পর্দা ঠেলে ভিতরে ঢুকে দেখল, সেলিমের সামনে বাবলি একগাদা বইপত্র নিয়ে মুখ কালো করে বসে আছে। বাবরকে দেখে দ্রুত চোখ নামিয়ে নিল বাবলি। এলোপাতাড়ি একটা বই ওল্টাতে লাগল।
সেলিম বলল, আয়। তোর কথা শুনে বাবলিকে নিয়ে বসেছিলাম পড়াশুনা দেখতে। হোয়াট ইজ ইকনমিকস তাই বলতে পারল না।
তাই নাকি বাবলি?
বলতে বলতে বাবর বসল।
তবে আর বলছি কী? এ নির্ঘাত ফেল করবে। কিছু পড়েনি। শুধু ঘোরাফেরা, হৈচৈ, চুল আঁচড়ানো, সিনেমা দেখা।
বলেছে তোমাকে? কটা সিনেমা দেখেছি গত মাসে? বাবলি প্রতিবাদ করে উঠল। আর সঙ্গে সঙ্গে কালো ক্রুর একটা চাহনি দিল বাবরকে।
কেমন অপ্ৰস্তুত হয়ে গেল বাবর, যা সে সাধারণত হয় না। সেলিম ওকে বলতে গেল কেন যে সে তার পড়াশোনার খোঁজ নিতে বলেছে? একটা গাধা! গৰ্দভ।
বল না কটা সিনেমা দেখেছি? বাবলি মরিয়া হয়ে জের টেনে চলে, সত্যি করে বল! রিচার্ড বাটনের এত সুন্দর বইটা সবাই দেখে পচিয়ে ফেলল, আমি দেখেছি? তারপর ওমর শরিফের পিটার ও টুলের নাইট অব দি জেনারেল?
সিনেমা না দেখলেও নাম তো সব মুখস্থ দেখছি! সেলিম বলল।
নাম পড়তে পয়সা লাগে নাকি? কাগজে বিজ্ঞাপন দেখেছি, তাই বলি।
কাগজে সিনেমার বিজ্ঞাপন ছাড়া আর কিছু পড়ার থাকে না বুঝি?
বাবর এবার এগিয়ে এলো বাবলিকে উদ্ধার করতে।
আচ্ছা হয়েছে। ইকনমিকসের ডেফিনেশন পরীক্ষায় আসে না। এলেও থাকে। পাঁচ নম্বর। যাও, তুমি পড়তে যাও।
একটা ক্রুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বাবলি গ্যাঁট হয়ে বসে রইল। ভাবখানা যেন, আপনার কথায় পড়তে যাব নাকি? বাবর তাকিয়ে দেখল, এই প্রথম সে লক্ষ করল, তখনকার জামা কামিজ এখনো বাবলি ছাড়েনি। এর আগে কতদিন সে দেখেছে। এই পোশাক। কিন্তু আজ অন্য রকম মনে হচ্ছে। ঐ তো সেই বোতামগুলো, পিঠের পরে, যা সে খুলেছিল। কোমরে রবারের ব্যাণ্ড দাঁত কামড়ে বসে আছে নিশ্চয়ই তার মসৃণ তলপেটে। একটা তুলতুলে বাচ্চার মত পেটটা তখন উঠছিল নামছিল। করতল দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তার ওপর ঘষতে ভারি ভাল লাগছিল বাবরের।
সেলিম বলল, যা এখন। দুদিন বাদে সব পড়া ধরব।
দুম দুম করে তখন উঠে গেল বাবলি।
হেসে উঠল বাবর। একবার সেই কারণে বাবলি পেছন ফিরে তাকিয়েছিল। সে চলে গেলে বাবর বলল, তোরাও তো তেমনি মাথা খারাপ। পড়াশুনার কথা বলছি বলে সঙ্গে সঙ্গে ধরতে হয়?
না, তুই ঠিকই বলেছিস। ও মোটে পড়াশুনা করছে না।
আমি কোথায় বলেছি, পড়াশুনা করে না? বলেছি, খোঁজ টোজ নিস আর তাছাড়া মানুষের মন কি সব সময় এক রকম থাকে? অনেক সময় জানা জিনিসও টপ করে বলা যায় না।
ঐটুকু মেয়ে তার আবার মন মেজাজ!
নে বাদ দে। ছেলেমেয়েরা ওরকম একটু হয়েই থাকে। ফারুক এসেছে শুনেছিস?
বলেই বাবর শংকিত হলো। বাবলি কি এসে বলেছে তার ভাইয়াকে যে ফারুক এসেছে?
যদি বলে থাকে তাহলে সেলিম জানে তার সঙ্গে বাবলির দেখা হয়েছিল। অথচ টেলিভিশন থেকে যখন ফোন করেছিল তখন সে এমনি ভাব করেছিল, যেন অনেকদিন দেখা হয়নি।
না, শুনিনি তো। কবে এসেছে?
যাক বাঁচা গেছে, মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল বাবর। বলল, এইতো সেদিন।
কোথায় উঠেছে?
শ্বশুর বাড়িতে। আর কোথায়? বলছে, পলিটিকস করবে।
পলিটিকস?
হ্যাঁ, হ্যাঁ, পলিটিকস। বলছে, আওয়ামী লীগে ঢুকবে।
তাতো ঢুকবেই। এখন আওয়ামী লীগের দিন।
তা ঠিক। সবাই এখন শেখ সাহেব বলতে পাগল। বাবর বলল, শেখ সাহেবের পাশে একটু বসতে পারলে যেন কৃতাৰ্থ হয়ে যায়। অথচ এরাই জানিস, শেখ সাহেব যখন আগরতলা মামলার আসামি ছিলেন তার নাম পর্যন্ত মুখে আনতেন না ভয়ে।
হা হা করে হেসে উঠল সেলিম।
ঠিকই বলেছিস। দুনিয়াটাই ও রকম। আচ্ছা, তোর কী মনে হয়, শেখ সাহেব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন এবার?
হতেও পারেন। পলিটিকস আমি বুঝি না।
ফারুক কী বলে?
ওর সাথে কথা হয়নি।
ফারুক যখন আওয়ামী লীগে যেতে চাচ্ছে তখন কী আর এমনি যেতে চাচ্ছে? এক নম্বর সুযোগ সন্ধানী ছেলে। বরাবর। মনে নেই, কী করে ফাস্ট ক্লাস বাগাল এম.এ-তে?
আছে, আছে। মনে থাকবে না?
কই গো দ্যাখো বাবর এসেছে, কিছু খেতে টোতে দাও।
ব্যস্ত হচ্ছিস কেন?
সেলিমের বৌ এসে বলল, ভাল আছেন?
আছি। আপনি ভাল তো?
এই যা দেখছেন। চিংড়ির কাটলেট খাবেন?
নিশ্চয়ই। আমার খুব প্রিয়।
তাহলে একটু দেরি করতে হবে।
করব। যেমন আদেশ করবেন।
হেসে চলে গেল সুলতানা।
সেলিম বলল, তুই আর বিয়ে টিয়ে করবি না?
কেন, পাত্রী আছে নাকি ভাল?
খুঁজে পেতে কতক্ষণ? তুই করলে তো! আচ্ছা, নাকি, তুই সত্যি বলতো, তোর কোনো ব্যারাম ট্যারাম নেই তো? মানে— এই আর কী–
বাবর অট্টহাসিতে ভেঙ্গে পড়ল।
থাকতেও তো পারে। একটা যন্ত্র দু এক বছর ফেলে রাখলেও বিকল হয়ে যায়, আর তো মানুষের শরীর। তুই ডাক্তার দেখা।
তুই দেখছি ধরেই নিয়েছিস আমারটা অকেজো হয়ে গেছে।
তাহলে বিয়ে করিস না কেন?
বাদ দে বিয়ের কথা। বিয়ে করব চুল টুল যখন শাদা হবে তখন।
চুল কী এখন কালো আছে তোর?
তা সত্যি। বুড়েই হয়ে গেছিরে। আর এখন মেয়ে দেবেই বা কে, বল? তাছাড়া দেশের যা অবস্থা।
দেশের অবস্থার সঙ্গে তোল বিয়ের যোগটা কী শুনি? কারবি তো ভারি–একটা বিয়ে। ইচ্ছে নেই সেই কথা বল।
রেখে দে। বুড়ো কালে আর এসব ভাল লাগে না। তোর মেয়ে কই?
আছে ভেতরে।
নিয়ে আয় না? একটু দেখি–এই দ্যাখো, কিছু আনিনি ওর জন্যে। বাসায় চকোলেট ছিল। একেবারে বিলিতি জিনিস।
সেলিম মেয়েকে আনতে ভিতরে গেল। বাবরের মনে পড়ল বাবলি যখন চকোলেট খাচ্ছিল তার দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে খয়েরি রংটা দেখাচ্ছিল ভারি মিষ্টি।
ফিরে এসে সেলিম বলল, নারে ঘুমিয়ে পড়েছে।
ভারি সুন্দর হয়েছে তোর মেয়েটা। কার চেহারা পেয়েছে বলতো?
ওর মায়ের।
তোর চোখই নেই। অবিকল তোর মত হয়েছে দেখতে। কেবল রংটা ওর মায়ের।
তার মানে, বলতে চাস, আমি কাল?
কাল ফর্সা দিয়ে এখন আর কী করবি?
কেন, বিয়ে করেছি বলে চান্স আর নেই নাকি?
তোদের শুধু মুখে মুখে। চিনিস এক অফিস, আর বৌয়ের আঁচল।
বলেছে তোকে?
তোরা খুঁজবি চান্স? যাহ!
কীসের চান্স? বলতে বলতে সুলতানা ঘরে এলো।
বলে দিই? বাবর দুষ্টুমি করতে শুরু করল।
ভাল হবে না বলছি।
তবে এই যে বীরপুরুষের মত বলছিলি?
আমি ভীতু নাকি?
থাক, তুমি আর বল না। টেবিলে গ্লাশ সাজাতে সাজাতে বলল সুলতানা, জানেন ভাই সেদিন রাতে কী একটা স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন, তাও যদি সত্যি হতো, আমাকে ঘুম থেকে তুলেছে। তার নাকি ভয় করছে।
সেলিম বলল, আচ্ছা তুই বল, ঘুমের মধ্যে কোনটা স্বপ্ন আর কোনটা সত্যি অতশত মনে থাকে?
হা হা করে হেসে উঠল বাবর।
খুব ভাল বলেছিস, কথাটা টিভি প্রোগ্রামে যুৎসই মত লাগাতে হবে।
বলেই বাবরের মনটা খারাপ হয়ে গেল। মনে পড়ে গেল, একটু আগেই সে শুনে এসেছে, তার প্রোগ্রাম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ মাসেই। সামনের মাস থেকে আর কেউ তাকে দেখবে না, পথে পথে দেখে কৌতূহলী হয়ে উঠবে না। কারো চোখ, নামটা শুদ্ধ করে বলার জন্যে নীল চিঠিতে আসবে না কোনো অনুরোধ, নতুন কোনো লতিফার সঙ্গে আর আলাপ হবে না। বাবর খুব ভাল করে জানে সিনেমা টিভি আর খেলার মাঠ এক সমান। যতক্ষণ পর্দায় আছ, যতক্ষণ গোল দিচ্ছ, ততক্ষণই লোকে মনে রাখে। তারপর কেউ ফিরেও তাকায় না। একটা হাত কেটে নিলেও এত ব্যথা হয় না। যতটা হয় পাদপ্রদীপের আলো থেকে বঞ্চিত হলে।
সেলিম কী সব পাগলের মত বলে যাচ্ছে, হাসছে, গম্ভীর হচ্ছে, প্রশ্ন করছে, সুলতানা কাটলেট এনে রেখেছে, বাবর দু একটা নিজেও কী বলেছে, কাটলেট খাচ্ছে, ঘড়িতে ঢং করে একটা আওয়াজ হলো কোথায়–কিছুই তার কানে যাচ্ছে না। অভিভূতের মত বাবর বসে একটা ছবি দেখছে–সে ছবি তার নিজের। এই তো দেখা যাচ্ছে সে প্রোগ্রাম ভিটিআর করবার দিন ভাল করে শেভ করে বিশেষ সুট পরে, গাড়িতে নয় যেন পাখা মেলে দিয়ে ডিআইটি বিল্ডিংয়ে এসে থামল। হাসি বিলিয়ে দিল একে তাকে। প্ৰযোজকের সঙ্গে কথা বলল এমন একটা গুরুত্ব নিয়ে যেন ডাঃ বার্নার্ড কারো দেহে হৃৎপিণ্ড সংযোজন করতে যাবার আগে পরামর্শ করছেন। ঐ তো সে দরোজা ঠেলে মেকআপ। রুমে ঢুকল। তার মুখে পরতের পর পরত রং লাগছে। নাকের দুপাশে ঘষে দিচ্ছে লাল। ভ্রা শুধরে দিচ্ছে পেন্সিল দিয়ে। সে বিরল হয়ে আসা চুলের গোছা টান টান করে ধরে বলছে, গোঁড়ায় একটু পেন্সিল বুলিয়ে দাও, নইলে টাক চোখে পড়ে বড্ড। তারপর যত্ন করে সময় নিয়ে সিঁথি সেরে হেয়ার স্প্রে লাগাচ্ছে সে। প্রযোজক এসে বলছে, সেট রেডি। আসুন। সে বলছে, আর এক মিনিট। বাবর সেটে ঢুকছে যেন সদ্য তৈরি নতুন রাজধানীতে প্রথম পা রাখছে কোনো তরুণ সম্রাট। কে যেন কোথায় বলছে, একটু দাঁড়ান, আলোটা দেখে নিই। ক্যামেরার পেছন থেকে কানে হেডফোন লাগানো কে এবার সাড়া দিয়ে উঠল দুহাত তুলে–স্টুডিও স্ট্যাণ্ডবাই। নিঃশ্বাস বন্ধ করে একবার টাইয়ের নট বুলিয়ে নিল বাবর। চোখ তার মনিটারের দিকে। শোনা গেল, ভিটিআর রোলিং। কয়েক সেকেণ্ড পর মনিটারে পর্দা দুধসাদা হয়ে উঠে একটি লেখা ফুটিয়ে তুলল। মারপ্যাঁচ। তারপর সেটা মিলিয়ে গেল। এবারে এলো তার নাম–পরিচালনা বাবার আলী খান। বাবর মনিটার থেকে চোখ নামিয়ে ক্যামেরার লেন্সের দিকে রাখল। ঠোঁটে সৃষ্টি করল হাসির পূর্বভাষা। তারপর, ক্যামেরার মাথায় লাল বাতিটাজ্বলে উঠতেই সে সহাস্য ঝুঁকে উচ্চারণ করল, শুভেচ্ছা নিন, বাবার আলী খান বলছি মারপ্যাঁচের আসর থেকে। বুদ্ধির মারপ্যাঁচ। দেখি আপনারা কতজন আমাকে বোকা বানাতে পেরেছেন। আমি গেলবারে মোট আটটি ধাঁধা পেশ করেছিলাম, এক-দুই-তিনচার-পাঁচ-ছয়-সাত-আটটি ধাঁধা, আপনারা উত্তর পাঠিয়েছেন, দুহাজার তিনশ সাতান্ন, তার মধ্যে সঠিক হয়েছে একুশ জনের।—
বাবর উঠে দাঁড়াল। বলল একটু বাথরুম থেকে আসি।
বসবার ঘর থেকে বেরুতে হয় পেছনের বারান্দায়, তার শেষ প্ৰান্তে একটা বাথরুম আছে।
দুটো ঘর পেরিয়ে যেতে হয়। প্রথমটা খাবার ঘর। তারপরে বাবলির। দ্রুতপায়ে বাথরুমে ঢুকে দরোজাটা বন্ধ করতে করতে তার মনে হলো বাবলিকে যেন দেখা গেছে জানালার কাছে বই নিয়ে বসে আছে। চলার তোড়ে তখন লক্ষ করেনি, থামার কথাও মনে হয়নি। কিন্তু ছবিটা চোখে লেগে গেছে। সমুখের ল্যাম্প থেকে আলোর আধখানা বৃত্ত বাবলির চিবুক স্পর্শ করেছে মাত্র। দুটো হাত বইয়ের ওপর। আলোকিত হাত দুটোকে অচেনা একটা ফুলের মত দেখাচ্ছিল। পিঠটা অন্ধকার। দূরে সবুজ চাদর পাতা বিছানা অন্তরঙ্গ করে তুলেছে জালানা দিয়ে হঠাৎ দেখা ছবিটা।
বাথরুমে এসে কিছুই করল না। বাবর অনেকক্ষণ। বাতি জ্বালিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখল। বলল তার ঠোঁট দুটিকে, তুমি আজ কাকে চুমো খেয়েছ?
আলতো করে নিজের ঠোঁট আদর করল সে। তারপর জামার কয়েকটা বোতাম খুলে দেখল, কোনো চুল পেকেছে কি-না! না, এখানে এখনো শুরু হয়নি। নিজের লোমশ বুকে হাত ঘষতে ভাল লাগল তার। কিছুক্ষণের জন্যে তাই করল সে। তারপর জামার বোতাম তাড়াতাড়ি লাগিয়ে প্যান্টের বোতাম খুলল বাবর।
কমোডে এই যে একটানা সরসর শব্দ হচ্ছে এখন, বাবলি কি শুনতে পাচ্ছে? দ্রুত হাতে সে ট্যাপ খুলে দিল। ট্যাপ থেকে পানি পড়ার শব্দে ড়ুবে গেল ঐ শব্দটা।
বাথরুমের তাকে একটা তুলোর রোল। কে ব্যবহার করে? বাবলি? তুলোটা একবার বুলিয়ে দেখল সে। তারপর চারদিকে তাকাল। একটা তোয়ালে ঝুলছে। ওপাশে চিলতে হয়ে আসা সাবান। দুটো টুথব্রাশ। পাজামার একটা ফিতে জড়িয়ে আছে ফ্লাশ হ্যাণ্ডেলের সাথে। বাবলির পাজামায় তো রবারের ব্যাণ্ড। এটা কার? ভাল করে সে দেখতে লাগল সব। না, বিশেষ করে বাবলির এমন কিছুই চোখে পড়ল না। বেরিয়ে যাচ্ছিল, হঠাৎ দরোজার গায়ে দেখল পেন্সিল দিয়ে লেখা–বাবলি। ইংরেজিতে। কবে লিখেছিল? কেন লিখেছিল? লেখাটা ছুঁয়ে দেখল বাবর। তারপর ঠোঁট বাড়িয়ে স্পর্শ করল অক্ষরগুলো। প্রথমে একসঙ্গে সব কটা অক্ষর। পরে একটা একটা করে–বি এ বি এল আই। সন্তৰ্পণে দরোজা খুলে বেরুল বাবর। নিঃশব্দে বাবলির জানালার কাছে এসে থামল। ডাকল, এই।
বাবলি মাথা তুলল। না। বাবর দেখল রংটা সে ভুল দেখেছে। চাদরের রং নীল। সে বলল, রাত ঠিক এগারটায় আমাকে টেলিফোন কর।
কথা বলল না বাবলি। গলা আরো নামিয়ে আনল বাবর।
আচ্ছা, আমিই করব। টেলিফোনের পাশে থেকো।
না।
তুমি করবে?
না।
চকিতে চারদিকে দেখে বাবর চাপা গলায় হিস হিস করে উঠল, কথা শোন। আমি টেলিফোন করব। রাত ঠিক এগারটায়। বলেই সে লম্বা লম্বা পা ফেলে বসবার ঘরে এসে ঘোষণা করল, ভুলেই গিয়েছিলাম। এখুনি বাসায় যেতে হবে। একজন আসবে।