আবার উ সেন – ১.৭

সাত

পিছনে নদী, তারপর দিগন্তরেখা জুড়ে বহুতল ভবনের অসংখ্য কাঠামো সারা গায়ে আলোকমালা নিয়ে ঝলমল করছে, মাঝখানে সবগুলোকে ছাড়িয়ে উঁচু হয়ে আছে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের জোড়া টাওয়ার, যদিও এই অপরূপ শোভা দেখার জন্যে থামল না ওরা। মলিয়ের ঝানের লেলিয়ে দেয়া গুণ্ডাবাহিনী আর নিজেদের মাঝখানে যতটা সম্ভব দূরত্ব বাড়াতে হবে, তাছাড়া চিন্তা করার জন্যে খানিকটা নিরুপদ্রব সময়েরও দরকার রানার। মলিয়ের ঝান যদি হার্মিসের অংশ হয়, বলা যায় না সে-ই হয়তো নতুন সও মং, তাহলে ধরে নিতে হবে শত্রুপক্ষ ওদের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে আছে।

হার্মিসকে ছোট করে দেখছে না রানা। নতুন সও মঙ উ সেন না হলেও, উ সেনের যোগ্য উত্তরাধিকারী হতেই হবে তাকে। প্ল্যান ও চিন্তা-ভাবনার দিক থেকে হার্মিস বা সও মঙকে ছাড়িয়ে যাবার একটা প্ররণতা জেগেছিল রানার মনে, সেজন্যেই টেক্সাসে গিয়ে মলিয়ের ঝানের মুখোমুখি দাঁড়াতে চেয়েছিল ও চেয়েছিল বিপজ্জনক ঝুঁকি নিতে। কিন্তু নিউ ইয়র্কের রাস্তায় একমনে গাড়ি চালাতে চালাতে সিদ্ধান্ত পাল্টাল ও, ক’টা দিন কোথাও গা ঢাকা দিয়ে থাকা দরকার।

‘পরস্পরের পিঠের ওপর নজর রাখব,’ রিটাকে বলল ও, ‘হাবভাব দেখে মনে হবে একজোড়া ভিজে বিড়াল, তাহলে দু’দিনেই জানতে পারব আজরাইল সত্যি আমাদের জান কবচ করতে চায় কিনা।’

‘আজরাইল?’

‘মলিয়ের ঝান। আন্ডারওয়ার্ল্ডে হার্মিসের ইনফরমার-বাহিনী থাকার কথা, এতক্ষণে তারা নিশ্চয়ই আমাদের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছে।

‘কোথায় লুকাতে চাও তুমি?’ জিজ্ঞেস করল রিটা। ‘ওয়াশিংটনে?’

রানা চিন্তা করছে।

‘মেট্রোপলিটান এলাকা বা জর্জটাউন নয়,’ আবার বলল রিটা, ‘তবে কাছাকাছি কোথাও। বড় বড় মোটেল আছে, যে-কোন একটায় উঠতে পারি আমরা, হাইওয়ে থেকে সামান্য দূরে।’

আইডিয়াটা পছন্দ হলো রানার, গন্তব্য স্থির হওয়ায় সাথে সাথে বেড়ে গেল স্যাবের স্পীড। রাত তিনটের দিকে কলম্বিয়া ডিস্ট্রিক্টে পৌঁছুল ওরা, দু’জনই সম্ভাব্য অনুসরণকারীদের জন্যে খোলা রেখেছে চোখ। ক্যাপিটাল বেল্টওয়ে প্রায় পুরোটা একবার চক্কর দিল স্যাব, তারপর অ্যানাকোস্টিয়া ফ্রি-ওয়েতে আসার পর বেরুবার একটা পথ পাওয়া গেল, বাঁকের মুখে একটা মোটেল সাইন।

এমন একটা জায়গা বাছল ওরা, বেশ ক’দিন লুকিয়ে থাকা যায়-দালানটা ত্রিশতলা উঁচু, আন্ডারগ্রাউন্ড কার পার্কে আরও অনেক গাড়ির ভিড়ে স্যাবটাকে কেউ আলাদাভাবে খুঁজে বের করতে পারবে না। মোটেলের খাতায় ভিন্ন নাম লেখাল ওরা-মি. পার্কার আর মিসেস হপকিন্স। বিশতলায় পাশাপাশি দুটো কামরা দেয়া হলো ওদেরকে, ঝুল-বারান্দা থেকে অ্যানাকোস্টিয়া পার্ক আর নদী দেখা যায়। দুই ঝুল-বারান্দাতেই পাঁচ মিনিট করে দাঁড়াল ওরা, হাত তুলে রানাকে দূরের অ্যানাকোস্টিয়া আর ইলেভেন্থ স্ট্রীট ব্রিজ দেখাল রিটা, আরও দূরে ওয়াশিংটন নেভি ইয়ার্ডের অস্পষ্ট কাঠামো।

দু’দিন, আন্দাজ করল রানা। চুপচাপ থাকতে হবে, খোলা রাখতে হবে চোখ। তারপর তারা পশ্চিমে রওনা হবে, ফুল স্পীডে স্যাব হাঁকিয়ে। ‘ভাগ্য সহায়তা করলে অ্যামারিলোতে আমরা আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাব।’

‘আটচল্লিশ ঘণ্টা কেন?’ হিসাব মেলাতে পারছে না রিটা।

‘একটা রাত কোথাও থামব আমরা,’ বলল রানা। ‘শক্তি ফিরে পাবার জন্যে। ইতিমধ্যে জানা হয়ে যাবে ঝান আমাদের পেছনে ফেউ লাগিয়েছে কিনা। যদি না লাগায়…’

‘সোজা সিংহের খাঁচায়,’ রানার হয়ে রিটাই শেষ করল কথাটা। আলোচ্য অভিযান সম্পর্কে ভারি উৎসাহী বলেই মনে হলো তাকে, যেন বিপদকে সে থোড়াই ডরায়, যদিও দু’জনেরই মনে আছে এফ.বি.আই. এবং সি.আই.এ-র অনেকগুলো এজেন্ট সিংহের ওই একই খাঁচায় ঢুকে লাশ হয়ে গেছে।

রানার ঝুল-বারান্দায়, ভোর হওয়া দেখতে দেখতে, প্ল্যান তৈরি করল ওরা।

‘ছদ্মবেশ বদলানোর সময় হয়েছে,’ ঘোষণা করল রানা!

মোটেলের খাতায় নতুন নাম লেখানো হলেও, ম্যানেজমেন্টের লোকেরা রানার ভাষায় ওর ‘লুগানিস হ্যাট’ দেখে ফেলেছে। সাবান আর পানি দিয়ে ধুয়ে পাকা চুল কালো করল ও, গোঁফ আর চশমা খুলে ফেলল। ভুরুর আকৃতি আগের চেয়ে সামান্য চওড়া করা হলো, লম্বা হলো জুলফি, নাকের পাশে বসানো হলো কৃত্রিম লাল একটা জড়ুল। প্রায় আসলের কাছাকাছি হলো চেহারা, অথচ ঠিক আসল নয়।

ঝানের গুণ্ডাবাহিনী সহজেই চিনে ফেলবে রিটাকে, কাজেই নিজের চেহারার ওপর ঘণ্টাখানেক কাজ করল সে-চুলের স্টাইল বদলাল, চোখের পাপড়ির রঙ গাঢ় করল, চোখে হালকা রঙের গ্লাস প্রল। সহজ কয়েকটা পরিবর্তন, তাতেই অনেকখানি বদলে গেল চেহারা।

মূল সমস্যা, রানার দৃষ্টিতে, গুণ্ডাদের আগমন সম্পর্কে নিশ্চিত হবার জন্যে সতর্ক প্রহরার ব্যবস্থা করা। ছ’ঘণ্টা তুমি, ছ’ঘণ্টা আমি,’ ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত দিল ও। ‘মেইন লবিতে।’ দু’জনেই একমত হলো, এর কোন বিকল্প নেই। ‘সাধারণ একটা জায়গা বেছে নেব আমরা, যেখান থেকে লোকজনকে ঢুকতে দেখা যায়। কাজ হলো বসে থাকা আর লক্ষ রাখা। গুণ্ডাবাহিনীর কাউকে দেখতে পেলে প্রয়োজনীয় অ্যাকশন নেয়া যাবে।’

‘কিন্তু যদি অনির্দিষ্টকাল অপেক্ষা করতে হয়…’

দু’দিন, বলেছি না? দু’দিনের মধ্যে যদি কেউ না আসে, ধরে নিতে হবে ওরা আমাদেরকে খুঁজছে না।’

প্রয়োজনীয় অ্যাকশন বলতে কি বোঝাচ্ছ তুমি?’ জিজ্ঞেস করল রিটা। ‘ওদেরকে দেখতে পেলে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ব?’

‘আরে না, ওদের চোখে ধুলো দিয়ে স্রেফ পালাব।’ এরপর ওরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিল-কাল সন্ধ্যায় মোটেল ছেড়ে বেরিয়ে পড়বে দু’জনে। টেক্সাসের উদ্দেশে রওনা হবার আগে রানা কোন ছদ্মবেশ নেবে না, রিটাও তার স্বাভাবিক চেহারায় ফিরে আসবে।

রুটিনটা সেই মুহূর্তে শুরু হলো। টস করল ওরা, হারল রিটা, ছ’ঘণ্টা পাহারায় থাকার জন্যে নিচের লবিতে নেমে গেল সে।

বিশ্রাম নেয়ার আগে নিজের লাগেজ একবার চেক করল রানা, সবার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্রীফকেসটা। গোপন কুঠরি থেকে একটা ছুরি বের করে নিল, আর সব জিনিস পরীক্ষা করার আগে বাম বাহুতে স্ট্র্যাপ দিয়ে আটকে নিল সেটা।

ব্রীফকেসের ওপরের অংশে রয়েছে কাগজ-পত্র, ডায়েরী, ক্যালকুলেটর, কলম ইত্যাদি। এসবই রিফাতের সযত্ন আয়োজন। নিচের অংশে হাত দেয়ার আগে স্লাইডিং প্যানেল সরাতে হবে; ভেতরে রয়েছে, রিফাতের ভাষায় ‘ব্যাক-আপ ইকুইপমেন্ট’—ছোট একটা ভোঁতা-নাক এস অ্যান্ড ডব্লিউ হাইওয়ে প্যাট্রলম্যান চার ইঞ্চি ব্যারেল আর স্পেয়ার অ্যামুনিশন সহ; এক সেট স্টীল পিকলক, রিঙে আটকানো; রিঙের সাথে আরও রয়েছে অন্যান্য কয়েকটা মিনিয়েচার টুলস, একজোড়া প্যাড লাগানো লেদার গ্লাভ, ছ’টা ‘ডিটোনেটর। একই কমপার্টমেন্টের দ্বিতীয় অংশে রয়েছে খানিকটা প্লাস্টিক এক্সপ্লোসিভ, আর লম্বা খানিকটা ফিউজ। লুকানো কমপার্টমেন্টের প্রতিটি জিনিস ফোম রাবারের নরম বিছানায় ঠাঁই পেয়েছে।

ভি-পি-সেভেনটি আর স্পেয়ার চেক করার পর বিছানায় লম্বা হলো রানা, প্রায় সাথে সাথে হারিয়ে গেল ঘুমের রাজ্যে, পাঁচ ঘণ্টা পর যখন ঘুম ভাঙল, শরীরটা তাজা ঝরঝরে হয়ে গেছে। ঘুম ভাঙল হুকুম দিয়ে রাখা অ্যালার্মের শব্দে ‘দিস ইজ ইওর থ্রী ও’ক্লক অ্যালার্ম কল, দি টেমপারেচার ইজ সিক্সটি- সেভেন ডিগ্রীজ অ্যান্ড ইট ইজ আ প্লেজ্যান্ট আফটারনূন। হ্যাভ আ নাইস ডে…’ রানা উত্তর দিল, ‘থ্যাঙ্ক ইউ।’ যান্ত্রিক কণ্ঠস্বর পুনরাবৃত্তি করে চলেছে, ‘দিস ইজ ইওর থ্রী ও ক্লক অ্যালার্ম, কল…হ্যাভ আ নাইস ডে।’

সুইচ অফ করে দিল রানা। এরপর শাওয়ার সারল ও, দাড়ি কামাল, কাপড় পরল, গুনগুন করে গাফফার চৌধুরীর লেখা গান ভাঁজছে। মাসটা ফেব্রুয়ারি।

গাঢ় রঙের একজোড়া স্ন্যাকস পরল ও, সাথে প্রিয় সী আইল্যান্ড কটন শার্ট. পায়ে গলাল ভারী রোপ-সোলভ্ স্যান্ডেল। ছোট, ব্যাটলড্রেস-স্টাইল নেভি জ্যাকেটে ঢাকা পড়ল হোলস্টার আর ভি-পি-সেভেনটি অটোমেটিক। কাঁটায় কাঁটায় ঠিক সময়ে রিটাকে রেহাই দেয়ার জন্যে মোটেলের লবিতে নেমে এল রানা।

ওরা কথা বলল না, শুধু দৃষ্টি বিনিময় আর মৃদু মাথা ঝাঁকানোর সাথে সম্পন্ন তা পালাবদল। পাহারায় বসার প্রায় সাথে সাথে রানা আবিষ্কার করল বার এবং কফি শপ কাউন্টার থেকেও লবির ওপর নজর রাখা যায়।

কফি শপে বসে স্টেক, একজোড়া ডিম, ভাজা আলু খেলো রানা; তারপর বারে ঢুকে অর্ডার দিল সিঙ্গল ভোদকা মার্টিনির। রিসেপশন স্টাফদের ফটোগ্রাফ দেখিয়ে পরিচয় জানতে চাইছে এমন কাউকে দেখা গেল না, হোঁৎকা চেহারার গুণ্ডারাও কেউ উদয় হলো না।

কাজেই সময় বয়ে চলল নিস্তরঙ্গ, সন্দেহ করার মত কিছুই চোখে পড়ছে না। দু’জনের মধ্যে যার ডিউটি নেই সে-ই টেলিভিশনের খবর শুনছে। নিউ ইয়র্কের এমব্যাসী হোটেলে কয়েকজন লোককে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পাওয়া গেছে, কিংবা প্রফেসর লুগানিস এবং মিসেস লুগানিস হোগার্থ প্রিন্টস সহ উধাও, এ- ধরনের কোন কাহিনী শোনা গেল না।

অপেক্ষায় থাকা খেলার একটা চাল, মলিয়ের ঝান হয় সেই চাল চালছে, নয়তো তার পোষা কুকুর বাহিনী নিষ্ফল অনুসন্ধানে ব্যস্ত।

রিটা বা রানার জানার কথা নয় যে তীক্ষ্ণদৃষ্টি চতুর এক বেলবয় ঘড়ির কাঁটা ধরে লবিতে ওদের আগমন-নির্গমন লক্ষ করেছে। চব্বিশ ঘণ্টা অপেক্ষা করল সে, তারপর ব্যাপারটা মোটেল ম্যানেজমেন্টকে রিপোর্ট করার বদলে ফোন করল সরাসরি নিউ ইয়র্কে।

ফোনে কথা বলার সময় তাকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা হলো, খুঁটিয়ে জানতে চাওয়া হলো পুরুষ এবং মেয়েটা দেখতে কেমন। অপরপ্রান্তে রিসিভার নামিয়ে রেখে চেয়ারে হেলান দিল লোকটা, খানিকক্ষণ চিন্তা করল। বড় একটা কনসোর্টিয়ামের বেতনভুক বহু এজেন্টের একজন সে, সংগঠনটি অপরাধের সাথে জড়িত, কিন্তু কি ধরনের অপরাধের সাথে তা তার জানা নেই। লোকটা গোয়েন্দা, অ্যামেরিকানদের ভাষায় ‘প্রাইভেট আই’, তার শুধু জানা আছে কনসোর্টিয়াম একজন পুরুষ আর একটা মেয়েকে খুঁজছে। খানিক আগে যাদের বর্ণনা পেয়েছে সে, মেলে না-কিন্তু সহজ কয়েকটা পরিবর্তনের সাহায্যে চেহারা বদলে থাকতে পারে তারা, হয়তো এদের সন্ধান দিতে পারলেই প্রস্তাবিত মোটা টাকার বোনাস পেয়ে যাবে সে।

মনস্থির করতে দশ মিনিট লাগল তার। অবশেষে রিসিভার তুলে ডায়াল করল সে। অপরপ্রান্ত থেকে এক লোক সাড়া দিতে প্রাইভেট আই বলল, ‘হ্যালো, হেনরিকে পাওয়া যাবে?’

.

‘হয় আমরা ওদের চোখে ধুলো দিয়েছি,’ মোটেলে নিজের কামরায় বসে রয়েছে রানা, ‘নয়তো অ্যামারিলোর পথে কোথাও ওরা আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছে।’ টিউনা মাছের পুর দিয়ে তৈরি বড় একটা স্যান্ডউইচে কামড় বসাল ও, নিজের পালা শেষ করে কফি শপ থেকে ওর জন্যে কিনে এনেছে রিটা। টিউনা মাছের স্যান্ডউইচ রানার খুব যে একটা পছন্দ তা নয়, তবে রিটার খুব প্রিয়। রিটা চুপচাপ, চুলে চিরুনি চালাচ্ছে, ফিরে আসছে নিজের আসল চেহারায়।

‘কোন ব্যাপারে উদ্বিগ্ন তুমি?’ জিজ্ঞেস করল রানা, আয়নায় প্রতিফলিত রিটার চেহারায় একটু যেন গম্ভীর ভাব।

উত্তর দিতে দীর্ঘ সময় নিল রিটা। মৃদু কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, ‘ব্যাপারটা ঠিক কি রকম বিপজ্জনক হতে যাচ্ছে বলতে পারো, রানা?’

এ-পর্যন্ত রিটা হ্যামিলটন পেশাদার নৈপুণ্যই দেখিয়ে এসেছে, ভয়ভীতির কাছে মাথা নোয়ায়নি। নার্ভাস লাগছে নাকি, রিটা?’ জিজ্ঞেস করল ও।

আবার বিরতি। তারপর, ‘না, ঠিক তা নয়। তবে বিপদের মাত্রা সম্পর্কে ধারণা পেতে চাই।’ আয়নার সামনে উঠে দাঁড়াল সে, ঘুরল, হেঁটে এল রানা যেখানে বসে আছে। ‘কিভাবে বলব বুঝতে পারছি না, রানা-গোটা ব্যাপারটাই আমার কাছে অবাস্তব স্বপ্নের মত লাগছে। সন্দেহ নেই আমি ট্রেনিং পেয়েছি, ভাল ট্রেনিং পেয়েছি, কিন্তু এমনকি ট্রেনিং পিরিয়ডটাও আমার কাছে এক ধরনের স্বপ্নের মত লেগেছে। হতে পারে ডেস্কের পিছনে খুব বেশি দিন থাকা হয়ে গেছে আমার-সেটাও আবার সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ডেস্ক ছিল না।’

হেসে উঠল রানা, তা সত্ত্বেও তলপেটে শিরশিরে, একটা অনুভূতি হলো ওর, কারণ যে-কোন শত্রুর হুমকি মোকাবিলা করার সময় কখনোই ভয় মুক্ত থাকতে পারে না সে। ‘বিশ্বাস করো, রিটা, খোলা মাঠে শত্রুর সামনে দাঁড়ানোর চেয়ে চার দেয়ালের ভেতর বসে ক্ষমতার জন্যে প্রতিযোগিতা করা অনেক বেশি বিপজ্জনক। অফিশিয়াল মীটিঙে কখনোই আমি সহজ হতে পারি না, কারণ ওখানে কর্তৃপক্ষের সুনজর আকৃষ্ট করার জন্যে এমন কোন হীন কাজ নেই যা করা হয় না। ওখানে কে যে তোমার শত্রু আর কে তোমার মিত্র, তুমি জানতে পারবে না। আমি একজন স্পাই, আমারও প্রতিদ্বন্দ্বী আছে, কিন্তু তাদের আমি চিনি না। কিন্তু ফিল্ডে? সেই পুরানো, জানা কাহিনী-শত্রুকে তুমি জানো, তার শক্তি সম্পর্কে আন্দাজ করতে পারো, জানো কি হারাতে হতে পারে। মাঠে নামার সময় জানা থাকে নার্ভ শক্ত রাখতে হবে, মগজ খাটাতে হবে, সহায়তা থাকতে হবে ভাগ্যের।’

হুইস্কির বোতলে ছোট্ট একটা চুমুক দিল রানা, তারপর আবার বলল, ‘এটার কথা যদি বলো, জঘন্যরকম অ্যাসাইনমেন্ট। দুটো কারণে। এক, ব্যাক-আপ টীম নেই-বিপদের সময় কারও কাছে সাহায্য চাইতে পারব না। ‘

‘দুই?’

‘এটাই সবচেয়ে খারাপ। আমাদের শত্রু সত্যি যদি হার্মিস হয়ে থাকে, তোমার জানা দরকার, শত্রু হিসেবে ওরা নিষ্ঠুর। তাছাড়া, ব্যক্তিগতভাবে ওরা আমাকে ঘৃণা করে। আমি ওদের লীডারকে খুন করেছি, কাজেই ওরা আমার কল্লা চাইছে।’

শিউরে না উঠলেও চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল রিটার।

‘আর হার্মিস যখন কল্লা চায়, অন্য কিছু দিয়ে তাদের সন্তুষ্ট করা যায় না। আমাকে দেখামাত্র গুলি করে মেরে ফেলবে, ব্যাপারটা এত সহজ আর বেদনাহীন হবে না। আমি…আমরা যদি ধরা পড়ি, নিশ্চয় জানবে নগ্ন আতঙ্কের সাথে ওরা আমাদের পরিচয় করিয়ে দেবে, এবং যন্ত্রণাকর মৃত্যু আসবে… ধীরে ধীরে।’ একটু বিরতি নিয়ে কোমল সুরে বলল রানা, রিটা, তুমি যদি সরে যেতে চাও, এখুনি বলে দাও আমাকে। পার্টনার হিসেবে তুমি গ্রেট, তোমাকে আমি সাথে চাইও। কিন্তু তুমি যদি মনে করো পারবে না…হ্যাঁ, আলাদা হতে হলে এখনই সবচেয়ে ভাল সময়।‘

রিটা হ্যামিলটনের বড় আকারের চোখে এমন দৃষ্টি ফুটে উঠল, রানার কাছে একাধারে আবেদনভরা এবং বিপজ্জনক বলে মনে হলো। ‘না, রানা; তোমার সাথে সবটুকু পথ আছি আমি,’ বলল সে, কণ্ঠস্বর মৃদু কিন্তু দৃঢ়। ‘হ্যাঁ, আমি নার্ভাস, কিন্তু তোমাকে হতাশ করব না।’ পাল্টা হাসল এবার সে, ‘তোমার সাথে কাজ শুরু করতে প্রথমে সত্যি আমি ভয় পেয়েছিলাম, স্বীকার করছি। বাবা তোমার কথা এমনভাবে বলে, সমস্ত ব্যাপারে যেন তুমি বিজয়ী হবার জন্যেই জন্মেছ। স্বীকার করছি, তোমাকে দেখার আগেই তুমি আমার শত্রুদের তালিকায় উঠে গিয়েছিলে:..এখন দেখছি ভুল করেছি আমি…

প্রসঙ্গ বদলে গেছে, সেটা রানাও টের পেল। কিন্তু বিস্ময় প্রকাশ করার সুযোগ পেল না, তার আগেই ওর একেবারে কাছে সরে দুই কাঁধে হাত রাখল রিটা।

শক্ত হয়ে গেল রানার পেশী। কাঁধ থেকে রিটার হাত দুটো আস্তে করে সরিয়ে দিল ও।

‘রানা!’ রিটা বিস্মিত, ঠিক বুঝতে পারছে না তাকে অপমান করা হলো কিনা।

না, রিটা। এত সহজে দাম কমিও না নিজের।

অপমান নয়, বিস্ময়ের সাথে খানিকটা আহত বোধ করল রিটা। স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থাকল সে। বুঝল, রানা রেগে আছে এখনও।

দুঃখিত। চলো, বেরিয়ে পড়া যাক।’ তাগাদা দিল রানা। ‘একসাথে নিচে নামব আমরা, তুমি বিল মেটাবে, আমি গাড়িটা মোটেলের সামনে আনব।’

ছোট করে মাথা ঝাঁকাল রিটা, ফোন তুলে সতর্ক করল রিসেপশনকে-মিনিট পনেরোর মধ্যে চলে যাচ্ছে ওরা। আমাদের বিলগুলো রেডি করবেন, প্লীজ? আর লাগেজের জন্যে দশ মিনিট পর কাউকে পাঠান।’

ওরা যখন গোছগাছে ব্যস্তু, মোটেলের প্রধান ফটকে কালো একটা লিমুসিন থামল, বিশতলা নিচে। আরোহীদের দেখলে অবশ্যই চিনতে পারত রানা। ভোঁতা নাক, হোঁৎকা লোকটা হুইলে রয়েছে। তার পাশে বসেছে লম্বা-চওড়া গরিলা। ব্যারেল আকৃতির বুক, গাঢ় রঙের সুট পরেছে সে, মাথায় চওড়া কার্নিস সহ ফেডোরা। পিছনে বসেছে আরেকজন, মুখটা সরু, কিন্তু হাত আর কাঁধ মোটা ও শক্ত। এদেরকে দেখলে আরও একজনকে হয়তো আশা করত রানা-গোঁফ জোড়া সামরিক অফিসারদের মত, কঠিন একহারা গড়ন, পরনে দামী কাপড়-কিন্তু গাড়িতে নেই সে। বর্তমান কাজটা একান্তভাবে হেনরি ডুপ্রের, জিলোস মিলিয়টের পছন্দ না হলে জাহান্নামে যেতে পারে সে। কোথাকার কোন্ এক বুড়ো-হাবড়া প্রফেসর হেনরি ডুপ্রেকে বোকা বানিয়ে কেটে পড়বে তা হতে পারে না।

‘তুমি এখানে অপেক্ষা করো,’ টনিকে হুকুম করল ডুপ্রে। ‘জন আর আমি পুলিস সাজব। ঠিক আছে?

জনকে সাথে নিয়ে গাড়ি থেকে নামল ডুপ্রে, দৃঢ় পায়ে মোটেলের লবিতে ঢুকল, সচল প্রতিটি জিনিসের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রেখে রিসেপশন ক্লার্কের সামনে এসে দাঁড়াল। পুলিস আইডেনটিটি কার্ড দেখে শিরদাঁড়া খাড়া হয়ে গেল ক্লার্কের। একের পর এক অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর দিতে হলো তাকে, আগন্তুকদের হাত থেকে একটা ফটোগ্রাফ নিয়ে দেখল।

দু’জন ক্লার্ক সাথে সাথে প্রফেসর এবং মিসেস লুগানিসকে চিনতে পারল, রূম নাম্বার জানিয়ে দিয়ে বলল খাতায় ওনারা আলাদা নাম লিখিয়েছেন।

‘কি ব্যাপার, খারাপ কিছু ঘটেছে?’ অল্প বয়েসী মহিলা ক্লার্ক জানতে চাইল। এক ঝলক উজ্জ্বল হাসি উপহার দিল ডুপ্রে। ‘সিরিয়াস কিছু নয়, হানি। কারও উদ্বিগ্ন হবার মত কিছু ঘটেনি। ওনাদের ওপর লক্ষ রাখা আমাদের দায়িত্ব। প্রফেসর একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। আমরা ওঁদের সামনে পড়তে চাই না, যতটা সম্ভব দূরে থাকব।’ সেই সাথে আরও বলল, গাড়িত্বে ওদের আরও একজন লোক আছে, তার ছোট্ট দলটাকে যদি ঘুরে ফিরে দেখার অনুমতি দেয়া হয় তো খুশি হবে সে-স্রেফ নিশ্চিন্ত হবার জন্যে।

বেশ তো, ঠিক আছে। রিসেপশনিস্ট জানাল, তবে ডিউটি ম্যানেজারকে ব্যাপারটা রিপোর্ট করতে হবে তার। ‘স্যার, আপনাদের আর কোন সাহায্যে আসতে পারি আমরা?’

আরও কিছু প্রশ্ন করল ডুপ্রে, পাঁচ মিনিটেরও কম সময়ে প্রয়োজনীয় উত্তরগুলো পেয়ে গেল সে। গাড়িতে ফিরে এসে প্ল্যানটা নিয়ে আবার আলোচনা করল ওরা। ‘ভাগ্য আমাদের পক্ষে, আরেকটু দেরি হলে চিড়িয়া পালাত, হুইলে বসা টনিকে বলল ডুপ্রে। তাড়াতাড়ি করতে হবে, কেননা যে-কোন মুহূর্তে রওনা হয়ে যাবে ওরা। সাথে ওয়াকি-টকি আছে তো?’

পরিচ্ছন্ন, তাজা প্লাস্টারের নিচে তার কান দপ দপ করছে। হাসপাতালের ডাক্তাররা যতটা সম্ভব করলেও সংশয় প্রকাশ করে বলেছে, চিকিৎসার জন্যে দেরি করে আসায় ক্ষতটা সহজে না-ও সারতে পারে। দ্রুত কথা বলে যাচ্ছে সে একটা হাত বারবার কানের দিকে উঠছে। টনির দায়িত্ব এলিভেটরগুলোর দিকে নজর রাখা। সবগুলো এলিভেটর এক জায়গায়, বিশতলার করিডর থেকে নজর রাখা সম্ভব, নিজেকে আড়াল করে। পিছন দিকে কোন সিঁড়ি নেই কাজেই হয় এলিভেটর নয়তো ফায়ার এস্কেপ দিয়ে বেরুতে হবে।

‘জনকে নিয়ে আমি বিল্ডিঙের নিচে মেইন্টেন্যান্স কমপ্লেক্সে থাকব,’ টনিকে বলল ডুপ্রে। ‘সাবধান তোমাকে যেন দেখে না ফেলে, আবার ফাঁকি দিয়ে যেন না পালায়। মনে আছে তো, ওয়াকি-টকি ব্যবহার করবে শুধু।’

জনকে নিয়ে আবার গাড়ি থেকে নামল ডুপ্রে, হাতে একটা ওয়াকি-টকি। বিল্ডিঙের ভেতর ঢুকল ওরা। গাড়ি পার্ক করে ওদেরকে অনুসরণ করল টুনি।

পুলিসের সাথে সহযোগিতা করতে উদ্‌গ্রীব কর্মচারীদের কাছ থেকে দিক নির্দেশ পেয়ে ডুপ্রে আর জন কংক্রিটের চার প্রস্থ সিঁড়ি ভেঙে বেসমেন্ট কমপ্লেক্সে নেমে এল; এখান থেকে ইলেকট্রিসিটি, হিটিং, এয়ার কন্ডিশনিং আর এলিভেটর নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

ডিউটিরত এঞ্জিনিয়ার বয়সে তরুণ, চটপটে, অচেনা দু’জন আগন্তুককে দেখে বিস্মিত হলো সে। আরও বিস্মিত হলো জনের হাতের কারাতে কোপ খেয়ে জ্ঞান হারাবার সময়।

দ্রুত কাজে লেগে গেল ডুপ্রে, স্তরে স্তরে সাজানো ইনস্ট্রুমেন্ট আর সুইচ চেক করল। যে সেকশনটা এলিভেটর নিয়ন্ত্রণ করে সেটা খুঁজে পেতে দু’মিনিট লাগল তার। পকেট থেকে ছোট একটা বাক্স বেরুল, বাক্স থেকে বেরুল এক সেট স্ক্রুড্রাইভার।

চারটে এলিভেটরের জন্যে আলাদা আলাদা কন্ট্রোল প্যানেল। প্রতিটি এলিভেটর অর্থাৎ ইলেকট্রিক্যালি-প্রোপেলড কীর-এর সাথে একটা করে সাপ্লিমেনটারি সিস্টেম আছে- জেনারেটর, মটর, ফাইনাল লিমিট সুইচ, কাউন্টারওয়েট, ড্রাম, ইত্যাদি সহ সেফটি ডিভাইস! সেফটি ডিভাইসে রয়েছে পাওয়ার বিচ্ছিন্ন এবং ব্রেক অ্যাপ্লাই করার ব্যবস্থা। প্রতিটি ইলেকট্রিক্যাল কমপোনেন্টে তিনটে করে ফিউজ, কাজেই একটা এলিভেটরের সবগুলো ফিউজ একসাথে অকেজো হয়ে যাবার আশঙ্কা কম বা নেই বললেই চলে।

ভারি সতর্কতার সাথে সব ক’টা এলিভেটর কার-এর ফিউজ বক্স খুলল ডুপ্রে। জনও বসে নেই, ভারী একজোড়া ওয়ায়্যার-কাটার দিয়ে চারটে লিভারের মেটাল সীল কাটছে সে, লিভারগুলোর গায়ে লেখা রয়েছে ‘ড্রাম রিলিজ ডেঞ্জার।’ ফিউজ আর ইনস্ট্রুমেন্টের মাথার দিকে ওগুলো।

ড্রামগুলোর কাজ হলো এলিভেটরের মেইন কেবল ছাড়া বা গুটানো, আর ড্রাম রিলিজের সাহায্য ড্রামের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ড্রাম রিলিজের সাহায্যে ড্রামের তালা খোলা হলে কোথাও কোন বিরতিতে না থেমে স্বাধীনভাবে ঘুরতে শুরু করবে ড্রাম। এভাবে ড্রাম রিলিজ করার দরকার হয় শুধু মেইন্টেন্যান্স এঞ্জিনিয়ারদের, তাও কাজটা করার আগে সংশ্লিষ্ট কার খালি করা হয়, রাখা হয় শ্যাফটের তলায়।

সচল একটা কারের ড্রাম রিলিজ করা মানে ভেতরে যারা আছে তাদের নির্ঘাত মৃত্যু।

ছয় মিনিটের মধ্যে সবগুলো অর্থাৎ চারটে এলিভেটরই মৃত্যুর ফাঁদ হয়ে উঠল। ফিউজ বক্সের স্ক্রু খোলা হয়েছে, চোখের সামনে নাগালের মধ্যে ফিউজগুলোকে দেখতে পাচ্ছে ডুপ্রে, ইচ্ছে করলে যে-কোন মুহূর্তে টান দেয়া যেতে পারে ড্রাম রিলিজে।

চেহারায় নিষ্ঠুর হাসি নিয়ে অপেক্ষা করছে ওরা। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না, ওয়াকি-টকিতে পরিচিত কণ্ঠস্বর ভেসে এল, ‘ক্রীস্ট!’ রুদ্ধশ্বাসে ফিসফিস করছে টনি। ‘একেবারে ঠিক সময়ে পৌঁচেছি আমরা। কামরা থেকে বেরিয়ে এসেছে ওরা। এইমাত্র নিচে লাগেজ পাঠানো হয়েছে। করিডর ধরে আসছে ওরা। এ সেই মেয়েটাই। বুড়োটাকে ঠিক বুড়ো লাগছে না, তবে একই লোক। ওরাই, ডুপ্রে!

বিশতলায় পাশাপাশি হাঁটছে ওরা, রানার হাতে ব্রীফকেস। এলিভেটরের সামনে দাঁড়াল ওরা, দু’পাশের দেয়ালে তৈরি খুপরিতে পাতাবাহার সহ টব রয়েছে। হাত তুলে বোতামে চাপ দিল রানা। নিচে নামতে শুরু করল এলিভেটর।

বেসমেন্টে শান্তভাবে অপেক্ষা করছে হেনরি ডুপ্রে, ঢাকনি খোলা ফিউজের দিকে চোখ; ওদিকে জনের ডান হাত ঝুলে রয়েছে চারটে ড্রাম রিলিজ লিভারের ওপর।

ডুপ্রের হাতে স্ক্রুড্রাইভার।

তিন নম্বর কার বিশতলায় নেমে থামল। ঠোঁটে হাসি, রিটার পাঁজরে মৃদু ঠেলা দিয়ে ভেতরে ঢোকাল রানা, তারপর নিজে ঢুকল। নিঃশব্দে বন্ধ হয়ে গেল দরজা। লবিতে নামার জন্যে বোতামে চাপ দিল মাসুদ রানা।

বোতামে চাপ দিল ও, আর ঠিক তখনি টনির যান্ত্রিক কণ্ঠস্বর মেইন্টেন্যান্স রূমে প্রতিধ্বনি তুলল, ‘কার থ্রী! ওরা তিন নম্বর কারে ঢুকছে!’

তিন নম্বর কারকে নিয়ন্ত্রণ করছে নির্দিষ্ট একটা কন্ট্রোল প্যানেল, সেটার সবগুলো ফিউজ অফ করে দিল ডুপ্রে। এবং ড্রাম রিলিজ লিভার টেনে নামিয়ে আনল জন।

রিটার চোখে চোখ রেখে হাসল রানা। শুরু হলো যাত্রা। দেখা যাক, পশ্চিমে আমাদের জন্যে কি অপেক্ষা করছে।’

‘আমি ভয় পাই না…,’ রিটার মুখের কথা মুখেই রয়ে গেল, আলে। নিভে যাওয়ার সাথে সাথে প্রচণ্ড ধাক্কায় একপাশে ছিটকে পড়ল ওরা। এলিভেটর কার হোঁচট খাওয়ার ভঙ্গিতে বার কয়েক ঝাঁকি খেলো, পরমুহূর্তে ভয়াবহ গতিতে শ্যাফট থেকে খসে পড়তে শুরু করল, প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে পতনের বেগ।