০২. লতিফা

জাহাজে করে কোথাও যাচ্ছিল বাবর। জাহাজটাই ড়ুবে গেল। নিঃশব্দে। নিমেষে। সে এখন পানির অতলে অবিরাম নামছে, নামছে।

নামতে নামতে গতিটা হঠাৎ থেমে গেল। স্থির হয়ে রইল বাবর। আর তার চারদিক দিয়ে বয়ে যেতে লাগল। নীল শীতল অগাধ পানি। একটা বড় রূপালি মাছ এলো কোথা থেকে। সে তার ঈষৎ গোলাপি লেজ দিয়ে মৃদু চাপড় মারতে লাগল বাবরের তলপেটে।

তখন চোখ মেলে তাকাল বাবর।

দেখল, অন্ধকারে তার কোলের কাছে মৃদু সুগন্ধ ছড়ান একতাল সাদা। স্পর্শ করতেই মনে হলো তা কোমল এবং উষ্ণ।

বাবর উচ্চারণ করল, লতিফা? তারপর আবার বলল, লতিফা তুমি? এবং উঠে বসতে চেষ্টা করল সে।

লতিফা তার কনুইয়ের উপর চাপ দিয়ে বলল, আস্তে চুপ, কেউ জেগে উঠবে।

বাবর অবাক হয়েছিল। অবাক হয়েছিল। এভাবে চোরের মত মাঝ রাতে লতিফা এসেছে বলে নয়। মনের কোনো এক কোণে যেন মনে হচ্ছিল লতিফা আসবে এবং সেটা এখন বাস্তবে মিলে যাচ্ছে।

তার হাত মুঠো করে ধরল বাবর। ঠাণ্ডা নরম স্বাস্থ্যভরা পাঁচটা আঙুল। এমনকি শুধুমাত্র স্পর্শ দিয়ে তার এক পিঠে গোলাপি আরেক পিঠে বাদামি রংটা টের পাওয়া যাচ্ছে। আঙুলগুলো পরমুহুর্তে ছেড়ে দিয়ে লতিফার কাঁধে হাত রাখল বাবর। তরুণ একটা গাছের ডালের মত নিটোল নমনীয় সেই কাঁধ। কাঁধের পরেও স্থায়ী হলো না। হাতটা সে পাঠিয়ে দিল লতিফার পিঠে। দীর্ঘস্থায়ী একটা সুখস্বপ্নের মত পিঠ। মাঝখানে মেরুদণ্ডের নদী। সেই নদীপথে হাতটা একবার খেলা করল। তারপর স্থায়ী হলো কোমরের ওপরে, যেখানে বিরাট একটা বর্তুলের মত স্পন্দমান নিতম্বের শুরু। বাবরের আরেকটা হাত তৎক্ষণাৎ আবরিত করল লতিফার বাম স্তন। এবং নিজের কাছে নিবিড়তর করতে চাইল সে তাকে।

ধাক্কা দিয়ে লতিফা তাকে সরিয়ে দিল। যেন এতক্ষণ বাবর একটা সুদৃশ্য চকচকে বৈদ্যুতিক যন্ত্র লাগাচ্ছিল, এখন সুইচ টিপতেই শক দিয়েছে।

কী হলো? খসখসে গলায় প্রশ্ন করল বাবর। এবং উঠে বসে লতিফাকে চুমো দেবার জন্যে গলা জড়িয়ে ধরল। তার। লতিফা মুখ সরিয়ে নিতেই একরাশ শ্যাম্পু করা সুগন্ধ জড়ান অশান্ত চুল ছেলেবেলার ঝড়ের মত ঝাঁপিয়ে পড়ে আচ্ছন্ন করে দিল বাবরের সারা চেহারা। অবাক হয়ে গেল সে। লতিফা তো কোনোদিন এমন করে না।

লতিফা পরীক্ষণে মুখ ফিরিয়ে হিসহিস করে বলল, কেন তুমি এসেছ?

কেন এসেছি জান না? তোমার জন্যে।

মিথ্যেবাদী।

শোন লতিফা। বলে বাবার আবার তাকে চুমো দিতে চেষ্টা করল।

না শুনব না। কেন তুমি এসেছ?

বললাম তো, তোমার জন্যে।

মিথ্যুক।

লতিফা শোন। বাবর তার পিঠে হাত রেখে সুদক্ষ সেনাপতির মত তড়িৎবেগে আরেকটা হাত গুঁজে দিল লতিফার দুই ঊরুর ভেতর। দপ দপ করে উঠল সেখানে। প্রবল দুহাতে লতিফা তার মুঠি সরিয়ে কোনোক্রমে কেবল বলতে পারল, না।

না কেন? আমি এর জন্যে মরে যাচ্ছি।

তুমি তো এই-ই চাও।

চাই। আগেও তো দিয়েছ।

না।

দাওনি?

লতিফা চুপ।

বাবর তখন বলল, কতদিন না চাইতেই দিয়েছ। আসবার কথা ছিল না। হঠাৎ সকালে স্কুটারের শব্দ শুনে উঠে দেখেছি, তুমি। সকালে কী ওসব করা যায়? তবু তুমি চেয়েছ বলে তৈরি করেছি নিজেকে। আজ না কেন?

বলে আবার সে হাতটা লতিফার ঊরুর ওপরে রাখল। সেখান থেকে একটা আঙুল কেন্দ্রের ওপর চেপে ধরল। আর্তনাদ করে উঠল লতিফা।

পশু, একটা পশু তুমি।

নিঃশব্দে হাসল বাবর। বলল, তুমি বড় রাগ করেছ।

রাগ করব তোমার ওপর? তুমি কী বোঝ রাগের? একটা পশু হলেও সে বুঝতো। তুমি তাও নও।

বাবরের এবার রাগ হলো হঠাৎ। কিন্তু মুহূর্তে সেটা কবর দিয়ে হাসল। বলল, অথচ একটু আগেই তুমি বলেছিলে আমি নাকি পশু।

বলেছি, বেশ করেছি। আবার বলব। একশ বার বলব। তোমার সঙ্গে আমার কীসের সম্পর্ক?

সম্পর্ক নেই?

না, নেই।

নেই?

হ্যাঁ, নেই। তুমি মনে করেছ। আমি তোমার জন্য মরে যাব, না?

তোমার আগে যেন আমার মরণ হয়। বাবর বলল। বলেই ভাবল, এ রকম কথা নভেলে লেখা থাকে, স্ত্রী বলে স্বামীকে। কথাটা কী মেয়েলি শোনাল? সন্দেহে কিছুক্ষণ অন্যমনস্ক হয়ে রইল বাবর। পরে বলল, বল, আর কী বলবে?

তোমাকে কিছু বলতে চাই না। তুমি এত বড়– এতবড় ভণ্ড।

পশু থেকে ভণ্ড? প্রমোশন দিলে না। ডিমোশন করলে? বলতে বলতে সন্ধানী তর্জনীটাকে আরো খানিকটা এগিয়ে দিল বাবর। লতিফা বাধা দিল না। কিম্বা বাধা দেবার কথা মনে হলো না তার। তখন আরেকটা হাত বাবর রাখল লতিফার নিতম্ব বেষ্টন করে। ক্রমসঞ্চারিত বাসনা এবং সাহসে তার হাত ফুলে উঠতে লাগল। লতিফা হঠাৎ ভেঙ্গে পড়ে বলল, তুমি আমাকে একটুও ভালবাস না। কিন্তু তোমাকে চাই। কাছে চাই। সারাক্ষণ চাই।

মিথ্যে কথা।

সত্যি। তুমি নিজেই জান যে সত্যি।

মিথ্যুক।

একেবারে নিজের কাছে আমার করে তোমাকে চাই।

ভণ্ড।

কোনোদিন তোমাকে হারাতে চাই না।

আমি জানি।

জান?

জানি, জানি, তুমি কী চাও।

বাবর তাকে টেনে বুকের মধ্যে লুকিয়ে খাটো চুলের নিচে গোলাপি ঘাড়ের ওপর চুমো দিল। চুমোটা শুকনো লাগল। তখন মুখের ভেতরটা ভিজিয়ে সেই জিভ দিয়ে নিজের ঠোঁট চাটল এবং আবার চুমো দিল। মনে হলো শিশির ভেজা একটা ছোট্ট পাতা ছাপ রেখে গোল লতিফার শরীরে।

লতিফা সেভাবেই পড়ে থেকে বলতে লাগল, তুমি যদি আমাকে ভালবাসতে তাহলে—তাহলে—তাহলে–

বাবর তাকে ছেড়ে দিল।

কী তাহলে, বল?

লতিফা মাথা ঝাঁকিয়ে চুলের রাশ বশে আনতে আনতে উত্তর দিল, তাহলে তুমি বাবার সঙ্গে বসে গহনার ডিজাইন পছন্দ করতে পারতে না।

বাবর নিঃশব্দে হাসল।

হ্যাঁ পারতে না। অমন দাঁত বের করে বাবাকে খোশামোদ করতে পারতে না।

বাবর আবার তেমনি হাসল।

আমার কাছে এসেছে কেন? যাও বাবার কাছে যাও।

বাবর বলল, আমি কোথায় এলাম, তুমিই তো এসেছ।

না, আসিনি। বলে চট করে উঠে দাঁড়াল লতিফা। তারপর কী ভেবে বলল, হ্যাঁ এসেছি। কেন এসেছি–একটা—একটা—

বলতে বলতে, হাঁপাতে হাঁপাতে লতিফা বাবরের গালে তীব্র একটা চড় বসিয়ে দিল।

লাফ দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বাবর চাপা গলায় চিৎকার করে উঠল, লতিফা! লতিফা, তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।

তার মনে হলো লতিফাকে সে খুন করে ফেলে, দুহাতে গলা টিপে তার শেষ নিঃশ্বাস নিংড়ে বের করে নেয়। মনে হলো, লতিফাকে চড় মারতে মারতে অবসন্ন করে নিজের পায়ের নিচে নেতিয়ে ফেলে দেয়। কিন্তু তার বদলে বাবর লতিফাকে একটা নিষ্ঠুর চুমো দিল। চুমোটা উত্তেজনায় নাকের নিচে প্রোথিত হলো। তারপর তাকে ছুঁড়ে দিল বিছানায়। এবং নিজে ঝাঁপিয়ে পড়ল তার ওপর। এক হাতে পাজামার ইলাস্টিক ব্যাণ্ড আলগা করে টেনে নাবিয়ে আনল হাঁটু পর্যন্ত এবং একই সঙ্গে নিজের পাজামার সমুখের পথ ছিঁড়ে প্রসারিত করে বিদ্যুদ্বেগে প্রচণ্ড একটা চাপ দিল।

ভুল হলো। গন্তব্যে পৌঁছল না সে। হাঁপাতে লাগল। আর তার নিচে জাহাজের একটা মোটা কাছির মত অতিদ্রুত পাকাতে লাগল লতিফার শরীর। আবার লক্ষ্যস্থান সন্ধান করার জন্যে বাবর ধনুকের মত বাঁকা হতেই লতিফা তাকে ঝটিকা দিয়ে ফেলে দিল। অর্ধ উলঙ্গ বাবর দেখল। লতিফা ঘরের মাঝখানে দড়িয়ে হিসহিস করে বলছে, শয়তান, জোচ্চোর, পশু।

লতিফার হাঁটু পর্যন্ত নাবানো পাজামা। তাকে হঠাৎ এমন হাস্যকর মনে হলো বাবরের যেন একটা কার্টুন দেখছে সে। চলে যাবার জন্যে লতিফা এক পা ফেলতেই নিজের নাবানো পাজামায় বাধা পেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাচ্ছিল, এক মুহুর্তে সামলে নিল, সরসর করে টেনে তুলল পাজামা। তখন আরো হাসি পেল বাবরের।

লতিফা চলে গেলে বাবর একা অন্ধকার ঘরে হাসল। বিছানার ওপর হিজ মাস্টারস ভয়েসের কুকুরের মত বসে থেকে হাসল বাবর।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *