৩২. বড়বাজারে গলির ভেতর দাঁড়িয়ে

বড়বাজারে গলির ভেতর দাঁড়িয়ে ভূতনাথ ভাবছিল—এবার কোথায় যাওয়া যায়। চাকরির জন্যে এমনি ঘোরাঘুরি করতে করতে একদিন না একদিন লেগে যাবেই। এবার বড়বাড়ির দিকে ফিরলে হয়। আজ সকাল সকাল বংশী ফিরতে বলেছে! ছোটবাবু আজ আবার জানবাজারে চুনীদাসীর কাছে যাবে! ছোটবাবু চুনীদাসীর কাছে চলে গেলেই ছোটবৌঠান তাকে নিয়ে বেরোবে। কোথায় বেরোবে কে জানে! কথাটা ভাবতেই যেন কেমন ভয় হলো ভূতনাথের। বড়বাড়ির আইনবিরুদ্ধ কাজ করবে বৌঠান। তার সঙ্গে ভূতনাথকে জড়ানো কেন। কিন্তু এবার ফিরতে হয়। ফিরতে গিয়েই হঠাৎ লোচনের সঙ্গে মুখোমুখি হয়ে গেল।

—লোচন এদিকে?

—আজ্ঞে, আপনি যে এখানে?

—আমি তো চাকরির চেষ্টায় রোজই আসি—কিন্তু তুমি? বাবুর বাড়ি নেই আজ?

—তা আছে, চাকরি করি বলে কি আর বেরোতে নেই শালাবাবু? না, ওই মাইনেতে চলে! আর মাইনে পত্তোরই নিয়ম মতে দেয় না বিধু সরকার মশাই, উপরি আয় তো উঠেই গেল শালাবাবু।

-কেন?

—কই তামাক খাবার লোকই কমে যাচ্ছে, এখন বাডসাই চায় সবাই, মালও কমিয়ে দিয়েছে, নতুন করে আর ধরাতে পাচ্ছিনে কাউকে, নিজের পথ নিজে না দেখলে আর চলবে কদ্দিন, আপনাকে বললুম, একটা করে আধলা:..

ভূতনাথ বললে—আমারই তো চাকরি নেই দেখছে লোচন, গরীব মানুষ, নেশা করে শেষে–

—ঠিক কথা শালাবাবু, তাই তো এদিকে রোজ একবার ঘোরাঘুরি করি, কিন্তু আর চাকরি করবো না শালাবাবু।

—কেন?

—আজ্ঞে, চাকরিতে সে সুখ নেই আর, যা করে গেলাম বড়বাড়িতে এমন আর কোথাও পাবে না, ওই তো আমাদের দেশের এক লোক ঢুকেছে ননীবাবুর বাড়িতে, পটলডাঙার ননীবাবুর বাড়িতে, কিন্তু ভারী জ্বালা তার!

–কোন্ ননীবাবু?

–আজ্ঞে, ওই যে ছুটুকবাবুর বন্ধু! এখন তো তিনি মস্ত লোক। আপিস খুলেছেন কত। তা সে কাজ করে বাড়িতে আর ফাইফরমাশ খাটে, পেয়ারের লোক, খরচার টাকাকড়িও হতে পায়, কিন্তু হিসেব বড় কড়া ননীবাবুর! শুনি কিনা, রোজ সকাল সাতটার সময় হিসেব দিয়ে আসতে হয় সাহেবের কাছে, হিসেবে গোলমাল করলেই চাকরিটি যাবে। এতে আর বড়বাড়ির ব্যাপার নয়, কে খাচ্ছে, কে চুরি করছে, কে অপচো নষ্ট করছে। কোনোদিন এখানে হিসেব বলে কিছু ছিল না আজ্ঞে। বেণী কাপড় কুঁচোচ্ছে, তার মধ্যে ক’খানা কাপড় বাইরে চলে গেল তা আর কেউ মনে রাখেনি, ফুরিয়ে গেল তো আবার নাও। এই তামাক-টিকের ব্যাপারটাই দেখুন না, কতখানি বাজার থেকে এল, কতটা খরচা হলো কেউ কোনো দিন দেখেছে?…আমিই সব—আমার জিম্মায় মাল ছেড়ে দিয়েই সরকার মশাই খালাস কিন্তু ননীবাবুর বাড়িতে একটা আধলার এদিক-ওদিক হোক দিকি সাহেব তো মদ খেয়ে পড়ে থাকে, কিন্তু পয়সার ব্যাপারে ভারী টনটনে। এদিকে যত রাত্তিরেই শুক, ননীবাবুর ওদিকে ভোরবেলা ওঠা চাই। আমাদের বড়বাড়ির মতো নয়—এমন চাকরি আর কোথায় পাবো শালাবাবু! তাই তো বলছিলাম আজ্ঞে, চাকরিতে যা সুখ করেছি—করেছি। এখন আর সে সুখ নেই, এখন নিজেই নিজের পথ দেখতে হবে, এখন তো দেশে ফিরে আর হালচাষ করতে পারবো না, মাঠের কাদামাটিও মাখতে পারবো না গায়ে।

–তা চাকরি না করতে চাও তো ব্যবসা করবে নাকি?

—আজ্ঞে, ব্যবসা কী করব তাই তো ভাবছি, ক’টা ঠেলাগাড়ি নিয়েছিলাম আজ্ঞে—কিন্তু তাও টিকলো না। ঠিকমতো জমা পাই না—তারপরে মেরামতের খরচা আছে, তা এবার ভাবছি একটা যুৎসই ঘর পেলে পানের দোকান দেবে।

—পানের দোকান?

—আজ্ঞে, পানটা আমাদের জাতব্যবসা, দু’একজন খুলেছে। তেমন তেমন জায়গায় একটা ঘর পেলে ও-চাকরি ছেড়ে দেবো। কতদিন মাইনে না পেয়ে চলে বলুন তো—আর আমি না ছাড়লেও আমায় ওরাই ছাড়িয়ে দেবে! এমনিতেই বাবুদের দেনা হয়ে গিয়েছে শুনছি।

—কোথায় শুনেছো?

—আজ্ঞে, মধুসূদন তো বলে। তা ধরুন এবারে ছুটুকবাবুর শ্বশুরই তো সব বুদ্ধি দিচ্ছে—বাবুরা নাকি কয়লার খনি কিনবে জমিদারী বেচে দিয়ে, তা বাবুদের ধরুন অনেক টাকা আছে, এদিক থেকে লাখ টাকা গেল তো ওদিক থেকে লাখ টাকা এল—হরেদরে বাবুরা পুষিয়ে নেবে—তা বলে এত চাকর-বাকর তো রাখবে না-আমার চাকরি তো আগে যাবে শালাবাবু।

ভূতনাথ অবাক হয়ে গেল কথাটা শুনে। বললে—তুমি ভালো রকম শুনেছো?

-কীসের কথা?

—এই জমিদারী বেচে কয়লার খনি কেন?

-আজ্ঞে, দেখেন নি বালকবাবু রোজ আসছেন, হাবুলবুতে আর ছুটুকবাবুতে দিনরাত পরামর্শ চলছে। মেজবাবু পর্যন্ত পায়রা ওড়ায়নি ক’দিন সকালবেলা, সেদিন বড়ো মেজো আর হাসিনী বউঠাকুরুণরা এল বড়বাড়িতে। ভৈরববাবু, মতিবাবু, তারকবাবুরাও যেমন আসে তেমনি এসেছিল, মেজবাবুও বেরুচ্ছিলো, হঠাৎ বালকবাবু এসে পড়লো আর যাওয়া হলো না, তারপর নাচঘরে সেই যে বসলো সবাই, রাত তিনটে এস্তোক কথাবার্তা চললো— তামাক দিতে-দিতে আমার হাত-পা ব্যথা হয়ে গিয়েছে একেবারে।

-কী কী শুনলে?

-আমি মুখ্য মানুষ, কথাবাত্রা কী বুঝতে পারি। সরকার মশাই ছিল সারা রাত, জিজ্ঞেস করবেন সরকার মশাইকে, উনিসব জানেন।

–বিধু সরকার আমাকে বলতে যাবে কেন?

-কিন্তু এতে আর সন্দেহ নেই শালাবাবু, সেদিন দেখলুম লোকজন এসে পুকুরটা মাপজোক করে গেল—শুনলুম পুকুরটা নাকি বোজামো হবে, বুজিয়ে ও জমিটা বেচা হবে—খদ্দের ঠিক হচ্ছে—ভেতরে ভেতরে কী যে সব হচ্ছে, কে আর জানতে পারবে বলুন আমরা তো চাকর মানুষ।

–কিন্তু বংশী কিছু বলেনি তো আমাকে! সে জানে না?

–বংশী আজ্ঞে ছোটমা’র মুখের দিকে হাঁ করে চেয়ে বসে আছে, এবার তো…বলতে বলতে যেন থেমে গেল লোচন।

–থামলে কেন, বলো।

—আজ্ঞে, অন্দরবাড়ির খবর, ও-সব কথা না বলাই ভালো, মেয়েছেলের কথা আমরা বারবাড়ির লোক কি তেমন জানতে পারবে—তবে যা শুনতে পাই।

-কী শুনতে পাও লোচন, শুনি না?

—আজ্ঞে, আপনি কাউকে বলবেন না বলুন-বললে আমার সব্বেনাশ হয়ে যাবে।

–আমি বলবো না, কথা দিচ্ছি।

গলা নামিয়ে লোচন বললে—বংশী ছোটমাকে মদ ধরিয়েছে আজ্ঞে, আমরা গরীবগুর্বো লোক, আমাদের মেয়েছেলেদেরও এমন কাণ্ড বাপের আমলে শুনিনি কখনও শালাবাবু, কিন্তু বংশী এ-পাপের ফল ভুগবেভুগবে-ভুগবে, এই বিষুবারের বারবেলায় বলে রাখলুমও ভেবেছে, মদ খাইয়ে বেহুশ করে ছোটমা’র গয়নাগাঁটি সব নেবে—কিন্তু ভগমান বলে একজন মানুষ মাথার ওপর আছেন শালাবাবু, তার চোখ এড়াতে পারবে না কেউ–হ্যাঁ।

ভূতনাথ কিছুক্ষণ কোনো কথা বলতে পারলে না।

লোচন বললে-বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি আপনার—যদি বিশ্বাস হয় তো মধুসূদন কাকাকে জিজ্ঞেস করবেন সত্যি কি না। তারপর থেমে আবার বলতে লাগলো—সেদিন পাল্কি-বেহারাদের জবাব হয়ে গেল শুনেছেন বোধ হয়—তা এদানি পাল্কি তো আর কেউ চড়ত না, বসে বসে খেত, কাজকম্ম কিছু ছিল না তাদের, কিন্তু যাবার সময় কী কান্না, হাউহাউ করে কান্না শালাবাবু। আজ তিন পুরুষ ধরে ওইখানে বাস করছে, আর তো কিছু কাজ জানে না, বিধু সরকার মশাই বকাঝকা শুরু করলে। বললে—মড়া-কান্না কাঁদিসনে দুপুরবেলা—যা, চলে যা।

বসন্ত বেয়ারা মাগ-ছেলে নিয়ে গলায় গামছা দিয়ে বললে–সরকার মশাই যাবো কোথায়?

সরকার মশাই বললে—কুলীগিরি করে খে গে যা—যেখানে ফা পারিস কর গে—বাবুদের কেন জ্বালাচ্ছিস। এমন মড়া-কান্না কাদলে বাবুদের ধম্মের সংসারে অমঙ্গল হবে যে।

তা একটা কাপড় নয়, গামছা নয়, বখশিশ নয়—তিন পুরুষের ভিটে ছেড়ে সেই দুপুর রদ্দরে বেরিয়ে গেল তো! বাবুরা কেউ তো দেখতেও এল না। আমাদেরও ওই দশা হবে শালাবাবু। বাড়িটার দেখেন না, যেন সে ছিরি নেই। আগে আসছে-লোক, যাচ্ছে-লোককত বোলবোলা ছিল–আপনিও তো দেখেছেন হুজুর–সেবার সেই রাক্ষস এসেছিল মনে আছে আজ্ঞে? একটা আস্তু পাঠা খেয়ে ফেললে, হাড় মাংস ছাল কিছু ফেললে না, তারপর একবার রসগোল্লা খাওয়ার পদ্ম হলো-ভৈরববাবুতে আর একজন লোকে! মেজবাবু বললে—যে দশ সের রসগোল্লা খেতে পারবে তাকে দশটা টাকা দেবে আর একটা গরদের জোড়—তারপর দোলের সময় দেখেছি, আবীরের ছাড়াছড়ি—বনমালী সরকারের গলি লাল হয়ে যেতে আজ্ঞে—নাচ গান করতে আসতে বাঈজীরা, তিনদিন চারদিন ধরে নাচই হচ্ছে গানই হচ্ছে-হাজার হাজার ককে তামাক-টিকে পুড়তে—এই লোচন সব একহাতে করেছে–পূজোর সময় যেবার সেই এক পাগল এসে বললে–পূজো হয়নি—আপনি তো শুনেছেন সব আজ্ঞে? তাই বলছিলাম শালাবাবু, বড়বাড়ি মতো চাকরির সুখ আর কোথায় পাবো, আজকাল বাবুরাও সেয়ানা হয়েছে—সেই বড়বাড়িতেই এখন মাইনে বাকি পড়ে থাকে—খেটে যদি খেতেই হয়, কলকাতায় ব্যবসা করে খেটে খাওয়াই ভালো।

-তাতে দু পয়সা হবে বলে মনে করো?

—কেন হবে না শালাবাবু, দেখতে দেখতে কী কলকাতা কী হলো দেখছেন না, এই বড়বাজারের কী ছিল কী হলো চোখের সামনেই তো দেখলুম—চোখের সামনে ঘোড়ার টেরাম থেকে কলের টেরাম হলো, হাওয়া-গাড়ি হলো, আগে পিলসুজে রেড়ির তেলের আলো জ্বলতে—এখন হলো দীপকের আলো।

ভূতনাথও দেখেছে পিলসুজের আলো। এখনও মনে আছে। বড়বাড়িতে যেবার প্রথম এল ভূতনাথ—তখন ছুটুকবাবুর ঘরে জ্বলতে গেলাশের আলো। শামাদানের ওপর একটা গেলাশ বসানো। তাতে তিন ভাগ জল আর এক ইঞ্চি পুরু রেড়ির তেল। কেবল ছেলেদের পড়ার ঘরের বাতিতে থাকতো নারকেল তেল। নারকেল তেলের আলোটা একটু বেশি পরিষ্কার। তারপর সেই একটা খড়কে কাঠির মুখে একটুখানি তুলে তেলে ভিজিয়ে চকমকি পাথরে আগুন জ্বেলে ধরিয়ে দেওয়া। কিন্তু মোমের বাতিই ছিল সব চেয়ে ভালো। নাচঘরে মেজবাবু যখন পড়তে বসতো-মাথার ওপরে জ্বলতে মোমবাতির ঝাড় আর সামনে দু’দিকে দুটো মোমবাতি। পাছে বাতাসে নিভে যায়, তাই শামাদানের ওপর থাকতত একটা কাচের ফানুস আর ওপরে টিনের পাতে ফুটো করা একটা ঢাকা! তারপর এল কেরাসিন। কেরাসিনের হ্যারিকেন লণ্ঠন। আর ‘ড়ুম’। ফানুসটা হয়ে গেল ড়ুম। কেরাসিনের রকমারি আলো বেরোতে না বেরোতে রাস্তায় গ্যাসের বাতি জ্বললো। বড়বাড়িতেও এল গ্যাসের বাতি। নাচঘরে, পূজোর দালানে গ্যাসের বাতি—কিন্তু ঘরে ঘরে হ্যারিকেন লণ্ঠন মোমবাতি আর রেড়ির তেলের পিলসুজ তখনও চলছে। তারপর এল এসিটিলিন। ছুটুকবাবুর বিয়েতে এসিটিলিন গ্যাসের, বাতির ঝাড় গিয়েছিল বরযাত্রীদের দু ধারে সার বেঁধে। শেষে এল ইলেকটি ক। তবু হঠাৎ যখন তার কেটে যায়, এক ঘণ্টা আধ ঘণ্টার জন্যে সব অন্ধকার। তখন আবার বেরোয় হ্যারিকেন লণ্ঠন, মোমবাতি।

দেখতে দেখতে কত কী বদলে গেল ভূতনাথের চোখের সামনে। অথচ মনে হয় যেন এই সেদিন।

লোচন বলে-জিনিষপত্তোরের দামই দেখুন না-আগে গয়ার মিঠেকড়া বালাখানা কিনেছি…সাত আনা সের মাংস দশ পয়সার দুধ, বারো আনার ঘি, ছ’ পয়সার ডাল, তিন আনার সরষের তেল আজ কোথায় এসে দাঁড়ালো। দিনকাল ক্রমেই খারাপ হতে চলেছে।

ভূতনাথ বললে—এবার ফিরি লোচন—দেরি হয়ে গেল।

লোচন বললে—আমিও ফিরবো আজ্ঞে।

কিন্তু ফিরতে গিয়েও ফেরা গেল না। ওদিকে তখন ক’জন চিৎকার করে কী যেন বলছে। দোকানের সামনে গিয়ে সব দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিচ্ছে। এক-একটা লোক দোকানের সামনে দাঁড়ায় আর খানিকক্ষণ যেন কী সব বলে। তারপর খানিকটা বক্তৃতা দেবার পরই গান ধরলো সবাই মিলে–

বাঙালীর প্রাণ বাঙালীর মন
বাঙালীর ঘরে যত ভাই বোন
এক হউক এক হউক
এক হউক হে ভগবান—

গান গাইতে গাইতে ছেলেরা সামনে এসে পড়েছে। ছাপানো কাগজ বিলোচ্ছে সবাইকে। ভূতনাথও চেয়ে নিলে একটা ইস্তাহার।

লোচন জিজ্ঞেস করে-কীসের কথা লিখেছে শালাবাবু?

ভূতনাথ পড়তে লাগলো—“আগামী ৩০শে আশ্বিন বাঙলা দেশ আইনের দ্বারা বিভক্ত হইবে। কিন্তু ঈশ্বর যে বাঙালীকে বিচ্ছিন্ন করেন নাই, তাহাই বিশেষরূপে স্মরণ ও প্রচার করিবার জন্য এই দিনকে আমরা বাঙালীর রাখীবন্ধনের দিন করিয়া পরস্পরের হাতে হরিদ্রা বর্ণের সুতা বাঁধিয়া দিব। রাখীবন্ধনের মন্ত্রটি এই : “ভাই ভাই এক ঠাঁই” স্বাক্ষর—শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।”

লোচন আবার জিজ্ঞেস করলে—কীসের লেখা শালাবাবু, বেহ্মজ্ঞানীদের?

ভূতনাথ কিছু বলতে যাচ্ছিলো। কিন্তু ছেলেরা চিৎকার করে উঠেছে-বন্দে মাতরম্‌–

একজন বক্তৃতা দিতে লাগলো মনে রাখবেন ৩০শে আশ্বিন, ওই দিন লর্ড কার্জন বাঙলা দেশকে দু’ভাগে ভাগ করে দেবেন ঠিক করেছেন, আমরাও ঠিক করেছি তার প্রতিবাদ করবো। আমাদের জাতীয় কবি রবীন্দ্রনাথ সেইদিন জাতির নবজাগরণের পুরোহিতরূপে নগ্ন পদে দেশবাসীর পুরোভাগে রাজপথ দিয়ে পুণ্যসলিলা গঙ্গার তীরে যাবেন। আপনাদের অনুরোধ করছি, আপনারাও সেদিন এই ভারত-ভাগ্যবাহিনী ভাগীরথীকে সাক্ষী রেখে শপথ গ্রহণ করবেন—বিদেশী বর্জনের শপথ।

সকলে চিৎকার করে উঠলো-বন্দে মাতরম্‌

—আর তারপর স্নান শেষে প্রত্যেকে প্রত্যেকের হাতে হলুদরঙা রাখী বেঁধে দেবেন। আর একটা অনুরোধ! ৩০শে আশ্বিন অরন্ধন, উপবাসের মধ্যে দিয়ে আমাদের এই জাতীয় বেদনাকে চিহ্নিত করে রাখতে চাই। নিরস্ত্র জাতির শস্ত্রহীন প্রতিবাদ। দোকানি ভাইরা দোকান বন্ধ করবেন, গাড়োয়ান গাড়ি চালানো বন্ধ করবেন, কুলি মেথর মুটে মজুর সকলকেই আমরা আহ্বান জানাচ্ছি—দেশবাসী সকলের সহযোগিতা চাই।

লোচন কিছু বুঝতে পারছিল না। বললে-দোকান কেন বন্ধ করতে বলছে শালাবাবু?

ভূতনাথ বললে-বাঙলা দেশকে জোড়া লাগাবার জন্যে।

তবু কিছু বুঝলো না লোচন। বললে–আমি যে পানের দোকান দেবো ঠিক করেছি শালাবাবু, করতে দেবে না নাকি?

ভূতনাথ বললে–দাঁড়াও, আগে শুনি কী বলছে ওরা।

তখনও বক্তৃতা চলছে—আর সেই ৩০শে আশ্বিন, বাঙলার। দেশ নায়করা ঠিক করেছেন বাঙলা দেশের রাজধানীতে গড়ে তুলবেন “ফেডারেশন হল, যেখানে ভারতবর্ষের সকল প্রদেশের লোকের এক মহামিলনকেন্দ্র হবে। সেদিন বেলা তিনটের সময় সেই মিলন-মন্দিরের ভিত্তি স্থাপন হবে। ভিত্তি-স্থাপন করবেন অগ্রজ জননায়ক আনন্দমোন বসু।

আবার ‘বন্দে মাতরম্’ ধ্বনি উঠলো। বোধ হয় গুটি পাঁচ ছয় ছেলে। দোকানদাররা কেউ বোধ হয় বুঝতে পারলে না ব্যাপারটা। দু’ একজন ভূতনাথকে ডেকে জিজ্ঞেস করলে-বাবুলোক কা বোল হৈ বাবুজী?

ভূতনাথ বাঙলায় বুঝিয়ে দেবার চেষ্টা করলে।

দু’ একজন ভদ্রলোক দোকানদার বললে—তা বলে দোকান বন্ধ করে উপোস করতে হবে, এ কেমন আবদার মশাই!

ছেলেরা তখন গান গাইতে গাইতে চলেছে–

বাঙালীর পণ বাঙালীর আশা
বাঙালীর কাজ বাঙালীর ভাষা
সত্য হউক, সত্য হউক,
সত্য হউক হে ভগবান—

ভূতনাথ বললে—চল লোচন বাড়ি যাই।

রাস্তায় একবার মনে হলো ভূতনাথের—এরা কারা! এদের মধ্যে চেনাশোনা কেউ তো নেই। সেই ‘যুবক-সঙ্ঘের কদমদা’র দলের লোকদের কেউ! নিবারণ নিশ্চয়ই চেনে এদের। কিন্তু বাড়ির কাছে আসতে এ-কথা আর মনে রইল না। একটু দেরি হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে ঢুকতেই দেখলে ছোটবাবুর ল্যাণ্ডো জোতা রয়েছে গাড়ি-বারান্দার তলায়। খানিক পরে ছোটকর্তা নামলো সিঁড়ি দিয়ে। বংশী ছিল সঙ্গে। আব্বাস মিয়া ল্যাণ্ডোর সহিস। সামনের দরজটা খুলে সেলাম করে দাঁড়ালো। পায়ের তলায় ঢং ঢং ঘণ্টা বেজে উঠলো। ঘোড়া দুটোর যেন আর তর সয় না। মুখের ভেতর লাগামের শেকল চিবোচ্ছিলো। লাগামে টান পড়তেই দৌড়ে যাবে। হঠাৎ ছোটকর্তার যেন কী মনে পড়লো, ডাকলে—বংশী–

বংশী হাজির ছিল। বললে—হুজুর।

—আমার চাবুক।

বিদ্যুতের মতো ছুটে গেল বংশী বাড়ির ভেতর। তারপর এক মুহূর্তে শঙ্কর মাছের ল্যাজের চাবুকটা এনে দিলে ছোটকর্তার হাতে। তারপর লাগামে হাত লাগাতে না লাগাতেই ঘোড়া দুটো জোরে একটা টান দিলে। আর সঙ্গে সঙ্গে গেট পেরিয়ে বনমালী সরকার লেন-এ গিয়ে পড়লে ছোটকর্তার ল্যাণ্ডোলেটখানা।

নাথু সিং তখনও চিৎকার করছে—হুঁশিয়ার–হুঁশিয়ার হো—

বংশী যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো এতক্ষণে।

ভূতনাথকে দেখে বললে—আপনি এসে গিয়েছেন-ওদিকে ছোটমাও তৈরি।

ভূতনাথ বললে—আমিও তো তৈরি।

—তা হলে আপনি চোরকুঠুরির দরজা দিয়ে আসুন, আমি মিয়াজানকে খবর দিই গে।

বংশী ঝড়ের মতন নিজের কাজে চলে গেল। ভূতনাথ আস্তে আস্তে গিয়ে চোরকুঠুরির বারান্দা দিয়ে ছোট দরজাটা খুললে। ওপাশে বড়মা’র গলা শোনা যাচ্ছে। সিন্ধুর সঙ্গে আজে-বাজে গল্প চলছে তার। মেজমা’র ঘরে গিরির গলাও শোনা যায়। বারান্দাটা জনশূন্য।

ভূতনাথ গিয়ে দাঁড়ালো বৌঠানের ঘরের সামনে। ভেতরে ছোটমা’র গলার শব্দ। চুড়ির টুংটাং।

ভূতনাথ ডাকলো-বৌঠান–

–ওই ভূতনাথ এসেছে, ডাক চিন্তা, ভেতরে ডাক তো।

ঘরে ঢুকতেই ভূতনাথ অবাক হয়ে গেল। বৌঠানকে সাজিয়ে দিচ্ছে চিন্তা। সাজানো এখনও শেষ হয়নি। কিন্তু এত রূপ বৌঠানের!

খানিকক্ষণ হতবাক হয়ে দেখতে লাগলো ভূতনাথ। খোঁপাটাকে বেড়ার মতন করে মাথার পেছন দিকে অনেকখানি জায়গা জুড়ে বেঁধেছে। আর তাতে কত রকম গয়না। হীরের বেলকুঁড়ি, মুক্তো বসানো একটা চিরুণী খোঁপার মধ্যেখানে—তাতে লেখা ‘পতি পরম গুরু’। মাথার ওপর টায়রা ঝুলিয়ে দিয়েছে। আর একটা কী গয়না নাম জানে না ভূতনাথ। বোধ হয় ঝাপটা। কানে হীরের কানফুল। সমস্ত কানদুটো সোনায় হীরেয় মুক্তোয় মোড়া। গলায় পরেছে। চিক। খোঁপার নিচে ফরসা ঘাড়ের ওপর টুকরো টুকরো চুল উড়ছে।

বৌঠান বললে—আর একটু দাঁড়া ভূতনাথ। তারপর চিন্তাকে বললে—আমার কঙ্কন দুটো দে, আর জড়োয়ার তাগা জোড়া-আর কয়েকটা আংটি বের কর।

চিন্তা সিন্দুক খুলে এক-একটা গয়না বার করে পরিয়ে দিতে লাগলো বৌঠানকে।

শেষে বেরুলো গোট। কোমরের তলা থেকে চারদিকে ঘিরে দু’ ইঞ্চি চওড়া গোটছড়া জড়িয়ে রইল ছোটবৌঠানকে।

আয়নাতে নিজের মুখখানা শেষবারের মতো দেখে নিয়ে বৌঠান বললে—এবার চল ভূতনাথ।

চিন্তাকে বললে—চিন্তা খবর নেতোছোটকর্তা বেরিয়ে গিয়েছে কিনা?

চিন্তা চলে যাবার পর ভূতনাথ জিজ্ঞেস করলে কোথায় যাবে বৌঠান?

—যেখানে খুশি।

—আমাকেও যেতে হবে?

–হ্যাঁ, তুই আমার সঙ্গে যাবি।

—কিন্তু কাজটা কি ভালো দেখাবে? বড়বাড়ির ছোটবউ-এর সঙ্গে বাইরে যাবো, সেটা কি আমার পক্ষে ভালো কাজ?

বৌঠান বললে–আমার গাড়ি, আমি যেখানে খুশি যাবে, কার বলবার কী আছে—আর তুই যাচ্ছিস আমার হুকুমে।

—কিন্তু ছোটকর্তা টের পাবে তো, তখন?

—ছোটকর্তাকে আমি ভয় করি নাকি। ছোটকর্তা জানবাজারে যেতে পারে, আমি পারি না? মেয়েমানুষ বলে আমি মানুষ নই?

ভূতনাথ বললে—কিন্তু তুমি তো বউ মানুষ, পুরুষ মানুষের সঙ্গে কি তোমার তুলনা?

ছোটবৌঠান রেগে গেল যেন। কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বললে—আমি কী করি না-করি, তার জন্যে তোর কাছেও জবাবদিহি করতে হবে নাকি?

ভূতনাথ গলা নামিয়ে আনলো। বললে-রাগ করো না বৌঠান, কিন্তু নেশার ঝেকে একটা যা তা করে বসবে শেষকালে

–তার মানে? ছোটবৌঠান যেন ফণা তুলে উঠলো। আমি নেশা করেছি বলতে চাস? আজকে ষষ্ঠীর উপোস গিয়েছে জানিস

—সারা দিন জল পর্যন্ত খাইনি, আর নেশা যদি করেই থাকি, কার জন্যে করেছি শুনি? কার জন্যে নেশা করেছি, কে নেশা ধরিয়ে দিয়েছে, তা আর কেউ না জানুক আমার ঠাকুর তো জানে! আমার যশোদাদুলাল সাক্ষী আছে—কিন্তু তুই বলবার কে?

ভূতনাথ বললেন, আমি তোমার ভালোর জন্যেই বলছি বৌঠান।

—আমার ভালোর কথা কাউকে ভাবতে হবে না ভূতনাথ। তোর পায়ে পড়ি, তুই আর আমার ভালোর কথা ভাবিসনি, আমার ভালোর জন্যে সংসারে কাউকে ভাবতে হবে না, নিজের মানুষ যারা, তারাই কেউ ভাবলে না, আর তুই তো পর আমার।

—কিন্তু তবু একবার ভালো করে ভেবে দেখো বৌঠান।

—আমি খুব ভালো করে ভেবে দেখেছি রে, এর চেয়ে ভালো করে ভাবলে মাথা খারাপ হয়ে যাবে। বিয়ে হবার পর সেই যে ঢুকেছি এ-বাড়িতে, আর একটি দিনের জন্যে বেরোই নি কখনও। জানিস সংসারে যাবার জায়গা কোথাও নেই আমার, বাপের বাড়ি থাকে লোকের, আমার তা-ও নেই। এই ঘর আর এই বারান্দার বাইরে কোনোদিন চেয়ে দেখিনি চোখ মেলে। এর আষ্টেপৃষ্ঠে ঢাকা। কোথায় বরানগর, কোথায় জানবাজার তা-ও জানি না।

তারপর একটু থেমে বললে—আচ্ছা ভূতনাথ, বরানগর কোথায় জানিস?

ভূতনাথ বললে—জানি, ব্রজরাখালের বন্ধুবান্ধবরা তো আগে ওখানেই ছিল কিন্তু বরানগরে কোথায় যাবে? তোমাদের বাগানবাড়িতে?

–-না, কিন্তু যদি যাই-ই তোর আপত্তি আছে?

–আমি যাবো না।

–কেন?

ভূতনাথ বললে—এটা বোঝে না, তুমি বড়বাড়ির বউ, আর আমি?…আমি কেউ না। তোমারও কেউ না, এ-বাড়িরও কেউ না, তোমার সঙ্গে আমার যাওয়া ভালো দেখায় না, তাতে তোমারই ক্ষতি হবে বৌঠান।

—আমার ক্ষতির কথা তুই ভাববার কে?

–কিন্তু একজন তো কেউ ভাবা চাই, তোমার যে কেউ নেই বৌঠান?

–আমার জন্যে তুই যদি এতই ভাবিস তো আমার সঙ্গে চল, আমার ভালোর জন্যেই চল।

–বরানগরে গিয়ে তোমার কী ভালোটা হবে শুনি?

–সব কথা তোকে বলবো কেন রে?

—তবে আমিও যাবো না–ভূতনাথ বেঁকে বসলো।

বৌঠান গম্ভীর গলায় এবার বললে–তুই যাবিনে তো?

–তুমি আমাকে যেতে বলল না।

বৌঠান বললে—কিন্তু তুই যদি না যাস, কে আমার সঙ্গে যাবে বল?

-–কেন, বংশী কি চিন্তা।

–ওদের গেলে চলবে না, আমার এ-ঘর কে দেখবে? আর ছোটকর্তার কাজগুলো করবে কে?

কথাটা শুনে খানিকক্ষণ চুপ করে রইল ভূতনাথ। তারপর বললে—যেতে পারি, কিন্তু তুমি কথা দাও, আজ মদ খাবে না।

–কথা দিলাম, খাবো না। তাছাড়া এবার থেকে আর বোধ হয় খাবার দরকারও হবে না, যার জন্যে খেতাম সেই ছোটকর্তাই তো আর রাত্তিরে বাড়ি থাকছে না।

এমন সময় চিন্তা এল। বললে–ছোটবাবু বেরিয়ে গিয়েছে মা।

বংশীও ঘরে ঢুকলো।

বৌঠান জিজ্ঞেস করলো-হ্যাঁ রে, গাড়ি তৈরি?

বংশী বললো, খিড়কিতে গাড়ি নিয়ে মিয়াজান দাঁড়িয়ে আছে।

বৌঠান বললে—তা হলে চল ভূতনাথ, আমরা যাই।

তারপর চিন্তাকে বললে—চিন্তা, তুই আমার ঘর-দোর দেখিস, সিন্দুকের চাবিটা তোর কাছেই রইল, এসে যেন দেখি সব ঠিক আছে, সন্ধ্যেবেলা ধূপ-ধুনো দিয়ে সন্ধ্যে দিবি। আর যশোদাদুলালকে ভোগ দিবি যেমন দিস রোজ—তারপর চলতে গিয়ে আবার থামলো। বললে—আর, যদি কেউ জিজ্ঞেস করে বলবি–আমি বরানগরে গিয়েছি।

বংশী হঠাৎ বললে—কখন ফিরবে তুমি ছোটমা?

—তা ফিরতে রাত্তির হবে আমার।

চিন্তা বললে—আজ রাত্তিরে খাবার কী বন্দোবস্ত করব? তোমার পূজোর পেসাদ রয়েছে, রেখে দেবো?

বৌঠান কী যেন ভাবলে খানিকক্ষণ, একবার মাথার একটা বেলকুঁড়ি ভালো করে খোঁপায় গেঁথে দিলে। তারপর বললে— ওই পেসাদই খাবো আজ, আর কিছু খাবো না—কিন্তু তোরা খেয়ে নিস, আমার জন্যে যেন বসে থাকিস নে–তারপর চলতে গিয়েও থেমে গেল বৌঠান। বললে—আর যদি না ফিরি তো…

—সে কি, ফিরবে না নাকি ছোটমা?

-বলা তো যায় না, রাস্তায় কত রকম বিপদ আপদ হতে পারে—যদি না ফিরি তো তোরা…

–ও কথা বলো না ছোটমা, তুমি না ফিরলে আমাদের কী হবে?

—সে ব্যবস্থা তোদের জন্য করিনি ভেবেছিস? আমার যা কিছু আছে সব রইল, তোরা সবাই নিবি, ভূতনাথ নেবেকার জন্যে আমি রেখে যাবো বল।

বংশী আর চিন্তার চোখ ছল ছল করে উঠলো।

ছোটবৌঠান বললে—আর দেরি করা নয় ভূতনাথ, চল, যেতে আসতে অনেক দূরের পথ।

বৌঠান আগে আগে চললো। পেছনে ভূতনাথ। বংশী আর চিন্তাও এল সঙ্গে সঙ্গে। সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে মনে হলো যেন মেজগিন্নী আর বড়বউ শব্দ পেয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে।

-ছোটবউ গেল না?

—কোথায় যাচ্ছিস ছোট?

ছোটবৌঠান বোধ হয় শুনতে পেলে না। ভূতনাথ পেছন ফিরে দেখলে গিরি আর সিন্ধু দাঁড়িয়ে দেখছে অবাক হয়ে। কেমন যেন ভয় করতে লাগলো তার। সকলের চোখের ওপর দিয়ে যাওয়া। যদি কোনো কথা ওঠে! যদি কাল ছোটকর্তার কানে যায়। যদি বড়বাড়ির কর্তামহলে আলোচনা হয় এ নিয়ে। ছুটুকবাবু যদি শোনে! আজকাল ছুটুকবাবু তো আর একলা নয়। ছুটুকবাবুর শ্বশুর হাবুল দত্তও এ-বাড়ির একজন কর্তাব্যক্তি। সমস্ত পরিস্থিতিটা ভাবতে গিয়েই কেমন অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিল ভূতনাথ।

মিয়াজান গাড়ি নিয়ে তৈরিই ছিল। ইলিয়াস ঘোড়ার লাগাম ধরে ছিল। দৌড়ে এসে দরজার পাল্লা খুলে দাঁড়ালো। বৌঠান তখন বেশ লম্বা করে ঘোমটা দিয়েছে। বৌঠান সামনে আসতেই ইলিয়াস সরে দাঁড়ালে দূরে। প্রথমে উঠলো বৌঠান, তারপর ভূতনাথ।

গাড়িতে উঠতেই বংশী গাড়ির জানালা দরজা বন্ধ করে দিলে। বললে-এবার ছাড়ো মিয়াজান।

ব্রিজ সিং গেট-এর চাবি খুলে দাঁড়িয়েছিল, গাড়িটা বেরিয়ে যেতেই আবার বন্ধ করে দিলে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *