১. তানিয়ার স্কুল আর বন্ধুরা

রত্নেশ্বরীর কালো ছায়া – কিশোর উপন্যাস – শাহরিয়ার কবির

১. তানিয়ার স্কুল আর বন্ধুরা

টিফিন পিরিয়ডের ঘন্টা শেষ হতেই তানিয়ার বুকের ভেতর ধুকপুক শুরু হলো। ফিফথ পিরিয়ডে মরিয়ম আপার ভূগোলের ক্লাস। গত সপ্তাহে হোমওয়ার্ক দিয়েছিলেন ড্রইং খাতায় বাংলাদেশের প্রাকৃতিক মানচিত্র এঁকে আনতে হবে। বলেছেন, শুধু পেন্সিলে আঁকলে চলবে না। রঙিন পেন্সিলে সীমারেখা আর নদী আঁকবে। পাহাড়ী এলাকার জন্য ব্যবহার করবে, প্যাস্টেল রঙ।

কিভাবে আঁকতে হবে বুঝিয়ে দিয়ে মরিয়ম আপা থুতনি নামিয়ে চশমার ফাঁক দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমাদের সবার প্যাস্টেল রঙ আছে তো?

দুতিন জন ছাড়া সদ্য ক্লাস এইটে ওঠা সব মেয়ে কোরাসে বললো, আছে আপা।

প্যাস্টেল হলে রিলিফের উঁচু নিচু ভাবটা সুন্দরভাবে বোঝানো যায়। যাদের নেই তারা কাল পরশু কিনে ফেলবে।

কথাটা খুব সহজ গলায় বলেছিলেন মরিয়ম আপা। নিজে বড়লোকের মেয়ে, গাড়িতে স্কুলে আসেন। টিচারের চাকরিটা তাঁর সখের। সবাইকে নিজের মতোই ভাবেন। তার কথা শুনে লাস্ট বেঞ্চের তানিয়ার গলা শুকিয়ে এমনই কাঠ হয়ে গিয়েছিলো যে ঢোক গিলতেও পারছিলো না।

প্যাস্টেল, রঙ পেন্সিল দূরে থাক তানিয়ার ড্রইং খাতা পর্যন্ত নেই। মাসের তেইশ তারিখে ড্রইং খাতা কেনার কথা বললেই বাবার গম্ভীর চেহারা আরও গম্ভীর হয়ে যাবে। রঙ পেন্সিল আর প্যাস্টেল কেনার প্রশ্নই ওঠে না। সামনের বেঞ্চের সীমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো প্যাস্টেলের দাম কত। সীমা বিজ্ঞের মতো বলেছে, ভালো প্যাস্টেল চার পাঁচশ টাকার নিচে নয়। সবচেয়ে সস্তা যেটা তারও দাম একশ টাকা। বড়লোকের মেয়ে হলেও সীমা অন্যদের মতো নাক উঁচু স্বভাবের নয়।

একটা ড্রইং খাতার দাম তিরিশ টাকা। রং পেন্সিলের বাক্স পঁচিশ টাকা, প্যাস্টেল একশ টাকা। গত সাতদিনে যতবার তানিয়া হিসেব করেছে ততবার দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিছু করতে পারেনি।

মা বেঁচে থাকতে সংসারের খরচ বাঁচিয়ে মাসের শেষে চল্লিশ পঞ্চাশ টাকা পর্যন্ত জমাতে পারতেন। মা মারা যাওয়ার পর থেকে খরচ যা করার বাবাই করেন। খুব দরকার না হলে বুয়ার। হাতেও টাকা পয়সা দেন না। বুয়া অবশ্য আজকাল আড়ালে গজ গজ করে পান খাওনের পয়সা দেয় না, নিত্যি নিত্যি মাইনষের বাড়িত গিয়া পান খাওন যায়!

মরিয়ম আপার হাত থেকে সাময়িকভাবে রক্ষা পাওয়ার একটা পথ অবশ্য তানিয়ার সামনে খোলা ছিলো। ও জানে ফাস্ট বেঞ্চ থেকে এক এক করে খাতা দেখবেন তিনি। ভালো খারাপ যাই হোক মন্তব্য করবেন, সবাইকে দেখাবেন, তারপর নম্বর দেবেন। তানিয়ার আগে চল্লিশটা খাতা দেখতে হবে। প্রতি খাতা দেখতে যদি এক মিনিট করে লাগে তানিয়ার ডাক আসার আগেই পিরিয়ড শেষ হয়ে যাবে। যাদের বাকি থাকবে তাদেরটা পরের সপ্তায় দেখবেন। সামনের মাসের শুরুতে বাবাকে ড্রইং খাতা আর রঙ পেন্সিলের কথা বলা যাবে।

এত সব ভাবার পরও তানিয়ার ভয় যায়নি। যদি কোনও খাতা দেখতে এক মিনিটের কম লাগে, কিংবা যদি মনিটরকে বলেন সবার খাতা এক সঙ্গে তাঁর টেবিলে জমা দেয়ার জন্য তাহলেই ধরা পড়ে যাবে। নরম গলায় এমন সব শক্ত কথা বলেন মরিয়ম আপা কান্না সামলানোই কঠিন! গত ক্লাসেই রুমকিকে বলছিলেন, বাবার টাকা পয়সা তো কম নেই? হোমওয়ার্ক করতে কষ্ট হলে দুটো হাউস টিউটর রাখলেই তো হয়। নাকি পড়াশোনারই ইচ্ছে নেই। চেহারা খারাপ না, বাপের টাকাও আছে, লেখাপড়ার জন্য বিয়ে আটকাবে না। এরকম সব হুল বসানো কথা শুনে রুমকি সারা পিরিয়ড ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছে।

তানিয়ার উপায় নেই। মা মারা গেছেন এক বছরের ওপর। তানিয়ার কান্না আজও ফুরোয়নি। বাবা সামান্য বকুনি দিলেই ওর চোখ ফেটে কান্না আসে। মা বেঁচে থাকতে বাবা কোনও দিন ওকে বকেননি। মাস ছয়েক হলো বাবার মেজাজ খুবই খিটখিটে হয়ে গেছে। এমনই এক স্কুলে মাস্টারি করেন যেখানে তিন চার মাস বেতন বাকি থাকে। মা বেঁচে থাকতে গোটা চারেক টিউশনি করতেন। সব সময় মেজাজ করেন বলে আজকাল ওঁকে কেউ বেশি দিন টিউশনিতে রাখতে চায় না। বয়স পঁয়তাল্লিশ হলেও দেখে মনে হয় পঞ্চাশের ওপর। এ বয়সেই মুখে বয়সের ভাঁজ পড়েছে, চুলও প্রায় সব সাদা হয়ে গেছে। স্কুলে হেড মাস্টারের ধমক খেলে কিংবা টিউশনির কোনও ছাত্রছাত্রীর বাবা মা কড়া কথা বললে বাড়ি ফিরে তানিয়ার ওপর রাগ ঝাড়েন।

তানিয়ার আরও কান্না পায় যখন মনে হয় মা বেঁচে থাকতে এই বাবাই ওকে কত মজার মজার বই পড়ে শুনিয়েছেন। ট্রেজার আইল্যাণ্ড, এ্যাডভেঞ্চার অব হাকলবেরি ফিন, মবি ডিক, লিটল প্রিন্স, কিং সলোমনস মাইস্–এসব বই বাবা ইংরেজিতে পড়ে ওকে বাংলায় বুঝিয়ে দিয়েছেন। মজার মজার ইংরেজি বই বাবা ওঁদের স্কুলের লাইব্রেরি থেকে আনতেন। বাংলা বই তানিয়া নিজেদের স্কুল লাইব্রেরি থেকে নিয়ে পড়তো। মা মারা যাওয়ার পর ওর গল্পের বই পড়ার অভ্যাসও চলে গেছে।

টিফিনের পর দীর্ঘশ্বাস বুকে চেপে তানিয়া ক্লাসে এসে লাস্ট বেঞ্চের কোণে বসে মার কথা ভাবছিলো। মরিয়ম আপা খুব গম্ভীর মুখে ক্লাসে ঢুকলেন। মেয়েদের বসতে বলে নিজেও বসলেন। কোনও কথা না বলে বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকলেন। তারপর বললেন, অংকের মেহেরুননেসা আপার কথা তোমাদের মনে আছে?

মেয়েরা সবাই একটু অবাক হলো। কয়েকজন বললো, আছে আপা!

মেহেরুননেসা আপা কখনও তানিয়াদের ক্লাস নেননি। এইট, নাইন, টেন-এ অংক করাতেন তিনি। চল্লিশ বছর একটানা আনন্দময়ী স্কুলে শিক্ষকতা করার পর মাস ছয়েক আগে অবসর নিয়েছেন। তাকে যেদিন ফেয়ারওয়েল দেয়া হলো সেদিন অনেক অভিভাবকও এসেছিলেন। ছোট খাট গড়নের, সব সময় সরু পাড়ের সাদা শাড়ি পরতেন। খুব টান টান করে। খোঁপা বাঁধতেন, মাথার চেয়ে খোঁপা বড় ছিলো। ফেয়ারওয়েল প্রোগ্রামে তাঁর বক্তৃতা শুনে তানিয়ার খুব কান্না পেয়েছিলো।

আপা ভারি গলায় বললেন, আজ সকালে মেহেরুননেসা আপা মারা গেছেন।

মেয়েরা কয়েক মুহূর্ত কোনও কথা বলতে পারলো না। ওদের ক্লাস না নিলেও স্কুলের সবাই মেহেরুননেসা আপাকে খুব ভালোবাসতো। ক্লাসের মনিটর রেহানা দাঁড়িয়ে মরিয়ম আপাকে আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করলো, র কী হয়েছিলো?

বয়স তো কম হয়নি! ভেজা গলায় আপা বললেন, একা থাকতেন। হাই ব্লাড প্রেসার ছিলো। ঘুমের ভেতরই হার্ট এ্যাটাক হয়েছে। সকালে কাজের মেয়ে এসে দেখে বিছানায় মরে পড়ে আছেন।

মরিয়ম আপার অবস্থা দেখে মনে হয় না আজ আর হোম ওয়ার্ক দেখবেন। তানিয়া তবু খুশি হতে পারলো না। মেহেরুননেসা আপাকে ওরও খুব ভালো লাগতো। আদর করে তানিয়াকে তিনি গানের পাখি ডাকতেন। গত বছর মা মারা যাওয়ার খবর শুনে ছুটির পর ওকে ডেকে মাথায় হাত বুলিয়ে অনেক আদর করে বলেছিলেন, মা না থাকা যে কী কষ্টের আরেকটু বড় হলে বুঝবি। তোর তো বড় বোনও নেই। আমি অবশ্য তোর চেয়ে ছোট থাকতে বাবা মা দুজনকে হারিয়েছি। স্কুলের কোনও টিচার তানিয়াকে এভাবে সান্ত্বনা দেননি।

মরিয়ম আপা বললেন, একটু পরে স্কুল ছুটি হয়ে যাবে। আমি আশা করবো মেহেরুননেসা আপার আত্মার প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য ছুটির পর তোমরা কেউ মাঠে হই হল্লা না করে চুপচাপ বাড়ি চলে যাবে। যাদের নিতে আসবে তারা বাড়িতে ফোন করে বলতে পারো।

ফোর্থ গার্ল পারুল বললো, আমাদের বাড়িতে ফোন নেই আপা। চাচা আমাকে সাড়ে চারটায় নিতে আসবেন।

অনিতা বললো, আমাদেরও ফোন নেই আপা।

তানিয়ার স্কুল জীবনে এই প্রথম আগে থেকে না বলে বিনা নোটিসে হঠাৎ ছুটি হলো । মরিয়ম আপা একটু বিরক্ত হয়ে বললেন, যাদের ফোন নেই অথচ বাড়ি থেকে নিতে আসবে, তারা চুপচাপ বসে অপেক্ষা করবে। কোনও হই হল্লা করবে না।

কথা শেষ করে মরিয়ম আপা গম্ভীর মুখে বসে থাকলেন। মেয়েরা কেউ এতটুকু শব্দ করলো না। মারা যাওয়ার সময় মেহেরুননেসা আপার পাশে কেউ ছিলেন না–কথাটা ভাবতে গিয়ে তানিয়ার বুকের ভেতর কান্না জমে জমে গলার কাছে ব্যথা করছিলো। মিনিট পাঁচেক পর ছুটির ঘন্টা বাজলো। মরিয়ম আপা উঠে দাঁড়ালেন। মেয়েরাও সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়ালো। আস্তে আস্তে হেঁটে আপা ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলেন। কোন রকম হল্লা না করে মেয়েরাও তাঁর পেছন পেছন বেরিয়ে এলো।

তানিয়ার পাশে চুপচাপ হাঁটছিলো পারুল। ভালো ছাত্রীদের ভেতর পারুলের সঙ্গেই ওর বেশি ভাব। যে দুটো মেয়ে ফার্স্ট আর সেকেণ্ড হয় ওদের নাক এত উঁচু যে পেছনের বেঞ্চের মেয়েদের চোখেই পড়ে না। বিশেষ করে ফাস্ট গার্ল মুনা কখনও মুখোমুখি হলে চশমার ভেতর দিয়ে তানিয়াদের দিকে এমনভাবে তাকায় যেন ওরা মঙ্গল গ্রহ থেকে এসেছে। পারুল বলে, ফার্স্ট হলে কী হবে, হিংসার ডিপো একটা।

হাঁটতে হাঁটতে পারুল বললো, তুই কি এখনই বাড়ি যাবি তানিয়া?

বাড়ি না গিয়ে কী করবো? বিষণ্ণ গলায় পাল্টা প্রশ্ন করলো তানিয়া। ওকে কেউ স্কুলে নিতে আসে না। সকালে বুয়া যখন বাজারে বেরোয় তখন তানিয়া ওর সঙ্গে স্কুল পর্যন্ত এক সঙ্গে আসে। তানিয়াদের স্কুল পেরিয়ে নয়া বাজারে যেতে হয়।

পারুল করুণ গলায় বললো, সবাই তো বাড়ি চলে যাচ্ছে। চাচা আসা পর্যন্ত আমার সঙ্গে থাকবি?

তুই যদি থাকতে বলিস থাকবো।

থেকে যা তানিয়া। পারুলের মুখে হাসি ফুটলো–তোকে জোবেদালির দোকান থেকে পেয়ারা কিনে খাওয়াবো।

সকালে যদিও তানিয়া ভাত খেয়ে স্কুলে আসে ফিফথ পিরিয়ড শেষ না হতেই খিদেয় পেট চিন চিন করতে থাকে। ছুটির পর বাড়ি ফিরে এক বাটি মুড়ি আর দু গ্লাস পানি খেয়ে খিদের আগুন নেভাতে হয়। মাঝে মাঝে কোন বন্ধু জোর করে পেয়ারা না হয় ডালপুরি কিংবা সিঙাড়া কিনে খাওয়ায়। জোর না করলে তানিয়া কখনও অন্যের কেনা কিছু নেয় না। ও জানে কেউ দুদিন খাওয়ালে ওকে একদিন অন্তত খাওয়াতে হবে। মা যখন বেঁচে ছিলেন তখন ওকে টিফিনের কৌটোয় দুটো সিঙাড়া নয়তো ঘরে বানানো নিমকি দিতেন। মা মারা যাওয়ার পর বাবা কোনও দিন জানতে চাননি তানিয়া স্কুলে টিফিন করে কিনা কিংবা ওর হাত খরচের জন্য টাকা পয়সা কিছু লাগবে কিনা। তানিয়াও এ নিয়ে বাবাকে কিছু বলেনি।

স্কুলে ঢোকার পথের ধারে ছাগুলে দাড়ি জোবেদালি রকমারি আচার আর পেয়ারা নিয়ে বসে। কখনও পেয়ারা না থাকলে জাম, করমচা, আমড়া পাকা জলপাই নয়তো লটকন–কিছু একটা থাকবেই। আমের সময় দারুণ মজার কাঁচামিঠে আম বিক্রি করে জোবেদালি। তানিয়াকে সঙ্গে নিয়ে পারুল ওর দোকান থেকে চার টাকা দিয়ে মস্ত বড় দুটো ভঁসা পেয়ারা কিনলো। জোবেদালি ধারালো ছুরি দিয়ে পেয়ারা দুটো চার ফালি করে ভেতরে ঝাল মেশানো

লবন ছড়িয়ে দিলো। দেখে তানিয়ার চোখ দুটো চক চক করে উঠলো।

গাইড আর বু বার্ডদের পিটি করার মাঠের পাশে বকুল তলায় বসে পেয়ারা খেতে খেতে পারুল বললো, মরিয়ম আপার হোমওয়ার্ক করেছিলি তানিয়া?

না। শুকনো গলায় তানিয়া বললো, তুই করেছিলি?

করেছিলাম তাড়াহুড়ো করে। ভালো হয়নি। দেখতে চাইলে নম্বর বেশি পেতাম না। একটু থেমে পারুল জানতে চাইলো, তুই করিসনি কেন?

কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে তানিয়া আস্তে আস্তে বললো, আমার ড্রইং খাতা, রঙ পেন্সিল আর প্যাস্টেল কোনওটাই নেই।

বলিস কী! অসময়ে স্কুল ছুটি না হলে মরিয়ম আপা তোকে আস্ত রাখতেন নাকি?

কী করবো বল! দীর্ঘশ্বাস ফেলে তানিয়া বললো, আমাদের বাড়ির অবস্থা তো তুই জানিস। মাসের শেষে এসব কেনার কথা বাবাকে বলা যাবে না।

তানিয়ার কথা শুনে পারুলের খুব খারাপ লাগলো। ওর মা মারা যাওয়ার পর পারুল আর সীমা ওদের বাড়িতে বেশ কয়েক বার গিয়েছে। দুজনই লক্ষ্য করেছে তানিয়াদের বাড়ির অবস্থা ভালো নয়। একটু ভেবে পারুল বললো, তুই যদি কিছু মনে না করিস তোকে আমি আমার পুরোনো প্যাস্টেলের বাক্সটা দিতে পারি । অবশ্য ওতে দুটো রঙ কম আছে। আমার ছোট ভাইটা খেলতে গিয়ে হারিয়েছে। তবে তোর ম্যাপ আঁকার কাজ চলে যাবে।

তোরটা আমাকে দিলে তুই কী দিয়ে আঁকবি?

বললাম না পুরোনোটা! গত মাসে জন্মদিনে আমি বড় দু বাক্স প্যাস্টেল উপহার পেয়েছি। ছোট ভাইটা যা পাজী! সঙ্গে সঙ্গে একটা ওর ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলেছে।

তানিয়া মৃদু হাসলো। পারুল বললো, রঙ পেন্সিলের বাক্সও এখন কেনার দরকার নেই। আমারটা একদিনের জন্য ধার নিস?

আজকাল তানিয়াকে কেউ ভালোবেসে দুটো কথা বললেও ওর কান্না পায়। ধরা গলায় ফিশ ফিশ করে শুধু বললো, তুই এত ভালো পারু!

তুই এত চাপা স্বভাবের হয়েছিস কেন তানিয়া? তোর মা মারা যাওয়ার পর আমার মা তোকে বলেন নি কিছু দরকার হলে আমাকে বলার জন্য?

তানিয়া কোনও কথা না বলে দুর্বা ঘাসের ডগা ছিঁড়তে লাগলো। পারুল আবার বললো, কিরে, কথা বলছিস না কেন?

তানিয়া আস্তে আস্তে বললো, কারও কাছে কিছু চাইতে আমার খারাপ লাগে। তার মানে তুই আমাকে বন্ধু ভাবিস না।

বন্ধু কেন ভাববো না! ম্লান হেসে তানিয়া বললো, তুই আর সীমা ছাড়া ক্লাসে আমার তেমন বন্ধু কোথায়?

বন্ধু যদি ভাবিস তোর কাছে কিছু চাইলে আমাকে দিবি না?

দেবো না কেন? বিব্রত গলায় তানিয়া বললো, আমার কাছে দেয়ার মতো আছেই বা কী!

থাকলে নিশ্চয় দিতি?

তা দিতাম।

তাহলে নিতেই বা আপত্তি করছিস কেন?

কিছু নিতে গেলে দিতেও হয় পারু!

 এত হিসেব করে বন্ধুত্ব হয় না তানি।

তানিয়া কোনও কথা বললো না। পারুল আবার বললো, আমার জন্মদিনে তুই কী সুন্দর একটা চিঠি দিয়েছিলি, মনে আছে?

মনে থাকবে না কেন, শুকনো হেসে তানিয়া বললো, আমি কিছু দিতে পারিনি সে কথাই তো লিখেছিলাম চিঠিতে।

চিঠিতে তুই দিয়েছিলি তোর অফুরন্ত ভালোবাসা। আমার জন্মদিনে সবচেয়ে আনন্দের উপহার ছিলো ওটা।

তানিয়া হাসলো–তুই আসলেই খুব ভালো মেয়ে পারু। তাই এভাবে বলছিস।

দেড় ঘন্টা পর পারুলের ছোট চাচা ওকে নিতে এলে। এই সময়টুকু ওরা দুজন বন্ধুত্ব আর ভালোবাসার কথা বলেই কাটিয়ে দিলো।

.