোগাযোগ ছিল ঘনিষ্ঠ। বাঙলার নানা স্থানে, যেমন উত্তরবঙ্গে ও পশ্চিম-দক্ষিণ বঙ্গে, এই শবরীরা কালক্রমে আমাদের হিন্দু সমাজের নিম্নতম স্তরে স্বাঙ্গীকৃত হইয়া গিয়াছে। নীলাচলক্ষেত্র পুরীর সুপ্রসিদ্ধ জগন্নাথদেবের মন্দির ও তাঁহার পূজার সঙ্গে শবরদের ধর্ম ও পূজানুষ্ঠানের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধের কথা আজ আর অবিদিত নাই। বাঙলাদেশেও কোনও কোনও ক্ষেত্রে এই ঘনিষ্ঠতা ধরা পড়িবে, বিচিত্র কী? কালবিবেক-গ্ৰন্থ ও পরবর্তী কালিকাপুরাণে শারদীয়া দুৰ্গাপূজার দশমী তিথিতে শাবরোৎসব নামে এক উৎসবের বিস্তৃত বিবরণ জানা যায়। এই উৎসবে লোকেরা শবরদের মতো নগ্ন অঙ্গে গাছের পাতা জড়াইয়া, সর্বাঙ্গে কাদা মাখিয়া তালে-বোতালে পূর্ণ উদ্যমে গান গাহিত, নাচিত এবং ঢাক বাজাইত। যৌনলীলার নানা গান গাওয়া, কাহিনী বলা এবং তদনুরূপ অঙ্গভঙ্গি করাও এই উৎসবের অঙ্গ ছিল। এ-সব না করিলে নাকি দেবী ভগবতী ক্রুদ্ধ হইতেন! বৃহদ্ধর্ম-পুরাণে এ সম্বন্ধে একটু বিধিনিষেধ আছে; এই সব অনুষ্ঠানে বিশেষ আপত্তি করা হয় নাই, তবে মা বোনদের সম্মুখে এবং শক্তিধর্মে অদীক্ষিত মেয়েদের সম্মুখে পূর্বোেক্তরূপে আচরণ করিতে নিষেধ করা হইয়াছে।