০১. রবীন্দ্রনাথ এখানে এসেছিলেন

রবীন্দ্রনাথ এখানে এসেছিলেন

যে গল্পটা বলব সেটা আষাঢ়ের গল্পের মতো শোনাবে, কিন্তু আদতে এটা আষাঢ়ের গল্প নয়!

কয়েক বছর আগের ঘটনা, উত্তরবঙ্গে এক বন্ধুর বিয়ের দাওয়াতে যাচ্ছিলাম, ভেবেছিলাম নিজের গাড়িতে করে গেলে ভ্রমণটা বেশি সাচ্ছন্দের হবে কিন্তু তৃতীয়বারের মতো যখন গাড়িটা বিগড়ে গেল তখন বুঝতে পারলাম, নিজের গাড়ি নিয়ে বের হওয়াটা ঠিক হয়নি। দীর্ঘযাত্রায় বাস-ট্রেনই ভালো।

এর আগে আরো দু’বার ড্রাইভার অনেক চেষ্টা করে সারিয়ে তুলেছিল গাড়িটা, তবে তৃতীয়বারের মতো সে সফল হবে না বলেই মনে হল। পথে বেশ কিছু জায়গায় পানি জমেছিল, ইঞ্জিনের ভেতর ঢুকে গেছে নিশ্চয়। মাঝরাতে বিরাণ এক মহাসড়কে থমকে গেল আমার যাত্রা। গাড়িতে বসেই বাইরে চোখ বুলালাম, অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ল না। আজ সকাল কে বৃষ্টি পড়ছে, মাঝেমধ্যে সেটার প্রকোপ কমলেও আবার পূর্ণ তেজে শুরু হয়ে যাচ্ছে।

আবছা আলোয় আন্দাজ করতে পারলাম, ধানিজমি আর ডোবানালা ছাড়া আশেপাশে কিছু নেই। গাছপালার ফাঁকফোকর দিয়ে বহু দূরে থাকা গেরস্থের বাড়ির আলোকিত জানালাগুলো ছোট ছোট বিন্দুর মতো দেখায়, আমি সেগুলো দেখার আশায় চোখ কুঁচকালাম। কিছু নেই, গাঢ় অন্ধকার ছাড়া।

ড্রাইভার সলিম হাল ছেড়ে দেবার পাত্র নয়, গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়ে ইঞ্জিন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আমি কিছুক্ষণ গাড়ির ভেতরে বসে থেকে বের হয়ে এলাম। ক্লান্তি আর ক্ষিদে আমাকে অস্থির করে তুলেছে সেই কখন থেকে। বৃষ্টির প্রকোপও কমে এসেছে। হতাশ হয়ে পিচের উপর লাথি মারতেই আমার দিকে তাকালো ড্রাইভার।

“ধারেকাছে কি খাবারের দোকান-টোকান পাওয়া যাবে?”

“জানি না, স্যার,” ঠোঁট উল্টে জবাব দিল সে।

এ এরকম জায়গায় নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত হবার কথা, কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, আমার যত চিন্তা উদরপূর্তি নিয়ে! পরিচিতজনরা তো আর সাধেই খাদক বলে না আমাকে। সামনে একটু হেঁটে গেলাম আনমনেই। চোখে পড়ল কিছু একটা। বেশ দূরে, রাস্তার পাশে জ্বলজ্বল করছে একটা সাইন।

“আমি একটু সামনে গেলাম,” ড্রাইভারকে বললাম বেশ জোরে। “খাবারের দোকান আছে কি না দেখি।”

“বেশি দূরে যায়েন না, স্যার..আর একটু পরই গাড়ি ঠিক করবার পারুম।”

অনেকটা পথ এগোতেই থমকে দাঁড়ালাম অদ্ভুত সাইনটার দেখে।

রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি!

জীবনে এ রকম কোন রেস্টুরেন্টের কথা শুনিনি, দেখার তো প্রশ্নই ওঠে না। কপোরেট জগতের মানুষ আমি। কত শত ধান্দাবাজিই না জানি, কিন্তু এমন প্রত্যন্ত অঞ্চলে, মহাসড়কের পাশে উদ্ভট নামের এই রেস্টুরেন্টটা দিল কোন ধান্দাবাজ! কৌতূহল নিয়েই ওটার দিকে এগিয়ে গেলাম।

মহাসড়কের পাশে চমৎকার একটি বাংলো বাড়ির মতো একতলার এই রেস্টুরেন্টটির সামনে আছে বারান্দা, সেই বারান্দার উপরে টিনের ছাউনি। বড় বড় ফ্রেঞ্চ জানালা আর নক্সা করা বিশাল একটি কাঠের দরজা। বাইরে থেকে জানালা দিয় ভেতরটা আলোকিত দেখে দরজা ঠেলে ঢুকে পড়তেই থমকে গেলাম। রেস্টুরেন্টের ভেতরটায় বেশ স্বল্প আলো জ্বলছে। সাজসজ্জা আর পরিবেশ একদমই ভিন্ন, প্রতিটি রাউন্ড টেবিল ঘিরে আছে তিন-চারটা করে চেয়ার। কিন্তু কোনো কাস্টমার নেই। ওয়েটারও দেখা যাচ্ছে না। সম্ভবত দেরি করে ফেলেছি-আক্ষেপ আর হতাশায় দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল।

এমন সময় ঘরের শেষ মাথা থেকে এক যুবক বেরিয়ে এল।

“বন্ধ হয়ে গেছে নাকি?” হতাশার সুর আমার কণ্ঠে।

“না, তবে একটু পরই বন্ধ করে দেব,” বলেই একটা মেনু সামনের টেবিলের উপর রাখল সে। “বসুন।”

টেবিলে বসেই আমি মেনুর দিকে নজর দিলাম।

.

মুশকান’স কারি।

মুশকান’স সুপ অব লাইফ!

মুশকান’স হাইব্রিড ক্র্যামচপ!

মুশকান’স গোল্ডেন ড্রিঙ্কস!

মুশকান’স জাস্ট টি!

.

সব খাবারের আগেই মুশকান! “আচ্ছা, এই মুশকানটা কী?”

“উনি আমাদের রেস্টুরেন্টের মালিক…আবার শেফও।”

এরকম প্রত্যন্ত অঞ্চলে একজন মহিলা রেস্টুরেন্ট চালাচ্ছে, সে নিজে আবার শেফ-অবাকই হলাম। দ্রুত মেনুতে চোখ বোলালাম। একেবারে শেষে এসে আমার চোখ আটকে গেল। মূল মেনুতে এটা ছিল না, পরে কাগজে প্রিন্ট করে আঠা দিয়ে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।

রবীন্দ্র নৈশভোজ!

এটাও খাবারের নাম? মর্মাহতই হলাম। সর্বজন শ্রদ্ধেয় কবিকে যথেচ্ছ ব্যবহার করেছে এর মালেকীন।

“এটা কি?”

“রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে এক টেবিলে বসে ডিনার করার অফার।”

এ জীবনে খুবই এমন উদ্ভট কথা শুনেছি। “তুমি আমার সাথে মশকরা করছ?” রেগেমেগেই বললাম। ক্ষুধার্ত মানুষ এমনিতেই চট করে রেগে যায়।

“স্যার, আজকে এই অফারটা দিয়েছেন আমাদের মালেকীন নিজে,” বেশ জোর দিয়ে বলল ওয়েটার।

“আচ্ছা,” আমিও পাল্টা বললাম। “তাহলে এই অফারটার পাশে মূল্য লেখা নেই কেন?”

“এটা আসলে উনিই বলতে পারবেন। আমি জানি না।”

আমার ভুরু কপালে উঠে গেল। “আচ্ছা, আমি যদি এই অফারটা এখন নেই, তাহলে রবীন্দ্রনাথ এখানে এসে আমার সঙ্গে বসে ডিনার করবেন?”

“উনি করবেন না, আপনি করবেন।”

অনেক কষ্টে রাগ দমন করলাম। “হুঁ, বুঝেছি।” জেদ চেপে গেল আমার মধ্যে। “আমি এই অফারটা নিচ্ছি তাহলে।”

ওয়েটার কিছু না বলে চলে গেল।

এর শেষ না দেখে আজ যাব না। আমি নিশ্চিত, কী হবে। ইউরোপ আমেরিকায় এ রকম প্রাঙ্ক করতে দেখেছি। এরা কোন্ কৌশলটা খাটাবে সেটাও বুঝতে পারছি। সত্যি এক বুড়ো এখানে চলে আসবে একটু পর…

হঠাৎ ঘরটা ভরে উঠল সুবাসে। চমকে ডান পাশে তাকালাম।

অনিন্দ্য সুন্দর এক নারী অভিজাত পদক্ষেপে এগিয়ে আসছে আমার দিকে। সাদা-লালের জামদানি শাড়ি, চুলগুলো সুন্দর করে খোঁপা করা।

কর্তৃত্বপূর্ণ ভাব নিয়ে আমার বিপরীতে একটা চেয়ারে বসে পড়ল সেই মহিলা।

“তাহলে আপনি ওঁর সাথে ডিনার করতে চাইছেন?” তার কণ্ঠ সুললিত।

“হ্যা! তবে দেখতে কিছুটা রবীন্দ্রনাথের মত কারো সঙ্গে নয়,” বললাম তাকে। “আমার ধারণা, সেই লোকের নামও হবে রবীন্দ্রনাথ! তখন আমাকে বলবেন, মেনুতে লেখা ছিল রবীন্দ্র নৈশভোজ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা বলেননি।”

মুচকি হাসল রহস্যময়ী।

“আর ঐ নকল রবীন্দ্রনাথের পদবীটা হবে দাস, রায়, বসু…এ রকম কিছু একটা।”

“আপনার সঙ্গে এ রকম কিছু করা হবে না,” মুশকান নামের মহিলা আশ্বস্ত করে বলল আমাকে।

“তাহলে নোবেলজয়ী কবিই আসছেন?! মৃত্যুর আশি বছর পর? ওয়াও!”

“হুম।” আলতো করে মাথা নেড়ে সায় দিল মুশকান।

অদ্ভুত ব্যাপার, আমার কাছে মনে হল, মহিলা সত্যিই বলছে!

“কিন্তু এটা কী করে সম্ভব! প্ল্যানচ্যাটে মৃত মানুষের আত্মা ডেকে আনার কথা শুনেছি…আপনি কি সে রকম কিছু করবেন নাকি?”

আমার কথাটার মধ্যে প্রচ্ছন্ন টিটকারি ছিল।

“আপনি এই অফারটা নিচ্ছেন তো?” আমার কথার জবাব না দিয়ে জানতে চাইল সে।

“রবীন্দ্রনাথের ভূতের সাথে নৈশভোজ? হ্যাঁ। মনে হচ্ছে দারুণ ব্যাপারই হবে সেটা।”

“আমারও তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।”

ওয়েটার ফিরে এল আবার।

“আপনি খাবারের অর্ডার করুন…আমি আসছি,” মুশকান নামের মহিলা চলে গেল রেস্টুরেন্টের ভেতরে।

ঝটপট কিছু খাবার অর্ডার দিয়ে দিলাম। হালকা ভলিউমে জনপ্রিয় একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত ভেসে বেড়াতে লাগল ঘরে। একটু পরই ট্রে’তে করে গরম ভাত, মাংস আর ডাল নিয়ে হাজির ওয়েটার।

আর কিছু না ভেবে উদর পূর্তি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। একটু পরই আবিষ্কার করলাম, যা খাচ্ছি তা এক কথায় অসাধারণ। সত্যি বলতে, মাংসটা গরুর নাকি খাসির সেটাও ধরতে পারলাম না। আর মাংস থেকে যে ঘ্রাণ আসছে সেটা আমার রুচি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছিল। আমার খাওয়ার মাঝখানে আবারো চলে এল সেই রহস্যময়ী নারী। এবার তার খোঁপায় বেলি ফুলের মালা, কপালে সিঁদুররঙা টিপ আর চোখে সুন্দর করে কাজল দেয়া। কখনও কোনো নারীকে এত সুন্দ্র করে কাজল দিতে দেখিনি।

আগের জায়গায় বসে গভীর করে নিশ্বাস নিয়ে নিল মুশকান। “আপনি খেতে থাকুন…আমি ওঁকে ডাকছি।”

ব্যাপারটা অদ্ভুত আর অসৌজন্যমূলক বলে মনে হল আমার কাছে। হোক না রবীন্দ্রনাথের ভূত, তার সামনে বসে আমি গাপুসগুপুস খাবো?

মিউজিক প্লেয়ারের গান থেমে গেল, আর সুললিত কণ্ঠে গাইতে শুরু করল মুশকান নিজে :

এসো এসো আমার ঘরে এসো আমার ঘরে
এসো এসো আমার ঘরে এসো আমার ঘরে…
বাহির হয়ে এসো
বাহির হয়ে এসো তুমি যে আছ অন্তরে।

অসাধারণ তার গায়কী। আমি মুগ্ধ হয়ে শুনে গেলাম।

“এসো আমার ঘরে
এসো এসো আমার ঘরে এসো আমার ঘরে
স্বপন দুয়ার খুলে এসো অরুণ-আলোকে
এসো মুগ্ধ এ চোখে।
ক্ষণকালের আভাস হতে
চিরকালের তরে
এসো আমার ঘরে…”

“আকুল হয়ে কেন যে ডাকো…সাড়া না দিয়ে পারিনে! হোক না সেটা ক্ষকালের আবাস হতে…!”

একটা মিহি কণ্ঠ শুনে আমি চমকে তাকালাম রেস্টুরেন্টের দরজার দিকে। দৃশ্যটা দেখামাত্র গায়ের সমস্ত রোমকূপ দাঁড়িয়ে গেল। ভূত দেখে নয়, আমি রবীন্দ্রনাথকে দেখে ভড়কে গেলাম। যেন বহুল পরিচিত ছবি থেকে উঠে এসেছেন তিনি, এগিয়ে আসছেন আমাদের টেবিলের দিকে। ধূতি-পাঞ্জাবি পরা। গায়ের একটা চাদর জড়িয়ে রেখেছেন। দেখেই সম্ভ্রম জেগে উঠল। দাঁড়িয়ে সম্মান জানানো উচিত, কিন্তু আমার সেই বোধশক্তি লোপ পেয়ে গেল।

মুশকানের চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল রবীন্দ্রনাথকে দেখে। “আমাদের অতিথির পাশে বোসো!”

কবি আমার ঠিক পাশেই বসে পড়লেন।

“একটা শর্ত আছে,” আমাকে বলল মুশকান। “আপনি ওঁকে কোনো প্রশ্ন করতে পারবেন না।”

আমি হা হয়ে গেলাম। এর আগে কখনও ভেবে দেখিনি, প্রশ্ন ছাড়া কথা বলা কতটা অসম্ভব ব্যাপার।

“আর ওঁ ডিনারও করবে না…আপনি খেতে থাকুন।”

আমি কিছুই বলতে পারলাম না। একটা ঘোরের মধ্যে নিপতিত হয়ে কাছ থেকে রবীন্দ্রনাথকে দেখতে লাগলাম। সফেদ চুল-দাড়ি, বলিরেখায় পূর্ণ মুখায়ব। আলতো করে আমার দিকে তাকালেন কবি। স্মিত হাসি তার ঠোঁটে।

“কিন্তু ওর মনে তো হাজারও প্রশ্ন ঘুরছে!”

“তোমাকে এভাবে দেখলে সেটাই কি স্বাভাবিক নয়?” মুশকান এমনভাবে কথা বলল যেন কবির সাথে তার অনেক দিনের চেনাজানা।

“মানুষ প্রশ্নের জলে আকণ্ঠ ডুবে থাকে সারা জনম। এমন কি মৃত্যুর পরও…” দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এল কবির ভেতর থেকে। “কত প্রশ্নের উত্তর যে জানিনে এখনও!”

“তুমি তো সত্য আর সুন্দরের পূজারী…এত প্রশ্ন কেন তোমার মাথায় ঘোরে…এখনও?”

আবারো স্মিত হাসলেন কবি। “সুন্দরের পূজারী হতে কোনো প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হয় না কিন্তু ঐ যে বললে, সত্য…ওটার তত্ত্ব-তালাশ করতে হলে শত সহস্র প্রশ্নের উদয় হয়, উত্তরও জানতে হয়।”

আবিষ্কার করলাম-মুশকান আর রবীন্দ্রনাথই কথা বলে যাচ্ছে-আমি যেন ঘরের আসবাব হয়ে গেছি।

“আপনি কিন্তু খাচ্ছেন না, তাড়া দিল মুশকান।

ঢোক গিলোম আমি। রবীন্দ্রনাথের ভূতের পাশে বসে কেউ কি খেতে পারে? সে খাবার যত সুস্বাদুই হোক না কেন! তারপরও বাধ্যছেলের মত খেতে শুরু করলাম আবার। এছাড়া আমার কিছু করারও নেই–প্রশ্ন না করে কথা। বলা? কীভাবে সম্ভব!

“এই সুন্দরপুরে ওঁর আসার কথা ছিল, কিন্তু ওঁর মেয়ে মাধবীলতা মারা গেছিল, তাই আর আসা হয়নি।”

আমার উদ্দেশে বলল মুশকান, আমি খেতে খেতেই তাকালাম। জায়গাটার নাম তাহলে সুন্দরপুর।

কবি একটু বিষণ্ণ হয়ে উঠলেন।

“ক্ষমা কোরো আমাকে,” মুশকান বলল। “আজকের দিনে কথাটা তোলা ঠিক হয়নি।”

“না। ঠিক আছে।” মিহি কণ্ঠে বললেও কবির দীর্ঘশ্বাস শুনতে পেলাম যেন।

“সেদিক থেকে দেখলে, এই রেস্টুরেন্টের নামটা একদম ঠিকই আছে।”

মৃত এক কবি জীবিত অবস্থায় আমার পাশে বসে আছেন, আর আমি গলাধকরণ করছি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্বাদের খাবার-পুরো ব্যাপারটা যেন মতে নয়, অমর্ত্যলোকে ঘটছে!

মুশকান আর রবীন্দ্রনাথ-আদৌ যদি ওটা রবীন্দ্রনাথ হয়ে থাকে তো-অনেক বিষয় নিয়ে আলাপ করলেও সে সবের খুব কমই আমার মনে আছে, শুধু মনে আছে হঠাৎ করে রেস্টুরেন্টের বাইরে গাড়ির হর্ন বাজার শব্দ শুনে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠলেন কবি। চলে যাবার আগে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন : “অনেক কথা বলার ছিল কিন্তু বলতে পারলাম না। তার কোন দরকারও নেই। যা বলার বলে গেছি আমি। শুধু একটা কথা বলি আরেকবার-দেশ মানে মৃন্ময় নয়, চিন্ময়…এ কথা তোমরা কখনও ভুলে যেয়ো না!”

তার পর যেভাবে এসেছিলেন সেভাবেই তিনি চলে গেলেন আমাকে সম্মোহনের মধ্যে রেখেই।

“কত দিতে হবে?” অনেকক্ষণ পর ধাতস্থ হয়ে মুশকানকে জিজ্ঞেস করলাম আমি।

“কিছু দিতে হবে না। বছরে এই সময়ে মাত্র একজনই এ রকম নৈশভোজ করার সুযোগ পায় এখানে। এ বছর আপনি হলেন সেই ভাগ্যবানএকজন। আপনি তাড়াতাড়ি চলে যান। আপনাকে খুঁজতে আপনার লোক এসে পড়েছে।”

অগত্যা অদ্ভুত সেই রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে এলাম আমি। বাইরে এসে দেখি আমার ড্রাইভার সলিম গাড়ি নিয়ে চলে এসেছে।

“এখানে কি করতাছেন, স্যার?”

“এ-এই তো…খাবার খেলাম।”

সলিম আমার দিকে তাকিয়ে রইল বিস্ফারিত চোখে। “এইটা তো বন্ধ, খাইলেন কেমনে?!”

পেছনে ফিরে দেখি, সাইনটা জ্বলছে না। জীর্ণ একটি স্থাপনা দাঁড়িয়ে আছে। দরজা-জানালা ভাঙা।

চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লাম। ড্রাইভার একটা এফএম রেডিও অন করতেই এক তরুণী আরজে বলে উঠল :

“আজ ২২শে শ্রাবণ…কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মহাপ্রয়াণ দিবস…”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *