হাত
একটা থ্রিলারে ডুবে ছিল সঙ্কর্ষণ সমাদ্দার। বইটার নাম ‘দ্য স্করপিও লেটার্স’, লেখক ভিক্টর ক্যানিং। সঙ্কর্ষণের অত্যন্ত প্রিয় লেখক। এডগার ওয়ালেসের পর থ্রিলারের এত ভালো লেখক খুব কম, সঙ্কর্ষণের তাই ধারণা। বাস্তবসম্মত কাহিনি, আতিশয্য নেই, অথচ দারুণ উত্তেজনায় ভরা।
গোয়েন্দা হিসাবে সঙ্কর্ষণের এখন খুব নামডাক, ও অবিশ্যি নিজেকে গোয়েন্দা বলে না, বলে ‘ইনভেস্টিগেটর’। বেশ কয়েকটা কেসে পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করায় লালবাজারে ওর হিতৈষীর অভাব নেই, সেটা ওর পেশার পক্ষে একটা প্লাস পয়েন্ট।
বিকেল প্রায় চারটে। সঙ্কর্ষণের সহকারিণী রেবা চ্যাটার্জি কয়েকদিনের জন্য কলকাতার বাইরে গেছে। যে ছেলেটি বেয়ারা-কাম-পিয়োন, তাকে সঙ্কর্ষণ একটা কাজে পাঠিয়েছে। হাতে কোনো কেস নেই, অখণ্ড অবসর। বইয়ের পাতায় এতই তন্ময় হয়ে পড়েছিল যে, সুইং ডোর ঠেলে ভদ্রলোকের ঘরে ঢোকার ব্যাপারটা ও লক্ষই করেনি। চমক ভাঙল ভদ্রলোকের গলা খাঁকারিতে। তাড়াতাড়ি বইটা বন্ধ করে ও চোখ তুলে তাকাল।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন প্রায় ছ-ফুট লম্বা এক ভদ্রলোক। বয়স হয়েছে, মাথার পাকা চুল ব্যাকব্রাশ করা, থুতনির কাছে মাপে কাটা খানিকটা দাড়ি। সযত্নে ছাঁটা। বলিষ্ঠ চেহারা, মুখে আভিজাত্যের ছাপ।
দু-জনেই দু-জনের দিকে মুহূর্তকাল নিঃশব্দে তাকিয়ে রইল, বোধ হয় পরস্পরকে যাচাই করতে চাইল। তারপর ভদ্রলোক মৃদু হেসে দু-হাত কপালে ঠেকিয়ে বললেন, নমস্কার, আপনিই নিশ্চয়ই সঙ্কর্ষণ সমাদ্দার?
‘হ্যাঁ,’ সঙ্কর্ষণও হাসিমুখে জবাব দিল, ‘অধমের ওটাই পিতৃদত্ত নাম, আপনি বসুন।’
ভদ্রলোক একটা চেয়ার টেনে বসলেন, তারপর সপ্রশংস কণ্ঠে বললেন, ‘সুন্দর স্বাস্থ্য আপনার, ম্যানলি।’
‘আমার বয়সে আপনারও দারুণ স্বাস্থ্য ছিল,’ সঙ্কর্ষণ মৃদু হেসে জবাব দিল, ‘তার জন্য ডিডাকশনের প্রয়োজন হয় না।’
‘তা ছিল,’ ভদ্রলোক যেন একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেলেন, ‘আই হ্যাড দ্য স্ট্রেংথ অফ অ্যান অক্স, জোয়ান বয়সে ষাঁড়ের শিং চেপে ধরে ঠেলে নিয়ে যেতাম।’ তারপরই আচমকা প্রশ্ন করলেন, ‘আপনি ভূতে বিশ্বাস করেন?’
‘ভূত!’ সঙ্কর্ষণ অবাক না হয়ে পারল না।
‘হ্যাঁ,’ ভদ্রলোক এবার গম্ভীর মুখে বললেন, ‘গোয়েন্দা হিসাবে আপনার খ্যাতি আমার কানে এসেছে, কিন্তু আমি সে-ব্যাপারে আপনার সঙ্গে পরামর্শ করতে আসিনি। আমি এসেছি ভূতের ব্যাপারে কনসাল্ট করতে।’
‘যারা ভূত তাড়ায় তাদের কাছেই আপনার যাওয়া উচিত ছিল,’ সঙ্কর্ষণ একটু কৌতূক করেই বলল, ‘আমি তো ওঝা নই।’
‘ওসব ওঝা-টোঝায় আমার বিশ্বাস নেই,’ ভদ্রলোক মুখ বাঁকালেন, ‘তা ছাড়া সত্যিকার ভালো ওঝা কোথায় খুঁজে বেড়াব! তার চাইতে আপনি বরং গোড়া থেকে আমার কাহিনি শুনুন, তারপর মতামত দেবেন। আমার মনে হয় ওঝার চাইতে এখানে মগজের কাজটাই বেশি দরকার এবং আপনার যে তা আছে সে-বিষয়ে নিঃসন্দেহ হয়েই আমি এসেছি।’
‘বেশ তবে শুরু করুন,’ সঙ্কর্ষণ একটা সিগারেট ধরিয়ে প্যাকেটটা এগিয়ে দিল।
ভদ্রলোক একটা পাইপ বার করে বললেন, ‘সিগারেট আমার চলে না, আই হোপ ইউ হ্যাভ নো অবজেকশন…’
‘নান,’ সঙ্কর্ষণ জবাব দিল, ‘আমিও পাইপ ধরাব ভাবছি, ওটা একটা পারসোনালিটি আনে।’
ভদ্রলোক পাইপ ধরিয়ে কয়েকবার টান দিলেন, একটা কড়া তামাকের গন্ধে ভরে গেল ঘর। ভদ্রলোক শুরু করলেন
‘আমার নাম বীরেন্দ্রচন্দ্র সিনহা, পেশায় আমি সার্জন, বিলেত থেকে এম এস পাশ করেছিলাম। কুলটিতে এক নামি ফার্ম বিলেতেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, ভালো অফার দিয়েছিল, চিফ মেডিক্যাল অফিসারের পোস্ট। আমি আর দ্বিতীয় চিন্তা করিনি। তিন বছর হল আমি রিটায়ার করে বেহালায় একটা বাড়ি বানিয়ে আছি। বিয়ে-থা করিনি, একা মানুষ। ভালোই আছি… মানে ছিলাম,’ ভদ্রলোক মৃদু হাসলেন। পাইপটা নিভে গিয়েছিল আবার ধরিয়ে বার কয়েক টান দিলেন।
‘হ্যাঁ, যা বলছিলাম, ভালোই ছিলাম, নির্ঝঞ্ঝাট জীবন, কোনো বার্ডন নেই, ভগবানের কৃপায় টাকাপয়সাও উপার্জন করেছি যথেষ্ট। কিন্তু গত দু-সপ্তাহ রাত্তিরে আমার ঘুম নেই, ঘোরতর এক সমস্যায় পড়েছি, বলতে পারেন ভূতুড়ে সমস্যা।
‘তার আগে আরেকটি কাহিনি বলে নিই। প্রায় দশ বছর আগে আমাদের ফ্যাক্টরিতে একজন শ্রমিক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিল। লোকটি জাতে ছিল একজন আদিবাসী। বাঁ-হাতটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল। আমার ভয় হল গ্যাংরিন হয়ে যাবে, কনুই থেকে নীচের বাকি অংশটা কেটে বাদ দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।
‘লোকটি কিন্তু কিছুতেই হাত কেটে বাদ দেবার ব্যাপারে রাজি ছিল না, বলেছিল মৃত্যুর পর ওর তবে নরকে ঠাঁই হবে, শরীরের কোনো অংশ বাদ থাকলে ভগবান তাকে গ্রহণ করেন না, ওদের ধর্মে নাকি তাই বলে।’ তাকে অনেক বোঝালাম হাতটা বাদ না দিলে সমস্ত শরীরে পচন ধরবে, বাঁচানো যাবে না। শেষ পর্যন্ত সে রাজি হল, তবে আমাকে বলল মৃত্যুর পর হাতটা সে আমার কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে যাবে, আমি যেন ওটা যত্ন করে রেখে দিই। কেমন বুঝছেন?’ পাইপে নতুন করে তামাক ভরতে ভরতে ডা সিনহা সঙ্কর্ষণের মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন।
‘ভেরি ইন্টারেস্টিং।’ সংঙ্কর্ষণ মাথা দোলাল।
‘অপারেশনের পর কী খেয়াল হল হাতটাকে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় একটা বড়ো কাচের জারের মধ্যে রেখে দিলাম। বোধ হয় ওটাকে স্মারকচিহ্ন হিসাবে রাখতে চেয়েছিলাম, কিংবা অবচেতন মনে লোকটির আর্জি অর্থাৎ আমি যেন ওটাকে যত্ন করে রেখে দিই, মৃত্যুর পর সে ওটাকে নিয়ে যাবে, এটা দাগ কেটেছিল। যে কারণেই হোক, যত্ন করে ওটা আমি রেখে দিয়েছিলাম।
‘এ ঘটনার বছর পাঁচেক পরে হঠাৎ একটা অগ্নিকাণ্ডে আমার নিজস্ব ল্যাবরেটরির ভীষণ ক্ষতি হয়, সেইসঙ্গে হাতটাও পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আমি অবিশ্যি ও নিয়ে আর মাথা ঘামাইনি। ওই আদিবাসীর কথা আমি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে সে তার মুলুকে চলে গিয়েছিল, আর আসেনি। এদিকে রিটায়ার করার পর আমি বেহালায় ছোটোখাটো একটা বাড়ি বানিয়ে জমিয়ে বসেছি, মনের মতো একটা ল্যাবরেটরিও বানিয়েছি। একা মানুষ, প্রচুর অবসর, তাই এটা ওটা গবেষণা নিয়ে সময় কেটে যায়।
‘আজ থেকে পনেরো দিন আগে ঠিক রাত বারোটায় একটা শব্দে আমার ঘুম ভেঙে গেল। আমার শোবার ঘরের পাশেই ল্যাবরেটরি, দু-ঘরের মধ্যে যাতায়াতের দরজা আছে, রাত্তিরে ওটা খোলাই থাকে। শব্দটা আসছিল পাশের ঘর থেকেই। আমি নিঃশব্দে বিছানা থেকে নামলাম, আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম। ঘরে চাঁদের আলো ঢুকেছিল, সেই আলোয় আমি স্পষ্ট দেখলাম একটা ছায়ামূর্তি একটার পর একটা কাচের বয়ামের সামনে দাঁড়াচ্ছে, যেন কিছু খুঁজছে। প্রথমে আমার মনে হয়েছিল চোর। আমি চট করে শোবার ঘরের আলোটা জ্বালালাম। মূর্তি সঙ্গেসঙ্গে আমার দিকে ফিরে তাকাল। আমি চমকে উঠলাম। চোর নয়, সেই আদিবাসী— দশ বছর আগে যার বাঁ-হাতটা আমি কেটে বাদ দিয়েছিলাম। এতদিন পরেও আমার চিনতে ভুল হল না। সঙ্গেসঙ্গে মনে পড়ল লোকটি বলেছিল হাতটা যেন আমি যত্ন করে রেখে দিই, মৃত্যুর পর ও নিতে আসবে। আমার বুকের ভেতরটা ছ্যাঁৎ করে উঠল। তবে কি ও মারা গেছে, আর হাতটা ফেরত নিতে এসেছে! কিন্তু ওটা তো অগ্নিকুণ্ডে পুড়ে গেছে! মূর্তিটা আমার দিকে ফিরে তাকিয়েছিল, ওর দু-চোখে যেন ফুটে উঠেছিল এক আকুল প্রার্থনা, ওর হাত ও ফেরত চায়। তারপরই সে মিলিয়ে গেল।
‘পরদিনও মাঝরাতে একটা শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। সেদিনও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল, শুধু একটা ব্যতিক্রম। আমি সেদিন বিছানা থেকেই সব কিছু লক্ষ করছিলাম। ল্যাবরেটরি প্রদক্ষিণ শেষ করে মূর্তিটা আমার শোবার ঘরে এল, আমার বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে ডান হাতটা তুলে বাঁ-বাহু স্পর্শ করে যেন কিছু বলতে চাইল। ও কী বলতে চায় তা বুঝতে আমার কষ্ট হল না। ভূতের ভয় আমার নেই, ছোটোবেলা থেকেই ডানপিটে বলে আমার দুর্নাম ছিল, কিন্তু স্বীকার করতে লজ্জা নেই, সেই মুহূর্তে আমার সমস্ত শরীর হিম হয়ে গিয়েছিল।
‘কয়েকবার অমন ভঙ্গি করার পর হঠাৎ ভোজবাজির মতোই মিলিয়ে গেল সেই ভূতুড়ে মূর্তি। তারপর থেকে প্রতি রাতেই ওটার দেখা পাচ্ছি, নাছোড়বান্দার মতো আমার পেছনে লেগে আছে, হাতটা ওর ফেরত চাই-ই। প্রতি রাতে প্রথমেই ও এসে আমার ল্যাবরেটরিতে খোঁজ করে, বোধ হয় দেখতে চায় ওর হাতটা আমি এনে রেখেছি কি না, তারপর আমার শোবার ঘরে এসে বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে হাতটা কামনা করে। আমার রাতের ঘুম তো গেছেই, এখন একটা আতঙ্ক আমাকে পেয়ে বসেছে, হাতটা শেষ পর্যন্ত ফিরে না পেলে ও কী করবে!’
ডা সিনহা চুপ করলেন। কয়েক মুহূর্ত একটা অখণ্ড নিস্তব্ধতা। সঙ্কর্ষণই একটা সিগারেট ধরিয়ে নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করল, তারপর বলল, ‘আপনার কাহিনি শুনে আমার দারুণ কৌতূহল হচ্ছে, আই অ্যাকসেপ্ট ইয়োর কেস। তবে প্রথমে আমি নিজের চোখে সমস্ত ব্যাপারটা দেখে নিঃসন্দেহ হতে চাই।’
‘বেশ তো,’ ডা সিনহা বললেন, ‘আপনি এক রাত আমার শোবার ঘরে থাকুন, নিজের চোখে সব দেখুন, তারপর যা করবার করবেন।’
‘সেই ভালো,’ সঙ্কর্ষণ সায় দিল, ‘আপনার ঠিকানাটা রেখে যান, আজ রাত দশটা নাগাদ আপনার ওখানে পৌঁছে যাব।’
‘ভেরি গুড।’ ডা সিনহা সোৎসাহে বলে উঠলেন, ‘অ্যান্ড ইউ ইউল ডাইন উইথ মি।’
‘না, না। তার দরকার নেই,’ সঙ্কর্ষণ বাধা দিয়ে বলল, আমি রাতের খাওয়া সেরেই যাব।’
‘প্লিজ মি সমাদ্দার, আমি আপনার চাইতে বয়সে অনেক বড়ো, আমার একটা অনুরোধ না হয় রাখলেনই।’
‘বেশ,’ সঙ্কর্ষণ হাসল, ‘তবে ভূরিভোজের ব্যবস্থা করবেন না, তাহলে এমন ঘুমিয়ে পড়ব যে, ভূত মশাই এসে ফিরে যাবেন, আমার সঙ্গে আর মোলাকাত হবে না।’
‘ঠিক আছে, আপনার ইচ্ছেই পূর্ণ হবে।’ ডা সিনহা বিদায় নিলেন। যাবার সময় বলে গেলেন রাত ন-টায় তিনি ডিনার সারেন, বরাবরের অভ্যেস, সঙ্কর্ষণ যেন তার আগেই যায়।
ডা সিনহা কথা রেখেছিলেন, খুব একটা আয়োজন করেননি। সরু চালের ভাত, মুগ ডাল, ফুলকপি ভাজা আর চিকেন রোস্ট, তার সঙ্গে স্যালাড। ব্যস, আর কিছু না।
খেতে বসার আগে সঙ্কর্ষণ বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখেছিল, বিশেষ করে ল্যাবরেটরিটা। বড়ো বড়ো কাচের জারে রাসায়নিক নির্যাসের মধ্যে নানান জিনিস থরে থরে সাজানো, ছোটো বড়ো টেস্ট টিউব, রাসায়নিক গবেষণার জিনিসপত্তর, একটা প্রাইমাস স্টোভ এবং আরও অনেক কিছু সঙ্কর্ষণের চোখে পড়ল।
খাওয়া-দাওয়ার পর দু-জনে এসে বসবার ঘরে বসল। অঘ্রানের মাঝামাঝি, বেশ আরামদায়ক ঠান্ডা। ডা সিনহার কাজের লোকটি দু-পেয়ালা ধূমায়িত ড্রিঙ্কিং চকোলেট দিয়ে গেল। সঙ্কর্ষণ একটা সিগারেট ধরাল আর ডা সিনহা পাইপ।
‘আপনার ভয় করছে না তো?’ ডা সিনহা রহস্য করে জিজ্ঞেস করলেন।
‘আগে থেকে না জানা থাকলে আপনি যা বলছেন তেমন ঘটনার মুখোমুখি হলে মনের অবস্থা কী হত বলতে পারি না, কিন্তু এখন অনেকটা মানসিক প্রস্তুতি হয়ে আছে, তাই কৌতূহলই হচ্ছে বেশি।’
‘আমি পাশের ঘরেই থাকব, ভয় পেলে ডাকতে লজ্জা করবেন না,’ ডা সিনহা একমুখ ধোঁয়া ছেড়ে বললেন, ‘আসলে এমন অপার্থিব ঘটনায় ভয় না পাওয়াটাই অস্বাভাবিক।’
‘নিশ্চয়ই,’ সঙ্কর্ষণ হাসল, ‘নিজের প্রাণের ওপর আমার মায়া কারো চাইতে কম নয়।’
শোবার ঘর থেকে বাইরে যাবার দরজায় ভেতর থেকে খিল এঁটে দিল সঙ্কর্ষণ।
ল্যাবরেটরিটা সঙ্কর্ষণ আরও একবার ঘুরে ফিরে দেখল। ওটা থেকে বাইরে যাবার আরও একটা দরজা আছে, সেটা বন্ধই ছিল।
এগারোটা পর্যন্ত সঙ্কর্ষণ একটা বই নিয়ে কাটাল, তারপর আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ল। আলো জ্বালা থাকলে ভূত নাও দেখা দিতে পারে, তবে দুটো ঘরেই স্তিমিত নীলাভ আলো জ্বালিয়ে রাখল। দুটো ঘরের মাঝখানের দরজাটা অবিশ্যি খোলাই রইল।
একটা তন্দার এসেছিল, হঠাৎ একটা শব্দে ওর আচ্ছন্ন ভাবটা কেটে গেল। হাতঘড়ির রেডিয়াম ডায়ালের দিকে তাকিয়ে দেখল ঠিক রাত বারোটা। বিছানায় উঠে বসে দরজা দিয়ে ও দৃষ্টিটা মেলে দিল পাশের ঘরে। স্তিমিত নীলাভ আলোয় স্পষ্ট ওর চোখে পড়ল একটা ছায়ামূর্তি ঘরের মধ্যে ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে। ভালো করে লক্ষ করতেই ও বুঝতে পারল আসলে মূর্তিটা প্রত্যেকটি কাচের জারের সামনে দাঁড়িয়ে ঝুঁকে পড়ে কী যেন খুঁজছে। তারপরই ওটা এগিয়ে আসতে লাগল শোবার ঘরের দিকে। সঙ্কর্ষণ চট করে শুয়ে পড়ল। চোখ দুটো সামান্য খোলা রাখল।
মূর্তিটা বিছানার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। গায়ের রং মিশকালো, খালি গা, হাঁটু পর্যন্ত কাপড়— এক নজরেই বোঝা যায় আদিবাসী। বাম বাহুর কনুই থেকে নীচের বাকি অংশটা নেই। মূর্তিটা ডান হাত তুলে বাম বাহু স্পর্শ করল, ঠোঁট দুটো থর থর করে কেঁপে উঠল, যেন কিছু বলতে চাইছে, তারপরই ভুরু কুঁচকে গেল, মুখে ফুটে উঠল একটা সন্দেহ আর অবিশ্বাসের ছাপ। ব্যস, পরমুহূর্তে ধোঁয়ার মতো মিলিয়ে গেল সেই মূর্তি। সঙ্কর্ষণ এক লাফে বিছানা ছেড়ে মাটিতে নেমে পড়ল। ল্যাবরেটরি রুম থেকে বাইরে যাবার দরজাটা ভেতর থেকে ছিটকিনি লাগানোই আছে, অর্থাৎ কেউ বাইরে যায়নি, যেতে পারে না, তেমন বাইরে থেকে কেউ ভেতরে আসতেও পারে না। সঙ্কর্ষণ দুটো ঘরই আঁতিপাঁতি খুঁজল, কিন্তু মূর্তির আর দেখা পাওয়া গেল না।
সঙ্কর্ষণ আবার শুয়ে পড়ল। আশ্চর্য। সত্যিই তবে ও ভূত দেখেছে! এর মধ্যে ডা সিনহার কোনো কারসাজি নেই তো! মনে তো হয় না, আর যদি হত তবে উদ্দেশ্যটা কী। কিন্তু ঠিক রাত বারোটার সময় ওটা দেখা দেয় কেন! তবে কি ঠিক ওই সময়ে সেই আদিবাসী মারা গিয়েছিল? নানান প্রশ্নের ভিড়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল তা নিজেই ও জানে না।
ঘুম ভাঙল একটু বেলা করে। ঘর থেকে বেরিয়ে আসতেই ডা সিনহা উদবিগ্ন গলায় প্রশ্ন করলেন, ‘ঘুম ভালো হয়নি বুঝি? ভূতের দেখা পেয়েছিলেন?’
সঙ্কর্ষণ হেসে জবাব দিল, ‘প্রথম প্রশ্নের উত্তর না, দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ।’
‘যাক,’ ডা সিনহার মুখে যেন একটা নিশ্চিন্ততার ছাপ ফুটে উঠল, ‘আমি যে আষাঢ়ে গল্প ফেঁদে আপনার সঙ্গে রসিকতা করিনি, তা নিশ্চয়ই এখন বিশ্বাস হয়েছে?’
‘অবিশ্বাস আমি করিনি, তবে মনে সংশয় ছিল,’ সঙ্কর্ষণ জবাব দিল, ‘আর মজার কথা কী জানেন, আপনার ওই ভূত বোধ হয় বুঝতে পেরেছিল আমি আসল লোক নই, তার চোখে-মুখে কেমন একটা সন্দেহের ভাব ফুটে উঠেছিল।’
‘স্ট্রেঞ্জ!’ ডা সিনহা বললেন, ‘ওই সম্ভাবনা আমার মাথায় আসেনি।’
‘আচ্ছা, আমি এবার বিদায় নেব,’ সঙ্কর্ষণ সহজ গলায় বলল।
‘সে কী!’ ডা সিনহা বিমূঢ় কণ্ঠে বললেন, ‘আপনি চলে যাবেন! আমি ভেবেছিলাম…’
‘যাচ্ছি, কিন্তু রাত্তিরে আবার আসব,’ ডা সিনহাকে আশ্বস্ত করে সঙ্কর্ষণ বলল, ‘ভয় নেই, আমি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করছি না।’
‘ওঃ! তাই বলুন,’ ডা সিনহার মুখে স্বস্তির হাসি ফুটে উঠল।
ওখান থেকে বেরিয়ে সঙ্কর্ষণ যোগাযোগ করল ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের ইনস্পেকটর রজত বোসের সঙ্গে। দু-জনেই সমবয়সি, দু-জনের মধ্যে একটা নিবিড় বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। রজতকে ও সমস্ত ঘটনা খুলে বলল। সব শুনে রজত বলল, ‘মাই গড। দেয়ার আর মেনি থিংস ইন দিস হেভেন অ্যান্ড আর্থ, মাই ডিয়ার সঙ্ক, দ্যান আর ড্রেমট অফ ইন আওয়ার ইমাজিনেশন।’
ওর কথা বলার ভঙ্গিতে সঙ্কর্ষণ না হেসে পারল না, বলল, ‘এক্ষেত্রে ”ফিলজফি”-র বদলে ”ইমাজিনেশন” কথাটা সুন্দর ব্যবহার করেছ।’
‘তা আমি কি ভাবে সাহায্য করতে পারি?’ রজত প্রশ্ন করল।
‘গতকাল বিকেলে এসপ্লানেড ইস্টে আদিবাসীদের একটা মিছিল এসেছিল। টিভিতে সন্ধের নিউজে বলেছিল, ফেরার পথে একটা বাস দুর্ঘটনায় তাদের মধ্যে কয়েকজন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভরতি হয়েছে, দু-জনকে পরে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। আমি ওদের একজনের একটা হাত চাই।’
‘গুড হেভেনস।’ রজত বোস গাল চুলকাল, ‘ইমপসিবল।’
‘আহা, আমি তো জীবিত মানুষের হাত চাইছি না। অবিশ্যি তা চাইলেও যে তোমরা জোগাড় করে দিতে পার সে বিশ্বাস আমার আছে।’ সঙ্কর্ষণ একটু রসিকতা করল।
‘তুমি বুঝতে পারছ না,’ রজত বাধা দিয়ে বলল, ‘মর্গ থেকে ডেডবডির একটা হাত বার করে আনা অত সহজ নয়। পলিটিকাল ইসু হয়ে দাঁড়াতে পারে।’
‘প্লিজ,’ সঙ্কর্ষণ বলল, ‘মাসিকে আর মেসোর কথা বোলো না, তোমরা কী পার আর না পার তার একটা মোটামুটি জ্ঞান আমার আছে।’
রজত এবার হেসে ফেলল, বলল, ‘আচ্ছা দেখছি কী করা যায়, তুমি তো আর হাত না নিয়ে ছাড়বে না, ওই ভূতটার মতো।’
দু-জনেই এবার একসঙ্গে হেসে উঠল।
মৃত দু-জনেরই যে হাত কাটা গেছে সেটা আর রজত খোলসা করে বলল না।
ঠিক সন্ধেবেলা একটা প্যাকেটে সঙ্কর্ষণের কাছে হাতটা পৌঁছে গেল। রাত সাড়ে দশটায় নিজের ফিয়েট গাড়িটা ড্রাইভ করে সঙ্কর্ষণ ডা সিনহার বাড়ি পৌঁছাল, আজ ও খেয়েই এসেছে।
প্যাকেটের দিকে ডা সিনহার সপ্রশ্ন দৃষ্টি লক্ষ করে সঙ্কর্ষণ তাঁকে নিজের পরিকল্পনা বুঝিয়ে বলল। সব শোনার পর ভদ্রলোকের দু-চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল, বললেন, ‘কী আশ্চর্য, এই আইডিয়াটা একবারও আমার মাথায় আসেনি। আপনাকে প্রথম দিনই আমি বলেছিলাম, গোয়েন্দা হিসাবে আপনার সাহায্য আমার কাম্য নয়, আপনার মগজটাই আমার দরকার।’
একটা বড়ো কাচের জারের মধ্যে হাতটা রাখা হল। ডা সিনহা সঙ্কর্ষণকে নিয়ে বসবার ঘরে এসে বসলেন। সঙ্কর্ষণের কোনো আপত্তিই তিনি শুনলেন না, কয়েকটা মাংসের স্যান্ডুইচ ওকে খেতেই হল, সেইসঙ্গে অবিশ্যি ছিল বিলিতি পানীয়।
রাত এগারোটায় সঙ্কর্ষণ শোবার ঘরে আশ্রয় নিল। আজও মৃদু নীলাভ আলো একটা মায়াময় পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। দারুণ এক উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল সঙ্কর্ষণ।
ঠিক বারোটা বাজার সঙ্গেসঙ্গেই আবির্ভাব ঘটল সেই মূর্তির। গতকালের মতো আজও ওটা কাচের আধারগুলো খুঁজে খুঁজে দেখছে। হাতটা কাচের যে জারে ছিল, তার সামনে এসে দাঁড়াল মূর্তিটা। নিশ্বাস বন্ধ করে পরের ঘটনার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল সঙ্কর্ষণ। এক মুহূর্ত কিংবা তারও কিছু কম সময় কেটে গেল, তারপরই একটা উল্লাসধ্বনি ভেসে এল সঙ্কর্ষণের কানে। পরমুহূর্তে মূর্তিটা সাগ্রহে জার থেকে হাতটা তুলে ধরল চোখের সামনে, কিন্তু তারপরই ঘটল এক আশ্চর্য ঘটনা। একটা ক্রুদ্ধ গর্জন করে মূর্তিটা ছুড়ে ফেলে দিল হাতটাকে, তারপরই যে কাচের জারে ওটা ছিল সেটাকে সশব্দে মাটিতে আছাড় মেরে ভেঙে ফেলল। আরও কয়েকটা কাজের জিনিসপত্তর আছড়ে ভেঙে ওটা দ্রুত চলে এল শোবার ঘরে। ওই স্তিমিত আলোতেও সঙ্কর্ষণ লক্ষ করল ওর দু-চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরছে, মুখে ফুটে উঠেছে একটা ক্ষোভ আর নৈরাশ্যের ছাপ। মুহূর্তকাল সঙ্কর্ষণের দিকে তাকিয়ে ওটা ডান হাত ঘন ঘন নাড়িয়ে কী যেন বলতে চাইল। সঙ্কর্ষণ তো ভয়ে কাঁটা। তারপরই অদৃশ্য হল সেই মূর্তি।
এদিকে ভাঙচুরের শব্দে ডা সিনহা বাইরে থেকে দরজা ধাক্কাচ্ছেন, ব্যাকুল কণ্ঠে বলছেন, ‘কী হল মি সমাদ্দার? আর ইউ অলরাইট?’
সঙ্কর্ষণ তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিল। ল্যাবরেটরির অবস্থা দেখে ডা সিনহার ভিরমি খাবার জোগাড়। সঙ্কর্ষণ সমস্ত ঘটনা খুলে বলল।
‘মাই গড!’ ডা সিনহা বললেন, ‘ইউ হ্যাড এ ন্যারো এসকেপ। কিন্তু ওটা অমন করল কেন?’
‘আমাকে একটু ভাবতে দিন,’ সঙ্কর্ষণ বলল।
ও গিয়ে একটা চেয়ারে বসল। একটা সম্ভাবনা ওর মনে উঁকি মারছে। ডা সিনহা আর কোনো প্রশ্ন না করে ল্যাবরেটরি পরিষ্কারের কাজে লেগে গেলেন।
সকাল বেলা সঙ্কর্ষণ বিদায় নিল, বলে গেল রাত্তিরে আবার আসবে। হাতটা ও সঙ্গে নিয়ে গেল।
বাড়ি ফিরে ও দাড়ি কামিয়ে স্নান সারল, তারপর ঘণ্টাখানেক ঘুমাল। গতরাতে ভালো ঘুম হয়নি। ঠিক দশটায় ও বেরোল, হাতটা নিতে ভুল হল না।
রজত বোসের সঙ্গে ও আবার দেখা করল, ওর প্রথম প্রশ্নই হল, ‘কোন হাতটা তুমি পাঠিয়েছিলে?’
‘কেন, ডান হাত।’ রজত একটু বিস্মিত কণ্ঠে জবাব দিল।
‘আমিও তাই ভেবেছিলাম।’ সঙ্কর্ষণ বলল, ‘ওর ডান হাত কাটা হয়নি, বাঁ-হাত।’
‘সে-কথা তুমি আমাকে একবারও বলনি,’ রজত অনুযোগের কণ্ঠে বলল, বলেছিলে একটা হাত। আমাকে ওটা জোগাড় করতে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে।’
‘আমারই দোষ,’ সঙ্কর্ষণ স্বীকার করল, ‘আমি হাতটা নিয়ে এসেছি।’ তারপর গতরাতের ঘটনা ও খুলে বলল।
সঙ্কর্ষণের বক্তব্য শেষ হতেই রজত বলে উঠল, ‘তোমার যে ঘাড় মটকায়নি এটাই যথেষ্ট।’
‘তা ঠিক,’ সঙ্কর্ষণ জবাব দিল, ‘আমার দিকে যেভাবে তাকিয়েছিল, আমি ভেবেছিলাম আমার অন্তিম সময় এসে গেছে।’
অনেক ঝোলাঝুলির পর রজত বাঁ-হাতটা পাঠাতে রাজি হল। তবে এক শর্তে, ও নিজেও সঙ্কর্ষণের সঙ্গে ডা সিনহার বাড়িতে রাত কাটাবে, নিজের চোখে ব্যাপারটা দেখবে।
সঙ্কর্ষণ বলল, ‘তাতে ওর আপত্তি নেই, কিন্তু রজতকে পাশের ঘরে থাকতে হবে। একাধিক মানুষের উপস্থিতিতে ওই মূর্তির আবির্ভাব নাও ঘটতে পারে, সেটা বাঞ্ছনীয় নয়।’ রজত ওর প্রস্তাব মেনে নিল। সঙ্কর্ষণ ফোনে ডা সিনহাকে ব্যাপারটা জানিয়ে দিল। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ওদের দু-জনকে রাতে খাবার কথা বললেন। সন্ধের মুখেই যেতে বললেন খাঁটি ফরাসি শ্যাম্পেন খাওয়াবেন।
সাতটার মধ্যেই ওরা ডা সিনহার বাড়ি পৌঁছে গেল। ভদ্রলোক হাসিমুখে ওদের অভ্যর্থনা জানালেন, বসবার ঘরে নিয়ে বসালেন। শ্যাম্পেনের সঙ্গে শিককাবাব, আসর জমে উঠল।
রাত ন-টার সময় খাবার ডাক পড়ল। আজ হয়েছে তন্দুরি চিকেন, বয়েলড ফিশ উইথ ভেজিটেবলস আর ফ্রুট স্যালাড। ভাত আর রুটি দুটোর ব্যবস্থাই ছিল। খাওয়া-দাওয়া সেরে সবাই বসবার ঘরে ফিরে এল। হাতটাকে আগেই একটা কাচের জারে রাখা হয়েছিল। রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত গল্পগুজব করে সঙ্কর্ষণ শোবার ঘরে গেল, ডা সিনহা আর রজত রইল পাশের ঘরে।
সময় যতই এগিয়ে আসে, সঙ্কর্ষণের উৎকণ্ঠাও ততই বাড়তে থাকে। গতকাল ভুল হাত আনা হয়েছিল, কিন্তু আজ যদি এটাও গ্রহণযোগ্য না হয়! বাঁ-হাত হলেও এটা তো মূর্তির আসল হাত নয়।
রাত বারোটা বাজল। নীলাভ আলোয় সেই মূর্তিটা আবার দেখতে পেল সঙ্কর্ষণ। ওটা ওর হাত খুঁজে বেড়াচ্ছে। নির্দিষ্ট জারের সামনে এসে গতকালের মতোই মূর্তিটা থমকে দাঁড়াল, তারপর একটা চাপা উল্লাস ধনি করে হাতটা প্রায় ছোঁ মেরে তুলে নিল। হাতটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে মূর্তিটা, সঙ্কর্ষণের দিকে পেছন ফিরে থাকায় সঙ্কর্ষণ ওর মুখের অভিব্যক্তি দেখতে পাচ্ছে না। সঙ্কর্ষণের বুকের ভেতর যেন হাপর পড়ছে, পরবর্তী ঘটনার জন্য রুদ্ধনিশ্বাসে অপেক্ষা করছে ও।
হঠাৎ মূর্তিটা পেছন ফিরল, দ্রুত এগিয়ে এল বিছানার দিকে। সঙ্কর্ষণ চোখ বুজে ফেলল, তারপর পিট পিট করে দেখল মূর্তি বিছানার পাশ ঘেঁষে এসে দাঁড়িয়েছে। সঙ্কর্ষণ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে ওর মুখ, সেই মুখে একটা আনন্দের দীপ্তি। বুকের ওপর থেকে যেন পাষাণভার নেমে গেল সঙ্কর্ষণের। যাক, হাতটা গ্রহণ করেছে ভূতুড়ে মূর্তি। তারপরই মূর্তিটা নিজের ডান হাত দিয়ে ওই কর্তিত বাঁ-হাতটা শূন্যে তুলে কয়েকবার নাড়াল, পরে হাতটা বাঁ-কনুইয়ের সঙ্গে জুড়ে ধরল, ওর মুখে ফুটে উঠেছে একটা তৃপ্তির হাসি। অনেকটা ঝুঁকে ওটা যেন সঙ্কর্ষণকে অভিবাদন জানাল কয়েকবার, তারপরই মিলিয়ে গেল সেই রহস্যময় মূর্তি।
কয়েক মুহূর্ত নিঃসাড়ে পড়ে রইল সঙ্কর্ষণ। সমস্ত ব্যাপারটাই ঘটে গেল যেন একটা স্বপ্নের মতো, মানুষের বিচারবুদ্ধি দিয়ে যার ব্যাখ্যা চলে না।
তারপরই এক লাফে খাট থেকে নেমে দরজার দিকে ও এগিয়ে গেল, রজত আর ডা সিনহা অধীর আগ্রহে পাশের ঘরে অপেক্ষা করছেন।
বিদেশি কাহিনির ছায়ায়