১৩. হিরের শঙ্খ, হিরের চক্র
চেহারা আর চোখ দেখে যাকে নিরেট পাথর বলেই মনে হয়, সেই রবি রে যে হিরের মুকুট দেখে এভাবে গলে গেছে, তা তো জানতাম না। কথা তো নয়, যেন হিরের ফুলকি ঠিকরে ঠিকরে আসছিল ওর গলার মধ্যে থেকে…হিরের পরশমণি ছুঁয়ে গেছিল ওর দুই চক্ষুকেও…মুহুর্মুহু বিদ্যুৎবহ্নির আভাস জাগছিল ওর বিশেষ গড়নের দুই চোখে…বালাজি-প্রভাব ওকে অবশ্যই উদ্দীপ্ত করেছিল, নইলে ওর মতো চাপা স্বভাবের মানুষ আচম্বিতে এমন উজ্জ্বল হয়ে উঠবে কেন?
বালাজির মুকুটে আছে আঠাশ হাজার হিরে। একটা নয়, আঠাশ হাজার হিরের সন্নিবেশ সম্ভব হয় কি কবে, আমি (যাকে আমার প্রিয় লেখকবন্ধু মৃগাঙ্ক রায় বলে হীরক চক্ষু) যখন তাই নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছি আমার খুদে মগজের মধ্যে,তখন রবি রে ফের শুরু করেছিল বালাজির অন্য অন্য হিরের সম্ভাব প্রসঙ্গ। বলেছিল–
ইন্দ্র, আমার চিত্ত চমৎকৃত হয়েছিল যখন শুনলাম আঠাশ হাজার হিবে সমেত বালাজির মুকুটের ওজন…কত হতে পারে? আচ্ছা, আচ্ছা, আমিই বলছি…ষাট পাউণ্ড! প্রায় সোয়া সাতাশ কিলোগ্রাম! ভাবা যায়? সোয়া সাতাশ কেজি ওজনের হিরে বসানোর মুকুট মাথায় নিয়ে সিবে রয়েছেন বালাজি! তিনি কি নারায়ণ? কেন না, তার হাতে আছে শঙ্খ আর চক্র। দুটো হাতিয়ারকেই ঝকমকে করে তোলা হয়েছে হিরের পর হিরে বসিয়ে। হাত দুটোতেই শুধু হিরে আর হিরে বসিয়ে যেন নক্ষত্র আঁকালো দু’টো ছায়াপথ বানানো হয়েছে। কানের লতিতে ঝুলছে প্রকাণ্ড কর্ণ-অলঙ্কার—হীরকম। ইন্দ্র, ইন্দ্র, থ’ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল আমাকে এত হিরের একত্র সমাবেশ দেখে। এক অঙ্গে এত হিরে! জড়োয়ার জেল্লা যে কি পরিমাণে চোখ ধাঁধিয়ে দিতে পারে, চোখের রঙ্কু দিয়ে রোশনাই মগজে ঢুকে চিন্তা বুদ্ধিকে অসাড় করে দিতে পারে, ব্রেনকে বিকল করে দিয়ে আঙুলের ডগা পর্যন্ত অসাড় করে দিতে পারে–বালাজির বিগ্রহ তার সেরা নিদর্শন—এই পৃথিবীতে…মাত্র ন’হাজার মাইল ব্যাসের এই পৃথিবীতে বুঝি থরহরিকম্প জাগাতে পারে শুধু এই বালাজি বিগ্রহ তার শ্রীঅঙ্গের এত হিরের অলৌকিক প্রতাপ বিকীর্ণ করে।
ইন্দ্র… সেই থেকে… সেই মুহূর্ত থেকে… হিরে আমাকে টেনেছিল, হিরে আমাকে জাদু করেছিল…, হিরে আমাকে হিপনোটাইজ করেছিল… হিরে… হিরে… হিরে… এই হিরে কোত্থেকে আসছে… কোথায় যাচ্ছে… কত কি কাণ্ড করে চলেছে… তা আমাকে জানতে হবে… জানতেই হবে… সে ভাবেই হোক।
বলতে পারিস আমি অলৌকিকভাবে আচ্ছন্ন হয়ে গেছিলাম। হিরের মধ্যে নিশ্চয় একটা অতিপ্রাকৃত আকর্ষণ আছে… ম্যাগনেটিক আকর্ষণ সে তুলনায় কিছুই নয়… এই টান… হিরের এই আকর্ষণ নিয়ে গবেষণা করা দরকার। ব্যাপারটা আমার মাথার মধ্যে আছে।
ব্যাবিলনীয়, মিশরীয়, বৈদিক যুগ থেকে হিরে কেন বিস্তর বিস্ময়কর কেন্দ্রবিন্দু দখল করে রয়েছে… কী শক্তির মহিমায়… তা নিয়ে গবেষণা একদিন আমি করবই… তার আগে গড়ে তুলব নিজের হিরের কারখানা। ইন্দ্র, ব্যাঙ্গালোরের জহর কমপ্লেক্স গড়ে তুলেছি এই প্রেরণা নিয়েই। হয়তো বালাজি’র মহিমায়… হয়তো!
ধরনা দিয়েছিলাম নন্দিতা কৃষ্ণা’র কাছে। তুই তো জানিস, অনেক রঙ্গ রসের গল্প করেছি তোকে আমার এই মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ লাইনের বহু বিচিত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে। ডাক্তারদের সঙ্গে দহরম মহরম বাখতে গিয়ে আপনা থেকে অন্তরঙ্গতা গড়ে উঠতে যে সব ডাক্তাররা মহিলা সেবিকা রাখেন-তাদের সঙ্গে। নার্স… নার্স… মেট্রন… সেবিকা বললে হয়তো মাথায় ঢুকবে না, তাই ইংলিশ। করে দিলাম। ডাক্তারি একটা বিজনেস… উকিল ব্যবসার মতো… অনেক উকিল যেমন লে িজুনিয়র রাখেন, অনেক ডাক্তারও তেমনি লেডি সাগরেদ রাখেন… মহিলা পেসেন্ট এলে যাতে অসুবিধা না হয়… ডাক্তার ভিজিট করতে গিয়ে এই সব অ্যাট্রাকটিভ নাস-মেট্রনদের সঙ্গে অটোমেটিক্যালি আমার একটা হৃদ্যতা গড়ে উঠত… নো, ম্যান, নো… অন্য সম্পর্ক গড়ে তোলার চান্স দিতাম না… তাহলে তো শ্রীকৃষ্ণের মতো হাজার যোল গোপিনী গড়ে উঠত এতদিনে… ওই একটা ব্যাপারে আমি খুব সজাগ… এমন কি নন্দিতা কৃষ্ণা নাম্নী সেই মেট্রনটির ক্ষেত্রেও… ভদ্রমহিলা যুবতী, রূপসী, টান-টান শরীরের অধিকারিনী, কিন্তু নিয়মিত রতিতৃপ্তি দিয়ে যেত ইহুদি ডাক্তার মহাশয়কে… বয়স যাঁর সত্তর… ইন্দ্রিয় ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যে ইয়োহিমবাইন হাইড্রোক্লোরাইড ইঞ্জেকশনটা নিতেন আমার কাছ থেকে…তখন তো ভায়াগ্রা বাজারে আসেনি… ভুরু কুঁচকোসনি… মূল কথা থেকে অমূল কথায় যেতে গেলে একটু-আধটু রসেব কথা এসে যাবেই…
চেন্নাই… মানে, মাদ্রাজের এই নন্দিতা কৃষ্ণা যে কি টেরিফিক ব্ল্যাক বিউটি, তা তোকে ভাষায় বর্ণনা করতে পারব না। মিশমিশে পাথর কুঁদে গড়া বললেই চলে। বালাজি বিগ্রহ যে পাথর থেকে তৈরি, অনেকটা সেই রকম পাথরের মতো। কিন্তু পাথরের জেল্লার জন্যে তার সঙ্গে দহরম মহরম সম্পর্ক গড়ে তুলেনি। ভদ্রমহিলা ব্যক্তিগত জীবনে কি ছিল, তা নিয়ে মস্তিষ্ক ঘর্মাক্ত করিনি—আমি আকৃষ্ট হয়েছিলাম তার জহর জ্ঞানের জন্যে।
নিছক জহর নয়, হিরে নামক পাথরটা সম্বন্ধে নন্দিতা একটা লিভিং এনসাইক্লোপিডিয়া বললেই চলে। জীবন্ত বিশ্বকোষ। একদিকে বালাজির প্রায় সেবাদাসী। অষ্টপ্রহর বালাজির নাম সংকীর্তন করত বললেও অত্যুক্তি করা হবে না। আর ঠিক এই একটা কারণেই আমি নিবিড় নৈকট্য রচনা করেছিলাম নন্দিতার সঙ্গে।
ইন্দ্র, কল্পনার সঙ্গে ভাব হওয়ার পর কথায় কথায় নন্দিতা প্রসঙ্গ এসে যেত। ঈর্ষার ফুলকি দেখতে পেতাম কল্পনার ফিকে সবুজ চোখের তারায়। এই মেয়েরা একটা জাত বটে। বিশেষ জীব। এদের ছাড়া গত অচল। অথচ এরা এত। ঈর্ষাকাতর যে কহতব্য নয়।
উল্টোপাল্টা বকছি? মেয়েদের ম্যাটার এলেই আমি একটু টলে যাই, মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড…আফটার অল, আই অ্যাম আ হিম্যান …
যাকগে… যাগগে…নন্দিতা… নন্দিতা নাটকে আসা যাক। নন্দিতা… কৃষ্ণা কামিন নন্দিত… হিরে নিয়ে গুলে খাওয়া কন্যা নন্দিতা… আমার ভেতর পর্যন্ত গুলিয়ে ছেড়েছিল শেষ পর্যন্ত, স্রেফ হীরক শক্তির ব্যাখ্যা শুনিয়ে…
বালাজি যার ধ্যান-জ্ঞান… শয়নে স্বপনে যে শুধু বালাজি নিয়েই ভাবে আর পাঁচজনকে ভাবায়, সে যে তার কালো চোখের বিদ্যুৎ দিয়ে আমার ভেতর পর্যন্ত তোলপাড় করে দেবে, তাতে আর আশ্চর্য কী! হিরে নিয়ে তড়বড়িয়ে কথা বলতে গিয়ে হয়তো একটু বাড়িয়েই বলেছিল… তা বলুক… আমি তো ক্রিমটুকু তুলে নিয়েছিলাম ওর ফেনাময় কথার স্রোতের মধ্যে থেকে…
বালাজি কালো পাথরে বিগ্রহ হতে পারে, কিন্তু বড় সঞ্জীব বিগ্রহ, পাথর দিয়ে গড়া বলেই বোধহয় তিনি পছন্দ করেন পৃথিবী গ্রহের সেরা পাথর… হিরে পছন্দটা এমনই প্রবল যে ভক্তের আঙুল থেকে হিরের আংটি পর্যন্ত ছিনিয়ে নেন।
আমি এই পর্যন্ত শুনে তাজ্জব হয়ে গিয়ে বলে ফেলেছিলাম, সে কী! পাথরের বিগ্রহ কি রক্তমাংসময় আঙুল থেকে আংটি কেড়ে নিতে পারে?
নন্দিতা বলেছিল, ঠিক এই রকম আপাত অসম্ভব ব্যাপারটাই যে ঘটে গেছিল একদিন।
আমি বলেছিলাম, বালাজি বেদি থেকে নেমে, ভক্তের আঙুল থেকে আংটি খুলে নিয়ে নিজের আঙুলে পরে, ফের বেদিতে উঠে গিয়ে বসে পড়েছিলেন?
তা কেন? তা কেন? মুখর হয়ে উঠেছিল আবলুস মেয়ে নন্দিতা কৃষ্ণা-ভক্ত এক সময়ে বালাজির সামনে এসে কথা দিয়ে গেছিল, তার অমুক মনোবাঞ্ছা যদি পূর্ণ হয়, তাহলে আঙুলের এই ঝকমকে মস্ত হিরের আংটি দিয়ে যাবে বালাজিকে।
ঘুষ?
প্লীজ, রসিকতা নয় বালাজিকে নিয়ে। মানৎ করলে তা দিতে হয়, হিন্দুধর্মের রেওয়াজ। বালাজি ভক্তের ইচ্ছে মিটিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর ইচ্ছাপূরণের শক্তি দিয়ে… ভক্ত কিন্তু কথা রাখেনি… আংটিটা আঙুলে পরে এসে যখন জোড় হাতে প্রণাম করে, আংটি আঙুলে রেখেই, সরে পড়তে যাচ্ছে… তখনই ঘটে গেল অলৌকিক কাণ্ডটা।
আঙুল থেকে আংটি খুলে বেরিয়ে গেল?
আজ্ঞে। হাওয়ায় উড়ে গিয়ে ছিটকে পড়ল… বলুন তো কোথায়?
বালাজির চরণতলে?
প্রণামী নেওয়ার থলিতে।
অদৃশ্য শক্তির টানে?
আজ্ঞে।
এমনও তো হতে পারে, আমি ধীরে সুস্থে বলেছিলাম—পুরো ব্যাপারটাই রটনা।
রটনা! কথাটার অর্থ?
অতীব সরল। মানৎ করা আংটি আঙুল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পাণ্ডারা ফেলে দিয়েছিল প্রণামীর থলিতে।
তিরুপতির মন্দিরে পাণ্ডারা গুণ্ডা নয়, সব্বাই তা জানে।
আমি আর কথা বাড়াইনি। হিরে প্রসঙ্গে চলে গেছিলাম। নন্দিতার মুখ থেকেই শুনেছিলাম, তিরুপতির রত্নগর্ভে সঞ্চিত হয়ে এসেছে অমূল্য অনেক হিরে সুদূর অতীতকাল থেকে ইণ্ডিয়া যখন ছিল ডায়মণ্ডের একমাত্র উৎস—এই পৃথিবীতে। দক্ষিণ ভারতের বহু রাজ্যের উত্থান আর পতন ঘটেছে এই হিরে সম্পদকে কেন্দ্র করে। সাম্রাজ্য শক্তি বাড়িয়েছে, শক্তি হারিয়ে ধুলোয় বিলীন হয়েছে—মূলে রয়েছে খনি থেকে উঠে আসা হিরে। যত হিরে উপহার দিয়েছে খনি, তার বেশির ভাগ গেছে তিরুপতি আর অন্য অন্য মন্দিরে—ভক্ত শাসকদের প্রণামী হিসেবে। বিগ্রহদের তুষ্ট রাখবার পর নৃপতিরা নিজেদেরকে হিরে দিয়ে সাজিয়েছে নর-দেবতা হওয়ার অভিলাষে। হিরে এনে দিয়েছে দেব-দ্যুতি, মুগ্ধ থেকেছে প্রজারা। ইউরোপের দূর দুর অঞ্চল থেকে পর্যটকরা এসেছে, রাজসভায় হিরের ছড়াছড়ি দেখে হতভম্ব হয়ে ফিরে গিয়ে সেই গল্প শুনিয়েছে স্বদেশে। হিরে, হিরে, হিরে-হিরেময় দেশ এই ভারতবর্ষ। যোড়শ শতাব্দীতে এমন এক পর্যটকের আক্কেলগুড়ুম হয়ে গেছিল বিজয়নগরের রাজার ঘোড়র গায়ে হিরের সাজ দেখে। এত হিরে দিয়ে তো একটা মস্ত শহর মুড়ে দেওয়া যায়!
হায়দ্রাবাদের প্রান্তে পাহাড়ের ওপর রয়েছে গোলকোণ্ডার রাজাদের কেল্লা প্রাসাদ। তিনশো বছর আগে সেই প্রাসাদ লুঠ করে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে মোগল লুঠেরা-রা। পরিত্যক্ত সেই প্রাসাদ এখন চিল আর মাছরাঙাদের রাজত্ব। তাদের কলরবেই মুখর হয়ে থাকে একদা বিপুল ঐশ্বর্যের কেন্দ্র-আর জেগে থাকে অশ্রুত দীর্ঘশ্বাস-হিরে নিয়ে যারা একদা ধরাকে সরা জ্ঞান করেছিল—এই দীর্ঘশ্বাস সেই বিদেহীদের।
ভারতবর্ষের সবচেয়ে নামজাদা হীরক রাজত্ব ছিল এই গোলকোণ্ডায়। এত বছর পনেও হিরে-ঐশ্বর্য নিয়ে কথা বলতে গেলেই গোলকোণ্ডার নাম এসে যায়। সম্পদ আর গোলকোণ্ডা-সমার্থক হয়ে এখানকার হিরে বর্ষণ করেছে রক্তাক্ত অভিশাপ। কোহিনুর, হোপ ডায়মণ্ড, রিজেন্ট-ইতিহাস প্রসিদ্ধ এই হিরদের প্রথম আবির্ভাব তো গোলকোণ্ডায়, এ ছাড়াও আরও অনেক চোখ ধাঁধানো হিরে এই গোলকোণ্ডা থেকে বেরিয়ে এদেশে বিদেশে রক্তঝরানো অনেক নাটকের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরা… এই রক্তলোভী হিরেরা… এদেশ থেকে গেছে ভারতবর্ষের বাইরে হাত বদল হতে হতে… বিক্রি, উপটৌকন, উৎকোচ, চুরি, লুঠ। আজও ইণ্ডিয়ার বহু পুরোনো বড়লোকের প্রাসাদে পাওয়া যাবে এমন সব হিবে, যাদের কাটাই করা হয়েছে সেকেলে পন্থায়—যে কাটিং পদ্ধতির মডার্ন অনুকরণ আজকের। হিরেদের গায়ে দেখতে পাওয়া যায়। হিরে কাটিংয়ের এহেন অভিনবত্ব থেকে। আঁচ করে নেওয়া যায়, কি পর্যায়ে পোঁচেছিল হীরক সমৃদ্ধ ইণ্ডিয়ার হিরে কারিগরেরা।
আজ তারা নেই। ইন্দ্র, ভাগ্যের বিপুল পরিহাসে চাকাও ঘুরে গেছে। ইণ্ডিয়ার হিরে-খনিগুলোয় হিরে ফুরিয়ে যাওয়ার অনেক… অনেক বছর পরে… গোলকোণ্ডার শেষ হিরে কারবারি গোলাকোণ্ডা ছেড়ে চলে যাওয়ার বহু… বহু বছর পরে… বিশ্বের হিরের। ফের এই ভারত দিয়েই যাচ্ছে আর আসছে।
ইন্দ্র, তুই কি ধৈর্য হারাচ্ছিস? হিরে নিয়ে বেশি ফেনিয়ে যাচ্ছি? আমি নিরুপায় ইন্দ্র, আমি নিরুপায়। “হিরে এমনই একটা পাথর যার মধ্যে আছে একটা সুপার ন্যাচারাল পাওয়ার… হিরে নিয়ে কথা শুরু করলে তাই তো তা শেষ করা যায়
… এই পৃথিবীতে অনেক ভেল্কি অনেক উত্থান পতন দেখিয়ে গেছে ঝকমকে এই পাথরেরা. দেখাচ্ছে এখনও… আমি বড্ড বেশি জড়িয়ে গেছি এই বিজনেসে—লক্ষ্য একটাই. ইণ্ডিয়ার লুপ্ত গৌরব ফিরিয়ে আনবই।
কি বলছিলাম? এই পৃথিবীর বেশির ভাগ হিরের প্যাসেজ এখন এই ইণ্ডিয়ার ভেতর দিয়ে। চাকা ঘুরছে, ইন্দ্র, চাকা ঘুরছে… ভারত আবার জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে… ইয়ে… নেবে।
তবে হ্যাঁ, বেশির ভাগ হিবেই কিন্তু একেবারে খুদে… এক ক্যারাটের ফ্র্যাকশন… ভগ্নাংশ। তিরিশ বছর আগেও খুদে খুদে এই হিরে মহাশয়দের দরকার ছিল শুধু একটাই ব্যাপারে… ড্রিলের ডগায় সেঁটে কাটাই করার জন্যে। বালির মতো ছোট ছোট হিরে কেটে রত্ন বানাতে যে লেবার খরচ হতো নিউইয়র্ক, অ্যান্টওয়ার্প, তেল আভিভে-তাতে দরে পোষাত না।
ভেলকি শুরু হয়ে গেল ১৯৭০ সাল থেকে। একদল জৈন জহুরিদের উদ্যোগে। এঁরাই কোমর বেঁধে লাগলেন। অতি ছোট হিরে মহাশয়দের কাটাই পালিশ করে এক্সপোর্টের ব্যবস্থা করলেন। শুরু করেছিলেন বোম্বাই শহরে, সরে গেলেন সুরাট শহরে… আরও কয়েকটা শহরে… অন্য অন্য প্রদেশে… শুরু হয়ে গেল হীরক। বাণিজ্য নতুন চেহারায়।