কুঠে সামন্তর বাড়িটা এখন রোদে হাওয়ায় হাসছে। বাড়ির দাঁত নেই যে হাসবে। তবু কেন যেন ঠিক তাই মনে হয় নিতাইয়ের। চালে খড়, মাটির দেয়ালগুলোয় নতুন পলেস্তারা, উঠোনের দড়িতে একটা-আধটা শাড়ি কাপড় টাঙানো, বড় সুখের চেহারা বাড়িটার। রান্নাঘর থেকে রোজ ধোয়াও ওঠে।
সকালের দিকটায় প্রায়দিনই নিতাই এসে বাইরে থেকে হাঁক দেয়, কই গো!
কুঠে সামন্তর বউ এ সময়ে বাড়ি থাকে না। ধানকলে যায়। তো তার খোঁজে আসেও না নিতাই। যার খোঁজে আসে সে ভাইবোন সামলে, রান্না চাপিয়ে ভারী ব্যস্ত। তবু একটু হাসিপানা মুখ করে বেরিয়ে এসে বলে, এসো নিতাইদা।
দাদা ডাকটা নিতাই নিজেই শিখিয়েছে। প্রথমটায় কাকা ডাকতে লেগেছিল। সে ডাকটা নিতাই পছন্দ করেনি।
জড়িবুটির পোঁটলা পাশে রেখে নিতাই উঠোনে শীতের রোদে ঠ্যাং মেলে বসে যায়। জটার ঘা শুকোলেও উকুনের উৎপাত বড় হয়েছে। খাবলে মাথা চুলকোতে চুলকোতে নিতাই সব খোঁজ-খবর নেয়, কী রান্না হচ্ছে? কেমন আছে সবাই? তারপর নিতাই নিজের কথা পেড়ে ফেলে, কালও এসেছিল ন-পাড়া থেকে একদল! বলে মন্ত্র দাও। কলা মুলো টাকা চাল ডাল পাহাড়-প্রমাণ এনে ফেলেছে। আমি বলি কী, মন্ত্র দেওয়া কী মুখের কথা! নিলেই হল? দিলেই হল? যাও গিয়ে তিন দিন হবিষ্যি কবো, মন পবিত্র করো, কালীর থানে পুজো চড়াও, তারপর দেখা যাবে। তা কে শোনে কার কথা! পা দু’খানা ঠেসে ধরল।
বিনি, অর্থাৎ কুঠে সামন্তব ডাগর মেয়েটি, এসব কথার অর্থ বোঝে। নিতাই টোপ ফেলছে। ফিক করে হেসে বলে, জটা বড় বিচ্ছিরি ও নিতাইদা, জটা ছাড়া তান্ত্রিক হওয়া যায় না?
নিতাইয়ের মুখ বেজার হয়। জটা ছাড়া তান্ত্রিক হয় কি না তা সে ভাল জানে না। তবে এটা জানে যে জটা ছাড়া ব্যাবসা হয় না। জটা রক্তাম্বর রুদ্রাক্ষ ত্রিশুল, রক্তচক্ষু এসব না হলে মানুষ ভড়কাবে কেন? আর না ভডকালে মাথাই বা নোয়াতে যাবে কেন? তাই সে বলে, তা হয়। তবে কিনা আমার জটার অনেক গুণ। স্বয়ং মা গঙ্গা এই জটার মধ্যে সেঁধিয়ে রয়েছেন। কতবার নিংড়ে গঙ্গাজল বেব করেছি। তা ছাড়া জটার চুল নিয়ে গিয়ে অনেকে কবচ করে! একগাছা চুল দশ পয়সা।
বলো কী?–বলে হাঁ করে থাকে বিনি। আর জটা ছাঁটাবার কথা মুখেও আনে না।
নিতাই মাতব্বরের মতো মাথা নেড়ে বলে, তান্ত্রিকরা যদি পয়সা চায় তবে টাকার বৃষ্টি করে দিতে পারে। তবে কি পয়সাকড়ির কথা আমরা ভাবি না, এই যা।
আমাকে একদিন টাকার বৃষ্টি দেখাবে?
দেখাব। তবে পাঁচজনের সামনে নয়। ভারী গুহ্য সাধনার ব্যাপার তো!
মেয়েটার বিস্মিত মুখের দিকে চেয়েই নিতাই টের পায়, জমছে, খেলা জমছে। কিন্তু জামে লাভ কী? বউদিমণি যদি টের পায় তবে বাড়ি থেকে তাড়াবে। আর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলে নিতাইয়ের ঠাই জুটবে কোথায়? সত্যি বটে, তার নামেও বউদি দশ বিঘে জমি কিনেছে, কিন্তু সে জমি কোথায় তা নিতাই জানে না, দলিলটাও চোখে দেখেনি। সে জমির নাগালও সে কোনওদিন পাবে না। তা হলে তার নিজের বলতে রইল কী? বউ নিয়ে উঠবে কোথায়? খাওয়াবেই বা কোন কাঁচকলা?
তোমার বউ কেন পালিয়েছিল গো, নিতাইদা? তুমি তো লোক খারাপ নও! মা বলে, নিতাইবাবার মনটা বড় ভাল।
সেটা আর সে বুঝল কই বলো? মড়ার খুলি দেখে ভয় পেল কিনা! তন্ত্র-সাধনার গুহ্য কথা কি মেয়েরা বোঝে?
বিনি চোখ কপালে তুলে বলে, ওমা! বউ থাকতে তুমি তান্ত্রিক হয়েছিলে নাকি? লোকে তো বলে, বউ পালানোর পর হয়েছ!
নিতাই ধরা পড়েও ঘাবড়ায় না। আঙুল দিয়ে দাড়ি আঁচড়াতে আঁচড়াতে বলে, পুরোপুরি ছিলাম বটে। তবে একটু-আধটু নাড়াচাড়া করতাম।
তোমার সেই বউ খুব সুন্দরী ছিল?
ছিল এক রকম। নাকটা চাপা। তা ছাড়া ভালই।
নাক তো আমারও চাপা।
তোমার? যাঃ। তোমার বলে টিকলো নাক!
এইসব আগড়ুম বাগড়ম বকতে বকতে বেলা চড়ে। নিতাই জানে, বেশিক্ষণ বসলে বিনি খেতে বলবে। সেটা ঠিক হবে না। গরিব মানুষ, একটা বাড়তি লোককে খাওয়াতে এদের যে কত কষ্ট হয়। তা ছাড়া খায়ই বা কী? কচু ঘেঁচু আর পাতা সেদ্ধ, একটু লবণ আর লংকা। তাই নিতাই বসে না। উঠে পড়ে।
বিনি খানিকটা এগিয়ে দিয়ে বলে, আবার এসো। তুমি এলে ভারী ভাল লাগে।
একদিন দুপুরে সামন্তর বাড়ি থেকে ফেরার পথে রঘু স্যাকরা ডেকে বলল, চা খাবি নাকি?
বহুকাল রঘু স্যাকরার সঙ্গে দেখা নেই। একবার খামোখা খুব ঝামেলায় পড়েছিল। সেই থেকে আর ওপথ মাড়ায় না। তবে কেউ ডাকলে না গিয়েও পারে না নিতাই।
রঘুর নতুন বাড়ির দাওয়ায় বসে বলল, খুব টাকা হয়েছে তোমার দেখছি।
রঘুর মুখখানার চেহারা ভাল না। হাসি নেই, গোমড়াপানা। একটা বাটিতে অ্যাসিডে সোনা জ্বাল দিচ্ছে কাঠ-কয়লার আংরায়। গন্ধে কাশি আসে, পেট গুলোয়।
রঘু বাটিটা নামিয়ে রেখে কাছে এসে বসে বলল, খবর-টবর সব শুনেছিস?
কী শুনব?— সন্দেহের চোখে চায় নিতাই।
ও বাড়ির খবর। চাটুজ্জেবাড়ির।
খবর তো কিছু নেই। শুধু বড়দিদিমণির বিয়ে হবে শুনেছি। তা সে এখানেও নয়। এলাহাবাদে।
ও খবর নয়। শ্রীনাথ চাটুজ্জে যে আবার মাইফেলে যাচ্ছে, সে খবর শুনিসনি?
ওঃ। সে তো নতুন কিছু নয়।
শ্রীনাথের ছেলেটা তো খুব উঠেছে দেখছি।
সজলখোকা? সে আবার উঠবে কী?
উঠবে কী?–বলে মুখ ভেঙায় রঘু।–আলিসান চেহারা হয়েছে। ডাকাত-টাকাত হবে বড় হলে। তেমনি হাড়ে-হারামজাদা!
সজলখোকা আবার তোমার কী করল?
দিতুম সেদিনই ঠ্যাং ভেঙে। নেহাত ছেলেমানুষ, তা ছাড়া বাপটাও সামনে রয়েছে। কিছু বলিনি। কিন্তু সাবধান করে দিস। এর পর বাঁদরামি করলে পুঁতে ফেলব।
নিতাই হাসে তড়পানি দেখে। মাথা নেড়ে বলে, ব্যস ব্যস, অত লাফিয়ো না। সবাই কি আর নিতাইখ্যাপা? ঝেড়ে কাশশা তো বাপ, ব্যাপারটা শুনি আগে।
রঘু রক্তচোখে চেয়ে বলে, ইঃ, কে আমার সালিশি এলেন! ওঁকে বলতে হবে!
চা খাওয়াবে বলছিলে যে!
রঘু উঠে গিয়ে বাটিটা আবার নেড়েচেড়ে দেখে। অ্যাসিডটা সাবধানে আর-একটা পাত্রে ঢেলে দিয়ে উঠে আসে। বলে, চা চা করে গলা শুকোচ্ছিস কেন? বলেছি যখন, হবে।
তো কথাটা কী?
কাউকে বলবি না?
কার দিব্যি কাটতে হবে বলো, কাটছি।
মা কালীর।
মা কালীর দিব্যি।
তোর দিব্যির কোনও দাম নেই। তবু বলছি, শ্রীনাথবাবুকে রামলাখনের ঘরে আমি নিজে থেকে নিয়ে যাইনি।
তাই নাকি?
মাইরি।
নিজে থেকে নাওমি, তবে কি বাবু নিজেই গেল?
তাও নয়।
গুহ্য কথাটা কী?
মাসটাক আগে ভটভটিয়া চেপে শ্রীনাথের শালা সরিৎ এ পথ দিয়ে যাচ্ছিল। আমি নারকোল গাছের গোড়ায় নুন দিচ্ছিলুম। দেখে ভটভটিয়া থামিয়ে নেমে এসে অনেক আগড়ুম বাগড়ম কথা পাড়ল। ছোকরাকে আমার পছন্দ নয়, তবে মস্তান বলে কথা। খাতির রাখতে হয়। শেষমেশ বলে ফেলল, জামাইবাবুর অবস্থা তো জানেন। কেমনতরো পাগলা পাগলা ভাব। ডাক্তার বলেছে, আগের সব অভ্যাস হঠাৎ ছেড়ে দেওয়ায় এরকমটা হয়েছে। তা আবার একটু ফুর্তিটুর্তি করলে সেরে যাবে। চিকিৎসাই একরকম।
তাই বটে!–চোখ কপালে তোলে নিতাই।
বললে কিন্তু কেটে ফেলব, নিতাই।
কালীর দিব্যি করেছি। নিশ্চিন্তে বলো।
কথা এটুকুই। বলল, জামাইবাবুকে মাঝে মাঝে ডেকে নিয়ে যাবেন। তবে কেউ যেন টের না পায়।
তুমি রাজি হলে?
রাজি না হয়ে উপায়? রামে মারে, রাবণেও মারে যে!
বউদি যদি জানতে পারে?
সে কথাও তুললাম। চোখ টিপে বলল, ডাক্তারের পরামর্শ তো, মেজদি কিছু মনে করবে না। তখনই বুঝলুম, চাটুজ্জেগিন্নির সায় আছে।
সরিৎ তোমাকে কিছু দিল-টিল?
না। কী দেবে?
কিছুই না?
জুতো খাবি কিন্তু, নিতাই।
নিতাই হেসে বলল, সাধু সেজো না। কদিন আগে একজোড়া বালা ভেঙে রতনচুড় করতে দেয়নি বউদি তোমাকে?
সে কি ঘুষ?
তা নয় তো কী? ও বাড়ির গয়না করে কলকাতার স্যাকরারা। তোমার মতো হাভাতে সোনার বেনেকে কে পোঁছে হে?
যা, তা হলে চা পাবি না।
তা হলে কথাটাও গোপন থাকবে না।
মা কালীর দিব্যি কাটলি যে!
তুমিও তো চা খাওয়াবে বলে ডেকেছিলে। রেখেছ সে কথা?
চা হবে রে বাপ, কথাটা ওভাবে ধরিসনি।
মাল ছাড়ো, কথা যেভাবে ধরতে বলবে সেভাবেই ধরব।
ধরাধরির কিছু নেই। শ্রীনাথবাবু এখন আবার একটু ফুর্তি করার জন্য আঁকুপাঁকু। বেচারার জন্য কষ্টও হয়। কিন্তু এ কালান্তক ছেলেটার জন্য ভয় পাই। সেদিন রামলাখনের ঘরে ঢুকে লঙ্কাকাণ্ড করে এসেছে। ওকে একটু বুঝিয়ে বলবি যে, দোষটা আমার নয়।
দোষটা কার ঘাড়ে চাপান দেব তা হলে?
ডাক্তারের ঘাড়ে। বলবি ডাক্তার বলেছে।
ও ছেলে অত সহজে ভুলবার নয়।
তবে ভবি ভুলবে কীসে?
সে ভার আমার। আমাকে একটা ঘর করার জায়গা দেবে? তোমার তো মেলা জায়গা, আধকাঠা পেলেও আমার হয়।
দূর শালা! ভাগ।
আচ্ছা, এখন তো চা খাওয়াও।–বলে নিতাই জুত করে বসে।
সজলের বন্ধুদের বলা আছে। তারা চারদিকে নজর রাখে। পাহারা দেয় সজল নিজেও। ইস্কুল থেকে ফিরেই সে আসে ভাবন-ঘরে, ঢুকে বাবাকে দেখে। যখন বিকেলে খেলতে যায় তখন তার হয়ে বাবাকে পাহারা দেয় খ্যাপা নিতাই বা নতুন মালি। সজল সবাইকে বলে রেখেছে, রঘু স্যাকরাকে কাছেপিঠে ঘোরাঘুরি করতে দেখলেই যেন তাকে খবর দেওয়া হয়।
সন্ধের পর বাড়ির মাস্টারমশাই চলে গেলে সে নিজেই বাবার কাছে চলে আসে। শ্রীনাথও তাকে দেখলে খুশি হয়।
আয়। মাস্টারমশাই চলে গেছেন?
হ্যাঁ।
বোস, কাছে এসে বোস। যা শীত।
এক লেপের তলায় গায়ে গায়ে বাপ-ব্যাটায় বসে গুটিসুটি হয়ে। সজল এখন মাথায় মাথায় শ্রীনাথের সমান লম্বা। শ্রীনাথের চেয়ে তার স্বাস্থ্য ভাল এবং গায়ের জোর অনেক বেশি। খুব হঠাৎ করেই সজলটা এমন ধাঁ বেড়ে উঠল। এই বেড়ে ওঠাটাকে খুব উপভোগ করে শ্রীনাথ। সে গাছপালার বেড়ে ওঠা লক্ষ করেছে। এমন সতেজ সহজ বাড়ন খুব সুলক্ষণ। গাছপালাকে কখনও একটু ঘঁটকাট করতে হয়। তাতে বাড় আরও ভাল, কিন্তু মানুষের ঘঁটকাট কীভাবে হবে তা তো সে জানে না।
সজলের বাড়ন্ত শরীরে নিজের শরীরের তাপ সঞ্চার করে দিতে দিতে শ্রীনাথ বলে, আজকাল আমি কেমনধারা হয়ে গেছি যেন। বোধহয় বেশিদিন বাঁচব না। তুই আমাকে দেখিস।
সজল গম্ভীর গলায় বলে, আর কখনও যাওনি তো, বাবা?
রামলাখনের ওখানে? দূর বোকা।
আমি কিন্তু চারদিকে পাহারা রেখেছি।
পাহারা!–বলে অবাক হয় শ্রীনাথ, সে কী রে! পাহারা কেন?
রঘু স্যাকরা যদি তোমাকে নিয়ে যায়।
শ্রীনাথ চুপ করে থাকে। তারপর অনেকক্ষণ বাদে আস্তে আস্তে বলে, রঘুর দোষ কী? নিমিত্ত মাত্র। আমিও তো ভাল নই। নইলে সে ডাকল আর আমিও কেন চলে গেলাম।
সজল মৃদু কিন্তু দৃঢ় স্বরে বলে, তুমি খুব ভাল বাবা।
দু’জনে আর-একটু নিবিড় হয়ে বসে। শ্রীনাথ একটু আবেগের ধরা গলায় বলে, ভালই তো ছিলাম একসময়ে। তারপর সব গণ্ডগোল হয়ে গেল। কাচা পয়সা, নিশ্চিন্তের জীবন এসব ভাল নয়। তুই একটু দুঃখে থাকিস, টানাটানিতে থাকিস, ভাল থাকবি।
সজল হঠাৎ লেপটা গা থেকে সরিয়ে চিতাবাঘের মতো দ্রুত গিয়ে এক ঝটকায় পশ্চিমের জানালাটা খুলে বলল, কে?
ভয়ার্ত গলায় জবাব এল, আমি।
সজল তেমনি বাঘের মতো গিয়ে দরজার হুড়কো খুলে বাইরে বেরিয়ে গেল।
সজলখোকা, আমি নিতাই।
কী চাও?
একটা কথা।
চালাকি কোরো না। স্পাইগিরি করছিলে?
চালাকি নয় গো।
কে তোমাকে লাগিয়েছে কথা শোনার জন্য?
মাইরি কেউ না।
সজল হঠাৎ বিকট স্বরে চেঁচিয়ে বলে, আমার বাবার ওপরে যে স্পাইং করবে তার টুটি ছিড়ে ফেলে দেব।
নিতাই ভড়কে গিয়ে বলে, কথাটা শোনোই না। অত চেঁচালে যে লোক জুটে যাবে। সজল অবশ্য কথাটা নিতাইকে উদ্দেশ করে আর কাউকে শোনাচ্ছিল। কেননা তার ক্রুদ্ধ চোখ ভিতরবাড়ির দিকে। চোখটা ফিরিয়ে অন্ধকারে কালো চাদরে মুড়ি দেওয়া নিতাইয়ের দিকে চেয়ে বলল, মিথ্যে কথা বলবে না তো!
না। তোমাকে মিথ্যে বলে কি মার খেয়ে মরব?
কী কথা?
রঘু স্যাকরার দোষ নেই। তোমার মামা তাকে লাগিয়েছিল বাবুকে রামলাখনের আড্ডায় নিয়ে যেতে। আমার নাম কোরো না কিন্তু। বলে গেলাম, এবার পালাই।
সজল খুব অবাক হল না। কিন্তু একা অন্ধকার বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাগে বিদ্বেষে পাগল হয়ে দাঁতে দাঁত পিষতে লাগল।
ভিতর থেকে শ্রীনাথ ডাকল, সজল, আয়। কে রে?
ঘরে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে সজল বলে, নিতাই।
আবার বাপ-ব্যাটায় কাছ ঘেঁষাঘেঁষি করে বসে।
শ্রীনাথ বলে, তুই কি খুব ডাকাবুকো? দুষ্টু?
সজল হাসে। বলে, না। তবে আমাকে সবাই ভয় খায়।
তোকে? তুই তো একটুখানি ছেলে, তোকে ভয় পায় কেন?
কী জানি!
মারপিট করিস?
অন্যায় দেখলে। তাছাড়া নয়।
শ্রীনাথ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, ওসব করিস না। চারদিকে শত্রু। কে কবে শোধ নিতে খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তোকেও মেরে ফেলবে।
আমাকে মা অবধি ভয় পায়। জানো?
তোকে?—শ্রীনাথ অবাক, কই তোকে দেখে তো ভয়ের কিছু মনে হয় না।
সজল হাসে, একমাত্র তুমিই আমাকে ভয় পাও না। বরং আমিই তোমাকে ভয় পাই, বাবা।
দূর পাগল! আমাকে ভয়ের কী? কেউ আমাকে ভয় পায় না।
আমি পাই। আমি যে তোমাকে ভীষণ ভালবাসি।