আবার উ সেন – ১.১

এক

বেলজিয়ামের ওপর দিয়ে উড়ে গেল প্লেনটা। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ফ্লাইট টুয়েলভ।

বেলজিয়াম-ডাচ সীমান্তের কাছাকাছি ইউরো এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সেন্টার এতক্ষণ নজর রাখছিল ওটার ওপর, অসটেন্ড থেকে উপকূল ছাড়িয়ে কয়েক মাইল এগোবার পরই নজর রাখার দায়িত্ব চাপল লন্ডন কন্ট্রোলের ওপর। এয়ার ট্রাফিক লন্ডন কন্ট্রোল সেন্টারটা ওয়েস্ট ডেটনের কাছে।

ডিউটিতে আসার মাত্র পাঁচ-সাত মিনিট পর ফ্লাইট টুয়েলভের দায়িত্ব নিল বিল হ্যারিংটন, বোয়িং সেভেন-ফোর-সেভেন জ্যাম্বোকে নির্দেশ দিল ঊনত্রিশ হাজার ফুট থেকে বিশ হাজার ফুটে নেমে আসতে। তার রাডার স্কোপে অনেকগুলো প্লেনের একটা ওটা-সবুজ আলোক বিন্দু, সাথে করেসপন্ডিং নাম্বার টুয়েলভ, প্লেনের অলটিচ্যুড আর হেডিংসহ।

সব কিছুই স্বাভাবিক দেখা গেল। সিঙ্গাপুর থেকে বাহরাইন হয়ে দীর্ঘ যাত্রাপথের শেষ ধাপে প্রবেশ করছে প্লেনটা। বিল হ্যারিংটন হিথরো অ্যাপ্রোচ কন্ট্রোলকে জানিয়ে দিল, তৈরি হও, স্পীডবার্ড টুয়েলভ তোমাদের আকাশসীমায় পৌঁচুচ্ছে।

বড়সড় রাডারস্কোপে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল বিল হ্যারিংটন। স্পীডবার্ড টুয়েলভ নিচে নামছে, স্ক্রীনে দ্রুত নেমে আসছে অলটিচ্যুড নাম্বার। ‘স্পীড়বার্ড ওয়ান-টু-ক্লিয়ারড্ টু টু-ও; ভেক্টর…।’ মাঝপথে থেমে গেল সে, অস্পষ্টভাবে কানে বাজছে হিথরো কন্ট্রোলের তাগাদা আরও তথ্য দাও। কিন্তু সেদিকে খেয়াল নেই তার। রাডারস্কোপের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে পেটের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। নাটকীয় দ্রুততার সাথে, অনেকটা যেন ভোজবাজীর মত, স্ক্রীন থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছে ফ্লাইট টুয়েলভের ইন্ডিকেটর নাম্বার। পরমুহূর্তে সেটার বদলে স্ক্রীনে ফুটে উঠল তিনটে লাল শূন্য। ঘন ঘন জ্বলছে আর নিভছে।

তিনটে লাল শূন্য-প্লেন হাইজ্যাক হওয়ার আন্তর্জাতিক সঙ্কেত।

কণ্ঠস্বর শান্ত, বিল হ্যারিংটন প্লেনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করল, ‘স্পীডবার্ড ওয়ান-টু ইউ আর ক্লিয়ারড টু টু-ও। তুমি সত্যিই কি ‘হ্যাঁ’ বলছ?’

প্লেনে যদি কোন বিপদ দেখা দিয়ে থাকে, এ-ধরনের সংলাপ নিয়মিত বিনিময়ের অংশ বলে মনে হবে। কিন্তু না, ফ্লাইট টুয়েলভ কোন সাড়া দিল না।

ত্রিশ সেকেন্ড পর প্রশ্নটা আবার করল বিল হ্যারিংটন

তবু কোন সাড়া নেই।

ষাট সেকেন্ড পর আবার করা হলো প্রশ্ন।

সাড়া নেই।

তারপর, প্রথমবার হাইজ্যাক হওয়ার সঙ্কেত প্রচারের পঁচানব্বুই সেকেন্ড পর, স্ক্রীন থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল লাল শূন্য তিনটে, সেগুলোর বদলে ফুটে উঠল পরিচিত ইন্ডিকেটর নাম্বার-টুয়েলভ। হেডসেটে ক্যাপটেনের গলা পেল বিল হ্যারিংটন, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সে।

ক্যাপটেন বললেন, ‘স্পীডবার্ড ওয়ান-টু। হ্যাঁ, আমরা ‘হ্যাঁ’ বলেছিলাম। বিপদ কেটে গেছে। প্লীজ হিথরোকে সতর্ক করুন। অ্যাম্বুলেন্স আর ডাক্তার দরকার আমাদের। কয়েকজন মারা গেছে, অন্তত একজন গুরুতর আহত। আবার বলছি, বিপদ কেটে গেছে। ইনস্ট্রাকশন অনুসারে আমরা এগোতে পারি তো? স্পীডবার্ড ওয়ান-টু।’

ক্যাপটেন আরও বলতে পারতেন, ‘বিপদ কেটে গেছে, মেজর মাসুদ রানাকে সেজন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ।