1 of 2

২.১৮ বড় ইচ্ছে হচ্ছিল সুবর্ণর

বড় ইচ্ছে হচ্ছিল সুবর্ণর আর একবার জগু-বটুঠাকুরের বাড়িতে বেড়াতে যায়। নিজের চোখে একবার দেখে কেমন করে ছাপা হয়। কেমন করেই বা সেই ছাপা কাগজগুলো। মলাট বাধাই হয়ে বই আকারে বেরিয়ে আসে আঁট-সাঁট হয়ে।

বই বাঁধাইয়ের কাজও নাকি বাড়িতেই হয় ওঁর, বাড়িতে দপ্তরী বসিয়ে। ঘুটে-কয়লা রেখে নিচের তলায় যে ঘরখানাকে বাতিলের দরে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, সেটাই জগুর দপ্তরীখানা।

সবই সেদিন মামীশাশুড়ীর কাছে শুনে এসেছে সুবৰ্ণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করে। কোন কিছু খুঁটিয়ে তো দূরস্থান, জিজ্ঞেস করাই স্বভাব নয় সুবৰ্ণর, তাই আশ্চৰ্যই হয়েছিলেন বোধ হয় শ্যামাসুন্দরী, তবু বলেও ছিলেন। গুছিয়ে গুছিয়ে কোনখানে কী হয়!

সুবৰ্ণর প্রাণটা যেন সর্বদাই শতবাহু বাড়িয়ে ছুটে যেতে চায় সেই জায়গাগুলোয়। কি পরম বিস্ময়কর ঘটনাই ঘটছে এখন সেই চিরকালের পরিচিত জীর্ণ বাড়িখানার ভাঙা নোনাধরা বালিখসা দেওয়ালের অন্তরালে। টানবেই তো সেই অলৌকিক স্বৰ্গলোক সুবৰ্ণকে তার সহস্র আকর্ষণ দিয়ে।

তাছাড়া শুধুই যে কেবলমাত্র একবার দেখবার বাসনাতেই তাও ঠিক নয়, কেবলই ইচ্ছে হচ্ছে ওই স্মৃতিকথার খাঁজে খাজে আরও দু-চার পাতা কথা গুঁজে দিয়ে আসে।

সুখ স্মৃতিও আছে বৈকি কিছু কিছু। লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে সেটা।

যেবার সেই প্রথম থিয়েটার দেখতে গিয়েছিল সুবৰ্ণ প্ৰবোধের সঙ্গে—

হ্যাঁ, তেমন অঘটনও ঘটেছিল একবার। সেই যোবার সুরাজ এসে কতদিন যেন ছিল বাপের বাড়ি সেবার। বিরাজ বেড়াতে এসে ধরে পড়লো, থিয়েটার দেখাও দিকি মেজদা! সেজদি সেই কোথায় না কোথায় পড়ে থাকে-

মেজদাকে ধরার উদ্দেশ্য, মেজবৌদির কলকাঠি নাড়ার গুণে ঘটবেই ব্যাপারটা। নচেৎ আর কে এই খরচের আবদার বহন করবে?

সুবোধের তো সংসার টানতে টানতেই সব যাচ্ছে, সেজদাটি কিপটের রাজা, ছোড়দা তো নিজেই রাতদিন নিজেকে গরীব বলে বাজিয়ে বাজিয়ে সংসার থেকে সব কিছু সুখ-সুবিধে আদায় করে নিচ্ছে। অতএব মেজদা! কর্তব্যপরায়ণা আর চক্ষুলজ্জাবতী মেজবৌদি যার কর্ণধার।

বিরাজের শ্বশুরবাড়ির অবস্থা ভাল, যাত্ৰা থিয়েটার এসব তারা দেখে, বলা বাহুল্য বৌদেরও দেখায়। কিন্তু কথাটা তা তো নয়। বাপের বাড়িতে এলাম, ভাইয়েরা আদর করলো, এসব দেখানোর সঙ্গে একটা মহৎ সুখ নেই! যা করছে তোমরাই করছে, এমন দৈন্য ভাবটা তো গৌরবের নয়।

তা বোনের সে আবদার রেখেছিল প্ৰবোধ, নিয়ে গিয়েছিল দুই বোনকে আর তার সঙ্গে বৌগুলোকেও। এমন কি উমাশশীও তার হাড়ির বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে স্পন্দিত হয়েছিল। দুপুরবেলাই রান্নাবান্না সেরে নিয়েছিল সে—লুচি, আলুরদম বেগুনভাজা করে। সুরাজ রাবিড়ী আর রসগোল্লা আনিয়েছিল।

অতএব ব্যাপারটায় যেন একটা উৎসবের সমারোহ লেগেছিল।

আর সেদিন যেন প্ৰবোধকে একটু সভ্য আর ভদ্র মনে হয়েছিল সুবর্ণর। হয়েছিল ভদ্র সেদিন প্ৰবোধ।

কেন?

কে জানে!

কে জানে সুবৰ্ণরই ভাগ্যে, না প্ৰবোধেরই ভাগ্যে! মোট কথা প্ৰভাস যখন ওদের বেরোবার প্রাক্কালে বলে উঠেছিল, থিয়েটার দেখতে যাওয়া হচ্ছে না থিয়েটার করতে যাওয়া হচ্ছে? এবং প্রকাশ তাতে দোয়ার দিয়ে আর একটু ব্যাখ্যানা করেছিল, যা বললে সেজদা মাইরি, থিয়েটারউলিদের বেহদ হয়ে বেরুচ্ছেন দেখছি বিবিরা— তখন প্ৰবোধই ভদ্রকথা বলেছিল। বলেছিল, যা মুখে আসে বললেই হল নাকি রে পোকা? গুরু-লঘু জ্ঞান নেই তোদের? এ বা কি, আরো কত সেজে আসে মেয়েরা! আর কত বেহায়াপনাই করে! দোতলার জালগুলো তো কেটে ওয়ার করে দিয়েছে ছুঁড়ীরা। এ বাড়ির বৌ-ঝির মতন সভ্য তুই কটা পাবি?

সুবৰ্ণ বিগলিত হয়েছিল সেদিন সেই মহান কথা শুনে। বিনিময়ে তার খাটো ঘোমটার ফাঁক থেকে সকৃতজ্ঞ প করেছিল ওই সহসা ভদ্র হয়ে ওঠা স্বামীর চোখে চোখে। আর সেদিনই যেন প্ৰথম মনে পড়েছিল সুবর্ণর, তার স্বামীর রূপ আছে।

রূপ ছিল প্ৰবোধের, বয়সের তুলনায় এখনও আছে। আর আছে এবং ছিল সাজসজ্জার শৌখিনতা। ঢ়িলেহাতা গিলেকরা পাঞ্জাবি পরেছিল সেদিন প্ৰবোধ, পরেছিল চুনট-করা ফরাসডাঙা ধুতি, কানে আন্তরমাখা তুলো, মাথায় পরিপাটি টেরি। যদিও পুরুষমানুষের এত সাজ হাসির চোখেই দেখতো সুবর্ণ, তবু সেদিন যখন সুরাজ বলেছিল, বাবাঃ, মেজদার কী বাহার গো, যেন বিয়ে করতে যাচ্ছে!। আর তার মেজদা হেসে বলে উঠেছিল, থাম তো পোড়ারমুখী, ভারি ফক্কড় হয়েছিস, তখন সত্যি বলতে বেশ ভালই লেগেছিল সুবর্ণর সেই হাসিটুকু।

হয়তো প্ৰবোধের সেদিন মেজাজ শরীফ ছিল, ওই নারীবাহিনীতে দ্বিতীয় আর কোনো পুরুষ ছিল না বলে, আর কোনো লোভী চক্ষু তার একান্ত নিজস্ব সম্পত্তিটির ওপর দৃষ্টি দিচ্ছিল না, অতএব–

তাছাড়া নিজে খরচ-খরচা করে গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে যাচ্ছে এদের, এর মধ্যে একটা আত্মপ্ৰসাদের সুখও ছিল। তাই সেদিন উদার হয়েছিল প্ৰবোধ, সভ্য হয়েছিল, সুন্দর সেদিনের স্মৃতিকথা পরিচ্ছন্ন করে মাজা একটি গ্লাসে এক গ্লাস জলের মত স্নিগ্ধ শীতল।

তা সেই জলের কথাটাও না হয় থাকুক সুবর্ণর আগুনের অক্ষরের পাশে পাশে। নইলে হয়তো বিধাতার কাছে অকৃতজ্ঞতা হবে। একটি সন্ধ্যাও তো তিনি সুধায় ভরে দিয়েছিলেন!

মূল বইটা ছিল, বিল্বমঙ্গল, তার আগে কি যেন একটা হাসির নাটক ছিল ছোট্ট একটুখানি। নাম মনে নেই, কিন্তু পাঁচ ননন্দ-ভাজে মিলে যে হাসতে হাসতে গড়িয়েছিল তা মনে আছে।

তারপর বিদ্বমঙ্গল! প্ৰেম আর ভক্তির যুগপৎ আবেগে গড়া সেই নাটক অশ্রুর মালা ঝরিয়েছিল চোখ দিয়ে। হাসি ও অশ্রুতে গড়া সেই সন্ধ্যাটির প্রত্যেকটি ঘটনা, প্রতিটি শব্দও যেন জীবন্ত হয়ে আছে।

শ্বশুরবাড়ি থেকে একটা কায়দা শিখেছিল বিরাজ, থিয়েটারে আসতে কৌটো। ভর্তি-ভর্তি পান সেজে আনতে হয়। পান খাবে মুঠো মুঠো, আর ড্রপসিন পড়ার অবকাশকালে লেমনেড খাবে, কুলপি খাবে, ঠোঙা ঠোঙা খাবার খাবে, তবে না থিয়েটার দেখা?

তা করেছিল। এসব প্ৰবোধ।

একদিনের রাজা হয়ে মেজাজটাই রাজসই হয়ে গিয়েছিল তার।

নিচে থেকে ঝিকে দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিল শালপাতার ঠোঙাভর্তি হিঙের কচুরি, আলুর দম, খাস্তা গজা আর অমৃতি এবং পাঁচ বোতল লেমনেড।

উমাশশী বার বার বলেছিল, ওমা, বাড়িতে যে ছিষ্ট রোধেবেড়ে রেখে আসা হয়েছে গো—এখন এইসব এত খাওয়া!

বিরাজ বলেছিল, ভয় নেই গো বড়গিনী, সে সবও উঠবে। ফুর্তির চোটে পেটে ডবল খিদে।

আশ্চর্য, সুবর্ণরও সেদিন ওই নেহাৎ মোটা কৌতুকের কথাগুলোও দিব্যি উপভোগ্য মনে হয়েছিল, খেয়েছিল। সকলের সঙ্গে, আর কখনো যা করে নি। তাই করেছিল, মুঠোভর্তি পান খেয়েছিল।

প্রথমে খেতে চায় নি, সুরাজই জোর করেছিল, খাও না বাবা একটা, জাত যাবে না। কেয়া খয়ের, জৈত্রি-জায়ফল, অনেক কিছু দিয়ে নবাবী পান বানিয়ে এনেছে বিরাজবালা–

তবে দাও তোমাদের নবাবী পান একটা, দেখি খেয়ে বেগম বনে যাই কি না—, বলে হেসে একটা পান নিয়েছিল সুবর্ণ। তার পরই কেমন ভাল লেগে গেল, পর পর খেয়ে নিল অনেকগুলো। তারপর ঝাঁক ঝাঁক লেমনেড। তার স্বাদটা কি লেগে আছে গলায়?

থিয়েটারের সেই ঝিটার ভাঙা কাঁসরের মত গলার স্বরটা যেন হঠাৎ সেই দূর অতীত থেকে বডি আছড়ে পড়ল—দর্জিপাড়ার সুবোধবাবুর বাড়ি গো –দর্জিপাজার সুবোধবাবুর পেবোবাবুর বাড়ি গো!

অভ্যাসবশত প্ৰথমে দাদার নামটা বলে ফেলে শেষে আবার নিজের নামটাও গুঁজে দিতে সাধ হয়েছিল প্ৰবোধের।

… … …

থিয়েটার দেখা হলো, খাওয়া-দাওয়া হলো, শেষ অবধি আবার ঘোড়ার গাড়িতে উঠে ও হাতে হাতে একটা অবাক জলপানের খিলি গুঁজে দিয়ে গাড়ির মাথায় উঠে গাড়োয়ানের পাশে গিয়ে বসলা প্ৰবোধ, নেহাৎই উমাশশী গাড়িতে আসীন বলে। তবু রিরাজ যখন বলে উঠলো, যাই বল বা, মেজদার সঙ্গে বেরিয়ে সুখ আছে, তখন বড়ভাজের উপস্থিতি ভুলে বলেই ফেলল প্ৰবোধ, সুখ না দিয়ে রক্ষে আছে? মহারাণীর মেজাজ তা হলে সপ্তমে উঠবে না?

থিয়েটার কি আর কখনো দেখে নি তারপর সুবৰ্ণ?

দেখেছে বৈকি। দেখে নি বললে পাতক। কিন্তু সে আস্বাদ আর আসে নি, দেখেছে মানে দেখিয়েছে। যখন ননদরা এসেছে, গেছে, অথবা কাউকে আদর জানানোর প্রয়োজন পড়েছে, থিয়েটার দেখানো হয়েছে। আর কে সেই দায় নেবে সুবর্ণ ছাড়া?

অতএব মাঝে মাঝে নিজেকেও যেতে হয়েছে তাদের সঙ্গে।

একবার তো প্রহ্লাদ চরিত দেখাতে মুক্তকেশী এবং তস্য সখী হেমাঙ্গিনীকে নিয়েও যেতে হয়েছিল। আর সঙ্গে ছিল সুশীলা। এবং প্ৰবোধ।

মা, মাসী, দিদির সঙ্গে বৌকে নিয়েছিল প্ৰবোধ। এ বেহায়াপনাটুকু করেছিল সে। সন্ধ্যেবেলা বাড়িতে অতিক্ষণের জন্যে রেখে যেতে যেন মন সায় দেয় না। তাস খেলতে খেলতে তবু একআধবার ছুতো করে উঠে এসে দেখে যাওয়া যায়, এতে তো সে উপায়ও নেই। অতএব চক্ষুলজ্জার দায়মুক্ত হওয়াই শ্রেয়।

পাঁচজনকে অবশ্য শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে হয়েছে, মা তো জানেই না কোথায় বসতে হয়, কখন উঠে আসতে হয়। মেজবৌ তবুওতে পোক্ত।

সুবৰ্ণ অবশ্য এই একা সুযোগ নেওয়ার পক্ষপাতী নয়, কিন্তু ইদানীং সেজবাবু ছোটবাবু তাদের বৌদের হ্যাংলার মত অপরের পয়সায় থিয়েটার দেখতে যাওয়ায় মানের হানি বোধ করছিলেন, তাই নানা অজুহাত দেখিয়েছেন তারা। আর উমাশশীর তো সংসারের অসুবিধে ভাবলেই মাথায় আকাশ ভাঙে।

তাই ইদানীং যা যাওয়া হয়েছে, যেন কর্তব্য করতে। সেই প্রথম দিনের উচ্ছল। আনন্দ অনুপস্থিত থেকেছে। সেদিনটি আছে সোনার অক্ষরে লেখা।.

কারণ-কারণ সে সন্ধ্যার রাত্রিটাও হয়েছিল বড় সুন্দর। সুরাজ বলেছিল, আজ রাতটা আমরা ননন্দ-ভাজে গল্প করে কাটাবো ঠিক করেছি। মেজদা, তোমার ঘরেই আমাদের স্থিতি। তুমি বাপু কেটে পড়। শুয়ে পড়গে ও-ঘরে।

আর আশ্চর্যের ব্যাপার, প্ৰবোধ জ্বলে ওঠে নি, কটু কিছু বলে ওঠে নি এবং কলে-কৌশলে শেষ অবশি সুবৰ্ণকে কবলিত করবার চেষ্টা করে নি। এবং একটা হাই তুলে বলেছিল, গল্প করে রাত জাগবি কি বল? এতক্ষণ থিয়েটার দেখে এসে? আমার তো ঘুমে শরীর ভেঙে আসছে!

আর তারপর হঠাৎ একটু হেসে উঠে বলেছিল, আর যা নাটক দেখে এলাম। বাবা, মনে হচ্ছে স্ত্রী-পুত্রের ওপর এতটা আসক্তি না রেখে ভগবান-টগবানের কথাই ভাবা উচিত।

ওরে বাস, একেপারে কা। তব কান্তা কস্তে পুত্র! অনুচ্চ হাসি হেসে বলে উঠেছিল সুবর্ণ, আর প্ৰবোধ অলক্ষ্যে তার পাঠে একটা চিমটি কেটে সত্যই চলে গিয়েছিল শয়নকক্ষের দুরন্ত আকর্ষণ ত্যাগ করে। …

কী মুক্তি!

কী মুক্তির আস্বাদ!

সুবৰ্ণর বিবাহিত জীবনের মধ্যে সে মুক্তির স্বাদ আর কবে এসেছে তার আগে অথবা পরে?

কবে এমন স্বেচ্ছায় দাবি ত্যাগ করে ঘুমোতে চলে গেছে প্ৰবোধ? কাজের বাড়িটাড়িতে অসুবিধের পড়ে ঘরের অকুলান হলে গজরেছে, ছুতো করে এসে আগে-ভাগে শুয়ে থেকেছে।

 

যারা গল্প করে রাত কাটাবে বলে আহ্লাদ জানিয়েছিল, তারা তো তখুনি গড়াগড়ি। সুবৰ্ণ ঘুমোয় নি। সে রাতে। এই মধুর অবকাশটুকু তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছিল। আর অদ্ভুত একটা কাজ করে বসেছিল। সে সেই রাতে।

সেই প্ৰথম।

হ্যাঁ, সেই প্রথম একটা পদ্য লিখে ফেলেছিল সুবর্ণ।

এখন অবশ্য সে পদ্য ভাবলে হাসি পায়, তবু সেই তো প্ৰথম। পুরনো পচা একখানা খাতার হলদে হয়ে যাওয়া পৃষ্ঠায় আজও আছে সেটা। ছিঁড়ে ফেলে দিতে মায়া হয়েছে…

এবং আশ্চৰ্য, আজও মুখস্থ আছে সেটা!

কালটা তো আগের, ভাষাও অতএব তদ্রপ। কিন্তু সেদিন সেই কবিতা লিখে ফেলে কী অপূর্ব পুলক স্বাদে ভরে গিয়েছিল মন! মনে হয়েছিল কবিদের মতই তো হয়েছে ঠিক! ওঁরাও কি এই রকমেই লেখেন না!

অনন্ত নক্ষত্রপুঞ্জ আকাশেতে থাকি,
পৃথিবীর পানে কি গো মেলে থাকে আঁখি?
দেখিলে দেখিতে পাবে তারই দিকে চেয়ে
জাগিয়া কাটায় এক পৃথিবীর মেয়ে।
পিঞ্জরের পাখীসম বন্দী তার প্রাণ,
ঊর্ধ্ব আকাশেতে যেন কি করে সন্ধান!
কিন্তু হায় কাটে সুর, ভেঙে যায় মন,
রুদ্ধ করি দিতে হয় মুক্ত বাতায়ন।
থর সব স্বপ্ন করে দেয় চুর।
জেগে ওঠে শত চক্ষু, আসে দুঃখ গ্লানি,
নীরবে ঘোরাতে হয়। নিত্যকার ঘানি।

তা এই সেকেলে ভাষার পদ্যকে আর একালের খাতায় স্থান দেবার বাসনা নেই, কিন্তু সেই দিনটাকে ঠাঁই দিতে ইচ্ছে করে।

জীবনের প্রথম পদ্য লেখার দিন।

সেই দিনটির পুলক-স্বাদ নিয়ে খানিকটা লিখে ফেলে।

আর একবার মামীশাশুড়ীর বাড়ি যাবার সংকল্প স্থির করেছিলো সুবৰ্ণ, তবু হচ্ছেও না যেন। কারুরই কিছু মনে করবার কথা নয়, মা একটা ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া করে বাড়ির ঝিয়ের সঙ্গে কথাও যাচ্ছে, এতে আর এখন অবাক হয় না। সুবৰ্ণর ছেলেমেয়েরা। মুক্তকেশীর মৃত্যু ও শ্রাদ্ধকার্যের ব্যাপারে ওটা হঠাৎ কেমন চালু হয়ে গেছে। কিন্তু সুবৰ্ণলতার কেন মনে হচ্ছে ওরা সপ্রশ্ন দৃষ্টি মেলে ভাববে, হঠাৎ মামীশাশুড়ীর ওপর এত ভক্তির হেতু? এই তো সেদিন গেলেন!

যাই যাই করেও তাই দিন গড়ায়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *