1 of 2

সুমনা, সুমনা

সুমনা, সুমনা

আমার বউ সুমনাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি। বিয়ের পর আজ এগারোবছর কেটে গেছে, কিন্তু তবুও আমার ভালোবাসা এতটুকুও ফিকে হয়নি। ওর শরীরের প্রতিটি অলিগলি আমার নখদর্পণে, আমিও ওর কাছে খুব চেনা। তবে মাঝে-মাঝে ও রেগে যেত আমার ওপরে। রেগে গিয়ে যা-নয়-তাই বলত। আমি কিন্তু মুখ বুজে সব সহ্য করতাম। করবই তো! আমি যে ওকে ভালোবাসি। ওর উচ্ছৃংখল জীবন চলেছিল এক টানা একবছর। সবসময় বাড়ির বাইরে-বাইরে। আর আমার ওপরে এক অদ্ভুত আক্রোশ।

অবশেষে একদিন ওর মধ্যে পরিবর্তন এল। একেবারে পালটে গেল ও। দিনরাত বাড়িতেই থাকে। ঘর ছেড়ে একবারের জন্যেও বেরোয় না। আমিও বাড়িতে থাকি। কিন্তু আমাকে কোনওরকম কথা শোনায় না। ঠিক আগের স্বভাবের বিপরীত। তাই আমি ওকে আরও বেশি করে ভালোবাসতে থাকি। ওর এই হঠাৎ-পরিবর্তনে আমি তেমন অবাক হইনি। কারণ, এ-পরিবর্তনে আমার গভীর ভালোবাসার যথেষ্ট ভূমিকা আছে।

পরিবর্তনের পরে দীর্ঘ আটবছর কেটে গেছে। আমরা এখনও কাছাকাছি। সারাদিনের মান-অভিমান রাতে বিছানায় ভুলিয়ে দিই। ওকে বুকে জড়িয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। ও বাধা দেয় না, বিরক্ত হয় না—আগে যেমন হত। মাঝে-মাঝে।

ওর শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আমার হাড়ে-হাড়ে চেনা। একবার—বিয়ের আগে—পড়ে গিয়ে ওর বাঁ-হাতটা ভেঙে গিয়েছিল। সেই ভাঙা জায়গাটা নিখুঁতভাবে আর জোড়া লাগেনি। এখনও স্পষ্ট দেখা যায়, সেই অদ্ভুতভাবে জুড়ে থাকা কনুইটা।

আমাদের কোনও আত্মীয়স্বজন নেই। আমরা দুজনেই পরস্পরের আত্মীয়। সুখ-দুঃখ সব একসঙ্গে মিলেমিশে ভাগাভাগি করে নিই। আমাদের বাড়িতে কেউ আসে না। এলে চিৎকার-চেচামেচিতে অশান্তি হয়। অশান্তি আমার ভালো লাগে না। আমি ওর একরাশ কালো চুলে মুখ ডুবিয়ে শান্তি খুঁজি। ওর পরিচর্যাও করি। ওকেই জিগ্যেস করে দেখতে পারেন। ওর ঘন কালো চুলে আমি তেল মাখিয়ে দিই, আঁচড়ে দিই পরিপাটি করে। মুখে, গায়ে, তেল মালিশ করে ওর শরীর চকচকে করে তুলি প্রতিদিন। এমন ভালো বাধ্য বউ আপনি আর কোথায় পাবেন!

ওর স্বভাবের পরিবর্তন ওর ভালোর জন্যেই আমি করেছি। নইলে সেদিন, আটবছর আগে, ওকে আমি খুন করেছিলাম কার ভালোর জন্যে? আর এই আটবছর ধরে যে এত সেবা, যত্ন-আত্তি, সে কার ভালোর জন্যে? এই যে রোজ ওর চোখের কোটর, নাকের গর্ত, শিরদাঁড়া, পাঁজর তেল মেখে ব্রাশ দিয়ে পালিশ করি, এ কার ভালোর জন্যে? হলফ করে বলতে পারি, মেডিকেল ছাত্রদের কাছেও এত সুন্দর, চকচকে, ধপধপে সাদা কঙ্কাল আপনি পাবেন না…কিছুতেই না…।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *