২১. রাঘব বোয়াল বিগ ব্রেন

২১. রাঘব বোয়াল বিগ ব্রেন

রবি রে চকমকি চোখ নাচিয়ে নাচিয়ে আমার তরল চোখ আর শক্ত ঠোঁটের চেহারা-টেহারা একটু দেখে নিয়ে বললে, ইন্দ্র, তুই আগের জন্মে টিকটিকি ছিলি।

আমি বললাম, জুরাসিক যুগে ডাইনোসর ছিলাম। টিকটিকির পূর্বপুরুষ। মরুদ্যানের পেশোয়ারি পাথরের ডিম তোর খপ্পরে গেছিল?

হ্যাঁ, বন্ধু, হ্যাঁ। সাপ্লাই এসেছিল আমার নামে, মাল চলে এসেছে আমারই কাছে।

কে এনে দিল? তুই তো ময়দানের ত্রিসীমানায় যাননি?

সে খবরও রাখিস?

রাখতে হয়। কে এনে দিল?

রাঘব বোয়াল বিগ ব্রেন।

সেটা আবার কী বস্তু?

বস্তু নয়, একটা গুপ্ত সচ্ছা। এরা টেররিস্টদের আর্মস সাপ্লাই বিজনেস পণ্ড করে দেয় যে-কোনও প্রকার কৌশলে। পেশোয়ারি হিরে আমিই ভ্যানিশ করে দিয়েছিলাম এদেরকে দিয়ে—মূল্য ধরে দিয়েছি—সে হিরে এখন নিরাপদ—আমার জিম্মায়।

হিরে লেনদেন তোর বিজনেস। রাঘব বোয়াল বিগ ব্রেন নামক গুপ্ত সংস্থা নিয়ে তুই চোরাই হিরে কিনেছিস। কাজটা অন্যায়।

হ্যাঁ, বন্ধু, হ্যাঁ, বিজনেস ইজ বিজনেস।

সেই হিরে এখন কোথায়?

বেচে দিয়েছি ভাল লাভে। হিরে জমা হয় আমার পয়েন্টে… ডলার বেরিয়ে যায় পৃথিবীর অন্য পয়েন্টে… মাড়োয়ারি বিজনেসের মতো একটা চেন ওয়ার্ক। ইন্দ্র, এত কথা তোকে বললাম কেন, এবার তা বলছি। আমার অন্য হিরে যে নিখোঁজ হয়েছে।

অন্য হিরে? পেশোয়াড়ি পাথরের মধ্যের হিরে?

না। মন্ত্রপূত হিরে।

কল্পনা নিয়েছে? না’খানা ডিম?

না। ভেতরের চেম্বার খুলতে পারেনি। ভেতরে যে আর একটা চেম্বার আছে, সেটা খুলতে গেলে আমার পাঞ্জার ছাপ দরকার, তা জানত না।

বাইরের পাল্লা খোলার সিক্রেট জানত?

জানত।

তুই জানিয়েছিলিস?

হ্যাঁ।

কেন, মূখ কেন?

যেদিন সত্যি প্রেমে পড়বি, সেদিন বুঝতে পারবি।

মূর্খ, মিথ্যে প্রেমে মজা বেশি। সে কথা থাক। সিন্দুকের প্রথম পাল্লা তো খোলে তোর বুড়ো আঙুলের ছাপ চেপে বসলে। তুই দিতে গেলি কেন?

হিপনোটাইজড হয়ে।

হোয়াট?

তোকে বার বার বলে এলাম, কামরূপ কামাখ্যার মেয়ে যার মা, সে এাটক যোগসিদ্ধা… চোখে চোখে চেয়ে বনের পশুকেও বশ করতে পারে…

তোর মতো বুনোকেও…

বশ করেছিল। আমি ঘোরের মধ্যে চলে গেছিলাম। কী করেছিলাম, মনে নেই। ঘোর কাটলো সকালে ঘুম ভাঙবার পর। কল্পনা পাশেই ঘুমোচ্ছিল অঘোরে। খাট থেকে নেমে চটিতে পা গলাতে গিয়ে দেখলাম, একটা চটি নেই। এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখলাম, দেওয়াল সিন্দুকের সামনে রয়েছে। খটকা লেগেছিল। ঘুমন্ত কল্পনাকে না জাগিয়ে পা টিপে টিপে গিয়ে সিন্দুক খুলেছিলাম থাম্ব ইমপ্রেশন দিয়ে। জহুরি দণ্ডপথের দেওয়া পেশোয়ারি পাথরের বাক্স দুটো দেখতে পাইনি। এক-একটা বাক্সে থাকত তিনটে করে ডিম। পাঞ্জা ইমপ্রেশন দিয়ে ভেতরের চেম্বার খুলেছিলাম। সেখানে রয়েছে বাকি তিনটে ডিম… অন্য অন্য হিরে… পেশোয়ারি পাথরের কৌটোয়… বুঝলাম, রাতে, ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছে কো আমার দিকে অমনভাবে চেয়েছিল কল্পনা… সবুজ পাথরের মতো চোখে যেন সবুজ শিখা দেখতে পাচ্ছিলাম… তারপর আর কিছু মনে নেই।

তারপর? তারপর?

অবান্তর কথায় কথা না বাড়িয়ে উপসংহারে চলে আসছি। যবনিকা টেনে দিলাম মারমার কাট-কাট কাণ্ডকারখানার পর। ডিভোর্স। এক পয়সাও অ্যালিমনি না নিয়ে যেন পরমানন্দে পলায়ন করল কল্পনা চিটনিস—দ্য গ্রেট চিটিংবাজ।

ছেলেকে ছেড়ে দিলি? তোর ঔরসের ছেলে—নিজের মুখে স্বীকার করেছিস। চাইলি না কেন?

চেয়েছিলাম। দেয়নি।

সেই ছেলেই কিডন্যাপড হয়ে গেল অনেক… অনেকদিন পরে… পাহাড়ি অঞ্চলে… যেখানে আমাকে ভালবেসে টেনে এনে রেখেছিল কল্পনা…

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *