৪৫. চাকুরি উপলক্ষে রাধানাথ

চাকুরি উপলক্ষে রাধানাথ সুদীর্ঘকাল পশ্চিমাঞ্চলে কাটিয়ে কিছুদিন হলো কলকাতায় বদলি হয়ে এসেছেন। গ্রেট ট্রিগোনোমেট্রিক্যাল সার্ভে অব ইণ্ডিয়ার অফিসে তিনি বত্ৰিশ টাকা মাহিনায় চাকুরিতে ঢুকেছিলেন, তারপর অক্লান্ত পরিশ্রম ও অঙ্কশাস্ত্ৰে তীক্ষ্ণ মেধার পরিচয় দিয়ে তিনি অনেক উন্নতি করেছেন। ডিরোজিও শিষ্য রাধানাথ শিকদারের ন্যায়-নীতি বোধ অতি প্ৰবল। উৎকোচ গ্রহণ এবং চাটুকারিতা, এই দুটিকেই তিনি প্রবলভাবে ঘৃণা করেন। তাঁর অফিসের বিভাগীয় দুএকজন কতা এইসব গুণের জন্য তাঁকে বিশেষ পছন্দ করেন। তাছাড়া উচ্চগণিতে রাধানাথের মতন জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ বিলাতেও বিশেষ নেই।

কলকাতা অফিসে রাধানাথ বদলি হয়ে এসেছেন চীফ কমপিউটার হিসেবে, বেতন ছয়শত টাকা। বহুকাল তিনি ঘুরেছেন পাহাড়ে পর্বতে, জরীপের লোকজন ও যন্ত্রপাতি নিয়ে গেছেন অনেক দুৰ্গম স্থানে। ছয় ফুটের বেশী লম্বা, দৈত্যের মতন স্বাস্থ্য, স্থানীয় ইংরেজরা তাঁকে আড়ালে লেভিয়াথান বলে ডাকতো। কলকাতায় তাঁর কাজ হলো খাতাপত্রে দুরূহ অঙ্কের হিসেব কষা।

হিন্দুস্থানে এখন তেমন যুদ্ধ বিগ্রহ নেই কোথাও, মোটামুটি শান্তিপূৰ্ণ অবস্থা, তাই ইংরেজ কর্মচারীরা এখন অন্য নানাবিধ কর্মে ব্যাপৃত। পাহাড় পর্বতের প্রতি সাহেব জাতির বরাবরেরই টান আছে, তাছাড়া গ্ৰীষ্মপ্ৰধান ভারতবর্ষে স্নিগ্ধ শীতল জলবায়ু অন্বেষণে তারা বারবার পাহাড়ে যেতে ভালোবাসে। হিমালয় পর্বতের নাম বহু প্ৰাচীনকাল থেকেই পৃথিবীতে পরিচিত, কিন্তু ইংরেজরা দেরাদুনের দিক থেকে হিমালয়ের দিকে অগ্রসর হতে হতে প্ৰতিনিয়তই অগাধ বিস্ময়ের সম্মুখীন হতে লাগলো। এই নগাধিরাজ কী বিশাল, কী গহন, কী মহান! সমুদ্রের অন্তহীন ঢেউয়ের মতন দিগন্ত জুড়ে রয়েছে সংখ্যাহীন শৃঙ্গ। এখানে রয়েছে চক্ষুর সীমানা ছাড়ানো অরণ্য, যেখানে কত বিচিত্ৰ মনোহারী অচেনা বৃক্ষ, অ-দৃশ্যপূর্ব কত পশু-প্ৰাণী-পতঙ্গ। গিরিকন্দরে অকস্মাৎ চোখে পড়ে কোনো সিদ্ধ পুরুষ বা তপস্যানিরত যোগী চক্ষু মুদে বসে আছেন। কতকাল তিনি সেই অবস্থায় আছেন কেউ জানে না। এখানে এলে হৃদয়ে অদ্ভুত প্রশান্তি আসে, আবার প্রতি পদক্ষেপে বিপদ। শান্ত ও ভয়ংকর রসের এমন আশ্চর্য সমাহার। আর কোথাও দেখা যায় না।

সানুদেশের নিবিড় অরণ্য ক্রমশ উপরের দিকে বৃক্ষ-বিরল হতে থাকে। শিখরগুলিতে শুভ্র চিরতুষারের বিহার। কত যে শিখর, তার ইয়ত্তা নেই। সেসব স্থলে মানুষ তো দূরের কথা পৃথিবীর কোনো প্রাণীই কখনো পদার্পণ করেনি। হিন্দুগণের বিশ্বাস ঐ তুষারক্ষেত্র দেবতা ও অপ্সরাদের লীলাস্থল।

অসীমকে সীমা দিয়ে ঘেরার একটা চেষ্টা মনুষ্যজাতির মধ্যে সব সময়েই রয়েছে। এইরূপ চেষ্টাই সভ্যতার লক্ষণ হিসেবে গণ্য। যা অসীম, যা অনন্ত রহস্যময় তা মানুষের সহ্য হয় না, সেইজন্যই তো এই দেয়ালঘেরা সঙ্কুচিত নগর সভ্যতা।

জরীপ বিভাগের কমীরা অত্যুৎসাহে হিমালয়ের শৃঙ্গগুলিকে পরিমাপের সংখ্যাতত্ত্বে বেঁধে ফেলার জন্য নিয়মিত অভিযানে যায়। অবশ্য এজন্য চূড়ায় আরোহণ করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না, চুড়ার সঙ্গে সরলরেখায় কোনো একটি স্থান নির্দিষ্ট করতে হয়, তারপর থিওডোলাইট যন্ত্রের সাহায্যে চলে জ্যামিতিক হিসাব। তারপর সেইসব পরিসংখ্যান তারা প্রেরণ করে জরীপ বিভাগের সদর দফতর কলকাতায়।

যুগ যুগ ধরে ভারতীয়রা দূর থেকে হিমালয়কে প্ৰণাম জানিয়েছে। কিন্তু ইংরাজ জাতি জড় পদার্থকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করায় বিশ্বাস করে না। তারা চায় জীব ও জড়াজগতকে পদানত করতে। ভারতীয়রা হিমালয়কে উদ্দেশ্য করে কাব্য রচেছে, কিন্তু হিমালয় যে একটি মাত্র পর্বত নয়, কতকগুলি বিচ্ছিন্ন পর্বতমালার সমষ্টি, এ সম্পর্কে কোনো কৌতূহল দেখায়নি। ইংরেজরা আরও আশ্চযান্বিত হয়ে যায় এই জন্য যে ভারতীয়রা হিমালয়ের শৃঙ্গগুলির নাম পর্যন্ত দেয়নি। স্থানীয় লোকেরা কাছাকাছি পরিদৃশ্যমান চূড়াগুলিকে কিছু একটা মনগড়া নামে ডাকে, দূরের দুঃসাধ্য-গমন শিখরগুলি নামহীন, গোত্রহীন, চির উদাসীন।

জরীপ বিভাগ এ পর্যন্ত বেছে বেছে প্ৰধান প্ৰধান উনআশীটি শিখরের উচ্চতা পর্যবেক্ষণ করেছেন কিন্তু তাদের পৃথক পৃথক নাম না থাকায় কাগজপত্রে হিসাব রাখার খুবই অসুবিধা হয়। তবু একত্রিশটির স্থানীয় নাম পাওয়া গেছে, বাকিগুলি পীক নাম্বার ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর এইভাবে চিহ্নিত।

জরীপ বিভাগের কাজে অর্থের কোনো অনটন নেই। এ ব্যাপারে সরকার কোনো কাপণ্য করেন না। অবশ্য ভূপ্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞান আহরণই ইংরেজ সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য নয়। এছাড়া আরও গূঢ় কারণ আছে। হিমালয় সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান সঞ্চয়ও বিশেষ প্রয়োজন। কারণ এই হিমালয়ের ওপারেই রুশ দেশ এবং রুশরাই এখন ইংরাজদের শত্ৰু। প্রাযই শোনা যায় রুশরা ইংরাজদের কাছ থেকে ভারতবর্ষটা ছিনিয়ে নেবার জন্য আসছে। কোন কোন পথ ধরে রুশীয় বাহিনী আসতে পারে, তা কোম্পানির প্রতিরক্ষা দফতরের অবশ্যই জেনে রাখা দরকার। জরীপ বিভাগকে তাই প্ৰবল উদ্যমে হিমালয় অভিযানে নিযুক্ত করা হয়েছে।

মাঝখানে দুএকবার অল্পদিনের জন্য কলকাতা ঘুরে গেলেও রাধানাথ প্রায় বিশ বৎসর দেশ ছাড়া। তাঁর অবর্তমানে বাংলার সামাজিক জীবনে কত পরিবর্তন ঘটে গেছে, রাধানাথের সঙ্গে সেসব কিছুর যোগ ছিল না। এমন কি বাংলা ভাষাও তিনি ভালো করে বলতে পারেন না। রাধানাথের বন্ধু প্যারীচাঁদ প্রায়ই বলেন, রাধু, বাংলাটা শেখো। দেশের ভাষা না জানলে তুমি দেশের মানুষদের চিনবে কী করে? পাহাড় পর্বত নিয়েই কি তোমার সারা জীবন কাটবে? কথাটা রাধানাথের মনে লেগেছে। অফিস থেকে ফিরে প্রতি সন্ধেবেলাই তিনি প্যারীচাঁদের কাছে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের পাঠ নিতে যান। প্যারীচাঁদের ভাই কিশোরীচাঁদও অতিশয় বুদ্ধিমান ও কৃতবিদ্য পুরুষ, এই দুজনের কাছ থেকে রাধানাথ অনেক বিষয়ে জানতে পারেন। পাহাড় ছেড়ে আস্তে আস্তে তাঁর মন মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়। সদ্য পরলোকগত বেথুন সাহেবের নামে একটি বেথুন সোসাইটি স্থাপিত হয়েছে, সেখানে দেশের শিক্ষিত সমাজের অগ্রগণ্য ব্যক্তিরা সমবেত হয়ে দেশের বিভিন্ন সমস্যা ও শিল্প সংস্কৃতি সম্পর্কে প্রবন্ধ পাঠ করেন। রাধানাথকে সেই সোসাইটির সদস্য করে দিয়েছেন প্যারীচাঁদ। প্ৰথম প্রথম রাধানাথ সেখানে গিয়ে চুপ করে বসে থাকেন, তাঁর ইচ্ছে কোনো না কোনোদিন তিনিও সেখানে একটি প্রবন্ধ পাঠ করবেন। বাংলায়।

ইতিমধ্যেই রাধানাথ এক অত্যাশ্চর্য কাণ্ড করে ফেললেন।

অফিসে বসে তিনি কাজ করছেন। তাঁর সহকারীরা জরীপ বিভাগের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে সংগৃহীত পরিসংখ্যান তাঁর কাছে সাজিয়ে দিয়ে গেছে। চীফ কমপিউটার এবং প্রধান অঙ্কবিদ হিসেবে তিনি সেগুলি যাচাই করবেন। জটিল অঙ্কের মধ্যে তিনি গম্ভীরভাবে ড়ুবে ছিলেন, হঠাৎ তাঁর মাথার মধ্যে যেন এক বিদ্যুচ্চমক হলো। তিনি অস্ফুটভাবে বলে উঠলেন, আরেঃ!

প্রথমটায় তিনি নিজেই যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না। তাঁর চোখের সামনে টেবিলের ওপর ছড়ানো নানান কাগজপত্রে শুধু অঙ্কের সংখ্যা, কিন্তু তারই মধ্যে থেকে যেন মাথা তুলে দাঁড়াতে লাগলো এক পর্বতশৃঙ্গ। সেই শৃঙ্গটি উঁচু হতে হতে যেন একেবারে স্পর্শ করলো আকাশ। রাধানাথ বিস্ময়ে বিমোহিত হয়ে মানসনেত্ৰে দেখতে লাগলেন। ধবল মুকুট পরা সেই সুমহান দিগন্ত বিস্তারী মূর্তিমান বিশালত্বকে।

একটু পরেই তাঁর ঘোর ভাঙলো, তিনি উঠে দাঁড়িয়ে এক ঝটিকায় কাগজপত্রগুলি জড়ো করে নিয়ে ছুটে বেরিয়ে গেলেন নিজের কামরা থেকে। অদূরেই আর একটি কামরায় বসেন কর্নেল অ্যাণ্ডু ওয়া। তিনি সমগ্ৰ ভারতবর্ষের জরীপ বিভাগের প্রধান। আগে থেকে এত্তেলা না পাঠিয়ে বড় সাহেবের কামরায় প্রবেশ করা যায় না, কিন্তু রাধানাথের সে কথা মনে রইলো না। তিনি ঝড়ের বেগে দরজা ঠেলে ঢুকে এসে টেবিলের ওপর কাগজগুলি আছড়ে অতি উত্তেজিত কণ্ঠে বললেন, স্যার, দেখুন! দেখুন!

কর্নেল ওয়া তখন অন্য দুএকটি সাহেবের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তিনি হতচকিত হয়ে বললেন, কী হইয়াছে, শিকদার? ব্যাপার কি? তুমি কাঁপিতেছ। কেন?

রাধানাথ বললেন, স্যার, অদ্য একটি লাল অক্ষরের দিন। আমরা আজ এই বিশ্বের মধ্যে যাহা সর্ববৃহৎ তাহার সন্ধান পাইয়াছি।

কর্নেল ওয়া। তবু বুঝতে না পেরে বললেন, শিকদার, অত উত্তেজিত হইয়ো না। আসন গ্ৰহণ করে। কী হইয়াছে, আমায় বিস্তারিত করিয়া বলো।

রাধানাথ বসলেন না। টেবিলের ওপর ঝুঁকে পড়ে বললেন, স্যার দেখুন, এই পীক নাম্বার ফিফটিনের সর্বশেষ হিসাব।

কর্নেল ওয়া বললেন, তাহাতে কী হইল? পীক নাম্বার ফিফটিন তোমাকে এমত পাগল করিল কেন?

রাধানাথ বললেন, ছয়টি বিভিন্ন কেন্দ্ৰ হইতে এই পীক নাম্বার ফিফটিনকে পর্যবেক্ষণ করা হইয়াছে। এই দেখুন নিকলসনের প্রতিবেদন। নিকলসন কিছুই বোঝে নাই সে কি দেখিতেছে। তিন বৎসর ধরিয়া এই কাগজগুলি পড়িয়া আছে।

কর্নেল ওয়া একটু অধৈৰ্য হয়ে বললেন, আসল কথাটি কি তাহা তো আমি এখনো বুঝিলাম না।

রাধানাথ সগর্বে বললেন, আমি গণনা করিয়া দেখিয়াছি, ইহার উচ্চতা উনত্রিশ সহস্ৰ দুই ফিট; এই বিশ্বে ইহা অপেক্ষা বড় আর কিছুই নাই। আমরা আবিষ্কার করিয়াছি পৃথিবীর চুড়া।

এবার কর্নেল ওয়া লাফিয়ে উঠে বললেন, বলো কী?

কর্নেল ওয়া রাধানাথের প্রতিভা বিষয়ে জানেন। তাঁর পূর্বতন সার্ভেয়ার জেনারেল রাধানাথের নামে অনেক প্রশস্তিবাণী লিখে রেখে গেছেন। সুতরাং তিনি রাধানাথের কথা সহসা অবিশ্বাস করতে পারেন না। তবু রাধানাথের সঙ্গে বসে অঙ্কগুলি মিলিয়ে দেখলেন অনেকক্ষণ ধরে। তারপর তিনিও এক সময় বলে উঠলেন, হুররে।

এটা একটা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেবার মতন সংবাদ। ততক্ষণে জরীপ বিভাগের সকল কর্মী এসে জমায়েত হয়েছে সেখানে। এত বড় আবিষ্কারের কৃতিত্ব কলকাতা অফিসের। সকলের মধ্যে আনন্দ কোলাহল।

কর্নেল ওয়া সোল্লাসে রাধানাথের কাঁধ চাপড়ে দিয়ে বললেন, ধন্যবাদ, শিকদার, তুমি একটি বিস্ময়কর কার্য করিয়াছ।

তারপর কর্নেল ওয়া স্বগতভাবে বললেন, পুয়োর নিকলসন, হি ডিড নট সাসপেক্ট দ্যাট হি ওয়াজ ভিউয়িং থ্রু দা টেলিস্কোপ দা হাইয়েস্ট পয়েণ্ট অফ দা আর্থ।

সেইদিন সন্ধ্যাবেলা কর্নেল ওয়ার গৃহে শ্যাম্পেনের বোতল খুলে এই মহান উপলক্ষটি উদযাপি করা হলো। গভর্নর জেনারেল এখন কলকাতায় নেই, এই সংবাদ-লেফাফা নিয়ে তাঁর কাছে চলে গেছে দূত। আজ স্থানীয় ইংরেজদের কাছে বড় আনন্দের দিন। নতুন কিছু আবিষ্কারের মর্ম ভারতীয়রা ঠিক বোঝে না, কিন্তু এই উনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণের সময় শ্বেতাঙ্গরা যখন নিত্য নতুন আবিষ্কারে মত্ত, তখন পৃথিবীর চুড়া আবিষ্কারের মতন ঘটনাও বিরাট তাৎপর্যপূর্ণ। সারা বিশ্ব এজন্য কলকাতার জরীপ বিভাগের কৃতিত্ব স্বীকার করতে বাধ্য।

কথায় কথায় প্রশ্ন উঠলো, পীক নাম্বার ফিফটিনের নতুন নাম কী হবে? দুনিয়ার সমস্ত পাহাড়ের যিনি রাজা, তিনি তো নামহীন থাকতে পারেন না। স্থানীয় লোকেরা এর কোনো নাম দিয়েছে কিনা, সে সম্পর্কে কি আর অনুসন্ধান করতে পাঠাতে হবে? এ দেশের পাহাড়ের যদি কোনো এ দেশীয় নাম থাকে। তবে তা পরিবর্তন করার দরকার নেই।

রাধানাথ বললেন, স্যার, আমি নিজেও কয়েকবার নামহীন শিখরগুলির পর্যবেক্ষণ অভিযানে বাহির হইয়াছি। আমি খুব ভালো করিয়াই জানি যে স্থানীয় লোকেরা এই উচ্চতম শৃঙ্গটির অস্তিত্ব সম্পর্কেই অবহিত নয়।

কর্নেল ওয়া বললেন, তাহা হইলে তো একটি নাম আমাদেরই দেওয়া কর্তব্য। বিশ্বের সকল দেশে এই আবিষ্কারের কাহিনী প্রচারিত হইবে, বিলাতে আগামী কল্যই ডেসপ্যাঁচ প্রেরণ করিবার কথা, সুতরাং একটি নাম তো আশু প্রয়োজন।

রাধানাথ দ্রুত চিন্তা করলেন। রাজভক্ত, ইংরেজরা নিশ্চয়ই তাদের মহারানী ভিকটোরিয়ার নাম প্ৰস্তাব করবে। রাধানাথ নিজ অভিজ্ঞতায় দেখেছেন যে হিমালয় যেমন পুরুষ, তেমনই হিমালয়ের পরিচিত বড় বড় শৃঙ্গগুলিকে পুরুষ হিসেবেই কল্পনা করে ভারতীয়রা। বেশ কয়েকটি নাম কোনো দেবতার নামে। সাহেবরা কোনো হিন্দু দেবতার নাম পছন্দ করবেন না। রাধানাথ নিজেও একেশ্বরবাদী, হিন্দু দেব-দেবীদের প্রতি তাঁর আকর্ষণ নেই। তিনি অন্য একটি নাম আগেই চিন্তা করে রেখেছেন।

অন্য কেউ কিছু বলবার আগেই রাধানাথ বললেন, ভদ্রমহোদয়বৃন্দ, আমার একটি প্রস্তাব পেশ করিতে পারি কি?

কর্নেল ওয়া উত্তর দিলেন, নিশ্চয়ই, শিকদার, বলো, তোমার কী অভিপ্ৰায়?

রাধানাথ বললেন, স্যার, জরীপ বিভাগের পূর্ববর্তী প্রধান পরিচালক জর্জ এভারেস্ট আমার গণিত শিক্ষার গুরু। ভারতীয় জরীপ বিভাগটি তিনি এমনভাবে ঢালিয়া সাজাইয়া ছিলেন যে বলিতে পারেন এই বিভাগ প্রকৃতপক্ষে তাঁহারই সৃষ্টি। তিনি যে যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রবর্তন করিয়া গিয়াছেন সেই অনুযায়ীই আজিও পর্যবেক্ষণ ও গণনা চলিতেছে। তিনি অবসর গ্রহণ করিয়া এক্ষণে বিলাতে অবস্থান করিতেছেন। হিমালয়ের এই রাজশিখরটিকে তাঁহার নামে অভিষিক্ত করিলে তিনি এক পুলক-চমক পাইবেন। ভাবিয়া দেখুন, ইহাই হইবে সেই কৰ্মবীরের প্রতি আমাদের সমবেত উপহার। পীক নাম্বার ফিফটিনের নাম হউক জর্জ এভারেস্ট।

উপস্থিত সাহেববৃন্দ এই আলোচনার পক্ষে বিপক্ষে নানা প্রকার আলোচনা শুরু করে দিল। রাধানাথের মনে হলো নামের ব্যাপারটির দ্রুত নিষ্পত্তি করা দরকার। একবার কেউ মহারানীর নাম উত্থাপন করলেই বিপদ, কারণ, তাহলে আর তা প্ৰত্যাহার করা যাবে না। মহারানীর নামের বিপক্ষে কে যাবে?

কর্নেল অ্যান্ড্রু ওয়া বেশ কিছুদিন জর্জ এভারেস্টের অধীনে কাজ করেছেন, তাঁর সম্পর্কে ওয়ার শ্রদ্ধা আছে।

তিনি কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন, উত্তম, শিকদার, তোমার প্রস্তাবই গ্রহণযোগ্য মনে হয়। এই নামে আমাদের দফতরটিই সম্মানিত হইবে। তবে আমি একটু সংশোধন করিতেছি, জর্জ এভারেস্ট নহে, সুদ্ধ এভারেস্ট। এই এভারেস্ট শব্দটির মধ্যেই এমন একটি ব্যঞ্জনা রহিয়াছে যাহা এই চিরকালের সর্ববৃহতের পক্ষে বেমানান হইবে না।

এরপর কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন সংবাদপত্রে এই কাহিনী নানাভাবে প্রচারিত হওয়ায় দেশের লোক প্রথম রাধানাথ শিকদারের নাম জানলেন। ডিরোজিওর শিষ্যদের মধ্যে অনেকেই এখন নানাপ্রকার কল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত বলে দেশবাসী তাদের চেনে। কিন্তু রাধানাথ সেই সময়কার হিন্দু কলেজের উজ্জ্বল ছাত্র হয়েও জনসাধারণের অগোচরে ছিলেন, এবার প্রকাশ্যে এলেন।

অবশ্য ইংরাজী সংবাদপত্রগুলি একজন দেশীয় লোকের কৃতিত্বের কথা প্রকাশ করতে কুণ্ঠাবোধ করলো যথারীতি। প্ৰায় কোনো ইংরাজী সংবাদপত্রেই রাধানাথের নাম উল্লেখ করা হলো না, কোথাও বলা হলো বেঙ্গলি চীফ কমপিউটার, কোথাও বা ক্লার্ক আর কোথাও বা শুধু এ বাবু।

 

রাধানাথের বন্ধুরা একদিন রামগোপাল ঘোষের আবাসে মিলিত হলেন রাধানাথকে সম্বর্ধনা জানাবার জন্য। এসেছেন বর্ধমানের ডেপুটি কালেকক্টর রসিককৃষ্ণ মল্লিক, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় এখন কলকাতার অ্যাসেসমেন্ট কালেক্টর। সুযোগ্য শিক্ষক রামতনু লাহিড়ী, কলকাতার প্রধান সরকারি গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক প্যারিচাঁদ মিত্র, তারাচাঁদ চক্রবর্তী বর্ধমান রাজের মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে সদ্য চলে এসেছেন কলকাতায়, বাক্ষ্মী ও সাংবাদিক হিসেবে তিনি সুপরিচিত, এছাড়া এসেছেন মদনমোহন তর্কালঙ্কার প্রমুখ আরও অনেকে।

ইয়ং বেঙ্গলের দল প্ৰবীণ হয়ে অনেকেই সুরাপান ত্যাগ করেছেন এখন। কিন্তু রামগোপাল করেননি, বরং তাঁর যেন কিঞ্চিৎ মাত্রা বেড়েছে। রামগোপালের মুখে অস্থিরতার ছাপ, তাঁর ভেতরে ভেতরে কিছু একটা জ্বালা রয়ে গেছে মনে হয়। রামগোপাল ব্র্যাণ্ডি ও শ্যাস্পেনের বোতল খুলে দিলেন, সুগন্ধ চা-ও প্রস্তুত হলো, যার যে-রকম অভিরুচি গ্ৰহণ করবেন।

রাধানাথ অতিশয় গো-মাংস ও সুরার ভক্ত, তাঁর বিশাল বলবান শরীরটি রক্ষার জন্যও এইসব জিনিসের প্রয়োজন। বন্ধুদের মধ্যে রাধানাথ প্রায়ই মত ব্যক্ত করেন যে, হিন্দুদের মধ্যে গো-মাংস আহারের প্রচলন করাতে না পারলে হিন্দু সমাজের কোনোদিন উন্নতি হবে না। গোখাদকরা কক্ষনো অন্য কারুর চোখ রাঙানী সহ্য করে না। এবার কলকাতায় ফিরে এসে রাধানাথ অবশ্য বিস্মিত হয়ে দেখেছেন যে তাঁর বন্ধুরা অনেকেই এখন আর গো-মাংস ভক্ষণের ব্যাপারে উৎসাহী নয়। যারা একসময় প্রকাশ্যে গোরুর মাংস খেয়ে হাড় ছুঁড়ে দিত প্রতিবেশীদের বাড়ির ছাদে, তারা কেউ কেউ এখন আর গো-মাংসের নামও উচ্চারণ করে না। এমনকি প্যারীচাঁদ তাঁকে দুএকবার বলেছেন, না হে রাধু, ও নিয়ে আর বেশী বাড়াবাড়ি করো না, হিন্দুরা গো-মাংসের সংস্কার কিছুতে কাটিয়ে উঠতে পারবে না।

সেদিন অবশ্য রাধানাথের জন্য প্রচুর গো-মাংসের কাবাবও রাখা হয়েছে। ভোজনরসিক রাধানাথ তাতেই সন্তুষ্ট, ভণ্ড হিন্দুরা যত খুশী পাঠার মাংস খেয়ে ব্যা ব্যা করুক, তাঁর নিজের পছন্দ মতন খাদ্য পেলেই হলো।

আলাপচারি যখন বেশ জমে উঠেছে, তখন রামগোপাল একবার ক্ষুব্ধ স্বরে বললেন, কিন্তু আমাদের রাধা যে এতবড় একটা কাজ করলে, সরকার তার স্বীকৃতি দিলেন কোথায়? তাকে কি একদিন পাবলিক রিসেপশন দেওয়া উচিত কর্ম হতো না? যে কীর্তি ইতিহাসের পাতায় স্থান পাবে তার জন্য কোম্পানির ডিরেক্টরগণ তাকে কোনো পুরস্কার দিতে পারলে না? অন্য দেশ হলে ওকে মাথায় তুলে নাচতো।

রাধানাথের চেহারাটি বিশাল হলেও স্বভাবে বড় লাজুক। বিশেষত নিজের বিষয়ে কোনো আলোচনা শুনতে তিনি লজ্জা  পান।

তিনি বললেন, না, না, তেমন কিছু নয়। তোমরা বেশী বাড়াচ্চো।

প্যারীচাঁদ বললেন, তেমন কিছু নয় কেন? তুমি সেদিনকে যে আমায় বোঝালে, ট্রিগোনোমেট্রির এমন জটিল গণনা করার ক্ষমতা কজন সাহেবের আছে? এদেশে কারুর নেই। তোমায় নিশ্চয়ই কোম্পানির তরফ থেকে শিরোপা দেওয়া ন্যায্য ছিল।

রাধানাথ বললেন, ঐ তো কোম্পানি আমায় আলিপুরের আবহাওয়া অফিসের সুপারিন্টেন্ডেন্ট-এর পদ দিয়েছে।

রামগোপাল বললেন, তাতে কী হলো, তাতে শুধু তোমার অতিরিক্ত কাজ বাড়লো। তাতে কী তোমার পদোন্নতি হলো?

এবার রসিককৃষ্ণ মল্লিক বললেন, ভায়া, ওর থেকে আর বেশী আশা করো না। কালো চামড়া কালো চামড়াই। সাহেবরা যে পদে কাজ করে, সে পদে কোনোদিন কালো চামড়াদের বসাবে না। দ্যাকো না, আমি সেই যে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটিতে ঢুকেছিলাম, এখনো সেখানেই ঘষচি। আর নতুন চাকরে সাহেবরা টকাটক করে আমার মাথা টপকে যাচ্চে।

রামগোপাল বললেন, এ অবিচারের প্রতিবাদ হওয়া দরকার। এ বিষয়ে একটি সভা ডেকে রেজোলিউশান নিলে কেমন হয়?

রসিককৃষ্ণ বললেন, তাতে কোনো সুরাহা হবে বলে আমি মনে করি না। আমাদের চাকরি-বাকরির উন্নতিকল্পে মিটিং না ডেকে আমরা বরং দেশের উন্নতিকল্পে আরও কিছু কাজ করলে পারি। সবচে আগে প্রয়োজন দেশের মানুষের মধ্যে অবিচারবোধ জাগ্রত করা।

রাধানাথ বললেন, তুমি এই কথাটা বহোৎ বিলকুল সাচ্চা বলছে হে রসিক। এবার ফিরে এসে যেন দেকচি, জাত, ধম্মো, হিন্দুয়ানি নিয়ে ফিন হামেশা বাড়াবাড়ি শুরু হয়েচে। লোকের মন আবার যেন পিছাড়ি হটচে!

দক্ষিণারঞ্জন বললেন, হীরা বুলবুল নামের বারাঙ্গনার ছেলেটিকে হিন্দু কলেজে ভর্তি করা উপলক্ষে রক্ষণশীলরা আবার নতুন করে ঘোঁট পাকাতে শুরু করেচে।

প্যারীচাঁদ বললেন, সে ছেলেটিকে তো আবার তাড়িয়েও ছেড়েচে এর মধ্যে শুনচি।

রামগোপাল রাধানাথের বাহু চাপড়ে বললেন, রাধা, তুমি নেচারের মধ্যে ম্যাগনিফিসেণ্টকে আবিষ্কার করেচো, আমাদের উচিত হবে আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে কত বৃহৎ, কত মহৎ রয়েচে, তা খুঁজে বার করা।

রাধানাথ বললো, ঠিক। আমায় তোমরা রাস্তা বার্তাও, আমি সেদিকে কাজ করতে জরুর রাজি আছি।

প্যারীচাঁদ বললেন, অনেকে মাথা তোলার সুযোগই পাচ্ছে নাকো, সেইজন্যেই বোঝা যাচ্ছে না, তাদের আসল দৈর্ঘ্য কতখানি।

রামগোপাল বললেন, আমাদের এখন রাজনৈতিক অধিকারের জন্য আন্দোলন করা দরকার।

রসিককৃষ্ণ বললেন, ওপথে এখনো যাবার সময় হয়নি, এখনও সামাজিক আন্দোলনেই বেশী কাজ হবে। কী বলো হে, রামতনু?

স্বল্পভাষী রামতনু বললেন, তোমার কথাই ঠিক।

রাধানাথ রামগোপালকে বললেন, তুমি তো এ যুগের ডিমস্থিনিস, তুমি চেষ্টা করলে বোহুৎ কুছ করতে পারবে।

রামগোপাল বললেন, ডিমস্থিনিস-এর সঙ্গে যদি লেভিয়াথান যোগ দেয়, তাহলে ধুন্ধুমার হয়ে যাবে। কী বলো?

রাধানাথ বললেন, বোহুৎ খুব। ম্যায় তৈয়ার।

প্যারীচাঁদ বললেন, এই রাধুটাকে নিয়ে আর পারা গেল না। বোহুৎ কিছু আর বোহুৎ খুব ওর মুখ থেকে আর ছাড়ানো গেল না কিছুতেই।

হাসির রোলে হাওয়া একটু হালকা হয়ে গেল।

এক সময় রাধানাথ রামগোপালকে জিজ্ঞেস করলেন, ব্রাদার, আগেরবার যখন আসি, তখন তোমার বাড়ির সামনে একটা ইনসিডেন্ট হয়েছেল। সেই যে এক ছোট লেড়কিকে সেইভ করা হলো, তা সেই লেড়কিটির এখন কী অবস্থা?

রামগোপাল বললেন, সে রয়ে গ্যাচে আমারই বাড়িতে। তার আত্মীয়-স্বজনরা কেউ তাকে ফেরৎ নিতে আসেনি। কে জানে, সবাই তো ভাবে আমি ম্লেচ্ছ, আমার বাড়িতে রাখায় তার বুঝি জাত গ্যাচে। আমার পত্নী মেয়েটার নাম দিয়েছিলেন কুড়ানী, আমি নাম রেখিচি নীপবালা। খানিকটা লেখাপড়া শিকিয়েওচি, কিন্তু কী হবে, সারা জীবন কষ্টই পাবে। আমার সাধ্য থাকলে আমি মেয়েটির বিয়ে দিতুম।

রাধানাথ উৎসাহের সঙ্গে বললেন, দেও না। আমরা সবাই থোড়া কুচ সাবক্রিপশান দিয়ে মেয়েটাকে উদ্ধার করে দিই।

রামগোপাল বললেন, টাকার জন্য কী আটকে আছে নাকি? টাকা থাকলেই বিয়ে দেওয়া যায়?

দক্ষিণারঞ্জন বললেন, কেষ্ট বলেচে, যদি মেয়েটিকে খৃষ্টান করতে রাজি হও, তবে ওর একটা হিল্লে হয়ে যেতে পারে।

রাধানাথ বললেন, বিয়ে-শানীর জন্য আমাদের অঞ্চলাদের কেরেস্তান হতে হবে, ইয়ে বরং তাজ্জব কী বাৎ!

তরামগোপাল বললেন, হিন্দু বিধবার বিয়ে দেওয়া যায় না, সে অক্ষতযোনি হলেও একবার বিধবার বিধবা থাকাই নিয়তি। তোমাদের পশ্চিমে কী হয় জানি না, এই বঙ্গে আর কিছু সম্ভব নয়।

প্যারীচাঁদ বললেন, শুনতে পাই যে সংস্কৃত কলেজের ঈশ্বর বিদ্যেসাগর নাকি বিধবা বিবাহ শাস্ত্ৰসিদ্ধ করবার জন্য উঠে পড়ে লেগেচেন।

রামগোপাল বললেন, সে ব্ৰাহ্মণ আর একলা কী করবেন? কতটুকু পারবেন দেশ সুদ্ধ মূঢ়ের দলের মন ফেরাতে?

মদনমোহন বললেন, সে বামনার জেদ তোমরা জানো না। একেবারে কচ্ছপের কামড়ের মতন, একবার কিছুতে লাগলে আর ছাড়ে না। শিকদের মশায়, এ ব্ৰাহ্মণও একখানা পাহাড়ের চুড়া, এখনো কেউ মেপে দেখেনি।

দক্ষিণারঞ্জন বললেন, আমার ভয় হয়, বিদ্যেসাগর মশাইয়ের ওপর কেউ হামলা না করে। অকাল কুম্মাণ্ডের দল যদি ওনার কোনো শারীরিক ক্ষতি করে বসে?

প্যারীচাঁদ বললেন, সতীদাহ বিলের সময় রামমোহনকেও অনেকে মারবে বলে শাসিয়েছিল।

রামগোপাল খানিকটা আচ্ছন্নভাবে বললেন, সে সময় কিন্তু আমরাও রামমোহনের পাশে গিয়ে অনেকে দাঁড়াইনি। বাল্যের চাপল্যে আমরা রামমোহনের সুদূর প্রসারী আদর্শের মর্ম বুঝিনিকো, অনেক তুচ্ছ ব্যাপারে মত্ত ছিলুম।…

তারাচাঁদ বললেন, দেওয়ানজীর পর এই বিদ্যাসাগরই এক ভ্ৰম নিরসনের জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন!

রাধানাথ বললেন, এই ঈশ্বর পণ্ডিতের কথা আমি আগেরবার এসেও শুনিচি। তাহলে ভাই আমরা এতজন রয়িচি, আমরাও ওনাকে মদ্যুৎ দিই না কেন?

তারাচাঁদ বললেন, রাধানাথ এটি বেশ কথা বলেচে। ঈশ্বরচন্দ্ৰ বিদ্যাসাগরের চেষ্টায় আমাদেরও পূর্ণ সমর্থন জানানো দরকার।

রাধানাথ বললেন, তাহলে এসো না ভাই, এইক্ষণেই আমরা একটি শপথ লই, এই ঈশ্বর পণ্ডিত বিধবা বিবাহ দেবার চেষ্টা করলে আমরা ইয়াং বেঙ্গলের দল সকলে তেনার পাশে গিয়ে খাড়া হয়ে যাবো।

সকলেই হৈ হৈ করে যার যার হাতের সুরার পাত্র কিংবা চায়ের কাপ তুলে নিয়ে একসঙ্গে সেই মর্মে শপথ বাক্য উচ্চারণ করলেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *