ভুতুড়ে সাঁকোর রহস্য – ১

এক

‘ওটা কী ধরনের রহস্য, মিসেস ম্যাকলিন?’ প্রশ্ন করল ডন। উত্তেজনায় ছটফট করছে ভ্যানের পেছনের সিটে বসে।

জ্যাক নানার পাশে, সামনের আসনে বসা মিসেস ম্যাকলিন কাঁধের ওপর দিয়ে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন।

‘গল্পটা এমিলির, ডন,’ বললেন। ‘আমার নয়

কিশোর কনুইয়ের আলতো গুঁতো দিল ডনকে।

‘ধৈর্য ধরো, ডন,’ বলল। ‘ইটন প্লেস-এ খানিক পরেই পৌঁছব আমরা।’

‘ঠিক আছে, ধরলাম ধৈর্য।’ বলল ডন। অপেক্ষা করা পছন্দ নয় ওর।

জ্যাক নানার হাউসকিপার মিসেস ম্যাকলিনের পুরানো বান্ধবী এমিলি ইটন। তিনি তাঁর গ্রামের বাড়িতে বেড়ানোর দাওয়াত দিয়েছেন মিসেস ম্যাকলিন আর ছেলেদেরকে। প্রাচীন এক রহস্যের নাকি সমাধান করতে হবে, এবং কিশোর, মুসা, রবিন আর ডন ওটার ব্যাপারে জানতে উদ্‌গ্রীব হয়ে রয়েছে। রহস্যের গন্ধ পেলে ওরা আর কিছু চায় না। একসঙ্গে বেশ অনেকগুলো রহস্যের কিনারা করেছে ওরা।

এতক্ষণ খুঁটিয়ে ম্যাপ নিরীখ করছিল রবিন, চোখ তুলল।

‘পরের রাস্তায় বাঁয়ে মোড় নিতে হবে, নানা,’ বলল।

‘ওহ, এবার মনে পড়েছে!’ মাথা ঝাঁকালেন মিসেস ম্যাকলিন। ‘বহুদিন পর এলাম তো, স্মৃতি ঝাপসা হয়ে গেছে।’

‘কতদিন হবে, মিসেস ম্যাকলিন?’ জ্যাক নানা প্রশ্ন করলেন, এবার বড় রাস্তা ছেড়ে মাটির আঁকাবাঁকা এক পথ ধরলেন।

‘তা হবে…এমিলির নাতনীর মেয়ে মনিকা তখন হাঁটি-হাঁটি পা-পা, মিসেস ম্যাকলিন বললেন। এক মুহূর্ত ভাবলেন। ‘এখন ওর বয়স দশ বছরের মত হবে।’

জানালা থেকে চোখ সরিয়ে মিসেস ম্যাকলিনের দিকে চাইল মুসা।

‘মনিকা কি ওর বড়আম্মার সাথে পুরো সামার থাকবে?’ জিজ্ঞেস করল।

‘মনে হয়,’ জবাব দিলেন মিসেস ম্যাকলিন। ‘সাধারণত গরমের ছুটিতে ও এমিলির কাছেই থাকে। শহরে ওর বাবা-মার একটা অ্যান্টিক শপ আছে। অ্যান্টিকের খোঁজে গোটা গরমকালটা তারা সারা দেশ চষে বেড়ায়। প্রতিটা ফ্লি মার্কেট আর সোয়াপ মিটে ঢু মারে।’

শুনে বেশ মজাই পেল ডন।

‘মনিকা তাঁদের সাথে যায় না কেন?’

‘জার্নিতে অনেক ধকল,’ বললেন জ্যাক নানা, প্রায়ই তাঁকে ব্যবসার কাজে নানান জায়গায় ভ্রমণ করতে হয় কিনা।

‘হ্যাঁ, সত্যি,’ সায় জানালেন মিসেস ম্যাকলিন।

‘তাহলে তো সামারটা বড়আম্মার সাথেই কাটানো উচিত মনিকার। ‘

‘হুম, ঠিকই,’ বলল কিশোর।

মিসেস ম্যাকলিন বলে চললেন, ‘আমাদের বয়স যখন কম তখন এমিলি আর আমি ইটন প্লেসে ইচ্ছে মতন ঘুরে বেড়াতাম-মাঠ-ময়দান, ঝরনার ধারে, বন, সবখানে। এটা ইটন পরিবারের অনেক পুরনো সম্পত্তি। তাই এমিলি ইটন বংশের একটা ইতিহাস লেখায় হাত দিয়েছে। গবেষণার কাজে সাহায্যের জন্যে এক কলেজ স্টুডেন্টকে চাকরিও দিয়েছে।’

‘তাই? খুব ভাল,’ বলল রবিন।

‘ভাগ্যিস ক্যামেরাটা এনেছি, চারদিকে চোখ বুলিয়ে বলল মুসা। ‘অনেক ছবি তোলা যাবে এখানে।’

রিয়ার ভিউ মিররে স্মিত হাসলেন জ্যাক নানা।

‘ছবি হচ্ছে সময়ের সাক্ষী।

‘আগেকার আমলে মানুষ কী করত কে জানে,’ চিন্তামগ্ন কণ্ঠে বলল রবিন। ‘ক্যামেরা আবিষ্কারের আগে আরকী। ‘

‘তখন ক্যামেরা ছিল না?’ ডন অবাক হয়ে গেছে।

মাথা নাড়ল মুসা।

‘১৮২০-এর আগে ছিল না,’ বলল। ফটোগ্রাফি নিয়ে চর্চা করে ও। এটা ওর অন্যতম শখ।

‘মুসা, তুমি দিনকে দিন এক্সপার্ট হয়ে উঠছ,’ মুচকি হেসে বলল কিশোর।

‘ধন্যবাদ, কিশোর, উজ্জ্বল হাসল মুসা। তবে এখনও শেখার অনেক বাকি।

জ্যাক নানার চোখে ছোট এক গ্যাস স্টেশন পড়ল। গ্যাস পাম্পগুলোর কাছে গাড়ি থামালেন তিনি। চুলে পাক ধরা এক মহিলা এগিয়ে এলেন গাড়ির কাছে।

‘গ্যাস ভরবেন?’ বন্ধুসুলভ হেসে বললেন মহিলা। তাঁর নীল ওভারলের সামনে ডরোথি এমব্রয়ডার করা।

জ্যাক নানা মাথা ঝাঁকালেন।

‘ঠিক ধরেছেন।‘

ডরোথি ট্যাঙ্ক ভরছেন, ছেলেরা টপাটপ ভ্যান থেকে নেমে পড়ল। কাঁচ আর হেডলাইট মুছতে লাগল ওরা।

‘তোমরা ছুটি কাটাতে এসেছ?’ ডরোথি জানতে চাইলেন।

হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ল রবিন।

‘গ্রামে এক সপ্তাহ থাকছি।’

‘কোথায়?’

‘ইটন প্লেসে,’ বলল ডন।

গ্যাস ট্যাঙ্কের ক্যাপটা লাগানোর সময় ডরোথি গলা নামালেন।

‘একটা উপদেশ দিই,’ বললেন। ‘ভুলেও কিন্তু প্রাচীন পাথুরে সাঁকোটায় মাছ ধরতে যেয়ো না। লোকে বলে ওটা নাকি ভুতুড়ে।’ চোখের তারা নেচে উঠলেও কণ্ঠস্বর গম্ভীর তাঁর।

ছেলেরা মহিলার কথায় এতটাই অবাক হয়েছে য়ে টু শব্দটিও করল না। কোন প্রশ্ন করতে পারার আগেই জ্যাক নানা গ্যাসের বিল মেটালেন এবং ওরা আবার পাড়ি জমাল।

‘মনে হচ্ছে ইটন প্লেস খানিকটা… ভুতুড়ে বাড়িই,’ চলার পথে বলল ডন।

‘আমার মনে হয় না ওখানে কোন ভূত-টুত আছে,’ সাফ জানাল কিশোর। ‘তোমার?’

‘উম, না,’ বলল ডন। তবে অতটা নিশ্চিত শোনাল না কণ্ঠস্বর।

মুসা বলল, ‘ডরোথি স্রেফ মজা করছিলেন।

‘মহিলা সম্ভবত চ্যাটারিং বোনসের ভূতের কথা বলছিল,‘ ওদের আলোচনায় যোগ দিয়ে বললেন মিসেস ম্যাকলিন।

ছেলেরা তাঁর উদ্দেশে চমকে তাকাল।

‘কীসের ভূত বললেন?’ বলল ডন, চোখ ছানাবড়া। ‘আপনি কি-

‘ওই দেখো!’ বাধা দিয়ে বললেন মিসেস ম্যাকলিন, গাড়ি যেই এক বাঁক ঘুরল। ‘মেইলবক্স।’

সারসের মত গলা বাড়াল ডন।

‘কোথায়?’ জিজ্ঞেস করল। চ্যাটারিং বোনসের কথা ভাবছিল। বুকে কাঁপ ধরে গেছে ওর।

মিসেস ম্যাকলিন রাস্তার এক পাশ লক্ষ্য করে তর্জনী দেখালেন। হ্যাঁ, ওই তো, এক পোস্টের ওপরে এক মেইলবক্স। ওটার পাশে ঝলমলে সোনালী হরফে লেখা: ইটন প্লেস।

গাছপালায় ঘেরা আঁকাবাঁকা গাড়িপথটি দিয়ে স্টেশন ওয়াগন চালিয়ে নিচ্ছেন জ্যাক নানা। অবশেষে টানা বারান্দা নিয়ে দাঁড়ানো বেগুনী রঙের বিশাল এক বাড়ির সামনে থেমে দাঁড়াল গাড়ি। বাড়িটার এক পাশে কুঞ্জবন। অপর দিকে ফুলবাগান।

‘বেগুনী রঙের বাড়ি!’ বলেই ব্যাকসিট থেকে প্রায় ছিটকে বেরোল মুসা। বেগুনী ওর পছন্দের রং।

‘হ্যাঁ, বাড়িটা সবসময় বেগুনী রঙেরই ছিল,’ জানালেন মিসেস ম্যাকলিন, কিশোর যখন তাঁর নামার জন্য গাড়ির দরজা খুলে দিল। ‘মেগ প্লামের কল্যাণে।’

জ্যাক নানা গাড়ি থেকে সুটকেসগুলো বের করতেই, কুঞ্জবনের কাছে, নীল ফুল ছাপা সানড্রেস পরা এক রুপোলীচুলো মহিলাকে দেখতে পেল রবিন। বিজনেস সুট পরিহিত এক লোকের সঙ্গে কথা বলছেন তিনি। রবিনের নজর পড়েছে ষষ্ঠেন্দ্রিয় জানান দিতেই যেন, ঝট করে এদিকে চাইলেন ভদ্রমহিলা।

‘শার্লট।’ লম্বা মহিলা প্রায় ধেয়ে এলেন মিসেস ম্যাকলিনের উদ্দেশে। ‘কতদিন পর দেখা!’

‘হ্যাঁ, বহু বছর,’ বলে বান্ধবীকে পাল্টা উষ্ণ আলিঙ্গন করলেন মিসেস ম্যাকলিন।

‘এরা নিশ্চয়ই সেই ছেলেগুলো, তুমি যাদের কথা সবসময় বলো!’ এমিলি ইটন বললেন।

মিসেস ম্যাকলিন সগর্বে তাঁর সঙ্গে সবার পরিচয় করিয়ে দিলেন।

‘ইটন প্লেসে স্বাগতম!’ হাসিমুখে বললেন এমিলি। ‘চলো, তোমাদেরকে মনিকার সাথে পরিচয় করিয়ে দিই। ও তোমাদেরকে দেখে খুব খুশি হবে।’

‘আমরাও মনিকার সাথে পরিচিত হতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি,’ সবার পক্ষ থেকে বলল রবিন।

‘মিসেস ইটন, জানেন, আমরা না রহস্যের সমাধান করতে ভালবাসি। শুধু একটা সূত্র পেলেই হলো, উঠেপড়ে লেগে যাই, বলল ডন। এখনও রহস্যটার চিন্তা ঘুরছে ওর মাথায়।

‘সে আমি জানি,’ বললেন এমিলি। ‘ডিনারের পর তোমাদেরকে প্রাচীন রহস্যটার কথা জানাব, ডন। তবে একটা কথা।’

‘বলুন?’

‘তোমরা আমাকে এমিলি বলে ডাকবে।’

‘ঠিক আছে, এমিলি,’ সায় জানাল ডন। ‘রাজি!’

ঠিক এমনিসময় গমগম করে উঠল একটি কণ্ঠস্বর।

‘আমি গ্রাহাম ব্রাউন।’ বিজনেস সুট পরা ভদ্রলোক এগিয়ে এসে, জ্যাক নানার দিকে হাত বাড়ালেন করমর্দনের উদ্দেশ্যে। ‘আপনারা নিশ্চয়ই সেতুটার ব্যাপারে কথা বলতে আসেননি? আমি ন্যায্য দাম বলেছি, প্রয়োজনে আরও বাড়াব।’

তিন গোয়েন্দা আর ডন হতবুদ্ধি হয়ে পরস্পর চোখাচোখি করল। ডরোথি কি এই সাঁকোটার কথাই বলেছিলেন?

গ্রাহাম ব্রাউন বলে চললেন, ‘কিছুদিন আগে এ শহর দিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় এক পত্রিকা চোখে পড়ে।’ বগলের তলা থেকে এক খবরের কাগজ বের করে এক প্রাচীন পাথুরে সাঁকোর ছবির নিচে আঙুল চেপে ধরলেন। ‘আমি ঠিক এ জিনিসই খুঁজছিলাম!’ বললেন ওদেরকে, গোল্ড রিমের চশমার ওপাশে চকচক করছে চোখজোড়া। ‘আমার স্ত্রী তার ইংলিশ গার্ডেনটাকে ভীষণ ভালবাসে।’ আরও বললেন, ‘এবং এই চমৎকার সেতুটা ঝরনার ওপর বসালে তো কথাই নেই, একেবারে সোনায় সোহাগা হয়ে যাবে!’

‘সেতুটা বিক্রির জন্যে নয়,’ বরফশীতল কণ্ঠে বললেন এমিলি। ‘আগেও তো বলেছি, আপনি শুধু-শুধু নিজের সময় নষ্ট করছেন।’

ভদ্রলোক একথা শুনে মোটেও সন্তুষ্ট হলেন না।

‘কিন্তু সব কিছুরই তো একটা দাম থাকে, কম আর বেশি,’ নাছোড়বান্দা তিনি।

‘সে পরের কথা, এমিলির মুখের চেহারায় দৃঢ়তার ছাপ।

‘মনে রাখবেন,’ বললেন গ্রাহাম ব্রাউন, ‘আমি কিন্তু একবার যা চাই ঠিকই আদায় করে ছাড়ি।’ এবার উল্টো ঘুরে গটগট করে হাঁটা দিলেন।

দীর্ঘশ্বাস ফেললেন এমিলি।

‘ইদানীং যখন-তখন উদয় হচ্ছে লোকটা। কাল দেখি আমার সাঁকোটা মাপজোক করছে! বিশ্বাস করতে পার?’

মিসেস ম্যাকলিন মাথা নাড়লেন।

‘লোকটার স্নায়ুর জোর আছে বলতে হবে!’

‘মানুষটা খারাপ নয়, কিন্তু…’ থেমে গিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন এমিলি।

‘কিন্তু,’ বাক্যটা শেষ করলেন জ্যাক নানা, ‘সে ‘না’ শুনতে রাজি নয়।

ধীরে-ধীরে মাথা ঝাঁকালেন এমিলি।

‘এখন মনে হচ্ছে খবরের কাগজে ব্রিজটা নিয়ে রিপোর্ট করতে দেয়াই উচিত হয়নি আমার।’ এবার প্রসঙ্গ পাল্টে বললেন, ‘জ্যাক, আপনি আমাদের সাথে লেট ডিনারে যোগ দিচ্ছেন তো? সব রেডিই আছে।’

‘ধন্যবাদ, এমিলি,’ বললেন জ্যাক নানা, ‘কিন্তু ইতিমধ্যেই সূর্য ডোবার পথে… কিছু জরুরী কাজ আছে আমার।’

গাড়ি চালিয়ে চলে যাচ্ছেন, জ্যাক নানা খোশমেজাজী হর্ন বাজালেন। সবাই হাত নেড়ে তাঁকে বিদায় জানিয়ে, বেগুনীরঙা বাড়িটার দিকে পা বাড়াল।

ভেতরে পা রেখে চারপাশে চোখ বোলালেন মিসেস ম্যাকলিন। বান্ধবীর উদ্দেশে চেয়ে মৃদু হাসলেন।

‘বেশ পরিবর্তন করেছ দেখছি,’ বললেন।

‘হ্যাঁ, শেষমেশ খানিকটা মেরামতির কাজ করাতে পেরেছি, ‘ বললেন এমিলি। সবাইকে পেছনে নিয়ে সিঁড়ির দিকে চলেছেন, মাথা নাড়লেন। কিন্তু কী যে অবস্থা হয়েছিল। দেয়াল ভাঙা…মেঝের তক্তা তুলে ফেলা হয়েছে। কিছুদিনের জন্যে যেন দুর্গত এলাকায় পরিণত হয়েছিল বাড়িটা।’

ওপরতলায়, বরইয়ের নকশাকাটা ওয়ালপেপার দিয়ে সাজানো এক কামরা অপেক্ষা করছিল মিসেস ম্যাকলিনের জন্য, কুলা আকৃতির জানালা নিয়ে একটি ঘর তৈরি মুসা আর রবিনের জন্য। তিন নম্বর বেডরুমটিতে ঝালর লাগানো নীল বেডস্প্রেড সহ একজোড়া বিছানা, কিশোর আর ডন থাকবে ওখানে।

‘ডিনার তৈরি, এমিলি বললেন ওদেরকে। কারও খিদে পেয়েছে?’

মুসা হাত তুলল।

‘আমার! আমার!’ বলে উঠল। কেউ অবাক হলো না। মুসা সবসময়ই ক্ষুধার্ত।

হেসে উঠলেন এমিলি।

‘গোছগাছ সেরে নিচে চলে এসো।’

আনপ্যাক করতে সময় লাগল না ছেলেদের। মুসার চুল আঁচড়ানো শেষ হওয়ার অপেক্ষা করছে ওরা, এসময় চেঁচিয়ে উঠল ডন।

‘দেখো! দেখো!’ কুলা আকৃতির এক জানালা দিয়ে উঁকি দিচ্ছে ও।

কিছু একটা চমকে দিয়েছে ডনকে ওর মুখের চেহারা দেখে বুঝল রবিন।

‘কী ব্যাপার, ডন?’ বলে তড়িঘড়ি ডনের পাশে এসে দাঁড়াল ও।

‘নিচের দিকে তাকাও!’ বলল ডন, চোখজোড়া বিস্ফারিত।

‘কী ওখানে?’ ইতোমধ্যে হন্তদন্ত হয়ে কাছে চলে এসেছে কিশোর, আর ওর পায়ে-পায়ে মুসা।

‘একটা সাঁকো!’ ঘোষণা করল ডন।

ছেলেরা জড় হলো জানালায়, ঘনায়মান আঁধারে চোখ পিটপিট করে চাইল। সত্যিই, পেছনের উঠনের দূর কোণে, এক বাঁকা পাথুরে সেতুর আবছা কাঠামো দেখা যাচ্ছে।

‘বাড়ির পেছনে নিশ্চয়ই কোন খাঁড়ি রয়েছে,’ ভেবেচিন্তে বলল কিশোর।

মুসা বলল, ‘এটাই হয়তো খবরের কাগজের সেই সেতু।’

‘তা-ই হবে,’ বলল রবিন। ‘গ্রাহাম ব্রাউন এটাই কিনতে চান। আমি শিয়োর।

মাথা ঝাঁকাল ডন।

‘তারমানে এটাই সেই ভুতুড়ে ব্রিজ, যেটার কথা ডরোথি বলছিলেন। ওখানে আমাদের মাছ ধরতে যাওয়া একদম ঠিক হবে না।’

‘কেন, ডন?’ বলল কিশোর। ‘ওটা মোটেই ভুতুড়ে সাঁকো নয়।

‘কেউ ওখানে মাছ ধরতে যায় না,’ পেছন থেকে বলে উঠল একটি কণ্ঠ। ‘কেউ না, কখনও না।’