বাবু রামগোপাল ঘোষের গৃহে সন্ধ্যাকালে তাঁর বন্ধুরা এসেছেন। প্রায় প্রতি সায়াহ্নেই দু-একজন বন্ধু রামগোপাল ঘোষকে সান্নিধ্য দিতে আসেন, কিন্তু আজ অনেকদিন বাদে একসঙ্গে অনেক বন্ধুর পুনর্মিলন হলো।
এক সময় এঁরা ইয়ং বেঙ্গল নামে চিহ্নিত হয়ে প্রভূত অখ্যাতি ও কিছু খ্যাতির অধিকারী হয়েছিলেন, এঁরা ছিলেন রক্ষণশীল সমাজের চক্ষুশূল, আবার কিছু কিছু যুবক এদের অনুকরণ করতেও শুরু করেছিল। ডিরোজিও শিষ্য এই ইয়ং বেঙ্গল দল প্ৰথম প্ৰথম উন্মাদনা বশে নানা রকম উৎকট কাণ্ড করতেন। রাস্তায় কোনো টিকিধারী ব্ৰাহ্মণ দেখলে তাকে তাড়া করতে করতে বলতেন, আমরা গোরু খাই গো, গোরু খাই! সেই যুবকদের ছোঁয়ায় জাত চলে যাবার ভয়ে ব্ৰাহ্মণরা মুক্তকচ্ছ হয়ে দৌড়োতো। এই যুবকরা কখনো নিজেদের বাড়ির ছাদে উঠে। চিৎকার করে প্রতিবাসীদের জানাতো, এই দ্যাখো আমরা মুসলমানের ছোঁয়া জল খাচ্ছি। এই দ্যাখো গো-মাংস! প্রমাণস্বরূপ তারা মাংসের হাড় ছুঁড়ে ছুঁড়ে দিত চতুর্দিকে।
সে সব অনেকদিন আগেকার কথা। ইয়ং বেঙ্গল দলের কেউই আর এখন যুবক নন, তাঁরা এখন মধ্যবয়স্ক, সুস্থির দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন নাগরিক। সকলেই জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত, কেউ কেউ সরকারী উচ্চকৰ্মে নিযুক্ত, কেউ বা ব্যবসায়ে ভাগ্য ফিরিয়েছেন। তবে প্রথম যৌবনের সেই বিদ্রোহের অগ্নি এখনো একেবারে নিবপিত হয়নি, তা যেন এখন অনেকটা প্ৰদীপের স্নিগ্ধ শিখা হয়ে এদের বক্ষে দেদীপ্যমান। প্রতিটি সামাজিক আন্দোলনেই এখনো এদের অনেককে এগিয়ে আসতে দেখা যায়।
এই গোষ্ঠীর মধ্যে বাবু রামগোপাল ঘোষ যেন মুকুটহীন রাজা হিসেবে স্বীকৃত। ইংরেজি শিক্ষিতদের মধ্যে তাঁকে প্রধান পুরুষ হিসেবে গণ্য করে লোকে মুখে মুখে তাঁর নাম দিয়েছে এজু-রাজ। সাহেবদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ইংরেজি বক্তৃতার সময় তাঁর মুখ দিয়ে যেন আগুনের ফুলঝুরি ছোটে। ইংরেজরাও তাঁর সম্পর্কে বলে, এক নতুন ডেমস্থেনিস।
রামগোপাল ঘোষ অতিশয় বন্ধুবৎসল মানুষ। এক সময় তিনি ছিলেন দরিদ্রের সন্তান, এখন বেসরকারী ইংরাজদের সঙ্গে যুগ্মভাবে বাণিজ্য করে তিনি প্রভূত ঐশ্বর্যশালী হয়েছেন। কিন্তু বন্ধুদের আপদে কিংবা মনস্তুষ্টির জন্য তিনি অর্থব্যয় করতে কাপণ্য করেন না। তাঁর বাড়ির সান্ধ্য আসরে শেরি ও শ্যামপেন থাকে অপব্যাপ্ত, কিন্তু এখানে কেউ নেশাগ্ৰস্ত হয়ে কুৎসিত আচরণ করে না, প্রত্যেকের নিজস্ব পরিমাপ আছে। সুরাপান এই আসরের মুখ্য ব্যাপার নয়, পারস্পরিক মত বিনিময়ের মাধ্যমে আত্মোন্নতি ও জ্ঞান উপার্জনই এঁদের লক্ষ্য।
কার্য উপলক্ষে বন্ধুরা অনেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছেন, নিয়মিত দেখা হবার আর উপায় নেই, আজ অনেকদিন পর কয়েকজন প্রবাসী বন্ধুকে পাওয়া গেছে। রসিককৃষ্ণ মল্লিক এখন বর্ধমানের ডেপুটি কালেকটর, রামতনু লাহিড়ী কৃষ্ণনগর কলেজের শিক্ষক। সবচেয়ে বেশী দূরে থাকেন রাধানাথ সিকদার, তিনি দেরাদুনে সরকারের জরিপ বিভাগে একজন উচ্চপদস্থ কর্মচারী। পিতার গুরুতর ব্যাধির খবর পেয়ে রাধানাথ চলে এসেছিলেন কলকাতায়। তাঁর পিতা এখন একটু সুস্থ তাই তাঁর অতি ঘনিষ্ঠ সুহৃদ প্যারীচাঁদ মিত্রের সঙ্গে এসেছেন রামগোপাল ঘোষের বাড়ির সান্ধ্য আসরে।
বহুদিন পর বন্ধুদের কাছে এসে রাধানাথ খুশী হয়েছেন। যতখানি, বিস্মিত হয়েছেন তার চেয়ে অনেক বেশী। এতখানি পরিবর্তন তিনি কল্পনাই করতে পারেননি। তিনি সবচেয়ে বেশী অবাক হয়েছেন এদের মুখের ভাষা শুনে। তাঁদের ছাত্রবয়েসে তাঁরা নিজেদের মধ্যে সব সময় ইংরাজিতে কথা বলতেন। বাংলা ভাষার কোনো স্থানই ছিল না প্ৰায়। নেহাৎ বাড়িতে বাবা মায়ের সঙ্গে বাংলায় কথা বলতে হতো, কিন্তু জ্ঞান, চিত্তশুদ্ধি বা রসাস্বাদনের জন্য বাংলা ছিল অপাংক্তেয়। প্রবাসে থাকার সময় রাধানাথ বাংলা ভাষাকে জীবন থেকে বাদই দিয়ে ফেলেছিলেন, এবার বাড়িতে এসে বাবার সঙ্গে কথা বলার সময় তাঁর মুখ দিয়ে ভাঙা হিন্দী ও ইংরেজি বেরিয়ে আসছে বারবার। চেষ্টা করে বাংলা বলতে গেলেও সব কথা মনে আসে না। প্যারীচাঁদ এই নিয়ে তাঁকে ঠাট্টা করছিলেন! প্যারী, রামগোপাল, রসিক এরা ইংরেজিতে বিখ্যাত কৃতবিদ্য, অথচ আজ তাঁদের মুখেই বাংলা ভাষা? হঠাৎ এ দেশটার হলো কী, আবার কী লোকে ইংরাজি ভুলে গিয়ে অশিক্ষার অন্ধকারে ড়ুবে যাবে?
একটি গোল টেবল ঘিরে বসেছে বন্ধুরা। প্রত্যেকের কেদারার পাশে রয়েছে ধূমায়িত আলবোলা। ভূত্যেরা টেবিলের ওপর সাজিয়ে দিয়ে গেছে গেলাস ও বিভিন্ন প্রকার সুরার বোতল, যার যেমন রুচি, সে নিজে ঢেলে নেবে। শুধু রামগোপালের সামনে একটি বিচিত্র আকৃতির পোর্সিলিনের পাত্ৰ। পত্রটি গোল, তার একদিক দিয়ে হাতির শুড়ের মতন একটি ছোট্ট নল বেরিয়ে আছে। সেখান থেকে অল্প অল্প ধোঁয়া বেরুচ্ছে। সকলেই কৌতূহলী হয়ে সেদিকে তাকিয়ে।
রামগোপাল মৃদু হেসে বললেন, ইউ পোর ইয়োর ড্রিঙ্কস, মাই ডিয়ার ফেলোজ, আমি আগে একটু উষ্ণ পানীয় পান করবো। ইদানীং এইটি পান করা আমার অভ্যাস হয়ে গেচে।
একটি হাতলযুক্ত গোল পোর্সিলিনের বাটিতে রামগোপাল খানিকটা কালো রঙের উষ্ণ তরল পদার্থ ঢাললেন, তারপর তার সঙ্গে তিন চামচ দুধ ও তিন চামচ চিনি মিশিয়ে গুলতে লাগলেন। মিশ্রণ কার্যটি সমাপ্ত হলে রামগোপাল বাটিটি সাবধানে ওষ্ঠের কাছে এনে সুরুৎ করে ছোট্ট একটি চুমুক দিয়ে তৃপ্তির সঙ্গে বললেন, আহ!
রাধানাথ সিকদার আর কৌতূহল চাপতে না পেরে বলে উঠলেন, হোয়াট ইজ দ্যাট স্ট্রেঞ্জ কনককশান?
রামগোপাল পরিহাসের সঙ্গে বললেন, দিস ইজ মাই ফেভারিট পয়জন। একটু স্বাদ নিয়ে দেখবে নাকি?
রসিককৃষ্ণ বললেন, দিস ইজ টি। রাধানাথ, তুমি চায়ের কথা শোনো নাই? আগে চীন দেশ থেকে এ বস্তু আসতো, এখন আমাদের আসামেই যথেষ্ট হচ্চে!
রাধানাথ অনেকদিন দেশ ছাড়া বলে চা কথাটা জানেন না, তবে টি-এর কথা কাগজে-পত্রে পড়েছেন, কোনোদিন চর্মচক্ষে দেখেননি। তাঁদের দেরাদুনে নানা রকম মদ্যের ছড়াছড়ি, সেখানে উষ্ণ পানীয় বলতে চলে শুধু ভেড়ার দুধ।
প্যারীচাঁদ মদ্যপান করেন না, তাঁর আসক্তি ধূমপানের দিকে। তিনি বললেন, আমি একটু চেখে দেখতে রাজি আছি। ইংরেজ মহলে আজকাল চা পান খুব চলচে শুনিচি।
রামতনু বললেন, আমি হেয়ার সাহেবকেও ঐ জিনিস পান করতে দেকতুম। তবে ওতে মাদকদ্রব্য বোধহয় কিছু নেই। কারণ, হেয়ার সাহেব নেশা ভাঙ করার বিরোধী ছিলেন।
শিবচন্দ্র বললেন, নেশা না হলে আর ও জিনিস পান করা কেন?
রামগোপাল দ্বিতীয় একটি বাটিতে প্যারীচাঁদের জন্য চা ঢালতে ঢালতে বললেন, নেশা হয় বৈকি। এর এক চুমুকেই পঞ্চেন্দ্ৰিয়ে একটা অ্যালাটিনেস এসে যায়। লাইক কিসিং এ ড্যামজেল…অ্যাণ্ড ইউ ওয়ান্ট টু কিস এগেইন…এই নাও প্যারী, আজ আমি তোমায় এই নতুন সুধারসে দীক্ষা দিলুম।
প্যারীচাঁদ প্রথমে খানিকটা ইতস্তত করলেন। বাটিটি হাতে নিয়ে তাকালেন একবার বন্ধুদের দিকে। ঠোঁট পুড়ে যাবার ভয়ে ফু দিলেন কয়েকবার। তারপর কোনোক্রমে একটি চুমুক দিয়েই মুখ বিকৃত করে ফেললেন। পানীয়টি তাঁর পছন্দ হয়নি। রামগোপাল কোন সুখে এ জিনিস খাচ্ছেন? রামগোপাল তাঁর সঙ্গে কৌতুক করার জন্য সত্যিই বিষাক্ত কিছু দেননি তো? রামগোপালের কথাই আলাদা, তিনি বেপরোয়া ধরনের মানুষ, কোনো কিছুতেই ভয় পান না। প্রায়ই তিনি কথায় কথায় বলেন, আই বেয়ার এ চার্মড্ লাইফ।
রামগোপাল জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্রাদার, কেমন লাগলো?
প্যারীচাঁদ বললেন, একটু তিক্ত, একটু কষায়।
বন্ধুরা সবাই হো হো করে হেসে উঠলেন।
রামগোপাল প্যারীচাঁদের বাটিতে আরও খানিকটা চিনি মিশিয়ে দিয়ে বললেন, এবার দ্যাখো তো!
প্যারীচাঁদ সভয়ে আবার চুমুক দিলেন। এবার তাঁর মুখ হাসিতে ভরে গেল, তিনি বললেন, বাঃ, দিব্য অপূর্ব, স্বাদটা যেন একেবারে বদলে গেল!
রামগোপাল জিজ্ঞেস করলেন, কেমন, শরীরে বেশ একটা চনমনে ভাব হয়নি?
প্যারীচাঁদ বললেন, বিলক্ষণ!
রামগোপাল আবার জিজ্ঞেস করলেন, মনে হয় না। আবার চুম্বন করি, আবার, আবার?
প্যারীচাঁদ বললেন, নিশ্চয়! ভাই আমি বলি কি, এবার থেকে আমরা এই বস্তুই পান করবো। শুধু শুধু সুরা পান করে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করা কেন? সর্বনাশিনী সুরা যে এ দেশটাকে ছারখার করে দিচ্চে।
বন্ধুদের মধ্যে দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় এতক্ষণ নীরব ছিলেন। সম্প্রতি বর্ধমান রাজ পরিবারের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা হয়েছে, আইন বিষয়ক পরামর্শের উপলক্ষে সেখানকার বিধবা রাণী তাঁকে ঘন ঘন ডাক পাঠাচ্ছেন। মাঝে মাঝে সেই অপরূপ সুন্দরী রাণী এমন বিহুলভাবে চেয়ে থাকেন তাঁর দিকে যাতে মনে হয় শুষ্ক আইনের চেয়েও আইন উপদেষ্টা মানুষটির প্রতিই তাঁর আকর্ষণ বেশী। সেই অপ্সরাতুল্য রমণীর দিকে দৃষ্টিপাত করে দক্ষিণারঞ্জনেরও মস্তক ঘূর্ণিত হয়। দূরে থাকলেও সর্বক্ষণ মনে পড়ে সেই মুখ। একথা আর কারুকে বলা যায় না।
দক্ষিণারঞ্জন ফটাস শব্দে শ্যাম্পেনের কর্ক খুলে নিজ পাত্রে খানিকটা ঢেলে বললেন, তোমরা চা পান করতে চাও করো, আমি এ জিনিসে মাজেচি, আমি ছাড়াচি না। সুরা পানে সর্বনাশ হয় মুখদের। বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা সুরা পান করলে তাদের চিন্তাশক্তির আরও বিকাশ হয়।
রাধানাথ বললেন, আই এগ্রি উইথ ইউ, দক্ষিণা! এই ফিলদি লুকিং লিকুইড নিয়ে তুমলোগ কিউ ইতনা শোর মচাতা, দ্যাট আই ক্যান নট আন্ডারস্ট্যান্ড!
শিবচন্দ্র জিজ্ঞেস করলেন, শোর মচাতা? তার মানে কী ভাই?
প্যারীচাঁদ বললেন, আমাদের রাধানাথ বাংলা একেবারে ভুলে গ্যাচে। বাবাকে বলে পিতাজী আর জলকে বলে পানি।
রাধানাথ রাগতভাবে বললেন, অ্যাণ্ড ইউ-তোমরা-তোমরা, তোমরা যে আচানক বাংলা-লাভার হয়ে যাবে, হাউ কুড আই নো দ্যাট? ইন আওয়ার কলেজ ডেইজ ইউ অল ইউজড টু হেট দিস ল্যাঙ্গোয়েজ।
প্যারীচাঁদ বললেন, ভাই, তারপর-এই সময়ের মধ্যে যে বাংলা ভাষা অনেক বদলে গ্যাচে-আমরা তখন ভাবতুম বাংলা ভাষায় কোনো মহৎ ভাব প্রকাশ করা যায় না-কিন্তু এখন এই ভাষায় এমন অনেক ভালো ভালো লেখক এয়েচেন।
রামগোপাল বললেন, তুমি তত্ত্ববোধিনী কাগচ দেখোচো? আমি আগে কক্ষণো বাংলা পড়তুম না, আমার ঘৃণা হতো, কিন্তু একদিন একখানা তত্ত্ববোধিনী কাগচ আসবার পর আমি চমকিত হয়ে গেচি। তুমি দেখবে, দেখবে সেই কাগচ?
রসিককৃষ্ণ বললেন, দেবেন্দ্র ঠাকুর, অক্ষয় দত্ত এঁরা উচ্চ চিন্তার কথা লিকচেন বাংলা ভাষায় সে প্রোজ কালাইল বা মিলের চেয়ে কোনো অংশে হীন নয়।
প্যারীচাঁদ বললেন, কেন, ঈশ্বরচন্দ্ৰ বিদ্যাসাগর নামে এক বামুন পণ্ডিত একখানা বই লিকেচোন, সে তো। রীতিমতন সাহিত্য হে। রামগোপাল তোমার কাচে নেই। সে বইখানা? একবার রাধানাথকে দেখাও না।
রামগোপাল তখুনি উঠে গিয়ে নিয়ে এলেন সেই বই। বেতাল পঞ্চ বিংশতি, ঈশ্বরচন্দ্ৰ বিদ্যাসাগর প্ৰণীত। বইখানা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখলেন রাধানাথ ও অন্যান্য বন্ধুরা। প্যারীচাঁদ বললেন, আমি এখানা থেকে একটু পড়ে শোনাবো? শুনবে?
প্যারীচাঁদ পড়তে লাগলেন, ধৰ্মপুরে গোবিন্দ নামে ব্ৰাহ্মণ ছিলেন তাঁহার দুই পুত্র তন্মধ্যে একজন ভোজন বিলাসী অথাৎ অন্নে ও ব্যঞ্জনে যদি কোনও দোষ থাকিত তাহা দুর্জেয় হইলেও ঐ অন্নের ও ঐ ব্যঞ্জনের ভক্ষণে তাহার প্রবৃত্তি হইত না দ্বিতীয় শয্যা বিলাসী অথাৎ শয্যায় কোনও দুর্লক্ষ্য বিঘ্ন ঘটিলেও সে তাহাতে শয়ন করিতে পারিত না এই এক এক বিষয়ে তাহাদের অসাধারণ ক্ষমতা ছিল ঈদৃশ বিস্ময়জনক ক্ষমতার বিষয় তত্ৰত্য নরপতির কর্ণগোচর হইলে তিনি তাহাদের ঐ ক্ষমতার পরীক্ষার্থে সাতিশয় কৌতূহলাবিষ্ট হইলেন এবং উভয়কে রাজধানীতে আনাইয়া জিজ্ঞাসিলেন তোমরা কে কোন বিষয়ে বিলাসী…
পড়া থামিয়ে প্যারীচাঁদ জিজ্ঞেস করলেন, কেমন, এমন সুললিত অথচ সুগভীর বাংলা ভাষা তোমরা আগে শুনোচো কি? এই ভাষা কি অবজ্ঞার বস্তু?
একমাত্র রাধানাথ ব্যতীত আর সকলেই উচ্চ প্রশংসা করলেন। দক্ষিণারঞ্জন বললেন, রচনাটি তো সুন্দর বটে। কিন্তু এমন বই কিনবে কে? বাংলা ভাষার গ্ৰন্থ ভদ্ৰশ্রেণীর লোকেরা কিনতে চাইবে কি?
প্যারীচাঁদ বললেন, আমি শুনিচি, বইটি প্রকাশ হওয়া মাত্র বেশ একটি শোরগোল পড়ে গ্যাচে। মার্সাল সাহেব ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের জন্য এই বই একশো কপি কিনে নিয়োচেন, পাঠকরাও এ বই কেনার জন্য হুড়োহুড়ি কচ্চে। লোকের মুখে মুখে রটে গ্যাচে যে এখানেই বাংলায় প্রথম সাহিত্য পদবাচ্য গ্ৰন্থ। এর লেখক ঈশ্বরচন্দ্র সম্পর্কেও লোকের দারুণ কৌতূহল।
রাধানাথ বেশ বিমূঢ় বোধ করলেন। দেবেন্দ্র ঠাকুর, অক্ষয় দত্ত, ঈশ্বরচন্দ্ৰ বিদ্যাসাগর—এইসব ব্যক্তিদের তিনি নামও শোনেননি। আগে। তবু দেবেন্দ্র ঠাকুব না হয় বোঝা গেল বিখ্যাত দ্বারকানাথের জ্যেষ্ঠ সন্তান, কিন্তু অক্ষয় দত্ত, ঈশ্বরচন্দ্ৰ বিদ্যাসাগর—এই সব অজ্ঞাতকুলশীলরা কারা?
রাধানাথ প্যারীচাঁদকে জিজ্ঞেস করলেন যে, তিনি এদের চেনেন কি না।
প্যারীচাঁদ কলকাতার পাবলিক লাইব্রেরির ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান, নবীন লেখকদের সম্পর্কে তাঁর আগ্রহ থাকবেই। তিনি বললেন, এই ঈশ্বরচন্দ্ৰ কিছুদিন সংস্কৃত কলেজের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ছিলেন, সেই সময় ওঁর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। রাগ করে এখন চাকরি ছেড়ে দিয়ে বই লিকচেন। আমি কিন্তু ওঁকে দেখেই বুঝিছিলুম, ঐ মানুষটির ভেতরে আগুন আচে। দেবেন্দ্ৰ, অক্ষয়কুমার, ঈশ্বরচন্দ্র এরা সবাই আমাদিগের চেয়ে বয়েসে ছোট, তবু আমি বলবো, এরা দেশের জন্য বড় কাজ কচ্চেন।
রামগোপাল বললেন, সে-কথা ঠিক। দেবেন্দ্ৰবাবু ব্ৰাহ্মধর্ম প্রচার করে দেশের মহাদুপকার কচ্চেন। ইয়াং ম্যানরা যে দলে দলে ক্রিশচন হচ্ছিল, তা অনেকটা বন্ধ হয়েচে।
রাধানাথ জিজ্ঞেস করলে, এই ব্ৰাহ্মধর্ম ব্যাপারটা-ক্যান ইউ এক্সপ্লেইন টু মী থরোলি? খুব শুনচি।
প্যারীচাঁদ বললেন, সে আমি তোমায় পরে বুঝিয়ে বলবো। এঁরা কুসংস্কারাচ্ছন্ন হিন্দুধর্মের ওপর একটা আঘাত হেনেচেন।
দক্ষিণারঞ্জন বললেন, সে আঘাত আমরাই কি আগে হানিনি? সব কৃতিত্ব এঁদের দিচ্চো কেন? হিন্দু গোঁড়ামির বিরুদ্ধে আমাদের রসিককৃষ্ণের চেয়ে বড় কথা এ পর্যন্ত কে বলেচে?
ছাত্রাবস্থায় রসিককৃষ্ণ মল্লিক একটি কাণ্ড বাধিয়ে কলকাতা শহরে তথা হিন্দু সমাজে দারুণ আলোড়ন তুলেছিলেন। কোনো এক মামলায় সুপ্রিম কোর্টে তাঁকে সাক্ষ্য দিতে ডাকা হয়েছিল। প্ৰত্যেক সাক্ষীকে আগে শপথ গ্রহণ করতে হয়, একজন ওড়িশা দেশীয় ব্ৰাহ্মণ একখানি তাম্রকুণ্ডে তুলসী ও গঙ্গাজল নিয়ে সাক্ষীর সামনে এনে ধরে, সাক্ষী সেটা স্পর্শ করে বলে আমি সত্য বই মিথ্যা বলিব না। রসিককৃষ্ণের সামনে সে রকম তাম্রকুণ্ড এনে ধরা হলে তিনি সেটি স্পর্শ না করে চুপ করে দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারপতি যখন জিজ্ঞেস করলেন, আপনি শপথ লইতেছেন না কেন? তখন রসিককৃষ্ণ গম্ভীর কণ্ঠে বলেছিলেন, আমি গঙ্গা জলের পবিত্রতা মানি না। ইন্টারপ্রেটার অমনি চেঁচিয়ে অনুবাদ করে জানালো, সাক্ষী বলছে, আই ড়ু নট বিলিভ ইন দি সেক্রেডনেস অব দি গ্যাঞ্জেস। অমনি আদালতে উপস্থিত হিন্দুরা কানে আঙুল দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল। হুলস্থূল পড়ে গেল শহরে, অনেকেই মনে করলো, এই বুঝি ঘোর কলি উপস্থিত, হিন্দুর ছেলে প্রকাশ্যে বলছে গঙ্গা মানে না! তাই নিয়ে সংবাদপত্ৰে কত লেখালেখি।
দক্ষিণারঞ্জনের কথা শুনে রসিককৃষ্ণ বিনীত লাজুকভাবে বললেন, সে পুরোনো কথা ছাড়ো। আমরা তো সংঘবদ্ধভাবে হিন্দু ধর্মের সংস্কারের জন্য কিছু করিনি, এনারা কচ্চেন।
অতি স্বল্পভাষী রামতনু লাহিড়ী এবার বললেন, তা ঠিক বটে, কিন্তু ব্ৰাহ্মদের একটা জিনিস আমার পছন্দ হচ্চে না। এঁরা খৃষ্টানদের খুব গালাগাল কচ্চেন। সেটি উচিত হয় না। আমরা সত্যের উপাসক। যে-ধর্মের মধ্যে যে-টুকু সত্য রয়েচে, তা গ্ৰহণ করাই ধৰ্মসম্মত। সত্যের অনুসন্ধানের জন্য সবার মন মুক্ত থাকা দরকার।
দক্ষিণারঞ্জন বললেন, খৃষ্টানরাও আমাদের কম গাল দেয় না। ওদের মতে তো হিন্দুধর্ম ধর্মই নয়।
প্যারীচাঁদ বললেন, খৃষ্টানদের মধ্যেও কুসংস্কারগ্রস্ত অনেকে রয়েচে। তাদের জবাব দিতে গিয়ে আমরাই বা কেন কুসংস্কারের আশ্রয় লবো?
রামগোপাল বললেন, ব্ৰাহ্মদের অনেক কিছুই ঠিক, কিন্তু ওনারাও তো জাতির পতি ছাড়েননি। সবাই এক ধর্মের উপাসক, অথচ কেউ পৈতেধারী, কেউ বেদ পাঠে অনধিকারী, এ আবার কেমন কথা?
রামতনু বললেন, ওনারা তত্ত্ববোধিনী কাগচে লিকচেন যে বেদ অভ্রান্ত ঈশ্বর বাণী, অথচ অনেকেই তা মনে মনে বিশ্বাস করেন না। এ তো কপটতা। এই জন্য আমি আর তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার গ্রাহক রবো না ঠিক করিচি।
রামগোপাল বললেন, তনু, তনু, তুমি এত উত্তেজিত হচ্ছে কেন? তত্ত্ববোধিনীতে পাঠ্য বিষয় আরও অনেক কিছু থাকে।
রসিককৃষ্ণ বলেন, এসব আলোচনা থাক। এবার ডেভিড হেয়ারের স্মৃতিসভায় কে কে বক্তৃতা দেবেন, তা ঠিক করে ফেলো। ১লা জুন তো এসে গেল। রাধানাথ, তুমি যখন এখানে আচে, তুমিই এবার কিছু বলো না!
রাধানাথ বললেন, স্পীচ কি বাংলায় ডেলিভার কত্তে হবে নাকি?
প্যারীচাঁদ হেসে বললেন, না, না, তুমি ইংরেজিতেই বলে। কিন্তু বাংলাটা এবার শিখে নাও। ইংরেজি শিক্ষিত ব্যক্তিরা এখন আর বাংলাকে অবজ্ঞার চোখে দেখে না। এ দেশের শিক্ষা বিস্তারের জন্য বাংলা ভাষাকেই অবলম্বন কত্তে হবে। বিশেষত যদি স্ত্রীলোকদের শিক্ষা দিতে হয়।
রাধানাথ চমকে উঠে। জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি ফিমেল এড়ুকেশানের কথা থিংক কচ্চো? এ দেশে তা পসিবল?
দক্ষিণারঞ্জন বললেন, কেন সম্ভব নয়? নারীদের আমরা কতকাল অন্ধকারে রাখবো?
এমন সময় গৃহের বাইরে পথে একটা বিষম হট্টগোল শোনা গেল। নানান কণ্ঠের উত্তেজিত আওয়াজ ছাড়িয়েও শোনা যাচ্ছে কয়েকটি কণ্ঠের কান্না। কৌতূহলী হয়ে সকলে এসে দাঁড়ালেন দ্বিতলের নিকটস্থ অলিন্দে।
ব্যাপারটা অবশ্য এমন কিছু অভিনব নয়। একটি মৃতদেহকে বহন করে নিয়ে চলেছে। শ্মশানযাত্রীরা। সঙ্গে অনেক লোকজন। গ্ৰীষ্মের এই মাঝামাঝি সময়ে শহরে মৃত্যুর সংখ্যা খুবই বেড়ে যায়, ওলাউঠোর প্রকোপ এই সময়ই বেশী হয়। দিনরাতই পথে শোনা যায় হরিধ্বনি, তবে সন্ধ্যার পর শ্মশানযাত্রীদের কণ্ঠে এই হরিধ্বনি পরিণত হয় গর্জনে। মাতাল ও গেজেলার নেশার দ্রব্য সংগ্রহের আশায় এ-গলি ও-গলিতে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, হ্যাঁ গা, আজ কেউ মলো? আজি কেউ মলো? আমরা শ্মশানবন্ধুরা যে বৃথা বয়ে যাচ্চি গো।
মৃতদেহের পিছনে পিছনে একটি দশ-এগারো বছরের বালিকা এক একবার মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে, কিছু লোকজন তাকে ধরে তোলবার চেষ্টা করতেই সে মৃগীরোগীর মতন ছটফটিয়ে আবার ছিটকে পড়ছে মাটিতে। বালিকাটির মুখখানি সিঁদুরে মাখামাখি। খোলা চুল ধূলোয় ধূসর। মেয়েটি আর একবার মাটিতে গড়াতেই দুজন বলশালী লোক তাকে দুদিক থেকে শূন্যে তুলে বহন করে নিয়ে চললো।
রামগোপাল এবং তাঁর বন্ধুদের ধারণা হলো যে ঐ লোকগুলি ঐ বালিকাটিকে বলপ্রয়োগ করে নিয়ে যাচ্ছে। শ্মশানের স্ত্রীলোকদের নিয়ে যাবার প্রথা তো ইদানীং আর নেই। অন্য কোনো আশঙ্কার কথা মনে পড়ে।
ওঁরা সকলে তরতর করে নীচে নেমে এলেন। বালিকাটিকে যদি জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়, তা হলে ওঁরা প্রতিরোধ করবেন। আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করা সত্ত্বেও এখনো গ্রাম থেকে মাঝে মাঝেই সতীদাহের কথা কানে আসে। কলকাতাতেও সেরকম ঘটনা বিচিত্র কিছু নয়।
রামগোপাল সেই বালিকা-বহনকারী দুই ব্যক্তির মধ্যে একজনের গতি রোধ করে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন, একে আপনারা কোথায় নিয়ে যাচ্চেন?
সেই ব্যক্তি রুক্ষ স্বরে বললো, জাহান্নামে।
তখন রামগোপালের সব বন্ধুরাও তাকে ঘিরে দাঁড়ালেন এবং ক্রুদ্ধ রাধানাথ লোকটিকে মারবার জন্য উদ্যত হলেন। তখন লোকটি বললো মশায়, করেন কী, করেন কী? এ মেয়েটি পাগল হয়ে গ্যাচে।
রামগোপাল বললেন, তোমরা আগে ওকে ছেড়ে দাও, তারপর আমি দেকচি ও কেমন পাগল।
প্যারীচাঁদ বললেন, এখুনি কোতোয়ালিতে সংবাদ দেবো!
দ্বিতীয় লোকটি বললো, আরে খেলে যা! আপনারা কী ভাবচেন আমরা ওকে জোর করে নিয়ে যাচ্চি? এ পাগলি কিছুতেই বাড়িতে রইবে না। আমরা কতবার ঠেলে ঠেলে দিয়ে এলুম—ওর স্বোয়ামী মারা গ্যাচে, বাড়িতে আর মেয়েমানুষ কেউ নেই, আমরা ওকে কী করে আটকাই বলুন!
রামগোপাল বালিকাটিকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেন শ্মশানে যাচ্চো?
বালিকাটির চোখ সত্যিই উন্মাদের মতন। সে তীব্ৰস্বরে বললো, মর্তে যাচ্চি! মর্তে! তুমি কে গা!
রামগোপাল বললেন, তুমি কেন মরবে?
মেয়েটি বললো, বেশ করবো!
শ্মশানযাত্রীর দল থেমে গেছে, আরও কিছু পথ চলতি উটকো লোক ভিড় জমিয়েছে সেখানে। আর মেয়েটি ক্ষ্যাপাটে গলায় চিৎকার করছে, আমায় ছেড়ে দাও, আমায় ছেড়ে দাও, আমি মর্বো! মর্বো!
প্যারীচাঁদ বললেন, কোতোয়ালিতে খবর দেওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। আমি যাচ্চি।
শ্মশানযাত্রীরা ভয় পেয়ে গেছে। তারা বললো, ও মশাই, আমাদের কী দোষ দোকলেন! এ মেয়ে যে নিজেই যেতে চায়। এক কাজ করুন না, আপনারা ভদ্দরলোক, এ মেয়েটিকে আপনাদেরই বাড়িতে আটকে রাখুন না হয়।
রামগোপাল বললেন, সেই ভালো। এই মেয়েটিকে আমার বাড়ির মধ্যে আনো, স্ত্রীলোকদের কাছে ওকে পাঠিয়ে দিচ্চি।
মেয়েটি কিছুতেই আসবে না। সুতরাং জোর করেই তাকে আনতে হলো ভেতরে। সে তারস্বরে চিৎকার করতে লাগলো, ওগো আমার কেউ নেই, আমায় মর্তে দাও, আমায় শেয়াল কুকুরে ছিঁড়ে খাবে, ওগো, আমায় ছেড়ে দাও।
অন্দরমহলে রেখে আসা হলো মেয়েটিকে। শ্মশানযাত্রীরা আবার নতুন উৎসাহে হরিধ্বনি তুলতে তুলতে চলে গেল।
রামগোপাল এবং তাঁর বন্ধুরা কিছুক্ষণ নীরব হয়ে রইলেন। তারপর আস্তে আস্তে দ্বিতলে উঠে এসে বসলেন টেবিলে। প্যারীচাঁদ ব্যতীত প্ৰত্যেকেই নিজের নিজের পাত্রে ঢেলে নিলেন সূরা।
প্যারীচাঁদ বললেন, রামমোহনের আনুকূল্যে সতীদাহ রদ হয়েচে বটে কিন্তু তার সুফল পাওয়া গেল কতটুকু? এই সব বালবিধবাদের ভবিষ্যৎ কী? নয় দশ বছরের বালিকারা বিধবা হয়ে সারা জীবন গলগ্রহ হয়ে থাকবে।–সেইজন্যই বলচিালুম। এদের শিক্ষার ব্যবস্থা না করলে…
রামগোপাল মুখ তুলে গম্ভীরভাবে বললেন, শুধু শিক্ষার ব্যবস্থা করলেই হবে না, এই সব বিধবাদের বিবাহেরও ব্যবস্থা করতে হবে।
দক্ষিণারঞ্জন বললেন, ঠিক কথা।
শিবচরণ বললেন, তা হলে, কি এই সব বিধবাদের ক্রিশ্চিয়ান হতে বলছো?
রসিককৃষ্ণ বললেন, ক্রিশ্চিয়ান হোক, মুসলমান হোক, এদের যে-কোনো প্রকারে বিবাহের ব্যবস্থা করা দরকার।
রামগোপাল বললেন, না, তা কেন?
শিবচরণ বললেন, হিন্দু বিধবাদের বিবাহ? সে যে অসম্ভব কথা। ব্ৰাহ্মরাও এমন সাহস করেছেন বলে তো শুনিনি। এমন কথা সমাজে কে উত্থাপন করবে? আমরা এ বিষয়ে অগ্রসর হতে পেরেচি কতটুকু?
রামগোপাল বললেন, তা জানি না। তোমরা আজ স্বচক্ষে দেখলে তো এই মেয়েটির অবস্থা। এই সব দুঃখিনী মেয়েদের দুঃখ দূর করার জন্য কেউ যদি এদের বিবাহ আইন-সিদ্ধ করতে পারে, তবে আমি সর্বতোভাবে তার পাশে গিয়ে দাঁড়াবো।
রাধানাথ ইংরেজিতে বললো, তোমরা এসব কী বলিতেছ। হে! তা হলে তো আমাকেও শীঘ্রই কলকাতায় বদলি হইয়া আসিতে হয়।