কালো শুঁটকো পেটে-পীলে ছেলেটার দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টি হেনে শ্যামাসুন্দরী বলেন, ওকে বাড়িতে জায়গা দিতে হবে? কী করবো। ওকে নিয়ে?
জগু তার বাইরের বাবু সাজ আধময়লা। ফতুয়াটা খুলে উঠোনের তারে ছড়িয়ে দিতে দিতে অগ্রাহ্যের গলায় বলে, করবে আবার কি, সময়ে দুটো ভাত-জল দেবে, খানিক পাঁচন সেদ্ধ করে দেবে, আর কি! মাথায় করে নাচতে বলি নি।
শ্যামাসুন্দরী ক্রুদ্ধ গলায় বলেন, মাথায় করে নাচার আবার হাত-পা কি আছে? সময়ে দুটো ভাত-জল দেব, পীলে পেটের জন্যে পাঁচন সেদ্ধ করে দেব, কেন কি জন্যে?
কি জন্যে, সেকথা তো রাজকন্যেকে বলা হলো আগেই। মা নেই, দিদিমা পুষতো, সেটাও পটল তুলেছে, কে দুটো ভাত দেয় তার ঠিক নেই।
ওঃ, আমাকেই তাহলে ওর দিদিমা হতে হবে? শ্যামাসুন্দরী মানবিকতার ধার ধারেন না, বলেন, তুই আর আমার সঙ্গে জ্ঞাতশত্ত্বরতা করিস না জগা, চিরটা কাল জ্বলে পুড়ে মরলাম। জগতে অমন ঢের মাতৃহারা আছে, সবাইকে দয়া করতে পারবি তুই?
সবাইকে পারবার বায়না নেবে জগা, এমন মুখ্যু বামুন নয় মা, জগু দৃপ্তম্বরে বলে, একটার কথাই হচ্ছে।
না হবে না—, শ্যামাসুন্দরী আরো দৃপ্ত হন, বলে আমার কে ভাত-জল করে তার ঠিক নেই, হিতৈষী ছেলে এলেন আমার ঘাড়ে একটা রুগী চাপাতে। রাগ বাড়াস নে জগা, যেখানকার নিধি, সেখানে রেখে আয়।
জগা অবশ্য মায়ের এই শাসনবাক্যে বিন্দুমাত্র বিচলিত হয় না, বলে, রেখে আসবার জন্যে নিয়ে এলাম যে! এই ছোঁড়া, হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছিস যে! নতুন দিদিমাকে পেন্নাম করা! দেখছিসকেমন ভগবতীর মতন চেহারা!…এই এই খবরদার, পায়ে হাত নয়, দূরে থেকে আলগোছে। তুই বেটা এমন কি পুণ্যি করেছিস যে আমার মায়ের চরণস্পর্শ করবি! পেন্নাম করে বোস ওখানে।… মা. ছোঁড়াকে দুটো জলপানি দাও দিকি, খিদেয়-তেষ্টায়। টা-টা করছে। দেখো আবার দুঃখীর ছেলে বলে খানিক আকোচ-খাকোচ ধরে দিও না! দেখছো তো পেটের অবস্থা? এক-আধটা রসগোল্লাফোল্লা আছে। ঘরে?
শ্যামাসুন্দরী ছেলেকে চেনেন, ওই পীলে-পেটাকে যে আর নড়ানো যাবে না, রসগোল্লা খাইয়ে রাজসমাদরেই রাখতে হবে, তা তিনি নিশ্চিত অবলোকন করছেন। তবু সহজে হার স্বীকার না করে ক্রুদ্ধ গলায় বলেন, না থাকে আনতে কতক্ষণ। এখুনি তো ছুটতে পারো তুমি! কিন্তু বাড়িতে না-হক একটা পুষ্যি বাড়াতে আমি পারব না জগা, বয়েস বাড়ছে বৈ কমছে না। আমার! পারব না। আর খাটতে-
জগু এবার উদ্দীপ্ত হয়।
বলে, মা তুমি যে দেখছি তোমার ননদের ওপর এককাঠি সরেস হলে! মুখ ফুটে বলতে পারলে এ কথা? ওর জন্য কালিয়া পোলাও রাঁধতে হবে, বলেছি। এ কথা? দুবেলা দুমুঠে পোরের ভাত আর কাচকলা সেদ্ধ, এই তো ব্যাপার। লোকে গরু পোষে কুকুর বিড়াল পোষে, আর একটা মানুষের ছেলেকে দূর দূর করছে? ছি ছি!
তা সে তুই আমার শতেক ছি, দে-শ্যামাসুন্দরী অনমনীয় গলায় বলেন, বুড়ো বয়সে একটা খোকা পুষে তার পোরের ভাত রাঁধতে বসতে পারব না, ব্যস। ভারী হিতৈষী ছেলে আমার! সেই যে বলে না— ভাল করতে পারি না মন্দ করতে পারি, কি দিবি তাই বল, তো হয়েছে তাই।… শ্যামাসুন্দরী সহজে একসঙ্গে এত কথা বলেন না, কিন্তু আজ ছেলের গোয়াতুমি বায়নায় মেজাজ খাপ্পা হয়ে গেছে তাঁর। পাড়ার একটা ছুতোরের ছেলে, তার দিদিমা মরেছে কি ঠাকুমা মরেছে, তার ভাত রাধবার লোক নেই, এই যুক্তি দিয়ে কিনা একটা রুগীকে এনে মার গলায় গেথে দিতে চায়!
বামুনের ছেলে হলেও বা ভবিষ্যতের একটা আশা ছিল। দিনে আদিনে, কিছু না হোক, জগাকেও এক ঘটি জল দিতে পারতো! কিন্তু এ কি!
ছুতোরের ছেলে।
একেবারে জল অচল!
তারপর শক্তিপোক্ত নয় যে চাকরের কাজও করবে।
তবে?
শুধু শুধু কেন শ্যামাসুন্দরী এই নিৰ্ব্বঞাটি সংসারে অত বড় একটা ঝ ঞােট ঢোকাবেন? একটা আট-দশ বছরের ছেলে, সে তো খোকার সামিল। বুড়ো বয়সে একটা খোকা পুষিবেন শ্যামাসুন্দরী?
রেগে বলেন, গরু পুরুষ দুধ আসে, কুকুর বেড়ালেও উপকার আছে, এর থেকে কি উপকার পাওয়া যাবে?
উপকার!
জগু হঠাৎ সত্যিকার রেগে ওঠে।
ফুলে দেড়া হয়ে উঠে বলে, উপকার পাবে কি না ভেবে তুমি দয়া দেখাবে? থাক মা, দরকার নেই, তোমার ওই ওজন-করা দয়ায় দরকার নেই। উঃ, এমন কথা শোনার আগে জগার মরণ হোল না কেন! ঠিক আছে, ভাত তোমায় রাধতে হবে না, জায়গাও দিতে হবে না। চল রে নিতাই-ভুল করে এনেছিলাম তোকে, বাড়িটা যে জগার বাপের নয়, সেটা খেয়াল ছিল না।
ছেলেটার হাত ধরে টান দেয় জগু।
বলে, ভালো বাড়িতে এনেছিলাম তোকে, শিক্ষা পেলি ভালো! এরপর আর কখনো বামুনবাড়ির দরজায় এসে দাঁড়াসনি। হ্যাঁ, বরং কসাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় চাইবি, তবু বামুনবাড়ির নয়।… কী কথা কানে শুনলাম, ছিছি! কিনা ওকে যে আমি দয়া করবো, ও আমার কি উপকারে আসবে?
জগু বাইরের দরজার দিকে পা বাড়ায়।
শ্যামাসুন্দরী প্রমাদ গনেন।
বোঝেন জগু সত্যিই রেগেছে।
আর সত্যি রাগলে পাঁচ দিন জলস্পর্শ করবে না।
উপায় নেই। ছোঁড়াকে গলায় গাথতেই হবে। তবে নরম হওয়া তো চলবে না, তিনিও জগুর মা? তাই তীব্ৰস্বরে বলেন, দেখ জগা, রাগ বাড়িয়ে দিস নো! যা দিকিনি এক পা, দেখি কেমন যাস!
যাব না? তোমার কথায় নাকি? বলে হঠাৎ পাক খেয়ে ঘুরে দাঁড়ায় জগু, এবং উচ্চ উদাস স্বরে বলে, দেখ নিতাই, দেখে নে, এত বড় একটা বুড়ো মর্দার মান-প্রতিষ্ঠাটা একবার দেখে নে। রাগ করে বেরিয়ে যাবার স্বাধীনতাটুকুও নেই। এই অসহায় অবলা জীবটাকে আবার একটা মনিষ্যি জ্ঞান করে তোর বাবা মুরু কবী ধরেছে। হুঁ!
দাওয়ায় এসে বসে পড়ে নিতাইকে কাছে নিয়ে। যেন সেও ওর মতই বাইরে থেকে প্ৰাৰ্থ হয়ে এসেছে। নিতাই বিস্ময়াহত দৃষ্টি মেলে বসে থাকে।
শ্যামাসুন্দরী আর দ্বিরুক্তি না করে ঘর থেকে একখানা শালপাতায় করে পয়সায় দুগণ্ডা। রসমুণ্ডির গোটাচারেক এনে ধরে দিয়ে জোরালো গলায় বলেন, কলে মুখ দিয়ে জল খাওয়া চলবে, না গেলাসে করে দিতে হবে?
সহসা জগু অন্যমূর্তি ধরে।
যেন সে মানুষই নয়।
চড়া গলায় বলে, গেলাসে করে জল দিতে হবে? কেন, আমার গুরুপুত্ত্বরের ঠাকুর্দা এসেছে? কলে মুখ দিয়ে জল ওর ঘাড় খাবে না? দেখা নিতাই, ওসব রাজকায়দা যদি করতে আসিস, পোষাবে না! বৃদ্ধ ব্ৰাহ্মণ-কন্যা তোকে খাবার জল গড়িয়ে দেবে, আর তুই তাই খাবি? ছিঃ ছিঃ! হ্যাঁ, একথা যদি বলিস এই রাসমুণ্ডি কাটা আমার জগরাগ্নির কাছে নাস্যি হল গো দিদিমা, আর গোটা চার-পাঁচ দাও, সে আলাদা কথা! ক্ষিদের কাছে চক্ষুলজ্জা নেই। তা বলে কলে জল খাব না। এ বায়না করতে পাবি না।
শ্যামাসুন্দরী কড়া চোখে একবার ছেলের দিকে তাকিয়ে ঘর থেকে আবার একেবারে পুরো এক পয়সার রসমুণ্ডি এনে বসিয়ে দিয়ে বলেন, আর কিন্তু নেই জগা! কাল চার পয়সার এনেছিলি, তার দরুন গোটাকতক ছিল।
জগু হৃষ্টগলায় বলে, ব্যস ব্যস, ওতেই হবে। আর কত চাই? হ্যাঁ রে নিতাই, শরীরে বল পাচ্ছিস? যে হাল হয়েছে, ওটাই প্ৰধান দরকার!… নিজে থেকে মনে করে করে দুধ চেয়ে নিয়ে খাবি, বুঝলি? এই যে ভগবতীকে দেখছিস, এনার কাজের সীমা-সংখ্যা নেই। ইনি যে ইশ করে তোকে ডেকে দুধ খাওয়াতে বসবেন তা মনে করিস না।
মার প্রতি এই কর্তব্যটি সেরে জগু হষ্টচিত্তে বসে পড়ে বলে, যাক বাবা, আমার একটা দায় ঘুচালো। মাতৃহীনকে মায়ের কোলে ফেলে দিলাম।
শ্যামাসুন্দরী ছেলের দিক থেকে এদিকে চোখ ফেলে তীব্র স্বরে বলেন, এই ছেলেটা, তোর নাম কি?
নিতাই এসেই যে পরিস্থিতির মুখে পড়েছিল, তাতে তার কথা কওয়ার সাহস ছিল না, কিন্তু এখন চুপ করে থাকাও শক্ত। তাই সাবধানে নিজের নাম বলে।
নিতাই।
ও কি নাম বলার ছিরি রে নিতাই, জগু সদুপদেশ দেয়, ভদ্রলোকের মত বলবি, শ্ৰীনিতাই দাস। নেহাৎ চাকর-বাকরের মত থাকলে তো চলবে না! ভদর লোকের মতন থাকতে হবে।
শ্যামাসুন্দরী বোঝেন, এ হচ্ছে বিকে মেরে বৌকে শিক্ষা দেওয়া! পাছে তিনি ছেলেটাকে চাকরের পর্যায়ে ফেলেন, তাই জগার এই শাসনবাণী। তা তিনিও সোজা মেয়ে নন, তাই কড়া গলায় বলেন, চাকরের মত হবে না কি রাজার মত হবে? এই নিতাই, তোর বাপ কি করে রে?
নিতাইয়ের আগেই জণ্ড তাড়াতাড়ি বলে ওঠে, বাপ ব্যাটা তো ছুতোর! কাঠ ঘষে আর কি করে? যাক গে, ওসব কথা মনে নিতে হবে না। তুই নিজে মানুষ হবি, বুঝলি? ঘর-সংসার দেখিয়ে দিই গে।
এই সময় বহুকাল পরে মুক্তকেশীর আবির্ভাব ঘটে এবং মুহূর্তেই ছেলেটার দিকে চোখ পড়ে তাঁর। সন্দেহের গলায় বলেন, এ ছোঁড়া কে? চাকর রাখলি বুঝি!
জগু আভূমি সেলাম করে বলে, কী যে বল পিসি! জগা রাখবে চাকর! ভারী তালেবর তোমার ভাইপো! কেষ্টর জীব, কেষ্ট যখন যেখানে রাখেন, থাকে।
শ্যামাসুন্দরী বিদ্রূপের গলায় বলেন, তা বটে! অন্তত যে কদিন পোরের ভাত আর রসগোল্লা ভিন্ন সইবে না, সে কদিন এখানেই থাকবে।
মুক্তকেশী খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করে ব্যাপারটা জেনে নেন। মুক্তকেশী গালে হাত দেন। তারপর বলেন, জাতটা কি?
এবার জগু মারমুখী হয়।
জাত নিয়ে কী হবে পিসি? জাত নিয়ে কি হবে? নাতজামাই করবে?
শোনো কথা! মুক্তকেশী বলেন, এই তোকে আর আমার মেজবৌমাকে এক বিধাতায় গড়েছে দেখছি! কথা কয়েছ কি অগ্নিমূর্তিা! ঘরে-দোরে ঘুরে বেড়াবে, জাত দেখবি না?
না দেখবো না। ঘরে-দোরে মশা মাছি পিপড়েটাও বেড়ায়। নর্দমা থেকে উঠে এসে বেড়ায়। তখন তো তোমাদের জাতের বিচার দেখি না?… এই নিতাই, চল আমরা অন্যত্র যাই। দুটো বুড়ীতে মিলে কূটকচালে গপূপো করুক। ওঁরা আবার ধৰ্ম্মকথা কইতে আসেন! মানুষ কেষ্টর জীব! অতিথি! নারায়ণ! যত ফব্ধিকারি কথা! মুখের ওপর যে অপমানটা তোমরা ওই অভাগা নারায়ণটাকে করলে বসে বসে, নেহাৎ নারায়ণ বলেই সহ্য করলো! তই হোক বেটা ছেলে! এ লক্ষ্মীঠাকরুণ হলে মনের ঘেন্নায় পাতাল প্ৰবেশ করতো! মানুষের ছানা দুটো খাবে, সেই নিয়ে খোঁচা দেওয়া!
জণ্ড গট গট করে বেরিয়ে যায় নিতাইয়ের হাত ধরে।
মুক্তকেশী পিছন থেকে সাবধান করেন, কাজটা কিন্তু ভাল করলি না জগু! কে বলতে পারে ছোঁড়া স্বদেশী কিনা! শুনি পুলিসের ভয়ে নাকি আমন কত ছোঁড়া ন্যাকা। সেজে-
কথা থামান।
জগুর কানে প্ৰবেশ করাবার আশা আর থাকে না।
শ্যামাসুন্দরীর কানে যেটুকু গেছে তাতেই যথেষ্ট! তাচ্ছিল্যাভরে বলেন, তোমার ভাইপোর জন্যে ভেবো না ঠাকুরঝি! পুলিসই ওর ভয়ে দুগগা নাম জপবে!… এই বুড়ো বয়সে একটা কচি খোকা এনে আমার গলায় চাপালো, আপত্তি দেখিয়েছি তাতে রাগ দেখছো তো? যাক গে, তোমার খবর কি? অনেকদিন তো আর আসো না!
মুক্তকেশী বলেন, আর আসবো কি! কোমরটা যে দিন দিন শতুরতাই সাধছে। বেশী হাঁটতে পারছি না। আর। ওই যো-সো করে গঙ্গাচ্ছানটুকু বজায় রাখা! এসেছি একটা খবর দিতে। মেয়ে দুটোর বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি, তাই তোমায় বলতে আসা! একদিন যাবে, ছেলেদের সঙ্গে একত্র বসে পরামর্শ হবে!
শ্যামাসুন্দরী বোঝেন কোন মেয়ে দুটো।
মল্লিকা আর চাপা, আর কে!
বলেন, তা বেশ! কোথায় সম্বন্ধ হলো?
বিরাজের শ্বশুরবাড়ির সম্পর্কে। ঘর-বর ভালো, দুই জ্যাঠতুতো খুড়তুতো ভাই—
শ্যামাসুন্দরী সকৌতুকে বলেন, তা তোমার মেজবৌ তো ছোটকালে বিয়ে পছন্দ করে না, রাজী হয়েছে?
ছোটকালে? মুক্তকেশী একটু চাপা ঝঙ্কার দিয়ে ওঠেন। ছোট আবার কোথায় বৌ? তোমার কাছে তো আর কিছু আছাপা নেই? এগারো বলে চালাচ্ছি, তেরো ভরে গেল না? তা মেজবৌমা আমার মুখে চুনকালি নেপেছে! বিরাজের সেই সম্পৰ্কে ননন্দ কুটুম্ব-সূত্র ধরে এসেছিল। কনে দেখতে। তুই বৌমানুষ, চুপ করে থাক, বড়বৌমা তো মুখে রা কাড়ে নি। মেজবৌমা তাদের সঙ্গে গলাগলিয়ে গপপো করে করে বলে বসেছিল, ওমা, এগারো আবার কি? সে তো দু বছর আগে ছিল! দুজনই ওরা তেরো পুরে গেছে! মা বোধ হয়। ভুলে গেছেন। নাতি-নাতনীর সংখ্যা তো কম নয়! ছেলের ঘর মেয়ের ঘর মিলিয়ে কোন না পঞ্চাশ!… সেই নিয়ে কি হাসাহাসি! বোঝো আমার বৌয়ের গুণ!
শ্যামাসুন্দরী বলেন, একটু সত্যিবাদী আছে কিনা—
ওগো সত্যিবাদী আমরাও। তবে অত সত্যিবাদী হলে তো আর সংসার চালানো যায় না! সব দিক বজায় রাখবে তুমি কিসের জোরে? মানমর্যাদা রক্ষে রাখবে কিসের জোরে! মিথ্যেই ঘরের আচ্ছাদন, মিথ্যে ই চালের খুঁটি! সংসার তো করলে না কখনো—
শ্যামাসুন্দরীর এই মুক্ত জীবনের প্রতি মুক্তকেশীর বরাবরের ঈর্ষা!
শ্যামাসুন্দরী বোঝেন, এখন প্রসঙ্গ পরিবর্তনের প্রয়োজন। বলেন, বোসো ঠাকুরবি, ডাব কেটে আনি। তা বিয়েটা কবে নাগাদ হবে?
হবে, এই শ্রাবণের মধ্যেই দিতে হবে। নচেৎ তিন মাস হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে হবে। যেও তা হলে।
যাক। তুমি বোসো। ডাব কাটতে চলে যান শ্যামা।